Thread Rating:
  • 7 Vote(s) - 3.14 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নিষিদ্ধ দ্বীপ by fer.prog
#12
যাযাবর বা ভবঘুরে জীবন সাবিহার জন্যে খুব কঠিন একটা আঘাত। কিন্তু সে জানে যে এর চেয়েও বড় আঘাত এসেছে আহসানের উপরে। ওর জীবনের একটা বড় অংশ  সামনে রয়েছে, সেই অংশটা কাটানোর জন্যে যে ওর যেই সঙ্গ, শিক্ষা আর পরিবেশ প্রয়োজন। আর সেটা দিতে না পারার বেদনাতে ও চোখের পানি বের হয়ে যায় সাবিহার। কষ্টে যেন বুকটা ফেটে যেতে চায় ওর। নিজেদের জীবনতো ওরা কাটিয়ে ফেলেছে, কিন্তু ওর ছেলের ভবিষ্যৎ জীবন কিভাবে সামনে এগুবে? এটা মনে করে গুমরে গুমরে  কেদে উঠে বার বার সাবিহা। সেই কান্না সে সবার অজান্তেই লুকিয়েই করে। যেন ছেলে দেখে না ফেলে, যেন স্বামী দেখে না ফেলে। বিশেষ করে ছেলের লেখাপড়া কিভাবে হবে আর ওর ছেলের জীবন সঙ্গী কিভাবে পাওয়া যাবে, এটা ভেবেই ওর মন বেশি উথাল পাথাল করে উঠতো।

সে জানে একজন পুরুষের জীবনে নারীর কি ভুমিকা। ও যদি বাকেরের পাশে না থাকতো তাহলে বাকের যে ওর এই জীবনটা কিভাবে কাটাতো, সেই চিন্তা থেকেই সে বুঝতে পারে যে ওর ছেলের এই কিশোর থেকে যৌবনের দিকে যাওয়ার এই বয়সে ভালবাসা, প্রেম, নারী এই সবের অনেক প্রয়োজন। কিন্তু তারও আগে ওর দরকার শিক্ষা, যেটাকে শুরু হতে না হতেই বন্ধ করে দিতে হলো ওদের এই পরিস্থিতিতে পড়ার কারনে। স্বামীর একার সিদ্ধান্তে এই বিদেশ যাত্রা নিয়ে এটাই হচ্ছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি পরিতাপের জায়গা সাবিহার মনে। এই জন্যে সেও মনে মনে বাকেরের একগুয়েমিকে দোষী মনে করে। ছেলের চিন্তায় মনে অস্থিরতা অনুভব করলেও সেই কথা কাউকে বলে মন হাল্কা করারও যে উপায় নেই ওর। আবার স্বামী ওদের এই বেঁচে থাকার জন্যে যে পরিশ্রম করছে, সেটাকেও খাটো করে দেখতে চায় না সে। বাকের সারাদিন কাটাচ্ছে মাছ ধরা আর খাবারও ওদের বসবাসকে সুবিধাজনক করার কাজে। সাবিহা আর আহসান একসাথে ওদের সময়ের বেশিরভাগ পার করছে। অন্য ১০টা মা-ছেলের চেয়ে ওদের মাঝের সম্পর্ক আগেও অনেক বেশি নিকটে ছিলো, এখন সেটা যেন আরও বেশি গভীর হচ্ছে দিন দিন। একজন অন্যজনের চোখের ভাষাও যেন পড়তে পারছে আজকাল।

এই দ্বীপে এসেছে ওরা প্রায় ২ মাস হতে চললো। সামাজিক মেলামেশা ও শিক্ষা থেকে আহসান যে দূরে রয়েছে, এই চিন্তাই সাবিহার ভিতরে কাজ করছে সব সময়। সাবিহা ভাবছে ওরা যদি এখান থেকে উদ্ধার পায় তাহলেও আহসানের এই দ্বীপে কাটানো একাকি সময়গুলি ওকে হয়ত অন্য সবার সাথে স্বাভাবিক হতে দিবেনা। বয়সের তুলনায় এখনও অনেক বেশি কাচা যে ওর ছেলেটা। আরও দু বছর আগে থেকেই আহসানের শরীরের পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে, এই সময়ে ওদের শরীরে প্রবাহিত হরমোনের কারনে ওদের ভিতরে চিন্তার পরিবর্তন ঘটে। সেই জন্যে ছেলের কথা চিন্তা করে সাবিহা প্রথমে বিদেশে যেতেই চায়নি। সে বাকেরকে  বলেছিলো যেন সে একা গিয়ে ১/২ বছর একা একা চেষ্টা করে দেখে। আর সেই সময়টা সাবিহা ছেলেকে নিয়ে ওর বাবার বাড়িতে থাকবে, এমন প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু বাকেরের জেদের কাছে ওকে নতি স্বীকার করতেই হলো। বিশেষ করে স্ত্রী আর ছেলেকে কিছুতেই নিজের কাছছাড়া করতে রাজি ছিলো না বাকের। আর এর পরিনাম এখন এই যে, ওরা ৩ টা মানুষ একা এই একাকি দ্বীপে আটকা পড়েছে। যার থেকে ওদের উদ্ধার পাবার আশা দিন দিন কমতে শুরু করেছে। আদিম মানুষের মত জীবন কাটাতে হচ্ছে ওদের। যেখানে শুধু খাওয়া আর ঘুমানো ছাড়া আর কোন কাজ ছিলো না মানুষের।

শেষ কয়েক বছর থেকেই সাবিহা ওর বিবাহিত জীবনের মোহ থেকে নিজেকে অনেকটাই মুক্ত করে নিয়েছিলো। বাকেরে সাথে বয়সের তফাত দূর করতে এবং বাকের যেই চোখে এই পৃথিবীকে দেখে, সেটা দেখতে বার বার ব্যর্থ হয়েছে সাবিহা। এতদিন গল্প উপন্যাসে যেই প্রেম ভালোবাসা পড়ে এসেছে সাবিহা, সেটা ওর জীবনে সে কোনদিন অনুভব করেছে কি না মনে করতে পারে না। বাধ্য স্ত্রীর মত সব সময় বাকেরের সিদ্ধান্তের উপরই ওকে নির্ভর করতে হয়েছে। যদিও বাকের কখনও ওকে অসম্মান করতোনা বা অবহেলা দেখাতো না। কিন্তু তারপরও মনে মনে অনেকবারই সাবিহা চিন্তা করেছিলো ওর বিবাহিত জীবনকে ভেঙ্গে ফেলার কথা। কিন্তু ছেলের কথা চিন্তা করে, বিশেষ করে ওদের পরিবারের কথা চিন্তা করে সেই সাহস দেখানো থেকে বার বারই পিছিয়ে এসেছে সে। যদিও নিজেকে সে বলতো যে সে বাকেরকে ভালবাসে। কিন্তু শুধুমাত্র মা হওয়া ছাড়া আর কখনও সেই ভালবাসার আকার, প্রকৃতি বা উপস্থিতি ওর জীবনে দারুন দারুন কিছু মুহূর্তে এনে দিয়েছে, এই রকম একটা ঘটনাও সে মনে করতে পারছে না।

সাবিহা বরাবরই ওর সমবয়সী মেয়েদের চেয়ে বেশি লম্বা আর দেখতে বেশি সুশ্রী ও আকর্ষণীয়া ছিলো। শরীরের আকৃতির দিক থেকেও সে ছিলো অত্যন্ত কামনাময়ী, আবেদনময়ী। যে কোন ছেলের আকর্ষণের কেন্দ্রবস্তু, সব সময়। ওর স্তনদুটি ওর বয়সী মেয়েদের তুলনায় সব সময় বড় আর ভারী ছিলো, ব্রা ছাড়াও সব সময় উপরের বা সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতো সে দুটি। এই কারণে ওকে খুব ঈর্ষা করতো ওর বান্ধবীরা। লম্বা চুল আর বড় কালো টানা টানা চোখ সাবিহার। শরীরের রঙ শ্যামলা ছেড়ে অনেকটাই ফর্সার দিকে। কিশোরী বয়সে সাবিহার ইচ্ছে ছিলো নাটক বা সিনেমায় অভিনয় করার, কিন্তু পারিবারিক বিধি নিষেধের কারনে সেই পথে যাওয়া হয়ে উঠেনি। কিন্তু ওর চোখে মুখে নাটকের অভিনেত্রীদের মত একটা দুষ্ট চমকানো কাছে টানার মত চমক ছিলো। এখন এই মাঝ বয়সে এসেও সাবিহা শরীরের গঠন ও আকার আকৃতির দিক থেকে ওর বয়সের অন্য ১০০০ টা মেয়ের চেয়ে আলাদা। ভিড়ের মাঝে আলাদা করে চিনে নিতে ভুল হবেনা কারো যে কে সাবিহা।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নিষিদ্ধ দ্বীপ by fer.prog - by saddam052 - 04-04-2019, 10:45 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)