12-06-2021, 10:57 AM
(12-06-2021, 09:01 AM)ddey333 Wrote: অকাল বসন্ত
"হ্যাঁ কাকু, ঠিক আছি মোটামুটি। না, জ্বর আসেনি। হ্যাঁ, আজ সকাল থেকে অল্প টেস্ট পাচ্ছি... ওই, হোম ডেলিভারি থেকে খাবার দিয়ে যাবে...আচ্ছা কাকু...রাখি?" বলতে বলতে ফোনটা রেখে দিল শুভমের। বাড়িওলা কাকুর ফোন। এই কদিন খুব খোঁজ নিয়েছেন ভদ্রলোক। প্রথমদিন তো ও ফোন ধরে ভেবেছিল ভাড়াটার জন্য ফোন করেছেন। বেশ বিরক্ত হয়েছিল তাই। তাও বাড়িওলা বলে কথা! তাই ফোনটা ধরেছিল। পরে বুঝল উনি ওর খোঁজ নেবার জন্যই ফোন করছিলেন।
কথা বলতে বলতে বাইরের দিকে চোখ গেল ওর। ওই অভদ্র মেয়েটা কথা গুলো শুনছে! ভাবতেই বিরক্ত লাগল শুভমের। এই মাস চারেক হল এই এক কামরার ফ্ল্যাটটায় ভাড়া এসেছে ও। লাগোয়া আরেকটি ফ্ল্যাটে একটি মেয়ে তার বাবার সাথে থাকে। একদিন না দুদিন এমনিই কৌতূহলের বশে শুভম তাকিয়েছিল মেয়েটাদের ঘরের জানলার দিকে। সেরকম কিছু ভেবে তাকায় নি। জাস্ট চোখ পড়ে গেছিল। কিন্তু মেয়েটা ঘটাং করে জানলাটা বন্ধ করে দিয়েছিল। খুব অপমানিত লেগেছিল ওর। সেই থেকে পারতপক্ষে ওইদিকে তাকায় না শুভম। এমনকি একদিন সামনা সামনি দেখা হয়ে গেছিল, ও না দেখার ভান করে সরে গেছিল। এত অহংকারী মেয়ের সাথে আলাপের কোনো ইচ্ছেই নেই ওর। না হয় দেখতে সুন্দর, আর ব্যাংকে চাকরি করে। তা বলে না বুঝে ওমনি ব্যবহার করবে? মানুষের আসল সৌন্দর্য তো তার ব্যবহারেই।
ভাবতে ভাবতেই কলিংবেলের আওয়াজ। এই সময়ই খাবার আসে ওর। তবে খাবার কোনো আগ্রহই নেই আজ। ভীষন ব্লান্ড আর রংহীন খাবার! দেখেই খেতে ইচ্ছে করে না। এদিকে রান্না করতেও ইচ্ছে করে না, এত দুর্বল ও। কোনোরকমে ব্রেকফাস্টটা বানিয়ে নেয়, এই না কত! আর একদিন দুদিন দেখে ডেলিভারি বন্ধ করে দেবে ও...নিজেই সেদ্ধভাত করে খাবে...।
বেজার মুখে দরজাটা খোলে শুভম। দেখে একটা তিন থাকের স্টিলের টিফিন বাক্স। কিন্তু ওর হোম ডেলিভারি থেকে তো ফয়েল প্যাকেটে করে খাবার দেয়! আজ তাহলে ইচ্ছে করে এতে দিয়েছে। ভেবে তাড়াতাড়ি বাক্সটা নিয়ে ঘরে আসে। একদম গরম খাবার! অন্যদিন এতটা গরম থাকে না!
টেবিলের ওপর টিফিনবাক্সটা রাখতেই চোখে পড়ল একটা কাগজের টুকরো! এটা আবার কি!
"হ্যালো নেবার,
আপনি ভাল আছেন জানতে পারলাম। ভাল লাগল শুনে খুব। রোগা হয়ে গেছেন কিন্তু অনেকটা। এবার থেকে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করবেন, কেমন?
খাওয়া দাওয়ার কথায় মনে পড়ল। টেস্ট ফিরে পাওয়া সেলিব্রেট করার জন্য মুগডাল, উচ্ছে ভাজা আর চিকেন পাঠালাম। আমার রান্না। বাবা বলেন আমি রান্না খারাপ করি না। আপনার কেমন লাগবে জানি না অবশ্য!
আর হ্যাঁ, সেদিনের জন্য স্যরি। মাথা গরম ছিল একটা কারণে।
সেরে উঠুন ঝটপট।
ইতি,
আপনার রুড নেবার!"
চিঠিটা পড়ে একটু হাসে শুভম। আহ, মনটা ভাল হয়ে যাচ্ছে! টিফিনবাক্স খুলেই জিভে জল এলো ওর। কতদিন পরে ভাল খাবার খেতে পাবে!
"হ্যালো, 'রুড' না, 'গুড' নেবার,
থ্যাংকইউ! কত্তদিন পরে এত সুস্বাদু খাবার খেলাম। আপনার বাবা ঠিক ই বলেন, আপনার রান্না খুব ভাল।
আবার কবে খাওয়াবেন?
অপেক্ষায় থাকলাম, উত্তরটা জানলা দিয়েও দিয়ে দিতে পারেন।
ইতি,
আপনার হ্যাংলা নেবার!"
টিফিনবাক্সটা ধুয়ে চিঠিটা ওপরে রেখে স্যানিটাইজ করে একটা মোটা ধূপকাঠির প্যাকেট দিয়ে পাশের বাড়ির কলিংবেল বাজিয়ে ঘরে চলে আসে শুভম।
এবার অপেক্ষার পালা...তবে এই অপেক্ষা মিষ্টি অপেক্ষা....
প্রখর গ্রীষ্মেও অকাল বসন্ত আসছে...
কি সুন্দর শর্ট আর সুইট একটা গল্প.....