Thread Rating:
  • 5 Vote(s) - 3.2 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভ্রমর খাবে মধু [সংগৃহীত]
#2
স্কু থেকে একদৌড়ে বড় মাঠটা পার করে নদীর একদম কিনারে থাকা জঙ্গলে ঢুকে পড়ে নরেন। হাঁফাতে থাকে এতোপথ দৌড়ানোর ফলে। কিন্তু মাথা থেকে কিছুতেই সেই দৃশ্যটা সরাতে পারছে না। কি দেখলো সে আজ ....

 
***
 
মূল ঘটনা থেকে অনেক বছর আগে ফিরে যাচ্ছি ....
 
বাংলার প্রচণ্ড প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব শ্রী ব্রজ গোপাল চাটুজ্যে তাঁর বিশাল প্রাসাদোপম বাড়ীতে লর্ড টমাস হেনরীকে আমন্ত্রণ জানালেন উদ্দ্যেশ্য ছিল নিজের প্রভাবকে আরোও শক্তিশালী করার তাই যেদিন লর্ড ব্রজবাবুর বাড়ীতে পা দিলেন আনন্দে গদগদ হয়ে তিনি কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না
 
প্রথমেই উনার বড় স্ত্রী সরিতাদেবীকে ডেকে লর্ড সাহেবের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন লর্ড তাঁর সাথে আসা অপর ব্যাক্তির পরিচয় দিলেন - হি ইজ মেহমুদ খাঁ, মাই বেস্ট ফ্রেন্ড
 
সরিতাদেবী করজোড়ে নমস্কার করলেন তারপর ব্রজবাবু তাঁর ছোট স্ত্রী আরতিদেবীকেও ডেকে ওদের সাথে পরিচয় করালেন
 
পরিচয়পর্ব শেষ হওয়ার পর তাঁদেরকে অতিথিশালায় বসানো হল লর্ড ব্রজবাবুকে জানালেন তাঁরা এক সপ্তাহের বেশি থাকতে পারবেন না ব্রজবাবু ইংলিশ জানেন না তাই মেহমুদ আধাভাঙ্গা হিন্দি ও বাংলামিশ্রিত ভাষায় বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন
 
স্নানটান সেরে ভরপেট খাওয়া দাওয়ার পর লর্ড ও মেহমুদ অতিথিশালায় পাশাপাশি দুই বিছানায় শুয়ে গল্প করছিলেন যদিও ইংলিশে কিন্তু তার বাংলা অনুবাদ নিম্নরূপ-
 
লর্ড - কি ভাবছিস?
 
মেহমুদ - ব্রজবাবুর স্ত্রীদের কথা
 
লর্ড - কী কথা?
 
মেহমুদ - চেহারাগুলো কি সুন্দর
 
লর্ড - সত্যি, অসাধারণ সুন্দরী আমাদের মেয়েরা শুধু ফর্শাই, কমনীয়তা নাই
 
মেহমুদ - বেশভূষা ও অলঙ্কারগুলো দেখে সত্যিই নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম
 
লর্ড - কি করা যাবে? যার যা ভাগ্য
 
মেহমুদ - ভাগ্য আমাদের হাতের মুঠোয় আনতে সময় লাগবে না
 
লর্ড - কী ভাবে?
 
মেহমুদ -বলছি
 
মেহমুদ - ব্রজবাবু হচ্ছেন এখানকার জমিদার, একরকম রাজা বললেই চলে কিন্তু আপনি হচ্ছেন উনারও বড়, মানে রাজার রাজা উনি নিশ্চয় চাইবেন আপনাকে যেনতেন উপায়ে খুশী রাখতে আর এখানেই আপনার ভাগ্য বদলের সুযোগ পরিকল্পনা মতে উনাকে ব্যবহার করতে হবে
 
লর্ড - তোমার মাথা তো দারুণ, কি চতুর তুমি এইজন্যই তোমাকে আমার ভাল লাগে একটা উপায় বের করতেই হবে
 
গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লেন দুজনেই
 
 
ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলেন ব্রজবাবু বসে আছেন
 
ব্রজবাবু - লর্ড সাহেব ঘুম কেমন হল?
 
মেহমুদ লর্ডকে বোঝালেন ইংলিশে
 
লর্ড - ভালো, কিন্তু আমার বউকে সপ্নে দেখলাম তাই মনটা খারাপ লাগছে অনেকদিন হয়ে গেছে তাঁকে পাইনি
 
মেহমুদ আধভাঙ্গা বাংলায় বোঝালেন
 
ব্রজবাবু - বুঝতে পারছি, পরিবার থেকে দূরে থাকা সত্যিই কষ্টকর
 
লর্ড - ছাড়ুন এইসব, আপনার বাচ্চাকাচ্চা কয়জন? দেখালেন না একবার?
 
এইকথায় মুহূর্তের মধ্যে ব্রজবাবুর হাসিহাসি মুখখানা বদলে গেল একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন - আমি নিঃসন্তান
 
মেহমুদ লর্ডকে বোঝালেন
 
লর্ড ও মেহমুদ আশ্চর্য হয়ে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন
 
ব্রজবাবু বলে চললেন - "জীবনে অনেক কষ্ট করে তবে আজকের এই জায়গায় পৌঁছেছি, আমার বাবা একজন কৃষকছিলেন আমি একমাত্র সন্তান, আমার যখন বারো বছর বয়েস তখনি মাতৃবিয়োগ হয় তার তিন বছর অর্থাৎ পনেরো বছর বয়েসে ঘটে পিতৃবিয়োগ সংসারে তখন আমি একা, মাথায় নাই পরিপক্ক বুদ্ধি জমিজমা বেদখল হওয়ার ভয়ে সব বিক্রি করে দেই
 
তারপর সেই টাকাপয়সা লুকিয়ে ফেলি গোপন জায়গায় আর পড়াশোনা করতে থাকি বেশ কিছুদিন পর হঠাৎতখনকার জমিদার মশায় আমাকে তাঁর বাড়ীতে ডেকে পাঠিয়ে বললেন উনার একজন নায়েবের দরকার, আমি রাজী কিনা
 
আমি আনন্দে আটখানা
 
শুরু হল আমার সফলতার যাত্রা"
 
ব্রজবাবু একটু দম নিয়ে আবার শুরু করলেন - "প্রায় দশ বছর অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সহিত কঠোর পরিশ্রম করেজমিদারের সবচেয়ে প্রিয়পাত্র হয়ে যাই উনিও আমাকে আমার ন্যায্য পাওনা থেকে অনেক বেশী অর্থ দান করতেন তাই আমার একার সংসারে শুধু জমাই হচ্ছিল, খরচ প্রায় শূণ্য
 
আস্তে আস্তে কম পয়সায় বড় বড় জমি কেনা শুরু করলাম লোক খাটিয়ে ক্ষেত কৃষি হতো সেই জমিতে
 
জমিদারের প্রিয়পাত্র থাকায় প্রভাবশালী হচ্ছিলাম দিন দিন আস্তে আস্তে অর্থশালীও নেশা পেয়ে বসে আরো বড়ো হবার
 
এই নেশায় বুঁদ হয়ে ভুলেই যাই আমার বয়েস কবেই ত্রিশ পেরিয়ে গেছে
 
এইদিকে জমিদার মশায় আমার অবস্থা দেখে হয়তো বা কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি সেই ভয়ে উনার একমাত্র মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লাগলেন
 
কিন্তু তাঁর বয়েস তখন মাত্র চৌদ্দ আমি রাজী হলাম না
 
অগত্যা তিনি আমাকে উনার অর্ধেক জমিদারি যৌতুক বা পণ হিসেবে দিবেন বলে ঘোষণা করলেন
 
এইবার আর রাজী না হয়ে পারলাম না
 
অর্থ লোভে বিয়ে তো করলাম কিন্তু আরো অর্থ ও প্রতিপত্তির পেছনে ছুটে সন্তান কামনার চিন্তা মাথায় এল আরো দুই তিন বছর পর
 
অর্থাৎ আমার যখন পয়ত্রিশ আর সরিতার ষোল
 
কিন্তু কিছুতেই সন্তান হল না অনেক ডাক্তার বৈদ্য কবিরাজ দেখালাম, কিছুতেই কিছু হল না
 
মন ভাঙ্গতে শুরু হল এই দেখে সরিতা নিজে উদ্যোগ নিয়ে সুন্দরী আরতিকে আমার সাথে বিয়ে দিলো
 
তখন আমার বয়েস চল্লিশ, সরিতার একুশ আর আরতির ষোল কিন্ত আবারো ব্যর্থ সন্তান উৎপাদনে আর আজ অবধি নিঃসন্তান"
 
বলেই দুইহাতে মুখ ঢেকে বসে রইলেন
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভ্রমর খাবে মধু [সংগৃহীত] - by ray.rowdy - 17-04-2021, 05:44 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)