13-06-2021, 09:02 PM
(This post was last modified: 23-07-2021, 11:26 PM by Bichitro. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
রাতের ট্রেন। হাওড়া স্টেশন। এগারোটা বাজে । স্টেশনে বেশ ভালোই লোক জমেছে। পুরো লোকে লোকারণ্য। মনে হচ্ছে সবাই গরমের ছুটি কাটাতে দেশ ভ্রমণে যাচ্ছে।
সবাই এলো আখতারকে ছাড়তে। সূর্য আখতারের ছোট লাগেজটা ট্রেনের কামরায় তুলে দিল। জানলার ধারে সিট পেয়েছে সে। ববিতা বারবার বলছে “ গিয়ে একবার ফোন করবে কিন্তু মনে করে ! „
“ এই কথাটা তুমি কতবার বলবে বলোতো ? „
“ অতো কথা কিসের ? বারবার বলছি বেশ করেছি। আবার বলবো। ফোন করবে পৌঁছেই। আমি কিন্তু তোমার ফোনের অপেক্ষা করবো। „ আদেশ করলো ববিতা।
“ আরে করবো করবো । এতো বার বলার দরকার নেই। „
ট্রেন ছাড়ার আগে রবি খিড়কির কাছে এসে বললো “ আমার মাকে ভুলে যাবি না তো ? „ প্রশ্নটা অবশ্য আখতার ছাড়া কেউ শুনতে পেল না ।
আখতার কিছু বললো না। ট্রেন ছেড়ে দিল । সবাই জানলা দিয়ে বললো “ সাবধানে যেও। „
ভুলে না গেলেও ভুলতে চেষ্টা করলো আখতার। আর ভুলতে সাহায্য করলো তার সামনে বসে থাকা একটা মহিলা। কুমারী রূপসী বঙ্গ ললনা । আশে পশে আরো কয়েকজন আছে । তবে তাদের দিকে বেশি দৃষ্টিপাত করলো না আখতার। তার সামনেই যে তন্বী মহিলা বসে আছে তার লম্বাটে মুখ , ফর্সা , টানাটানা চোখ , সরু ঠোঁট । জিন্স প্যান্ট আর জামা পড়ে আছে। অনেকটা তামান্না ভাটিয়ার মতো ফিগার। বয়স আন্দাজ সাতাশ আঠাশ হবে।
মেয়েটাকে দেখেই তার জাসমিন এর কথা মনে পড়লো । আখতারের জন্য পাগল মেয়েটা। এইরকম তাগরাই ঘোড়ার মতো লিঙ্গ নিয়ে ঘুরলে যে কেউ পাগল হয়ে যাবে। তার উপর এমন পেশীবহুল শরীর কজনের আছে । জেসমিন আখতারের থেকে তিন বছরের বড়ো । তবে আখতার কখনো পাত্তা দেয়নি তাকে । আখতারের তো মিল্ফ টাইপ মহিলা পছন্দ । সামনে বসে থাকা এই বঙ্গ ললনা কে দেখে মনে মনে বললো --- অনেক তো হলে মিল্ফ সেক্স। এবার একটু জিরো ফিগার এর স্বাদ নেওয়া যাবে। পাঁকা পেঁপে তো অনেক খেলাম এবার একটু ডাঁসা পেয়ারা নুন মরিচ দিয়ে খাওয়া যাবে। দুটো খাওয়ার মজাই আলাদা আলাদা। এটা ভেবেই আখতার একটু হেঁসে উঠলো । আখতারের হাঁসি দেখে সামনে বসা মেয়েটা কি মনে করলো জানি না । তবে সেও একটু হেঁসে উঠলো ।
সকালে ঠিক সময়েই ঘুম ভাঙলো তার। আর চারটে স্টেশন পরেই গঞ্জপুর স্টেশন চলে আসবে। সে উঠে মুখে জল দিয়ে দিল। সামনের বার্থে ভদ্র মহিলা এখনো ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর গঞ্জপুর চলে আসলো। রোদ এখনো তেমন ওঠেনি। নিজের সুটকেস ব্যাগ নিয়ে নামতেই কিছুদূরে দাঁড়িয়ে থাকা তার প্রানের বন্ধু ইকবাল হাঁসি মুখে এগিয়ে এলো। সাথে তার নিজের চাচাও আছে। আখতার ইকবালকে কাছে পেয়েই জড়িয়ে ধরলো “ কিরে ফোন করেছিলাম ধরছিলি না কেন ? „
“ আর বলিস না ! এখানে কয়েক মাস ধরে নেটওয়ার্ক এর সমস্যা চলছে। মাঝে মাঝে ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে তো পরমুহূর্তেই একদম নেই। হ্যাঁ রে ! তোর চেহারা তো ভালোই বেড়েছে । „
“ হ্যাঁ । খাটতে হতো না তো ! শুধু খাওয়া আর পড়া। „ মুখে বললো কথা গুলো । আর তোর বৌদির হাতের রান্না খেয়ে -- এই কথাটা মুখে এলেও মুখ থেকে বেড়ালো না ।। না না ওই মহিলাকে যতো ভুলে থাকা যায় ততোই ভালো। “ এখানে সবাই কেমন আছে ? „
আখতারের ব্যাগ হাতে তুলে নিতে নিতে ইকবাল বললো “ এখানে সবাই ভালো। এবার ফলন ভালো হয়েছেতো তাই বেশ ভালো খুশী সবাই। „
ইকবাল চাষ করে। ধান চাষ করে। বাপ মায়ের একমাত্র সন্তান। আখতারের থেকে চার বছরের বড়ো। মাধ্যমিক দিয়েছে কোন মতে। তারপর আর পড়ে নি। এবার আখতারের চাচা এগিয়ে আসতেই তারাও এগিয়ে গেল। আখতার একটা সালাম করলো। তারপর মোটর ভ্যানে উঠে পড়লো।
পাকা রাস্তা ধরে মোটর ভ্যানে চলেছে তারা। বেশ আরামদায়ক রাস্তা। তবে স্টেশন থেকে দশ মিনিট যেতেই একটা মোড় ঘুরতেই মাটির কাঁচা রাস্তা শুরু হলো। এখন আর আরাম নেই। তবে চারিদিকে শষ্য শ্যমলা রুপ দেখে চোখ জুড়িয়ে এলো আখতারের। প্রায় চার পাঁচ মাস পর গ্রামীণ পরিবেশের শোভা দেখলো সে। চারিদিকে সোনালী ধান ক্ষেত। মাঝ বরাবর মাটির রাস্তা। রাস্তার এপাশে ওপাশে কিছু বড়ো বড়ো শাল মহুয়া আম বট অর্জুন কাঁঠাল গাছ রাস্তার যাত্রীদের ছায়া দিচ্ছে। ধান ক্ষেত থেকে একটা সকালের ঠান্ডা হাওয়া ভেসে আসছে। যা শরীরকে জুড়িয়ে দিচ্ছে।
এদিকে ঘুম ভাঙতেই ফোন দেখলো ববিতা। একটাও ফোন করেনি আখতার। বেশ রেগে গেল সে “ ছেলেটাকে বারবার বললাম একটা ফোন করতে। এখনো ফোন করলো না ! „ রাগে গজগজ করতে লাগলো ববিতা। তার ফোনে এখন আখতারের নাম্বার Husband বলে শেভ করা আছে। একবার ফোন করলো। কিন্তু Not reachable.
ববিতার তর্জন গর্জন শুনে রবি উঠে পড়লো । “ জানো তো ! ও কিরকম গেম খেলে ! হয়তো চার্জ শেষ হয়ে গেছে ফোনের তাই ফোন করে নি। „
“ একটুও দায়িত্ব জ্ঞান নেই ছেলেটার। একজন যে অপেক্ষা করছে সে দিকে খেয়াল করবে না। এই হয়েছে তোদের জেনারেশন এর সমস্যা। সারাদিন শুধু গেম আর গেম। „ ববিতার রাগ তবুও যায় না।
আখতারের বাড়ি বেশ বড়ো। তার থেকেও বড়ো পরিবারের সদস্য সংখ্যা। গ্রামের নাম বিলাসপুর। এই গ্রামের বেশ বড়ো একটা পরিবার হলো আখতারের পরিবার। সুনাম আছে এই পরিবারের। এই গ্রামের প্রথম ছেলে হিসেবে আখতার গেছে কলকাতায় পড়তে। তাই সুনাম আরো বেড়ে গেছে। বাড়ি পৌছেই আখতারের দুটো বোন আর ভাই ছেঁকে ধরলো। এরা অবশ্য তার চাচাতো ভাইবোন। তাদের কে দেখেই আখতার খুব খুশি হলো। অনেক দিন পর দেখছে ওদের। হাত মুখ ধুয়ে এসে তাদের জন্য কেনা উপহার গুলো বার করলো। দুটো বোনের জন্য দুটো ফ্রগ। সেটা পেয়ে খুব খুশি তারা। আখতার তাদের খুশি দেখে মনে মনে বললো ---- খুশি তো হবিই । তোদের ভাবির পছন্দ করা যে। কথাটা মনে আসতেই আখতার ভাবলো --- ইসসসসস আবার সেই মহিলা । একে তো ভোলাই যাচ্ছে না।
তারপর আব্বা আম্মিকে সালাম করলো। অনেক কথা হলো। কিন্তু ববিতা আর তার গর্ভের সন্তান নিয়ে কিছু বললো না। ববিতা কে একবারও ফোন করলো না।
এদিকে ববিতা সারাদিন শুধু রাগে গজগজ করছে। “ এখনও ফোন করলো না। কেমন ছেলেরে বাবা !!!! „ আর পাঁচ ছয় মিনিট অন্তর অন্তর আখতারকে ফোন করছে। রবিকে দিয়েও করাচ্ছে।
বর্ধমানে খুব গরম পড়ে। তাই দুপুরে আখতার বাইরে বার হলো না। ভাই বোন চাচা চাচিদের সাথে গল্প করেই কাটালো । বিকালে আখতার আর ইকবাল মাঠে ঘুরতে গেল। আগে যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে। চারিদিকে সোনালী ধান তার মাঝ বরাবর একটা লম্বা আল দেওয়া । সেটা দিয়েই হাঁটছে দুজনে। এখন আখতারের গায়ে একটা জামা আর লুঙ্গি। কিছুদূর যাওয়ার পর সামনে থেকে জেসমিন আর তার বান্ধবী নারগিস কে আসতে দেখলো । আখতারের সামনে আসতেই সে জিজ্ঞেস করলো “ কখন এলো ? কেমন আছো ? „
“ এই সকালে এলাম। আমি ভালো । তুমি কেমন আছো? আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গেছো মনে হচ্ছে ! „
“ ধ্যাৎ ! আমি আর সুন্দর । „ বলে ডান গালে ঝুলতে থাকা চুল কানের পিছনে নিয়ে নিল জেসমিন। সত্যিই অসামান্য সৌন্দর্যের অধিকারীনি এই মেয়ে। লম্বাটে মুখের গড়ন। মুখের সবথেকে আকর্ষণীয় অঙ্গ হলো তার ওই দুটো চোখ । কামনাময়ী মায়াবী চোখ। ববিতা আর ত্রিয়াদি যদি পদ্মিনী রূপের সম্রাজ্ঞী হয় তাহলে জেসমিন চিত্রিণী রূপের রাজকুমারী। এইসবই ভাবছিল আখতার। ববিতার কথা মনে আসতেই আবার মুড খারাপ হয়ে গেল।
“ সত্যি । আমি তো এতদিন কলকাতাতেই ছিলাম। তোমার মতো সুন্দরী খুব কম দেখেছি ওখানে। বাঃ দেখিনি বলাই ভালো । „
“ ধ্যাৎ । „ বলে লজ্জা পেয়ে চলে গেল আর নারগিস এর সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলতে লাগলো। সত্যি তো ! যে ছেলে আগে পাত্তাই দিতো না ! সে আজ এতো প্রশংসা করছে ! অবাক হয় জেসমিন আর নার্গিস।
তারপর অন্ধকার নামলে এদিক ওদিক ঘুরে আখতার বাড়ি চলে আসে। গ্রামে সবাই তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তাই আখতার তাড়াতাড়ি খেতে বসে গেল। খেতে বসে আব্বার প্রশ্ন “ পড়াশোনা ঠিক মতো হচ্ছে তো ? „ সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ মানুষ আখতারের বাবা।
“ হ্যাঁ আব্বা । „
“ দেখিস আবার। কলকাতা বলে কথা। জায়গাটা কিন্তু তেমন ভালো না। পা পিছলে না যায় যেন ! „
“ না , না । সে নিয়ে চিন্তা কোরো না । „ কিভাবে বলবে যে সে একজন কে বিয়ে করে তার বাচ্চার বাপ হয়ে বসে আছে।
“ এখানে খুব কাজের চাপ তাই যাওয়া হয়নি। একদিন গিয়ে দেখে আসবো তোর বন্ধুর বাড়ি। „
আখতার বিষম খেলো। একটু সামলে নিয়ে বললো “ হ্যাঁ , হ্যাঁ। যাবে না কেন ? তবে বোঝো তো , বন্ধুর বাড়ি ! হুট করে না বলে আসবে না। কখন কে কি মনে করে বসবে। „
“ হ্যাঁ , হ্যাঁ । সে ঠিক যখন যাবো তখন আগে থেকেই বলেই যাবো। পড়াশুনা টা কর মন দিয়ে। „
তারপর আর কথা হয় না। ঘুমিয়ে শুয়ে পড়ে। আখতারের ঘরে তার আরো দুই চাচাতো ভাই ঘুমায়। একই বিছানায়।
এদিকে ববিতা রেগে চন্ডী রূপ ধারন করেছে “ সারাদিনে একটাও ফোন নেই। ওকে একবার আসতে দে সামনে , খুন করে ফেলবো আমি। „ রবিকে বললো ববিতা।
রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আখতার কোন একজনকে বিছানায় খুঁজলো , কিন্তু পেলো না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলো তার লিঙ্গ লোহার মতো শক্ত হয়ে উঠেছে । ববিতাকে খুব মনে পড়ছে তাঁর। বিয়ের পর তিনদিন সকালে মুখ দিয়ে ব্লোজব করে দিত সে। বারবার ববিতার কথা মনে পড়ায় আখতার বিরক্ত। একটাই উপায় । আর সেই উপায়ের নাম জেসমিন। তাই সে পেশাব করেই নিজের লিঙ্গ কে শান্ত করালো। হাত দিয়ে স্বমেহন করতে আর ভালো লাগে না।
একটা পুকুর পাড়ে বাঁশ দিয়ে বাঁধানো একটা মাঁচা মতো করা আছে । সবাই সেখানে বসে আড্ডা দেয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে দেয়ে ভাইবোনদের পড়িয়ে ইকবাল আর আখতার সেখানে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।
তখন প্রায় নটা বেজে গেছে। গ্রামের প্রেমিক জাভেদ তাদের সামনে এলো। গ্রামে দুটো জাভেদ আছে। একজন খুব ধার্মিক। ধর্ম নিয়েই থাকে। আর একজন এই প্রেমিক জাভেদ। নায়কের মতো দেখতে না হলেও কথায় জাদু আছে। আর সেই কথার জাদুতেই মেয়েরা ফিদা। প্রতি মাসে গার্লফ্রেন্ড বদলায়। তাই এর নাম প্রেমিক জাভেদ। সে এসে আখতার কে জিজ্ঞেস করলো “ কিরে কেমন আছিস ? কলকাতা কেমন ঘুরলি ? „
“ আমি খুব ভালো আছি জাভেদ ভাই। কালকেই এলাম। কলকাতায় গাছ নেই। দম বন্ধ হয়ে আসে। নিশ্বাস নেওয়া যায় না। „
“ কটা মেয়েকে লাইনে আনলি ? „
“ আরে ধুর ! কি যে বলো না। „
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর জাভেদ ভাই সামনের বড়ো প্রায় দু তলা উচুঁ একটা জাম গাছে উঠে পড়লো। সেটা দেখে আখতার ইকবাল কে জিজ্ঞেস করলো “ এ উপরে উঠছে কেন ? গাছে তো জাম নেই ? তাহলে ? „
“ আরে বুঝলি না ? ফোনে কথা বলার জন্য। উপরে উঠলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়তো । „
“ ওওও !!! „ একটু জোরেই হো হো করে হেঁসে উঠলো আখতার।
এদিকে ববিতার অবস্থা খারাপ। আগের দিন হচ্ছিল রাগ। আজ হচ্ছে দুঃশ্চিন্তা। কিছু হয়নি তো আবার। যা রগচটা ছেলে! রাস্তায় উল্টো পাল্টা কিছু করলো না তো । এই দুঃশ্চিন্তায় খাবারে নুন বেশি দিয়ে দিল। আর সেটা খেয়েই রবির মাথা ঝাঁঝিয়ে উঠলো। এবার সে আখতার কে গালাগালি দিতে শুরু করলো।
বিকালে আবার জেসমিন এর সাথে দেখা । বেশ ভালোই কথা হলো । কলকাতার কথা। কলেজের কথা। ইকবাল তো বলেই বসলো “ মেয়েটা তোর পিছনে লাট্টু পুরো। যখন সুযোগ দিচ্ছে তখন সুযোগ টা নিয়ে নিতেই বলতাম। কিন্তু ওর যে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ! „
আখতার চমকে উঠলো “ কি ! বিয়ে ? „
“ হ্যাঁ । বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । তবে তারিখ এখনও পাকা হয়নি। „
আরও একদিন গেল। ববিতার রাগ দুঃশ্চিন্তার পর আবার রাগ শুরু হলো কিন্তু সেটা নিজের উপর। ত্রিয়াদির কোলে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো “ দিদি ও আমাকে ঠকিয়েছে । আমি আর বাঁচতে চাই না। ও আমাকে বিয়ে করে পালিয়েছে। আমার পেটে বাচ্চা দিয়ে চলে গেছে। „
“ শান্ত হ । একটু ধৈর্য্য ধর। ওর হয়তো কোন সমস্যা হয়েছে তাই ফোন করতে পারছে না । „ রবি ত্রিয়াদি সূর্য বারেবারে আখতারকে ফোন করতে লাগলো। কিন্তু বারবার Not reachable.
তারপরের দিন বিকালে সূর্য অস্ত যেতে শুরু করেছে। ইকবাল আর আখতার বসে হাওয়া খাচ্ছে। তখন জেসমিন এসে বললো “ আমার সাথে একটু ক্ষেতে যাবে ? একা যেতে ভয় লাগছে। আব্বা পাম্প ঘরে ডিজেলের ব্যারেল টা ফেলে এসছে। রাতে চুরি হয়ে যেতে পারে !
“ হ্যাঁ , হ্যাঁ । চলো আমি আসছি । „ এইরকম সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল আখতার।
ইকবাল বললো “ দেখিস , কিছু করিস না যেন । ওর কিন্তু বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। „
আরে ওর তো শুধু বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমার তো বিয়ে হয়ে বাচ্চাও আসতে চলেছে। কথাটা বলতে খুব ইচ্ছা হলো আখতারের। তবে বললো না। তার জায়গায় শুধু একটু হাঁসলো। তারপর জেসমিনের পিছন পিছন চলতে শুরু করলো । আল খুব সরু হয়। একজনই হাঁটতে পারে। তাই জেসমিন এর পিছন পিছন চলতে তার নিতম্বের দুলুনি দেখে মনে মনে বললো এই পাছা ববিতার পাছার কাছে কিছুই না। আজ এই পাছা মারতে কি মজাই যে আসবে উফফফফ । শব্দটা মুখ দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে এলো।
“ কিছু বললে ? „ জেসমিন পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে আখতারকে জিজ্ঞেস করলো।
“ না , না । কিছু না । „
আল শেষ হয়ে ঘাসের রাস্তা পড়তেই জেসমিন জিজ্ঞাসা করলো “ আমার পাশে দাঁড়িয়ে হাঁটতে কি অসুবিধা তোমার ? „
“ আরে অসুবিধা হতে যাবে কেন ? এই নাও তোমার পাশেই এলাম। „ বলে একটু হাঁসলো ।
কিছুদূর যেতেই যখন জেসমিন দেখলো আশেপাশে কেউ নেই তখন সে নিজের গালে পড়ে থাকা চুল গুলো কানের পিছনে দিয়ে দিল। যে কোন আকাঠ মূর্খ ও এর মানে বোঝে। আখতারেরও বুঝতে অসুবিধা হলো না। সে পাশের একটা গাছে জেসমিনকে ঠেলে ঠেসে ধরলো। আখতারের হাতের স্পর্শ নিজের শরীরে পেয়ে জেসমিনের চোখ জলজল করে উঠলো। সে চোখ বন্ধ করে ফেললো। জেসমিন চোখ বন্ধ করতেই আখতার তার কোমড় ধরে তার রসালো ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিল। ঠোঁট বসিয়েই আখতার চোখ বন্ধ করে ফেললো।
চোখ বন্ধ করতেই আখতারের চোখে ববিতার সেই সিঁদুর মাখা মুখটা ভেঁসে এলো। আখতার মুখটা দেখেই যেন বিদ্যুতের শক খেলো। এক ঝটকায় জেসমিনের থেকে দূরে সরে গেল সে।
জেসমিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সে চোখ খুলে দেখলো আখতার সামনের দিকে হাঁটা দিয়েছে। জেসমিন বুঝতেই পারলো না হঠাৎ ছেলেটার হলো টা কি?
“ কিছু হয়েছে ? „
“ না , কিছু না । „ আখতার জেসমিনের দিকে মুখ না ঘুরিয়েই উত্তর দিল।
জেসমিন ও আর কথা বাড়ালো না। কি বলবে সেটাই তো ভেবে পাচ্ছে না। তারপর তারা পাম্প ঘরে গিয়ে ডিজেলের ব্যারেল টা আনলো। আখতার সারা রাস্তা মাথা নিচু করেই রইলো। জেসমিন ভাবলো --- হয়তো আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে সেইজন্য কিছু করলো না। মনে মনে সে আখতারকে ভালোবাসতো । কিন্তু কিছু বললো না। আজ এই ঘটনায় আখতারের প্রতি সেই ভালোবাসা আরো বেড়ে গেল ।
যখন সেই মাঁচার কাছে তারা ফিরলো তখন আখতার দেখলো ইকবাল তখনও বসে আছে। জেসমিন ব্যারেল টা নিয়ে চলে গেল। আখতার বললো “ উপরে উঠলে ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় । তাইতো ? „
“ হ্যাঁ । কেন ? তুই উঠবি নাকি ? „ ইকবাল মাঁচায় বসে জিজ্ঞেস করলো।
ইকবালের কথা শেষ হওয়ার আগেই আখতার কাঠবেড়ালীর মতো নিমেষেই জাম গাছটায় উঠে পড়লো। একটা মোটা শক্ত দেখে ডাল বেছে নিয়ে তাতে বসলো। তারপর ফোন বার করে দেখলো সত্যি টাওয়ারের দুটো দাগ এসছে। সে ববিতাকে ফোন করলো।
এদিকে ববিতার নাওয়া খাওয়া উঠে গেছে। চোখ কোটরে ঢুকে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। চুল এলোমেলো। খাটে শুয়ে আছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা নিয়ে স্ক্রিনে চোখ বোলাতেই চমকে উঠলো। তাতে লেখা আছে --- Husband ।
স্ক্রিনে নামটাই দেখেই ববিতা কেঁদে ফেললো। দুই গাল ভেঁসে গেল বারিধারায়। ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেঁসে এলো একটা স্বর “ হ্যালো । „
“ হ্যালো । কোথায় তুমি ? একবারও ফোন করো নি কেন ? আমাকে কি ভুলে গেলে তুমি ? নাকি ঠকালে ? „গলা বশে গেছে তার ।
“ আরে তোমাকে ঠকাবো কেন আমি ? তুমি আমার সন্তানের মা ! এখানে নেটওয়ার্ক নেই। গাছের মাথায় উঠে বসে তারপর ফোন করছি। „
“ গাছের মাথায় !!!! এক্ষুনি নামো বলছি । „ অশ্রু ভেজা গলায় আদেশ করলো ববিতা।
“ আরে নামছি বাবা , নামছি । শোনো বেশি ফোন করতে পারবো না। এখানে নেটওয়ার্ক একদম নেই। নিজের খেয়াল রেখে। আর আমার সন্তানের খেয়াল রেখো। গরমের ছুটি শেষ হলেই ফিরবো। মাঝে মাঝে ফোন করবো। চিন্তা করো না। রাখছি। „
“ আচ্ছা রাখো । „
ফোনটা কেটে আখতার নিচে নামতেই ইকবালের প্রশ্ন “ কাকে ফোন করেছিলি ? „
“ আরে , আমার বন্ধুকে। এখানে আসার পর একবারও তো ফোন করিনি। চিন্তা করছিল খুব। তাই ফোনটা করলাম। „
“ ওও । „
ফোনটা রাখতেই আরো জোড়ে কেঁদে উঠলো আখতারের সন্তানের মা। আখতারের মুখে এই প্রথম সে সন্তানের কথা শুনলো। দায়িত্ব নিচ্ছে সে। ববিতার আরো বেশি কান্না পাচ্ছে।
পাশেই রবি বসে ছিল। সে সবকিছু দেখছিল শুনছিল। “ বলেছিলাম না ! কোন অসুবিধা হয়েছে। „
কথাটা শেষ হতেই ববিতা রবিকে জড়িয়ে খুব আরো কাঁদলো।
এরপর ববিতা আর চিন্তা করলো না। রাগ করলো না। স্বাভাবিক দিন কাটাতে লাগলো। রাতে দুজনেই দুজন কে বিছানায় খুঁজতে লাগলো। তিন চার দিন অন্তর অন্তর আখতার গাছে উঠে ববিতাকে ফোন করতে লাগলো। গরমের ছুটি শেষ। আখতার এবার কলকাতায় আসার জন্য তৈরি। বাড়ি থেকে বার হওয়ার আগে আব্বা আম্মিকে সালাম করে মনে মনে বললো --- আব্বা আম্মি আমি গোনা করেছি। কেয়ামতের দিন এই গোনা যাতে আমাকে জাহান্নামের আগুনে না পোড়ায় তার জন্য সারাজীবন ববিতার সাথে থাকতে হবে। ববিতার পেটে আমার সন্তানকে পিতৃ স্নেহ দিতে হবে। পারলে আমায় ক্ষমা করো ।
তারপর ইকবাল আর তার চাচা তাকে স্টেশনে ছেড়ে দিল। বিদায় নেওয়ার সময় হয়তো এক ফোঁটা অশ্রু দেখা দিল আখতারের চোখে।
সকালের ট্রেন ধরেছিল সে। পৌঁছতে পৌঁছতে বিকাল হয়ে যাবে। ট্রেনে বসে বসে সে ভাবলো সত্যি কি জাহান্নামের আগুনের ভয় ? নাকি ববিতার চোখের অশ্রুর ভয় ? কোনটা তাকে বেশি ভীত করছে ? সেটা সে ভেবে পেলো না।
--------------------------------ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ----------------------
হাওড়া স্টেশনে নেমে কাউকে দেখতে পেলো না আখতার। ভেবেছিল অন্তত ববিতা আসবে নিতে।। সে স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে ববিতার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা দিল।
যখন আখতার ববিতার বাড়ি পৌছালো। তখন দেখলো দরজা খোলা। ভিতরে ঢুকেই সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বললো “ দরজা এইভাবে খোলা রাখে কেউ ? „
“ রাখতে হয়। যখন দরজা বন্ধ করার লোক বাড়িতেই থাকে না, তখন দরজা খোলা রাখতে হয়। „ রান্নাঘর থেকে কপোট রাগ আর অভিমান দেখিয়ে বললো ববিতা। “ শেষের কয়েকদিন ফোন করোনি কেন? „
“ আরে আগেই তো বললাম যে ওখানে নেটওয়ার্ক এর সমস্যা। „ কথা বলতে বলতে আখতার রান্নাঘরের সামনে চলে এসছে। সে দেখলো রবি আলুর খোসা ছাড়াতে সাহায্য করছে ববিতাকে। আর ববিতা একটা কড়াইতে তেল পেঁয়াজ দিচ্ছে। আখতারের জন্য রাতে স্পেশাল কিছু বানাচ্ছে মনে হয় ববিতা।
আখতারের কথা শেষ হতেই ববিতা ওর দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ দুজন একে অপরকে দেখলো। দেখাটা ক্ষণিকের হলেও এই দেখায় এক শান্তি ছিল। বহুদিন পর তারা একে অপরকে দেখছে। ববিতা দৌড়ে এসে আখতারকে জড়িয়ে ধরলো। চোখ দিয়ে দুটো ফোটা জলও বেরিয়ে এলো বোধহয়।
“ তোর মা কি শুধু কাঁদতেই জানে ? যখন গেছিলাম তখনও কাঁদছিল ! আজকে এসছি আজও কাঁদছে। এতদিন পর এলাম কোথায় হাঁসি মুখে একটু মিষ্টি কথা বলবে তার জায়গায় কাঁদতে শুরু করলে ? „
ববিতা আখতারের বুকে একটা কিল বসিয়ে দিল। এই এক মাসে বেশ ভালোই পেট ফুলেছে ববিতার ।
তারপর দিন যায়। দেখতে দেখতে ববিতার পেট আরো ফুলতে শুরু করলো। ডাক্তার তাকে একদম খাটাখটনি করতে বারন করে দিল। এই কথাটা শোনার পর থেকে ত্রিয়াদি আর ববিতাকে উপরে উঠতে দিল না। নিজের কাছেই রাখলো। সবাই একটাই ফ্লাটে। বাড়ির সব কাজ ত্রিয়াদি আর জয়ী ( ত্রিয়াদি দের কাজের মহিলা ) করতে লাগলো। মাঝে একবার ববিতা বলেছিল “ দিদি তুমি আমার জন্য এতো করছো
“ চুপ কর বলছি !!! „ ধমক দিয়ে উঠলো ত্রিয়াদি। “ যখন রাজকুমার পেটে ছিল তখন তুই কি এইসব করিস নি ? আমার থেকেও বেশি করেছিলি ! „
ববিতা আর কথা বাড়ায় না। দিন যেতে লাগলো ববিতার প্রেগন্যান্সির জন্য ত্রিয়াদি বিভিন্ন এক্সারসাইজ করাতে লাগলো। যেমন Curl and Lift , Plank , Plié , Side-Lying Inner and Outer Thigh ।
এইসব এক্সারসাইজ দেখে আখতার সূর্য কে জিজ্ঞেস করলো “ দিদি এতো ভালো সব আসন যোগব্যায়াম জানে ! আগে জানতাম না তো ! „
“ হ্যাঁ তোমার দিদি আগে কলেজে টিচার ছিল। যোগব্যায়াম এর সহকারী শিক্ষক । „
রাজকুমার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো “ মা তিচার ছিল !! „
“ হ্যাঁ সোনা । তোমার মা তিচার ছিল। „
কিছুক্ষণ রাজকুমারের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আখতার জিজ্ঞেস করলো “ তোমার বাবাকে তো কখনো দেখলাম না ! „
সূর্য বেশ একটা গভীর নিশ্বাস ছেড়ে বললো “ আমার বাবা অজিত পাল। কলকাতা- মুম্বাই , মুম্বাই -কলকাতা করে বেড়ায় ব্যাবসার জন্য। „
অজিতের নাম শুনতেই ত্রিয়াদি সূর্যের দিকে তাকালো। সূর্য মাথা নিচু করে নিল । ত্রিয়াদির এই দৃষ্টিতে রাগ ছিল না। বরং কিছুটা শাসন ছিল ।
তারপর একদিন রাতে ঘুমানোর সময়। ববিতা সবে চোখ বন্ধ করেছে। চোখ করতেই সে অনুভব করলো কেউ একজন তার স্তন নিয়ে খেলছে। চোখ খুলে দেখলো আখতার দুই হাত দিয়ে দুটো স্তন তুলে তুলে দেখছে ।
“ কি হলো ? „
“ অনেক ঝুলে গেছে ! „ দুটো স্তন টিপতে টিপতে বললো আখতার।
“ ঝুলে যায়। যখন মেয়েদের বুকে দুধ আসার সময় হয় তখন মাই ঝুলে যায়। এবার ছাড়ো। ঘুমাতে দাও। „
“ দুধ আসার সময় হয়ে গেছে। আমিও খাবো । „ আখতারের চোখ জলজল করে উঠলো ।
“ না , একদম না। মেয়েদের বুকের দুধ বাচ্চার জন্য যতো পুষ্টিকর বড়োদের জন্য ততোই ক্ষতিকর। „
এরপর আখতার আরো বেশি খেয়াল রাখতে লাগলো ববিতার। ববিতা তাই বললো “ এতো খেয়াল রাখতে হবে না। তোমাদের পড়াশোনা তোমরা করো। আমি ঠিক আছি। „
মাঝে আখতার দুটো ঈদের ছুটিতে আর পূজার সময় বাড়িতে গেল। তবে খুব শীঘ্রই চলে এলো।
দূর্গা পূজার পর ডাক্তার যেদিন ডেলিভারির তারিখ দিয়েছিল। তার আগের দিন রাত থেকেই প্রশব বেদনা শুরু হলো ববিতার । তাই সকাল সকাল সূর্য আর আখতার ববিতাকে নিয়ে ভর্তি করে দিল হসপিটালে । এটাকে অবশ্য নার্সিংহোম বলা চলে।
রবি আর ত্রিয়াদিকে সূর্য বললো “ তোমরা এখানেই থাকো । আমি সময় মতো ডেকে নেবো। রাজকুমার কে নিয়ে গেলে অসুবিধা হতে পারে । আর বাড়িও ফাঁকা রাখা যায় না। „
দুপুরের দিখে নার্স বুঝলো সময় হয়ে এসছে। ডাক্তার ঢুকে গেল অপরেশন থিয়েটারে। সূর্য আর আখতার বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো । সময় যতো এগিয়ে যায় আখতার ততো অধৈর্য হয়ে ওঠে। ওর মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন “ আমার সন্তান মেয়ে হবে নাকি ছেলে ? „
প্রায় এক দেড় ঘন্টা পর ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ এলো। সেই কান্না এতো তীব্র যে পুরো নার্সিংহোম শুনতে পাবে। কান্নার আওয়াজ শুনে আখতার আর সূর্য দুজনেরই চোখে খুশি ধরা পরলো। কিছুক্ষন পর একজন নার্স বার হলো অপরেশন থিয়েটার থেকে। তাকে সূর্য জিজ্ঞেস করলে বললো “ মেয়ে হয়েছে । „
সূর্য তখনই ত্রিয়াদিকে ফোন করে চলে আসতে বললো । আখতারের চোখেমুখে খুশির উচ্ছাস দেখার মতো ।
ত্রিয়াদি রবি আর রাজকুমার কে নিয়ে দুটো ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে চলে এলো নার্সিংহোমে। দশ মিনিটের রাস্তা। একটা অটো ধরলেই যাওয়া যায়।
যখন তারা নার্সিংহোমে এসে পৌঁছালো তখন আখতার আর সূর্য সবে ভিতরে ঢুকেছে । ববিতা তার কন্যা সন্তানকে পাশে নিয়ে শুয়ে আছে।
ত্রিয়াদি ঘরে ঢুকতেই শুনতে পেলো ববিতা বলছে “ তোমার মেয়েকে কোলে নেবে না ? „
আখতার তখন এগিয়ে গিয়ে ববিতার পাশে শুয়ে থাকা মেয়েটাকে কোলে নিল। এই মেয়েটাই কিছুক্ষণ আগে তারস্বরে কান্না করছিল। এখন সে ঘুমাচ্ছে। ভয় ডর হীন নিদ্রা। ছোট্ট গোলগাল মুখ। বড়ো বড়ো চোখ। গাল টকটকে লাল। আর ববিতার মতো তার মেয়েরও ঠোঁটের উপর একটা তিল আছে। নিজের মেয়ের মুখ দেখে আখতারের মনে একটা আলাদা শান্তি এলো যেটা সে জীবনে প্রথম উপলব্ধি করলো।
ত্রিয়াদি আখতারের কোল থেকে শিশু কন্যাকে নিয়ে বললো “ কি সুন্দর দেখতে হয়েছে। এর মুখের তিলটা ঠিক তোর মতো। বাকি তোর স্বামীর মতো দেখতে হয়েছে । এর নাম কি রাখলি ? „
“ ওর প্রথম সন্তান ওই রাখুক । „ বলে আখতারের দিকে তাকালো ববিতা।
“ ববিতার মেয়ে কবিতা । „ আখতার এখন পিতা।
“ বাহ্ খুব সুন্দর নাম। কবিতা । „
নামটা শুনে সবাই খুশি হলো। সবার মন ছুঁয়েছে নামটা। তারপর কবিতা সবার কোলে কোলে ঘুরতে লাগলো। রবির কোলে যখন তার বোন এলো তখন সে কেঁদে ফেললো। একটা বোন হবে এটা তো তার বহু বছরের শখ । আজ আখতার আর তার মা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে। মনে আখতারের প্রতই খুব শ্রদ্ধা জন্মালো । আখখতার রবির চোখে জল দেখে জিজ্ঞেস করলো “ কাঁদছিস কেন ? „
“ না । কিছু না। ও এমনি । „
ঘরে ঢোকার পরেই রাজকুমার ত্রিয়াদিকে ছেড়ে সূর্যের হাত ধরেছিল। সে এবার জিজ্ঞেস করলো “ আমার কি বোন হয়েছে । „
“ হ্যাঁ আমার রাজা সোনা । তোমার বোন হয়েছে। শুধু তোমার কেন ! তোমার রবি দাদার ও বোন হয়েছে। তুমি খুশি তো ? „
“ হ্যাঁ । আমি বোনের সাথে খেলবো। „
“ সে খেলো। খুব খেলো। আগে বড়ো হোক । „ তারপর ঘরের সবাইকে বললো “ তোমরা হয়তো ভুলে গেছো । আজকে শুধু কবিতার জন্মদিন না। আরো একজনের । „
“ আজকে তো তোরও জন্মদিন। „ ত্রিয়াদি তার ছেলের জন্মদিন ভুলে গেছিল।
সূর্য কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকার পর আখতারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে জিজ্ঞেস করলো “ যদি তোমার পরিবার জানতে পারে তোমার সন্তান হয়েছে তাহলে কি করবে ? „
আখতার রবির কোলে থাকা কবিতার মুখের দিকে একটা স্নেহ মাখা দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। তার ভবিষ্যৎ ঠিক করে নিল সে। “ এই ঘরে যারা বর্তমানে উপস্থিত তারাই এখন আমার পরিবার হয়ে গেছে । „
কথাটা শুনে ববিতা আর রবির চোখ খুশিতে জলজল করে উঠলো। আখতারের মনে হলো কথাটা শুনে যেন কবিতাও একটু হাঁসলো।
আমার গল্পটি ফুরালো
নটে গাছটি মুড়ালো
লেখক:----- বিচিত্রবীর্য
--------------------- ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ------------------------
কবিতার জন্মের খুশিতে যখন সবাই আনন্দ করছে , ঠিক সেই সময়ে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে যে বিমানটি লন্ডন থেকে আগত যাত্রী এনে দমদম বিমানবন্দরে এসছে , সেটা থেকে নামলো এক দীর্ঘাঙ্গী সুন্দরী মহিলা। চোখে তার আগুন জ্বলছে। কোন প্রিয়জন কে হারানোর দুঃখ - যা এখন আগুনে পরিনত হয়েছে । সেই আগুন এতোই শক্তিশালী যে সেটা দিয়ে সূর্য কে পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিয়ে গ্রহণ লাগিয়ে দিতে পারে ।
সবাই এলো আখতারকে ছাড়তে। সূর্য আখতারের ছোট লাগেজটা ট্রেনের কামরায় তুলে দিল। জানলার ধারে সিট পেয়েছে সে। ববিতা বারবার বলছে “ গিয়ে একবার ফোন করবে কিন্তু মনে করে ! „
“ এই কথাটা তুমি কতবার বলবে বলোতো ? „
“ অতো কথা কিসের ? বারবার বলছি বেশ করেছি। আবার বলবো। ফোন করবে পৌঁছেই। আমি কিন্তু তোমার ফোনের অপেক্ষা করবো। „ আদেশ করলো ববিতা।
“ আরে করবো করবো । এতো বার বলার দরকার নেই। „
ট্রেন ছাড়ার আগে রবি খিড়কির কাছে এসে বললো “ আমার মাকে ভুলে যাবি না তো ? „ প্রশ্নটা অবশ্য আখতার ছাড়া কেউ শুনতে পেল না ।
আখতার কিছু বললো না। ট্রেন ছেড়ে দিল । সবাই জানলা দিয়ে বললো “ সাবধানে যেও। „
ভুলে না গেলেও ভুলতে চেষ্টা করলো আখতার। আর ভুলতে সাহায্য করলো তার সামনে বসে থাকা একটা মহিলা। কুমারী রূপসী বঙ্গ ললনা । আশে পশে আরো কয়েকজন আছে । তবে তাদের দিকে বেশি দৃষ্টিপাত করলো না আখতার। তার সামনেই যে তন্বী মহিলা বসে আছে তার লম্বাটে মুখ , ফর্সা , টানাটানা চোখ , সরু ঠোঁট । জিন্স প্যান্ট আর জামা পড়ে আছে। অনেকটা তামান্না ভাটিয়ার মতো ফিগার। বয়স আন্দাজ সাতাশ আঠাশ হবে।
মেয়েটাকে দেখেই তার জাসমিন এর কথা মনে পড়লো । আখতারের জন্য পাগল মেয়েটা। এইরকম তাগরাই ঘোড়ার মতো লিঙ্গ নিয়ে ঘুরলে যে কেউ পাগল হয়ে যাবে। তার উপর এমন পেশীবহুল শরীর কজনের আছে । জেসমিন আখতারের থেকে তিন বছরের বড়ো । তবে আখতার কখনো পাত্তা দেয়নি তাকে । আখতারের তো মিল্ফ টাইপ মহিলা পছন্দ । সামনে বসে থাকা এই বঙ্গ ললনা কে দেখে মনে মনে বললো --- অনেক তো হলে মিল্ফ সেক্স। এবার একটু জিরো ফিগার এর স্বাদ নেওয়া যাবে। পাঁকা পেঁপে তো অনেক খেলাম এবার একটু ডাঁসা পেয়ারা নুন মরিচ দিয়ে খাওয়া যাবে। দুটো খাওয়ার মজাই আলাদা আলাদা। এটা ভেবেই আখতার একটু হেঁসে উঠলো । আখতারের হাঁসি দেখে সামনে বসা মেয়েটা কি মনে করলো জানি না । তবে সেও একটু হেঁসে উঠলো ।
সকালে ঠিক সময়েই ঘুম ভাঙলো তার। আর চারটে স্টেশন পরেই গঞ্জপুর স্টেশন চলে আসবে। সে উঠে মুখে জল দিয়ে দিল। সামনের বার্থে ভদ্র মহিলা এখনো ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর গঞ্জপুর চলে আসলো। রোদ এখনো তেমন ওঠেনি। নিজের সুটকেস ব্যাগ নিয়ে নামতেই কিছুদূরে দাঁড়িয়ে থাকা তার প্রানের বন্ধু ইকবাল হাঁসি মুখে এগিয়ে এলো। সাথে তার নিজের চাচাও আছে। আখতার ইকবালকে কাছে পেয়েই জড়িয়ে ধরলো “ কিরে ফোন করেছিলাম ধরছিলি না কেন ? „
“ আর বলিস না ! এখানে কয়েক মাস ধরে নেটওয়ার্ক এর সমস্যা চলছে। মাঝে মাঝে ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে তো পরমুহূর্তেই একদম নেই। হ্যাঁ রে ! তোর চেহারা তো ভালোই বেড়েছে । „
“ হ্যাঁ । খাটতে হতো না তো ! শুধু খাওয়া আর পড়া। „ মুখে বললো কথা গুলো । আর তোর বৌদির হাতের রান্না খেয়ে -- এই কথাটা মুখে এলেও মুখ থেকে বেড়ালো না ।। না না ওই মহিলাকে যতো ভুলে থাকা যায় ততোই ভালো। “ এখানে সবাই কেমন আছে ? „
আখতারের ব্যাগ হাতে তুলে নিতে নিতে ইকবাল বললো “ এখানে সবাই ভালো। এবার ফলন ভালো হয়েছেতো তাই বেশ ভালো খুশী সবাই। „
ইকবাল চাষ করে। ধান চাষ করে। বাপ মায়ের একমাত্র সন্তান। আখতারের থেকে চার বছরের বড়ো। মাধ্যমিক দিয়েছে কোন মতে। তারপর আর পড়ে নি। এবার আখতারের চাচা এগিয়ে আসতেই তারাও এগিয়ে গেল। আখতার একটা সালাম করলো। তারপর মোটর ভ্যানে উঠে পড়লো।
পাকা রাস্তা ধরে মোটর ভ্যানে চলেছে তারা। বেশ আরামদায়ক রাস্তা। তবে স্টেশন থেকে দশ মিনিট যেতেই একটা মোড় ঘুরতেই মাটির কাঁচা রাস্তা শুরু হলো। এখন আর আরাম নেই। তবে চারিদিকে শষ্য শ্যমলা রুপ দেখে চোখ জুড়িয়ে এলো আখতারের। প্রায় চার পাঁচ মাস পর গ্রামীণ পরিবেশের শোভা দেখলো সে। চারিদিকে সোনালী ধান ক্ষেত। মাঝ বরাবর মাটির রাস্তা। রাস্তার এপাশে ওপাশে কিছু বড়ো বড়ো শাল মহুয়া আম বট অর্জুন কাঁঠাল গাছ রাস্তার যাত্রীদের ছায়া দিচ্ছে। ধান ক্ষেত থেকে একটা সকালের ঠান্ডা হাওয়া ভেসে আসছে। যা শরীরকে জুড়িয়ে দিচ্ছে।
এদিকে ঘুম ভাঙতেই ফোন দেখলো ববিতা। একটাও ফোন করেনি আখতার। বেশ রেগে গেল সে “ ছেলেটাকে বারবার বললাম একটা ফোন করতে। এখনো ফোন করলো না ! „ রাগে গজগজ করতে লাগলো ববিতা। তার ফোনে এখন আখতারের নাম্বার Husband বলে শেভ করা আছে। একবার ফোন করলো। কিন্তু Not reachable.
ববিতার তর্জন গর্জন শুনে রবি উঠে পড়লো । “ জানো তো ! ও কিরকম গেম খেলে ! হয়তো চার্জ শেষ হয়ে গেছে ফোনের তাই ফোন করে নি। „
“ একটুও দায়িত্ব জ্ঞান নেই ছেলেটার। একজন যে অপেক্ষা করছে সে দিকে খেয়াল করবে না। এই হয়েছে তোদের জেনারেশন এর সমস্যা। সারাদিন শুধু গেম আর গেম। „ ববিতার রাগ তবুও যায় না।
আখতারের বাড়ি বেশ বড়ো। তার থেকেও বড়ো পরিবারের সদস্য সংখ্যা। গ্রামের নাম বিলাসপুর। এই গ্রামের বেশ বড়ো একটা পরিবার হলো আখতারের পরিবার। সুনাম আছে এই পরিবারের। এই গ্রামের প্রথম ছেলে হিসেবে আখতার গেছে কলকাতায় পড়তে। তাই সুনাম আরো বেড়ে গেছে। বাড়ি পৌছেই আখতারের দুটো বোন আর ভাই ছেঁকে ধরলো। এরা অবশ্য তার চাচাতো ভাইবোন। তাদের কে দেখেই আখতার খুব খুশি হলো। অনেক দিন পর দেখছে ওদের। হাত মুখ ধুয়ে এসে তাদের জন্য কেনা উপহার গুলো বার করলো। দুটো বোনের জন্য দুটো ফ্রগ। সেটা পেয়ে খুব খুশি তারা। আখতার তাদের খুশি দেখে মনে মনে বললো ---- খুশি তো হবিই । তোদের ভাবির পছন্দ করা যে। কথাটা মনে আসতেই আখতার ভাবলো --- ইসসসসস আবার সেই মহিলা । একে তো ভোলাই যাচ্ছে না।
তারপর আব্বা আম্মিকে সালাম করলো। অনেক কথা হলো। কিন্তু ববিতা আর তার গর্ভের সন্তান নিয়ে কিছু বললো না। ববিতা কে একবারও ফোন করলো না।
এদিকে ববিতা সারাদিন শুধু রাগে গজগজ করছে। “ এখনও ফোন করলো না। কেমন ছেলেরে বাবা !!!! „ আর পাঁচ ছয় মিনিট অন্তর অন্তর আখতারকে ফোন করছে। রবিকে দিয়েও করাচ্ছে।
বর্ধমানে খুব গরম পড়ে। তাই দুপুরে আখতার বাইরে বার হলো না। ভাই বোন চাচা চাচিদের সাথে গল্প করেই কাটালো । বিকালে আখতার আর ইকবাল মাঠে ঘুরতে গেল। আগে যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে। চারিদিকে সোনালী ধান তার মাঝ বরাবর একটা লম্বা আল দেওয়া । সেটা দিয়েই হাঁটছে দুজনে। এখন আখতারের গায়ে একটা জামা আর লুঙ্গি। কিছুদূর যাওয়ার পর সামনে থেকে জেসমিন আর তার বান্ধবী নারগিস কে আসতে দেখলো । আখতারের সামনে আসতেই সে জিজ্ঞেস করলো “ কখন এলো ? কেমন আছো ? „
“ এই সকালে এলাম। আমি ভালো । তুমি কেমন আছো? আগের থেকে অনেক সুন্দর হয়ে গেছো মনে হচ্ছে ! „
“ ধ্যাৎ ! আমি আর সুন্দর । „ বলে ডান গালে ঝুলতে থাকা চুল কানের পিছনে নিয়ে নিল জেসমিন। সত্যিই অসামান্য সৌন্দর্যের অধিকারীনি এই মেয়ে। লম্বাটে মুখের গড়ন। মুখের সবথেকে আকর্ষণীয় অঙ্গ হলো তার ওই দুটো চোখ । কামনাময়ী মায়াবী চোখ। ববিতা আর ত্রিয়াদি যদি পদ্মিনী রূপের সম্রাজ্ঞী হয় তাহলে জেসমিন চিত্রিণী রূপের রাজকুমারী। এইসবই ভাবছিল আখতার। ববিতার কথা মনে আসতেই আবার মুড খারাপ হয়ে গেল।
“ সত্যি । আমি তো এতদিন কলকাতাতেই ছিলাম। তোমার মতো সুন্দরী খুব কম দেখেছি ওখানে। বাঃ দেখিনি বলাই ভালো । „
“ ধ্যাৎ । „ বলে লজ্জা পেয়ে চলে গেল আর নারগিস এর সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলতে লাগলো। সত্যি তো ! যে ছেলে আগে পাত্তাই দিতো না ! সে আজ এতো প্রশংসা করছে ! অবাক হয় জেসমিন আর নার্গিস।
তারপর অন্ধকার নামলে এদিক ওদিক ঘুরে আখতার বাড়ি চলে আসে। গ্রামে সবাই তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তাই আখতার তাড়াতাড়ি খেতে বসে গেল। খেতে বসে আব্বার প্রশ্ন “ পড়াশোনা ঠিক মতো হচ্ছে তো ? „ সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ মানুষ আখতারের বাবা।
“ হ্যাঁ আব্বা । „
“ দেখিস আবার। কলকাতা বলে কথা। জায়গাটা কিন্তু তেমন ভালো না। পা পিছলে না যায় যেন ! „
“ না , না । সে নিয়ে চিন্তা কোরো না । „ কিভাবে বলবে যে সে একজন কে বিয়ে করে তার বাচ্চার বাপ হয়ে বসে আছে।
“ এখানে খুব কাজের চাপ তাই যাওয়া হয়নি। একদিন গিয়ে দেখে আসবো তোর বন্ধুর বাড়ি। „
আখতার বিষম খেলো। একটু সামলে নিয়ে বললো “ হ্যাঁ , হ্যাঁ। যাবে না কেন ? তবে বোঝো তো , বন্ধুর বাড়ি ! হুট করে না বলে আসবে না। কখন কে কি মনে করে বসবে। „
“ হ্যাঁ , হ্যাঁ । সে ঠিক যখন যাবো তখন আগে থেকেই বলেই যাবো। পড়াশুনা টা কর মন দিয়ে। „
তারপর আর কথা হয় না। ঘুমিয়ে শুয়ে পড়ে। আখতারের ঘরে তার আরো দুই চাচাতো ভাই ঘুমায়। একই বিছানায়।
এদিকে ববিতা রেগে চন্ডী রূপ ধারন করেছে “ সারাদিনে একটাও ফোন নেই। ওকে একবার আসতে দে সামনে , খুন করে ফেলবো আমি। „ রবিকে বললো ববিতা।
রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আখতার কোন একজনকে বিছানায় খুঁজলো , কিন্তু পেলো না। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলো তার লিঙ্গ লোহার মতো শক্ত হয়ে উঠেছে । ববিতাকে খুব মনে পড়ছে তাঁর। বিয়ের পর তিনদিন সকালে মুখ দিয়ে ব্লোজব করে দিত সে। বারবার ববিতার কথা মনে পড়ায় আখতার বিরক্ত। একটাই উপায় । আর সেই উপায়ের নাম জেসমিন। তাই সে পেশাব করেই নিজের লিঙ্গ কে শান্ত করালো। হাত দিয়ে স্বমেহন করতে আর ভালো লাগে না।
একটা পুকুর পাড়ে বাঁশ দিয়ে বাঁধানো একটা মাঁচা মতো করা আছে । সবাই সেখানে বসে আড্ডা দেয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে দেয়ে ভাইবোনদের পড়িয়ে ইকবাল আর আখতার সেখানে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।
তখন প্রায় নটা বেজে গেছে। গ্রামের প্রেমিক জাভেদ তাদের সামনে এলো। গ্রামে দুটো জাভেদ আছে। একজন খুব ধার্মিক। ধর্ম নিয়েই থাকে। আর একজন এই প্রেমিক জাভেদ। নায়কের মতো দেখতে না হলেও কথায় জাদু আছে। আর সেই কথার জাদুতেই মেয়েরা ফিদা। প্রতি মাসে গার্লফ্রেন্ড বদলায়। তাই এর নাম প্রেমিক জাভেদ। সে এসে আখতার কে জিজ্ঞেস করলো “ কিরে কেমন আছিস ? কলকাতা কেমন ঘুরলি ? „
“ আমি খুব ভালো আছি জাভেদ ভাই। কালকেই এলাম। কলকাতায় গাছ নেই। দম বন্ধ হয়ে আসে। নিশ্বাস নেওয়া যায় না। „
“ কটা মেয়েকে লাইনে আনলি ? „
“ আরে ধুর ! কি যে বলো না। „
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর জাভেদ ভাই সামনের বড়ো প্রায় দু তলা উচুঁ একটা জাম গাছে উঠে পড়লো। সেটা দেখে আখতার ইকবাল কে জিজ্ঞেস করলো “ এ উপরে উঠছে কেন ? গাছে তো জাম নেই ? তাহলে ? „
“ আরে বুঝলি না ? ফোনে কথা বলার জন্য। উপরে উঠলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়তো । „
“ ওওও !!! „ একটু জোরেই হো হো করে হেঁসে উঠলো আখতার।
এদিকে ববিতার অবস্থা খারাপ। আগের দিন হচ্ছিল রাগ। আজ হচ্ছে দুঃশ্চিন্তা। কিছু হয়নি তো আবার। যা রগচটা ছেলে! রাস্তায় উল্টো পাল্টা কিছু করলো না তো । এই দুঃশ্চিন্তায় খাবারে নুন বেশি দিয়ে দিল। আর সেটা খেয়েই রবির মাথা ঝাঁঝিয়ে উঠলো। এবার সে আখতার কে গালাগালি দিতে শুরু করলো।
বিকালে আবার জেসমিন এর সাথে দেখা । বেশ ভালোই কথা হলো । কলকাতার কথা। কলেজের কথা। ইকবাল তো বলেই বসলো “ মেয়েটা তোর পিছনে লাট্টু পুরো। যখন সুযোগ দিচ্ছে তখন সুযোগ টা নিয়ে নিতেই বলতাম। কিন্তু ওর যে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ! „
আখতার চমকে উঠলো “ কি ! বিয়ে ? „
“ হ্যাঁ । বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । তবে তারিখ এখনও পাকা হয়নি। „
আরও একদিন গেল। ববিতার রাগ দুঃশ্চিন্তার পর আবার রাগ শুরু হলো কিন্তু সেটা নিজের উপর। ত্রিয়াদির কোলে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো “ দিদি ও আমাকে ঠকিয়েছে । আমি আর বাঁচতে চাই না। ও আমাকে বিয়ে করে পালিয়েছে। আমার পেটে বাচ্চা দিয়ে চলে গেছে। „
“ শান্ত হ । একটু ধৈর্য্য ধর। ওর হয়তো কোন সমস্যা হয়েছে তাই ফোন করতে পারছে না । „ রবি ত্রিয়াদি সূর্য বারেবারে আখতারকে ফোন করতে লাগলো। কিন্তু বারবার Not reachable.
তারপরের দিন বিকালে সূর্য অস্ত যেতে শুরু করেছে। ইকবাল আর আখতার বসে হাওয়া খাচ্ছে। তখন জেসমিন এসে বললো “ আমার সাথে একটু ক্ষেতে যাবে ? একা যেতে ভয় লাগছে। আব্বা পাম্প ঘরে ডিজেলের ব্যারেল টা ফেলে এসছে। রাতে চুরি হয়ে যেতে পারে !
“ হ্যাঁ , হ্যাঁ । চলো আমি আসছি । „ এইরকম সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল আখতার।
ইকবাল বললো “ দেখিস , কিছু করিস না যেন । ওর কিন্তু বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। „
আরে ওর তো শুধু বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমার তো বিয়ে হয়ে বাচ্চাও আসতে চলেছে। কথাটা বলতে খুব ইচ্ছা হলো আখতারের। তবে বললো না। তার জায়গায় শুধু একটু হাঁসলো। তারপর জেসমিনের পিছন পিছন চলতে শুরু করলো । আল খুব সরু হয়। একজনই হাঁটতে পারে। তাই জেসমিন এর পিছন পিছন চলতে তার নিতম্বের দুলুনি দেখে মনে মনে বললো এই পাছা ববিতার পাছার কাছে কিছুই না। আজ এই পাছা মারতে কি মজাই যে আসবে উফফফফ । শব্দটা মুখ দিয়ে অজান্তেই বেরিয়ে এলো।
“ কিছু বললে ? „ জেসমিন পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে আখতারকে জিজ্ঞেস করলো।
“ না , না । কিছু না । „
আল শেষ হয়ে ঘাসের রাস্তা পড়তেই জেসমিন জিজ্ঞাসা করলো “ আমার পাশে দাঁড়িয়ে হাঁটতে কি অসুবিধা তোমার ? „
“ আরে অসুবিধা হতে যাবে কেন ? এই নাও তোমার পাশেই এলাম। „ বলে একটু হাঁসলো ।
কিছুদূর যেতেই যখন জেসমিন দেখলো আশেপাশে কেউ নেই তখন সে নিজের গালে পড়ে থাকা চুল গুলো কানের পিছনে দিয়ে দিল। যে কোন আকাঠ মূর্খ ও এর মানে বোঝে। আখতারেরও বুঝতে অসুবিধা হলো না। সে পাশের একটা গাছে জেসমিনকে ঠেলে ঠেসে ধরলো। আখতারের হাতের স্পর্শ নিজের শরীরে পেয়ে জেসমিনের চোখ জলজল করে উঠলো। সে চোখ বন্ধ করে ফেললো। জেসমিন চোখ বন্ধ করতেই আখতার তার কোমড় ধরে তার রসালো ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দিল। ঠোঁট বসিয়েই আখতার চোখ বন্ধ করে ফেললো।
চোখ বন্ধ করতেই আখতারের চোখে ববিতার সেই সিঁদুর মাখা মুখটা ভেঁসে এলো। আখতার মুখটা দেখেই যেন বিদ্যুতের শক খেলো। এক ঝটকায় জেসমিনের থেকে দূরে সরে গেল সে।
জেসমিন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সে চোখ খুলে দেখলো আখতার সামনের দিকে হাঁটা দিয়েছে। জেসমিন বুঝতেই পারলো না হঠাৎ ছেলেটার হলো টা কি?
“ কিছু হয়েছে ? „
“ না , কিছু না । „ আখতার জেসমিনের দিকে মুখ না ঘুরিয়েই উত্তর দিল।
জেসমিন ও আর কথা বাড়ালো না। কি বলবে সেটাই তো ভেবে পাচ্ছে না। তারপর তারা পাম্প ঘরে গিয়ে ডিজেলের ব্যারেল টা আনলো। আখতার সারা রাস্তা মাথা নিচু করেই রইলো। জেসমিন ভাবলো --- হয়তো আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে সেইজন্য কিছু করলো না। মনে মনে সে আখতারকে ভালোবাসতো । কিন্তু কিছু বললো না। আজ এই ঘটনায় আখতারের প্রতি সেই ভালোবাসা আরো বেড়ে গেল ।
যখন সেই মাঁচার কাছে তারা ফিরলো তখন আখতার দেখলো ইকবাল তখনও বসে আছে। জেসমিন ব্যারেল টা নিয়ে চলে গেল। আখতার বললো “ উপরে উঠলে ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় । তাইতো ? „
“ হ্যাঁ । কেন ? তুই উঠবি নাকি ? „ ইকবাল মাঁচায় বসে জিজ্ঞেস করলো।
ইকবালের কথা শেষ হওয়ার আগেই আখতার কাঠবেড়ালীর মতো নিমেষেই জাম গাছটায় উঠে পড়লো। একটা মোটা শক্ত দেখে ডাল বেছে নিয়ে তাতে বসলো। তারপর ফোন বার করে দেখলো সত্যি টাওয়ারের দুটো দাগ এসছে। সে ববিতাকে ফোন করলো।
এদিকে ববিতার নাওয়া খাওয়া উঠে গেছে। চোখ কোটরে ঢুকে গেছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। চুল এলোমেলো। খাটে শুয়ে আছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা নিয়ে স্ক্রিনে চোখ বোলাতেই চমকে উঠলো। তাতে লেখা আছে --- Husband ।
স্ক্রিনে নামটাই দেখেই ববিতা কেঁদে ফেললো। দুই গাল ভেঁসে গেল বারিধারায়। ফোনটা রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেঁসে এলো একটা স্বর “ হ্যালো । „
“ হ্যালো । কোথায় তুমি ? একবারও ফোন করো নি কেন ? আমাকে কি ভুলে গেলে তুমি ? নাকি ঠকালে ? „গলা বশে গেছে তার ।
“ আরে তোমাকে ঠকাবো কেন আমি ? তুমি আমার সন্তানের মা ! এখানে নেটওয়ার্ক নেই। গাছের মাথায় উঠে বসে তারপর ফোন করছি। „
“ গাছের মাথায় !!!! এক্ষুনি নামো বলছি । „ অশ্রু ভেজা গলায় আদেশ করলো ববিতা।
“ আরে নামছি বাবা , নামছি । শোনো বেশি ফোন করতে পারবো না। এখানে নেটওয়ার্ক একদম নেই। নিজের খেয়াল রেখে। আর আমার সন্তানের খেয়াল রেখো। গরমের ছুটি শেষ হলেই ফিরবো। মাঝে মাঝে ফোন করবো। চিন্তা করো না। রাখছি। „
“ আচ্ছা রাখো । „
ফোনটা কেটে আখতার নিচে নামতেই ইকবালের প্রশ্ন “ কাকে ফোন করেছিলি ? „
“ আরে , আমার বন্ধুকে। এখানে আসার পর একবারও তো ফোন করিনি। চিন্তা করছিল খুব। তাই ফোনটা করলাম। „
“ ওও । „
ফোনটা রাখতেই আরো জোড়ে কেঁদে উঠলো আখতারের সন্তানের মা। আখতারের মুখে এই প্রথম সে সন্তানের কথা শুনলো। দায়িত্ব নিচ্ছে সে। ববিতার আরো বেশি কান্না পাচ্ছে।
পাশেই রবি বসে ছিল। সে সবকিছু দেখছিল শুনছিল। “ বলেছিলাম না ! কোন অসুবিধা হয়েছে। „
কথাটা শেষ হতেই ববিতা রবিকে জড়িয়ে খুব আরো কাঁদলো।
এরপর ববিতা আর চিন্তা করলো না। রাগ করলো না। স্বাভাবিক দিন কাটাতে লাগলো। রাতে দুজনেই দুজন কে বিছানায় খুঁজতে লাগলো। তিন চার দিন অন্তর অন্তর আখতার গাছে উঠে ববিতাকে ফোন করতে লাগলো। গরমের ছুটি শেষ। আখতার এবার কলকাতায় আসার জন্য তৈরি। বাড়ি থেকে বার হওয়ার আগে আব্বা আম্মিকে সালাম করে মনে মনে বললো --- আব্বা আম্মি আমি গোনা করেছি। কেয়ামতের দিন এই গোনা যাতে আমাকে জাহান্নামের আগুনে না পোড়ায় তার জন্য সারাজীবন ববিতার সাথে থাকতে হবে। ববিতার পেটে আমার সন্তানকে পিতৃ স্নেহ দিতে হবে। পারলে আমায় ক্ষমা করো ।
তারপর ইকবাল আর তার চাচা তাকে স্টেশনে ছেড়ে দিল। বিদায় নেওয়ার সময় হয়তো এক ফোঁটা অশ্রু দেখা দিল আখতারের চোখে।
সকালের ট্রেন ধরেছিল সে। পৌঁছতে পৌঁছতে বিকাল হয়ে যাবে। ট্রেনে বসে বসে সে ভাবলো সত্যি কি জাহান্নামের আগুনের ভয় ? নাকি ববিতার চোখের অশ্রুর ভয় ? কোনটা তাকে বেশি ভীত করছে ? সেটা সে ভেবে পেলো না।
--------------------------------ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ----------------------
হাওড়া স্টেশনে নেমে কাউকে দেখতে পেলো না আখতার। ভেবেছিল অন্তত ববিতা আসবে নিতে।। সে স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে ববিতার বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা দিল।
যখন আখতার ববিতার বাড়ি পৌছালো। তখন দেখলো দরজা খোলা। ভিতরে ঢুকেই সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বললো “ দরজা এইভাবে খোলা রাখে কেউ ? „
“ রাখতে হয়। যখন দরজা বন্ধ করার লোক বাড়িতেই থাকে না, তখন দরজা খোলা রাখতে হয়। „ রান্নাঘর থেকে কপোট রাগ আর অভিমান দেখিয়ে বললো ববিতা। “ শেষের কয়েকদিন ফোন করোনি কেন? „
“ আরে আগেই তো বললাম যে ওখানে নেটওয়ার্ক এর সমস্যা। „ কথা বলতে বলতে আখতার রান্নাঘরের সামনে চলে এসছে। সে দেখলো রবি আলুর খোসা ছাড়াতে সাহায্য করছে ববিতাকে। আর ববিতা একটা কড়াইতে তেল পেঁয়াজ দিচ্ছে। আখতারের জন্য রাতে স্পেশাল কিছু বানাচ্ছে মনে হয় ববিতা।
আখতারের কথা শেষ হতেই ববিতা ওর দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ দুজন একে অপরকে দেখলো। দেখাটা ক্ষণিকের হলেও এই দেখায় এক শান্তি ছিল। বহুদিন পর তারা একে অপরকে দেখছে। ববিতা দৌড়ে এসে আখতারকে জড়িয়ে ধরলো। চোখ দিয়ে দুটো ফোটা জলও বেরিয়ে এলো বোধহয়।
“ তোর মা কি শুধু কাঁদতেই জানে ? যখন গেছিলাম তখনও কাঁদছিল ! আজকে এসছি আজও কাঁদছে। এতদিন পর এলাম কোথায় হাঁসি মুখে একটু মিষ্টি কথা বলবে তার জায়গায় কাঁদতে শুরু করলে ? „
ববিতা আখতারের বুকে একটা কিল বসিয়ে দিল। এই এক মাসে বেশ ভালোই পেট ফুলেছে ববিতার ।
তারপর দিন যায়। দেখতে দেখতে ববিতার পেট আরো ফুলতে শুরু করলো। ডাক্তার তাকে একদম খাটাখটনি করতে বারন করে দিল। এই কথাটা শোনার পর থেকে ত্রিয়াদি আর ববিতাকে উপরে উঠতে দিল না। নিজের কাছেই রাখলো। সবাই একটাই ফ্লাটে। বাড়ির সব কাজ ত্রিয়াদি আর জয়ী ( ত্রিয়াদি দের কাজের মহিলা ) করতে লাগলো। মাঝে একবার ববিতা বলেছিল “ দিদি তুমি আমার জন্য এতো করছো
“ চুপ কর বলছি !!! „ ধমক দিয়ে উঠলো ত্রিয়াদি। “ যখন রাজকুমার পেটে ছিল তখন তুই কি এইসব করিস নি ? আমার থেকেও বেশি করেছিলি ! „
ববিতা আর কথা বাড়ায় না। দিন যেতে লাগলো ববিতার প্রেগন্যান্সির জন্য ত্রিয়াদি বিভিন্ন এক্সারসাইজ করাতে লাগলো। যেমন Curl and Lift , Plank , Plié , Side-Lying Inner and Outer Thigh ।
এইসব এক্সারসাইজ দেখে আখতার সূর্য কে জিজ্ঞেস করলো “ দিদি এতো ভালো সব আসন যোগব্যায়াম জানে ! আগে জানতাম না তো ! „
“ হ্যাঁ তোমার দিদি আগে কলেজে টিচার ছিল। যোগব্যায়াম এর সহকারী শিক্ষক । „
রাজকুমার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো “ মা তিচার ছিল !! „
“ হ্যাঁ সোনা । তোমার মা তিচার ছিল। „
কিছুক্ষণ রাজকুমারের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আখতার জিজ্ঞেস করলো “ তোমার বাবাকে তো কখনো দেখলাম না ! „
সূর্য বেশ একটা গভীর নিশ্বাস ছেড়ে বললো “ আমার বাবা অজিত পাল। কলকাতা- মুম্বাই , মুম্বাই -কলকাতা করে বেড়ায় ব্যাবসার জন্য। „
অজিতের নাম শুনতেই ত্রিয়াদি সূর্যের দিকে তাকালো। সূর্য মাথা নিচু করে নিল । ত্রিয়াদির এই দৃষ্টিতে রাগ ছিল না। বরং কিছুটা শাসন ছিল ।
তারপর একদিন রাতে ঘুমানোর সময়। ববিতা সবে চোখ বন্ধ করেছে। চোখ করতেই সে অনুভব করলো কেউ একজন তার স্তন নিয়ে খেলছে। চোখ খুলে দেখলো আখতার দুই হাত দিয়ে দুটো স্তন তুলে তুলে দেখছে ।
“ কি হলো ? „
“ অনেক ঝুলে গেছে ! „ দুটো স্তন টিপতে টিপতে বললো আখতার।
“ ঝুলে যায়। যখন মেয়েদের বুকে দুধ আসার সময় হয় তখন মাই ঝুলে যায়। এবার ছাড়ো। ঘুমাতে দাও। „
“ দুধ আসার সময় হয়ে গেছে। আমিও খাবো । „ আখতারের চোখ জলজল করে উঠলো ।
“ না , একদম না। মেয়েদের বুকের দুধ বাচ্চার জন্য যতো পুষ্টিকর বড়োদের জন্য ততোই ক্ষতিকর। „
এরপর আখতার আরো বেশি খেয়াল রাখতে লাগলো ববিতার। ববিতা তাই বললো “ এতো খেয়াল রাখতে হবে না। তোমাদের পড়াশোনা তোমরা করো। আমি ঠিক আছি। „
মাঝে আখতার দুটো ঈদের ছুটিতে আর পূজার সময় বাড়িতে গেল। তবে খুব শীঘ্রই চলে এলো।
দূর্গা পূজার পর ডাক্তার যেদিন ডেলিভারির তারিখ দিয়েছিল। তার আগের দিন রাত থেকেই প্রশব বেদনা শুরু হলো ববিতার । তাই সকাল সকাল সূর্য আর আখতার ববিতাকে নিয়ে ভর্তি করে দিল হসপিটালে । এটাকে অবশ্য নার্সিংহোম বলা চলে।
রবি আর ত্রিয়াদিকে সূর্য বললো “ তোমরা এখানেই থাকো । আমি সময় মতো ডেকে নেবো। রাজকুমার কে নিয়ে গেলে অসুবিধা হতে পারে । আর বাড়িও ফাঁকা রাখা যায় না। „
দুপুরের দিখে নার্স বুঝলো সময় হয়ে এসছে। ডাক্তার ঢুকে গেল অপরেশন থিয়েটারে। সূর্য আর আখতার বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো । সময় যতো এগিয়ে যায় আখতার ততো অধৈর্য হয়ে ওঠে। ওর মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন “ আমার সন্তান মেয়ে হবে নাকি ছেলে ? „
প্রায় এক দেড় ঘন্টা পর ঘর থেকে কান্নার আওয়াজ এলো। সেই কান্না এতো তীব্র যে পুরো নার্সিংহোম শুনতে পাবে। কান্নার আওয়াজ শুনে আখতার আর সূর্য দুজনেরই চোখে খুশি ধরা পরলো। কিছুক্ষন পর একজন নার্স বার হলো অপরেশন থিয়েটার থেকে। তাকে সূর্য জিজ্ঞেস করলে বললো “ মেয়ে হয়েছে । „
সূর্য তখনই ত্রিয়াদিকে ফোন করে চলে আসতে বললো । আখতারের চোখেমুখে খুশির উচ্ছাস দেখার মতো ।
ত্রিয়াদি রবি আর রাজকুমার কে নিয়ে দুটো ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে চলে এলো নার্সিংহোমে। দশ মিনিটের রাস্তা। একটা অটো ধরলেই যাওয়া যায়।
যখন তারা নার্সিংহোমে এসে পৌঁছালো তখন আখতার আর সূর্য সবে ভিতরে ঢুকেছে । ববিতা তার কন্যা সন্তানকে পাশে নিয়ে শুয়ে আছে।
ত্রিয়াদি ঘরে ঢুকতেই শুনতে পেলো ববিতা বলছে “ তোমার মেয়েকে কোলে নেবে না ? „
আখতার তখন এগিয়ে গিয়ে ববিতার পাশে শুয়ে থাকা মেয়েটাকে কোলে নিল। এই মেয়েটাই কিছুক্ষণ আগে তারস্বরে কান্না করছিল। এখন সে ঘুমাচ্ছে। ভয় ডর হীন নিদ্রা। ছোট্ট গোলগাল মুখ। বড়ো বড়ো চোখ। গাল টকটকে লাল। আর ববিতার মতো তার মেয়েরও ঠোঁটের উপর একটা তিল আছে। নিজের মেয়ের মুখ দেখে আখতারের মনে একটা আলাদা শান্তি এলো যেটা সে জীবনে প্রথম উপলব্ধি করলো।
ত্রিয়াদি আখতারের কোল থেকে শিশু কন্যাকে নিয়ে বললো “ কি সুন্দর দেখতে হয়েছে। এর মুখের তিলটা ঠিক তোর মতো। বাকি তোর স্বামীর মতো দেখতে হয়েছে । এর নাম কি রাখলি ? „
“ ওর প্রথম সন্তান ওই রাখুক । „ বলে আখতারের দিকে তাকালো ববিতা।
“ ববিতার মেয়ে কবিতা । „ আখতার এখন পিতা।
“ বাহ্ খুব সুন্দর নাম। কবিতা । „
নামটা শুনে সবাই খুশি হলো। সবার মন ছুঁয়েছে নামটা। তারপর কবিতা সবার কোলে কোলে ঘুরতে লাগলো। রবির কোলে যখন তার বোন এলো তখন সে কেঁদে ফেললো। একটা বোন হবে এটা তো তার বহু বছরের শখ । আজ আখতার আর তার মা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে। মনে আখতারের প্রতই খুব শ্রদ্ধা জন্মালো । আখখতার রবির চোখে জল দেখে জিজ্ঞেস করলো “ কাঁদছিস কেন ? „
“ না । কিছু না। ও এমনি । „
ঘরে ঢোকার পরেই রাজকুমার ত্রিয়াদিকে ছেড়ে সূর্যের হাত ধরেছিল। সে এবার জিজ্ঞেস করলো “ আমার কি বোন হয়েছে । „
“ হ্যাঁ আমার রাজা সোনা । তোমার বোন হয়েছে। শুধু তোমার কেন ! তোমার রবি দাদার ও বোন হয়েছে। তুমি খুশি তো ? „
“ হ্যাঁ । আমি বোনের সাথে খেলবো। „
“ সে খেলো। খুব খেলো। আগে বড়ো হোক । „ তারপর ঘরের সবাইকে বললো “ তোমরা হয়তো ভুলে গেছো । আজকে শুধু কবিতার জন্মদিন না। আরো একজনের । „
“ আজকে তো তোরও জন্মদিন। „ ত্রিয়াদি তার ছেলের জন্মদিন ভুলে গেছিল।
সূর্য কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকার পর আখতারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে জিজ্ঞেস করলো “ যদি তোমার পরিবার জানতে পারে তোমার সন্তান হয়েছে তাহলে কি করবে ? „
আখতার রবির কোলে থাকা কবিতার মুখের দিকে একটা স্নেহ মাখা দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। তার ভবিষ্যৎ ঠিক করে নিল সে। “ এই ঘরে যারা বর্তমানে উপস্থিত তারাই এখন আমার পরিবার হয়ে গেছে । „
কথাটা শুনে ববিতা আর রবির চোখ খুশিতে জলজল করে উঠলো। আখতারের মনে হলো কথাটা শুনে যেন কবিতাও একটু হাঁসলো।
আমার গল্পটি ফুরালো
নটে গাছটি মুড়ালো
লেখক:----- বিচিত্রবীর্য
--------------------- ঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃঃ------------------------
কবিতার জন্মের খুশিতে যখন সবাই আনন্দ করছে , ঠিক সেই সময়ে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে যে বিমানটি লন্ডন থেকে আগত যাত্রী এনে দমদম বিমানবন্দরে এসছে , সেটা থেকে নামলো এক দীর্ঘাঙ্গী সুন্দরী মহিলা। চোখে তার আগুন জ্বলছে। কোন প্রিয়জন কে হারানোর দুঃখ - যা এখন আগুনে পরিনত হয়েছে । সেই আগুন এতোই শক্তিশালী যে সেটা দিয়ে সূর্য কে পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিয়ে গ্রহণ লাগিয়ে দিতে পারে ।