Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 3.07 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller রক্তমুখী নীলা (সমাপ্ত)
#5
ওই অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। ট্রেন একটু ফাঁকা হতেই দুজনের মাঝের ফাঁক একটু বাড়ালাম। আমার নড়াচড়াতে ম্যাডামও দেখলাম বুক থেকে মাথা তুলেছে। জিজ্ঞেস করলাম - ম্যাডাম আপনি ঠিক আছেন তো ?

প্রথমে কোন উত্তর নেই একটু বাদে একবার হুম বললেন, মুখ গম্ভীর। একটু ভড়কে গেলাম প্রতিবারের মত এবারও কি বুঝে গেলেন নাকি আমি যেসব ভাবছিলাম একটু আগে। ছিঃ ছিঃ কি লজ্জা। ম্যাডামের কাছে আমি সত্যি ছোট হয়ে গেলাম। উনি নিশ্চয়ই মনে মনে দুঃখ পেয়েছেন। ক্ষমা চাইবো? কিন্তু কি বলেই বা ক্ষমা চাইবো এই বলে যে ম্যাডাম আমি আপনার ওই বড়ো বড়ো দুদুর কথা ভাবছিলাম, আমায় ক্ষমা করে দিন। এ মা আবার ওসব ভাবছি। সত্যি আমি একটা যাতা হয়ে যাচ্ছি। ছিঃ।
শেষের শব্দটা সম্ভবত মুখ দিয়ে প্রকাশ হয়ে পড়েছিলো। ম্যাডাম একবার আমার দিয়ে তাকিয়ে আবার আগের মত বাইরের দিকে দেখতে লাগলেন।

অবশেষে বিরায় ট্রেন থামলো। সবাই নামার পর আমি আগে নামলাম। নেমে ম্যাডামের হাত ধরবো বলে ঘুরতেই ম্যাডাম দেখলাম একি জায়গায়  মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। তড়িঘড়ি আবার উঠে ম্যাডামকে জোরে ডাক দিলাম। ম্যাডাম কি হয়েছে শরীর খারাপ লাগছে। 
-- উম, না। না আমি ঠিক আছি। চলো।
-- আপনি হাঁটতে পারবেন তো?
অদ্ভুত এক দৃষ্টি হেনে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন ম্যাডাম। এ চোখের ভাষা সঠিক ভাবে বোঝা আমার সাধ্য নয়, তবু মনে হলো কিসের যেন এক আকুতি রয়েছে এই চোখে।
-- না আমি যেতে পারবো।
ধরে ধরে নামালাম। স্বাভাবিক ছন্দেই হেঁটে স্টেশনের বাইরে এলেন। 
সামনে রিক্সা স্ট্যান্ড সেদিকেই এগোলাম। রিক্সায় উঠে কোথায় যেতে হবে বলে দিলাম। 

আঃ যায়গাটা একদম বদলায়নি। সেই একই রয়ে গেছে। কলকাতায় যারা থেকে থেকে অসহ্য হয়ে উঠেছে। তাদের এই গ্রাম্য পরিবেশ দারুণ লাগবে। স্টেশনচত্ত্বর ও বাজার পেরোলেই ফাঁকা মাঠের ওপর যখন এসে পড়া যায় তখন চোখ জুড়িয়ে যায়। সবুজ শস্যক্ষেতের দিকে তাকিয়ে আপনা থেকেই মনের গভীরে আবেগ জেগে ওঠে। কলকাতার ধোঁয়াবর্জিত দূষিত বাতাসের থেকে এই গ্রাম্য নির্মল বাতাস যখন প্রাণ ভরে নেওয়া হয় মন আপনা থেকেই নেচে ওঠে।
কতক্ষণ গ্রামের রুপসুধা পান করেছিলাম জানিনা হঠাৎ গার্গী ম্যাডামের দিকে চোখ ফেরালাম। উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাঠের দিকে। চোখের কোনে জল চিকচিক করছে। ভারী অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। এতো উভয় সঙ্কট। ক্ষমাও চাইতে পারছিনা আবার কিছু বলে যে সান্ত্বনা দেবো সেরকম ভাষাও আমার নেই। নিজেকে ভারী অপরাধী মনে হতে লাগলো। 

যখন পৌঁছালাম বেশ বেলা হয়েছে। সূর্যি মামা একটু পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছেন। বাকি রাস্তা দুজনেই নিঃশব্দে এসেছি। মনে হচ্ছে এই কয়েক ঘন্টায় আমাদের মাঝে বিরাট এক প্রাচীর তৈরী হয়েছে যাকে ভেদ করা অসম্ভব। 
ঘরে ঢুকে প্রথমেই দিদার কাছে গেলাম। বিছানায় শুয়ে আছে। আমায় দেখেই সেই প্রাণখোলা হাঁসি মুখময় ছড়িয়ে পড়লো। দাদুভাই তুই, আয় আয় কতদিন পড়ে এলি, হ্যারে এই বুড়ীটাকে কি তোর একদিনও মনে পড়ে না। মেয়েটাকে কতবার বলেছি আমার দাদুভাইকে একবার নিয়ে আসবি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তা হ্যারে বাবা মা ভালো আছে তো। তুই এত রোগা হয়ে গেলি কি করে। খাওয়া দাওয়া কি ঠিক করে করছিসনা। 
-- উফঃ দিদা আমায় কিছু বলতে দেবে, হেঁসে বলে উঠলাম। শরীরটা তো খারাপ। এখন বেশি কথা বোলোনা। 
-- তুই চুপ কর। মাথায় ঢ্যাঙা হয়েছিস বলে মুখে খুব খই ফুটছে। তা এবার ত একটা নাতবৌ দেখতেই হচ্ছে আমার দাদুভায়ের জন্য। 
-- দিদা আবার তুমি সেই শুরু করলে।
-- আচ্ছা আচ্ছা আর বলবোনা। তা হ্যারে একা এলি বুঝি। 
তাইতো ম্যাডামকে তো দেখছিনা। ঘরে ঢুকে আমি সেইযে দিদার কাছে এলাম তারপর এখনও এ ঘরে এলোনা। গেলো কোথায়। তবে কি সত্যি শরীরটা খারাপ। দিদাকে আশ্বস্ত করে বললাম - না দিদা ম্যাডামের সাথে এসেছি। 
-- তাই ভাবি ওর ত আজ আসার কথা। আচ্ছা এখন যা হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নে। ললিতা রান্না করে আমায় খাইয়ে এইসবে গেলো। যদি কিছু লাগে গার্গীকে বলিস। আমায় ডাক্তার কি যে ঔষুধ দিয়েছে খালি ঘুম পায়।
-- ওসব নিয়ে ভেবোনা দিদা। তুমি এখন বিশ্রাম নাও একটু ঘমাও।

উঠে পড়লাম, আগে ম্যাডামকে খোঁজা দরকার। হলোটা কি ম্যাডামের। হাসি খুশি মানুষটা গম্ভীর হয়ে আছে এটা মেনে নেওয়া যায়না। পাশের ঘরটাতেই ম্যাডাম থাকেন, দরজা খোলা ভিতরে ঢুকলাম, ঘর খালি। ঘরের সাথেই এটাচ বাতরুম সেখান থেকে জল পড়ার শব্দ পেলাম। একটু এগিয়ে গেলাম। দরজার ওপর হাত চাপড়াতে গিয়ে একটু ভাবলাম ডাকবো? দ্বিধা সরিয়ে হাত ঠেকালাম আশ্চর্য দরজা খুলে গেলো। ভিতরে তাকাতে অবাক হয়ে গেলাম। একি, ম্যাডামের এই অবস্থা কেনো?
[+] 5 users Like HASIR RAJA 19's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: শুধুই কি গল্প? - by HASIR RAJA 19 - 09-04-2019, 01:14 PM



Users browsing this thread: 5 Guest(s)