15-06-2021, 06:39 AM
(This post was last modified: 15-06-2021, 06:41 AM by DHRITHARASTHA. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব ২।
___________ ।
অর্ণবের শরীরে কোন আঘাত বা প্রতিরোধের চিহ্ন ও নেই, পরনে স্টাইলিশ জামা কাপড় আর ব্যাগে টাকাতে ভর্তি, তবে তফাৎ শুধু দুজায়গাতে । প্রথমত এই মৃত্যুতে মানুষটির শরীরের তাপ কমে যাওয়াতে আচমকা স্ট্রোক হয়ে মারা গেছেন, আর দ্বিতীয়ত এইবার ছেলের জায়গায় একটি তরুণী মেয়ে, নাম ঋতুপর্ণা মিশ্র। এই মেয়েটিও কলেজে পড়তো বোটানি নিয়ে, তবে অন্য কলেজে। তার বাড়ীর লোকও যথারীতি জানায় যে ঋতুপর্ণাও যথেষ্ট অসুস্থ ছিল আর তারও বাইরে চিকিৎসা করতে যাবার কথা ছিল, তবে অর্ণবের বাড়ীর লোক আর ঋতুপর্ণার বাড়ীর লোক জোর দিয়েই বলে যে মৃত দুজন কোনভাবেই একে অপরকে চিনতো বা জানতো না। নিশিকান্ত পোড় খাওয়া অফিসার, এই দুই মৃত্যুর মধ্য সে তাড়াতাড়ি একটা লিঙ্ক খুজতে যায়, যুবতী সুন্দরী মেয়ে আর জোয়ান সুন্দর শিক্ষিত ছেলে, হয়তো তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল যেটা বাড়ীর লোকে জানতো না। আর অর্ণব মারা যাওয়াতে হয়তো ঋতুপর্ণাও সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্য করে নিয়েছিলো। কিন্তু এইবারও নিশিকান্ত ব্যর্থ হয়, ঋতুপর্ণা আর অর্ণবের সমস্ত বন্ধুদের জেরা করেও সে কোন তথ্য পায়না, সবাই শুধু একটাই কথা বলে যে দুজনের কারুর মুখেই কোনদিনও একে ওপরের নামও শোনেনি।
তবে নিশিকান্ত কোনদিনও কাউকে বিশ্বাস করার মানুষ ছিলনা তাই সে মোবাইল কোম্পানির কাছে ওই দুজনের নম্বর নিয়ে দারস্থ হয়েও কোন সুবিধা করতে পারে নি, কারন ওই দুজনের মধ্য যে কোনদিনও কথা হয়নি সেটা স্পষ্টই দেখা যাচ্ছিলো। শিকান্তের মাথায় এমনিতেই চুলের আধিক্য কম তার ওপর পর পর এই রকম দুটো মৃত্যু, নিশিকান্ত ভালো করেই বুঝতে পারছিলো যে তার মাথায় টাক পড়তে হয়তো খুব একটা আর দেরি নেই।
ঋতুপর্ণার বাড়ীর লোকও কোন খুনের মামলা করতে রাজী হয়না আর ঋতুপর্ণার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে এটাই লেখা ছিল যে শরীর আগে থেকেই দুর্বল ছিল তার ওপর আচমকাই শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়াতে সেই ধাক্কা সামলাতে না পেরে তার ম্যাসিভ হার্ট এট্যাক হয়। তবে অর্ণবের দেহটা যেমন পাওয়া গেছিলো একটা মড়া নদীর ধারে , ঋতুপর্ণার দেহটা অবশ্য পাওয়া গেছিলো সেই নদীরই একটা ধারে জঙ্গলের মধ্য। তবে তা অর্ণবের দেহ যেখানে পাওয়া গেছিলো তার থেকে চার কিলোমিটার দুরে। নিশিকান্তর মন কিন্তু বলছিল যে এই দুটো মৃত্যুর মধ্য কোথাও যেন একটা যোগসূত্র আছেই কিন্তু সে খুজে পাচ্ছিলো না,
এটা ভাবতে ভাবতেই নিশিকান্তের চোখ থেকে ঘুম একদমই যেন বিদায় নিয়ে নিয়েছিল।
মদ আর নারী দুইই নিশিকান্তের খুব প্রিয় কিন্তু সে সবসময় একটা নিয়মই মেনে চলতো, যতক্ষণ না সে নিজের হাতের কাজ শেষ করতো ততক্ষণ মদ সে ছুতও না । আর মেয়ের শরীর তো দুরের কথা তার ছায়াও মারাতে পছন্দ করতো না,কারন সে জানতো যে কাজকে অসম্মান করে যদি সে নিজেকে ফুর্তির বানে ভাসিয়ে দেয় তাহলে সেই অসম্পূর্ণ কাজটা হয়তো কোনদিনও শেষ হবেনা। নিশিকান্ত তাই কোনও কেস সফল ভাবে শেষ হলে নিজেকে নিজেই পুরস্কার হিসাবে সাতদিনের একটা ফুর্তি, প্রচণ্ড ফুর্তি উপহার দিতো ।
তবে কেস শেষ না হলে আজ অব্দি নিশিকান্ত কোনদিনও মদের একটা ফোঁটাও ছুঁয়ে দেখেনি, তেমনি একটা সফল কেসের পুরস্কার যে দুটো স্কচের বোতল, সেটাও নিশিকান্তের ঠিক করাই থাকে। তবে ঋতুপর্ণার মৃত্যুর পরে নিশিকান্তের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে উঠেছিলো,কারন ইতিমধ্যিই তার ঘরের দেরাজে BLACK LABEL এর তিনটে বোতল জমে গেছিলো আর নিশিকান্ত ছটফট করছিলো সেগুলোকে নিঃশেষ করার জন্য!
কিন্তু সে নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল তাই সে নিরুপায় অবস্থায় দেখে যাছিলো যে কীভাবে একটার পর একটা ছুটি পেরিয়ে যাচ্ছিলো আর বাজারের মাছওয়ালাটা তার দিকে কেমন করুন ভাবে চেয়ে থাকতো, কারন নিশিকান্ত মদের ব্যাপারে খুবই শৌখিন । আর সে ভেটকি মাছ ছাড়া আর কিছু দিয়েই যে মদ খেতে পছন্দ করেনা সেটা মনে হয় এই গোটা শহরটা ইতিমধ্যিই জেনে গেছিলো।
যতদিন নিশিকান্ত মদ খেতে না পায় তার মেজাজ যেন একদম খাট্টা হয়ে থাকে, তার রাজেশ খান্নার মত নরম রোমান্টিক মেজাজ তখন যেন অমিতাভের মত গনগনে হয়ে ওঠে।
নিশিকান্তের এই মেজাজের সঙ্গে তার সহকর্মীরা ভালো ভাবেই ওয়াকিবহাল,তাই বেশ কিছুদিন ধরে খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউই আর নিশিকান্তের সঙ্গে কথা বলছে না। নিশিকান্ত অনেক ভেবে সবে অর্ণব আর ঋতুপর্ণার মৃত্যুর মধ্য কিছু মিল বার করেছিল, আর সেই দুজনের মিল-অমিলগুলো ভালো করে খুঁটীয়ে দেখতে দেখতে একটা হাল্কা আভাস পাচ্ছিলেন এক রহস্যর, গভীর রহস্যর।ভগবান কিন্তু নিশিকান্তের জন্য হয়তো আরও অনেক কঠিন সময় সাজিয়ে রেখেছিলো। নিশিকান্ত হয়তো সবে একটু গুছিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিলো, অর্ণব আর ঋতুপর্ণার মৃত্যুকে, তখনই শুকনো আকাশে থেকে যেন একটা বাজই পরে নিশিকান্তের মাথায়, আর সেই বাজ ছিল আরও একটি দেহ। এবার দেহটি পাওয়া যায় একটি নির্জন শ্মশানে, সেই মড়া নদীর খাত থেকে এই শ্মশানটা ঠিক চার কিলোমিটার দুরে আর এইবার দেহটি একটি মাঝবয়েসী পুরুষ মানুষের, আর উনি কলকাতার এক নামকরা কলেজ লেকচারার ছিলেন রসায়নের । ওনার নাম ছিল প্রফেসর ভৈরব হাজরা। মৃত্যুর সময় ওনার পরনে ছিল দামী কোট, প্যান্ট আর ওনার পকেটেও ব্যাগ ভর্তি টাকা ছিল।
ভৈরব হাজরার পরিবার বলতে সেরকম কেউ ছিলনা, তিনি অকৃতদার ছিলেন । ওনার সংসার বলতে ওনার এক দূরসম্পর্কের ভাগ্নে ছাড়া কেউই ছিলনা, সেই ভাগ্নের বাড়ীতেই এসেছিলেন ভৈরব বাবু আর তারপরেই এই ঘটনা। নিশিকান্ত ওনার ভাগ্নে সুমিতের কাছে জানতে পারেন যে ভৈরব বাবু বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন, আর উনি সামনের মাসেই ছুটিতে বাইরে চিকিৎসা করাতে যাবার কথা ভাবছিলেন আর তার আগে একটু ভাগ্নের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। ভৈরব বাবু বরাবরই একটু প্রকৃতি প্রেমিক ছিলেন তাই সেই নদীর ধারে শ্মশানে প্রায় ঘুরতে যেতেন আর তারপরেই ওনার আচমকা মৃত্যু। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ভৈরব বাবুর মৃত্যুর কারন হিসাবে সেই হার্ট এট্যাক, তবে তা হটাৎ প্রেশার বেড়ে যাওয়ার জন্য। এমনিতেই ভৈরববাবু হাই প্রেশারের রুগী ছিলেন আর নিয়মিত ওষুধও খেতেন, তবে হয়তো সেই সময় তার সঙ্গে ওষুধ ছিলনা আর প্রেশার বেড়ে যাওয়াতে তার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু।
নিশিকান্ত এবারও সুমিতবাবুকে একটা মামলা ঋজু করতে বললে, সুমিতবাবু নিশিকান্তের কাছে হাতজোড় করে বলেন ''সার মামা তো মারাই গেছেন ,এবার আর ওনাকে টানাহেঁচড়া না করে দয়া করে আমাকে ওনার শেষকৃত্য করতে দয়া করে অনুমতি দেন''।
এতদিন ধরে সহায় সাহেব চুপ করে ছিলেন, কারন ওনার ভরসা ছিল নিশিকান্তের ওপরে, তাই দু দুটো অস্বাভাবিক মৃত্যু স্বত্তেও উনি নিশিকান্তকে কোনও চাপ দেননি।
কিন্তু এইবার তিন নম্বর মৃত্যুর পরে সহায় সাহেব এক সকালে নিশিকান্তকে ফোন করেন আর খুব ক্যাসুয়ালি বলেন ' নিশি আভি মুড ক্যায়সা হ্যায় ? তুমহারে ইলাকা মে তিন তিন অজিব মৌত হও গ্যায়া ওর তুম ক্যায়া কর রহা হ্যায় ভাই?''
নিশিকান্ত তার জীবনে যত অফিসারের অধিনে কাজ করেছে তার মধ্য সে সব থেকে বেশী সম্মান এই সহায় সাহেবকেই করতো, কারন সহায় সাহেব সারা জীবন নিজের পদন্নতির থেকে সবসময় তার জুনিয়ারদের সাফল্য বেশী খুশী হতেন। তাই যেকোনো শক্ত কেসে উনি তার জুনিয়ারদের যথাসাধ্য হেল্প করলেও তার ক্রেডিট নিজে কক্ষনোই নিতে চাইতেন না। তাই এই রকম একটা অফিসার যখন তাকে একটা ব্যাপারে দেখতে বলছে,তখন সেটা নিশিকান্তের কাছে খুবই সম্মানে লাগলো কারন সহায় সাহেব কক্ষনোই তার জুনিয়ারদের প্রেশার দিতেন না।
নিশিকান্ত গম্ভীর গলায় সহায় সাহেবের প্রশ্নের জবাবে বলেন
'' সার আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি, তবে একটা কথা আমি আপনাকে এখনই জানাতে পারি যে আমার এতদিনের অভিজ্ঞতা বলছে যে এই মৃত্যুগুলো কোনমতেই স্বাভাবিক নয়, হতেই পারেনা।
কারন পরপর তিনটে মৃত্যু আর সবগুলোর ধরন মোটামোটি একই। তিনজনেই অসুস্থ ছিল, বাইরে চিকিৎসা করাতে যাবার কথা চলছিলো আর ঠিক বাইরে যাবার আগেই সবার মৃত্যু। আরেকটা মিলও আছে সার এদের সবার মধ্য সেটা হল যে এরা সবাই কলেজে হয় পরে না হয় পড়ান আর সবাই বিজ্ঞানের কোন না কোন বিভাগের সঙ্গেই যুক্ত। তবে সার এইসব তো কাকতালীয় হতে পারে কিন্তু দুটো পয়েন্ট আছে যেটা এই তিনটে মৃত্যুকে অন্তত একপয়েন্টে মিলিয়ে দিয়েছে,সেটা হল সার এদের মৃত্যুর জায়গা সবই কিন্তু ওই নদীর ধারেই বা তার চার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্য,আর সার যেটা আমার সব থেকে অদ্ভুত লেগেছে সেটা হল সবারই পরনে ভালো জামাকাপড় ছিল,ব্যাগে টাঁকায় ভর্তি ছিল আর প্রত্যকের ব্যাগের মধ্যই সার আমি একটা অদ্ভুত জিনিষ খুজে পেয়েছে যেটা থেকেই আমার মনে হয়েছে যে এই তিনটে মৃত্যু কোনও না কোনও ভাবে অবশ্যই জড়িত''
সহায় সাহেব এতক্ষণ ধরে চুপচাপ নিশিকান্তের একটানা বিশ্লেষণ শুনে যাচ্ছিলেন, এবার নিশিকান্ত থামতেই তিনি আগ্রহের সঙ্গেই বলে উঠেন ''কি হলো এই ভাবে চুপ করে গেলে কেন? কি পেয়েছো বলই না!''
নিশিকান্ত এবার ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে একটু চুপ করে যান, অল্প সময় নিয়ে শান্ত, গম্ভীর গলাতে সে বলে উঠে ''সার আমি সত্যি করেই অদ্ভুত জিনিষ পেয়েছি, আমি তাদের প্রত্যাকের ব্যাগের মধ্যই একটা করে ''মিকি মাউসের'' স্টিকার পেয়েছি সার''
ধৃতরাষ্ট্র - দা বস !