13-06-2021, 09:01 PM
আখতারের সমর্পণ ( দশম পর্ব ও অন্তিম পর্ব )
ববিতা চলে যাওয়ার পর আখতারের খুব গালাগালি দিতে ইচ্ছা হচ্ছিল সেই ছেলেদের । শালা ধোনে দম নেই !!! পিছন মেরে চলে গেল !!! কি সুন্দর একটা অবৈধ জীবন চলছিল। সেটাকে বৈধ বানানোর চেষ্টা শুরু করলো ববিতা শুধু মাত্র ওই এঁচোড়ে পাকা , শুয়োরের বাচ্চা ছেলেগুলোর জন্য।
রাতে আর ঘুম হয়নি আখতারের। অতৃপ্ত থাকার জন্য নয় !! ভয়ের কারনে !!! অবৈধ সম্পর্ক কে এইভাবে বৈধ বানানোর চেষ্টা হবে ! সেটা আখতার ভাবেনি। তাই এখন ভয় হচ্ছে। যদি আব্বা জানতে পারে ! তাহলে কি হবে ? খুন করে দেবে নির্ঘাত। পড়াশোনার জন্য এই প্রাণহীন কংক্রিটের শহরে এসেছিল। এখানে সে একটা বাচ্চার বাবা হয়ে বসে আছে । ববিতাকে ভালোবেসে ফেলেছে তাই না বলতে ইচ্ছা করছেনা । কিন্তু আব্বা খুন করবেই। পাড়ায় নিজেদের সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে। কেউ মুখ দেখাতে পারবে না। তাই হ্যাঁ ও বলতে পারছে না।
আখতার ভেবেছিল ববিতা বুঝবে ওর পরিস্থিতি । কিন্তু এইভাবে অবুঝের মতো একটা বাচ্চা ছেলেকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে সেটা ভাবনি । সম্পর্ক টা অবৈধ্যই থাকবে এটাই তো সে ভেবেছিল।
পরের দিন ববিতার প্রেগন্যান্সির রেগুলার চেকআপ ছিল । যখন সূর্য অফিসে, রবি আখতার কলেজে তখন ত্রিয়াদি রাজকুমার আর ববিতা যায় চেকআপে । ত্রিয়াদির গাড়িতেই যায় সবাই । আখতারের নিরবতা দেখে রাত থেকেই রেগে ছিল ববিতা । ত্রিয়াদি ববিতাকে দেখেই বুঝলো কিছু একটা হয়েছে । গাড়িতে করে যেতে যেতে ত্রিয়াদি জিজ্ঞেস করলো “ কি হলো রে আবার ? কালকে তো খুব হাঁসি খুশি ছিলি। আজ হঠাৎ কি হলো ? „
ববিতা সবকিছু বলে দিল । সবকিছু শুনে ত্রিয়াদি বললো “ ওকে দোষ দিই কি করে বলতো ? ও তো এখনো বাচ্চা ! „
“ বাচ্চা নয় ! এঁচোড়ে পাকা। সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাইছে না ! „ অভিমানি গলায় বললো ববিতা।
“ ওকে একটু সময় দে ! ও ঠিক বুঝবে। „
“ সময়টাই তো নেই আমার কাছে। দেড় মাস পর ও বাড়ি যাবে গরমের ছুটিতে। „ দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে ববিতার।
“ তো যাক। ওকে ফিরে সেই এখানেই আসতে হবে। তোর কাছেই আসবে ফিরে। „ আশ্বস্ত করার জন্য বললো ত্রিয়াদি।
“ আর যদি না আসে ? „ ববিতার সুরে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
“ তুই অযথাই চিন্তা করছিস। যাকে ভালোবাসে তার কাছে আসবে না ? একটু ধৈর্য্য ধর। ঠিক কোনো না কোনো রাস্তা বেরিয়ে আসবে । „
“ তাই যেন হয় দিদি। „
তবুও ববিতা শান্ত হতে পারে না , ভয়টা থেকেই যায়। তারপর আর কথা হয়না ওদের। রেগুলার চেকআপ এর ফল- সবকিছু নর্মাল। ঠিক সময়েই সন্তান হবে।
মায়ের জন্মদিনের পর থেকেই এই হঠাৎ রাগী স্বভাব লক্ষ্য করে রবি পরের দিন কলেজের টিফিন ব্রেকে আখতারকে জিজ্ঞেস করে ফেললো “ মা এখন বেশ রেগে রেগে থাকে। তোর সাথে কথা বলে না । কি হয়েছে একটু খুলে বলতো ? „
“ ববিতা আমাকে বিয়ে করতে বলছে !!!! „ আখতার গাছের তলায় বসে উদাস উত্তর দিলো।
“ তো করে নে !!!! তুই তো বলেছিলি মাকে বিয়ে করবি ! „ রবি অবাক হয়। এই আখতারই একদিন বলেছিল যে তার মাকে বিয়ে করবে। এখন কি হলো তার।
আখতার রবির দিকে উদাসীন দৃষ্টিতে তাকালো। বিয়ে করবে বলেছিল কিন্তু সেটা প্রোপোজ করার জন্য । কিন্তু সে মুখে কিছু বললো না। রবিও আর কথা বাড়ালো না। কি বলবে সেটাই তো ভেবে পেলো না।
তারপর থেকে ববিতার সাথে আখতারের তেমন আর কথা হয়নি । সেক্স তো দূরের কথা। আখতার ববিতার মুখ দেখেই বুঝেছে এ মহিলা বিয়ে না করে ছাড়বে না। যখনই আখতার এই নিয়ে কথা বলতে গেছে তখনই ববিতার কঠোর বাক্য বাণ “ এতো কথা আসছে কোথা থেকে ? এতো কথার তো কিছু দেখি না ! তোমার কাছে হ্যাঁ কি না শুনতে চেয়েছি , সেটা বলো তারপর কথা বলতে আসবে ! „
আখতার চুপ করে যায়। কিন্তু তার অবস্থা এই তিন দিনে সেক্স না পেয়ে খারাপ হয়ে গেছে । পড়াশোনা তো মাথায় উঠেছে আগেই। একজন মাতালকে মদ না দিলে যেমন হয় ঠিক তেমনই অবস্থা আখতারের। চোখের সামনে এরকম সেক্সি বোম ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আখতার তাকে ছুঁয়েও দেখতে পারছে না।
তিন দিন পর সকালে রবি গেছে বাজার করতে। পুরানো অভ্যাস এখনো আছে তার। আখতার বেশ দেরি করে ঘুম থেকে উঠে দেখলো রান্নাঘরে ববিতা রান্না করছে । একেই সকালে ঘুম থেকে উঠে লিঙ্গ তালগাছ হয়ে আছে , তার উপর রান্নাঘরের গরমের ফলে ববিতার ঘর্মাক্ত কপাল । কপালের উপর লেগে থাকা এক একটা ঘামের ফোঁটা যেন মুক্তো । পরনে আছে একটা আকাশি রঙের শাড়ি। শাড়ির আচলটা ডান কাঁধ দিয়ে পিঠে বেঁকে গিয়ে ব্লাউজ কে মাঝখান থেকে ক্রস করে কোমেরের কাছ থেকে ঘুরে সামনে এনে কোমরে গুঁজে দেওয়া। এতে তার ফর্সা পেট আরও বেশি উন্মুক্ত হয়েছে। আর আচল সামনে এনে কোমরে গোঁজার ফলে স্তন আরো বেশি ফুলে উঠেছে। নগ্ন রমণীর সৌন্দর্য এক আর বস্ত্র পরিহিত নারীর সৌন্দর্য আর এক। জন্মদিনের সেই শৃঙ্গার করা সৌন্দর্য , আজকের আটপৌরে শাড়ির সৌন্দর্য আর নগ্ন শরীরের সৌন্দর্য কোনটার সাথে কোনটারই তুলনা হয় না।
এই শরীরকে সে বহুবার সম্পূর্ণ নগ্ন দেখেছে কিন্তু এই তিন দিনে একবারও এই শরীরের স্পর্শ না পাওয়ায় আখতারের লিঙ্গে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। শক্ত হয়ে ব্যাথা হচ্ছে এখন তার পুরুষাঙ্গে। সে সোজা বাথরুমে ঢুকে গেল কিন্তু দরজা লাগাতে ভুলে গেল।
ববিতা দেখতে পেয়েছিল আখতারকে। আখতারের দৃষ্টি বুঝতে অসুবিধা হয়নি তার। সেই কাম মাখা দৃষ্টি ববিতার সারা শরীরে কাঁপিয়ে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছিল। তিন দিন আখতারের লিঙ্গ তার যোনীতে প্রবেশ না করার জন্য ওই কামমাখা দৃষ্টি তার ঊরুসন্ধিতে চুলকানি শুরু করে দিল। যখন আখতার বাথরুমে ঢুকলো তখন সে বুঝে গেলো বাথরুমে গিয়ে সে কি করবে ? !!!
সেও হাতে খুনতি নিয়ে বাথরুমের সামনে চলে এলো। এসে দেখলো দরজা লাগায়নি । দরজা ঠেলে দেখলো আখতারের প্যান্ট মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ডান হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে স্বমেহনে ব্যাস্ত সে । একবার এই লিঙ্গ নরম গরম পিচ্ছিল যোনীর স্বাদ পেয়ে গেছে , কঠোর হাতের স্পর্শ তার মোটেই ভালো লাগলো না। আখতারকে এই স্বমেহন করতে দেখে আর কিছু না , হাতে ধরা খুনতি দিয়ে সজোড়ে আখতারের পিঠের উপর বসিয়ে দিল ববিতা।
“ আআআআঃ তোমার সমস্যাটা কি ? মারলে কেন ? „ ব্যাথায় রাগে গর্জিয়ে উঠলো আখতার। ভালো জোড়েই লেগেছে তার। স্বমেহনে ব্যাস্ত আখতার খেয়ালই করেনি কখন তার সন্তানের মা তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
“ আমার সমস্যা তুমি ! বেশ করেছি মেরেছি ! যদি আবার দেখি ওইসব করছো প্রানে মেরে ফেলবো ! !! „ বড়ো বড়ো চোখ করে হাতের গুনতি আখতারের চোখের সামনে নাঁচিয়ে রাগী গলায় হুমকি দিল ববিতা ।
“ আজব তো ! নিজেও করছো না আর করতেও দিচ্ছো না ! „ আখতার বিরক্তিমাখা গলায় বললো। ববিতার মেরে ফেলার হুমকিতে বেশ ঘাবড়িয়ে গেল আখতার।
“ আমি কোথায় বারন করেছি ? আমি তো বলেছি শুধু সিঁদুর পড়ালেই হবে । তারপর যত খুশি করবো । আমি বিধবা হয়ে থাকতে পারবো না। „ বলতে বলতে ববিতার গলা ভরে এলো। ভেজা গলায় কোনরকমে কথা গুলো বলে সে চলে গেল।
আখতার পেশাব করে বাথরুমের বাইরে এসে দেখে ববিতা সোফায় বসে কাঁদছে। “ আজব তো !!! নিজেই মেরে নিজেই কাঁদছো ? „
“ আমি কাঁদি না হাঁসি তাতে তোমার কি ? „ ববিতা কান্না ভেজা গলায় গর্জিয়ে উঠলো।
আখতার ববিতার পাশে বসে তাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো । ববিতা আখতারের বুকে মুখ লুকিয়ে খুব কাঁদলো । এই তিনদিনের রাগ চোখের জলের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো। আখতার এই অশ্রুর মূল্য দিতে জানে না। কিছুক্ষণ পর ববিতা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো আমাকে এইভাবে মেরে ফেলো না! আমি বাঁচতে চাই। আমায় বাঁচাও তুমি! আমায় বাঁচাও তুমি! আমাদের সন্তানকে বাঁচাও তুমি! „
আখতার কি বলবে ভেবে পেলো না । “ আমি কি করবো বলো ? আমার পরিস্থিতিটাও একটু ভাবো ! আমার আব্বা আম্মি জানলে তো খুন করে দেবে আমায় ?
“ আব্বা আম্মির কথা আমাকে ভালোবাসার আগে মনে ছিল না ? „ ববিতা তখনও আখতারের বুকে মুখ রেখে আছে।
আখতারের উত্তর দেওয়ার আগেই ডোরবেল বেজে উঠলো। ববিতা বাম হাতের পিঠ দিয়ে দুই চোখের অশ্রু মুছতে মুছতে রান্নাঘরে চলে গেল। আখতার উঠে দরজা খুললো। রবি সব্জির ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
তারপর তারা ব্রেকফাস্ট করলো। ববিতার দুই গালে তখনও অশ্রুর চিহ্ন বর্তমান। রবি এই দাগ দেখতে পেলো না। খেয়েদেয়ে তারা পড়তে বসলো। তারপর কলেজে চলে গেল। রাতে সবাই একসাথে খেতে বসলো । আখতারের তখন প্রায় খাওয়া শেষ হয়ে এসছে। ববিতা আখতারের দিকে না তাকিয়েই শান্ত ভাবলেশহীন গলায় বললো “ হ্যাঁ কি না এখনও তো বললে না ! না বললে অন্তত গলায় দড়িটা দিতে পারি। „
এ কি ধরনের কথা ! গলায় দড়ি দেবে !!!! কথাটা শুনেই রাগে বিরক্তিতে আখতারের মুখ কুঁচকে বিকৃত হয়ে গেল। সে খাবার অসমাপ্ত রেখেই উঠে চলে গেল। হাত ধুয়ে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
মায়ের এই গলায় দড়ি দেওয়ার কথা শুনে আখতারের প্রতি যে শ্রদ্ধা সম্মান মায়া জন্মদিনের রাতে জন্মছিল তা আজ বিষিয়ে গেল রবির । রবি কি বলবে , কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এদের মধ্যে নাক গলাবে কি না সেটাও ভেবে পাচ্ছে না।
সে খেয়ে দেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো। ববিতা রাতের কাজ শেষ করে রবির পাশে এসে শুয়ে পড়লো। প্রায় দশ কুড়ি মিনিট পর রবি শুনতে পেলেন মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
রবির মনে হলো আখতারকে গিয়ে খুন করে দি। আখতারও যদি মাকে কাঁদায় তাহলে অমিত আর আখতারের মধ্যে পার্থক্য কি রইলো। সে খাট থেকে উঠে আখতারের ঘরে গেল। আখতার তখনও ঘুমায়নি। ঘুম আসছে না তার। রবি আখতারের ঘরে এসেছিল তো তাকে মারবে বলে , কিন্তু সে কিছুই করতে পারলো না “ মা কাঁদছে ! „
আখতার উঠে দেখলো রবি দরজা ঢেলে ভিতরে ঢুকে গেছে। সে রবির কথা বুঝতে পেরে খাট থেকে উঠে মাথা নিচু করে ববিতার ঘরে চলে গেল । আর এদিকে রবি আখতারের খাটে শুয়ে পড়লো।
ববিতার ঘরে গিয়ে দেখলো সে বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আখতার তার পাশে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। ববিতা আখতারের বুক কাছে পেয়ে আরো বেশি ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। “ সব দোষ তোমার ! তুমি আমাকে কেন বাঁচতে শেখালে ? কেন স্বপ্ন দেখাতে শেখালে ? কেন আমার গর্ভে সন্তান দিলে ? „
“ তুমিই তো বলতে ভিতরে ফেলো ! ভিতরে ফেলো ! „
“ বেশ করেছিলাম বলতাম। আমি সন্তান নিতে চেয়েছিলাম তাই বলতাম। এখন তুমি সেই সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাইছো না দোষ তোমার। আমার নয়। তুমি যদি এই সন্তানের দায়িত্ব না নিয়ে বাড়ি যাও তাহলে সেই দিনেই আমি বিষ খাবো। সেই বিষ প্রথম আমার গর্ভে ধীরে ধীরে বড়ো হওয়া তোমার সন্তানকে মারবে তারপর আমাকে মারবে। আমি তোমার পাপের বোঝা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে পারবো না „ বলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো।
ববিতার রাগ কমতেই অনুশোচনা শুরু হলো। এ কি বললাম আমি! নিজের সন্তানকে বিষ দিয়ে মারার কথা বললাম! ঠাকুর তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি কি করবো বলো ঠাকুর। ও যদি সন্তানের দায়িত্ব না নিতে চায় তাহলে আমি কোথায় যাবো ?
কিছুক্ষণ পর আখতার ববিতাকে বুকে টানতে চায়। ববিতা গর্জিয়ে ওঠে “ কোন অধিকারে আমাকে স্পর্শ করছো ? একদম ছোঁবে না তুমি ! „
ববিতার কথায় আখতারের মন পাথর হতে থাকে। এরপর দিন যায় । গরমের ছুটি এগিয়ে আসতে থাকে । পরিস্থিতি সেই একই। আখতার রবি পড়াশোনা নিয়ে মেতে থাকে আর ববিতা একটা অজানা আশঙ্কায়। এরমধ্যে ববিতার আর একবার রেগুলার চেকআপ পড়লো । রাস্তায় ত্রিয়াদি বললো “ তুই এখনো সেই বেকার চিন্তা করছিস ? „
“ কি করবো দিদি মন শান্ত হতে চাইছে না ! „
“ চল আজকে তোকে মেসাজ করে দিই। মনটা রিলেক্স হবে। „ ত্রিয়াদি আর ববিতা দুজনেই লাজুক মুচকি হেঁসে উঠলো।
সত্যি ত্রিয়াদির হাতে জাদু আছে । মেসাজ এর পর মনটা শান্ত হলো বটে কিন্তু ভয়টা এখনো আছে। তারপর দিন যায় তেমন কিছু হয় না। দেখতে দেখতে গরমের ছুটির আর তিন দিন বাকি । কিন্তু পরিস্থিতি এখনো সেই আগের মতোই । তিন দিন পর গরমের ছুটি তাই আব্বা আম্মিকে ফোন করে বলে দিল বাড়ি যাওয়ার কথা । চার পাঁচ বার চেষ্টা করার পর ফোনটা লাগলো। ওখানে নাকি নেটওয়ার্ক এর সমস্যা হচ্ছে কিছুদিন ধরে।
রাতে যখন সূর্য অফিস থেকে ফিরলো তখন আখতার ত্রিয়াদির ফ্লাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিল । ঘরের বাইরে যেতেই ববিতার প্রশ্ন “ কোথায় যাচ্ছো এতো রাতে ? „
“ তিন দিন পর গরমের ছুটি। বাড়ি যাবো তাই সূর্যকে ট্রেনের টিকিট কাটতে বলতে যাচ্ছি। „
“ আচ্ছা যাও। „
আখতার চলে গেল। হঠাৎ ববিতার মাথায় বিদ্যুতের মতো আইডিয়া টা খেলে গেল। এই পদক্ষেপ টা নিতেই হবে তাকে। সেও নিচে নেমে গেল।
আখতার গিয়ে ডোরবেল বাজালো । ত্রিয়াদি দরজা খুললো “ এসো এসো । „
“ আমি সূর্যের সাথে দেখা করতে এসছি। „
“ ওই তো সোফায় বসে আছে , রাজকুমারের সাথে খেলছে। „ বলে সোফার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ত্রিয়াদি।
আখতার গিয়ে সূর্যের পাশে বসলো। সে দেখতেই পেলো না ববিতাও এরমধ্যেই ঘরে ঢুকে গেছে।
“ বলছিলাম তিন দিন পর গরমের ছুটি পড়ছে । তাই ট্রেনের টিকিট কাটতে হবে। তুমি করে দেবে। „ সূর্যকে বললো আখতার।
“ হ্যাঁ কেন দেবো না ! কটার সময় কাটবো ? „
“ রাতের কাটো। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চলে যেতে পারবো । „
ববিতা পিছন থেকে সূর্যকে বললো “ দুটো টিকিট কাটবে তুমি। „
আখতার ববিতার আওয়াজ শুনে চমকে উঠলো। সে পিছন ফিরে জিজ্ঞেস করলো “ দুটো কেন ? „
“ আমিও যাবো তাই। দরকার হলে রবিকেও নিয়ে যাবো „
“ কেন তোমরা যাবে কেন ? তোমাদের নিয়ে গিয়ে আব্বাকে কি বলবো আমি ? „ আখতারের মুখ গলা শুকিয়ে গেছে।
“ সে আমি কি জানি। আমি গিয়ে বলবো আমার পেটে তোমার সন্তান বড়ো হচ্ছে। বাকি যা করার তোমার বাবা-ই করবে। „ ববিতা বেশ উৎসাহ নিয়ে বললো কথাটা। কিন্তু কথাটা শুনেই ভয়ে আখতারের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। সে কি বলবে ভেবে পেলো না। নিরব দাঁড়িয়ে রইলো।
“ এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস তুই ! „ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ত্রিয়াদি বললো ।
“ না দিদি। বাড়াবাড়ি আমি করছি না। ও শুরু করেছে আমার জীবন নষ্ট করে , আমার দিকে নজর দিয়ে ! „
আখতার ববিতার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । দিশেহারা অবস্থা তার। “ তুমি কি আমাকে ব্লাকমেইল করছো ? „
“ না। আমি আমার সন্তানের অধিকার এর কথা বলছি। তোমার কাছে এখন দুটো রাস্তা হয় তুমি আমাকে বিয়ে করো না হলে আমাকে নিয়ে চলো তোমার বাড়ি । „
“ এ মহিলা পাগল হয়ে গেছে ! একবারও আমার পরিস্থিতি বুঝতে চাইছে না । „ আখতার গর্জে উঠলো রাগে ।
“ তুমি বুঝতে চাইছো আমার পরিস্থিতি ! আমি এখনও বিধবা ! বোঝো তুমি ? বিধবা হয়ে থাকা একটা মেয়ের কাছে কতটা কষ্টকর। „ ববিতাও চিল্লিয়ে কথা বলতে শুরু করলো । এদিকে ত্রিয়াদি সূর্য রাজকুমার এদের কথা শুনতে লাগলো। কিন্তু কি বলে এদের শান্ত করবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
“ তোমাকে বিয়ে করতে আমার কোন বাঁধা নেই। কিন্তু যদি আব্বা আম্মি জানতে পারে তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছো ? „
“ তোমার আব্বা আম্মিকে আমি বলবো কেন ? „
এতদিন পর আসল সমস্যার সমাধান হলো। সত্যি সমস্যা টা তো বিয়ে করা নিয়ে নয় ! সমস্যা টা আখতারের পরিবার জানতে পারলো কি না সেটা নিয়ে ! সেটা এই একটা কথায় ঘরের সবাই বুঝতে পারলো। আখতারের আব্বা তখনই জানবে যখন এই ঘরে উপস্থিত কোন ব্যাক্তি মুখ খুলবে। কিন্তু মুখ খোলার ইচ্ছা কারোরই নেই।
ববিতা আরো বললো “ তুমি কবে তোমার আব্বা আম্মি কে বলবে সেটা তোমার ব্যাপার। তুমি না বললে আমিও কখনো বলবো না। „
“ ঠিক আছে। „ আপাতত এই দিকের সমস্যাটা মিটিয়ে নি। পরে কি হবে দেখা যাবে। পেটে সন্তান চলে এসছে। এটাকে গ্রহণ করতেই হবে।
কথাটা শুনেই ববিতার চোখ মুখ খুশিতে ভরে উঠলো । “ তুমি এখানে বোসো আমি এক্ষুনি আসছি। „ বলে সে সোজা ঘরে গিয়ে সিঁদুর আর মঙ্গল সূত্র আনলো। আর রবিকেও ডাকলো । সে ঘরে পড়ছিল।
“ কি হলো হঠাৎ ? খুব খুশি দেখাচ্ছে ! „ এতদিন পর মায়ের এই খুশি মুখ দেখে খুব ভালো লাগলো রবির।
“ ও বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে ! „ নিচে নামতে নামতে বললো ববিতা।
ববিতা ঘরে ঢুকতেই হাতে মঙ্গল সূত্র দেখে আখতার অবাক হয় “ এটা কি অমিতের দেওয়া ? „
“ তুমি কি পাগল হয়েছে নাকি ? অমিতের পড়ানো মঙ্গল সূত্র তুমি আমাকে পড়াবে কেন ? আর আমিই বা পড়বো কেন ? এটা আমি আজকের জন্য কিনে রেখেছি। এবার চুপচাপ ভালো স্বামীর মতো দায়িত্ব নিয়ে এটা আমাকে পড়িয়ে দাও। „
আখতার সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ববিতার কাছ থেকে সিঁদুর এর কৌটোটা নিল। কৌটোটা খুলে ডান হাতের তর্জনী আর বুড়ো আঙুল দিয়ে চিমটে করে অল্প সিঁদুর তুললো । পাশ থেকে ত্রিয়াদি মুখ দিয়েই উলু দিতে লাগলো। উললললল । ববিতা চোখ বন্ধ করে ফেললো , আখতার আঙুলে সিঁদুর নিয়ে ববিতার সিঁথিতে পড়িয়ে দিল। “ এবার খুশি তো ? „
“ খুব খুশি । „ চোখ খুলে বললো ববিতা। চোখে তার হীরের উজ্জ্বলতা। “ এবার মঙ্গল সূত্র টা পড়িয়ে দাও। „ বলে মঙ্গল সূত্র টা এগিয়ে দিল ।
আখতার ববিতার হাত থেকে মঙ্গল সূত্র টা নিয়ে পড়িয়ে দিতে লাগলো। পাশ থেকে রবি ত্রিয়াদি আর সূর্য একসাথে উলু দিল। খুব খুশি তারা। ঝগড়ার পরিনতি যে এমন বিয়ের দিকে মোড় নেবে তা তারা ভাবতে পারে নি।
সূর্যের কোলে বসে থাকা রাজকুমার বললো “ বাবা ! মাসি কি করছে ? „ তিন বছরের রাজকুমার আজ পর্যন্ত কোন বিয়ে দেখেনি।
“ তোমার মাসি আর মেসো বিয়ে করছে । „
“ বিয়ে ! „
“ হ্যাঁ ! বিয়ে । „
“ ঝগড়া করার পর বুঝি বিয়ে হয় ? „
কথাটা শুনে ঘরের সবাই হো হো করে হেঁসে উঠলো। আখতারের ঠোঁটেও একটু হাঁসির রেখা দেখা গেল।
রাতে খাওয়ার সময় কেউ তেমন কথা বললো না। চুপচাপ খাওয়ার শেষ করলো। ববিতার মন খুশিতে নাঁচতে ইচ্ছা হচ্ছে। রবিও খুব খুশি বিয়েটা হয়ে যাওয়ার জন্য। আখতার কিন্তু মোটেও খুশি নয়। এইভাবে ব্লাকমেইল করে ঘটনাটা ঘটানোর জন্য । ববিতা আখতারের এই ভাবলেশহীন মুখ দেখে বেশ দুঃখ পেলো ভাবলো হয়তো সে এই বিয়েতে খুশি নয় !
রাতে আখতার নিজের ঘরে শুয়ে পড়লো কিন্তু ঘুম এলো না। আজ যে তার বিয়ে হয়ে গেছে সেটাই মাথায় ঘুরছে। সেই চিন্তা তার দুই চোখ এক করতে দিচ্ছে না। ববিতা রাতের কাজ শেষ করে আখতারের ঘরে গেল। গিয়ে দেখলো সে ঘুমাচ্ছে।
ববিতা আখতারের বাম পাশে এসে তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো । দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে বললো “ রেগে আছো ? আমি কি করতাম বলো তুমি ? আমার যে খুব ভয় হচ্ছিল ! তুমি যদি তোমার সন্তানের দায়িত্ব না নাও এটা ভেবেই আমার বুক ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। হ্যাঁ আমি তোমাকে ব্লাকমেইল করছি তার জন্য এই আমি তোমার পা ধরে ক্ষমা চাইছি! „ বলতে বলতে ববিতার গলা বুজে এলো। দুফোঁটা জল ও দেখা দিল চোখে।
ববিতা উঠে আখতারের পা ধরতে গেল। আখতার ধরতে দিল না। আখতার ঘুমায়নি । আজ তার বিয়ে হয়ে গেছে। কোন ছেলের যদি হঠাৎ এইভাবে বিয়ে হয় তাহলে তার ঘুম কিভাবে আসবে। আখতারেরও আসেনি। সে চুপচাপ ববিতার কথা শুনছিল। সে উঠেই ববিতাকে আবার বুকে টেনে নিল। “ কি করছো কি আমি তোমার থেকে ছোট হই ! „
“ তো কি হয়েছে ? তুমি এখন আমার স্বামী। „
আখতার কথাটা শুনে একটু মিচকে হাঁসলো। আখতারের হাঁসি দেখে ববিতা বললো “ এবার রাগ কমেছে ? „
“ বাহ্ রে তুমি রাগ করতে পারো আর আমি করলেই দোষ ! „
“ হ্যাঁ দোষ । আমি রাগ করতেই পারি কিন্তু তুমি পারো না । „
আখতার একটু হেঁসে উঠলো। কিছুক্ষণ পর ববিতা বললো “ তুমি বাড়ি যাচ্ছো । তোমার ভাইবোনদের জন্য কিছু নিয়ে যাবে না ? „
“ নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু ! „
“ কিন্তু কি ? „
“ টাকা শেষ সব। এক টাকাও নেই আর । „
“ আমি কিন্তু আবার রাগ করবো । „
“ আবার কি হলো ? „
“ টাকা শেষ তো আমাকে বলোনি কেন ? আমার টাকা আর তোমার টাকা কি এখন আলাদা নাকি ! কালকে যাবো শপিং করতে ঠিক আছে। „
কিছুক্ষণ পর ববিতা আবার বললো “ তুমি ফিরে আসবে তো ? না আসলে কিন্তু তোমার সন্তান সারাজীবন বাবার আদর পাবে না । সে কিন্তু কখনো তোমায় ক্ষমা করবে না । আমিও করবো না কিন্তু ! „
“ আসবো। এখানেই তো মাধ্যমিক পরিক্ষা দিতে হবে। „ বলে ববিতার মাথা তুলে কপালে একটা চুমু খেলো। কপালে লেগে থাকা সিঁদুর আখতারের ঠোঁটে হালকা লেগে গেল ।
ববিতার প্রথম বিয়ের বাসর রাতে সে ধর্ষিতা হয়েছিল নিজেরই স্বামীর কাছে। আর আজ এই দ্বিতীয় বিয়ের বাসর রাত। এই রাতে শুধু একটা প্রেম , স্নেহ , আদর মাখা একটা চুম্বন। এই বাসর রাত সফল তাদের। চুম্বন পেয়ে ববিতার চোখ জলজল করে উঠলো। সেই উজ্জ্বল চোখ তিরের মতো আখতারের মনে গিয়ে বিঁধলো । এমন বাঁধা বিঁধলো যে এটা হয়তো সারাজীবন থেকে যাবে।
ববিতা চলে যাওয়ার পর আখতারের খুব গালাগালি দিতে ইচ্ছা হচ্ছিল সেই ছেলেদের । শালা ধোনে দম নেই !!! পিছন মেরে চলে গেল !!! কি সুন্দর একটা অবৈধ জীবন চলছিল। সেটাকে বৈধ বানানোর চেষ্টা শুরু করলো ববিতা শুধু মাত্র ওই এঁচোড়ে পাকা , শুয়োরের বাচ্চা ছেলেগুলোর জন্য।
রাতে আর ঘুম হয়নি আখতারের। অতৃপ্ত থাকার জন্য নয় !! ভয়ের কারনে !!! অবৈধ সম্পর্ক কে এইভাবে বৈধ বানানোর চেষ্টা হবে ! সেটা আখতার ভাবেনি। তাই এখন ভয় হচ্ছে। যদি আব্বা জানতে পারে ! তাহলে কি হবে ? খুন করে দেবে নির্ঘাত। পড়াশোনার জন্য এই প্রাণহীন কংক্রিটের শহরে এসেছিল। এখানে সে একটা বাচ্চার বাবা হয়ে বসে আছে । ববিতাকে ভালোবেসে ফেলেছে তাই না বলতে ইচ্ছা করছেনা । কিন্তু আব্বা খুন করবেই। পাড়ায় নিজেদের সম্মান নিয়ে টানাটানি হবে। কেউ মুখ দেখাতে পারবে না। তাই হ্যাঁ ও বলতে পারছে না।
আখতার ভেবেছিল ববিতা বুঝবে ওর পরিস্থিতি । কিন্তু এইভাবে অবুঝের মতো একটা বাচ্চা ছেলেকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে সেটা ভাবনি । সম্পর্ক টা অবৈধ্যই থাকবে এটাই তো সে ভেবেছিল।
পরের দিন ববিতার প্রেগন্যান্সির রেগুলার চেকআপ ছিল । যখন সূর্য অফিসে, রবি আখতার কলেজে তখন ত্রিয়াদি রাজকুমার আর ববিতা যায় চেকআপে । ত্রিয়াদির গাড়িতেই যায় সবাই । আখতারের নিরবতা দেখে রাত থেকেই রেগে ছিল ববিতা । ত্রিয়াদি ববিতাকে দেখেই বুঝলো কিছু একটা হয়েছে । গাড়িতে করে যেতে যেতে ত্রিয়াদি জিজ্ঞেস করলো “ কি হলো রে আবার ? কালকে তো খুব হাঁসি খুশি ছিলি। আজ হঠাৎ কি হলো ? „
ববিতা সবকিছু বলে দিল । সবকিছু শুনে ত্রিয়াদি বললো “ ওকে দোষ দিই কি করে বলতো ? ও তো এখনো বাচ্চা ! „
“ বাচ্চা নয় ! এঁচোড়ে পাকা। সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাইছে না ! „ অভিমানি গলায় বললো ববিতা।
“ ওকে একটু সময় দে ! ও ঠিক বুঝবে। „
“ সময়টাই তো নেই আমার কাছে। দেড় মাস পর ও বাড়ি যাবে গরমের ছুটিতে। „ দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে ববিতার।
“ তো যাক। ওকে ফিরে সেই এখানেই আসতে হবে। তোর কাছেই আসবে ফিরে। „ আশ্বস্ত করার জন্য বললো ত্রিয়াদি।
“ আর যদি না আসে ? „ ববিতার সুরে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।
“ তুই অযথাই চিন্তা করছিস। যাকে ভালোবাসে তার কাছে আসবে না ? একটু ধৈর্য্য ধর। ঠিক কোনো না কোনো রাস্তা বেরিয়ে আসবে । „
“ তাই যেন হয় দিদি। „
তবুও ববিতা শান্ত হতে পারে না , ভয়টা থেকেই যায়। তারপর আর কথা হয়না ওদের। রেগুলার চেকআপ এর ফল- সবকিছু নর্মাল। ঠিক সময়েই সন্তান হবে।
মায়ের জন্মদিনের পর থেকেই এই হঠাৎ রাগী স্বভাব লক্ষ্য করে রবি পরের দিন কলেজের টিফিন ব্রেকে আখতারকে জিজ্ঞেস করে ফেললো “ মা এখন বেশ রেগে রেগে থাকে। তোর সাথে কথা বলে না । কি হয়েছে একটু খুলে বলতো ? „
“ ববিতা আমাকে বিয়ে করতে বলছে !!!! „ আখতার গাছের তলায় বসে উদাস উত্তর দিলো।
“ তো করে নে !!!! তুই তো বলেছিলি মাকে বিয়ে করবি ! „ রবি অবাক হয়। এই আখতারই একদিন বলেছিল যে তার মাকে বিয়ে করবে। এখন কি হলো তার।
আখতার রবির দিকে উদাসীন দৃষ্টিতে তাকালো। বিয়ে করবে বলেছিল কিন্তু সেটা প্রোপোজ করার জন্য । কিন্তু সে মুখে কিছু বললো না। রবিও আর কথা বাড়ালো না। কি বলবে সেটাই তো ভেবে পেলো না।
তারপর থেকে ববিতার সাথে আখতারের তেমন আর কথা হয়নি । সেক্স তো দূরের কথা। আখতার ববিতার মুখ দেখেই বুঝেছে এ মহিলা বিয়ে না করে ছাড়বে না। যখনই আখতার এই নিয়ে কথা বলতে গেছে তখনই ববিতার কঠোর বাক্য বাণ “ এতো কথা আসছে কোথা থেকে ? এতো কথার তো কিছু দেখি না ! তোমার কাছে হ্যাঁ কি না শুনতে চেয়েছি , সেটা বলো তারপর কথা বলতে আসবে ! „
আখতার চুপ করে যায়। কিন্তু তার অবস্থা এই তিন দিনে সেক্স না পেয়ে খারাপ হয়ে গেছে । পড়াশোনা তো মাথায় উঠেছে আগেই। একজন মাতালকে মদ না দিলে যেমন হয় ঠিক তেমনই অবস্থা আখতারের। চোখের সামনে এরকম সেক্সি বোম ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আখতার তাকে ছুঁয়েও দেখতে পারছে না।
তিন দিন পর সকালে রবি গেছে বাজার করতে। পুরানো অভ্যাস এখনো আছে তার। আখতার বেশ দেরি করে ঘুম থেকে উঠে দেখলো রান্নাঘরে ববিতা রান্না করছে । একেই সকালে ঘুম থেকে উঠে লিঙ্গ তালগাছ হয়ে আছে , তার উপর রান্নাঘরের গরমের ফলে ববিতার ঘর্মাক্ত কপাল । কপালের উপর লেগে থাকা এক একটা ঘামের ফোঁটা যেন মুক্তো । পরনে আছে একটা আকাশি রঙের শাড়ি। শাড়ির আচলটা ডান কাঁধ দিয়ে পিঠে বেঁকে গিয়ে ব্লাউজ কে মাঝখান থেকে ক্রস করে কোমেরের কাছ থেকে ঘুরে সামনে এনে কোমরে গুঁজে দেওয়া। এতে তার ফর্সা পেট আরও বেশি উন্মুক্ত হয়েছে। আর আচল সামনে এনে কোমরে গোঁজার ফলে স্তন আরো বেশি ফুলে উঠেছে। নগ্ন রমণীর সৌন্দর্য এক আর বস্ত্র পরিহিত নারীর সৌন্দর্য আর এক। জন্মদিনের সেই শৃঙ্গার করা সৌন্দর্য , আজকের আটপৌরে শাড়ির সৌন্দর্য আর নগ্ন শরীরের সৌন্দর্য কোনটার সাথে কোনটারই তুলনা হয় না।
এই শরীরকে সে বহুবার সম্পূর্ণ নগ্ন দেখেছে কিন্তু এই তিন দিনে একবারও এই শরীরের স্পর্শ না পাওয়ায় আখতারের লিঙ্গে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। শক্ত হয়ে ব্যাথা হচ্ছে এখন তার পুরুষাঙ্গে। সে সোজা বাথরুমে ঢুকে গেল কিন্তু দরজা লাগাতে ভুলে গেল।
ববিতা দেখতে পেয়েছিল আখতারকে। আখতারের দৃষ্টি বুঝতে অসুবিধা হয়নি তার। সেই কাম মাখা দৃষ্টি ববিতার সারা শরীরে কাঁপিয়ে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছিল। তিন দিন আখতারের লিঙ্গ তার যোনীতে প্রবেশ না করার জন্য ওই কামমাখা দৃষ্টি তার ঊরুসন্ধিতে চুলকানি শুরু করে দিল। যখন আখতার বাথরুমে ঢুকলো তখন সে বুঝে গেলো বাথরুমে গিয়ে সে কি করবে ? !!!
সেও হাতে খুনতি নিয়ে বাথরুমের সামনে চলে এলো। এসে দেখলো দরজা লাগায়নি । দরজা ঠেলে দেখলো আখতারের প্যান্ট মেঝেতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ডান হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে স্বমেহনে ব্যাস্ত সে । একবার এই লিঙ্গ নরম গরম পিচ্ছিল যোনীর স্বাদ পেয়ে গেছে , কঠোর হাতের স্পর্শ তার মোটেই ভালো লাগলো না। আখতারকে এই স্বমেহন করতে দেখে আর কিছু না , হাতে ধরা খুনতি দিয়ে সজোড়ে আখতারের পিঠের উপর বসিয়ে দিল ববিতা।
“ আআআআঃ তোমার সমস্যাটা কি ? মারলে কেন ? „ ব্যাথায় রাগে গর্জিয়ে উঠলো আখতার। ভালো জোড়েই লেগেছে তার। স্বমেহনে ব্যাস্ত আখতার খেয়ালই করেনি কখন তার সন্তানের মা তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।
“ আমার সমস্যা তুমি ! বেশ করেছি মেরেছি ! যদি আবার দেখি ওইসব করছো প্রানে মেরে ফেলবো ! !! „ বড়ো বড়ো চোখ করে হাতের গুনতি আখতারের চোখের সামনে নাঁচিয়ে রাগী গলায় হুমকি দিল ববিতা ।
“ আজব তো ! নিজেও করছো না আর করতেও দিচ্ছো না ! „ আখতার বিরক্তিমাখা গলায় বললো। ববিতার মেরে ফেলার হুমকিতে বেশ ঘাবড়িয়ে গেল আখতার।
“ আমি কোথায় বারন করেছি ? আমি তো বলেছি শুধু সিঁদুর পড়ালেই হবে । তারপর যত খুশি করবো । আমি বিধবা হয়ে থাকতে পারবো না। „ বলতে বলতে ববিতার গলা ভরে এলো। ভেজা গলায় কোনরকমে কথা গুলো বলে সে চলে গেল।
আখতার পেশাব করে বাথরুমের বাইরে এসে দেখে ববিতা সোফায় বসে কাঁদছে। “ আজব তো !!! নিজেই মেরে নিজেই কাঁদছো ? „
“ আমি কাঁদি না হাঁসি তাতে তোমার কি ? „ ববিতা কান্না ভেজা গলায় গর্জিয়ে উঠলো।
আখতার ববিতার পাশে বসে তাকে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো । ববিতা আখতারের বুকে মুখ লুকিয়ে খুব কাঁদলো । এই তিনদিনের রাগ চোখের জলের মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো। আখতার এই অশ্রুর মূল্য দিতে জানে না। কিছুক্ষণ পর ববিতা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো আমাকে এইভাবে মেরে ফেলো না! আমি বাঁচতে চাই। আমায় বাঁচাও তুমি! আমায় বাঁচাও তুমি! আমাদের সন্তানকে বাঁচাও তুমি! „
আখতার কি বলবে ভেবে পেলো না । “ আমি কি করবো বলো ? আমার পরিস্থিতিটাও একটু ভাবো ! আমার আব্বা আম্মি জানলে তো খুন করে দেবে আমায় ?
“ আব্বা আম্মির কথা আমাকে ভালোবাসার আগে মনে ছিল না ? „ ববিতা তখনও আখতারের বুকে মুখ রেখে আছে।
আখতারের উত্তর দেওয়ার আগেই ডোরবেল বেজে উঠলো। ববিতা বাম হাতের পিঠ দিয়ে দুই চোখের অশ্রু মুছতে মুছতে রান্নাঘরে চলে গেল। আখতার উঠে দরজা খুললো। রবি সব্জির ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
তারপর তারা ব্রেকফাস্ট করলো। ববিতার দুই গালে তখনও অশ্রুর চিহ্ন বর্তমান। রবি এই দাগ দেখতে পেলো না। খেয়েদেয়ে তারা পড়তে বসলো। তারপর কলেজে চলে গেল। রাতে সবাই একসাথে খেতে বসলো । আখতারের তখন প্রায় খাওয়া শেষ হয়ে এসছে। ববিতা আখতারের দিকে না তাকিয়েই শান্ত ভাবলেশহীন গলায় বললো “ হ্যাঁ কি না এখনও তো বললে না ! না বললে অন্তত গলায় দড়িটা দিতে পারি। „
এ কি ধরনের কথা ! গলায় দড়ি দেবে !!!! কথাটা শুনেই রাগে বিরক্তিতে আখতারের মুখ কুঁচকে বিকৃত হয়ে গেল। সে খাবার অসমাপ্ত রেখেই উঠে চলে গেল। হাত ধুয়ে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
মায়ের এই গলায় দড়ি দেওয়ার কথা শুনে আখতারের প্রতি যে শ্রদ্ধা সম্মান মায়া জন্মদিনের রাতে জন্মছিল তা আজ বিষিয়ে গেল রবির । রবি কি বলবে , কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এদের মধ্যে নাক গলাবে কি না সেটাও ভেবে পাচ্ছে না।
সে খেয়ে দেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো। ববিতা রাতের কাজ শেষ করে রবির পাশে এসে শুয়ে পড়লো। প্রায় দশ কুড়ি মিনিট পর রবি শুনতে পেলেন মা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
রবির মনে হলো আখতারকে গিয়ে খুন করে দি। আখতারও যদি মাকে কাঁদায় তাহলে অমিত আর আখতারের মধ্যে পার্থক্য কি রইলো। সে খাট থেকে উঠে আখতারের ঘরে গেল। আখতার তখনও ঘুমায়নি। ঘুম আসছে না তার। রবি আখতারের ঘরে এসেছিল তো তাকে মারবে বলে , কিন্তু সে কিছুই করতে পারলো না “ মা কাঁদছে ! „
আখতার উঠে দেখলো রবি দরজা ঢেলে ভিতরে ঢুকে গেছে। সে রবির কথা বুঝতে পেরে খাট থেকে উঠে মাথা নিচু করে ববিতার ঘরে চলে গেল । আর এদিকে রবি আখতারের খাটে শুয়ে পড়লো।
ববিতার ঘরে গিয়ে দেখলো সে বালিশে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আখতার তার পাশে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। ববিতা আখতারের বুক কাছে পেয়ে আরো বেশি ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। “ সব দোষ তোমার ! তুমি আমাকে কেন বাঁচতে শেখালে ? কেন স্বপ্ন দেখাতে শেখালে ? কেন আমার গর্ভে সন্তান দিলে ? „
“ তুমিই তো বলতে ভিতরে ফেলো ! ভিতরে ফেলো ! „
“ বেশ করেছিলাম বলতাম। আমি সন্তান নিতে চেয়েছিলাম তাই বলতাম। এখন তুমি সেই সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাইছো না দোষ তোমার। আমার নয়। তুমি যদি এই সন্তানের দায়িত্ব না নিয়ে বাড়ি যাও তাহলে সেই দিনেই আমি বিষ খাবো। সেই বিষ প্রথম আমার গর্ভে ধীরে ধীরে বড়ো হওয়া তোমার সন্তানকে মারবে তারপর আমাকে মারবে। আমি তোমার পাপের বোঝা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে পারবো না „ বলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো।
ববিতার রাগ কমতেই অনুশোচনা শুরু হলো। এ কি বললাম আমি! নিজের সন্তানকে বিষ দিয়ে মারার কথা বললাম! ঠাকুর তুমি আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি কি করবো বলো ঠাকুর। ও যদি সন্তানের দায়িত্ব না নিতে চায় তাহলে আমি কোথায় যাবো ?
কিছুক্ষণ পর আখতার ববিতাকে বুকে টানতে চায়। ববিতা গর্জিয়ে ওঠে “ কোন অধিকারে আমাকে স্পর্শ করছো ? একদম ছোঁবে না তুমি ! „
ববিতার কথায় আখতারের মন পাথর হতে থাকে। এরপর দিন যায় । গরমের ছুটি এগিয়ে আসতে থাকে । পরিস্থিতি সেই একই। আখতার রবি পড়াশোনা নিয়ে মেতে থাকে আর ববিতা একটা অজানা আশঙ্কায়। এরমধ্যে ববিতার আর একবার রেগুলার চেকআপ পড়লো । রাস্তায় ত্রিয়াদি বললো “ তুই এখনো সেই বেকার চিন্তা করছিস ? „
“ কি করবো দিদি মন শান্ত হতে চাইছে না ! „
“ চল আজকে তোকে মেসাজ করে দিই। মনটা রিলেক্স হবে। „ ত্রিয়াদি আর ববিতা দুজনেই লাজুক মুচকি হেঁসে উঠলো।
সত্যি ত্রিয়াদির হাতে জাদু আছে । মেসাজ এর পর মনটা শান্ত হলো বটে কিন্তু ভয়টা এখনো আছে। তারপর দিন যায় তেমন কিছু হয় না। দেখতে দেখতে গরমের ছুটির আর তিন দিন বাকি । কিন্তু পরিস্থিতি এখনো সেই আগের মতোই । তিন দিন পর গরমের ছুটি তাই আব্বা আম্মিকে ফোন করে বলে দিল বাড়ি যাওয়ার কথা । চার পাঁচ বার চেষ্টা করার পর ফোনটা লাগলো। ওখানে নাকি নেটওয়ার্ক এর সমস্যা হচ্ছে কিছুদিন ধরে।
রাতে যখন সূর্য অফিস থেকে ফিরলো তখন আখতার ত্রিয়াদির ফ্লাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিল । ঘরের বাইরে যেতেই ববিতার প্রশ্ন “ কোথায় যাচ্ছো এতো রাতে ? „
“ তিন দিন পর গরমের ছুটি। বাড়ি যাবো তাই সূর্যকে ট্রেনের টিকিট কাটতে বলতে যাচ্ছি। „
“ আচ্ছা যাও। „
আখতার চলে গেল। হঠাৎ ববিতার মাথায় বিদ্যুতের মতো আইডিয়া টা খেলে গেল। এই পদক্ষেপ টা নিতেই হবে তাকে। সেও নিচে নেমে গেল।
আখতার গিয়ে ডোরবেল বাজালো । ত্রিয়াদি দরজা খুললো “ এসো এসো । „
“ আমি সূর্যের সাথে দেখা করতে এসছি। „
“ ওই তো সোফায় বসে আছে , রাজকুমারের সাথে খেলছে। „ বলে সোফার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ত্রিয়াদি।
আখতার গিয়ে সূর্যের পাশে বসলো। সে দেখতেই পেলো না ববিতাও এরমধ্যেই ঘরে ঢুকে গেছে।
“ বলছিলাম তিন দিন পর গরমের ছুটি পড়ছে । তাই ট্রেনের টিকিট কাটতে হবে। তুমি করে দেবে। „ সূর্যকে বললো আখতার।
“ হ্যাঁ কেন দেবো না ! কটার সময় কাটবো ? „
“ রাতের কাটো। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চলে যেতে পারবো । „
ববিতা পিছন থেকে সূর্যকে বললো “ দুটো টিকিট কাটবে তুমি। „
আখতার ববিতার আওয়াজ শুনে চমকে উঠলো। সে পিছন ফিরে জিজ্ঞেস করলো “ দুটো কেন ? „
“ আমিও যাবো তাই। দরকার হলে রবিকেও নিয়ে যাবো „
“ কেন তোমরা যাবে কেন ? তোমাদের নিয়ে গিয়ে আব্বাকে কি বলবো আমি ? „ আখতারের মুখ গলা শুকিয়ে গেছে।
“ সে আমি কি জানি। আমি গিয়ে বলবো আমার পেটে তোমার সন্তান বড়ো হচ্ছে। বাকি যা করার তোমার বাবা-ই করবে। „ ববিতা বেশ উৎসাহ নিয়ে বললো কথাটা। কিন্তু কথাটা শুনেই ভয়ে আখতারের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। সে কি বলবে ভেবে পেলো না। নিরব দাঁড়িয়ে রইলো।
“ এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস তুই ! „ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ত্রিয়াদি বললো ।
“ না দিদি। বাড়াবাড়ি আমি করছি না। ও শুরু করেছে আমার জীবন নষ্ট করে , আমার দিকে নজর দিয়ে ! „
আখতার ববিতার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । দিশেহারা অবস্থা তার। “ তুমি কি আমাকে ব্লাকমেইল করছো ? „
“ না। আমি আমার সন্তানের অধিকার এর কথা বলছি। তোমার কাছে এখন দুটো রাস্তা হয় তুমি আমাকে বিয়ে করো না হলে আমাকে নিয়ে চলো তোমার বাড়ি । „
“ এ মহিলা পাগল হয়ে গেছে ! একবারও আমার পরিস্থিতি বুঝতে চাইছে না । „ আখতার গর্জে উঠলো রাগে ।
“ তুমি বুঝতে চাইছো আমার পরিস্থিতি ! আমি এখনও বিধবা ! বোঝো তুমি ? বিধবা হয়ে থাকা একটা মেয়ের কাছে কতটা কষ্টকর। „ ববিতাও চিল্লিয়ে কথা বলতে শুরু করলো । এদিকে ত্রিয়াদি সূর্য রাজকুমার এদের কথা শুনতে লাগলো। কিন্তু কি বলে এদের শান্ত করবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
“ তোমাকে বিয়ে করতে আমার কোন বাঁধা নেই। কিন্তু যদি আব্বা আম্মি জানতে পারে তাহলে কি হবে ভেবে দেখেছো ? „
“ তোমার আব্বা আম্মিকে আমি বলবো কেন ? „
এতদিন পর আসল সমস্যার সমাধান হলো। সত্যি সমস্যা টা তো বিয়ে করা নিয়ে নয় ! সমস্যা টা আখতারের পরিবার জানতে পারলো কি না সেটা নিয়ে ! সেটা এই একটা কথায় ঘরের সবাই বুঝতে পারলো। আখতারের আব্বা তখনই জানবে যখন এই ঘরে উপস্থিত কোন ব্যাক্তি মুখ খুলবে। কিন্তু মুখ খোলার ইচ্ছা কারোরই নেই।
ববিতা আরো বললো “ তুমি কবে তোমার আব্বা আম্মি কে বলবে সেটা তোমার ব্যাপার। তুমি না বললে আমিও কখনো বলবো না। „
“ ঠিক আছে। „ আপাতত এই দিকের সমস্যাটা মিটিয়ে নি। পরে কি হবে দেখা যাবে। পেটে সন্তান চলে এসছে। এটাকে গ্রহণ করতেই হবে।
কথাটা শুনেই ববিতার চোখ মুখ খুশিতে ভরে উঠলো । “ তুমি এখানে বোসো আমি এক্ষুনি আসছি। „ বলে সে সোজা ঘরে গিয়ে সিঁদুর আর মঙ্গল সূত্র আনলো। আর রবিকেও ডাকলো । সে ঘরে পড়ছিল।
“ কি হলো হঠাৎ ? খুব খুশি দেখাচ্ছে ! „ এতদিন পর মায়ের এই খুশি মুখ দেখে খুব ভালো লাগলো রবির।
“ ও বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে ! „ নিচে নামতে নামতে বললো ববিতা।
ববিতা ঘরে ঢুকতেই হাতে মঙ্গল সূত্র দেখে আখতার অবাক হয় “ এটা কি অমিতের দেওয়া ? „
“ তুমি কি পাগল হয়েছে নাকি ? অমিতের পড়ানো মঙ্গল সূত্র তুমি আমাকে পড়াবে কেন ? আর আমিই বা পড়বো কেন ? এটা আমি আজকের জন্য কিনে রেখেছি। এবার চুপচাপ ভালো স্বামীর মতো দায়িত্ব নিয়ে এটা আমাকে পড়িয়ে দাও। „
আখতার সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ববিতার কাছ থেকে সিঁদুর এর কৌটোটা নিল। কৌটোটা খুলে ডান হাতের তর্জনী আর বুড়ো আঙুল দিয়ে চিমটে করে অল্প সিঁদুর তুললো । পাশ থেকে ত্রিয়াদি মুখ দিয়েই উলু দিতে লাগলো। উললললল । ববিতা চোখ বন্ধ করে ফেললো , আখতার আঙুলে সিঁদুর নিয়ে ববিতার সিঁথিতে পড়িয়ে দিল। “ এবার খুশি তো ? „
“ খুব খুশি । „ চোখ খুলে বললো ববিতা। চোখে তার হীরের উজ্জ্বলতা। “ এবার মঙ্গল সূত্র টা পড়িয়ে দাও। „ বলে মঙ্গল সূত্র টা এগিয়ে দিল ।
আখতার ববিতার হাত থেকে মঙ্গল সূত্র টা নিয়ে পড়িয়ে দিতে লাগলো। পাশ থেকে রবি ত্রিয়াদি আর সূর্য একসাথে উলু দিল। খুব খুশি তারা। ঝগড়ার পরিনতি যে এমন বিয়ের দিকে মোড় নেবে তা তারা ভাবতে পারে নি।
সূর্যের কোলে বসে থাকা রাজকুমার বললো “ বাবা ! মাসি কি করছে ? „ তিন বছরের রাজকুমার আজ পর্যন্ত কোন বিয়ে দেখেনি।
“ তোমার মাসি আর মেসো বিয়ে করছে । „
“ বিয়ে ! „
“ হ্যাঁ ! বিয়ে । „
“ ঝগড়া করার পর বুঝি বিয়ে হয় ? „
কথাটা শুনে ঘরের সবাই হো হো করে হেঁসে উঠলো। আখতারের ঠোঁটেও একটু হাঁসির রেখা দেখা গেল।
রাতে খাওয়ার সময় কেউ তেমন কথা বললো না। চুপচাপ খাওয়ার শেষ করলো। ববিতার মন খুশিতে নাঁচতে ইচ্ছা হচ্ছে। রবিও খুব খুশি বিয়েটা হয়ে যাওয়ার জন্য। আখতার কিন্তু মোটেও খুশি নয়। এইভাবে ব্লাকমেইল করে ঘটনাটা ঘটানোর জন্য । ববিতা আখতারের এই ভাবলেশহীন মুখ দেখে বেশ দুঃখ পেলো ভাবলো হয়তো সে এই বিয়েতে খুশি নয় !
রাতে আখতার নিজের ঘরে শুয়ে পড়লো কিন্তু ঘুম এলো না। আজ যে তার বিয়ে হয়ে গেছে সেটাই মাথায় ঘুরছে। সেই চিন্তা তার দুই চোখ এক করতে দিচ্ছে না। ববিতা রাতের কাজ শেষ করে আখতারের ঘরে গেল। গিয়ে দেখলো সে ঘুমাচ্ছে।
ববিতা আখতারের বাম পাশে এসে তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো । দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে বললো “ রেগে আছো ? আমি কি করতাম বলো তুমি ? আমার যে খুব ভয় হচ্ছিল ! তুমি যদি তোমার সন্তানের দায়িত্ব না নাও এটা ভেবেই আমার বুক ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। হ্যাঁ আমি তোমাকে ব্লাকমেইল করছি তার জন্য এই আমি তোমার পা ধরে ক্ষমা চাইছি! „ বলতে বলতে ববিতার গলা বুজে এলো। দুফোঁটা জল ও দেখা দিল চোখে।
ববিতা উঠে আখতারের পা ধরতে গেল। আখতার ধরতে দিল না। আখতার ঘুমায়নি । আজ তার বিয়ে হয়ে গেছে। কোন ছেলের যদি হঠাৎ এইভাবে বিয়ে হয় তাহলে তার ঘুম কিভাবে আসবে। আখতারেরও আসেনি। সে চুপচাপ ববিতার কথা শুনছিল। সে উঠেই ববিতাকে আবার বুকে টেনে নিল। “ কি করছো কি আমি তোমার থেকে ছোট হই ! „
“ তো কি হয়েছে ? তুমি এখন আমার স্বামী। „
আখতার কথাটা শুনে একটু মিচকে হাঁসলো। আখতারের হাঁসি দেখে ববিতা বললো “ এবার রাগ কমেছে ? „
“ বাহ্ রে তুমি রাগ করতে পারো আর আমি করলেই দোষ ! „
“ হ্যাঁ দোষ । আমি রাগ করতেই পারি কিন্তু তুমি পারো না । „
আখতার একটু হেঁসে উঠলো। কিছুক্ষণ পর ববিতা বললো “ তুমি বাড়ি যাচ্ছো । তোমার ভাইবোনদের জন্য কিছু নিয়ে যাবে না ? „
“ নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু ! „
“ কিন্তু কি ? „
“ টাকা শেষ সব। এক টাকাও নেই আর । „
“ আমি কিন্তু আবার রাগ করবো । „
“ আবার কি হলো ? „
“ টাকা শেষ তো আমাকে বলোনি কেন ? আমার টাকা আর তোমার টাকা কি এখন আলাদা নাকি ! কালকে যাবো শপিং করতে ঠিক আছে। „
কিছুক্ষণ পর ববিতা আবার বললো “ তুমি ফিরে আসবে তো ? না আসলে কিন্তু তোমার সন্তান সারাজীবন বাবার আদর পাবে না । সে কিন্তু কখনো তোমায় ক্ষমা করবে না । আমিও করবো না কিন্তু ! „
“ আসবো। এখানেই তো মাধ্যমিক পরিক্ষা দিতে হবে। „ বলে ববিতার মাথা তুলে কপালে একটা চুমু খেলো। কপালে লেগে থাকা সিঁদুর আখতারের ঠোঁটে হালকা লেগে গেল ।
ববিতার প্রথম বিয়ের বাসর রাতে সে ধর্ষিতা হয়েছিল নিজেরই স্বামীর কাছে। আর আজ এই দ্বিতীয় বিয়ের বাসর রাত। এই রাতে শুধু একটা প্রেম , স্নেহ , আদর মাখা একটা চুম্বন। এই বাসর রাত সফল তাদের। চুম্বন পেয়ে ববিতার চোখ জলজল করে উঠলো। সেই উজ্জ্বল চোখ তিরের মতো আখতারের মনে গিয়ে বিঁধলো । এমন বাঁধা বিঁধলো যে এটা হয়তো সারাজীবন থেকে যাবে।