Thread Rating:
  • 7 Vote(s) - 3.14 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
নিষিদ্ধ দ্বীপ by fer.prog
#10
আহসান আর ওর মা আগে ওদের ভাঙ্গা বোট ও ওখানে থাকা অবশিষ্ট সামান্য কিছু মালপত্র তীরে নিরাপদ দুরত্বে টেনে আনলো। এরপরে ছায়ায় বসে চারদিকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো যে এই দ্বীপে কি আছে? এখানে ওরা বেঁচে থাকতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন ঘুরছে দুজনের মনেই। কিন্তু অনেকদিন পরে বিধাতা ওদের প্রতি সত্যিই সুপ্রসন্ন ছিলো, তাই বাকের অল্প কিছু দূরে যেতেই একটা মিষ্টি পানির ঝর্না দেখতে পেলো। সেখান থেকে পানি খেয়ে শরীরে শক্তি করে নিলো, আর মনে মনে চিন্তা করলো যে এই ঝর্নার কাছেই ওদের একটা বাসস্থান তৈরি করতে হবে, কারণ বাসস্থানের জন্যে এটাই উপযুক্ত জায়গা।

কাছেই অল্প কিছু ফল গাছও পেয়ে গেলো বাকের। সেখান থেকে সে দ্রুত চলে এলো ওর স্ত্রী আর ছেলেকে সুসংবাদ দেয়ার জন্যে। সবাই মিলে পানি আর ফল খাওয়ার পর এখন চিন্তা এই দ্বীপে কি আছে, কোন মানুষ বা জনপ্রানী আছে কি না? বা এখান থেকে ওদের উদ্ধার পাওয়ার ব্যবস্থা কিভাবে হবে? পায়ের নিচে মাটির অস্তিত্ব পাওয়ার পর এখন পরবর্তী জীবনের সন্ধান। বাকের স্থির করলো যে আগে ওকে দেখতে হবে এই দ্বীপটাকে ভাল করে। এখানে জীবন ধারন খুব কঠিন হয়ে যাবে ওদের সবার জন্যে। কিন্তু সেই কঠিনের মাপকাঠি ঠিক করার জন্যে আগে পুরো দ্বীপটাকে ঘুরে দেখতে হবে।

ওদের দুজনকে বিশ্রাম করতে রেখে বাকের হাঁটতে শুরু করলো, সে দেখতে পেলো যে পুরো দ্বীপটা বেশ ঘন জঙ্গলে ভর্তি। ওখানে অনেক পশু পাখি আছে, কিন্তু ক্ষতিকর বা ভীতিকর কোন কিছু ওর নজরে এলোনা। পুরো দ্বীপটা লম্বায় ৪ কিলোমিটারের মত হবে আর চওড়ায়ও প্রায় একই সমান। দ্বীপের মাঝামাঝি জায়গায় আরও একটা বড় ঝর্না দেখতে পেলো বাকের। ঝর্নার সামনে অনেকটা পুকুরের মত পানি জমে আছে আর চারপাশে অনেক পাথর দেখতে পেলো। দ্বিপের মাঝে বেশ কয়েকটি পাহাড় আছে। এরমধ্যে দুটি ছোট ছোট আর বাকি গুলি বেশ বড় বড়, তবে মানুষ উঠার মত অনুকূল জায়গা। 

পাহাড় দেখে বাকেরের মনে আশার সঞ্চার হলো যে, এখান থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাবে আর ওদের কাছাকাছি দিয়ে কোন জাহাজ এলে তাকে এই পাহাড়ের চূড়া থেকে সঙ্কেত পাঠানো যাবে। বাকের একটা বড় পাহাড়ে উঠতে শুরু করলো, যেন উঁচু জায়গা থেকে পুরো দ্বীপটাকে আরও ভালো করে দেখে নেয়া যায়। পাহাড়ের চূড়ায় এসে বাকের একটু বিশ্রাম নিলো। চারদিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলো যে এই দ্বীপে ওদের জীবন ধারণের জন্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, জীববৈচিত্রও এখানে বিদ্যমান।

ও যেই দিকে ওর স্ত্রী আর ছেলেকে রেখে এসেছে সেই দিক থেকে বিপরীত দিকে তাকিয়ে দ্বীপের অন্য একটা খোলা কিনার, বালুতট দেখা যায়। সেখানে কিছু বিক্ষিপ্ত কাঠের মত কিছু জিনিষ দেখতে পেলো। বাকেরের মন খুশিতে দুলে উঠলো। সে ওই কালো রেখার মত জিনিষগুলি কি সেটা বুঝার জন্যে দ্রুত পাহাড় থেকে নেমে ওই দিকে অগ্রসর হলো।

আগেই বলেছিলাম যে বিধাতা কেন জানি ওদের উপর এই মুহূর্তে খুব সন্তুষ্ট, তাই তিনি যেন ওদের এই নির্জন দ্বীপে জীবন কাটানোর কিছু উপকরণ নিজ হাতে এনে দিয়েছে। কাছে যেতেই বাকের বুঝতে পারলো যে, এইগুলি ওদের জাহাজেরই কিছু ভাঙ্গা অংশ। যার সাথে বেশ কিছু হাড়ি পাতিল, অল্প কাপড় আর জীবন ধারণের কিছু টুকিটাকি কিন্তু অতি প্রয়োজনীয় জিনিষ রয়েছে। বিশেষ করে অল্প সামান্য কিছু কাপড় পেয়ে তার মন খুশিতে ভরে উঠলো। যদিও এই দুর্গম পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্যে কাপড়ের পরিমাণ অতি সামান্য। কিন্তু একদম উলঙ্গ হয়ে থাকার চেয়ে এই অল্প কিছু কাপড় দিয়ে ওদের নিজেদের লজ্জাস্থান টুকু অন্ততপক্ষে ঢাকা যাবে এটা ভেবে বাকের খুশি হলো। বাকের মাটিতে বসে পরলো খুশিতে, উপরে আকাশের দিকে তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তাকে নিজের মন থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলো। এই অল্প কিছু জিনিষ ওদের জন্যে যে কি মহামুল্যবান এই মুহূর্তে, সেটা মনে করে খুশিতে তার মনটা ভরে উঠলো। 

মনে আর শরীরে যেন নতুন করে বাঁচার লড়াইয়ে নামার একটা সাহস আর অনুপ্রেরনা পেলো সে। জাহাজের যেই ভাঙ্গা অংশ পেয়েছে সে, সেগুলি ওদের থাকার জায়গার কাছে টেনে নিয়ে যেতে পারলে কোন রকমের শোয়ার একটা জায়গা তৈরি করা সম্ভব হবে। বাকের প্রথমেই সেই ভেসে আসা জিনিষগুলিকে দ্বীপের একটু উপরে নিয়ে জড়ো করতে শুরু করলো যেখান থেকে সমুদ্রের ঢেউ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। 

একা একা এই কাজে অনেক সময় ব্যয় হয়ে গেলো ওর। এরপরে যেটুকু জিনিস একেবারে হাতে করে নেয়া সম্ভব সেগুলি নিয়ে সে সাবিহা আর আহসানের কাছে রওনা দিলো। ওদেরকে গিয়ে সেই খুশির সংবাদ শুনালো সে। সাবিহা আর আহসানের সাহায্যে সে ধীরে ধীরে সব জিনিষ ওদের থাকার জায়গায় নিয়ে এলো।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: নিষিদ্ধ দ্বীপ by fer.prog - by saddam052 - 04-04-2019, 08:39 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)