Thread Rating:
  • 31 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica লেখিকা nandanadas1975 এর গল্পগুলি
#42
মৈথিলী
by nandanadas1975


আআহহহ রাজকুমার!! অতি দুরন্ত রাজকুমারের জ্বালায় নিজের মাতৃসুলভ আবেগে একটু উচ্চস্বরে বলে উঠল মৈথিলী। ছোট রাজকুমার বীরবাহু কে নিজের সবল বাহু তে জড়িয়ে ধরে বিশাল প্রান্তরের মতন রাজ প্রাসাদের ছাদের কিনারা থেকে টেনে নিয়ে চলে এল মৈথিলী। ছাদ থেকে নামবার আগে পশ্চিম আকাশের ঢলে পরা কালো মেঘের ফাঁকে উঁকি দেওয়া রক্তিম সূর্য কে নিরীক্ষণ করল মৈথিলী।রক্তিম আভা কালো মেঘের সাথে সন্ধি করে কেমন ভয়ার্ত করে দিয়েছে আকাশ টা কে। যুদ্ধের ডামাডোল এ এমন সুন্দর রক্তিম সূর্য যেন মনে হচ্ছে, কোন সুদুর থেকে বয়ে নিয়ে আসা মৃত্যুর প্রতীক। ছ্যাঁত করে উঠল মৈথিলীর বুক। বড় রাজ কুমার বিজয় গেছেন সকালেই যুদ্ধের আগাম সংবাদ আনতে। এখনো ফেরেন নি।

আর অপেক্ষা করল না মৈথিলী। ছোট রাজকুমার কে পালকের মতন তুলে নিজের কোলে তুলে যথা সম্ভব দ্রুত নেমে এল কক্ষে।রাজকুমারের কক্ষে থরে থরে সাজান ফলমূল মিষ্টান্ন। বিশাল কক্ষের ঠিক মাঝেই ছোট রাজকুমারের শয্যা। মৈথিলী রাজকুমার কে কোল থেকে নামিয়ে ছেড়ে দিল কক্ষে। রাজকুমার ঠিক পুতুলের মতই আবার দৌড়তে শুরু করল কোল থেকে নামাবার সাথে সাথেই। মৈথিলী এই কষ্ট আর বুক ভরা ঝঞ্ঝার মাঝেই হেসে ফেলল রাজকুমার কে দেখে। রাজপরিবারে গত দুই বৎসর সে আছে। আর তখন থেকেই দুই রাজকুমার এর দেখাশনার দায়িত্বে মৈথিলী। দুই রাজকুমার কে প্রানের থেকেও বেশি ভালবাসে সে। এই উল্লম রাজবংশের কাছে মৈথিলী কৃতজ্ঞ। বড় খারাপ সময়ে এখানে আশ্রয় পেয়ে সে নতুন জীবন পেয়েছে। উল্লম বংশের সব থেকে মহান রাজা, মহারাজ কিরীটী র মহাসভায় মৈথিলীর দাদা ভানুপ্রতাপ সভাসদ।
………বেশ কিছু ফল কেটে একটি রুপোর থালায় সাজিয়ে রাজকুমার কে খাওয়াতে খাওয়াতে মৈথিলী এই সব কথাই ভেবে চলেছিল। একজন দাসি এসে রেড়ির তেলের বড় বড় প্রদীপ গুলো জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। মানে আঁধার হয়ে গেছে। বুক টা যেন ফের খালি মনে হল মৈথিলীর। বড় রাজকুমার এখনো ফেরেন নি। মৈথিলী থাকলে জেতে দিত না যুবরাজ কে। কিন্তু মৈথিলী স্নানে ব্যস্ত ছিল তখন মাত্র সাতজন দেহরক্ষী নিয়ে যুবরাজ নিজের ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে গেছেন সশস্ত্র হয়ে।
রাজকুমার কে খাইয়ে নিয়ে, কিছু পুস্তক রাজ কুমারের সামনে রাখল মৈথিলী। প্রতিদিনের মতই পুস্তকে অনীহা প্রকাশ করল রাজকুমার। কিন্তু মৈথিলী তাতে কান না দিয়ে নিজের অঙ্গুলি ইশারা করল রাজকুমার কে পুস্তকের দিকে। প্রদীপের উজ্জ্বল আলো তে রাজকুমার পুস্তকে মনোনিবেশ করলেন অনিচ্ছাতেই। ঠিক সেই সময়েই একজন দাসি একটু ব্যস্ত হয়েই প্রবেশ করল কক্ষে।
– কি খবর লতিকা? মৈথিলীর গলার স্বর টা যেন মনে হল একটু ভারি
– বড় রাজকুমার এখনো ফেরেন নি, আর…। লতিকার মুখে কথাটা শুনেই মৈথিলী তাকাল লতিকার দিকে। ভীত অথচ বড়ই শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করল,
– আর কি লতিকা?” একটু ভীত হয়ে, এদিক ওদিক তাকিয়ে লতিকা জবাব দিল
“এখান থেকে সাত মাইল দূরে, প্রধান যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে মাইল তিনেক আগে একটা ছোট লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। চর জানিয়েছে সেখানে বড় রাজকুমারের ছোট টুকরি টা কে লড়তে দেখা গেছে”।।
মৈথিলী চুপ হয়ে গেল যেন। চিন্তিত অভিব্যক্তি নিয়ে ইশারায় লতিকা কে চলে যেতে বলে দিল। রাজকুমার কে একবার দেখে বেরিয়ে এল বাইরে। রাজ প্রাসাদের ঝলমলে আলোতেও বাইরের আকাশে মেঘের ঘনঘটা স্পষ্ট প্রত্যক্ষ করল মৈথিলী। আর তার সাথেই বিশাল উঁচু বৃক্ষের ক্রমাগত দোদুল্যমান অবয়বের দিকে তাকাতেই মৈথিলী বুঝে গেল ঝড়ের পূর্বাভাস।ঝড় শুধু বাইরে নয়। মনের ভিতরেও উঠেছে প্রবল ভাবে মৈথিলীর। রাজকুমার কে ও চোখের আড়াল করতে পারে না। আর সেই রাজকুমার মৃত্যু মুখে? ছিঃ! ছিঃ!, কি ভাবছে ও। বুকের ভিতরে যেন মুগদরের দামামা। নাহ কিচ্ছু হবে না কুমারের। নিজের ছিপছিপে শরীর টা টান টান করে দাঁড়িয়ে, মূহুর্ত কাল ভেবে নিলো যেন মৈথিলী। সামান্য সময় ও নষ্ট করল না ও। ছোট রাজকুমার কে নিজের কোলে নিয়ে সাত মহলা রাজ প্রাসাদের গর্ভ মহলে এলো।
তীব্র ঝোড়ো হাওয়ার সাথে হাল্কা ফিনফিনিয়ে বৃষ্টি আর সাথে বিদ্যুতের তীব্র ঝলকানির মাঝেই মৈথিলী রাজপ্রাসাদের সাত মহল থেকে বেরিয়ে এলো চুপিসারে। কাউকে জানাতে চায় না তার বহিরাগমন।বিদেশী আক্রমণের এই খারাপ সময়ে প্রাসাদের প্রহরীরা প্রাচীরের ওপরে তীব্র ধারাল তীর আর বল্লম নিয়ে প্রহরা দিচ্ছে। এই অবস্থায় মৈথিলীর এই ভাবে লুকিয়ে যাওয়া দেখতে পেলেই মৃত্যু অনিবার্য। শত শত বিষাক্ত তীর বুকে বিঁধতে মূহুর্ত ও লাগবে না। কিন্তু এই প্রাসাদের প্রতিটা ধুলো কে চেনে মৈথিলী, ও জানে কি ভাবে প্রহরী দের চোখ এড়িয়ে বেরিয়ে আসা যায়।
প্রাসাদের বাইরে যখন বেরিয়ে এলো তখন ঝড়ের গতি বেশ তীব্র। রাজপ্রাসাদের বাইরের নগরী কে দেখে চেনাই যায় না। সম্পূর্ণ নগর যেন কোন অজানা ভয়ে সিটিয়ে আছে। যে নগরী এই সান্ধ্যকালীন সময়েও জমজমাট থাকে, আজকে এখন যেন কোন ভয়ার্ত মৃত্যুপুরী। কোন ঘরে বা দোকানেই আলো জ্বলে নি। নিঝুম নগরে যেন মৃত্যুর কালো ছায়া।
মৈথিলী গতি বাড়িয়ে দৌড়তে শুরু করেই সাথে সাথে একটি তীব্র শীষ দিল। অন্ধকার ফুঁড়ে যেন একটি বিশাল ঘোড়া এগিয়ে এলো মৈথিলীর দিকে। অদ্ভুত কায়দায় নিজেকে প্রতাপের পীঠে চড়িয়ে নিতে মৈথিলীর এক লহমা ও লাগলো না। রেকাবের ওপরে নিজেকে দাঁড় করিয়ে লাগাম টা হ্যাঁচকা টানে প্রতাপ কে জানান দিল মৈথিলী , – এবারে চল।।
মহা শ্মশান এর ভিতর দিয়ে দুলকি চালে প্রতাপ এগোতে এগোতে একদম সেশ প্রান্তে এসে উপস্থিত হল। একটা ন্যাড়া গাছের ঠিক পাশেই। সেখানে কিছু একটা চিহ্ন দেখে একটু এগিয়ে গিয়েই একটি গর্তে হাত নামিয়ে একটা লম্বা নোংরা বস্তা তুলে আনল মৈথিলী অবলীলায়। দড়ি দিয়ে বাঁধা বস্তা টা খুলেই সাদা রঙের সরু একটা ধনুক খুলে পিঠে নিয়ে নিল মৈথিলী। তূণীর টা বেধে নিল তন্বী কোমরে শক্ত করে। তলোয়ার টা খাপ থেকে খুলতেই বিদ্যুতের আলোয় যেন মনে হল বিদ্যুৎ চমকাল তলোয়ারের ওপরেই। ঢুকিয়ে নিল খাপের ভিতরে মৈথিলী তরবারি টা। বেঁধে নিল কোমরে। সময় নষ্ট না করে চড়ে বস্ল প্রতাপের পিঠে। – হাইয়্য্যাআআআআআ” বলে আওয়াজ দিতেই বিদ্যুতের মতই ছিটকে বেরল প্রতাপ।
খোলা প্রান্তরে তখন ও লড়ে চলেছে যুবরাজের ছোট সেনার টুকরি টা। যুবরাজের তরবারির আঘাতে প্রান হারিয়েছে বেশ কিছু ঘাতক। কিন্তু এখনো বেশ বড় টুকরি টার জীবন। যুবরাজ বুঝে গেছেন তার মৃত্যু আসন্ন।আসন্ন রাত্রি যেন যুবরাজের জীবনেও রাত্রি ডেকে নিয়ে এল। ওর দুজন দেহরক্ষী ওকে পালানোর সুযোগ করে দিয়ে নিজেরা ভিড়ে গেছে যুদ্ধে। যুবরাজ কোনরকমে নিজের আহত শরির টা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন পা ঘষটে ঘষটে সাম্নের দিকে। যদি সামনে কোন সাহায্য পাওয়া যায় এই আশায় যুবরাজ এগিয়ে চলেছেন কোনরকমে।
জম্বুদ্বীপের এই বিশাল ভূখণ্ডে একটি ছোট্ট দেশের যুবরাজ। তোমর রাজ্যের রাজার এই অতর্কিত আক্রমনের জন্য প্রস্তুত ছিল না উল্লম রাজ্য। প্রধান যুদ্ধেও মনে হয় মহারাজ পরাস্ত হয়েছেন। কথাটা ভেবেই যেন যুবরাজ আর ও ভেঙ্গে পড়লেন। কেন যে মৈথিলীর কথা শুনলেন না সেই নিয়েই আক্ষেপ হচ্ছে যুবরাজের এখন। হয়ত না বেরলে ধরা পড়ত না সে নিজে, আর তাকে বন্দী করে তোমর রাজা যুদ্ধে জিতেও জেত না। এখন তাকেই পালাতে হবে যাতে তাকে বন্দী করতে না পারে তোমর রাজ্যের সেনা রা। রুক্ষ মাটিতে বৃষ্টি মাটিকে পিচ্ছিল করে দিয়েছে। আহত পায়ে দৌড়তে গিয়ে বার বার পড়ে যাচ্ছেন যুবরাজ। মাত্র সাত জন সেনা নিয়ে প্রহর খানেক লড়াই করা মুখের কথা নয়। কিন্তু ওরা অনেক জন ছিল। যুবরাজ কে মেরে ফেলা ওদের উদ্দেশ্য ছিল না। বন্দী করার উদ্দেশ্য ছিল,না হলে হয়ত মেরেই ফেলত।
আর সেটা বুঝে যেতেই যুবরাজ পালিয়ে এসেছেন লড়াই এর জায়গা থেকে দূরে একটু। উদ্দেশ্য ওদের হাতে না পরা। কিন্তু সেশ রক্ষা হবে না বলেই মনে হচ্ছে। কারন পিছনে অনেক গুলো ঘোড়ার ক্ষুরের আওয়াজ যুবরাজ পাচ্ছেন। ওর দেহরক্ষী রা যে সবাই মৃত সেটা বুঝতে সময় নিলেন না যুবরাজ। কিন্তু ওদের হাতে নিজেকে তুলে দেবেন না। লড়বেন। লড়াই করেই মরবেন যুবরাজ। নিজেকে তুলে দাঁড়িয়ে পড়লেন যুবরাজ। এই অষ্টাদশ বছরে নিজের মৃত্যু মানতে না পারলেও দেশের জন্য এই টা তাকে করতেই হবে। বিদ্যুতের আলোয় সামনে থেকে আগিয়ে আসা বিশাল ঘোড়সওয়ার গুলর দিকে তাকিয়ে চোয়াল টা শক্ত করে তলোয়ার টা বের করে দাঁড়িয়ে পড়লেন যুবরাজ। লড়বেন আজ, আমৃত্যু!!!!!!
সামনের বিশাল দেহি লোকটা তলোয়ার নিয়ে সামনে আসতেই নিজের পাশে রাখা বল্লম টা ছুঁড়লেন যুবরাজ। আহত হবার জন্য সেই রকম শক্তি না দিতে পারলেও বল্লম টা সামনের লোকটার কাঁধ ছুয়ে বেড়িয়ে যেতেই টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল ঘোড়া থেকে। ততক্ষনে ঠিক তার পিছনের জন এসে তলোয়ার টা সোজা যুবরাজের মুণ্ডু লক্ষ করে চালাতেই যুবরাজ বসে পড়লেন। পিছনের গাছটার দেহ কেটে বসে গেল অনেকটা তলোয়ার টা। ততক্ষনে আর ও দুজন এসে উপস্থিত। নিজের তলোয়ার টা অভ্যস্ত হাতে চালাতেই যন্ত্রণায় মুখ টা কুঁচকে বসে পড়লেন যুবরাজ। কাঁধের কাছে ভয়ঙ্কর ক্ষত তাকে নিজের প্রিয় তলোয়ারটা চালানর যোগ্য ও রাখেনি। কোনরকমে তলোয়ারের আঘাত টা সামলালেন নিজের তলোয়ার দিয়ে। এতই জোরে চালিয়েছিল তলোয়ার টা সামনের সৈনিক টা যুবরাজের তলোয়ার টা কেটে গিয়ে শিরস্ত্রাণ এ আঘাত করল সেটা। পড়ে গেলেন যুবরাজ মাটিতে। পড়ে গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে বসে পড়লেন, দেখলেন বেশ কিছু সেনা ওকে ঘিরে ফেলেছে। অর্ধেক কাটা তরবারি টা নিয়ে উঠতে যেতেই একটি ভয়ংকর পদাঘাত যুবরাজ কে যেন মিশিয়ে দিল মাটির সাথে। মুখ টা মাটিতে মিশে গেছিল যেন। ওদের মধ্যে একজন ঘোড়া থেকে নেমে যুবরাজ কে গলা টিপে ধরে তুলে গাছে সাথে চেপে ধরল বেশ শক্তির সাথে। যুবরাজ ছটফট করতে শুরু করলেন। আহত যুবরাজ কে বেঁধে নিয়ে যাওয়াতে আর কোন বাধাই রইল না সামনে।
যুবরাজের চোখ টা যেন বুজে আসছিল অপমানে। ঠিক তখন ই যেন কি একটা হল। যুবরাজ দেখলেন যে যে সৈন্য টা ওকে গলা টিপে ধরে চেপে ধরেছিল সেই গাছের সাথে লেগে গেছে অবিছেদ্য ভাবে। একটা তীর সেনা টার গলায় বিধে গাছের সাথে লেপটে নিয়ে গাছ টা কেই এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে।
চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেল যুবরাজের নিজের ই অজান্তে। এতো ভয়ঙ্কর শক্তিশালী!!! ততক্ষনে সামনের সেনা দের মধ্যে একটা ব্যস্ততা। চোখের পলকেই আর ও দুটো সেনা ঘোড়া থেকে মাটিতে পড়ে ধরাশায়ী হল। মেঘের ফাঁকে উঁকি দেওয়া কঠিন শীতল আলোয় ঠিক দেখা না গেলেও এটা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না যে তীর গুলো যেন শরীর টা ফুঁড়ে বেড়িয়ে চলে যাচ্ছে কোথাও। এতো ভয়ঙ্কর শক্তিধর উল্লম রাজ্যে কেউ আছে বলে যুবরাজ জানেন না। অল্প সময়েই প্রায় জনা দশেক সেনা কে নরকে পাঠিয়ে দিল অজানা তীরন্দাজ।
ততক্ষনে সামনের সেনারা নিজেদের গুছিয়ে ঢাল সামনে এনে নিজেদের একটা সারি তে এনে ফেলেছে। কারন তীরন্দাজ এক সাথে দুটি তিনটি করে তীর বর্ষণ করছিল। যুবরাজ নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন আর দেখছিলেন একটি বিশাল কাল ঘোড়ায় তীর বর্ষণ করতে করতে এগিয়ে আসছে একজন কেউ। অসম্ভব ক্ষিপ্র গতিতে ধনুক থেকে তীর বর্ষণ করে চলেছিল যোদ্ধা টি। নিক্ষেপিত দুটি তীরের মাঝে বিশেষ জায়গা ছিল না বললেই চলে। মুহূর্তেই বেঁচে থাকা সেনার দল নিজেদের এক সারি তে করে নিয়ে যুবরাজের দিক থেকে উলটো দিকে চলে গেল। ততক্ষনে তীরন্দাজ যুবরাজের সামনে এসে ঘোড়া থেকে নেমে যুবরাজ কে আড়াল করে দাঁড়িয়ে পড়েছে।
নিজের ধনুক টা যুবরাজের পাশে রেখে কোশ থেকে বেশ বলিষ্ঠ একটি তলোয়ার বের করে নিয়েছে। চোখ বুজে আসছে যুবরাজের। রক্ত ক্ষরণ হয়েছে বেশ। শরীরে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। সামনে আবছা ভাবে দেখছেন ভীষণ, ভীষণ ক্ষিপ্রতায় তলোয়ার চালাচ্ছে দেব পুরুষ টি। মনে হচ্ছে শত শত সেনা তলোয়ার চালাচ্ছে একসাথে। “ধপ” করে একটা আওয়াজে পাশে তাকাতেই একটা রক্ত মাখা কাটা মুণ্ডু দেখেই চোখ বুঝলেন যুবরাজ।
রাজ বৈদ্য এসে ঔষধি দিয়ে চলে যেতেই মহারানী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন যেন। মৈথিলীর হাত দুটো নিজের কপালে ঠেকিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। মৈথিলী নিজের মাতৃ সম মহারানী কে নিজের বুকে টেনে নিয়ে হয়ত নিজের কান্না ও লোকাল। কিন্তু যুবরাজের দিকে তাকিয়ে মৈথিলী ও সামলাতে পারল না নিজেকে। ডান কাঁধে গভীর ক্ষত। এখনো রক্ত ক্ষরণ বন্ধ হয় নি। বাম উরু তে তরবারির আঘাতের গভীর গর্ত। অচেতন যুবরাজ। নিজের জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো শরীর কে থরথর করে আন্দোলিত করে। মৈথিলীর বুকে থাকা ক্রন্দনরতা মহারাণী ও অনুভব করলেন এই আন্দোলন।
“নাহ আর দেরি করা ঠিক হবে না। এখনি দাদার সাথে কথা না বললে হয়ত যুবরাজ কে বাঁচানো যাবে না”।
মহারানী কে যুবরাজের পাশে বসিয়ে রেখে, সাদা কাপড় টা মাথায় জড়িয়ে বেড়িয়ে এলো মৈথিলী।
রাজমহলের বাইরে এসে সারথী কে ইশারা করতেই এক ঘোড়ার রথ এসে হাজির হলো। হাতে একটা জলন্ত মশাল নিয়ে সোজা সভাসদ গ্রামের দিকে রথ চালানোর হুকুম দিলো মৈথিলী। বৃস্টি ভেজা পথে খানিক টা চলার পরেই সভাসদ গ্রামে উপস্থিত হল রথ। রথ থেকে নেমে একটু বেশ সাজানো গৃহের সামনে দাঁড়াতেই বেশ বলশালি এবং অধিক উচ্চতার পুরুষ বেড়িয়ে এলেন গৃহ থেকে। বেশ উষ্ণ অভ্যর্থনা করলেন তিনি মৈথিলী কে।
– আসুন দেবী। এই ভানু র গৃহে আসার কারন জানালে খুব আনন্দ পাব”।
এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েও মৈথিলী বিশেষ আনন্দিত নয় সেটা বোঝাই গেল।সম্ভাষণের জবাবে প্রতি সম্ভাষণ এর ধার ধারলো না মৈথিলী। কিছুমাত্র অপেক্ষা না করে সোজা চলে এলো গৃহ মধ্যে।
ভানুপ্রতাপের দ্বার রক্ষী রা একটু অবাক ই হল। কারন মৈথিলী দেবী কে এই ভাবে কখন কোন পুরুষের গৃহে আসতে কোনদিন ও তারা দেখেনি। এবং ভানুপ্রতাপ কে কোন মহিলার সাথে বন্ধ কক্ষে ও তারা দেখেনি সেটা বলাই বাহুল্য।
কক্ষে প্রবেশ করেই মৈথিলী কে যেন একটু অধৈর্য মনে হল। ভানু জলন্ত প্রদীপ গুলর দিকে তাকাতেই উজ্জ্বল হয়ে জ্বলতে থাকা প্রদীপ গুলো নিজেদের যেন গুটিয়ে নিল। খুব স্তিমিত হয়ে এলো আলো। সাদা কাপড় টা মাথা থেকে খুলতেই স্তিমিত হয়ে যেতে থাকা আলোতে দেখা গেলো, মৈথিলীর নারি রূপ যেন বদলে যাচ্ছে। তন্বী শরীর টা বদলে ভীষণ রূপবান একজন পুরুষে বদলে গেল মুহূর্তেই। আজানুলম্বিত বাহুর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হত পুরুষ রা সেই বাহু এখন কঠিন মেদহীন নির্লোম পেশীবহুল। যে রক্তিম কেশরাশি মৈথিলীর প্রধান সম্পদ ছিল সেখানে ঘাড় অব্দি পুরুষ কেশ। উন্নত কেশরীর মতন গ্রীবা।
– এখানে আসা উচিৎ হয় নি তোমার জিষ্ণু”! ভানু প্রতাপ বিশেষ ভাবে একটু ভয়ার্ত ভাবে কথা টা বললেন মৈথিলী কে। বোঝা গেল নারী বেশি এই মৈথিলীর আসল নাম জিষ্ণু।
– জানি দাদা। কিন্তু যে রাজ বংশে আমরা এতদিন সুখে বাস করছি সেই রাজপরিবারে আজ ভয়ঙ্কর বিপদ।
– তাতে আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের জিবনের উদ্দ্যেশ্য অনেক বড়। এই ভাবে সামনে এসে সেটাকে নষ্ট করতে পারব না”
দাদার কথা শুনে জিষ্ণু বলে উঠল
– কি? সবার আগে আমরা মানুষ কি নই দাদা? মানবিকতা কি সব উদ্দেশ্য আর লক্ষ্যের আগে নয়? যে রাজা আমাদের আশ্রয় দিল সেই রাজার আশ্রয় না পেলে আমাদের উদ্যেশ্য কি পুরন হত দাদা!
– তুমি আমাকে এই সব বলবে না জিষ্ণু। আমি জানি মানবিকতা কি আর তার প্রয়োজন কতটা। আর আমি মানবিকতা কে কি ভাবে দেখি সেটা তোমার থেকে ভাল করে কেউ জানে না, তাই না?” ভানুর তপ্ত স্বরে জিষ্ণু যেন একটু লজ্জিত হল আর তার সাথে ভয়ার্ত দেখালো জিষ্ণু কে।মনে মনে ভাবল “উফ কি করছে সে? সে তার প্রানাধিক প্রিয় দাদা কে এই সব বলছে কি করে? যে দাদা কে নিজের পিতার থেকে বেশী ভক্তি করে তাকে এই সব কথা বলছে কি করে? সত্যি দাদাকে এই ভাবে বলা উচিৎ হয় নি” । এদিকে ভানু বলে চলেছেন
– “ একজন মাত্র যোদ্ধা জনা তিরিশ সেনা কে কয়েক লহমায় হত্যা করে দিয়েছে, তোমার কি মনে হয় জিষ্ণু এই খবর টা চাপা থাকবে? আমাদের মহান শত্রুর কথা ছেড়ে দাও সাধারন মানুষ ও জানে এই টা করার ক্ষমতা একমাত্র কার আছে। আর তুমি নিজেদের কথা সামান্য ও ভাবলে না? চলে গেলে যুবরাজ কে বাঁচাতে? আমাদের মা বন্দী জিষ্ণু, তার জন্য আমাদের বেঁচে থাকতে হবে! আর তুমি এক লহমায় সব ভাবনা সব চিন্তা সেশ করে দিলে”?
জিষ্ণু ঘুরে ভানুর দিকে তাকাতেই ভানু দেখল জিষ্ণুর চোখে জল। জিষ্ণু কি ভাবে দাদাকে বোঝায়, যে সে কেন গেছিল যুবরাজ কে বাঁচাতে? জিষ্ণু ভানুর পা দুটো কে নিজের দু হাতে নিয়ে হাউ হাউ করে ক্রন্দনরত অবস্থায় বলল “ দাদা আমাকে ক্ষমা করে দাও, যুবরাজ কে ওরা মেরে ফেলত দাদা, মেরে ফেলত! আমি না গেলে আজকে এই সম্পূর্ণ রাজ্যে অন্ধকার নেমে আসত দাদা, আমাকে ক্ষমা করে দাও”। ভানু চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন জিষ্ণু কে নিজের পা থেকে তুলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন
– তোমাকে আমার ভাই হিসাবে পেয়ে আমি গর্বিত জিষ্ণু, আমাকে ভাবতে দাও।
– দাদা আগে যুবরাজ কে বাঁচাও তুমি দয়া করে।
– হুম্ম সেটা বড় ব্যাপার নয়। তোমাকে ঔষধি দিচ্ছি, মহারানীর অলক্ষ্যে ওকে সেবা করবে। দুই দিনেই ও ঠিক হয়ে যাবে। বাকি রইল যুদ্ধ। তোমাকে বেরতে হবে না, আমি বালি কে বলছি ও ই যাবে কালকের যুদ্ধে। কালকে না গেলে যুদ্ধ তোমর রা সেশ করে দেবে কালকেই”
জিষ্ণু, ভানুর কথা শুনে ভানু কে জড়িয়ে ধরে কাঁদল অনেকক্ষন। ও জানত দাদা ওর কথা ফেলতে পারবে না। দাদার সাথে কথায় জড়িয়ে পরার জন্য নিজেকেই দোষী ভেবে ওর এই কান্না। আর তাছাড়া নিজের ভাই দের কে ছেড়ে থাকতে কার ই বা ভাল লাগে? ভানুও যেন মুছে নিল নিজের চোখের জল , নিজের প্রাণপ্রিয় ভাই কে বুকে নিয়ে। কতক্ষন কাটলো কে জানে!দুই ভাই প্রায় এক বৎসর পরে একে অপর কে দেখছে।জিষ্ণু আবেগে ভেসে গেলেও, ভানু নিজেকে সামলে নিয়ে জিষ্ণু কে অনুরোধ করল কক্ষ ত্যাগ করতে।
সামনের চারপায়া তে রাখা দুটো কাঁচের শিশি তে রাখা একটা গোলাপি রঙের শিশি উঠিয়ে জিষ্ণু পান করে নিল। আর অন্য টা হাতে নিতেই ততক্ষনে নিজের পুরুষ রূপ বদলে গিয়ে মৈথিলী হতে সময় লাগলো না। পুনর্বার মাথায় সাদা কাপড় দিয়ে কেশরাশি ঢেকে নিলো মৈথিলী রূপী জিষ্ণু।
– “আপনার যাত্রা শুভ হোক দেবী”। ভানুর সম্ভাষণে, ভানুর দিকে তাকিয়ে দুই হাত জড়ো করে প্রনাম করে রথে উঠল মৈথিলী।

[+] 1 user Likes modhon's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: লেখিকা nandanadas1975 এর গল্পগুলি - by modhon - 01-05-2021, 01:15 AM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)