16-04-2021, 06:51 PM
(15-04-2021, 12:54 PM)ddey333 Wrote: এই মাঘেই বিয়ে হয়ে কলকাতায় এসেছে দিতিপ্রিয়া। সত্যি বলতে কি, এই টোনাটুনির সংসার বেশ ভালোই লাগছে ওর। একটাই সমস্যা, বরাবর বাড়িতে থাকার অভ্যাস, আগরতলায় ওদের জয়েন্ট ফ্যামিলি। আর এখানে এসে একটা ছোট্ট দুকামরার ফ্ল্যাট। অরূপ বেরিয়ে যাবার পর সময় আর কাটতেই চায় না ওর।
আগে শুনেছিল, কলকাতার, বিশেষত, ফ্ল্যাটের লোকজন কেউ কারো সাথে মেশে না। এখানে এসে দেখলো সেরকম নয় ব্যাপার টা। প্রতিবেশীদের মধ্যে যাতায়াত আছে মোটামুটি। একটু একটু করে আলাপ ও হচ্ছিল সবার সাথে। ওদের ফ্ল্যাটে এক একটা ফ্লোরে তিনটে করে ফ্ল্যাট। ওদের ফ্লোরে একটি ফ্ল্যাটে একটা পাঞ্জাবি পরিবার থাকে আর অন্যটিতে একজন দাদা থাকেন, আগে কিছু একটা চাকরি করতেন, এখন আর্লি রিটায়ারমেন্ট নিয়ে একটি গবেষনামূলক বই লিখছেন। গবেষনামূলক বই শুনে আগ্রহী হয়েছিল ও। ভাল করে আলাপ জমানোর ও ইচ্ছে ছিল। কিন্তু দাদা ব্যাচেলার ভেবে আর যায় নি ওনার বাড়ি। তবে কোন কারনে সিঁড়িতে বা লিফটে দেখা হলে সৌজন্যের হাসি আর অল্প বাক বিনিময় হয়েছে। অবশ্য তিনতলার কৃষ্ণা কাকিমাদের সাথে ভালোই আলাপ হয়েছে দিতির। বিকেলের দিকে মাঝে মাঝেই ওনার বাড়ি চলে যায় দিতি। আর সারা দুপুর নিজের বেডরুমের বক্স জানলায় বসে থাকে।রোজই দুপুরে জানলায় বসে দিতি দেখে সামনের বাড়ির দাদা কোথায় যেন বেড়িয়ে যান। আর প্রায় এক ই সময়ে...দুপুর আড়াইটে থেকে তিনটের মধ্যে। একদিন কাকিমাকে জিজ্ঞেস করায় উনি চোখ ঘুরিয়ে হেসে বলেছিলেন 'দেখো কোথায় যায়...একা মানুষ...' শুনে কেমন গা রি রি করে উঠেছিল ওর। তবে অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলবে না, তাও আবার নতুন জায়গায়, তাই চুপ করে ছিল ও।এই কদিন হলো লক ডাউন হয়ে গেছে সারা দেশ। চিন্তার মধ্যেও অরূপ আছে সবসময় কাছে, যতই ওয়ার্ক ফ্রম হোম চলুক না কেন, বরের মুখ দেখতে পাচ্ছে সবসময়, এতেই দিতি খুশ!আজ অরূপের একটা দরকারি কন কল আছে, তাই ড্রয়িংরুমে বসে গেছে ও। লাঞ্চ শেষ করে নিজের বক্স জানলায় বসল দিতি। মাত্র দুজনের সংসার, তাও আড়াইটে বেজেই গেল সব কাজ সারতে সারতে।আয়েশ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, দেখে সামনের বাড়ির দাদা হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে। দেখে খুব অবাক হলো ও। সারা দেশ তালা বন্ধ, সরকার থেকে বারবার করে ঘরে থাকতে বলছে, আর এই অবস্থাতেও উনি...ছিঃ!হঠাৎ কি হয়ে গেল, মাথাটা গরম হয়ে গেল দিতির। কলেজের সেই ডিবেট চ্যাম্পিয়ন জেগে উঠল ওর মধ্যে। এই লোকটার কোনো রাইট নেই এই ভাবে বেরোনোর, কার্ফু অস্বীকার করে। সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি নেই একটা?এক নজর অরূপের দিকে তাকিয়ে, কুর্তির ওপর একটা স্কার্ফ জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ল ও। আজ দেখে নেবে ও গবেষক কে!খানিকটা যেতেই, কমপ্লেক্সের গেটের কাছেই দেখা মিলল তাঁর। কেমন হাঁটু গেড়ে বসে আছে! পড়ে গেল নাকি! হলে বেশ হবে! যেমন কর্ম, তেমন ফল!দেখার জন্য এগিয়ে এসে দেখে সামনে একটা বড় কুকুর, আর চারটে ছোট ছোট ছানা। আর উনি একটা খবরের কাগজ পেতে তাতে ভাত রাখছেন। আর কুকুর গুলোকে বলছেন 'নে তোরা খেয়ে নে, আমি বাকিদের খাবার টা চট করে দিয়ে আসি। আবার কাল আসব...' কুকুর গুলো চুপ করে খাচ্ছে। দেখেই মনে হচ্ছে ওরা এভাবে রোজ খাবার খেতে অভ্যস্ত।তারপর ওদের মাথায় হাত দিয়ে একটু আদর করে গলায় রাখা মাস্ক টা পরে বেরিয়ে গেলেন গেট দিয়ে। একটু এগিয়ে দিতি দেখে, রাস্তার ওই ফুটে কটা কুকুরকে খেতে দিচ্ছেন উনি।বেচারা কুকুর গুলো! ওরা যে কিছু খেতে পারছে না, দোকান পাট সব বন্ধ...ভাগ্যিস এই দাদা ছিলেন...।কাঠ দুপুরে সব কিছু ভিজে ভিজে লাগছে দিতির। মনে মনে ঠিক করে নিল এবার থেকে সকালে আর রাতে ও একটু খাবার দেবে এদের। মাস্ক পরে বেরোবে, ফিরেই জামা কেচে নেবে নিয়ম মতো। আহা, বেচারারা...আমাদের কত ভালোবাসে...। আর দাদাটার সাথেও ভাব করে নেবে আজই।চোখে জল,তবু মন টা যে কি ভাল লাগছে দিতির এখন...।
লকডাউন শুরু হওয়া থেকে আমার নিজেরটা ছাড়া আরও আটটি সারমেয় আছে যাদেরকে রোজ দুবেলা খাবার দিতে হয় ! আমার বাড়ির গেট ছেরে তারা কোথাও নরেনা !