16-06-2021, 07:41 PM
"বাসার কাছে যখন এলিই আম্মু আব্বুর সাথে দেখা করেই যা।" স্নিগ্ধাকে পৌঁছে দিয়ে কবির যেতে উদ্যত হলে স্নিগ্ধা বলে।
কবির আর কথা বাড়ায় না স্নিগ্ধার পিছে পিছে বাড়িতে ঢোকে সে। দোতলায় উঠে দেখে বাড়ির দরজা খোলা, কিন্তু ভেতরে অন্ধকার।
"তোদের বাড়ি অন্ধকার কেন? লোডশেডিং তো হয়নি, আসে পাশের বাড়িতে তো আলো আছে।"
"দেখছি কি হল। ভেতরে চল" বলে স্নিগ্ধা কবিরের হাত ধরে নিয়ে যায় ভেতরে। তারপর দেয়াল হাতড়িয়ে একটি সুইচ টিপ দিয়ে আলো জ্বালিয়ে দিতেই আলো জ্বলে ওঠে। তাতে কবির প্রায় চমকে ওঠে। সারা ঘর বেলুন দিয়ে সাজানো, ডাইনিং টেবিলের উপর বড়সড় একটি কেক। টেবিলের অন্যপাশে স্নিগ্ধার মা বাবা সহ ছয় সাতজন। তারা সমস্বরে গেয়ে ওঠে "হ্যাপি বার্থডে কবির, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।"
কবির জানতো যে আজকে তার জন্মদিন, কিন্তু স্নিগ্ধা যে এভাবে সারপ্রাইজ বার্থডে পার্টি এরেঞ্জ করবে তা কবির ভাবতেই পারেনি।
স্নিগ্ধা এগিয়ে এসে কবিরকে মৃদু জড়িয়ে ধরে উইস করে "ম্যানি হ্যাপী রিটার্নস অফ দা ডে।"
তারপর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় কবিরকে। স্নিগ্ধার মা বাবা ছাড়াও তাদের প্রতিবেশি সমীর আংকেল, দীপা আন্টি ও তাদের তিন ছেলে মেয়ে মুক্তা, প্রদীপ ও বিনু ছিল সেখানে। তারা নিচ তলায় থাকে। মুক্তা তাদের সমবয়সী, প্রদীপ ও বিনু যথাক্রমে থ্রি ও টুতে পড়ে।
জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ করে তারা রাতের খাবার খেয়ে নেয় সেখানেই। ডিনার শেষে কবির বাড়ি ফিরে যেতে চাইলেও স্নিগ্ধার মা কিছুতেই তাকে যেতে দেয়না। বাধ্য হয়ে কবিরকে স্নিগ্ধাদের বাড়িতেই থেকে যেতে হয়।
কবির ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে টিভি দেখছিল। স্নিগ্ধা হাতে একটি বাটি নিয়ে ড্রয়িং রুমে ঢোকে। বাটিতে কেক, অর্ধেকটার মতো বেঁচে গিয়েছে।
"কেক খা" বাটিটা কবিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে।
"আমি খাবনা, তুই খা অথবা রেখে দে।"
"জন্মদিনের কেক নষ্ট করতে হয়না!" বলে স্নিগ্ধা এক খাবলা কেক ক্রিমসহ হাতে নিয়ে কবিরের মুখে মাখিয়ে দেয়। তারপর খিল খিল করে হাসতে থাকে।
"কি হল এটা?" রাগত স্বরে বলে কবির।
"কেক খাওয়ালাম" বলে আবার খিল খিল করে হেসে ওঠে স্নিগ্ধা।
কবির হাতে এক খাবলা কেক নিয়ে স্নিগ্ধার মুখে মাখিয়ে দিতে চায়, স্নিগ্ধা সরে যায় তারপর খিল খিল করে হাসতে হাসতে নিজের ঘরের দিকে ছুটে যায়। কবির হাতে কেকের বাটি নিয়ে তাড়া করে। বেডরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিতে চায় কিন্তু তার আগেই কবির ঠেলে ঢুকে যায়। স্নিগ্ধাকে বিছানার ওপর চেপে ধরে ওর মুখে সবটুকু কেক মাখিয়ে দেয়। তারপর মুখ কাছে এনে স্নিগ্ধার গালের কাছে লেগে থাকা চকলেট ক্রিম চেটে নেয়।
"এ্যাই কি হচ্ছে?"
"কেক খাচ্ছি" বলে কবির ওর ঠোঁট ও থুতনিতে লেগে থাকা ক্রিম চুষে নেয়।
কারো পায়ের শব্দ পেয়ে কবির স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ায়।
শিরিন স্নিগ্ধার বেডরুমে এসে স্নিগ্ধা আর কবিরের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে প্রায় গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা হয়।
"তোমাদের এ হাল হল কিভাবে?" বলে আবার হাসতে থাকেন।
হাসি থামিয়ে কন্ঠে সিরিয়াস ভাব এনে বলেন "অনেক রাত হয়েছে। দুজনই হাতমুখ ধুয়ে ঘুমতে যাও। আর কোন দুষ্টমি নয়।"
স্নিগ্ধা হাতমুখ ধুয়ে নিজের রুমে ঘুমাতে গেল। কবিরের জন্য ড্রয়িং রুমে শোয়ার ব্যবস্থা হল।
কবিরের সহজে ঘুম আসেনা, একটু আগের ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা ভাবে সে। একটু বেশী বেশী করে ফেলল না সে? এর জন্য যদি তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে কোন ক্ষতি হয়!
সজল খুব সকাল সকাল রওনা দেয় বাড়ি থেকে। এক সপ্তাহ হল সে তার গ্রামের বাড়িতে আছে। কিন্ত এখন তাকে ক্যাম্পাসে গিয়ে এডমিশনটা সেরে আসতে হবে। ক্লাস শুরু হতে এখনও মাস দেড়েক বাকি। এডমিশন সেরে আবার গ্রামে ফিরে আসবে সজল। গ্রামে তার অনেকগুলো কাজ বাকি।
সজল বাস স্ট্যান্ডে এসে পাবনার গাড়িতে উঠে পড়ে। যদিও ফরিদপুর দিয়ে গেলেই তাড়াতাড়ি হত, কিন্তু সজল স্নিগ্ধার সাথে দেখা করতে চায় তাই পাবনা রুট দিয়ে যাবে সজল।
পাবনা পৌঁছাতে পৌঁছাতে নয়টা বেজে যায়। বাস স্ট্যান্ডের পাশে এক রেস্টুরেন্টে নাস্তা সেরে নেয় সজল। তার পর স্নিগ্ধাকে কল দেয় সে।
"হ্যালো জান, কি কর?" সজল বলে।
"কলেজে যাচ্ছি" স্নিগ্ধা জবাব দেয়।
"কলেজের জন্য বাসা থেকে বের হও, কিন্তু কলেজে যেওনা আজকে। আমি আসছি, আজকে তোমাকে নিয়ে একটু ঘুরবো।"
"কিন্তু তাই বলে কলেজ পালাবো!"
"একটা দিনই তো মাত্র?"
"আমি কলেজ ফাঁকি দিতে পারবনা।" স্নিগ্ধা দৃঢ় কন্ঠে বলে।
"যদি আমার জন্য এটুক করতেই না পার তাহলে ঠিক আছে, আমি ফিরেই যাই। আর কখনো তোমাকে ডিস্টার্ব করব না।" অভিমানের স্বরে বলে সজল।
"রাগ কোরো না জান।" একটু থেমে স্নিগ্ধা আবার বলে "আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি।"
"পৌরপার্কে অপেক্ষা কইরো, আমি ঘন্টা খানেকের মধ্যে আসছি।"
"ঠিক আছে।" বলে স্নিগ্ধা কল কেটে দেয়। স্নিগ্ধা এতোক্ষন রিক্সায় করে কলেজের পথে আসতে আসতে মোবাইলে কথা বলছিল। কবির ওর পাশে বসেছিল। রিক্সা তখন কলেজের সামনে এসে থেমেছে।
"তুই ক্লাসে যা, প্রত্যেক ক্লাসে নোট করে রাখিস কিন্তু।" কবিরের উদ্দেশ্যে বলে স্নিগ্ধা।
"সাবধানে থাকিস" বলে কবির রিক্সা থেকে নেমে যায়।
স্নিগ্ধা পার্কে বসে সজলের জন্য অপেক্ষা করে। সজল পৌঁছায় আরো প্রায় দেড় ঘন্টা পর। স্নিগ্ধাকে নিয়ে প্রথমে একটি শপিং মলে যায় সজল।
"শপিং মলে কেন নিয়ে এলে?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"তুমি কি কলেজ ড্রেস পরে থাকবে নাকি সারাক্ষন? তোমাকে একটা জামা কিনে দেব।" সজল বলে।
"কিন্তু বাসায় কি বলব?"
"বলবে তুমিই টাকা জমিয়ে কিনেছ।"
"আম্মু বিশ্বাস করবে না। আম্মু আমাকে খুব ভাল করে চেনে।"
"তাহলে বলেই দিও আমার কথা । এখন কথা না বাড়িয়ে এই জিন্স এবং টপটা পরে এসো তো।" বলে স্নিগ্ধার হাতে একটি নিল জিন্স ও সাদা টপ তুলে দেয়।
স্নিগ্ধা চেঞ্জ রুমে গিয়ে পরে আসে সেগুলো। টপটা বেশ টাইট হয়েছে, একেবারে বুকের সাথে সেঁটে থেকে বুকের আকারকে পুরোপুরি পরিষ্ফুটিত করে তুলেছে।
"একটু টাইট হয়েছে।" স্নিগ্ধা বলে।
"নাহ, একেবারে পারফেক্ট হয়েছে। তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।" মুচকি হেসে বলে সজল।
সজল দাম মিটিয়ে দিয়ে স্নিগ্ধাকে নিয়ে শপিং মল থেকে বের হয়ে আসে। এরপর তারা যায় সিনেমা হলে।
ড্রাগ এডিক্ট বিষয়ক সচেতনতামুলক একটি সিনেমা চলছে, দর্শক খুব সামান্য। স্নিগ্ধাকে নিয়ে এক কোনায় বসে যায় সজল। সিনেমা শুরু হওয়ার পর সজল ফিস ফিস করে বলে "আমার উপহারের কথা মনে আছে জান?"
"কিন্তু এখানে?"
"হ্যাঁ এখানেই।" বলে সজল স্নিগ্ধার ফর্সা গালে চুমু দেয়। তারপর জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধার গোলাপি ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। দুটি ঠোঁট একসাথে চুষতে চুষতে সজল একটি হাত নিয়ে যায় স্নিগ্ধার বুকে, জামার ওপর থেকে আলতোভাবে হাত বোলায়। প্রায় সাথে সাথে স্নিগ্ধা নিজের বুক থেকে সজলের হাত সরিয়ে দেয়। সজলের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেয় সে।
স্নিগ্ধা সজলকে কথা দিয়েছিল যে যদি সজল বুয়েটে চান্স পায় তবে ওকে চুমু দিতে দেবে সে। আজ সজল তার পাওনা বুঝে পেল।
এরপর সজল স্নিগ্ধাকে নিয়ে হল থেকে বেরিয়ে আসে। একটি চাইনিস রেস্টুরেন্টে দুজন লাঞ্চ সেরে নেয় তারা। তারপর পার্কে বসে কিছুক্ষন গল্প করে।
স্নিগ্ধা সজলের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্যেশ্যে রওনা দেয়। সজলও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
স্নিগ্ধা তার নিজের বাড়িতে না এসে প্রথমে কবিরের বাড়িতে আসে। কবির তখনো বাড়িতে ফেরেনি, মেইন গেটে তালা ঝুলছে। স্নিগ্ধা তার মোবাইলটা বের করে কবিরকে কল করে।
"কোথায় তুই?"
"কলেজ থেকে বের হলাম এইমাত্র। তুই কোথায়?"
"তোর বাড়িতে।"
"বারান্দায় টবের পিছে চাবি লোকানো আছে। ঘরে ঢুকে রেস্ট নে, আমি বিশ মিনিটের ভেতরে আসছি।"
স্নিগ্ধা ঘরে ঢুকে কাপড়টা পালটিয়ে ব্যাগ থেকে কলেজড্রেস বের করে পরে নেয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই কবির এসে পড়ে।
"কেমন কাটল দিনটা?" সোফাতে বসে জুতা খুলতে খুলতে বলে কবির।
"ভালই।" উত্তর দেয় স্নিগ্ধা।
"এই দেখ আমাকে সজল গিফ্ট করেছে।" বলে জামা, কানের দুল ও হাতঘড়ি দেখায় কবিরকে।
"ভালই তো।"
"কিন্তু এগুলো এখন তোকে রাখতে হবে। আমার কাছে রাখলে ধরা পড়ে যাব।"
"আমি এগুলো নিয়ে কি করব?"
"জামা পরবি, কানে দুল দিবি" বলে খিল খিল করে হাসতে থাকে স্নিগ্ধা।
"আরে বোকা, আমি তোকে শুধু কিছু দিনের জন্য রাখতে বলছি ওগুলো।" হাসি থামিয়ে স্নিগ্ধা বলে।
সামনে মাসে আমার জন্মদিন, মনে আছে? তখন এগুলো গিফ্ট করবি।" স্নিগ্ধা আবারও বলে।
"তিন এপ্রিল, মনে থাকবে না কেন? কিন্তু এগুলো কেন গিফ্ট করব? নিজের টাকা দিয়ে কিনে গিফ্ট করব।"
"তা করিস, কিন্তু সাথে এগুলো দিস। আপাতত রেখে দে।" বলে হাতের ঘড়ি, কানের দুল খুলে জামা সহ কবিরের হাতে দেয়।
"আমি চলিরে" বলে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চলে যায় স্নিগ্ধা।
কবির জামাটা একবার দেখে। সাদা টপ আর জিন্স। সাদা টপটাকে মুখের কাছে এনে ঘ্রান নেয় কবির। মিষ্টি একটি গন্ধ পায় সে। কবির জানে এটি স্নিগ্ধার দেহের গন্ধ।
কবির গিফ্টগুলোকে আলমারিতে রাখতে রাখতে আনমনেই গেয়ে ওঠে-
"কেন হঠাৎ তুমি এলে?
তবে নয় কেন পুরোটা জুড়ে?"
কবির আর কথা বাড়ায় না স্নিগ্ধার পিছে পিছে বাড়িতে ঢোকে সে। দোতলায় উঠে দেখে বাড়ির দরজা খোলা, কিন্তু ভেতরে অন্ধকার।
"তোদের বাড়ি অন্ধকার কেন? লোডশেডিং তো হয়নি, আসে পাশের বাড়িতে তো আলো আছে।"
"দেখছি কি হল। ভেতরে চল" বলে স্নিগ্ধা কবিরের হাত ধরে নিয়ে যায় ভেতরে। তারপর দেয়াল হাতড়িয়ে একটি সুইচ টিপ দিয়ে আলো জ্বালিয়ে দিতেই আলো জ্বলে ওঠে। তাতে কবির প্রায় চমকে ওঠে। সারা ঘর বেলুন দিয়ে সাজানো, ডাইনিং টেবিলের উপর বড়সড় একটি কেক। টেবিলের অন্যপাশে স্নিগ্ধার মা বাবা সহ ছয় সাতজন। তারা সমস্বরে গেয়ে ওঠে "হ্যাপি বার্থডে কবির, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।"
কবির জানতো যে আজকে তার জন্মদিন, কিন্তু স্নিগ্ধা যে এভাবে সারপ্রাইজ বার্থডে পার্টি এরেঞ্জ করবে তা কবির ভাবতেই পারেনি।
স্নিগ্ধা এগিয়ে এসে কবিরকে মৃদু জড়িয়ে ধরে উইস করে "ম্যানি হ্যাপী রিটার্নস অফ দা ডে।"
তারপর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় কবিরকে। স্নিগ্ধার মা বাবা ছাড়াও তাদের প্রতিবেশি সমীর আংকেল, দীপা আন্টি ও তাদের তিন ছেলে মেয়ে মুক্তা, প্রদীপ ও বিনু ছিল সেখানে। তারা নিচ তলায় থাকে। মুক্তা তাদের সমবয়সী, প্রদীপ ও বিনু যথাক্রমে থ্রি ও টুতে পড়ে।
জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ করে তারা রাতের খাবার খেয়ে নেয় সেখানেই। ডিনার শেষে কবির বাড়ি ফিরে যেতে চাইলেও স্নিগ্ধার মা কিছুতেই তাকে যেতে দেয়না। বাধ্য হয়ে কবিরকে স্নিগ্ধাদের বাড়িতেই থেকে যেতে হয়।
কবির ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে টিভি দেখছিল। স্নিগ্ধা হাতে একটি বাটি নিয়ে ড্রয়িং রুমে ঢোকে। বাটিতে কেক, অর্ধেকটার মতো বেঁচে গিয়েছে।
"কেক খা" বাটিটা কবিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে।
"আমি খাবনা, তুই খা অথবা রেখে দে।"
"জন্মদিনের কেক নষ্ট করতে হয়না!" বলে স্নিগ্ধা এক খাবলা কেক ক্রিমসহ হাতে নিয়ে কবিরের মুখে মাখিয়ে দেয়। তারপর খিল খিল করে হাসতে থাকে।
"কি হল এটা?" রাগত স্বরে বলে কবির।
"কেক খাওয়ালাম" বলে আবার খিল খিল করে হেসে ওঠে স্নিগ্ধা।
কবির হাতে এক খাবলা কেক নিয়ে স্নিগ্ধার মুখে মাখিয়ে দিতে চায়, স্নিগ্ধা সরে যায় তারপর খিল খিল করে হাসতে হাসতে নিজের ঘরের দিকে ছুটে যায়। কবির হাতে কেকের বাটি নিয়ে তাড়া করে। বেডরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিতে চায় কিন্তু তার আগেই কবির ঠেলে ঢুকে যায়। স্নিগ্ধাকে বিছানার ওপর চেপে ধরে ওর মুখে সবটুকু কেক মাখিয়ে দেয়। তারপর মুখ কাছে এনে স্নিগ্ধার গালের কাছে লেগে থাকা চকলেট ক্রিম চেটে নেয়।
"এ্যাই কি হচ্ছে?"
"কেক খাচ্ছি" বলে কবির ওর ঠোঁট ও থুতনিতে লেগে থাকা ক্রিম চুষে নেয়।
কারো পায়ের শব্দ পেয়ে কবির স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ায়।
শিরিন স্নিগ্ধার বেডরুমে এসে স্নিগ্ধা আর কবিরের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে প্রায় গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা হয়।
"তোমাদের এ হাল হল কিভাবে?" বলে আবার হাসতে থাকেন।
হাসি থামিয়ে কন্ঠে সিরিয়াস ভাব এনে বলেন "অনেক রাত হয়েছে। দুজনই হাতমুখ ধুয়ে ঘুমতে যাও। আর কোন দুষ্টমি নয়।"
স্নিগ্ধা হাতমুখ ধুয়ে নিজের রুমে ঘুমাতে গেল। কবিরের জন্য ড্রয়িং রুমে শোয়ার ব্যবস্থা হল।
কবিরের সহজে ঘুম আসেনা, একটু আগের ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা ভাবে সে। একটু বেশী বেশী করে ফেলল না সে? এর জন্য যদি তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে কোন ক্ষতি হয়!
সজল খুব সকাল সকাল রওনা দেয় বাড়ি থেকে। এক সপ্তাহ হল সে তার গ্রামের বাড়িতে আছে। কিন্ত এখন তাকে ক্যাম্পাসে গিয়ে এডমিশনটা সেরে আসতে হবে। ক্লাস শুরু হতে এখনও মাস দেড়েক বাকি। এডমিশন সেরে আবার গ্রামে ফিরে আসবে সজল। গ্রামে তার অনেকগুলো কাজ বাকি।
সজল বাস স্ট্যান্ডে এসে পাবনার গাড়িতে উঠে পড়ে। যদিও ফরিদপুর দিয়ে গেলেই তাড়াতাড়ি হত, কিন্তু সজল স্নিগ্ধার সাথে দেখা করতে চায় তাই পাবনা রুট দিয়ে যাবে সজল।
পাবনা পৌঁছাতে পৌঁছাতে নয়টা বেজে যায়। বাস স্ট্যান্ডের পাশে এক রেস্টুরেন্টে নাস্তা সেরে নেয় সজল। তার পর স্নিগ্ধাকে কল দেয় সে।
"হ্যালো জান, কি কর?" সজল বলে।
"কলেজে যাচ্ছি" স্নিগ্ধা জবাব দেয়।
"কলেজের জন্য বাসা থেকে বের হও, কিন্তু কলেজে যেওনা আজকে। আমি আসছি, আজকে তোমাকে নিয়ে একটু ঘুরবো।"
"কিন্তু তাই বলে কলেজ পালাবো!"
"একটা দিনই তো মাত্র?"
"আমি কলেজ ফাঁকি দিতে পারবনা।" স্নিগ্ধা দৃঢ় কন্ঠে বলে।
"যদি আমার জন্য এটুক করতেই না পার তাহলে ঠিক আছে, আমি ফিরেই যাই। আর কখনো তোমাকে ডিস্টার্ব করব না।" অভিমানের স্বরে বলে সজল।
"রাগ কোরো না জান।" একটু থেমে স্নিগ্ধা আবার বলে "আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি।"
"পৌরপার্কে অপেক্ষা কইরো, আমি ঘন্টা খানেকের মধ্যে আসছি।"
"ঠিক আছে।" বলে স্নিগ্ধা কল কেটে দেয়। স্নিগ্ধা এতোক্ষন রিক্সায় করে কলেজের পথে আসতে আসতে মোবাইলে কথা বলছিল। কবির ওর পাশে বসেছিল। রিক্সা তখন কলেজের সামনে এসে থেমেছে।
"তুই ক্লাসে যা, প্রত্যেক ক্লাসে নোট করে রাখিস কিন্তু।" কবিরের উদ্দেশ্যে বলে স্নিগ্ধা।
"সাবধানে থাকিস" বলে কবির রিক্সা থেকে নেমে যায়।
স্নিগ্ধা পার্কে বসে সজলের জন্য অপেক্ষা করে। সজল পৌঁছায় আরো প্রায় দেড় ঘন্টা পর। স্নিগ্ধাকে নিয়ে প্রথমে একটি শপিং মলে যায় সজল।
"শপিং মলে কেন নিয়ে এলে?" স্নিগ্ধা জিজ্ঞাসা করে।
"তুমি কি কলেজ ড্রেস পরে থাকবে নাকি সারাক্ষন? তোমাকে একটা জামা কিনে দেব।" সজল বলে।
"কিন্তু বাসায় কি বলব?"
"বলবে তুমিই টাকা জমিয়ে কিনেছ।"
"আম্মু বিশ্বাস করবে না। আম্মু আমাকে খুব ভাল করে চেনে।"
"তাহলে বলেই দিও আমার কথা । এখন কথা না বাড়িয়ে এই জিন্স এবং টপটা পরে এসো তো।" বলে স্নিগ্ধার হাতে একটি নিল জিন্স ও সাদা টপ তুলে দেয়।
স্নিগ্ধা চেঞ্জ রুমে গিয়ে পরে আসে সেগুলো। টপটা বেশ টাইট হয়েছে, একেবারে বুকের সাথে সেঁটে থেকে বুকের আকারকে পুরোপুরি পরিষ্ফুটিত করে তুলেছে।
"একটু টাইট হয়েছে।" স্নিগ্ধা বলে।
"নাহ, একেবারে পারফেক্ট হয়েছে। তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।" মুচকি হেসে বলে সজল।
সজল দাম মিটিয়ে দিয়ে স্নিগ্ধাকে নিয়ে শপিং মল থেকে বের হয়ে আসে। এরপর তারা যায় সিনেমা হলে।
ড্রাগ এডিক্ট বিষয়ক সচেতনতামুলক একটি সিনেমা চলছে, দর্শক খুব সামান্য। স্নিগ্ধাকে নিয়ে এক কোনায় বসে যায় সজল। সিনেমা শুরু হওয়ার পর সজল ফিস ফিস করে বলে "আমার উপহারের কথা মনে আছে জান?"
"কিন্তু এখানে?"
"হ্যাঁ এখানেই।" বলে সজল স্নিগ্ধার ফর্সা গালে চুমু দেয়। তারপর জড়িয়ে ধরে স্নিগ্ধার গোলাপি ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। দুটি ঠোঁট একসাথে চুষতে চুষতে সজল একটি হাত নিয়ে যায় স্নিগ্ধার বুকে, জামার ওপর থেকে আলতোভাবে হাত বোলায়। প্রায় সাথে সাথে স্নিগ্ধা নিজের বুক থেকে সজলের হাত সরিয়ে দেয়। সজলের বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেয় সে।
স্নিগ্ধা সজলকে কথা দিয়েছিল যে যদি সজল বুয়েটে চান্স পায় তবে ওকে চুমু দিতে দেবে সে। আজ সজল তার পাওনা বুঝে পেল।
এরপর সজল স্নিগ্ধাকে নিয়ে হল থেকে বেরিয়ে আসে। একটি চাইনিস রেস্টুরেন্টে দুজন লাঞ্চ সেরে নেয় তারা। তারপর পার্কে বসে কিছুক্ষন গল্প করে।
স্নিগ্ধা সজলের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্যেশ্যে রওনা দেয়। সজলও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
স্নিগ্ধা তার নিজের বাড়িতে না এসে প্রথমে কবিরের বাড়িতে আসে। কবির তখনো বাড়িতে ফেরেনি, মেইন গেটে তালা ঝুলছে। স্নিগ্ধা তার মোবাইলটা বের করে কবিরকে কল করে।
"কোথায় তুই?"
"কলেজ থেকে বের হলাম এইমাত্র। তুই কোথায়?"
"তোর বাড়িতে।"
"বারান্দায় টবের পিছে চাবি লোকানো আছে। ঘরে ঢুকে রেস্ট নে, আমি বিশ মিনিটের ভেতরে আসছি।"
স্নিগ্ধা ঘরে ঢুকে কাপড়টা পালটিয়ে ব্যাগ থেকে কলেজড্রেস বের করে পরে নেয়। কিছুক্ষনের মধ্যেই কবির এসে পড়ে।
"কেমন কাটল দিনটা?" সোফাতে বসে জুতা খুলতে খুলতে বলে কবির।
"ভালই।" উত্তর দেয় স্নিগ্ধা।
"এই দেখ আমাকে সজল গিফ্ট করেছে।" বলে জামা, কানের দুল ও হাতঘড়ি দেখায় কবিরকে।
"ভালই তো।"
"কিন্তু এগুলো এখন তোকে রাখতে হবে। আমার কাছে রাখলে ধরা পড়ে যাব।"
"আমি এগুলো নিয়ে কি করব?"
"জামা পরবি, কানে দুল দিবি" বলে খিল খিল করে হাসতে থাকে স্নিগ্ধা।
"আরে বোকা, আমি তোকে শুধু কিছু দিনের জন্য রাখতে বলছি ওগুলো।" হাসি থামিয়ে স্নিগ্ধা বলে।
সামনে মাসে আমার জন্মদিন, মনে আছে? তখন এগুলো গিফ্ট করবি।" স্নিগ্ধা আবারও বলে।
"তিন এপ্রিল, মনে থাকবে না কেন? কিন্তু এগুলো কেন গিফ্ট করব? নিজের টাকা দিয়ে কিনে গিফ্ট করব।"
"তা করিস, কিন্তু সাথে এগুলো দিস। আপাতত রেখে দে।" বলে হাতের ঘড়ি, কানের দুল খুলে জামা সহ কবিরের হাতে দেয়।
"আমি চলিরে" বলে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চলে যায় স্নিগ্ধা।
কবির জামাটা একবার দেখে। সাদা টপ আর জিন্স। সাদা টপটাকে মুখের কাছে এনে ঘ্রান নেয় কবির। মিষ্টি একটি গন্ধ পায় সে। কবির জানে এটি স্নিগ্ধার দেহের গন্ধ।
কবির গিফ্টগুলোকে আলমারিতে রাখতে রাখতে আনমনেই গেয়ে ওঠে-
"কেন হঠাৎ তুমি এলে?
তবে নয় কেন পুরোটা জুড়ে?"