05-06-2021, 09:23 PM
__ সত্যি বলতেসি ফুপি , ওই নায়িকার চেয়ে তুমি কোন অংশে কম না ।
__ একটা কষে থাপ্পর লাগাবো তোকে , ফাজিল হয়েছিস খুব না ? ফুপির সাথে এমন কথা বলে কেউ
__ তোমাকে কে আমার ফুপি বলে মনেই হয় না , তোমাকে আমাদের সাথে আগামী বছর কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়া যাবে । সত্যি বলছি
হি হি হি , সে কি হাঁসি , থামবে বলে মনেই হচ্ছে না । একটা নিজের অর্ধেক বয়সি ছেলে বলছে তাকে দেখতে ১৬-১৭ এর খুকি বলে মনে হয় আর সে সেই অবিশ্বাস্য কমপ্লিমেন্ট শুনে হাসির ফোয়াড়া ছোটাচ্ছে !!!!! অথচ এটা ভাবছে না যে কি আকাশ কুসুম কথাটাই না বলেছে রাজু।আর পুরুষ মানুষ তখনি কোন মিথ্যা প্রশংসা করে যখন সে সেই নারী কে ভজিয়ে ভাজিয়ে কিছু আদায় করে নিতে চায়। এতো বয়স হয়েছে অথচ এই ব্যাপারটা সে বুঝতে পারছে না দেখা বেশ অবাক হলাম আমি । আর কোন এঙ্গেলে তাকে ১৬-১৭ বছরের মনে হয় ? উনার কি এখন উচিৎ ছিলো না রাজু কে কড়া করে একটা ধমক দেয়া । রাজুকে নিজের স্থান বুঝিয়ে দেয়া । না সে সেটা করছে না , বরং হেঁসে লুটোপুটি খাচ্ছে ।
হায়রে নারী জাত , নিজের প্রশংসা শুনলে হুস থাকে না , এবার সেই প্রশংসা যতই অমুলক আর অবাস্তব হোক । প্রায় পাঁচ মাস পর নিজের পেটের ছেলে আসবে কই তার জন্য অপেক্ষা করবে , নানা সুস্বাদু খাবার তৈরি করবে , তা না সে গিয়েছিলো দুই লম্পট এর সাথে সিনেমা দেখতে । এসব ভাবতে ভাবতে আপনাতেই আমার দুই হাত মুঠো হয়ে এলো । আর তখনি আমার উপর নজর পরলো আমার “মমতাময়ী” মায়ের । একটু থমকে গেলো , মনে হচ্ছে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না , অথাবা আমাকে চিনতে পারছে না অন্ধকারে ।
আপন মনেই আমার ঠোট একটু বেঁকে গিয়ে তিক্ত একটা হাঁসি ফুটে উঠলো । কারন আমি শুনেছি মায়েরা নাকি সন্তানের গন্ধ শুঁকেই চিনে ফেলতে পারে । আর এদিকে আমার জননী , সিনেমা হলে ফুর্তি করে এসে অন্ধকারে আমাকে চিনতে পারছে না । আমি কি এই পাঁচ মাসে এতই পরিবর্তিত হয়ে গেছি । কতটা লম্বা হয়েছি আমি ?
আসলে পরিবর্তন আমার মাঝে হয়নি , হয়েছে আমার জননীর মাঝে । উনি এতক্ষণ সিনামা হলে থাকার কারনে উনার চোখ ঝলসে আছে । তাই অন্ধকারে চোখ সইয়ে নিতে সময় লাগছে । অইত মনে হয় চিনতে পেরেছে , হ্যাঁ শিওর পেরেছে । এখন কি করবে ? খুব সহজ ভাবে জিজ্ঞাস করবে “ওহ অপু তুই এসেছিস, ভালোই হলো , ভাত খেয়েছিস? তাহলে দাড়িয়ে আছিস কেনো? গিয়ে শুয়ে পর , এতো লম্বা জার্নি করে এসেছিস” নাকি অন্য কিছু করবে , অভিনয় করবে ? উনি তো আবার সিনামার নায়িকার চেয়ে কম নন ।
হ্যাঁ আসলেই উনি সিনামার নায়িকার চেয়ে কম নন , প্রায় দউরেই এলেন আমার কাছে , এসেই জড়িয়ে ধরলেন । গালে কপালে , থুতনিতে , আর গলায় ঘাড়ে চুমুর বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন । একদম পারফেক্ট , এর চেয়ে ভালো আর কেউ করতে পারবে না । কাভি খুসি কাভি গাম ছবির জয়া আর সাহ্রুক ও পারেনি ।
বুকে চেপে ধরে রাখলেন আমাকে , আগে কতবার ধরেছেন এমন করে হিসেব নেই , তবে এই বুকের সাথে চিপকে থাকার তৃষ্ণা আমার কোনদিন মেটেনি । তবে আজ বড় সুগন্ধির গন্ধ পাচ্ছি যে , তাই গত পাঁচ মাসের জমিয়ে রাখা আবেগ আমার কাছে ভিরতে পারছে না। প্রয়াধন আর সুগন্ধির গন্ধ যে তাদের কে আমার কাছে আসতে দিচ্ছে না । আমার হাত দুটো আমার শরীর এর দু পাশেই অলস পড়ে রইলো।
তবে চোখ দুটো বাধা মানছে না , এরা আপন মনের রাজার মতো নিজেদের কলসি উল্টো করে দিয়েছে । আম্মুর কণ্ঠ নালির ওঠা নামা আর বুকের শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার অনিয়ম আমাকে বলে দিচ্ছে উনিও কাঁদছে । আর এই কান্নাটা আমাকে একটু দ্বিধায় ফেলে দিচ্ছে , এতো ভালো অভিনয় করা কি সত্যি সম্ভব ? আর এই ক্ষণিক এর দুর্বলতা প্রচণ্ড ভাবে আমার আবেগ গুলিকে শক্তিশালী করে তুলল । তারা সকল প্রসাধনী সাঁজ সজ্জার বাধা ডিঙ্গিয়ে এসে আমার চারপাশ ঘিরে ধরলো । আমার হাত দুটি ও আর অলস পড়ে রইলো না । জড়িয়ে ধরলো আম্মুকে , সত্যি এর চেয়ে শান্তি দুনিয়ার আর কোথাও নেই । এখন আমি আর সুঘন্ধির সু ঘ্রান পাচ্ছি না , চিরাচরিত মায়ের বুকের গন্ধ এসে ধাক্কা দিচ্ছে আমার নাকে । বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নিতে লাগলাম আমি , যতক্ষণ সম্ভব হয় । হয়ত এই সুযোগ আর সামনে বেশি আসবে না ।
রাত ভর ঘুম হলো না আমার , এর একটা কারন প্রচণ্ড উত্তেজনা , আর সারাদিনের জার্নি । আম্মু এখন পাশ ফিরে ঘুমিয়ে আছে , অনেকটা রাত পর্যন্ত জেগে ছিলো । অনেক কথা বলেছে আমার সাথে , খুঁটি নাটি অনেক প্রস্ন করেছে । আমিও যত টুকু বলা যায় বলেছি । কথা বলার সময় আম্মু বেশ হাঁসি খুসি ই ছিলো । প্রথম দেখা হওয়ার পড়ে আর কাদা কাটি করেনি । আমার জন্য ব্যাপারটা বেশ সস্তিকর ছিলো । কারন আমার চারপাশে আবার সেই বাস্তবতার অদৃশ্য দেয়াল উঠে এসেছে । তাই নিছক আবেগে অন্ধ হওয়ার চান্স নেই । কারন আমার কাছে মনে হচ্চলি আরও কিছুক্ষন সেই আবেগে ডুবে থাকেল আমি এমন কিছু বলে বসতাম যা পরে আমার জন্য লজ্জাজনক হতো । হয়তবা আমি আম্মুর কাছে বলেই বসতাম , আমি আর ফিরে যেতে চাই না , আম্মু আমার সামনেই রাজু মতিন এর সাথে যা খুসি করুক , আমি সুধু তার কাছে থাকতে চাই , তার কোন কাজের বাধা আমি হবো না ।
ওই কথা গুলো বলতে বলতে আম্মুর সামনে হাত জোড় করে থাকা অবস্থায় নিজেকে কল্পনা করতেই বেশ লজ্জা হচ্ছে আমার । আর যদি বাস্তবে বলে দিতাম তাহলে কি হতো ?
সকালে ঘুম থেকে উঠতে যথারীতি দেরি হয়ে গেলো আমার । এখানে কেউ ডাক দেয়ার নেই , তার উপর কলেজ ও নেই । তাই ভোর বেলায় ঘুমালেও ঘুমটা বেশ ভালোই হলো । আম্মু নেই বিছানয় , যে দিকটা আম্মু ঘুমিয়ে ছিলো সেখানটায় এখনো বিছানার চাদর একটু অগোছালো হয়ে আছে । আমি উঠে বাথরুমে গেলাম , এক টা নতুন ব্রাস রাখাই ছিলো সেখানে । সেটা যে আমার জন্য তাতে সন্দেহ নেই । তাই বিনা দ্বিধায় ব্যাবহার করলাম ।
প্রাত কাজ সম্পন্ন করে বেরোতেই মেঝ মামির সাথে দেখা । আমাকে নাস্তা করার জন্য আসতে বলল মামি । এখন যদিও নাস্তা করার সময় না প্রায় এগারোটা বাজে । তবুও আমি গেলাম তার সাথে , হালকা পাতলা খেলাম । আম্মুর কথা জিজ্ঞাস করতেই বলল সে রান্না ঘরে আমার জন্য রান্না করছে । তাই নাকি ? মনে মনে বলাম , কেন জানি মনে হলো একবার দেখেই আসি । তাই রান্না ঘরের দিকে গেলাম , দেখলাম সত্যি ই বলেছে নানি বড় মামি আর আম্মু রান্না ঘরে । আম্মু কে দেখলাম , ঘেমে নেয়ে একাকার , মনে হয় রান্নার অভ্যাস চলে গেছে এতদিনে । বাবার বাড়িতে আর নিশ্চয়ই কাজ করতে হয় না তাকে ।
প্রথমে বড় মামি দেখলো আমাকে , উবু হয়ে বসে , তরকারি কাটছে , উনি বেশ মোটাসোটা তাই বুকের অনেকটা উথলে বেড়িয়ে আছে , আমার দৃষ্টি সেদিকে এক পলকের জন্য গেলেও সাথে সাথে ফিরিয়ে নিলাম । হঠাত করে রাজুর কথা মনে হয়ে গিয়েছিলো বড় মামির বুকের দিকে তাকিয়ে । তাই সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিয়েছি ।
__ অপু নাস্তা খেয়েছো ? বড় মামির কথা শুনে আম্মু আর নানি ও ফিরে তাকিয়েছে । দুজনেই হেঁসে দিলো আমাকে দেখে । আম্মু আমাকে দেখে ডাক দিলো
__ অপু ভেতরে আয় দেখ ইলিশ মাছের ডিম ভেজেছি , আয় খা
হ্যাঁ ইলিশ মাছের ডিম আমার প্রিয় , আমাকে একটা পিরি দেয়া হলো আমি সেটায় বসতেই একটা সসার এ করে আমাকে ইলিস মাছের ডিম ভাজা দেয়া হলো । আমি ডিম খাচ্ছি আর আম্মুর দিকে তাকাচ্ছি । আসলেই আম্মু বেশ চিকন হয়েছে । চোখের নিচে কালি ও আছে , দেখে মনে হচ্ছে বেশ ক্লান্ত তবে সেই ক্লান্তি চাপা পরে আছে । সাড়া মুখে ঝলমলে একটা হাসির আভা , সবচেয়ে বেশি হাঁসি খেলা করছে আম্মুর দুটো চোখে ।
সেখানে একটা তৃপ্ত ভাব ফুটে উঠেছে , চোখের কোটর বসে যাওয়া বা চোখের নিচের কালি দুটোর একটাও সেই তৃপ্তি দাবিয়ে রাখতে পারেনি। আসলে এই তৃপ্তি কিসের ? এই চিন্তাটা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো । আর তিনজন এর মাঝে বসে চিন্তা করা সম্ভব নয় তাই আমি উঠে এলাম । বারান্দায় এসে বসলাম , রাজু মতিন এর দেখা নেই , এটা আমার জন্য একটা ভালো খবর । আমার মনে হয় এই মুহূর্তে আমি ওদের ঠিক সহ্য করতে পারবো না । এখন আমার নিরিবিলি সময় দরকার , আমাকে ভেবে বার করতে হবে আম্মুর এই পরিতৃপ্তি এলো কোথা হতে ।
এটা কি নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের তৃপ্তি , স্বামী সন্তান এর ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে সামনের যে বেড়ীহীন জীবন অপেক্ষা করছে সেই আলোর ঝলকানি তার চোখে খেলা করছে । না না এমন হলে চোখের নিচে কালি পড়বে কেনো ? আমি মনে মনে প্রস্ন করলাম । হয়ত আজকাল রাত জাগা হয় , কিন্তু কেন ? আমার জন্য চিন্তায় ? না না আমার জন্য চিন্তা থাকলে এতদিনে নিশ্চয়ই যোগাযোগ হতো । কোন না কোন একটা উপায় বের করেই ফেলত । আমার জন্য চিন্তায় নিশ্চয়ই তার রাতের ঘুম হারাম হয়নি ।
তাহলে তার চোখের নিচে কালি পড়ার কারন কি ? আর কি কারনেই বা স্লিম হওয়ার চেষ্টা করছে । সে কি আমাকে আব্বুর কাঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে নিজের জন্য নতুন জীবন সাথি খোজার জন্য নিজেকে সানিয়ে নিচ্ছে ? নাকি মনি বুড়োর কাছে রাতবিরাতে যায় ? নাকি এর চেয়েও বাজে কিছু করছে ? মনি বুড়োর মন মজাতে তো আর নিজেকে শান দেয়ার কিছু নেই । তাহলে কি রাজু ?
হ্যাঁ রাজুই হবে ? গতকাল রাজু যেভাবে কথা বলছিলো সেটা কোন ফুপি ভাই ছেলের কথা নয় । চূড়ান্ত কিছু না হলেও বেশ অনেকটা এগিয়ে গেছে রাজু তাহলে । হয়ত আম্মুও রাজুর মতো ইয়ং এবং “ফানি” কারো প্রতি ধিরে ধিরে আসক্ত হয়ে গেছে । হ্যাঁ তাই হবে , আমি শিওর হলাম । সাথে সাথে একটা পাপ বোধ এসে জড় হলো আমার মনে । একটা প্রস্ন এসে আমার কানে বাজতে লাগলো , আমি কি এমটাই চেয়েছিলাম না ?
নিজ হাতে নষ্ট করিনি আমাদের পরিবার ? হ্যাঁ করেছি ।
কিন্তু আমি তো এমন জীবন চাইনি , আমি যে জীবন চেয়েছিলাম সেখানে আমার আর আম্মু দুজনের ই ঠাই ছিলো । কিন্তু এখন আমি আমার কোন জায়গা দেখতে পাচ্ছি না । আব্বু দ্বিতীয় বিয়ে করেছে , সে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে সুখে আছে । এদিকে আম্মু নিজের ভবিষ্যৎ ভেবে আনন্দিত । কিন্তু আমি কি করবো , আমার কি হবে ? চাইলে আব্বুর সাথে থাকতে পারি , তবে আমি সেখানে থাকবো না । আমার দ্বারা হবে না । আমি আম্মুর সাথে থাকতে চাই ।
আমি একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম , যদি আম্মুর জীবনে আমার স্থান না হয় তাহলে আমি তার নিজের জন্য আলাদা জীবন গড়তে দেবো না, পদে পদে বাধা দেবো । অবশ্যই দেবো । তাকে যদি নতুন কিছু চিন্তা করতেই হয় আমাকে নিয়েই করতে হবে । আমি ছাড়া তার জীবনে অন্য কেউ গুরুত্বপূর্ণ থাকবে না । আমি থাকতে দেবো না । তার জীবনের এক মাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে আমাকে নিয়ে ভাবা । এমনটাই হওয়া উচিৎ । আব্বু মনে হয় ঠিক ই করতো , কড়া শাসনে রাখতো আম্মুকে , আম্মুর আসল চরিত্র সম্পর্কে আব্বুর সঠিক ধারনা ছিলো ।
এইসব ভাবতে ভাবতে আমি মনি বুড়োর বাড়ির দিকে গেলাম । আমার উদ্দেশ্য মনি বুড়োর কাছ থেকে কিছু তথ্য নেয়া । কারন শেষ বার যখন বুড়োর সাথে আমার দেখা হয়েছিলো তখন আমার মনের অবস্থা অন্য রকম ছিলো , বুড়োর নিশ্চয়ই ধারনা এখনো এমন আছে । তাই বুড়ো মুখ ফস্কে দু একটি কথা বলে ফেলতে পারে ।
কিন্তু বুড়ো কে পেলাম না , ঘর বন্ধ । নিশ্চয়ই কোথাও গিয়েছে , তাই আর দেরি করলাম না । হেঁটে হেঁটে নানা বাড়ি চলে এলাম , এসেই দেখা রাজু মতিন এর সাথে । দুটোই খালি গাঁয়ে আর কাঁধে একটি করে গামছা । দুই ফাজিল এর মুখেই আকর্ণ বিস্তৃত হাঁসি । আমাকে দেখিএ মতিন বলল
__ কি রে অপু এমন পেচার মতো মুখ করে কই গিয়েছিলি ?
যদিও মেজাজ খারাপ হলো তবুও বুঝতে দিলাম না ওদের । বললাম
__ এই ঘুরতে গিয়েছিলাম , তোরা কোথায় জাচ্ছিস ?
__ পুকুরে গোসল করতে ? তুই যাবি এখন তো শীত নেই , তোর তেল ও লাগাতে হবে না ।
চিন্তা করলাম , দেখি এদের হাব ভাবে কিছু বোঝা যায় কিনা ? তাই রাজি হয়ে গেলাম । বললাম তোরা যা আমি গামছা নিয়ে আসি ।
পুকুর ঘাটে গিয়ে দেখি রাজু মতিন একা নয় ওদের আরও চারজন বন্ধু আছে । বেশ হাঁসা হাঁসি করতে কতে ওরা একটা বল দিয়ে পানিতে খেলছে । কি কি যেন বলাবলি করছিল ওরা আমাকে দেখে চুপ হয়ে গেলো ।
__ কিরে আমাকে দেখে কথা থামিয়ে দিলি যে , ভয় পেলি নাকি ? কি নিয়ে কথা হচ্ছিলো ? আমি পুকুর ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললাম
__ তোকে দেখে তেলাপোকা ও ভয় পাবে না হা হা হা , আর আমরা কলেজে ভর্তি হওয়া আর কলজ এর মেয়েদের নিয়ে আলোচনা করছিলাম এসব জেনে তোর লাভ কি ? তোর তো দেরি আছে । রাজু হাসতে হসাতে বলল
__ তুই আগে পাশ কর , তারপর কথা বলিস , দেখ আমার সাথে আবার পরিক্ষা দিতে হয় কিনা ।
__ নাহ এবার ফুপি ছিলো , আমি শিওর পাশ রাজু বিটকিলে একটা হাঁসি দিয়ে বলল ।
কথাটা খারাপ কিছু না তবে আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো , আমি বললাম
__ তোর ফুপিও তোর মতো , আন্ডার মেট্রিক
কথাটা বলার সাথে সাথে রাজুর মুখ কালো হয়ে গেলো । এমন একটা ভাব করছে যেন আম্মু এস এস সি পাশ করেনি বলে আমার চেয়ে ওর লজ্জা বেশি । তবে ওর মুখের অবস্থা আমার মনে একটু হলেও শান্তি দিলো । আমি গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে পানিতে নামলাম ।
__ একটা কষে থাপ্পর লাগাবো তোকে , ফাজিল হয়েছিস খুব না ? ফুপির সাথে এমন কথা বলে কেউ
__ তোমাকে কে আমার ফুপি বলে মনেই হয় না , তোমাকে আমাদের সাথে আগামী বছর কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়া যাবে । সত্যি বলছি
হি হি হি , সে কি হাঁসি , থামবে বলে মনেই হচ্ছে না । একটা নিজের অর্ধেক বয়সি ছেলে বলছে তাকে দেখতে ১৬-১৭ এর খুকি বলে মনে হয় আর সে সেই অবিশ্বাস্য কমপ্লিমেন্ট শুনে হাসির ফোয়াড়া ছোটাচ্ছে !!!!! অথচ এটা ভাবছে না যে কি আকাশ কুসুম কথাটাই না বলেছে রাজু।আর পুরুষ মানুষ তখনি কোন মিথ্যা প্রশংসা করে যখন সে সেই নারী কে ভজিয়ে ভাজিয়ে কিছু আদায় করে নিতে চায়। এতো বয়স হয়েছে অথচ এই ব্যাপারটা সে বুঝতে পারছে না দেখা বেশ অবাক হলাম আমি । আর কোন এঙ্গেলে তাকে ১৬-১৭ বছরের মনে হয় ? উনার কি এখন উচিৎ ছিলো না রাজু কে কড়া করে একটা ধমক দেয়া । রাজুকে নিজের স্থান বুঝিয়ে দেয়া । না সে সেটা করছে না , বরং হেঁসে লুটোপুটি খাচ্ছে ।
হায়রে নারী জাত , নিজের প্রশংসা শুনলে হুস থাকে না , এবার সেই প্রশংসা যতই অমুলক আর অবাস্তব হোক । প্রায় পাঁচ মাস পর নিজের পেটের ছেলে আসবে কই তার জন্য অপেক্ষা করবে , নানা সুস্বাদু খাবার তৈরি করবে , তা না সে গিয়েছিলো দুই লম্পট এর সাথে সিনেমা দেখতে । এসব ভাবতে ভাবতে আপনাতেই আমার দুই হাত মুঠো হয়ে এলো । আর তখনি আমার উপর নজর পরলো আমার “মমতাময়ী” মায়ের । একটু থমকে গেলো , মনে হচ্ছে ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না , অথাবা আমাকে চিনতে পারছে না অন্ধকারে ।
আপন মনেই আমার ঠোট একটু বেঁকে গিয়ে তিক্ত একটা হাঁসি ফুটে উঠলো । কারন আমি শুনেছি মায়েরা নাকি সন্তানের গন্ধ শুঁকেই চিনে ফেলতে পারে । আর এদিকে আমার জননী , সিনেমা হলে ফুর্তি করে এসে অন্ধকারে আমাকে চিনতে পারছে না । আমি কি এই পাঁচ মাসে এতই পরিবর্তিত হয়ে গেছি । কতটা লম্বা হয়েছি আমি ?
আসলে পরিবর্তন আমার মাঝে হয়নি , হয়েছে আমার জননীর মাঝে । উনি এতক্ষণ সিনামা হলে থাকার কারনে উনার চোখ ঝলসে আছে । তাই অন্ধকারে চোখ সইয়ে নিতে সময় লাগছে । অইত মনে হয় চিনতে পেরেছে , হ্যাঁ শিওর পেরেছে । এখন কি করবে ? খুব সহজ ভাবে জিজ্ঞাস করবে “ওহ অপু তুই এসেছিস, ভালোই হলো , ভাত খেয়েছিস? তাহলে দাড়িয়ে আছিস কেনো? গিয়ে শুয়ে পর , এতো লম্বা জার্নি করে এসেছিস” নাকি অন্য কিছু করবে , অভিনয় করবে ? উনি তো আবার সিনামার নায়িকার চেয়ে কম নন ।
হ্যাঁ আসলেই উনি সিনামার নায়িকার চেয়ে কম নন , প্রায় দউরেই এলেন আমার কাছে , এসেই জড়িয়ে ধরলেন । গালে কপালে , থুতনিতে , আর গলায় ঘাড়ে চুমুর বন্যা বইয়ে দিচ্ছেন । একদম পারফেক্ট , এর চেয়ে ভালো আর কেউ করতে পারবে না । কাভি খুসি কাভি গাম ছবির জয়া আর সাহ্রুক ও পারেনি ।
বুকে চেপে ধরে রাখলেন আমাকে , আগে কতবার ধরেছেন এমন করে হিসেব নেই , তবে এই বুকের সাথে চিপকে থাকার তৃষ্ণা আমার কোনদিন মেটেনি । তবে আজ বড় সুগন্ধির গন্ধ পাচ্ছি যে , তাই গত পাঁচ মাসের জমিয়ে রাখা আবেগ আমার কাছে ভিরতে পারছে না। প্রয়াধন আর সুগন্ধির গন্ধ যে তাদের কে আমার কাছে আসতে দিচ্ছে না । আমার হাত দুটো আমার শরীর এর দু পাশেই অলস পড়ে রইলো।
তবে চোখ দুটো বাধা মানছে না , এরা আপন মনের রাজার মতো নিজেদের কলসি উল্টো করে দিয়েছে । আম্মুর কণ্ঠ নালির ওঠা নামা আর বুকের শ্বাস প্রশ্বাস নেয়ার অনিয়ম আমাকে বলে দিচ্ছে উনিও কাঁদছে । আর এই কান্নাটা আমাকে একটু দ্বিধায় ফেলে দিচ্ছে , এতো ভালো অভিনয় করা কি সত্যি সম্ভব ? আর এই ক্ষণিক এর দুর্বলতা প্রচণ্ড ভাবে আমার আবেগ গুলিকে শক্তিশালী করে তুলল । তারা সকল প্রসাধনী সাঁজ সজ্জার বাধা ডিঙ্গিয়ে এসে আমার চারপাশ ঘিরে ধরলো । আমার হাত দুটি ও আর অলস পড়ে রইলো না । জড়িয়ে ধরলো আম্মুকে , সত্যি এর চেয়ে শান্তি দুনিয়ার আর কোথাও নেই । এখন আমি আর সুঘন্ধির সু ঘ্রান পাচ্ছি না , চিরাচরিত মায়ের বুকের গন্ধ এসে ধাক্কা দিচ্ছে আমার নাকে । বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নিতে লাগলাম আমি , যতক্ষণ সম্ভব হয় । হয়ত এই সুযোগ আর সামনে বেশি আসবে না ।
রাত ভর ঘুম হলো না আমার , এর একটা কারন প্রচণ্ড উত্তেজনা , আর সারাদিনের জার্নি । আম্মু এখন পাশ ফিরে ঘুমিয়ে আছে , অনেকটা রাত পর্যন্ত জেগে ছিলো । অনেক কথা বলেছে আমার সাথে , খুঁটি নাটি অনেক প্রস্ন করেছে । আমিও যত টুকু বলা যায় বলেছি । কথা বলার সময় আম্মু বেশ হাঁসি খুসি ই ছিলো । প্রথম দেখা হওয়ার পড়ে আর কাদা কাটি করেনি । আমার জন্য ব্যাপারটা বেশ সস্তিকর ছিলো । কারন আমার চারপাশে আবার সেই বাস্তবতার অদৃশ্য দেয়াল উঠে এসেছে । তাই নিছক আবেগে অন্ধ হওয়ার চান্স নেই । কারন আমার কাছে মনে হচ্চলি আরও কিছুক্ষন সেই আবেগে ডুবে থাকেল আমি এমন কিছু বলে বসতাম যা পরে আমার জন্য লজ্জাজনক হতো । হয়তবা আমি আম্মুর কাছে বলেই বসতাম , আমি আর ফিরে যেতে চাই না , আম্মু আমার সামনেই রাজু মতিন এর সাথে যা খুসি করুক , আমি সুধু তার কাছে থাকতে চাই , তার কোন কাজের বাধা আমি হবো না ।
ওই কথা গুলো বলতে বলতে আম্মুর সামনে হাত জোড় করে থাকা অবস্থায় নিজেকে কল্পনা করতেই বেশ লজ্জা হচ্ছে আমার । আর যদি বাস্তবে বলে দিতাম তাহলে কি হতো ?
সকালে ঘুম থেকে উঠতে যথারীতি দেরি হয়ে গেলো আমার । এখানে কেউ ডাক দেয়ার নেই , তার উপর কলেজ ও নেই । তাই ভোর বেলায় ঘুমালেও ঘুমটা বেশ ভালোই হলো । আম্মু নেই বিছানয় , যে দিকটা আম্মু ঘুমিয়ে ছিলো সেখানটায় এখনো বিছানার চাদর একটু অগোছালো হয়ে আছে । আমি উঠে বাথরুমে গেলাম , এক টা নতুন ব্রাস রাখাই ছিলো সেখানে । সেটা যে আমার জন্য তাতে সন্দেহ নেই । তাই বিনা দ্বিধায় ব্যাবহার করলাম ।
প্রাত কাজ সম্পন্ন করে বেরোতেই মেঝ মামির সাথে দেখা । আমাকে নাস্তা করার জন্য আসতে বলল মামি । এখন যদিও নাস্তা করার সময় না প্রায় এগারোটা বাজে । তবুও আমি গেলাম তার সাথে , হালকা পাতলা খেলাম । আম্মুর কথা জিজ্ঞাস করতেই বলল সে রান্না ঘরে আমার জন্য রান্না করছে । তাই নাকি ? মনে মনে বলাম , কেন জানি মনে হলো একবার দেখেই আসি । তাই রান্না ঘরের দিকে গেলাম , দেখলাম সত্যি ই বলেছে নানি বড় মামি আর আম্মু রান্না ঘরে । আম্মু কে দেখলাম , ঘেমে নেয়ে একাকার , মনে হয় রান্নার অভ্যাস চলে গেছে এতদিনে । বাবার বাড়িতে আর নিশ্চয়ই কাজ করতে হয় না তাকে ।
প্রথমে বড় মামি দেখলো আমাকে , উবু হয়ে বসে , তরকারি কাটছে , উনি বেশ মোটাসোটা তাই বুকের অনেকটা উথলে বেড়িয়ে আছে , আমার দৃষ্টি সেদিকে এক পলকের জন্য গেলেও সাথে সাথে ফিরিয়ে নিলাম । হঠাত করে রাজুর কথা মনে হয়ে গিয়েছিলো বড় মামির বুকের দিকে তাকিয়ে । তাই সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিয়েছি ।
__ অপু নাস্তা খেয়েছো ? বড় মামির কথা শুনে আম্মু আর নানি ও ফিরে তাকিয়েছে । দুজনেই হেঁসে দিলো আমাকে দেখে । আম্মু আমাকে দেখে ডাক দিলো
__ অপু ভেতরে আয় দেখ ইলিশ মাছের ডিম ভেজেছি , আয় খা
হ্যাঁ ইলিশ মাছের ডিম আমার প্রিয় , আমাকে একটা পিরি দেয়া হলো আমি সেটায় বসতেই একটা সসার এ করে আমাকে ইলিস মাছের ডিম ভাজা দেয়া হলো । আমি ডিম খাচ্ছি আর আম্মুর দিকে তাকাচ্ছি । আসলেই আম্মু বেশ চিকন হয়েছে । চোখের নিচে কালি ও আছে , দেখে মনে হচ্ছে বেশ ক্লান্ত তবে সেই ক্লান্তি চাপা পরে আছে । সাড়া মুখে ঝলমলে একটা হাসির আভা , সবচেয়ে বেশি হাঁসি খেলা করছে আম্মুর দুটো চোখে ।
সেখানে একটা তৃপ্ত ভাব ফুটে উঠেছে , চোখের কোটর বসে যাওয়া বা চোখের নিচের কালি দুটোর একটাও সেই তৃপ্তি দাবিয়ে রাখতে পারেনি। আসলে এই তৃপ্তি কিসের ? এই চিন্তাটা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো । আর তিনজন এর মাঝে বসে চিন্তা করা সম্ভব নয় তাই আমি উঠে এলাম । বারান্দায় এসে বসলাম , রাজু মতিন এর দেখা নেই , এটা আমার জন্য একটা ভালো খবর । আমার মনে হয় এই মুহূর্তে আমি ওদের ঠিক সহ্য করতে পারবো না । এখন আমার নিরিবিলি সময় দরকার , আমাকে ভেবে বার করতে হবে আম্মুর এই পরিতৃপ্তি এলো কোথা হতে ।
এটা কি নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের তৃপ্তি , স্বামী সন্তান এর ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে সামনের যে বেড়ীহীন জীবন অপেক্ষা করছে সেই আলোর ঝলকানি তার চোখে খেলা করছে । না না এমন হলে চোখের নিচে কালি পড়বে কেনো ? আমি মনে মনে প্রস্ন করলাম । হয়ত আজকাল রাত জাগা হয় , কিন্তু কেন ? আমার জন্য চিন্তায় ? না না আমার জন্য চিন্তা থাকলে এতদিনে নিশ্চয়ই যোগাযোগ হতো । কোন না কোন একটা উপায় বের করেই ফেলত । আমার জন্য চিন্তায় নিশ্চয়ই তার রাতের ঘুম হারাম হয়নি ।
তাহলে তার চোখের নিচে কালি পড়ার কারন কি ? আর কি কারনেই বা স্লিম হওয়ার চেষ্টা করছে । সে কি আমাকে আব্বুর কাঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে নিজের জন্য নতুন জীবন সাথি খোজার জন্য নিজেকে সানিয়ে নিচ্ছে ? নাকি মনি বুড়োর কাছে রাতবিরাতে যায় ? নাকি এর চেয়েও বাজে কিছু করছে ? মনি বুড়োর মন মজাতে তো আর নিজেকে শান দেয়ার কিছু নেই । তাহলে কি রাজু ?
হ্যাঁ রাজুই হবে ? গতকাল রাজু যেভাবে কথা বলছিলো সেটা কোন ফুপি ভাই ছেলের কথা নয় । চূড়ান্ত কিছু না হলেও বেশ অনেকটা এগিয়ে গেছে রাজু তাহলে । হয়ত আম্মুও রাজুর মতো ইয়ং এবং “ফানি” কারো প্রতি ধিরে ধিরে আসক্ত হয়ে গেছে । হ্যাঁ তাই হবে , আমি শিওর হলাম । সাথে সাথে একটা পাপ বোধ এসে জড় হলো আমার মনে । একটা প্রস্ন এসে আমার কানে বাজতে লাগলো , আমি কি এমটাই চেয়েছিলাম না ?
নিজ হাতে নষ্ট করিনি আমাদের পরিবার ? হ্যাঁ করেছি ।
কিন্তু আমি তো এমন জীবন চাইনি , আমি যে জীবন চেয়েছিলাম সেখানে আমার আর আম্মু দুজনের ই ঠাই ছিলো । কিন্তু এখন আমি আমার কোন জায়গা দেখতে পাচ্ছি না । আব্বু দ্বিতীয় বিয়ে করেছে , সে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে সুখে আছে । এদিকে আম্মু নিজের ভবিষ্যৎ ভেবে আনন্দিত । কিন্তু আমি কি করবো , আমার কি হবে ? চাইলে আব্বুর সাথে থাকতে পারি , তবে আমি সেখানে থাকবো না । আমার দ্বারা হবে না । আমি আম্মুর সাথে থাকতে চাই ।
আমি একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম , যদি আম্মুর জীবনে আমার স্থান না হয় তাহলে আমি তার নিজের জন্য আলাদা জীবন গড়তে দেবো না, পদে পদে বাধা দেবো । অবশ্যই দেবো । তাকে যদি নতুন কিছু চিন্তা করতেই হয় আমাকে নিয়েই করতে হবে । আমি ছাড়া তার জীবনে অন্য কেউ গুরুত্বপূর্ণ থাকবে না । আমি থাকতে দেবো না । তার জীবনের এক মাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে আমাকে নিয়ে ভাবা । এমনটাই হওয়া উচিৎ । আব্বু মনে হয় ঠিক ই করতো , কড়া শাসনে রাখতো আম্মুকে , আম্মুর আসল চরিত্র সম্পর্কে আব্বুর সঠিক ধারনা ছিলো ।
এইসব ভাবতে ভাবতে আমি মনি বুড়োর বাড়ির দিকে গেলাম । আমার উদ্দেশ্য মনি বুড়োর কাছ থেকে কিছু তথ্য নেয়া । কারন শেষ বার যখন বুড়োর সাথে আমার দেখা হয়েছিলো তখন আমার মনের অবস্থা অন্য রকম ছিলো , বুড়োর নিশ্চয়ই ধারনা এখনো এমন আছে । তাই বুড়ো মুখ ফস্কে দু একটি কথা বলে ফেলতে পারে ।
কিন্তু বুড়ো কে পেলাম না , ঘর বন্ধ । নিশ্চয়ই কোথাও গিয়েছে , তাই আর দেরি করলাম না । হেঁটে হেঁটে নানা বাড়ি চলে এলাম , এসেই দেখা রাজু মতিন এর সাথে । দুটোই খালি গাঁয়ে আর কাঁধে একটি করে গামছা । দুই ফাজিল এর মুখেই আকর্ণ বিস্তৃত হাঁসি । আমাকে দেখিএ মতিন বলল
__ কি রে অপু এমন পেচার মতো মুখ করে কই গিয়েছিলি ?
যদিও মেজাজ খারাপ হলো তবুও বুঝতে দিলাম না ওদের । বললাম
__ এই ঘুরতে গিয়েছিলাম , তোরা কোথায় জাচ্ছিস ?
__ পুকুরে গোসল করতে ? তুই যাবি এখন তো শীত নেই , তোর তেল ও লাগাতে হবে না ।
চিন্তা করলাম , দেখি এদের হাব ভাবে কিছু বোঝা যায় কিনা ? তাই রাজি হয়ে গেলাম । বললাম তোরা যা আমি গামছা নিয়ে আসি ।
পুকুর ঘাটে গিয়ে দেখি রাজু মতিন একা নয় ওদের আরও চারজন বন্ধু আছে । বেশ হাঁসা হাঁসি করতে কতে ওরা একটা বল দিয়ে পানিতে খেলছে । কি কি যেন বলাবলি করছিল ওরা আমাকে দেখে চুপ হয়ে গেলো ।
__ কিরে আমাকে দেখে কথা থামিয়ে দিলি যে , ভয় পেলি নাকি ? কি নিয়ে কথা হচ্ছিলো ? আমি পুকুর ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললাম
__ তোকে দেখে তেলাপোকা ও ভয় পাবে না হা হা হা , আর আমরা কলেজে ভর্তি হওয়া আর কলজ এর মেয়েদের নিয়ে আলোচনা করছিলাম এসব জেনে তোর লাভ কি ? তোর তো দেরি আছে । রাজু হাসতে হসাতে বলল
__ তুই আগে পাশ কর , তারপর কথা বলিস , দেখ আমার সাথে আবার পরিক্ষা দিতে হয় কিনা ।
__ নাহ এবার ফুপি ছিলো , আমি শিওর পাশ রাজু বিটকিলে একটা হাঁসি দিয়ে বলল ।
কথাটা খারাপ কিছু না তবে আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো , আমি বললাম
__ তোর ফুপিও তোর মতো , আন্ডার মেট্রিক
কথাটা বলার সাথে সাথে রাজুর মুখ কালো হয়ে গেলো । এমন একটা ভাব করছে যেন আম্মু এস এস সি পাশ করেনি বলে আমার চেয়ে ওর লজ্জা বেশি । তবে ওর মুখের অবস্থা আমার মনে একটু হলেও শান্তি দিলো । আমি গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে পানিতে নামলাম ।