10-04-2021, 08:46 AM
(This post was last modified: 24-04-2021, 12:02 AM by modhon. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
রুপান্তরিতা
by nandanadas1975
১
জীবনে অনেক খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়লেও এখনকার মত খারাপ অবস্থায় মনে হয় কোনদিন পড়েছে বলে মনে পড়ছে না বৃন্ত থুড়ি বৃন্তার। তার জন্ম হয়েছিল আজ থেকে ৩১ বছর আগে। বাবা মায়ের অত্যন্ত আদরের ছেলে ছিল সে। খুবই মেধাবি ছাত্র ছিল সে। সেই জন্য সরকারও তাকে সরকারি খরচে ডাক্তারি পড়াতে দ্বিধা করেনি। সে নিজে ডাক্তার। তাই আজকে সব থেকে বেশি মানসিক যন্ত্রণার ব্যাপার। তার জন্ম ২০৮৩ সালে। এখন ২১১৪ সাল। সে কলেজে ভর্তি হয়েছিল তখন সে ১৬ বছরের মাত্র। প্রচণ্ড মেধাবী ছাত্র ছিল সে। আর ছিল বজ্র কঠিন মানসিকতা। সে মাত্র ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। কিন্তু ওইটুকু শরিরেই তার ব্যাক্তিত্ব ছাপিয়ে পড়ত। ছাত্র রাজনীতির অনেক বড় জায়গায় ছিল ও। ওর ব্যক্তিত্বের সামনে মেয়েরা কেন ছেলেরাও ঝুঁকে সম্মান করত ওকে। কারন ওর ছিল যুক্তিবাদী মস্তিস্ক। তার কোন কথার ওপরে কথা বলার সাহস কোন ছাত্র কেন শিক্ষকরাও পেতেন না। সাত বছরের ছাত্র জীবনে মেডিকেল কলেজে পাঁচ বছরই ছিল ছাত্র সভার সভাপতি। এখন হাসপাতালেও সকলে ওকে খুব মান্য করে। সে খুব ভাল একজন ডাক্তারও।
কিন্তু সেটাই সব না। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। তাই ইচ্ছে না থাকলেও অনেক কিছুই মেনে নিতে হয় সময় ও সমাজের প্রয়োজনে। সময়ের নিয়মে দেশের আভ্যন্তরীণ এবং শিক্ষা ব্যবস্থা ও সামাজিক ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। তার কারনও আছে প্রভূত। নির্বিচারে নারী ভ্রুন হত্যা সমাজকে প্রায় নারী বর্জিত করে ফেলেছে বললেই চলে। পুরুষে পুরুষে বিবাহ অনেক দিন পূর্বেই চালু হলেও, তাতে নারী সমস্যার সমাধান হয়নি। জনসংখ্যা কমলেও নারী সংখ্যা এখন প্রতি ১০০ পুরুষে ৪০ জন মাত্র। ভীতিজনক ভাবে কম। যেখানে সংখ্যাটি ১০০ জন পুরুষে ১১০ থেকে ১২০ জন হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাধ্য হয়ে সরকারের টনক নড়ে। সরকার কিছু খুবই অত্যন্ত আপত্তিকর এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়। যদিও উপায় ছিল না সেইগুলি ছাড়া। সেগুলি হল পুরুষ ভ্রুন ও নারী ভ্রুনের অনুপাত, প্রতি তিনটি নারী সন্তান জন্ম দিলে একটি পুরুষ সন্তান জন্ম দিতে পারবে এমন করে বানান হয়েছিল। বা পুরুষ সন্তানের জন্ম যত সংখ্যক কম করতে সরকার বদ্ধপরিকর হয়েছিল। প্রয়োজনে পুরুষ ভ্রুন মেরে ফেলাও হত মাতৃ গহ্বরে। যতদিন না পুরুষ নারীর অনুপাত একটা সম্মানজনক জায়গায় আসে।
কারন আজ থেকে বিশ বছর আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল একজন নারীর সাথে তিন বা চার পুরুষের বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু তাতে দেখা দিল বিশৃঙ্খলা। সমাজে বাস করার মুল স্তম্ভ, শান্তি, সেটাই নষ্ট হতে বসেছিল। অশান্তি বিগ্রহ লেগেই থাকত সমাজের প্রতিটা তলার মানুষের ঘরে। সরকারি ও বেসরকারি চাকুরেদের কাজ করবার ক্ষমতা ও ইচ্ছে দুটোরই অভাব দেখা দিয়েছিল চূড়ান্ত মাত্রায়। কারন নারী না থাকলে সমাজের মেজাজটাই বিগড়ে যায়। নারী তো শুধু সন্তান উৎপাদন করে তাই না। নারী মা, নারী বোন, নারী প্রেমিকা, নারী অনুপ্রেরনা, নারী ভালবাসা। স্বাভাবিক ভাবেই এই মানসিক কারনে দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে এতে বিচিত্র কি। দেশের সামগ্রিক আয় কমে গেছিল গত সরকারের তিন গুন। বাধ্য হয়ে দেশের মানুষ সরকার বদলালো। ততদিনে দেশের ডাক্তারি শাস্ত্র ধন্বন্তরি পর্যায়ে পৌঁছে গেছিল। মানুষের মৃত্যু রোগ জনিত কারনে এখন আর হয়না বললেই চলে। জনসংখ্যা কমে যাবার জন্য সরকার শিক্ষা ব্যাপারটাকে আকাশ ছোঁয়া উচ্চতায় নিয়ে গেছিল। দেশের সব কিছুই ছিল বিনা পয়সায়। সেটা শিক্ষা হোক বা চিকিৎসা, মদ খাওয়া হোক বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ফুর্তি; মানুষের মনে কোন দুঃখ ছিল না। ছিল একটাই সমস্যা সেটা ছিল নারীর অনুপাত অস্বাভাবিক হ্রাস। মনুষ্য জাতির অবলুপ্তির প্রথম ধাপ।
বৃন্ত তখন ছোট। সবে ক্লাস ১০ এ পড়ে। নতুন সরকার এল। গোপনে দেশ ও বিদেশের কিছু বিজ্ঞানি ও ডাক্তার এবং গবেষণাকারীদের নিয়ে একটি বিশেষ সমিতি তৈরি করে পুরুষকে নারীতে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা শুরু হল। কৃত্রিম উপায়, তাও দেশের বিশিষ্ট মহলের ধারনা হয়ে ছিল যে এতে নারী সমস্যার সমাধান হবে। সরকার আসার তিন বছরের মধ্যেই সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হল পরীক্ষার সফলতা। প্রথম পাঁচ বছর সেই বিজ্ঞানির দলকে সন্তান সম্ভবা নারী রুপান্তরনে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। কিন্তু আজকের দিনে সেটা জল ভাত। সরকার প্রাণ খুলে ডাক দিয়েছিল সেই সব পুরুষদের যারা পুরুষ সঙ্গী পছন্দ করে। তাদের মধ্যে ৯৯ ভাগই রূপান্তরিত হয়েছিল নারীতে, এবং তাদের পুরুষরাও খুশি হয়েছিল। কিন্তু এই রকম পুরুষদের সংখ্যা ছিল নগন্য। যারা সেই সময়ে নারীতে রূপান্তরিত হয়েছিল তাদের প্রায় সবাই পরে অস্ত্রপ্রচার করে সন্তান সম্ভবা হয়েছিল। পরের বছরের গণনায় দেখা গেল ৪২ জন নারী হয়েছে প্রতি ১০০ জন পুরুষে। সরকার সামান্য সাফল্য পেয়ে, বেশ মনোযোগ দিল এই রুপান্তরকরনের ব্যাপারটায়। সংসদে একটা বিল পাস করান হল যেটা সমাজের পক্ষে শুভ হল না অশুভ সেটা বিচারের সময় এখনও আসেনি। বিলটা ছিল অনেক বড়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হল।
১) প্রত্যেক পুরুষকেই বিয়ে করতেই হবে ২৪ বছরের মধ্যে সরকারি তত্ত্বাবধানে, সমস্ত সম্ভাব্য খুঁটিনাটি জানিয়ে। বয়স, উচ্চতা, ওজন, শিশ্নের আকার এবং খুঁটিনাটি। নারীর বয়স যেমন ইচ্ছে হতে পারে। সেটা নির্ভর করবে পুরুষ এবং নারীর ওপরে।
২) দু বছরের মধ্যে প্রথম বাচ্চা নিতেই হবে এবং সেটা হবে মেয়ে। এইভাবে আগামি ৮ বছরের মধ্যে তিনটি কন্যা ও সব থেকে বেশি একটি পুত্রের জন্ম দিতে পারবে। কন্যা যত খুশি নিতে পারা যাবে। সেখানে সরকার সেই দম্পতিকে পুরস্কৃত করবে যদি পাঁচের বেশি কন্যা সন্তানের জন্ম দিতে পারা যায়।
৩) যদি দু বছরের মধ্যে বাচ্চা না আসে তবে পুরুষ ও নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা হবে। যদি এখানে নারী সমস্যা যুক্ত হয় তবে কোন সমস্যা নেই। সেই নারীকে ডাক্তারি পরিক্ষায় সন্তান সম্ভবা বানানো হবে সেই পুরুষের বীর্য নিয়েই। কিন্তু যদি পুরুষ সমস্যা যুক্ত হয় তবে সরকার বাধ্য থাকবে সেই বিয়ে ভেঙে দিয়ে নারীকে অন্য পুরুষের সাথে সহবাস করাতে, সেই সব পুরুষদের সাথে যাদের প্রজনন ক্ষমতা প্রমানিত। এবং উপরোক্ত ২ নম্বর নিয়ম বহাল থাকবে সন্তান উৎপাদনের জন্য।
এর পরের যে নিয়মটি সেটা বড়ই মর্মন্তুদ এবং ভয়াবহ।
৪) যে পুরুষ সন্তান উৎপাদনে অক্ষম, সেই সমস্ত পুরুষদের একটা লিস্ট বানানো হবে ও ডাক্তারি পরীক্ষা দ্বারা দেখা হবে নারী গুন কার মধ্যে কতখানি বিদ্যমান। যাদের শরীরে নারী গুন ৩০ শতাংশ বিদ্যমান সেই সব পুরুষদের রূপান্তরিত করা হবে পুর্নাঙ্গ নারীতে এবং এক বছরের মধ্যেই সমস্ত নারী গুন তার মধ্যে বিদ্যমান করিয়ে বিশেষ একটু পদ্ধতির মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হবে পুরুষদের সাথে, সেই নারীর সামাজিক অবস্থার কোন পরিবর্তন না ঘটিয়ে। মানে যে কলেজে পড়াত সেই পড়াবে। বা যে ডাক্তার ছিল সে সেই হাসপাতালেই কাজ করবে সেই একই জায়গায়।
উপরোক্ত চারটি প্রধান নিয়ম ছিল সেই ভয়ঙ্কর বিলে। গত পাঁচ বছরে সরকার বিশেষ লাভ পেয়েছে ওই চারটি নিয়মের জন্য। নারী পুরুষের অনুপাত বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি ১০০ জন পুরুষে ৫৫ জন নারী। খুশি অখুশিতে দোদুল্যমান জাতি আবার ফিরে আসছে সাধারন সামাজিক নিয়মে। মানুষ মেনেই নিয়েছে এই বিধান সরকারের। এতে ফলও পাওয়া গেছে। বৃন্তও ভাবতো এটা ভাল নিয়ম। কারন সে ভাবতেও পারেনি যে সে নিজে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম এক পুরুষ। এখানে এই জাতিটিকে মানে যারা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম পুরুষ, তাদের বিশেষ ভাল চোখে দেখা হয় না। কিন্তু ভগবানের ওপরে হাত কার চলে। তাই তার প্রানাধিক প্রিয়া মলির কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পশুর মত হাত পা বেঁধে। মলির তাতে কোন হেলদোল দেখেনি আর সেটাই বৃন্তকে খুব কষ্ট দেয়। মাঝে মাঝে ভাবে মলি তাকে কোনদিন ভালই বাসেনি। হ্যাঁ অবশ্যই সে যৌন ক্রীড়ায় পারদর্শী নয়। সে বিশেষ লম্বাও নয়। পাঁচ ফুট ৩ ইঞ্চি মাত্র। কিন্তু ছোটোখাটো চেহারার মলির সাথে তার জুড়ি ভালই হয়েছিল। কিন্তু সে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হবে ব্যাপারটা তার কাছে খুব অসম্ভব মনে হয়েছিল। এখন কৃত্রিম উপায়ে বীর্য তৈরি করা যায় যেটা সন্তান উৎপাদনে সক্ষম। কিন্তু সরকারের উদ্দেশ্য তো সেটা নয়। এই রকম বাঁজা পুরুষগুলোর সমাজে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকারটাই কেড়ে নিয়েছে সরকার। সরকারের নারী প্রয়োজন। তাই বৃন্তেরও ভাগ্যে জুটেছে এই সাজা।
প্রথম একমাস ও অজ্ঞান অবস্থাতেই ছিল। যেদিন ওর জ্ঞান ফিরল সেদিন ওর মত অনেকেরই জ্ঞান ফিরেছিল। চারিদিকে কান্না কাটি হাউ মাউ শব্দে কান পাতা দায় হয়েছিল। ও একটা শব্দও করেনি। কাঁদেও নি। মা বাবা এসেছিল ওর কাছে। অপারেশানের সময়ে সারাক্ষনই ছিল ওর মা। ওর মায়ের দিকে চেয়ে ও লজ্জায় অপমানে কোন কথা বলতে পারেনি। ওর মা ওকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠেছিল। বৃন্ত অন্য দিকে ফিরে নিজের ওপরে ঘেন্নায় লজ্জায় অপমানে নিজেকে শেষ করে দেবার সঙ্কল্প করে নিয়েছিল। ঠিক করে চলতে পারছিল না ও। একটা সাদা গাউন পরিয়ে রাখা হয়েছিল ওকে। ও কোন রকমে উঠে বাথরুম গেছিল। মা সাহায্য করতে এলেও ও জোরে সরিয়ে দিয়েছিল তখন। কিন্তু উল্লেখজনক ভাবে ওর দৈহিক শক্তিরও অনেক রুপান্তর ঘটেছিল। ওর দৈহিক শক্তি এমনিই কম ছিল কিন্তু এখন যেন আরও কম অনুভব করল। বাথরুমের বিশাল আয়নায় নিজেকে দেখে ও চিনতেই পারেনি। তার সারা গায়ে ছোট ছোট পুরুষ সুলভ যে লোমগুলো ছিল সেগুলোর অনুপস্থিতি তার সমগ্র শরীরটাকে যেন আকর্ষণীয় করে দিয়েছে একটি সুন্দরী মেয়ের মতই। ও জানে হাতে আর পায়ে কোনদিন তার লোম বেরোবে না আর। গালে হালকা দাড়ি ছিল তার। সেই জায়গায় এখন অদ্ভুত মসৃণ নরম তুলতুলে একটা গাল। ঠোঁট দুটো যেন পাতলা হয়ে গেছে কত। আর লাল টুসটুস করছে। মাথার চুল আগের মতই আছে যেমন তার ছিল। ছোট করে কাটা । হাতের আঙুল যেন একটু লম্বা হয়েছে, আর নরম। নিজেই নিজের হাত অনুভব করে পুরনো অনুভুতির সাথে মিলিয়ে দেখছিল বৃন্ত। চোখ আর ভ্রু যেন নিখুঁত ভাবে আঁকা। গ্রীবা যেন একটু লম্বা। মুখটা গোল ছিল গোলই আছে। একজন সুন্দরী নারীর যা যা লক্ষন থাকা উচিৎ ডাক্তারদের নিপুন হাতের কাজে বৃন্ত এখন একটি সুন্দরী নারী। বুকের কোন অপারেশান এখনও করেনি সেটা বোঝাই যাচ্ছে। নিপিল এখনও ছোট ছোট। সে এমনিতেই ফর্সা। কিন্তু নারী শরীর যেন তার গায়ের রঙটাকে আরও জেল্লা দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে। সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেল হিসি করতে যাবার সময়ে। বসে কোন রকমে হিসি করে নিজেকে দেওয়ালে ধরে রেখে দেওয়ালে মাথা দিয়ে কাঁদতে লাগলো অঝোর ঝরে। কান্নার আওয়াজে এমন চমকে গেল সে। একটি সুমিষ্ট স্বরের নারী কান্নার আওয়াজ যেন বাথরুমের নিস্তব্ধতাকে খান খান করে দিল।
by nandanadas1975
১
জীবনে অনেক খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়লেও এখনকার মত খারাপ অবস্থায় মনে হয় কোনদিন পড়েছে বলে মনে পড়ছে না বৃন্ত থুড়ি বৃন্তার। তার জন্ম হয়েছিল আজ থেকে ৩১ বছর আগে। বাবা মায়ের অত্যন্ত আদরের ছেলে ছিল সে। খুবই মেধাবি ছাত্র ছিল সে। সেই জন্য সরকারও তাকে সরকারি খরচে ডাক্তারি পড়াতে দ্বিধা করেনি। সে নিজে ডাক্তার। তাই আজকে সব থেকে বেশি মানসিক যন্ত্রণার ব্যাপার। তার জন্ম ২০৮৩ সালে। এখন ২১১৪ সাল। সে কলেজে ভর্তি হয়েছিল তখন সে ১৬ বছরের মাত্র। প্রচণ্ড মেধাবী ছাত্র ছিল সে। আর ছিল বজ্র কঠিন মানসিকতা। সে মাত্র ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। কিন্তু ওইটুকু শরিরেই তার ব্যাক্তিত্ব ছাপিয়ে পড়ত। ছাত্র রাজনীতির অনেক বড় জায়গায় ছিল ও। ওর ব্যক্তিত্বের সামনে মেয়েরা কেন ছেলেরাও ঝুঁকে সম্মান করত ওকে। কারন ওর ছিল যুক্তিবাদী মস্তিস্ক। তার কোন কথার ওপরে কথা বলার সাহস কোন ছাত্র কেন শিক্ষকরাও পেতেন না। সাত বছরের ছাত্র জীবনে মেডিকেল কলেজে পাঁচ বছরই ছিল ছাত্র সভার সভাপতি। এখন হাসপাতালেও সকলে ওকে খুব মান্য করে। সে খুব ভাল একজন ডাক্তারও।
কিন্তু সেটাই সব না। মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। তাই ইচ্ছে না থাকলেও অনেক কিছুই মেনে নিতে হয় সময় ও সমাজের প্রয়োজনে। সময়ের নিয়মে দেশের আভ্যন্তরীণ এবং শিক্ষা ব্যবস্থা ও সামাজিক ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন ঘটেছে। তার কারনও আছে প্রভূত। নির্বিচারে নারী ভ্রুন হত্যা সমাজকে প্রায় নারী বর্জিত করে ফেলেছে বললেই চলে। পুরুষে পুরুষে বিবাহ অনেক দিন পূর্বেই চালু হলেও, তাতে নারী সমস্যার সমাধান হয়নি। জনসংখ্যা কমলেও নারী সংখ্যা এখন প্রতি ১০০ পুরুষে ৪০ জন মাত্র। ভীতিজনক ভাবে কম। যেখানে সংখ্যাটি ১০০ জন পুরুষে ১১০ থেকে ১২০ জন হওয়া বাঞ্ছনীয়। বাধ্য হয়ে সরকারের টনক নড়ে। সরকার কিছু খুবই অত্যন্ত আপত্তিকর এবং যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়। যদিও উপায় ছিল না সেইগুলি ছাড়া। সেগুলি হল পুরুষ ভ্রুন ও নারী ভ্রুনের অনুপাত, প্রতি তিনটি নারী সন্তান জন্ম দিলে একটি পুরুষ সন্তান জন্ম দিতে পারবে এমন করে বানান হয়েছিল। বা পুরুষ সন্তানের জন্ম যত সংখ্যক কম করতে সরকার বদ্ধপরিকর হয়েছিল। প্রয়োজনে পুরুষ ভ্রুন মেরে ফেলাও হত মাতৃ গহ্বরে। যতদিন না পুরুষ নারীর অনুপাত একটা সম্মানজনক জায়গায় আসে।
কারন আজ থেকে বিশ বছর আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল একজন নারীর সাথে তিন বা চার পুরুষের বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু তাতে দেখা দিল বিশৃঙ্খলা। সমাজে বাস করার মুল স্তম্ভ, শান্তি, সেটাই নষ্ট হতে বসেছিল। অশান্তি বিগ্রহ লেগেই থাকত সমাজের প্রতিটা তলার মানুষের ঘরে। সরকারি ও বেসরকারি চাকুরেদের কাজ করবার ক্ষমতা ও ইচ্ছে দুটোরই অভাব দেখা দিয়েছিল চূড়ান্ত মাত্রায়। কারন নারী না থাকলে সমাজের মেজাজটাই বিগড়ে যায়। নারী তো শুধু সন্তান উৎপাদন করে তাই না। নারী মা, নারী বোন, নারী প্রেমিকা, নারী অনুপ্রেরনা, নারী ভালবাসা। স্বাভাবিক ভাবেই এই মানসিক কারনে দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে এতে বিচিত্র কি। দেশের সামগ্রিক আয় কমে গেছিল গত সরকারের তিন গুন। বাধ্য হয়ে দেশের মানুষ সরকার বদলালো। ততদিনে দেশের ডাক্তারি শাস্ত্র ধন্বন্তরি পর্যায়ে পৌঁছে গেছিল। মানুষের মৃত্যু রোগ জনিত কারনে এখন আর হয়না বললেই চলে। জনসংখ্যা কমে যাবার জন্য সরকার শিক্ষা ব্যাপারটাকে আকাশ ছোঁয়া উচ্চতায় নিয়ে গেছিল। দেশের সব কিছুই ছিল বিনা পয়সায়। সেটা শিক্ষা হোক বা চিকিৎসা, মদ খাওয়া হোক বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে ফুর্তি; মানুষের মনে কোন দুঃখ ছিল না। ছিল একটাই সমস্যা সেটা ছিল নারীর অনুপাত অস্বাভাবিক হ্রাস। মনুষ্য জাতির অবলুপ্তির প্রথম ধাপ।
বৃন্ত তখন ছোট। সবে ক্লাস ১০ এ পড়ে। নতুন সরকার এল। গোপনে দেশ ও বিদেশের কিছু বিজ্ঞানি ও ডাক্তার এবং গবেষণাকারীদের নিয়ে একটি বিশেষ সমিতি তৈরি করে পুরুষকে নারীতে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা শুরু হল। কৃত্রিম উপায়, তাও দেশের বিশিষ্ট মহলের ধারনা হয়ে ছিল যে এতে নারী সমস্যার সমাধান হবে। সরকার আসার তিন বছরের মধ্যেই সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হল পরীক্ষার সফলতা। প্রথম পাঁচ বছর সেই বিজ্ঞানির দলকে সন্তান সম্ভবা নারী রুপান্তরনে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। কিন্তু আজকের দিনে সেটা জল ভাত। সরকার প্রাণ খুলে ডাক দিয়েছিল সেই সব পুরুষদের যারা পুরুষ সঙ্গী পছন্দ করে। তাদের মধ্যে ৯৯ ভাগই রূপান্তরিত হয়েছিল নারীতে, এবং তাদের পুরুষরাও খুশি হয়েছিল। কিন্তু এই রকম পুরুষদের সংখ্যা ছিল নগন্য। যারা সেই সময়ে নারীতে রূপান্তরিত হয়েছিল তাদের প্রায় সবাই পরে অস্ত্রপ্রচার করে সন্তান সম্ভবা হয়েছিল। পরের বছরের গণনায় দেখা গেল ৪২ জন নারী হয়েছে প্রতি ১০০ জন পুরুষে। সরকার সামান্য সাফল্য পেয়ে, বেশ মনোযোগ দিল এই রুপান্তরকরনের ব্যাপারটায়। সংসদে একটা বিল পাস করান হল যেটা সমাজের পক্ষে শুভ হল না অশুভ সেটা বিচারের সময় এখনও আসেনি। বিলটা ছিল অনেক বড়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হল।
১) প্রত্যেক পুরুষকেই বিয়ে করতেই হবে ২৪ বছরের মধ্যে সরকারি তত্ত্বাবধানে, সমস্ত সম্ভাব্য খুঁটিনাটি জানিয়ে। বয়স, উচ্চতা, ওজন, শিশ্নের আকার এবং খুঁটিনাটি। নারীর বয়স যেমন ইচ্ছে হতে পারে। সেটা নির্ভর করবে পুরুষ এবং নারীর ওপরে।
২) দু বছরের মধ্যে প্রথম বাচ্চা নিতেই হবে এবং সেটা হবে মেয়ে। এইভাবে আগামি ৮ বছরের মধ্যে তিনটি কন্যা ও সব থেকে বেশি একটি পুত্রের জন্ম দিতে পারবে। কন্যা যত খুশি নিতে পারা যাবে। সেখানে সরকার সেই দম্পতিকে পুরস্কৃত করবে যদি পাঁচের বেশি কন্যা সন্তানের জন্ম দিতে পারা যায়।
৩) যদি দু বছরের মধ্যে বাচ্চা না আসে তবে পুরুষ ও নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা হবে। যদি এখানে নারী সমস্যা যুক্ত হয় তবে কোন সমস্যা নেই। সেই নারীকে ডাক্তারি পরিক্ষায় সন্তান সম্ভবা বানানো হবে সেই পুরুষের বীর্য নিয়েই। কিন্তু যদি পুরুষ সমস্যা যুক্ত হয় তবে সরকার বাধ্য থাকবে সেই বিয়ে ভেঙে দিয়ে নারীকে অন্য পুরুষের সাথে সহবাস করাতে, সেই সব পুরুষদের সাথে যাদের প্রজনন ক্ষমতা প্রমানিত। এবং উপরোক্ত ২ নম্বর নিয়ম বহাল থাকবে সন্তান উৎপাদনের জন্য।
এর পরের যে নিয়মটি সেটা বড়ই মর্মন্তুদ এবং ভয়াবহ।
৪) যে পুরুষ সন্তান উৎপাদনে অক্ষম, সেই সমস্ত পুরুষদের একটা লিস্ট বানানো হবে ও ডাক্তারি পরীক্ষা দ্বারা দেখা হবে নারী গুন কার মধ্যে কতখানি বিদ্যমান। যাদের শরীরে নারী গুন ৩০ শতাংশ বিদ্যমান সেই সব পুরুষদের রূপান্তরিত করা হবে পুর্নাঙ্গ নারীতে এবং এক বছরের মধ্যেই সমস্ত নারী গুন তার মধ্যে বিদ্যমান করিয়ে বিশেষ একটু পদ্ধতির মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হবে পুরুষদের সাথে, সেই নারীর সামাজিক অবস্থার কোন পরিবর্তন না ঘটিয়ে। মানে যে কলেজে পড়াত সেই পড়াবে। বা যে ডাক্তার ছিল সে সেই হাসপাতালেই কাজ করবে সেই একই জায়গায়।
উপরোক্ত চারটি প্রধান নিয়ম ছিল সেই ভয়ঙ্কর বিলে। গত পাঁচ বছরে সরকার বিশেষ লাভ পেয়েছে ওই চারটি নিয়মের জন্য। নারী পুরুষের অনুপাত বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি ১০০ জন পুরুষে ৫৫ জন নারী। খুশি অখুশিতে দোদুল্যমান জাতি আবার ফিরে আসছে সাধারন সামাজিক নিয়মে। মানুষ মেনেই নিয়েছে এই বিধান সরকারের। এতে ফলও পাওয়া গেছে। বৃন্তও ভাবতো এটা ভাল নিয়ম। কারন সে ভাবতেও পারেনি যে সে নিজে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম এক পুরুষ। এখানে এই জাতিটিকে মানে যারা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম পুরুষ, তাদের বিশেষ ভাল চোখে দেখা হয় না। কিন্তু ভগবানের ওপরে হাত কার চলে। তাই তার প্রানাধিক প্রিয়া মলির কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পশুর মত হাত পা বেঁধে। মলির তাতে কোন হেলদোল দেখেনি আর সেটাই বৃন্তকে খুব কষ্ট দেয়। মাঝে মাঝে ভাবে মলি তাকে কোনদিন ভালই বাসেনি। হ্যাঁ অবশ্যই সে যৌন ক্রীড়ায় পারদর্শী নয়। সে বিশেষ লম্বাও নয়। পাঁচ ফুট ৩ ইঞ্চি মাত্র। কিন্তু ছোটোখাটো চেহারার মলির সাথে তার জুড়ি ভালই হয়েছিল। কিন্তু সে সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হবে ব্যাপারটা তার কাছে খুব অসম্ভব মনে হয়েছিল। এখন কৃত্রিম উপায়ে বীর্য তৈরি করা যায় যেটা সন্তান উৎপাদনে সক্ষম। কিন্তু সরকারের উদ্দেশ্য তো সেটা নয়। এই রকম বাঁজা পুরুষগুলোর সমাজে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকারটাই কেড়ে নিয়েছে সরকার। সরকারের নারী প্রয়োজন। তাই বৃন্তেরও ভাগ্যে জুটেছে এই সাজা।
প্রথম একমাস ও অজ্ঞান অবস্থাতেই ছিল। যেদিন ওর জ্ঞান ফিরল সেদিন ওর মত অনেকেরই জ্ঞান ফিরেছিল। চারিদিকে কান্না কাটি হাউ মাউ শব্দে কান পাতা দায় হয়েছিল। ও একটা শব্দও করেনি। কাঁদেও নি। মা বাবা এসেছিল ওর কাছে। অপারেশানের সময়ে সারাক্ষনই ছিল ওর মা। ওর মায়ের দিকে চেয়ে ও লজ্জায় অপমানে কোন কথা বলতে পারেনি। ওর মা ওকে জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠেছিল। বৃন্ত অন্য দিকে ফিরে নিজের ওপরে ঘেন্নায় লজ্জায় অপমানে নিজেকে শেষ করে দেবার সঙ্কল্প করে নিয়েছিল। ঠিক করে চলতে পারছিল না ও। একটা সাদা গাউন পরিয়ে রাখা হয়েছিল ওকে। ও কোন রকমে উঠে বাথরুম গেছিল। মা সাহায্য করতে এলেও ও জোরে সরিয়ে দিয়েছিল তখন। কিন্তু উল্লেখজনক ভাবে ওর দৈহিক শক্তিরও অনেক রুপান্তর ঘটেছিল। ওর দৈহিক শক্তি এমনিই কম ছিল কিন্তু এখন যেন আরও কম অনুভব করল। বাথরুমের বিশাল আয়নায় নিজেকে দেখে ও চিনতেই পারেনি। তার সারা গায়ে ছোট ছোট পুরুষ সুলভ যে লোমগুলো ছিল সেগুলোর অনুপস্থিতি তার সমগ্র শরীরটাকে যেন আকর্ষণীয় করে দিয়েছে একটি সুন্দরী মেয়ের মতই। ও জানে হাতে আর পায়ে কোনদিন তার লোম বেরোবে না আর। গালে হালকা দাড়ি ছিল তার। সেই জায়গায় এখন অদ্ভুত মসৃণ নরম তুলতুলে একটা গাল। ঠোঁট দুটো যেন পাতলা হয়ে গেছে কত। আর লাল টুসটুস করছে। মাথার চুল আগের মতই আছে যেমন তার ছিল। ছোট করে কাটা । হাতের আঙুল যেন একটু লম্বা হয়েছে, আর নরম। নিজেই নিজের হাত অনুভব করে পুরনো অনুভুতির সাথে মিলিয়ে দেখছিল বৃন্ত। চোখ আর ভ্রু যেন নিখুঁত ভাবে আঁকা। গ্রীবা যেন একটু লম্বা। মুখটা গোল ছিল গোলই আছে। একজন সুন্দরী নারীর যা যা লক্ষন থাকা উচিৎ ডাক্তারদের নিপুন হাতের কাজে বৃন্ত এখন একটি সুন্দরী নারী। বুকের কোন অপারেশান এখনও করেনি সেটা বোঝাই যাচ্ছে। নিপিল এখনও ছোট ছোট। সে এমনিতেই ফর্সা। কিন্তু নারী শরীর যেন তার গায়ের রঙটাকে আরও জেল্লা দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছে। সব থেকে বড় ধাক্কাটা খেল হিসি করতে যাবার সময়ে। বসে কোন রকমে হিসি করে নিজেকে দেওয়ালে ধরে রেখে দেওয়ালে মাথা দিয়ে কাঁদতে লাগলো অঝোর ঝরে। কান্নার আওয়াজে এমন চমকে গেল সে। একটি সুমিষ্ট স্বরের নারী কান্নার আওয়াজ যেন বাথরুমের নিস্তব্ধতাকে খান খান করে দিল।