16-05-2021, 06:07 PM
(This post was last modified: 16-05-2021, 06:13 PM by cuck son. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আমাকে দেখেই , শয়তান এর মতো বিশ্রী করে হেঁসে উঠেছিলো আজমল , এমন রাগ হয়েছিলো যে ইচ্ছে হচ্ছিলো গারদ ভেঙ্গে ওর টুঁটি চেপে ধরি , নিজের দশ আঙুল বসিয়ে দেই হারামির শাঁস নালীর উপর । অক্সিজেন এর অভাবে যখন ওর চোখ দুটো উল্টে আসবে তখন কেমন দেখাবে সেই দৃশ্য দেখার জন্য আকুলি বিকুলি করছিলো আমার মন । অনেক প্রস্ন নিয়ে এসেছিলাম , কিন্তু রাগের কারনে যেন বোবা হয়ে গিয়েছিলাম , কিছুই জিজ্ঞাস করতে পারছিলাম না । হাত দুটো কাপছিলো আমার , আর ঠিক তখনি মুখ খুলে ছিলো আজমল। বিশ্রী ভাবে হেঁসে বলেছিলো …
“ কি ছোট মিয়াঁ , কেমন লাগতাসে “
আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম আজমল এর ধৃষ্টতা দেখে । আমাকে জিজ্ঞাস করছে কেমন লাগছে রাগে আমার সাড়া শরীর চিড়বিড় করে উঠেছিলো। আমি মুখ খুলেতে যাবো ঠিক তখনি আজমল আবার কথা বলে উঠেছিলো , একেবারে আমার মনের কথা গুলি বেড়িয়ে এসেছিলো ওর মুখ দিয়ে ।
“ কি ইচ্ছা হইতাসে না গলা টিপ্পা মাইরা হালাই” এই বলে হা হা হা করে ঘর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠেছিলো আজমল । তারপর হঠাত করে ওর চেহারা বদলে গিয়েছিলো , দাঁতে দাঁত পিষে বলেছিলো “ আমারও ইচ্ছা হইসিলো খুন কইরা হালাইতে” । ওর চোখ দুটো যেন ইট ভাটার চুল্লিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো । আজমল কে জেরা করতে গিয়ে আমি নিজেই আজমলের শিকার হয়ে যাচ্ছিলাম ।
“ চুপ থাক হারামজাদা” আমার অবস্থা দেখে ধমকে উঠেছিলো করিম । কিন্তু আজমল এর মাঝে কোন ভয় ছিলো না । বরং উল্টো ধমকে উতেছিলো ও “ তুই চুপ কর ফক্কিন্নির পুত , দেখস না আমারা কথা কইতাসি” । করিম তেড়ে গিয়েছিলো আজমল কে মাড়তে । কিন্তু আমি থামিয়ে দিয়েছিলাম । আমার মাঝে তখন একটা কৌতূহল কাজ করছিলো , আজমল এর এতো সাহস এলো কোথা থেকে । তাছারা ওকে দেখে একদম অনুতপ্ত বা আসন্ন সজার জন্য ভীত মনে হচ্ছিলো না । ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে ও খুব তৃপ্ত , যা করতে চেয়েছিলো তা ও করে ফেলেছে । এবং আমার মনে হচ্ছিলো আজমল আমাকে আরও পিড়া দেয়ার জন্য নিজে থেকেই বলবে ও এমন কেন করেছে । এবং আজমল করেছিলো ও তাই । করিম কে ধমক দিয়ে বলা শুরু করেছিলেও আজমল
“ আমারও ইচ্ছা হইত দাও দিয়া কোপাইয়া টুকরা টুকরা করতে , দিনের পর দিন নিজের চোক্ষে দেখসি আমার মাইয়ারে টাইনা ধইরা লইয়া গিয়া ফুর্তি করসেন , কিচ্ছু কইতে পারিনাই আমার বাপের লইগা , বাপ খালি কইত , মাইয়া আমার মিয়াঁ বাড়ির বউ হইবো । হেই আশায় আসিলাম , কত স্বপ্ন দেখসি , কিন্তু শেষে কি হইসে ?” প্রস্ন ছুড়ে দিয়েছিলো আজমল আমার দিকে । কিন্তু আমি কি উত্তর দেবো , আমার মুখ বন্ধ দেখে চেচিয়ে উঠেছিলো আজমল “ কি হইসে আমার মাইয়ার”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম আজমলের দিকে , আমি জানতাম রাবু আর আমার কথা কেউ জানে না । কিন্তু আজমল জানতো , আজমল এর বাবাও জানতো এমন কি আমার বাবাও পড়ে জানতে পেরেছেন। কিন্তু কেউ আমাকে কিছু বলেনি । এক অপরাধী কে জেরা করতে এসে নিজেই যেন অপরাধী হয়ে যাচ্ছিলাম । জিনেকে ডিফেন্ড করার জন্য বলেছিলাম ।
“ আজমল আমি রাবু কে বলেছিলাম আমার সাথে যাওয়ার জন্য” যদিও আমি জানি কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয় , আমি সুধু দায়সারা ভাবেই বলেছিলাম , আর রাবু সেটা বুঝতে পেরে আমার সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো ।
“ ক্যান যাইব , সারাজীবন আপনের মাগি হইয়া থাকনের লইগা” এই বলে আজমল এক দলা থুতু ছিটিয়ে দিয়েছিলো আমার দিকে , যদিও সেটা লক্ষ চুত হয়েছিলো । “ আপনের বাপের উপরে কি আপনে কিসু করতে পারতেন ? পারতেন আমার রাবু রে বিয়া করতে, পারতেন না, মৌজ করসেন আপনের কাম শেষ”
যে পরিমান ঘৃণা নিয়ে আজমলের সামনে এসেছিলাম , ধিরে ধিরে সেটা দূরে হয়ে যাচ্ছিলো , নিজেকে আজমল এর সমব্যাথি মনে হচ্ছিলো , আমি আজমলের কাছে গিয়ে বললাম “ আজমল আমি সত্যি দুঃখিত , কিন্তু আমার মেয়ে তো তোমার কোন ক্ষতি করে নাই , তুমি যা করার আমার সাথে করতা”
আমার এই কথা শুনে আজমল এর মুখে একটা ক্রূর হাঁসি দেখা দিলো , সেই হাঁসি দেখে আমার শরীর জমে গিয়েছিলো , মনে হয়েছিলো আজমল এর আঘাত এখনো শেষ হয়নি , ওর কাছে আমাকে আঘাত করার মতো আরও কিছু আছে । কিন্তু সেটা কি?
“ ছোট মিয়াঁ আপনেরে কি করুম আমি , আপনে নিজেই তো নিজেরে যা করার করসেন হা হা হা” আজমল এর হাঁসি দেখে মনে হচ্ছিলো আজমল উন্মাদ হয়ে গেছে । তবে একজন তৃপ্ত উন্মাদ যার জীবনে আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই । আর এই ধরনের উন্মাদের চেয়ে ভয়ংকর দুনিয়ায় আর কিছুই হতে পারে না । আমার পা দুটো কাপছিলো , আজমল এর পর কি বলবে আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না । আমি সুধু বিড়বিড় করে বলেছিলাম
“ হ্যাঁ আজমল কথা তুমি ঠিক বলেছো , আমি এখন আর কোনদিন আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে পারবো না আর এর জন্য আমি নিজেই দাই”
“ ওইটা তো ছোট মাইয়া , আর বড় মাইয়ার কাসে মুখ দেখাইবেন ক্যামনে?” আজমল আরও বিষাক্ত হাঁসি হেঁসে বলেছিলো ।
কিন্তু আমি আজমলের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারি নাই , অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম আজমলের দিকে । আজমল আমার এমন অবাক দৃষ্টি দেখে প্রচুর হেসেছিলো । তারপর বলতে শুরু করেছিলো ,যা শোনার জন্য শারীরিক আর মানসিক ভাবে একদম প্রস্তুত ছিলাম না আমি । আজমল এর প্রতিটি কথা যেন ছিলো একেকটা হাতুরির আঘাত এর মতো । এক একটা আঘাত আমাকে যেন একটু একটু করে মাটির নিচে ডাবিয়ে দিচ্ছিলো । আজমল এর মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিলো ও যেন আমাকে ভেংচি কাটছে ।
“ রাবুর বিয়ার সময় ওই পোয়াতি আসিলো , আপনের বীজ , ছোট মিয়াঁ, আপনের , যার লইগা আমার মাইয়ার অকালে স্বামী হারা হইতে হইসিলো , ইচ্ছা আসিলো জন্মের সময় ই মাইরা ফালাই , কিন্তু চিন্তা করসিলাম মাড়লে তো সব শেষ , ওর উপর দিয়াই আপনের প্রতিশোধ নিসি , সাড়া জীবন বান্দির মতন খাটাইসি , হা হা হা , মিয়াঁ বাড়ির মাইয়া হইসে আমার বান্দি হা হা হা, আর সবচেয়ে বড় কামে লাগসে তো হেই রাইতে যেইদিন আপনে নিজের মাইয়ারে বিছনায় নিয়ে গেলেন হা হা । আপনের মাইয়া কিন্তু আপনের মতন হারামজাদা না এতো বছর পালনের একেবারে সঠিক দাম দিসে আপনের মাইয়ায় হা হা হা ”
মনে হচ্ছিলো আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো , এমনিতে শরীর ছিলো দুর্বল , তার উপর এমন একটা সংবাদ , বার বার সুধু মাথায় আজমল এর বলা কথা গুলি ঘুরছিলো । ‘মিয়াঁ বাড়ির মাইয়া আমার বান্দি , মিয়াঁ বাড়ির মাইয়া আমার বান্দি’ ।
ঝুমা আমার মেয়ে সেটা ভেবে আনন্দ হচ্ছিলো না আমার , বরং ওই এক রাতের সৃতি আমাকে কাঁটা যুক্ত চাদরের মতো যেন জড়িয়ে ধরছিলো । যতই চেষ্টা করছিলাম সেই কণ্টকআকীর্ণ চাদরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ততই যেন আরও সাপটে ধরছিলো আমাকে ।
“ আপনে তো একটা বেটিচোদ , যান এহন গিয়া ছোট মাইয়ারে ও বিছনায় লইয়া যান দেখবেন সব ভুইলা যাইব বাপের সোহাগ পাইয়া , মাইয়া কিন্তু আপনের পুরা রেডি , আপনে যদি ঐদিন আর একটু পর আইতেন তাইলে আমি আরও রেডি কইরা দিতাম আপনের লইগা হা হা হা , তহন আপনে দুই মাইয়া লইয়া সুখে দিন কাটাইতেন ।
আমি হঠাত করে উঠে গিয়ে আজমল এর গলা চেপে ধরেছিলাম , ভাগ্য ভালো যে ওই ঘরে আমি আর করিম ছাড়া অন্য কেউ ছিলো না । আমি এতো জোড়ে আজমলের গলা চেপে ধরেছিলাম যে হয়ত আরও একটু বেশি সময় ধরে রাখলে আজমল মাড়া যেত । কিন্তু শব্দ শুনে গার্ড এসে আমাদের ছাড়িয়ে দিয়েছিলো । শেষে আমাকেও গ্রেপ্তার কড়া হয়েছিলো , কিন্তু করিম কিভাবে জেনো আমাকে ছাড়িয়ে এনেছিলো ।
থানার বাইরে এসে করিম আমাকে একটি প্রস্ন ও করেনি , তবে আমি বলেছিলাম সব কিছু , কিছুই বাদ দেই নি । আমার মনে তখন সুধু একটা চিন্তাই ঘুরছিলো , সেটা হচ্ছে কি করে আজমল এর মুখ বন্ধ করা যায় । আমি চাইছিলাম না যে ঝুমা এসব নিয়ে কিছু জানুক । আমি জানতাম আমি আর কোনদিন ও ঝুমার সামনে দাড়াতে পারবো না । কিন্তু মেয়েটা অন্তত এক রাতের ভুলের জন্য সাড়া জীবন দুঃখ না পাক।
কিন্তু কোন উপায় ভেবে পাচ্ছিলাম না । আর আমার এ ও মনে হচ্ছিলো যে আজমল ঝুমার কাছে অবশ্যই বলবে আমার কথা । বিকৃত সুখ পাওয়ার জন্য আজমল এসব অবশ্যই বলবে । শেষে আমি এমন একটা উপায় বেছে নিয়েছিলেম যা আমার পূর্বপুরুষ রা অনেবার ব্যাবহার করেছে , গুপ্তহত্যা । হ্যাঁ আমার প্রচুর টাকা খরচ হয়েছিলো । কিন্তু টাকা কোন ব্যাপার ছিলো না আমার কাছে , যা করার করিম ই করেছে আমি সুধু টাকা দিয়েছি । আর জেলের ভেতর একজন ৭০+ বৃদ্ধের মৃত্যু সাজানো তেমন কঠিন কোন ব্যাপার ছিলো না ।
আজমলের উপর এখন আর আমার রাগ হয়না । ওর কথা মনে পরলেই কেমন জানি এক অদ্ভুত অনুভুতি হয় । মাঝে মাঝে মনে হয় আজমল কে আমিই একটা রাক্ষসে পরিণত করেছিলাম । আমার পাপের জন্যই আজমল অমন হয়ে উঠেছিলো । আমি আজমল কে ক্ষমা করে দিয়েছি , যদিও ওকে ক্ষমা করার কোন অধিকার আমার আছে কিনা আমি জানি না । তবে আমি কারো কাছে ক্ষমা চাইতে পারলাম না। কেমন হতভাগা আমি । জীবনের শেষ দিন গুলি গুনছি বুক ভরা গ্লানি নিয়ে । অনিলার সেই আদুরে বেড়াল এর মত আমার বুকে মাথা ঘষা ,আর ঝুমার বলা একটি কথা আমাকে আজো তাড়া করে বেড়ায় ।
“ জানেন ছোট মিয়াঁ আমার মনে হয় আমার বাপ মড়ে নাই , দূরে কোন যায়গায় চইলা গেসে , আচ্ছা বাপ গুলা কি এমন ই হয় “
সমাপ্ত
গল্পটা শেষ করতে পারলাম । তবে মনে দুঃখ রয়ে গেলো আমি আমার শেষ আপডেট দেয়ার যে দীর্ঘ সুত্রতার রোগ , সেটা দূর করতে পারলাম না । এর জন্য অবশ্য আমি নিজে পুরোটা দায়ী নই । আশা করি পাঠক রা আমার এই দোষ ক্ষমার চোখে দেখবেন । এই গল্পটা লেখার সময় অনেকের কাছ থেকে অনেক প্রশংসা পেয়েছি , যার কিছু কিছু এতটাই স্নেহান্ধ ছিলো যে নিজেই লজ্জায় পরে গেছি । যাক পাঠকরা ভালোবেসে যাই দেয় সেটাই আমাদের জন্য পরম আশীর্বাদ । ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সকলের জন্য এই কামনা ।
“ কি ছোট মিয়াঁ , কেমন লাগতাসে “
আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম আজমল এর ধৃষ্টতা দেখে । আমাকে জিজ্ঞাস করছে কেমন লাগছে রাগে আমার সাড়া শরীর চিড়বিড় করে উঠেছিলো। আমি মুখ খুলেতে যাবো ঠিক তখনি আজমল আবার কথা বলে উঠেছিলো , একেবারে আমার মনের কথা গুলি বেড়িয়ে এসেছিলো ওর মুখ দিয়ে ।
“ কি ইচ্ছা হইতাসে না গলা টিপ্পা মাইরা হালাই” এই বলে হা হা হা করে ঘর কাঁপিয়ে হেঁসে উঠেছিলো আজমল । তারপর হঠাত করে ওর চেহারা বদলে গিয়েছিলো , দাঁতে দাঁত পিষে বলেছিলো “ আমারও ইচ্ছা হইসিলো খুন কইরা হালাইতে” । ওর চোখ দুটো যেন ইট ভাটার চুল্লিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো । আজমল কে জেরা করতে গিয়ে আমি নিজেই আজমলের শিকার হয়ে যাচ্ছিলাম ।
“ চুপ থাক হারামজাদা” আমার অবস্থা দেখে ধমকে উঠেছিলো করিম । কিন্তু আজমল এর মাঝে কোন ভয় ছিলো না । বরং উল্টো ধমকে উতেছিলো ও “ তুই চুপ কর ফক্কিন্নির পুত , দেখস না আমারা কথা কইতাসি” । করিম তেড়ে গিয়েছিলো আজমল কে মাড়তে । কিন্তু আমি থামিয়ে দিয়েছিলাম । আমার মাঝে তখন একটা কৌতূহল কাজ করছিলো , আজমল এর এতো সাহস এলো কোথা থেকে । তাছারা ওকে দেখে একদম অনুতপ্ত বা আসন্ন সজার জন্য ভীত মনে হচ্ছিলো না । ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে ও খুব তৃপ্ত , যা করতে চেয়েছিলো তা ও করে ফেলেছে । এবং আমার মনে হচ্ছিলো আজমল আমাকে আরও পিড়া দেয়ার জন্য নিজে থেকেই বলবে ও এমন কেন করেছে । এবং আজমল করেছিলো ও তাই । করিম কে ধমক দিয়ে বলা শুরু করেছিলেও আজমল
“ আমারও ইচ্ছা হইত দাও দিয়া কোপাইয়া টুকরা টুকরা করতে , দিনের পর দিন নিজের চোক্ষে দেখসি আমার মাইয়ারে টাইনা ধইরা লইয়া গিয়া ফুর্তি করসেন , কিচ্ছু কইতে পারিনাই আমার বাপের লইগা , বাপ খালি কইত , মাইয়া আমার মিয়াঁ বাড়ির বউ হইবো । হেই আশায় আসিলাম , কত স্বপ্ন দেখসি , কিন্তু শেষে কি হইসে ?” প্রস্ন ছুড়ে দিয়েছিলো আজমল আমার দিকে । কিন্তু আমি কি উত্তর দেবো , আমার মুখ বন্ধ দেখে চেচিয়ে উঠেছিলো আজমল “ কি হইসে আমার মাইয়ার”
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম আজমলের দিকে , আমি জানতাম রাবু আর আমার কথা কেউ জানে না । কিন্তু আজমল জানতো , আজমল এর বাবাও জানতো এমন কি আমার বাবাও পড়ে জানতে পেরেছেন। কিন্তু কেউ আমাকে কিছু বলেনি । এক অপরাধী কে জেরা করতে এসে নিজেই যেন অপরাধী হয়ে যাচ্ছিলাম । জিনেকে ডিফেন্ড করার জন্য বলেছিলাম ।
“ আজমল আমি রাবু কে বলেছিলাম আমার সাথে যাওয়ার জন্য” যদিও আমি জানি কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয় , আমি সুধু দায়সারা ভাবেই বলেছিলাম , আর রাবু সেটা বুঝতে পেরে আমার সাথে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো ।
“ ক্যান যাইব , সারাজীবন আপনের মাগি হইয়া থাকনের লইগা” এই বলে আজমল এক দলা থুতু ছিটিয়ে দিয়েছিলো আমার দিকে , যদিও সেটা লক্ষ চুত হয়েছিলো । “ আপনের বাপের উপরে কি আপনে কিসু করতে পারতেন ? পারতেন আমার রাবু রে বিয়া করতে, পারতেন না, মৌজ করসেন আপনের কাম শেষ”
যে পরিমান ঘৃণা নিয়ে আজমলের সামনে এসেছিলাম , ধিরে ধিরে সেটা দূরে হয়ে যাচ্ছিলো , নিজেকে আজমল এর সমব্যাথি মনে হচ্ছিলো , আমি আজমলের কাছে গিয়ে বললাম “ আজমল আমি সত্যি দুঃখিত , কিন্তু আমার মেয়ে তো তোমার কোন ক্ষতি করে নাই , তুমি যা করার আমার সাথে করতা”
আমার এই কথা শুনে আজমল এর মুখে একটা ক্রূর হাঁসি দেখা দিলো , সেই হাঁসি দেখে আমার শরীর জমে গিয়েছিলো , মনে হয়েছিলো আজমল এর আঘাত এখনো শেষ হয়নি , ওর কাছে আমাকে আঘাত করার মতো আরও কিছু আছে । কিন্তু সেটা কি?
“ ছোট মিয়াঁ আপনেরে কি করুম আমি , আপনে নিজেই তো নিজেরে যা করার করসেন হা হা হা” আজমল এর হাঁসি দেখে মনে হচ্ছিলো আজমল উন্মাদ হয়ে গেছে । তবে একজন তৃপ্ত উন্মাদ যার জীবনে আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই । আর এই ধরনের উন্মাদের চেয়ে ভয়ংকর দুনিয়ায় আর কিছুই হতে পারে না । আমার পা দুটো কাপছিলো , আজমল এর পর কি বলবে আমি ভেবে পাচ্ছিলাম না । আমি সুধু বিড়বিড় করে বলেছিলাম
“ হ্যাঁ আজমল কথা তুমি ঠিক বলেছো , আমি এখন আর কোনদিন আমার মেয়ের সাথে দেখা করতে পারবো না আর এর জন্য আমি নিজেই দাই”
“ ওইটা তো ছোট মাইয়া , আর বড় মাইয়ার কাসে মুখ দেখাইবেন ক্যামনে?” আজমল আরও বিষাক্ত হাঁসি হেঁসে বলেছিলো ।
কিন্তু আমি আজমলের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারি নাই , অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম আজমলের দিকে । আজমল আমার এমন অবাক দৃষ্টি দেখে প্রচুর হেসেছিলো । তারপর বলতে শুরু করেছিলো ,যা শোনার জন্য শারীরিক আর মানসিক ভাবে একদম প্রস্তুত ছিলাম না আমি । আজমল এর প্রতিটি কথা যেন ছিলো একেকটা হাতুরির আঘাত এর মতো । এক একটা আঘাত আমাকে যেন একটু একটু করে মাটির নিচে ডাবিয়ে দিচ্ছিলো । আজমল এর মুখভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছিলো ও যেন আমাকে ভেংচি কাটছে ।
“ রাবুর বিয়ার সময় ওই পোয়াতি আসিলো , আপনের বীজ , ছোট মিয়াঁ, আপনের , যার লইগা আমার মাইয়ার অকালে স্বামী হারা হইতে হইসিলো , ইচ্ছা আসিলো জন্মের সময় ই মাইরা ফালাই , কিন্তু চিন্তা করসিলাম মাড়লে তো সব শেষ , ওর উপর দিয়াই আপনের প্রতিশোধ নিসি , সাড়া জীবন বান্দির মতন খাটাইসি , হা হা হা , মিয়াঁ বাড়ির মাইয়া হইসে আমার বান্দি হা হা হা, আর সবচেয়ে বড় কামে লাগসে তো হেই রাইতে যেইদিন আপনে নিজের মাইয়ারে বিছনায় নিয়ে গেলেন হা হা । আপনের মাইয়া কিন্তু আপনের মতন হারামজাদা না এতো বছর পালনের একেবারে সঠিক দাম দিসে আপনের মাইয়ায় হা হা হা ”
মনে হচ্ছিলো আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো , এমনিতে শরীর ছিলো দুর্বল , তার উপর এমন একটা সংবাদ , বার বার সুধু মাথায় আজমল এর বলা কথা গুলি ঘুরছিলো । ‘মিয়াঁ বাড়ির মাইয়া আমার বান্দি , মিয়াঁ বাড়ির মাইয়া আমার বান্দি’ ।
ঝুমা আমার মেয়ে সেটা ভেবে আনন্দ হচ্ছিলো না আমার , বরং ওই এক রাতের সৃতি আমাকে কাঁটা যুক্ত চাদরের মতো যেন জড়িয়ে ধরছিলো । যতই চেষ্টা করছিলাম সেই কণ্টকআকীর্ণ চাদরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ততই যেন আরও সাপটে ধরছিলো আমাকে ।
“ আপনে তো একটা বেটিচোদ , যান এহন গিয়া ছোট মাইয়ারে ও বিছনায় লইয়া যান দেখবেন সব ভুইলা যাইব বাপের সোহাগ পাইয়া , মাইয়া কিন্তু আপনের পুরা রেডি , আপনে যদি ঐদিন আর একটু পর আইতেন তাইলে আমি আরও রেডি কইরা দিতাম আপনের লইগা হা হা হা , তহন আপনে দুই মাইয়া লইয়া সুখে দিন কাটাইতেন ।
আমি হঠাত করে উঠে গিয়ে আজমল এর গলা চেপে ধরেছিলাম , ভাগ্য ভালো যে ওই ঘরে আমি আর করিম ছাড়া অন্য কেউ ছিলো না । আমি এতো জোড়ে আজমলের গলা চেপে ধরেছিলাম যে হয়ত আরও একটু বেশি সময় ধরে রাখলে আজমল মাড়া যেত । কিন্তু শব্দ শুনে গার্ড এসে আমাদের ছাড়িয়ে দিয়েছিলো । শেষে আমাকেও গ্রেপ্তার কড়া হয়েছিলো , কিন্তু করিম কিভাবে জেনো আমাকে ছাড়িয়ে এনেছিলো ।
থানার বাইরে এসে করিম আমাকে একটি প্রস্ন ও করেনি , তবে আমি বলেছিলাম সব কিছু , কিছুই বাদ দেই নি । আমার মনে তখন সুধু একটা চিন্তাই ঘুরছিলো , সেটা হচ্ছে কি করে আজমল এর মুখ বন্ধ করা যায় । আমি চাইছিলাম না যে ঝুমা এসব নিয়ে কিছু জানুক । আমি জানতাম আমি আর কোনদিন ও ঝুমার সামনে দাড়াতে পারবো না । কিন্তু মেয়েটা অন্তত এক রাতের ভুলের জন্য সাড়া জীবন দুঃখ না পাক।
কিন্তু কোন উপায় ভেবে পাচ্ছিলাম না । আর আমার এ ও মনে হচ্ছিলো যে আজমল ঝুমার কাছে অবশ্যই বলবে আমার কথা । বিকৃত সুখ পাওয়ার জন্য আজমল এসব অবশ্যই বলবে । শেষে আমি এমন একটা উপায় বেছে নিয়েছিলেম যা আমার পূর্বপুরুষ রা অনেবার ব্যাবহার করেছে , গুপ্তহত্যা । হ্যাঁ আমার প্রচুর টাকা খরচ হয়েছিলো । কিন্তু টাকা কোন ব্যাপার ছিলো না আমার কাছে , যা করার করিম ই করেছে আমি সুধু টাকা দিয়েছি । আর জেলের ভেতর একজন ৭০+ বৃদ্ধের মৃত্যু সাজানো তেমন কঠিন কোন ব্যাপার ছিলো না ।
আজমলের উপর এখন আর আমার রাগ হয়না । ওর কথা মনে পরলেই কেমন জানি এক অদ্ভুত অনুভুতি হয় । মাঝে মাঝে মনে হয় আজমল কে আমিই একটা রাক্ষসে পরিণত করেছিলাম । আমার পাপের জন্যই আজমল অমন হয়ে উঠেছিলো । আমি আজমল কে ক্ষমা করে দিয়েছি , যদিও ওকে ক্ষমা করার কোন অধিকার আমার আছে কিনা আমি জানি না । তবে আমি কারো কাছে ক্ষমা চাইতে পারলাম না। কেমন হতভাগা আমি । জীবনের শেষ দিন গুলি গুনছি বুক ভরা গ্লানি নিয়ে । অনিলার সেই আদুরে বেড়াল এর মত আমার বুকে মাথা ঘষা ,আর ঝুমার বলা একটি কথা আমাকে আজো তাড়া করে বেড়ায় ।
“ জানেন ছোট মিয়াঁ আমার মনে হয় আমার বাপ মড়ে নাই , দূরে কোন যায়গায় চইলা গেসে , আচ্ছা বাপ গুলা কি এমন ই হয় “
সমাপ্ত
গল্পটা শেষ করতে পারলাম । তবে মনে দুঃখ রয়ে গেলো আমি আমার শেষ আপডেট দেয়ার যে দীর্ঘ সুত্রতার রোগ , সেটা দূর করতে পারলাম না । এর জন্য অবশ্য আমি নিজে পুরোটা দায়ী নই । আশা করি পাঠক রা আমার এই দোষ ক্ষমার চোখে দেখবেন । এই গল্পটা লেখার সময় অনেকের কাছ থেকে অনেক প্রশংসা পেয়েছি , যার কিছু কিছু এতটাই স্নেহান্ধ ছিলো যে নিজেই লজ্জায় পরে গেছি । যাক পাঠকরা ভালোবেসে যাই দেয় সেটাই আমাদের জন্য পরম আশীর্বাদ । ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন সকলের জন্য এই কামনা ।