24-04-2021, 12:13 AM
(This post was last modified: 24-04-2021, 12:30 AM by modhon. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অনুপমার গল্প
by nandanadas1975 (anupama D)
আমি শিলা। বাবার চার নম্বর মেয়ে। এখন আমি ৩২ বছর। বিধবা হয়েছি দু মাস হল। বরের এক্সিডেন্ট আর সেই জায়গাতেই মৃত্যু। দুই ছেলে নিয়ে আমি পড়লাম অকুল পাথারে। আমার মা নেই। বিয়ের আগেই মারা গেছে। আমার ওপরে আমার বাবার কোন টান নেই।
বাবা চেয়েছিল ছেলে। কিন্তু আমি হলাম মেয়ে। আগের তিন মেয়ের ওপরে বাবার বেশ টান। কিন্তু আমি অভাগী। আমার বিয়েতেও বাবা থাকেনি। যদিও তার আগে আমার জন্মের পরেই আমার মা মারা গেছিলেন। বাবা আমার ছোট মাসীকে টাকা পইসা দিয়েছিলেন আর ছোট মাসী আমার বিয়ে দিয়েছিল। বাবা চলে গেছিল বম্বে তে। সেখানেই বাবা থাকেন।
কোন একটি বড় কোম্পানি তে বেশ বড় চাকরি করেন। আমকে কোন রকমে বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা। একটি অটো ওলার সাথে।
কারন একটাই, আমার ওপরে ঘেন্না।
ছেলে চেয়েছিল বাবা, কিন্তু আমি হলাম ফের মেয়ে। কোনদিন আমাকে কিছু কিনে দেন নি বাবা।দিদিদের দামি দামি জিনিস বাবা কিনে এনে দিতেন। আমাকে না।দিদিদের জামা কাপড় পরেই আমার বড় হওয়া। দিদিরা পরত নামি ইংলিশ মিডিয়াম ইকলেজে আমি পড়তাম বাংলা মিডিয়াম ইকলেজে।দিদিরা বাবার গাড়িতে ইকলেজ যেত আর আমি সাইকেল করে। যাইহোক আমি কোনদিন এই ব্যাপারটা মাথায় নিই নি। কারন জানতামযে এই তাই হয়ত নিয়ম। আমি আমার মত থাকতাম। বাবা যেটা বলত মেনে চলতাম বাবাকে খুশি করার জন্য। কিন্তু বাবা খুশি হতনা। আমার রেজাল্ট একটু খারাপ হলেই কপালে মার ও জুটেছে। কিন্তু দিদিরা ফেল করলেও বাবা কিছু বলতেন না। তাই এইচ এস পরীক্ষায় আমি সেকেন্ড ডিভিশন পাওয়ায় বাবা মাসীকে কে বলে আমার বিয়ে দিয়ে দিলেন নম নম করে। তার আগে অবশ্য আমার দুইদিদির বিয়ে হয়েছিল। আসলে বাবা মায়ের বিয়ে হয়েছিল ছোট বেলায়। মানে বাবা তখন ২১ আর মা ১৭। আমমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মা মারা না গেলে আমার কপালেও হয়ত দিদিদের মতই আদর জুটত। কিন্তু কেউ কেউ আসে ফুটো কপাল নিয়ে। আমি সেই দলের।
বাবা এখন ৬০ বছরের। আমারও দুইছেলে। বড়টা ১০ বছরের। আর ছোট ছেলেটা ছয় মাস মাত্র। তাই বিধবা হয়ে যাওয়ায় আমি পাগলের মত হয়ে গেছি যে কি হবে আমাদের।
কারন বাবার কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না আমি জানি। আমার শ্বশুর শাশুড়ি নেই। তাই ওখানে দেওর দের কাছে থাকার কোন প্রশ্নই নেই কারন ওরা আমাকে রাখবে না। এই মুহূর্তে মাসির বাড়ি আছি আমি। তাই মেশমশাই রাগকরছে মাসির ওপরে। আমার খারাপ লাগলেও কি করব আর। মাসী বাবাকে জানিয়েছে আমার অবস্থা কিন্তু বাবা কোন উত্তর দেন নি।
সেদিন রাতে খাবার পরে মাসী আমি সিঁড়ির নীচে যে ঘর টায় থাকতাম সেখানে এল।
আমাকে বলল – দেখ তোর মেস রাগ করছে আমার ওপরে। যে আমি তোকে এনে এখানে রেখেছি। খরচা আছে একটা সমত্ত মেয়ে আর দুটো ছেলের। তোর মেসো রিটায়ার করেছে।
- জানি মাসী। মাসী মেসো কে বলে আমাকে একটা চাকরি করে দিতে বলনা। আমি চলে যাব এখান থেকে। আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলাম।
- তোর মেসোর আর সেই ক্ষমতা নেই রে। তুই বাপু তোর বাবার সাথে কথা বল শিলা।
- মাসী তুমি তো বাবাকে চেন।বাবা আমাকে রাখবে না।
- সেটা তুই তোর বাবাকে বল। তুই ওর মেয়ে। তোর বাবা যদি তোকে না রাখে তাহলে কি করে চলবে। আইনত তুই তোর বাবার সম্পত্তির অধিকারি।
- মাসী তুমি বাবাকে বল না আরেকবার।
- দারা তোর মেসো কে দিয়ে বলাই। তোর বাবা তো আমাকে তেড়ে উড়িয়ে দেবে।
মাসী মেসোর কাছে চলে গেল। আর তারপরেই আমাকে ডাকতে এল –আয় তোর বাবার সাথে মেসো কথা বলছে।
আমি ছুটে গেলাম কি কথা হয় জানতে। মেসো আমাকে শোনার জন্য ফোন টা কে স্পীকার এ দিয়ে কথা বলছে।
- ইন্দ্র অনেক দিন তো হল,এবারে মেয়ে কে নিয়ে যাও।
- আমি ওকে এখানে রাখব না। ও আমার মেয়ে নয়। ওকে বল অন্য কথাও চলে যেতে। আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম বাবার কোথায়।
- কোথায় যাবে ও? ওর দিদিরাও এইদেশে থাকে না যে ওকে রাখবে। আর একটা সোমত্ত মেয়েমানুষ কেই বা রাখবে ওকে? তুমিই নিয়ে যাও ভাই।
- আমাকে কেন বলছ? তোমরাও তাড়িয়ে দাও না। আমি ওকে মনেই করি না ও আমার মেয়ে। ও আমার বউ কে খেয়েছে। তোমরাও রেখ না ওকে।
আমি দরজায় মাথা দিয়ে শারির আঁচল টা মুখে গুঁজে কাঁদতে লাগলাম।
- তুমি একটা এত বড় মাপের লোক এই সব বল না।
- না ওর মাকে আমি খুব ভালবাসতাম ফণী। ওই রাক্ষুসি ওর মাকে খেয়েছে।
- জানি, কিন্তু ও তো তোমার মেয়ে! দু দুটো ছেলে নিয়ে কোথায় যাবে ও। তুমি যদি ওর একটা ভাল বিয়ে দিতে মেয়েটা ঠিক থাকত।দোষ তোমার ও আছে ইন্দ্র। এখন তুমি ছাড়া ওকে কে দেখবে?
বাবার পক্ষ থেকে অনেক ক্ষন চুপ থাকার পরে বাবা বললেন যে – ঠিক আছে। আমি টিকিট পাথিয়ে দিচ্ছি ওকে পাঠিয়ে দাও।
- ও একা দুটো ছেলে নিয়ে একা পারে নাকি?
- না পারলে আমার কিছু করার নেই। তবে ওকে বল মরতে। আবার মেসো আমার দিকে তাকিয়ে দেখল আমি হাউ হাউ করে কাঁদছি।
- না না ইন্দ্র। এগুল কোন কথা নয়। আমি বরং ওকে দিয়ে আসি।
- সে ঠিক আছে এস। তোমরা অনেক দিন আস নি। চলে এস ঘুরে যাও এখানে।
ইতিমধ্যে আমার বুকে ব্যাথা শুরু হল দুধের জন্য। আমি দৌড়ে এসে ছেলেকে কোলে নিয়ে দুধ দিতে শুরু করলাম। মনে মনে হাঁফ ছারলাম যে যাক বাবা রাজি হয়েছে। কিছু দিন থাকি তারপরে বাবাকে বলে কয়ে একটা চাকরি যোগার করে আলাদা থাকব। মাসী এল আমার ঘরে। শুনলি তো? তোর বাবা রাজি হয়েছে।
- হ্যাঁ মাসী। মাসী তুমি বাবাকে বল আমার জন্যে কোন অসুবিধা ওনার হবে না। বলে আমি আবার কেঁদে ফেললাম।
- কাঁদিস না শিলু। আমি জানি তুই বড় ভাল মেয়ে।
- মাসী গো, তুমি ছাড়া আমাকে কেউ ভালবাসে না মাসী। বলে মাসির হাত টা ধরে আমি হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম। মাসীও আমাকে ধরে একটু কাঁদল।
আমি তো রিতিমত ভয়ে আছি যত ট্রেন বম্বের দিকে এগিয়ে আসছে। কি জানি। প্রায় তের বছর পরে বাবাকে দেখব। আমাকে দেখে যদি রেগে যায়! মাসী আমাকে বলছে ভয়ের কি আছে? বাবা তো রাজি হয়েছে তোকে রাখতে। আমি একটু আশ্বস্ত হলাম।
আমি একটা সিল্কের শাড়ি পরে ছিলাম। বড় ছেলেতার হাত ধরে মাসী আর আমি ছোট তাকে কোলে নিয়ে নামলাম ট্রেন থেকে দেখলাম মেসো বাবার সাথে হাত মিলিয়ে কথা বলছে। আমি নেমে পাশে গিয়ে বাবাকে প্রনাম করলাম। বাবা আমাকে দেখল ও না।
- কেমন আছ ইন্দ্র? তুমি তো বুড়ো হচ্ছ না দেখি। শুধু চুল গুল পেকেছে অর্ধেক টা। শরীর টা তো একদম ফিট দেখছি।
- হা হা হা হা। তুমি ভাত খাবে আর ঘুমবে তো কি হবে তোমার, বলে বাবা মেসোর ভুঁড়ি তে একটা হাল্কা ঘুসি মারল।
-চল চল দেরি হয়ে গেছে অনেক।
আমার দিকে তাকাল ও না বাবা। মেসোর একটা ব্যাগ নিয়ে বাবা সামনে সামনে চলল। আমি সবার শেষে আমার ছেলেকে কোলে নিয়ে যেতে থাকলাম। কষ্ট হল কিন্তু মনে মনে ভাবলাম আর বাবাকে ধন্যবাদ দিলাম এই ভেবে যে না দেখলেও চলবে। আমাকে থাকতে দিয়েছে এই অনেক। একটা বিশাল গাড়ি এনেছে বাবা। বাবাই চালাচ্ছিল গাড়ি। মেসো পাশে। আমি আর মাসী পিছনে ছেলে দুটোকে কে নিয়ে।
- জামাইবাবু!
- কি রে? বাবা খুশি হয়ে জবাব দিল
- তোমার নাতি দের দেখেছ?
বাবা পিছন ফিরে কড়া চোখে আমাকে দেখে মাসী কে বলল – তোরা দ্যাখ।
আমি আর কিছুই বললাম না বাবাকে। আমিও চুপ করে বাইরে দেখতে লাগলাম। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক চলার পরে একটা বিশাল বাংলো মতন বারির কাছে এসে গাড়িটা থামল। ছোট একটা পাহাড়ের মাথার ওপরে একমাত্র একটা বাড়ি। গাড়ি টা ঢুকে সোজা বারির ভিতরে একটা ছায়াতে এসে দাঁড়াল। অনেক টা জায়গা জুড়ে বাড়ি টা। সামনে অনেক গাছ পালা। আর সাদা রঙের বাড়ি টা কি সুন্দর লাগছে।
- বাড়ি টা কবে কিনলে ইন্দ্র।
- এই তো মাস ছয়েক। মেয়েরা মাঝে মাঝে আসে থাকে। তাই কিনলাম এখানে। শুনে আমার চোখ জলে ভরে এল।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া হল। আমি আর মাসী বাড়িতেই রান্না করলাম। চিকেন ছিল।
মাসী বলল শিলু তুই চিকেন টা রাঁধ। তোর রান্নার হাত টা বেশ।
নীচে কাঁথা পেতে ছেলে টা কে শুইয়ে আমি আর মাসী রান্না করলাম। আমার বড় ছেলেটা অত বড় বাড়ি পেয়ে বাইরে ঘাসে বল নিয়ে খেলতে শুরু করল। দুপুরে খাবার সময়ে বাবা আর মেসো বেশ চেটে পুটে খেল।
- ও হহহহ পুঁটি( বাবা মাসী কে ওই নামেই ডাকত) চিকেন টা যা রেঁধেছিস না তুই। অনেক দিন বাদে এমনি গরম ভাত আর মাংস খেলাম রে। মাসী আমার দিকে তাকিয়ে বাবাকে বলতে যাবে আমি ইশারায় মানা করলাম মাসী কে।
মাসী বলল - এখন তো মেয়ে রইল খেতে ইছছে হলে বোল ওকে।
- না পুঁটি, ওর রান্না আমি খাব না।
আমি তখন ভিতরে আম কাটছিলাম। জানি বাবা খেতে ভালবাসে তাই। শুনে কষ্ট হলেও কিছু মনে করলাম না। মাসীকে ইশারায় ডেকে আমগুলো দিতে বললাম। মাসী দিল মেসো কে আর বাবাকে আম।
- উররীসসসসস... তোরা আম ও এনেছিস? মাসী ফের আমার দিকে তাকাল। কারন আমিএ মাসী কে বলে আমগুলো কিনিয়েছিলাম। বাবা আম খেতে খুব ভালবাসে।
- হ্যাঁ তুমি তো আম খেতে ভালবাস জামাইবাবু।
- ওয়াও। থ্যাংকস। আমি খুশি হলাম খুবই।
তিন দিন এমনি আনন্দে দুঃখে কেটে গেল। আনন্দে এই জন্য যে মাসীরা ছিল। আর দুঃখ এই জন্য যে এইতিন দিনে বাবা আমার সাথে কথা বলা তো দূর আমার ছেলের সাথেও কথা বলেনি। যাই হোক যাবার আগে দিন মাসী আমার ঘরে এল রাতে।
-শোন শিলা তোকে কিছু কথা বলে দি আমি।
- মাসী বল না। আমি মাসীকে জড়িয়ে ধরে বললাম মাসী তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব। যা উপকার করলে তুমি আমার।
- ধুর পাগলী। শোন বাবার সাথে কথা বেশি বলতে যাস না। পছন্দ করে না লোকটা।
- ঠিক আছে মাসী আমি ঘাড় নেড়ে বললাম।
- আর শোন তোর বাবা আমাকে বলে দিয়েছে যে,রান্না ঘরে যে স্টিলের কোট আছে সেখানে টাকা থাকে। তোর দরকার হলে নিস। আর যদি কিছু দরকার থাকে দারয়ান কে দিয়ে আনিয়ে নিস। তোর বাবার ঘরে ঢোকার দরকার নেই।
- ঠিক আছে মাসী। আমি এবারেও ঘাড় নেড়ে বললাম।
- মাসী বাবাকে বলে আমার ছেলেকে একটা ইকলেজে ভর্তি করিয়ে দিও না।
- সেটা আমি তোর বাবাকে বলেছি। তোর বাবা বলেছে ঠিক আছে। আমি শুনে খুব খুশি হলাম। পরেরদিন মাসী মেসো চলে গেল। এরপরে আমার সত্যিই ভয় করতে শুরু হল। পারতপক্ষে আমি বাবার সামনে থাকতাম না। আমার ছেলেকেও যেতে দিতাম না।
যদিও ও যমের মত ভয় পেত দাদু কে। বাবা এগারোটায় বেরিয়ে যেত অফিসে আর ফিরে আসত পাঁচটার দিকে। বাবা চলে গেলে আমি আমাদের রান্না করতাম। স্নান করতাম। ছেলেকে স্নান করাতাম। ঘর পরিষ্কার করতাম। বাবার ঘরে ঢুকতাম না একদম ই।যে সাত দিন গেছে মাসীরা, একদিন ও বাবা কথা বলেনি আমার সাথে। আমার ঘর টা ছিল বেশ বড়।
ঘরে এসি লাগান। চালাতাম না যদিও। ভয় করত আমার। দেখিনি কোনদিন কি চালাব? আমি ফ্যানের ভরসা তেই চলতাম। ছেলে মাঝে মাঝে বায়না করত চালানর জন্য। আমি বাবার ভয় দেখাতেই চুপ করে যেত। বাবা আমার রান্না খাবে না বলে একটা মাসী এসে রান্না করত। হিন্দিতে কি যে বলত আমি বুঝতাম না। আর আমার কথাও মাসী বুঝত না।
আমার ছেলে মাঝে মাঝে আধা হিন্দি তে বুঝিয়ে দিত। আমি মাসী কে শুকনো লঙ্কা দিতে মানা করতাম। আমার ছেলে সেটা মাসীকে বুঝিয়ে দিত। আমার বাবা মদ খেত মাঝে মাঝে।
by nandanadas1975 (anupama D)
আমি শিলা। বাবার চার নম্বর মেয়ে। এখন আমি ৩২ বছর। বিধবা হয়েছি দু মাস হল। বরের এক্সিডেন্ট আর সেই জায়গাতেই মৃত্যু। দুই ছেলে নিয়ে আমি পড়লাম অকুল পাথারে। আমার মা নেই। বিয়ের আগেই মারা গেছে। আমার ওপরে আমার বাবার কোন টান নেই।
বাবা চেয়েছিল ছেলে। কিন্তু আমি হলাম মেয়ে। আগের তিন মেয়ের ওপরে বাবার বেশ টান। কিন্তু আমি অভাগী। আমার বিয়েতেও বাবা থাকেনি। যদিও তার আগে আমার জন্মের পরেই আমার মা মারা গেছিলেন। বাবা আমার ছোট মাসীকে টাকা পইসা দিয়েছিলেন আর ছোট মাসী আমার বিয়ে দিয়েছিল। বাবা চলে গেছিল বম্বে তে। সেখানেই বাবা থাকেন।
কোন একটি বড় কোম্পানি তে বেশ বড় চাকরি করেন। আমকে কোন রকমে বিয়ে দিয়েছিলেন বাবা। একটি অটো ওলার সাথে।
কারন একটাই, আমার ওপরে ঘেন্না।
ছেলে চেয়েছিল বাবা, কিন্তু আমি হলাম ফের মেয়ে। কোনদিন আমাকে কিছু কিনে দেন নি বাবা।দিদিদের দামি দামি জিনিস বাবা কিনে এনে দিতেন। আমাকে না।দিদিদের জামা কাপড় পরেই আমার বড় হওয়া। দিদিরা পরত নামি ইংলিশ মিডিয়াম ইকলেজে আমি পড়তাম বাংলা মিডিয়াম ইকলেজে।দিদিরা বাবার গাড়িতে ইকলেজ যেত আর আমি সাইকেল করে। যাইহোক আমি কোনদিন এই ব্যাপারটা মাথায় নিই নি। কারন জানতামযে এই তাই হয়ত নিয়ম। আমি আমার মত থাকতাম। বাবা যেটা বলত মেনে চলতাম বাবাকে খুশি করার জন্য। কিন্তু বাবা খুশি হতনা। আমার রেজাল্ট একটু খারাপ হলেই কপালে মার ও জুটেছে। কিন্তু দিদিরা ফেল করলেও বাবা কিছু বলতেন না। তাই এইচ এস পরীক্ষায় আমি সেকেন্ড ডিভিশন পাওয়ায় বাবা মাসীকে কে বলে আমার বিয়ে দিয়ে দিলেন নম নম করে। তার আগে অবশ্য আমার দুইদিদির বিয়ে হয়েছিল। আসলে বাবা মায়ের বিয়ে হয়েছিল ছোট বেলায়। মানে বাবা তখন ২১ আর মা ১৭। আমমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মা মারা না গেলে আমার কপালেও হয়ত দিদিদের মতই আদর জুটত। কিন্তু কেউ কেউ আসে ফুটো কপাল নিয়ে। আমি সেই দলের।
বাবা এখন ৬০ বছরের। আমারও দুইছেলে। বড়টা ১০ বছরের। আর ছোট ছেলেটা ছয় মাস মাত্র। তাই বিধবা হয়ে যাওয়ায় আমি পাগলের মত হয়ে গেছি যে কি হবে আমাদের।
কারন বাবার কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না আমি জানি। আমার শ্বশুর শাশুড়ি নেই। তাই ওখানে দেওর দের কাছে থাকার কোন প্রশ্নই নেই কারন ওরা আমাকে রাখবে না। এই মুহূর্তে মাসির বাড়ি আছি আমি। তাই মেশমশাই রাগকরছে মাসির ওপরে। আমার খারাপ লাগলেও কি করব আর। মাসী বাবাকে জানিয়েছে আমার অবস্থা কিন্তু বাবা কোন উত্তর দেন নি।
সেদিন রাতে খাবার পরে মাসী আমি সিঁড়ির নীচে যে ঘর টায় থাকতাম সেখানে এল।
আমাকে বলল – দেখ তোর মেস রাগ করছে আমার ওপরে। যে আমি তোকে এনে এখানে রেখেছি। খরচা আছে একটা সমত্ত মেয়ে আর দুটো ছেলের। তোর মেসো রিটায়ার করেছে।
- জানি মাসী। মাসী মেসো কে বলে আমাকে একটা চাকরি করে দিতে বলনা। আমি চলে যাব এখান থেকে। আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলাম।
- তোর মেসোর আর সেই ক্ষমতা নেই রে। তুই বাপু তোর বাবার সাথে কথা বল শিলা।
- মাসী তুমি তো বাবাকে চেন।বাবা আমাকে রাখবে না।
- সেটা তুই তোর বাবাকে বল। তুই ওর মেয়ে। তোর বাবা যদি তোকে না রাখে তাহলে কি করে চলবে। আইনত তুই তোর বাবার সম্পত্তির অধিকারি।
- মাসী তুমি বাবাকে বল না আরেকবার।
- দারা তোর মেসো কে দিয়ে বলাই। তোর বাবা তো আমাকে তেড়ে উড়িয়ে দেবে।
মাসী মেসোর কাছে চলে গেল। আর তারপরেই আমাকে ডাকতে এল –আয় তোর বাবার সাথে মেসো কথা বলছে।
আমি ছুটে গেলাম কি কথা হয় জানতে। মেসো আমাকে শোনার জন্য ফোন টা কে স্পীকার এ দিয়ে কথা বলছে।
- ইন্দ্র অনেক দিন তো হল,এবারে মেয়ে কে নিয়ে যাও।
- আমি ওকে এখানে রাখব না। ও আমার মেয়ে নয়। ওকে বল অন্য কথাও চলে যেতে। আমি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম বাবার কোথায়।
- কোথায় যাবে ও? ওর দিদিরাও এইদেশে থাকে না যে ওকে রাখবে। আর একটা সোমত্ত মেয়েমানুষ কেই বা রাখবে ওকে? তুমিই নিয়ে যাও ভাই।
- আমাকে কেন বলছ? তোমরাও তাড়িয়ে দাও না। আমি ওকে মনেই করি না ও আমার মেয়ে। ও আমার বউ কে খেয়েছে। তোমরাও রেখ না ওকে।
আমি দরজায় মাথা দিয়ে শারির আঁচল টা মুখে গুঁজে কাঁদতে লাগলাম।
- তুমি একটা এত বড় মাপের লোক এই সব বল না।
- না ওর মাকে আমি খুব ভালবাসতাম ফণী। ওই রাক্ষুসি ওর মাকে খেয়েছে।
- জানি, কিন্তু ও তো তোমার মেয়ে! দু দুটো ছেলে নিয়ে কোথায় যাবে ও। তুমি যদি ওর একটা ভাল বিয়ে দিতে মেয়েটা ঠিক থাকত।দোষ তোমার ও আছে ইন্দ্র। এখন তুমি ছাড়া ওকে কে দেখবে?
বাবার পক্ষ থেকে অনেক ক্ষন চুপ থাকার পরে বাবা বললেন যে – ঠিক আছে। আমি টিকিট পাথিয়ে দিচ্ছি ওকে পাঠিয়ে দাও।
- ও একা দুটো ছেলে নিয়ে একা পারে নাকি?
- না পারলে আমার কিছু করার নেই। তবে ওকে বল মরতে। আবার মেসো আমার দিকে তাকিয়ে দেখল আমি হাউ হাউ করে কাঁদছি।
- না না ইন্দ্র। এগুল কোন কথা নয়। আমি বরং ওকে দিয়ে আসি।
- সে ঠিক আছে এস। তোমরা অনেক দিন আস নি। চলে এস ঘুরে যাও এখানে।
ইতিমধ্যে আমার বুকে ব্যাথা শুরু হল দুধের জন্য। আমি দৌড়ে এসে ছেলেকে কোলে নিয়ে দুধ দিতে শুরু করলাম। মনে মনে হাঁফ ছারলাম যে যাক বাবা রাজি হয়েছে। কিছু দিন থাকি তারপরে বাবাকে বলে কয়ে একটা চাকরি যোগার করে আলাদা থাকব। মাসী এল আমার ঘরে। শুনলি তো? তোর বাবা রাজি হয়েছে।
- হ্যাঁ মাসী। মাসী তুমি বাবাকে বল আমার জন্যে কোন অসুবিধা ওনার হবে না। বলে আমি আবার কেঁদে ফেললাম।
- কাঁদিস না শিলু। আমি জানি তুই বড় ভাল মেয়ে।
- মাসী গো, তুমি ছাড়া আমাকে কেউ ভালবাসে না মাসী। বলে মাসির হাত টা ধরে আমি হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম। মাসীও আমাকে ধরে একটু কাঁদল।
আমি তো রিতিমত ভয়ে আছি যত ট্রেন বম্বের দিকে এগিয়ে আসছে। কি জানি। প্রায় তের বছর পরে বাবাকে দেখব। আমাকে দেখে যদি রেগে যায়! মাসী আমাকে বলছে ভয়ের কি আছে? বাবা তো রাজি হয়েছে তোকে রাখতে। আমি একটু আশ্বস্ত হলাম।
আমি একটা সিল্কের শাড়ি পরে ছিলাম। বড় ছেলেতার হাত ধরে মাসী আর আমি ছোট তাকে কোলে নিয়ে নামলাম ট্রেন থেকে দেখলাম মেসো বাবার সাথে হাত মিলিয়ে কথা বলছে। আমি নেমে পাশে গিয়ে বাবাকে প্রনাম করলাম। বাবা আমাকে দেখল ও না।
- কেমন আছ ইন্দ্র? তুমি তো বুড়ো হচ্ছ না দেখি। শুধু চুল গুল পেকেছে অর্ধেক টা। শরীর টা তো একদম ফিট দেখছি।
- হা হা হা হা। তুমি ভাত খাবে আর ঘুমবে তো কি হবে তোমার, বলে বাবা মেসোর ভুঁড়ি তে একটা হাল্কা ঘুসি মারল।
-চল চল দেরি হয়ে গেছে অনেক।
আমার দিকে তাকাল ও না বাবা। মেসোর একটা ব্যাগ নিয়ে বাবা সামনে সামনে চলল। আমি সবার শেষে আমার ছেলেকে কোলে নিয়ে যেতে থাকলাম। কষ্ট হল কিন্তু মনে মনে ভাবলাম আর বাবাকে ধন্যবাদ দিলাম এই ভেবে যে না দেখলেও চলবে। আমাকে থাকতে দিয়েছে এই অনেক। একটা বিশাল গাড়ি এনেছে বাবা। বাবাই চালাচ্ছিল গাড়ি। মেসো পাশে। আমি আর মাসী পিছনে ছেলে দুটোকে কে নিয়ে।
- জামাইবাবু!
- কি রে? বাবা খুশি হয়ে জবাব দিল
- তোমার নাতি দের দেখেছ?
বাবা পিছন ফিরে কড়া চোখে আমাকে দেখে মাসী কে বলল – তোরা দ্যাখ।
আমি আর কিছুই বললাম না বাবাকে। আমিও চুপ করে বাইরে দেখতে লাগলাম। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক চলার পরে একটা বিশাল বাংলো মতন বারির কাছে এসে গাড়িটা থামল। ছোট একটা পাহাড়ের মাথার ওপরে একমাত্র একটা বাড়ি। গাড়ি টা ঢুকে সোজা বারির ভিতরে একটা ছায়াতে এসে দাঁড়াল। অনেক টা জায়গা জুড়ে বাড়ি টা। সামনে অনেক গাছ পালা। আর সাদা রঙের বাড়ি টা কি সুন্দর লাগছে।
- বাড়ি টা কবে কিনলে ইন্দ্র।
- এই তো মাস ছয়েক। মেয়েরা মাঝে মাঝে আসে থাকে। তাই কিনলাম এখানে। শুনে আমার চোখ জলে ভরে এল।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া হল। আমি আর মাসী বাড়িতেই রান্না করলাম। চিকেন ছিল।
মাসী বলল শিলু তুই চিকেন টা রাঁধ। তোর রান্নার হাত টা বেশ।
নীচে কাঁথা পেতে ছেলে টা কে শুইয়ে আমি আর মাসী রান্না করলাম। আমার বড় ছেলেটা অত বড় বাড়ি পেয়ে বাইরে ঘাসে বল নিয়ে খেলতে শুরু করল। দুপুরে খাবার সময়ে বাবা আর মেসো বেশ চেটে পুটে খেল।
- ও হহহহ পুঁটি( বাবা মাসী কে ওই নামেই ডাকত) চিকেন টা যা রেঁধেছিস না তুই। অনেক দিন বাদে এমনি গরম ভাত আর মাংস খেলাম রে। মাসী আমার দিকে তাকিয়ে বাবাকে বলতে যাবে আমি ইশারায় মানা করলাম মাসী কে।
মাসী বলল - এখন তো মেয়ে রইল খেতে ইছছে হলে বোল ওকে।
- না পুঁটি, ওর রান্না আমি খাব না।
আমি তখন ভিতরে আম কাটছিলাম। জানি বাবা খেতে ভালবাসে তাই। শুনে কষ্ট হলেও কিছু মনে করলাম না। মাসীকে ইশারায় ডেকে আমগুলো দিতে বললাম। মাসী দিল মেসো কে আর বাবাকে আম।
- উররীসসসসস... তোরা আম ও এনেছিস? মাসী ফের আমার দিকে তাকাল। কারন আমিএ মাসী কে বলে আমগুলো কিনিয়েছিলাম। বাবা আম খেতে খুব ভালবাসে।
- হ্যাঁ তুমি তো আম খেতে ভালবাস জামাইবাবু।
- ওয়াও। থ্যাংকস। আমি খুশি হলাম খুবই।
তিন দিন এমনি আনন্দে দুঃখে কেটে গেল। আনন্দে এই জন্য যে মাসীরা ছিল। আর দুঃখ এই জন্য যে এইতিন দিনে বাবা আমার সাথে কথা বলা তো দূর আমার ছেলের সাথেও কথা বলেনি। যাই হোক যাবার আগে দিন মাসী আমার ঘরে এল রাতে।
-শোন শিলা তোকে কিছু কথা বলে দি আমি।
- মাসী বল না। আমি মাসীকে জড়িয়ে ধরে বললাম মাসী তোমাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেব। যা উপকার করলে তুমি আমার।
- ধুর পাগলী। শোন বাবার সাথে কথা বেশি বলতে যাস না। পছন্দ করে না লোকটা।
- ঠিক আছে মাসী আমি ঘাড় নেড়ে বললাম।
- আর শোন তোর বাবা আমাকে বলে দিয়েছে যে,রান্না ঘরে যে স্টিলের কোট আছে সেখানে টাকা থাকে। তোর দরকার হলে নিস। আর যদি কিছু দরকার থাকে দারয়ান কে দিয়ে আনিয়ে নিস। তোর বাবার ঘরে ঢোকার দরকার নেই।
- ঠিক আছে মাসী। আমি এবারেও ঘাড় নেড়ে বললাম।
- মাসী বাবাকে বলে আমার ছেলেকে একটা ইকলেজে ভর্তি করিয়ে দিও না।
- সেটা আমি তোর বাবাকে বলেছি। তোর বাবা বলেছে ঠিক আছে। আমি শুনে খুব খুশি হলাম। পরেরদিন মাসী মেসো চলে গেল। এরপরে আমার সত্যিই ভয় করতে শুরু হল। পারতপক্ষে আমি বাবার সামনে থাকতাম না। আমার ছেলেকেও যেতে দিতাম না।
যদিও ও যমের মত ভয় পেত দাদু কে। বাবা এগারোটায় বেরিয়ে যেত অফিসে আর ফিরে আসত পাঁচটার দিকে। বাবা চলে গেলে আমি আমাদের রান্না করতাম। স্নান করতাম। ছেলেকে স্নান করাতাম। ঘর পরিষ্কার করতাম। বাবার ঘরে ঢুকতাম না একদম ই।যে সাত দিন গেছে মাসীরা, একদিন ও বাবা কথা বলেনি আমার সাথে। আমার ঘর টা ছিল বেশ বড়।
ঘরে এসি লাগান। চালাতাম না যদিও। ভয় করত আমার। দেখিনি কোনদিন কি চালাব? আমি ফ্যানের ভরসা তেই চলতাম। ছেলে মাঝে মাঝে বায়না করত চালানর জন্য। আমি বাবার ভয় দেখাতেই চুপ করে যেত। বাবা আমার রান্না খাবে না বলে একটা মাসী এসে রান্না করত। হিন্দিতে কি যে বলত আমি বুঝতাম না। আর আমার কথাও মাসী বুঝত না।
আমার ছেলে মাঝে মাঝে আধা হিন্দি তে বুঝিয়ে দিত। আমি মাসী কে শুকনো লঙ্কা দিতে মানা করতাম। আমার ছেলে সেটা মাসীকে বুঝিয়ে দিত। আমার বাবা মদ খেত মাঝে মাঝে।