Thread Rating:
  • 7 Vote(s) - 3.14 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নিষিদ্ধ দ্বীপ by fer.prog
#17
বাকের এই কথা শুনে খুশি হয়নি, কিন্তু স্ত্রীর কথার বিপক্ষে তর্ক করে পরিবেশটাকে খারাপ করে দিতেও ওর ইচ্ছে নেই। এতদিন সাবিহা বলতো বাকের নাকি বেশি জেদি। তবে এই দ্বীপে আসার পর থেকেই সাবিহাও যেন জেদি হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। নিজের কথার বিপক্ষে কোন যুক্তি শুনতে চায় না সে বাকেরের মুখ থেকে। যেটুকু সময় বাকের ছেলেকে পায়, তখন মাছ ধরা, জীব জন্তু, পাখি শিকার করা, এইগুলি শিখাতে লাগলো। আহসান খুব তাড়াতাড়ি শিখে নেয় যেকোন কিছুই, কিন্তু ওর চোখ মুখ দেখে বাকের বলে দিতে পারে যে এই সব কাজ ওর মোটেই পছন্দনা। এর চেয়ে বরং ওর মায়ের সাথে বসে লেখাপড়া করা বা কবিতা আবৃতি করতে পারলেই আহসান খুশি হবে। সাবিহা চায় যেন ছেলের সাথে কাটানো সময় গুলিতে ওকে বাকের একদম বিরক্ত না করে। আর ওদের মাঝে নির্জনতা থাকুক, সে জ্ঞান খাটিয়ে কি কি শিখানো হবে আহসানকে সেটা ঠিক করলো। দ্বীপের যেই ঝর্ণার কাছে ওদের বাড়ি, এর থেকে একটু দূরে অন্য আরেকটি বড় ঝর্না আছে, যার কথা আগেই বলা হয়েছে। প্রায় ১ মাইলের মত দূরে অবস্থিত ঝর্ণাটি, ঝর্ণার সামনের জায়গাটা অনেকটা পুকুরের মত। চারপাশে পাথর, তিনদিক থেকে ঘেরা, শুধু সামনে সমুদ্রের দিকে খোলা। ওই জায়গাটাকেই সাবিহা বেছে নিলো ওদের প্রতিদিনের শিক্ষার কাজের জন্যে। বাকেরকে সেই কথা জানিয়ে দেয়া হলো যেন ওই পথ দিয়ে ওই সময়ে সে না যায়। মাঝের এই বিরতিতে অঙ্ক, ইংরেজি আর পড়তে শিখার জ্ঞান ভুলে গেছে কি না আহসান, সেটা যাচাই করে নিতে লাগলো সাবিহা আগে। ওদের ভাগ্য ভালো যে, ওই দ্বীপে ভেসে আসা জাহাজের সাথে কিছু বই পত্রও ছিলো। সেগুলিই এখন সাবিহা পড়াবে ছেলেকে। আর লেখার জন্যে বালুতটের চেয়ে সুন্দর জায়গা আর কোথায় পাবে ওরা।

ওই সব বই ছাড়াও ইতিহাস, জীবন, মানুষ, কবিতা, উপন্যাস, জীব বিচিত্র এই সব নিয়েও কথা বলতো সাবিহা। অঙ্কও করাতো সে, তবে সব অঙ্ককে আগে নিজে মনে মনে সমাধান করে তবেই ছেলেকে শিখাতো। এমনকি মাঝে মাঝে ছেলেকে কিছু বাড়ির কাজও দিয়ে দিতো সে, যেটা ছেলে নিজে নিজে করে এনে দেখাবে মাকে। লেখাপড়ার বাইরে ওদের এই মা ছেলের একত্র নির্জন সময় কাটানো মুহূর্ত গুলিকে ওরা দুজনেই ভালবাসতে শুরু করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে ওর মায়ের পিছনে গিয়ে আহসান ওর মায়ের মাথার চুলে বিলি কেটে দিতো। আর সাবিহা সামনে প্রবাহমান সমুদ্রের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতো মিনিটের পর মিনিট, ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কত কথা যে ওদের মনে উদয় হতো সেই সময়টুকুতে, সেটা আমি হয়ত আপনাদেরকে বুঝাতে পারবো না। দুজনে মিলে সুর করে একত্রে কবিতা পড়তে বা গানের কলি ভাঁজতেও পছন্দ করে। এছাড়া ধর্ম, সাহিত্য, রাজনীতি, সবকিছু নিয়েই ওরা আলোচনা করতো! শুধু একটা ব্যতিক্রম ছিলো সেটা হলো সেক্স। এটা নিয়ে সাবিহা মোটেই মুখ খুলতো না ছেলের কাছে। কখনও যদি ওদের কথার ভিতরে ওটা চলে আসতো তাহলেও সাবিহা খুব চালাকির সাথে কথাকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতো। একটা বাড়ন্ত কিশোর ছেলের সাথে যৌনতা বা সেক্স নিয়ে কিভাবে সে আলাপ করবে, এটা ওর মাথায় আসতো না। কিন্তু সে জানে যে ওদের কথা ওদিকেই যাবেই কোন না কোনদিন। ও নিজে কাউকে সেক্স বা যৌনতা নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছে, এটা বলার মত যোগ্যতা ওর নেই বলেই মনে করে সে। সাবিহা চাইতো যে এইসব ব্যাপারে ছেলেকে ওর বাবাই জ্ঞান দিক। সে বাকেরকে কয়েকবার বলেছেও, কিন্তু বাকের রাজি না ছেলের সাথে এইসব নিয়ে কথা বলতে।

হঠাতই একদিন যৌনতার প্রশ্ন এসে গেলো ওর কাছে আচমকা, কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই। আহসান ওর মায়ের মাথার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলো মায়ের পিছনে বসে একটা পাথরের উপরে, সাবিহা নিচে বালুর উপরে। “মা, আমি তোমাদেরকে কাল রাতে দেখেছি…” “আমদেরকে দেখেছো?” -সাবিহা জানতে চাইলো। “হুম, তোমাকে আর বাবাকে বিছানার উপরে…” সাবিহার গাল চোখে মুখ লালাভ হয়ে উঠলো, লজ্জায় ওর মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছিলো না। ওর শরীর যেন কাঁপছিলো, ছেলে কি নিয়ে কথা বলছে সেটা বুঝতে পারলো সে। অবশেষে অনেকদিন পড়ে গতকাল রাতে ওদের দুজনের মধ্যে সেক্স হয়েছে, যদিও খুব বেশি একাকী সময় পায়নি ওরা। বিশেষ করে অনেকদিন পড়ে বাকেরের ছোঁয়া পেয়ে যেন পাগল হয়ে উঠেছিলো সাবিহা, ছেলে দেখে ফেলেছে সেটা! “আমদেরকে লুকিয়ে দেখা তোমার উচিত না আহসান? কেন এমন করলে তুমি?” -সাবিহা বেশ রেগে গেলো ছেলের উপর যদিও রাগার মত কোন কাজই সে করেনি। “আমি লুকিয়ে দেখি নি তোমাদেরকে, তোমাদের বিছানা আর আমার বিছানা তো পাশেই, আমি ইচ্ছে করে দেখি নি…” -আহসান ওর পক্ষে যুক্তি দিলো।

সাবিহা জানে যে ছেলে সত্য কথা বলছে, ও আর বাকেরও জানতো যে এটা খুব রিস্ক হয়ে যাচ্ছে ওদের জন্যে, কিন্তু সাবিহা ওর শরীরের ক্ষিধেকে কোনভাবেই সামলাতে পারছিলো না। সাবিহা কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না, চুপ করে রইলো সে। তখনই ছেলের পরের কথাতে সে আরও বেশি অবাক হলো। “আমি কি কোনদিন এই রকম কোন মেয়ের সাথে করতে পারবো, মা?” -আহসানের চোখের দৃষ্টি ও সমুদ্রের দিকে। “মানে, আমি কোনদিন কোন মেয়েকে ছুয়েও দেখি নি, কাউকে চুমু খাই নি, কিভাবে কি করে, কিছুই জানি না… আমি...  আমি…” -বাকি কথাগুলি আর বের হলোনা আহসানের মুখ দিয়ে ওর চোখের কোনে চিকচিকে অশ্রুর কনা দেখা দিলো। সাবিহা মাথা ঘুরিয়ে ছেলের দিকে তাকালো, ছেলের কথা ওর মনেও যেন কষ্টের এক পাথর নিক্ষেপ করলো। ওর নিজের চোখটাও কেন যে সব সময় ভিজে উঠে অল্পতেই, জানেনা সে। 

“অবশ্যই তুই করবি বাবা, কারন আমরা এখান থেকে উদ্ধার পাবো বাবা, উদ্ধার পাবো…” -এক বুক কষ্ট নিয়েও ছেলেকে মিথ্যে আশা দিতে ভুললো না সাবিহা। কোনভাবেই ছেলের আশাকে সে মরে যেতে দিতে পারেনা। “কেন মিথ্যে বলছো মা? এইরকম হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, কেউ আমাদেরকে খুঁজতে আসবে না। আমরা চিরদিনের জন্যেই এখানে আটকা পড়েছি, আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত, কোন আশা নেই.. আমরা পুরো একাকী, এভাবেই একাকী বাকি জীবনটা পার করতে হবে আমাদেরকে”। একটু থেমে আহসান আবার বললো, “কিন্তু বাবার জন্যে তো তুমি আছো, আমার জন্যে কেউ নেই…”  -আহসানের চোখের পাশ দিয়ে পানির ফোঁটাকে গড়িয়ে পড়তে দেখলো সাবিহা। ওর কাছে মনে হলো, কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দিয়ে ওর বুকের পাঁজরগুলিকে একটি একটি করে ভাঙছে ওর চোখের সামনে। সোজা হয়ে দাড়িয়ে আহসানকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো সাবিহা, “আমি খুব দুঃখিত বাবা। আমি জানি, এই কঠিন সময়টা আমার আর তোর বাবার জন্যে যতটা না কঠিন, তোর জন্যে আরও অনেক বেশি কঠিন। কিন্তু আমরা তো আশা ছাড়তে পারি না সোনা, আমাদের উদ্ধার পাবার আশা করতেই হবে। আমাদেরকে যে ভবিষ্যতের আশা করতেই হবে রে, সোনা…” -সাবিহার গলাও ধরে এলো।

“কিসের ভবিষ্যৎ?” -যেন ধনুকের চিল্কা থেকে একটা তীর সজোরে বের হয়ে গেলো। লাফ দিয়ে দাড়িয়ে মাটিতে থুথু নিক্ষেপ করে রাগী স্বরে বলে উঠলো আহসান, “কোন কচুর ভবিষ্যৎ? আমাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই মা, আর এই জন্যে দায়ী আব্বু, আমি উনাকে ঘৃণা করি” -এই বলে ওর মায়ের দিকে পিছন দিয়ে আহসান সমুদ্রের দিকে ঘুরে গেলো, রাগে ওর শরীর কাঁপছে। পিছন থেকে সাবিহা ওকে জরিয়ে ধরলো আবারও। কিছুক্ষন দুজনেই চুপ করে থাকলো আহসান চেষ্টা করছিলো ওর ভিতরের রাগকে কমাতে, ওর আবেগকে নিয়ন্ত্রন করতে। সে ছোট হলেও বুঝতে পারে যে, এই বিদেশ যাত্রা ওর আম্মুর ইচ্ছাতেই হয়নি। ওর আম্মুর সায়ও ছিলোনা, শুধু ওর আব্বুর জেদ আর উনার নিজের উন্নতির জন্যে ওদেরকে দেশ ছেড়ে আপন মানুষদের ছেড়ে বিদেশ যাওয়ার জন্যে পথে নামতে হয়েছে, আর এখন? এখন কোথায় ওরা?
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নিষিদ্ধ দ্বীপ by fer.prog - by saddam052 - 05-04-2019, 10:41 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)