31-05-2021, 01:04 PM
(This post was last modified: 31-05-2021, 01:13 PM by HASIR RAJA 19. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এক অপরুপ সুন্দরী মাজননী, ঠাকুরের পিছনে লুকিয়ে আছে। কিছুদূরে ক্রুর জমিদার আগুন ঝরা চোখে তাকিয়ে আছে ঠাকুরের দিকে।
হিংস্র ভাবে হেসে জমিদার বললো -- কিহে কাপুরুষ, নিরস্ত্র মানুষকে মারবি এই তোর বাহাদুরীর নমুনা। সাহস থাকে ত আয় আমার সাথে মল্লযুদ্ধ কর।
হোমে যেন ঘৃতাহুতি পড়লো। সশব্দে হাতের তলোয়ারখানা ফেলে দিয়ে বাজের মত গর্জন করে ঠাকুর বলে উঠলো -- তবে আয়, দেখি কে কাপুরুষ।
শুরু হলো যুদ্ধ। কিন্তু প্রথমে অত তেজ দেখালেও জমিদারের তেজ ঠাকুরের কাছে থিতু হতে লাগলো। নানান প্যাঁচে পেঁচিয়ে জমিদারের নাভিশ্বাস বার করে দিলো। পারলো না আর জমিদার, মেঝেতে পড়ে গেলো সে। মুখ তুলতে খেয়াল করলাম ভীষন অবাক হওয়ার লক্ষন তার সারা মুখে ফুটে উঠেছে। নিজের ভবিতব্যকে হয়তো এখনো ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না।
-- কি রে শয়তান বল কে কাপুরুষ। ঠাকুর গর্জন করে উঠলো।
জমিদারের মুখ নীচু, একদৃষ্টে ডান হাতের একটা আঙুলে পড়া আঙটির দিকে চেয়ে রয়েছে। অস্ফুটে বলে চলেছে -- এ অসম্ভব, এ কিছুতেই হতে পারে না। এ, এ কিছুতেই হতে পারে না।
আস্তে আস্তে মুখ তুলে চাইলো সে, ঠাকুরের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তারপর সেই হাতের আঙটিটা খুলে ঠাকুরের দিকে বাড়িয়ে দিলো। প্রথমটা ঠাকুর বুঝতে পারেনি।
-- দেখতে পাচ্ছো এর দ্যুতি অদৃশ্য হয়ে গেছে। এ আমার আর নেই, এ এখন আমার যম। একে নিয়ে যাও আমার সামনে থেকে, নিয়ে যাও। এ এখন তোমার। এ তোমার কথা শুনবে। নিয়ে যাওওওওওওও।
হাত বাড়িয়ে আঙটিটা নিলো ঠাকুর, চোখের সামনে এনে দেখতে পেলো একটা পাথরের আঙটি। ঠাকুরের মনোভাব তখন না বুঝলেও আমার নিজের কেমন ধাঁধার মত মনে হলো। এ কি আঙটি, যে জমিদারের দশা এমনটা হয়েছে।
আঙটিটা না পড়ে ট্যাঁকে রেখে আমার দিকে ঠাকুর ঘুরতেই এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেলো। জমিদার তার পাশে পরে থাকা তলোয়ার তুলে ঝড়ের বেগে ঠাকুরের দিকে ছুটে এলো। আমি সঙ্গে সঙ্গে নিজের তলোয়ারখানা ঠাকুরের দিকে ছুড়ে দিলাম কিন্তু তাও অনেক দেরী হয়ে গেছে। ঠাকুরকে আড়াল করতে গিয়ে মা জননীর শরীরে তলোয়ারের ফলা প্রবেশ করলো। ঠাকুর সঙ্গে সঙ্গে বাঁহাতে জমিদারের টুটি টিপে ডান হাতে ধরা তলোয়ারখানা সোজা জমিদারের পেটে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলো।
দৌড়ে ছুটে গেলাম মা জননীর কাছে। যন্ত্রনায় ছটপট করছে। দুহাতে আজলা ভরে তুলে নিলেন ঠাকুর। কোনদিকে না তাকিয়ে ঝড়ের মতো বেরিয়ে গেলেন। আমি পিছনে ছুটলাম। ঠাকুরের তখন পাগলপ্রায় অবস্থা, সবার জন্যই মন কাঁদে তবে এই ঘটনা সবার থেকে আলাদা। আমি বুঝতে পেরেছিলাম সেদিন যদি মাজননী ওভাবে এগিয়ে না আসতেন তাহলে ঠাকুরকে আমরা হারাতাম।
-- মোক্তার, কোবরেজকে তুলে আন। ঠাকুরের বজ্রকঠিন কন্ঠ শোনা গেলো।
এ ঘটনার প্রায় দুদিন পর মা জননী একটু সুস্থ হলেন ওনার মুখে সবটা শুনে সমস্ত ঘটনাই পরিষ্কার হলো। জমিদার যে কত নীচ তার প্রমান মিললো। নইলে নিজের বোনের দিকেও কেউ কুনজর দিতে পারে। হ্যাঁ, মা জননী জমিদারের নিজের মায়ের পেটের বোন। সেদিন যদি আমরা সময়মতো না যেতাম তাহলে যে কতবড়ো সর্বনাশ হয়ে যেতো তা ভাবলেই শিউড়ে উঠি।
-- ওই আঙটিটা, ওই আঙটিটা কি আপনি এনেছেন? ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন মা জননী।
-- হ্যাঁ।
-- ওই আঙটিটা সাধারণ নয় অনেক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে ওর মধ্যে। আপনারা জানেন না, কি অপরিসীম শক্তি লুকিয়ে রয়েছে ওর মধ্যে। এখান থেকে চল্লিশ ক্রোশ দূরে যে গভীর জঙ্গল রয়েছে সেখানের এক ভাঙা মন্দির থেকে ছেলেবেলায় এই আঙটি দাদা খুঁজে পায়। তারপর এক সাধুর কাছ থেকে এর আসল রহস্য জানতে পারে দাদা। তবে নিজেও ততদিনে অনুভব করেছিল। আঙটির পাথরটা যে সে পাথর নয় ও হলো নীলা।
বাপজান এখানে তোমার জানার জন্য বলে রাখি নীলা জিনিসটা অত্যন্ত শক্তিশালী। আসলে কিন্তু এটা হীরে তবে নীল হীরে। সাধারন হীরে যেমন কেবল ওজনের ওপর দাম নির্ভর হয় এর দাম নির্ভর হয় দৈবশক্তির ওপর। শনিগ্রহের পাথর বলে বিবেচিত এই নীলার তেজ বিভিন্ন জনের ওপর বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কারোর কাছে সে যেমন মহাশুভ কারোর কাছে আবার সেই একই নীলা ঘোর অশুভ। বিভিন্ন রকমের নীলা হয় কিন্তু তার মধ্যে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী "রক্তমুখী নীলা"। নীল রঙের ভিতর থেকে লাল বিচ্যুতি বেরোয় এই নীলায়। জমিদার এই রক্তমুখী নীলাই পেয়েছিলো।
মা জননী বলে চললেন -- তবে এ নীলা সাধারণ চারপাঁচটা রক্তমুখী নীলার থেকে ঢের গুণ বেশি শক্তিশালী। এর কয়েকটা গুণের কথা শুনলে অবাক হতে হয়, সাধু বলেছিলেন এ নীলা নিজে মালিক নির্ণয় করবে। যার আঙুলে ও থাকবে সে হবে সব থেকে শক্তিশালি। মালিক পরিবর্তনের সময় আসলে নিজে থেকেই এর শক্তি চলে যাবে। তারপর পুনরায় নিজের পছন্দের মালিকের কাছে গিয়ে এর শক্তি আবার ফিরে আসবে। পছন্দের মালিক যদি বর্তমান মালিকের রক্তের সম্পর্ক হয় তাহলে সে জন্মানোমাত্র এর শক্তি শেষ হবে আর তা না হলে দুজনই এক জায়গায় উপস্থিত থাকাকালীন এর শক্তি চলে যাবে। তবে একটা কথা, মালিক ছাড়া অন্য কোন লোক এটা পড়লে তার সর্বনাশ অনিবার্য।
ঠাকুর এতক্ষন একমনে শুনছিলো এবার একটা প্রশ্ন করলো -- মারা যাওয়ার আগে তোমার দাদা কয়েকটা কথা বলেছিলো তখন অবাক হয়েছিলাম ঠিকই তবে আমল করিনি, এখন বুঝতে পারছি। এই বলে ট্যাঁকে রাখা আঙটিটা বের করে আনলো -- কিন্তু লক্ষ করো, এ নীলা রক্তমুখী নীলা হওয়া সত্ত্বেও এর মধ্যে কোন লাল রঙের বিচ্যুতি দেখা যাচ্ছে না?
এ আঙটি নিজে মালিক নির্বাচন করে। শেষের কথাগুলো আস্তে আস্তে বলেই আঙটিটা পড়ে ফেললেন ঠাকুর। সঙ্গে সঙ্গে খেয়াল করলাম নীল রঙের মধ্যে লালের আভা ফুটে উঠেছে। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম।
হিংস্র ভাবে হেসে জমিদার বললো -- কিহে কাপুরুষ, নিরস্ত্র মানুষকে মারবি এই তোর বাহাদুরীর নমুনা। সাহস থাকে ত আয় আমার সাথে মল্লযুদ্ধ কর।
হোমে যেন ঘৃতাহুতি পড়লো। সশব্দে হাতের তলোয়ারখানা ফেলে দিয়ে বাজের মত গর্জন করে ঠাকুর বলে উঠলো -- তবে আয়, দেখি কে কাপুরুষ।
শুরু হলো যুদ্ধ। কিন্তু প্রথমে অত তেজ দেখালেও জমিদারের তেজ ঠাকুরের কাছে থিতু হতে লাগলো। নানান প্যাঁচে পেঁচিয়ে জমিদারের নাভিশ্বাস বার করে দিলো। পারলো না আর জমিদার, মেঝেতে পড়ে গেলো সে। মুখ তুলতে খেয়াল করলাম ভীষন অবাক হওয়ার লক্ষন তার সারা মুখে ফুটে উঠেছে। নিজের ভবিতব্যকে হয়তো এখনো ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না।
-- কি রে শয়তান বল কে কাপুরুষ। ঠাকুর গর্জন করে উঠলো।
জমিদারের মুখ নীচু, একদৃষ্টে ডান হাতের একটা আঙুলে পড়া আঙটির দিকে চেয়ে রয়েছে। অস্ফুটে বলে চলেছে -- এ অসম্ভব, এ কিছুতেই হতে পারে না। এ, এ কিছুতেই হতে পারে না।
আস্তে আস্তে মুখ তুলে চাইলো সে, ঠাকুরের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। তারপর সেই হাতের আঙটিটা খুলে ঠাকুরের দিকে বাড়িয়ে দিলো। প্রথমটা ঠাকুর বুঝতে পারেনি।
-- দেখতে পাচ্ছো এর দ্যুতি অদৃশ্য হয়ে গেছে। এ আমার আর নেই, এ এখন আমার যম। একে নিয়ে যাও আমার সামনে থেকে, নিয়ে যাও। এ এখন তোমার। এ তোমার কথা শুনবে। নিয়ে যাওওওওওওও।
হাত বাড়িয়ে আঙটিটা নিলো ঠাকুর, চোখের সামনে এনে দেখতে পেলো একটা পাথরের আঙটি। ঠাকুরের মনোভাব তখন না বুঝলেও আমার নিজের কেমন ধাঁধার মত মনে হলো। এ কি আঙটি, যে জমিদারের দশা এমনটা হয়েছে।
আঙটিটা না পড়ে ট্যাঁকে রেখে আমার দিকে ঠাকুর ঘুরতেই এক অভাবনীয় ঘটনা ঘটে গেলো। জমিদার তার পাশে পরে থাকা তলোয়ার তুলে ঝড়ের বেগে ঠাকুরের দিকে ছুটে এলো। আমি সঙ্গে সঙ্গে নিজের তলোয়ারখানা ঠাকুরের দিকে ছুড়ে দিলাম কিন্তু তাও অনেক দেরী হয়ে গেছে। ঠাকুরকে আড়াল করতে গিয়ে মা জননীর শরীরে তলোয়ারের ফলা প্রবেশ করলো। ঠাকুর সঙ্গে সঙ্গে বাঁহাতে জমিদারের টুটি টিপে ডান হাতে ধরা তলোয়ারখানা সোজা জমিদারের পেটে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলো।
দৌড়ে ছুটে গেলাম মা জননীর কাছে। যন্ত্রনায় ছটপট করছে। দুহাতে আজলা ভরে তুলে নিলেন ঠাকুর। কোনদিকে না তাকিয়ে ঝড়ের মতো বেরিয়ে গেলেন। আমি পিছনে ছুটলাম। ঠাকুরের তখন পাগলপ্রায় অবস্থা, সবার জন্যই মন কাঁদে তবে এই ঘটনা সবার থেকে আলাদা। আমি বুঝতে পেরেছিলাম সেদিন যদি মাজননী ওভাবে এগিয়ে না আসতেন তাহলে ঠাকুরকে আমরা হারাতাম।
-- মোক্তার, কোবরেজকে তুলে আন। ঠাকুরের বজ্রকঠিন কন্ঠ শোনা গেলো।
এ ঘটনার প্রায় দুদিন পর মা জননী একটু সুস্থ হলেন ওনার মুখে সবটা শুনে সমস্ত ঘটনাই পরিষ্কার হলো। জমিদার যে কত নীচ তার প্রমান মিললো। নইলে নিজের বোনের দিকেও কেউ কুনজর দিতে পারে। হ্যাঁ, মা জননী জমিদারের নিজের মায়ের পেটের বোন। সেদিন যদি আমরা সময়মতো না যেতাম তাহলে যে কতবড়ো সর্বনাশ হয়ে যেতো তা ভাবলেই শিউড়ে উঠি।
-- ওই আঙটিটা, ওই আঙটিটা কি আপনি এনেছেন? ঠাকুরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন মা জননী।
-- হ্যাঁ।
-- ওই আঙটিটা সাধারণ নয় অনেক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে ওর মধ্যে। আপনারা জানেন না, কি অপরিসীম শক্তি লুকিয়ে রয়েছে ওর মধ্যে। এখান থেকে চল্লিশ ক্রোশ দূরে যে গভীর জঙ্গল রয়েছে সেখানের এক ভাঙা মন্দির থেকে ছেলেবেলায় এই আঙটি দাদা খুঁজে পায়। তারপর এক সাধুর কাছ থেকে এর আসল রহস্য জানতে পারে দাদা। তবে নিজেও ততদিনে অনুভব করেছিল। আঙটির পাথরটা যে সে পাথর নয় ও হলো নীলা।
বাপজান এখানে তোমার জানার জন্য বলে রাখি নীলা জিনিসটা অত্যন্ত শক্তিশালী। আসলে কিন্তু এটা হীরে তবে নীল হীরে। সাধারন হীরে যেমন কেবল ওজনের ওপর দাম নির্ভর হয় এর দাম নির্ভর হয় দৈবশক্তির ওপর। শনিগ্রহের পাথর বলে বিবেচিত এই নীলার তেজ বিভিন্ন জনের ওপর বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কারোর কাছে সে যেমন মহাশুভ কারোর কাছে আবার সেই একই নীলা ঘোর অশুভ। বিভিন্ন রকমের নীলা হয় কিন্তু তার মধ্যে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী "রক্তমুখী নীলা"। নীল রঙের ভিতর থেকে লাল বিচ্যুতি বেরোয় এই নীলায়। জমিদার এই রক্তমুখী নীলাই পেয়েছিলো।
মা জননী বলে চললেন -- তবে এ নীলা সাধারণ চারপাঁচটা রক্তমুখী নীলার থেকে ঢের গুণ বেশি শক্তিশালী। এর কয়েকটা গুণের কথা শুনলে অবাক হতে হয়, সাধু বলেছিলেন এ নীলা নিজে মালিক নির্ণয় করবে। যার আঙুলে ও থাকবে সে হবে সব থেকে শক্তিশালি। মালিক পরিবর্তনের সময় আসলে নিজে থেকেই এর শক্তি চলে যাবে। তারপর পুনরায় নিজের পছন্দের মালিকের কাছে গিয়ে এর শক্তি আবার ফিরে আসবে। পছন্দের মালিক যদি বর্তমান মালিকের রক্তের সম্পর্ক হয় তাহলে সে জন্মানোমাত্র এর শক্তি শেষ হবে আর তা না হলে দুজনই এক জায়গায় উপস্থিত থাকাকালীন এর শক্তি চলে যাবে। তবে একটা কথা, মালিক ছাড়া অন্য কোন লোক এটা পড়লে তার সর্বনাশ অনিবার্য।
ঠাকুর এতক্ষন একমনে শুনছিলো এবার একটা প্রশ্ন করলো -- মারা যাওয়ার আগে তোমার দাদা কয়েকটা কথা বলেছিলো তখন অবাক হয়েছিলাম ঠিকই তবে আমল করিনি, এখন বুঝতে পারছি। এই বলে ট্যাঁকে রাখা আঙটিটা বের করে আনলো -- কিন্তু লক্ষ করো, এ নীলা রক্তমুখী নীলা হওয়া সত্ত্বেও এর মধ্যে কোন লাল রঙের বিচ্যুতি দেখা যাচ্ছে না?
এ আঙটি নিজে মালিক নির্বাচন করে। শেষের কথাগুলো আস্তে আস্তে বলেই আঙটিটা পড়ে ফেললেন ঠাকুর। সঙ্গে সঙ্গে খেয়াল করলাম নীল রঙের মধ্যে লালের আভা ফুটে উঠেছে। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম।