Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 3.07 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller রক্তমুখী নীলা (সমাপ্ত)
#38
রাতের আঁধার কেটে ভোর হলো সাথে শুরু হলো আমার জীবনের নতুন অধ্যায় । মিত্রা ...........

সকালে একটা গাড়ীর শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে বাইরে বেরিয়ে এলাম। কাল রাতে জায়গাটা ঠিকমত দেখা হয়নি। আজ খেয়াল করলাম। দোতলা বাড়ীর পুরোটাই মাটির, ওপরে টালির ছাউনি। অসম্ভব পরিষ্কার পরিছন্ন কোথাও এতটুকু নোংরার স্থান নেই। সামনে টানা বারান্দায় বসার জায়গা সেখানে বেরিয়ে এসে দেখলাম এক বৃদ্ধ মানুষ গাড়ী থেকে নামছেন। বৃদ্ধ হলেও এখনো বেশ ডাঁটো। হাত নেড়ে কয়েকজনকে কি নির্দেশ দিচ্ছে। পিছন ফিরে আমায় দেখতে পেয়েই ছুটে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো। আমার বাপ...আমার বাপ আয় তোকে বুকে নিয়ে আমার কলিজাটা একটু ঠান্ডা করি। তোকে ওরা গায়ে হাত দিয়েছে জীবনেও ওরা শান্তি পাবেনারে। নরকেও ঠাঁই হবেনা। আমার বাপ...
প্রথমটায় ভারি অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি বাড়ির সবাই পিছনে ভীড় করেছে। সবার চোখে জল ছলছল করছে। 
বাবা আমার পাশে এগিয়ে এলেন আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললেন অনেক প্রশ্নের উত্তর আজ তোকে দিতে হবে। তার আগে বলি এই মানুষটির কথা। এর নাম মোক্তার সিং তুই হলি ওর কলিজার টুকরো। তোকে অনেক কিছু আমাদের বাধ্য হয়ে লুকাতে হয়েছে। 
-- কিন্তু এর সাথে আমার পরিচয় কি? বলে উঠলাম আমি।
-- বলছি বাপজান আমি বলছি এ ঘটনা আমি ছাড়া আর কেউ বলতে পারবেনা।


"বিশ্ব" পুরো নাম নয়, শুধু এই ছোট্ট নামটাই যথেষ্ট যার নামে পুরো পূর্ব ভারত কাঁপত। যেমন তার তেজ তেমনি তার অসীম সাহস। ইংরেজরা পর্যন্ত একে ঘাঁটাতে সাহস পেত না। বহুজন বহুবার বহুভাবে  একে টলাবার বন্দোবস্ত করেছিলো কিন্তু কেউ একে টলাতে পারেনি। ডাকাতি যার রক্তে মিশে ছিল। ধনী দুষ্টুদের কাছে সে যেমন ত্রাস গরীবদের কাছে তেমনি ভগবান। যেমন সে দুহাতে পয়সা লুঠেছে তেমনি দুহাতে গরীরদের পয়সা বিলিয়েছে। আমি ছিলাম অনাথ, রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে যা জুটতো তাই দিয়ে পেট চালাতাম। কি করে যে একদিন ছদ্মবেশী স্বয়ং বিশ্বর কৃপাদৃষ্টিতে পড়লাম জানিনা। একদিন ভোর রাতে এসে আমায় তুলে নিয়ে গেলো। সেইথেকে আমি ওর ছায়া। বহু বিপদ আপদে আমরা পড়েছি তবু কোনদিন আমি ওই ছায়া থেকে স্থানচ্যুত হইনি। মুখে প্রকাশ না করলেও সে যে আমায় ভীষন ভালোবাসতেন তা বুঝতাম। নিজের মুখের খাবার আমার মুখে তুলে দিত। শরীর খারাপে নিজে সেবা শ্রুশুষা করতো নিজের টান না থাকলে কজন করবে। দলে আমাদের সবশুদ্ধু বাইশ জন। এখানকার এক গভীর জঙ্গলের একটি বিশেষ স্থানে তার আসল ডেরা ছিল। কিন্তু এখানে খুব কমই আসা হত আমাদের। তখন এসব জায়গা জঙ্গলে আবৃত। 

রাজার যুগ চলে গেলেও জমিদারী প্রথা পুরোদস্তুর তখন ছিলো। কোন কোন জমিদার যে বেশ শাঁসালো তা মানতেই হবে। ব্রহ্মদেশ মানে এখন যা তোমরা মায়ানমার বলে জানো সেখানকার এক জমিদারের বেশ নামডাক তখন। নামটা সুনামের থেকে কুনামটাই বেশি। প্রজাদের ওপর অকথ্য অত্যাচারে তার জুরি মেলাভার। নির্যাতনের চরম পর্যায়ে এসে সে রাজত্ব চালাতো। পাশের বিভিন্ন রাজ্যের জমিদাররা এর নামে ভয়ে কাঁপতো। রাজ্যের প্রত্যেকটা নারীকেই সে ছিঁড়ে খুড়ে খেয়েছে। নারীর ওপর তার এতই লোভ যে পাশের জমিদাররা তাদের ক্ষমতা ও প্রাণ হারাবার ভয়ে নিজেদের মা বোনকে দিতে বাধ্য হতো। এ হেন ক্রুর পর্যায়ে তুমি ভাবছো যে সব অবহেলিত রাজ্য এক হয়ে তার ওপর হামলা চালায় না কেন। কিন্তু বাস্তবে সেটা খুবই কঠিন ছিলো। প্রথমত ইংরেজদের সঙ্গ, দ্বিতীয়ত পরলৌকিক শক্তি। কোন এক অজ্ঞাত বিশেষ কারনে সে ছিল অপরাজেয়। তবে এমনিতেও তার যোদ্ধার অভাব ছিলোনা একশোজন লাঠিয়াল তার কথায় উঠতো বসতো তারা এতটাই ভয়ঙ্কর যে কাউকেই তোয়াক্কা করতোনা। মনে কোন দয়া মায়া ছিলোনা। মনে হত সাক্ষাত নররুপে শয়তান।


পৌষ মাসের মাঝামাঝি ঘোর অমাবস্যার দিন, জমিদার বাড়ী থেকে অনেক দূরে এক গভীর বনে আমরা আস্তানা গেড়েছি। সকাল থেকে ঠাকুর মদ্যপান করে চলেছেন কিন্তু জ্ঞান আছে ষোলআনা এক পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ট্যের ওপর ওই অবস্থায় স্থির দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতা রাখে।  কয়েকদিন ধরে এখানে থেকে চরের মাধ্যমে বেশ কিছু খবর সংগ্রহ হয়ে গেছে। আজও সকাল থেকে চরের আনাগোনা চলছে যত খবর শুনছে তত ঠাকুরের মুখ থমথম করছে। সন্ধ্যা হতেই আদেশ এলো সবাই একজায়গায় হও। আজি ওই শয়তান জমিদারের মুন্ডু কেটে মাকালীকে নিবেদন করবো। বাইশজন খুশিতে রে রে করে হুঙ্কার দিয়ে উঠলো। তোড়জোড় শুরু হয়ে গেলো। 
অমাবস্যার নিকষ কালো অন্ধকারে এগিয়ে চলেছি বেশ ঠান্ডা পড়েছে তবে তার তোয়াক্কা কেউ করছিনা। জমিদার বাড়ির কাছে এসে একটু থেমে ঠাকুর চারিদিক নিজে একবার পরীক্ষা করে নিলো। কি করবো তা আগে থেকেই স্থির করা আছে সেইমতো বাইশজন দুদলে ভাগ হয়ে দুদিকে চলে গেলো। আমি ঠাকুরের পিছু পিছু জমিদার বাড়ির পিছনদিকে এসে দাঁড়ালাম। তিনমানুষ উঁচু পাঁচিল দিয়ে পুরো চত্ত্বরটা ঘেরা ভিতরে রাজবাড়ীর মত প্রাসাদপ্রমোদ অট্টালিকা। পাঁচিলের মাঝামাঝি অংশটায় দুটো বিম খাড়া ভাবে উঠে গেছে হয়তো আগে এখানে দরজা ছিলো তারপর সেটাকে হয়তো বুঁজিয়ে ফেলেছে ফলে সেখানে একটা খাঁজের সৃষ্টি হয়েছে। সেই খাঁজের মধ্যে দুদিকের দেওয়ালে হাত ও পায়ের ভর দিয়ে ঠাকুর ও আমি ওপরের দিকে উঠে গেলাম। 
নিঃশব্দে পাঁচিল টপকে দুজনে চত্ত্বরে প্রবেশ করলাম। একটু থমকে দাঁড়িয়ে চারিদিকের পরিস্থিতিটা একটু বুঝে নিলো ঠাকুর। ছাদের কিণার দিয়ে এক প্রহরী এগিয়ে চলেছে একবার এদিকে মুখ ফেরালেই আমরা ধরা পরবো। ঠাকুর বিদ্যুৎ গতিতে তীর নিয়ে ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে থাকা সেই প্রহরীর গলা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিলো। অব্যার্থ লক্ষ একটু টু শব্দ করারো সুযোগ পেলোনা গলায় হাত দিয়ে বসে পড়লো ।
তিন মহলার অট্টালিকায় প্রচুর ঘর সব থেকে ওপরের মহলে জমিদার থাকে। আমাদের গন্তব্যস্থল সেখানেই।
তখনকার দিনে বিদ্যুত আলোর এত প্রচলন ছিলোনা। বাড়ির চতুর্পাশ মশাল জালিয়ে রাখা হতো তাতে অন্ধকার একটু কাটলেও পুরো আলোজ্জ্বল সম্ভব ছিলো না। সেই অন্ধকারে বাড়ির খাঁজ বেয়ে আমরা ছাদের ওপর উঠতে শুরু করলাম। কেউ দেখতে পেলে যে ততক্ষনাৎ প্রাণ যাবে তা আর বলে দিতে হয়না কিন্তু ভয় কাকে বলে বিশ্ব ঠাকুর জানতো না। ছাদের কিনারে এসে আর একবার সন্তর্পণে সব দিকটা দেখে নিলেন ঠাকুর। আমাকে আগে থেকেই নির্দেশ দেওয়া ছিল কি করতে হবে। আমি দ্রুত বাড়ির সামনের দিকে চলে এলাম। সঙ্গে করে আনা ছোট মশালে আগুন ধরিয়ে ছাদের কিনারে দাঁড়িয়ে তিনবার নাড়ালাম, তারপর নিভিয়ে দিলাম। 
বাড়ির সামনের চত্তরে প্রাচীরের ভিতর খড়ের চাল দেওয়া ঘেরাটোপ জায়গায় জমিদারের একশোজন লাঠিয়াল বাস করতো। ঠাকুরের বাইশজন অনুচর চুপিসারে সেইখানে গিয়ে আগুন লাগিয়ে দিলো। 
লেলিহান আগুনের সাথে সাথে প্রচুর মানুষের গগনভেদী আর্তচিৎকারে জমিদার বাড়ী জেগে উঠলো। দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে এলাম, চাপা দরজা লাগানোর আর সময় পায়নি প্রহরীরা তার আগেই ঠাকুর তাদের ভবলীলা সাঙ্গ করে ভিতরে  ঢুকে গেছে। প্রহরীদের মরা শরীরের ওপর দিয়ে ভিতরের মহলে ঢুকেই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।
[+] 3 users Like HASIR RAJA 19's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: রক্তমুখী নীলা - by HASIR RAJA 19 - 31-05-2021, 01:02 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)