Thread Rating:
  • 51 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL কিছু কথা ছিল মনে
#65
[Image: 20210322-010036.jpg]


চায়ের কাপটা নিয়ে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ঘরে ঢুকলাম. ঘড়ির দিকে তাকালাম. বিকেল সাড়ে পাঁচটা বাজে. বাইরে ভয়ানক না হলেও বেশ জোরেই বৃষ্টি হচ্ছে. সেই সকাল থেকে শুরু হয়েছে. কি মনে হতে জানলার সামনে এসে পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকালাম. আকাশ কালো করে বৃষ্টি হচ্ছে. দূরের ফ্লাটটা পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা আজ. ওই ফ্ল্যাটের তিনতলায় অংকিতা থাকে. আমার ছাত্রী. বড্ডো মিষ্টি বাচ্চাটা. পড়াশোনায় মন নেই খালি দুস্টুমি. ক্লাসে যা বদমাইশি করে... বকতে যাই কিন্তু কান ধরে এমন করে সরি ম্যাম বলে একটা হাসি দেয়.... আর বকতেও পারিনা. মাঝে মাঝে আসে আমার কাছে পড়ার ব্যাপারে. ওর মা-ই নিয়ে আসে. ওকে পড়া বুঝিয়ে দি.


চায়ে প্রথম চুমুক দিয়ে নিচে তাকালাম. নিচের দোকান গুলো সব বন্ধ. রাস্তা পুরো ফাঁকা. না...... ঐযে দুজন দৌড়ে ওদিক রাস্তা পার করে বড়ো দোকানটার শেডের নিচে গিয়ে আশ্রয় নিলো. ঠিক এরকমই একদিন আমি আর সেও গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম একটা দোকানের নিচে. বুধবার ছিল সেদিন. কোথায় যেন গেছিলাম আমরা? হ্যা মনে পড়েছে.....শপিং. বলেছিলাম আজ বেরোবো না... কিন্তু তার কথার ওপর আমার কথা চলে? তাই বেরোতেই হয়েছিল. ফেরার সময়ই হটাৎ ঝমঝমিয়ে নেমেছিল এরকমই বৃষ্টি . আমাদেরকেও বাইক থামিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল একটি বন্ধ দোকানের সামনে. খুব বকেছিলাম ওকে.... আর সে আমার সব কথা শুনে খালি দুস্টু হাসি হাসছিল. পাগল একটা. আর তারপরেই হটাৎ আমার বকাবকির মাঝেই সে আমার ঠোঁটে........

দ্বিতীয় চুমুক দিলাম কাপে. একটু বেশি চিনি দিয়ে ফেলেছি আজ. আজকে ভাগ্গিস রবিবার নইলে আমার কলেজ মাটি হতো আজ. চম্পাদিও আর আজকে আসতে পারবেনা..... সকালে যদিও ঘর পরিষ্কার করে গেছে. চোখ গেল পাশের ছোট মাঠটায়. দেখেছো কান্ড!! এই ভয়ানক বৃষ্টিতেও ছেলে গুলো ফুটবল খেলছে.. উফফফ... পারেও বটে এরা. তবে এটাও ঠিক যে যাই হোক.... ওদের প্রত্যেকের মুখে হাসি. যেন কোনোকিছুর পরোয়া না করেই খেলে চলেছে ওরা. এরকম খেলতে গিয়েই তো ওর একবার পায়ে প্রচন্ড জোর লেগেছিলো. তিনদিন বাড়ি থেকে বেরোতে পারেনি ও.  ফোনে কি বকাটাই না বলেছিলাম ওকে. ফোনের ওপারের মানুষটা শুধু আমার রাগের কথা গুলোই সেদিন শুনেছিল... কিন্তু জানতেও পারেনি এপারের মানুষটা ওকে বকছিল ঠিকই কিন্তু চোখের কোনে সামান্য জল ছিল তার.

কি সুন্দর একটা হাওয়া ঢুকে এলো ঘরে খোলা জানলা দিয়ে. আমার শরীর স্পর্শ করে ভেতরে ঢুকে গেলো. আমার খোলা চুল এলোমেলো করে দিয়ে গেল অস্থির হাওয়াটা. কিছু কি মনে করিয়ে দিয়ে গেলো? হ্যা...... এইভাবেই সেওতো আমার চুলে ফুঁ দিতো আর আমি যেই রাগী চোখে তাকাতাম খিলখিল করে হাসতো দুস্টুটা. ওর ওই হাসি দেখে ইচ্ছে করে তখুনি কাছে টেনে দুই গালে আমার ঠোঁট দিয়ে চুম্বন এঁকে দি...ওর ওই নাকে নিজের নাকটা ঘষে দি... কিন্তু নিজেকে সামলে নিতাম. বড্ডো ভাল লাগতো ওর ওই দুস্টুমি.

ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে. কি মনে হতে জানলা দিয়ে দান হাতটা বাইরে বার করে দিলাম. হাতটা ভিজে যেতে লাগলো ঠান্ডা জলের অসংখ্য ফোঁটায়. ছোটবেলায় এরকম করতাম...আরও কতকি.. তারপর বড়ো হলাম যখন তখন ছেলেমানুষি গুলো যেন হারিয়ে গেছিল. কিন্তু কিছুই হারিয়ে যায়না..... আমাদের মধ্যেকার সেই ছোট্ট বাচ্চাটা কোথাও লুকিয়ে থাকে. সময় মতো কখনো বেরিয়ে আসে সে. আগে না বুঝলেও আজ বুঝি. অনুভব করি সেই ছোট্ট রুমকিকে..... সেই রুমকি যে বাবা মায়ের আদরের মামনি ছিল........ তাই কি? ছিলাম কি? তাহলে কেন মা সেদিন বাবাকে বলসেছিলো একটা ছেলে হলে কত ভালো হতো আমাদের বলো?মেয়ে তো একদিন বড়ো হয়ে চলে যাবে.  আর বাবা মাকে কাছে টেনে মায়ের পিঠে হাত বুলিয়ে বলেছিলো - হ্যা...হয়তো ভালোই হতো... তোমার তো খুব ইচ্ছে ছিল ছেলের তাইনা? মা বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলো - হুমম খুব... 

কেন বলেছিলো বাবা? কেন মা বলেছিলো এরকম? ওরা আজও জানেনা যে আমি জানি সেদিনের সেই কথা. ওনারা ভেবেছিল আমি বোধহয় ঘুমের দেশে হারিয়ে গেছি. আর তারপরে বাবা মায়ের সেই অন্তরঙ্গ...... না থাক.... সেসব নাই বা মনে করলাম.

আবারো চুমুক দিলাম কাপে. সত্যি.... মানুষ বড়ো আজব. একদিন যা দেখে বুক ঢিপ ঢিপ করতো....একটা কৌতূহল ও ভয় কাজ করতো..... তা যে নিজের সাথেই একদিন হবে তা কে জানতো? না ভুল বললাম..... জানতাম তো.... যত বড়ো হয়েছি, ততো বুঝেছি যা ঐদিন বাবা মা করছিলো তা একদিন আমাকেও করতে হবে..... হবেই. জেনেও হয়তো না জানার ভান করতাম, বা বলা উচিত জেনেও ভুলে ছিলাম. আসলে অনেক কিছু আমরা এই বুকে জমিয়ে রাখি. জেনেও ভুলে থাকতে চাই. কিন্তু যতই তাকে লুকিয়ে রাখতে চাই... একদিন তো তার সম্মুখীন হতেই হয়. আমাকেও হয়েছিল. আমার আর ওর সেই প্রথম সুখ . সেদিন আমি বুঝেছিলাম শরীরের চাহিদা, পেয়েছিলাম ভালোবাসার স্বাদ, প্রতিটা মুহুর্ত উপভোগ করেছিলাম আমি . বুঝেছিলাম এই সুখের জন্য পুরুষ নারী কেন এতো পাগল. হাতের নাগালে থাকা স্মার্টফোনের ৬ইঞ্চি স্ক্রিনে এইসব চোখ দিয়ে দেখা আর নিজে অনুভব করার মধ্যে পার্থক্য কতটা সেদিন বুঝেছিলাম. ওর প্রতিটা চুম্বন আমাকে  আরও পাগল করে তুলেছিল সেদিন. সেদিন আমি পূর্ণিতা পেয়েছিলাম. মেয়ে থেকে নারী হয়ে উঠেছিলাম হয়তো সেদিন.

আজও মনে পড়ে... সেদিন বাড়ি ফিরে অনেক্ষন আয়নায় নিজেকে দেখিনি. বিনা কারণেই সেদিন আয়নায় নিজের প্রতিফলন দেখতে চাইছিলাম না. লজ্জা? কে জানে... হবে হয়তো. 

হটাৎ একটা বাজ পড়লো. জোরে আওয়াজ হলোনা.  হয়তো অনেক দূরে কোথাও. আগে এইতেই জানলা বন্ধ করে কানে আঙ্গুল দিয়ে বসে থাকতাম.... আর আজ.... একটুও ভয় লাগলোনা. এরকম কত বাজ পড়তে দেখেছি নিজের ব্যাক্তিগত জীবনে তার সামনে এটা আর কি?

জীবন..... ভারী অদ্ভুত.... খুবই পাশবিক. কখনো এতো সুখ দিয়ে ভরিয়ে দেয় যে দুহাতও কম পড়ে যায় আবার কখনো এতো জোর ধাক্কা দেয় যে ঘুম ভেঙে উঠে বসতে হয়. আচ্ছা কেন এই ঘুম ভেঙে যায়? যদি সারাজীবন ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা যেত. একটা অবাস্তব মিথ্যে স্বপ্ন. তাও তো সেই মিথ্যেতে সুখ ছিল. জীবন খাতার প্রতি পাতার যদি হিসেব করি তাতে হয়তো দেখবো সুখের পাল্লা ভারী... হ্যা সংখ্যায় সুখের পাল্লা ভারী......... কিন্তু দুখঃ জীবনে কম পরিমানে এলেও তার প্রভাব বড়োই কষ্ট দিয়েছে. সুখকে টক্কর দিয়েছে প্রতিবার.

সুখের অনেক মুহুর্ত আছে. যেমন ছোটবেলা, বাবা মায়ের সাথে কাটানো সময়, ঐযে ক্লাসে প্রথম বন্ধু সুচিস্মিতার সাথে বন্ধুত্ব. সেই ছোট্টবেলার বন্ধুত্ব আজও একই রকম আছে, প্রথম কাশ্মীর ভ্রমণ..... নিজের চোখে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ, সেইবার যখন পুরো ক্লাসে আমি প্রথম হয়েছিলাম.... মিথ্যা বলবোনা.. কোথাও যেন সামান্য অহংকার ওই মুহূর্তে এসেছিলো, আর........... কলেজে ওর সাথে পরিচয়.
পুরো ফিল্মি কায়দায় প্রথম ধাক্কা আর ওর সেই ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকা... হাসি পায় ওই মুখটা ভাবলে আজও. তবে ওই মুখে হয়তো কিছু ব্যাপার ছিল যে আমিও নিজেকে বেঁধে রাখতে পারিনি. সেই প্রেম নামক মায়াজালে ফাঁসতেই হয়েছিল.

চায় আবার চুমুক দিলাম. বর্মন সাহেব ঠিকই গেয়ে গেছিলেন- দিনে কাজ, রাতে ঘুম কেড়ে নেবে এই পিরিতি...  আমারও তো তাই হয়েছিল. পড়াশুনা মাথায় উঠেছিল. নতুন প্রেমের স্বাদেই ডুবেছিলাম তখন. কিন্তু যখন প্রথমবার আমার অবনতি হয়েছিল...... মা হয়তো কিছু সন্দেহ করেছিল মনেহয়. আজও মনে পড়ে. আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলো মা - রুমি মা... জীবনে অনেক কিছু দেখবি, শিখবি বুঝবি... কি বা বয়স তোর? কিন্তু এখনই একটা কথা জেনে রাখ... জীবনে পড়াশুনার প্রয়োজন খুবই, নিজেকে সত্যিকারের মানুষ তৈরী করতে শিক্ষার প্রয়োজন মা, নিজেকে সাবলম্বী করতে এই পড়াশুনার গুরুত্ব অপরিসীম. এই সময় নানা  রকম প্রলোভন আসবে তোর সামনে, কিন্তু তোর সবথেকে বড়ো চ্যালেঞ্জ হল এই প্রলোভনকে দূরে ঠেলে নিজের লক্ষে এগিয়ে যাওয়া. নিজের লক্ষে পৌঁছে পেছন ফিরে আপনজনের যখন হাসি মুখ গুলো দেখবি.... দেখবি একটা গর্ব হবে নিজের ওপর. তোকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন মা....তাই এমন কিছু করিসনা যাতে আমাদের মাথা নিচে নেমে যায়.

সত্যি বলছি... সেদিন মাকে জড়িয়ে বলতে ইচ্ছে করছিল- না মা  না.... তোমাদের মেয়ে কোনোদিন তোমাদের মাথা নিচু হতে দেবেনা.... তোমাদের যে সে খুব ভালোবাসে মা.

আবার চুমুক দিলাম..... হটাৎ বৃষ্টির বেগটা যেন আরও বেড়ে গেল. সেদিনের পর থেকে আবার সেই আগের সিরিয়াস ছাত্রী হয়ে গেছিলাম আমি. নিজের চারপাশে একটা কঠিন দেয়াল তৈরী করে নিয়েছিলাম.... সেই দেয়াল এতটাই কঠিন ছিল যে ও সেটা টপকাতে পারেনি. অবাক হয়ে দেখতো সে আমাকে তখন. হয়তো ভাবতো.... এই কি সেই মেয়ে যাকে সে ভালোবেসেছিলো? হয়তো ও ভাবতো কত স্বার্থপর আমি.... কিন্তু ওই কঠিন দেয়াল ভেদ করে সেও হয়তো দেখতে পেতোনা... সেই মেয়েটার চোখের জল. যেটাকে প্রতি মুহূর্তে মুছে সে নিজের লক্ষে পৌঁছানোর রাস্তায় একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে.

সেবার পরীক্ষার সময় একমনে পরীক্ষা দিচ্ছি. ক্লাসের সবাই সেই কাজেই ব্যাস্ত. সুদীপ্তা ম্যাম এদিক থেকে ওদিক হাটছেন. কি কারণে একবার লেখা থামিয়ে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে চোখ পড়লো দূরে বসে ছেলেটার দিকে. সে একটা অদ্ভুত নয়নে আমার দিকেই তাকিয়ে. ওর চোখে চোখ রাখতে পারিনি, সরিয়ে নিয়েছিলাম. আমার খুব কষ্ট হতো, নিজের ওপর রাগ হতো... মনে হতো একি করছি আমি? কেন কষ্ট দিচ্ছি ছেলেটাকে? ওর কি দোষ? এইভাবে তো ও নিজের লক্ষ্য থেকে হারিয়ে যাবে... ওরও তো ভবিষ্যত আছে.

একদিন সকলের আড়ালে ওর হাত টেনে তিনতলার সিঁড়ির কাছে নিয়ে গেলাম ওকে. কঠিন চাহুনিতে রাগী চোখে বোঝাতে লাগলাম আমাকে ভুলে যেতে. নিজেকে ওর কাছে খলনায়িকা হিসেবে প্রতিস্থাপন করে ওকে বলতে লাগলাম এসব যা আমরা করেছি সব ভুল, আমি এসব থেকে বেরিয়ে এসেছি... আমি আর এই সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবোনা. আমিই জানি কি অবস্থা ছিল আমার ওই মুহূর্তে. কোনো রকমে নিজেকে সামলে ওকে বলেছিলাম আমায় ভুলে যেতে. আর যেন আমার কাছে আসার চেষ্টা না করে. আমার কথা চুপচাপ মন দিয়ে শুনছিলো. ওর ঠোঁটে একটা কেমন হাসি ছিল. বিদ্রুপর হাসি? কে জানে? কিন্তু আমার কথার মাঝেই যে হটাৎ ছেলেটা আমায় জড়িয়ে ধরবে ভাবতেও পারিনি. আমার কানের কাছে মুখ এনে বলেছিলো সে - পালিয়ে যেতে দেবোনা তোকে আমি.... তুই আমার.

ব্যাস...  সব গোলমাল হয়ে গেছিল. সেই রাগী বদমেজাজি মেয়েটা  হেরে গেছিলো ছেলেটার কাছে. হয়তো এইজন্যই হেরে গেছিলো সে কারণ সেই মেয়েটা যে ভেতর থেকে বদমেজাজি রাগী একটুও ছিলোনা. সবই তো অভিনয় ছিল. নিজের হাতে গড়ে তোলা কঠিন দেয়াল হুড়মুড় করে ভেঙে গেছিল সেদিন এক পলকে.

চায় চুমুক দিলাম. হেসে উঠলাম. যতই করো বাহানা.... পিরিতি কাঁঠালের আঠা..... লাগলে পরে যে ছাড়েনা. আমাকেও ছাড়েনি.

তবে এবারে আগের থেকে অনেক সামলে নিয়েছিলাম নিজেকে. ভালোবাসা ও পড়াশুনা দুটোকেই একসাথে নিয়ে চলছিলাম.  না.... মোটেও কঠিন কাজ না কিন্তু... তাহলে আগে কেন পারিনি সামলে চলতে? হয়তো জীবনের দারিপাল্লার একদিকে ভার বেশি দিয়ে দিয়েছিলাম তখন.

কররর করর করাত!! শব্দে বেশ জোরে একটা বাজ পড়লো. হাসি পেলো আমার নিজেরই.  আগে হলে ও মা গো, বাবাগো বলে চিল্লিয়ে বাড়ি মাথায় তুলতাম. কিন্তু এখন.... ঐযে আগেই বললাম সেই আমি নই এই আমি. পাল্টে গেছি.... পাল্টাতে হয়েছে..... সবাইকেই পাল্টে যেতে হয়... পাল্টে যায় একদিন সবাই. এটাই নাকি নিয়ম.

সেও তো একদিন পাল্টে গেছিলো. সেই চঞ্চল দুস্টু ছেলেটা একদিন পাল্টে পুরুষ হয়ে উঠেছিল. হয়ে উঠেছিল সফল ব্যাবসায়ী. ওর সাফল্যে ওর থেকেও বেশি হয়তো আমিই খুশি হয়েছিলাম. সেই দুস্টু বদমাইশ কলেজের ছেলেটা আজ সফল জীবনে. সফল হবার পথে হাঁটতে হাঁটতে পাশে টেনে নিয়েছিল আমায়. আমি হয়ে উঠলাম তার চিরজীবনের সঙ্গিনী.

না..... সেদিন আর বাবা মা বাঁধা দেয়নি. মেয়ের ভবিষ্যত সুরক্ষিত দেখেই বোধহয়. আমিও নিজের মতো কর্ম জীবনে পা দিলাম. বেশ ভালোই তো সব চলছিল. তাহলে.......একদিন কি হলো? আবার সব পাল্টে গেলো কেন?

ওহ.. হ্যা.... পরিবর্তনই তো নিয়ম তাইনা? তাই সেই নিয়মের সম্মান বজায় রেখেই সেও আবার পাল্টে গেলো.  নিজের সামনে সেই আগের চেনা মানুষটাকে পাল্টে যেতে দেখলাম. সেই আগের মতো কিছুই যেন রইলোনা. আসলে জীবনে একটু বেশিই সফল হয়ে গেছিলো সে. সফল হতে গেলে অনেক কিছুই করতে হয়, অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়. অনেক কষ্ট করতে হয়. নিজেকে কখনো পাল্টে ফেলতেও হয়. ও এই সবকটা মন দিয়ে পালন করেছিল. ওর চেষ্টা,কষ্ট আমি নিজের চোখে দেখেছি. দেখেছি ওর  পরিশ্রম. আর সফলতার এক একটা সিঁড়িতে পা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া.

আর এসবের মাঝে বুঝতেও পারিনি ও এতটাই এগিয়ে গেছে...যে  আমি বোকা মেয়ে কত পেছনে রয়ে গেছি. সফলতার সব পরীক্ষা পাস করে সে আজ সফল. কিন্তু আমি আজ অসফল. সফলতার যুদ্ধে আমি আমার সেই কলেজের চঞ্চল বন্ধু ও প্রেমিককে আজ হারিয়ে ফেলেছি. হারিয়ে ফেলেছি তার ছেলেমানুষি, তার বন্ধুত্ব, তার স্পর্শ, তার ভালোবাসা.

আজও মনে আছে আমার তার সেই প্রথম স্পর্শ. সেই স্পর্শে আমি নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছিলাম. তার স্পর্শ করা স্থানে পরে নিজে হাত বুলিয়ে হেসে ফেলেছিলাম. আর আজও মনে আছে তার শেষ স্পর্শ.... সেটাও কোনোদিন ভুলবোনা. আয়নায় নিজের গালে সেই পাঁচ আঙুলের দাগ দেখে সেখানেও হাত বুলিয়ে ছিলাম.

দুই স্পর্শের তফাৎ ছিল এই যে প্রথম স্পর্শ ছিল একটি কলেজে পড়া ছেলের যাতে ছিল পবিত্র ভালোবাসা... আর শেষ স্পর্শ ছিল এক সফল ব্যাবসায়ী স্বামীর .

ঐযে বলেছি সফল হতে গেলে অনেক কিছু পাল্টাতে হয়. অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়.... আমিও করেছি. হারিয়েছি আমার সেই প্রেমিককে, হারিয়েছি তার ভালোবাসা, হারিয়েছি তার সংসর্গ, হারিয়েছি সেই কলেজের চঞ্চল দুস্টু ছেলেটাকে, হারিয়েছি তার ছেলেমানুষিকে..... তার বদলে একদিন দেখি আমি ভাগে রয়েছে এক সফল ব্যাস্ত স্বামী, এক মদ্যপ অচেনা মানুষ আর শেষে এক দুশ্চরিত্র পশুকে. এই না হলে সফল পুরুষ!

আমি তাকে কোনোদিন বাঁধা দিইনি. পারিইনি আটকাতে. তার ওই চোখ আমাকে বাধ্য করতো তার সব কথা মেনে নিতে. তাইতো তাকে আটকাতে পারিনি আমার ঠোঁটে প্রথমবার চুমু খাবার সময়, পারিনি আটকাতে আমাকে কাছে টেনে নেবার সময়, পারিনি যখন দুটো শরীর মিলেমিশে এক হয়ে গেছিলো,  দুজনে মিলে এক হয়ে গেছিলাম,  কলেজে রেজাল্ট খারাপ হবার পর নিজের স্বার্থে আলাদা হয়ে যাবার কথা ভেবে মন শক্ত করেও তার একবার জড়িয়ে ধরায় পারিনি আটকাতে নিজেকে. তাকে কষ্ট দিতে মন চায়নি কখনো.

তার প্রথম আবদারেও না করতে পারিনি......  আর শেষেও নয়. এতদিনের সঞ্চিত সুখ দুঃখের স্মৃতিকে সাথে নিয়ে কাগজে সই করে তাকে মুক্ত করে দিয়েছিলাম. কারণ সেই মুহূর্তে যে ব্যাক্তি আমার পাশে শুতো সে আর আমার ছিলোনা... অন্যকারো হয়ে গেছিলো.

সে আজ অন্যকারোর. ভালো থাকুক..... সে ভালো থাকুক. কেন জানি আজও রাগ করতে পারিনা ওর ওপর..... রাগ আসলেই সেই দুস্টু ছেলেটার হাসিভরা মুখটা মনে পরে. আমি তো সেই ছেলেটাকেই ভালোবেসেছিলাম..  এই বর্তমান অচেনা লোকটিকে নয়.

চায় শেষ চুমুক দিলাম. ভালো থেকো...... তুমিই না হয় জীবন যুদ্ধে সফল হলে... আমিই অসফল হয়েই সুখী.

হটাৎ আমার কাপড়ে টান পড়ল. পেছন ঘুরে দেখি আকাশ দাঁড়িয়ে. আমায় বলল - মা...... ভয় করছে... কি জোর আওয়াজ হচ্ছে দেখো!!

আমার ভুল ভাঙল. কে বলল আমি জীবন যুদ্ধে অসফল? এইতো আমার আকাশ আমার কাছে. এর থেকে বড়ো সফলতা আর কি কিছু আছে পৃথিবীতে? 

আমি আকাশকে কোলে তুলে নিয়ে বললাম - ভয় কিসের সোনা? এইতো মা তোমার সাথে... আমি থাকতে ভয়ের কিচ্ছু নেই... এই নাও হাত বাড়াও বাইরে.. দেখো জল পড়ছে কেমন ....

আকাশ জানলা দিয়ে হাত বাড়ালো. ওর হাত জলে ভিজে যেতে লাগল. খিল খিল করে হেসে উঠলো আমার আকাশ. সেই হাসি...একদম সেই কলেজের চঞ্চল ছেলেটার মতো.

আমার আকাশও নিশ্চই জীবনে সফল হবে... কিন্তু এই আকাশের বুকে কোনো কালো মেঘ জমতে দেবোনা.. এই আকাশ হবে ওর মায়ের মতো.


সমাপ্ত
[+] 10 users Like Baban's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কিছু কথা ছিল মনে - My short stories❤ - by Baban - 10-04-2021, 04:38 PM



Users browsing this thread: 17 Guest(s)