05-04-2021, 03:11 PM
জয় বাবা ভ্যালেন্টাইন
আজ একটু আগেই ক্ষিধে পেয়ে গেছে।।আসলে ভ্যালেন্টাইনস ডে বলে সব খাবারের অ্যাপেই প্রায় খুব ভাল ডিল, ডিসকাউন্ট পাওয়া যাচ্ছে। আর, কাপলদের কথা জানে না রাহী, কিন্তু, ওর মতো সিঙ্গেলের কাছে তো এ যেন আসল ভালবাসার হরির লুট! ওর জীবনের ইশক ওয়ালা লাভ, মানে, বিরিয়ানি, চাঁপের বেশ ভাল একটা ডিল ছিল, সেটাই অর্ডার করে দিল। সাথে একটা ফিরনি। ব্যস, জমে যাবে ওর ভি ডে!
কিন্তু, সময় যেন কাটছেই না আর! এখনো অ্যাপে দেখাচ্ছে 'ইয়োর ফুড ইজ বিয়িং প্রিপেয়ারড'! ধুত! বিরক্ত হয়ে ফেসবুকে অনলাইন হল রাহী। এইসব দিন ফেসবুক এড়িয়ে যায় ও। কাপলরা যা সব পোস্ট দেয়...মুখে 'ন্যাকামি' বললেও বেশ হিংসে হয় ওর। ভাবে, ওর কেন এখনো 'ইসপেশাল কেউ' হলো না কেন!
তবে আজ কাপলদের নিজেদের ডেডিকেট করা পোস্ট আসার আগেই টুং করে আওয়াজ। মেসেঞ্জারে মেসেজ ঢুকেছে একটা। ক্লিক করে দেখে, আরে! এ তো সেই ছেলেটা...ক মাস আগে একটা গল্পের গ্রুপে চার লাইনের লেখা কবিতা পড়ে ভাল লেগেছিল ছেলেটাকে। শাক্য বসু। চার লাইনের বেশি লেখেনা...কিন্তু বুকে ধাক্কা লাগে এক একটা লেখায়। তাই একদিন দুরু দুরু বুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল...কদিন পরে অ্যাকসেপ্ট ও হয়ে গেছিল। তারপর থেকে মাঝে মাঝে স্টক করে ছেলেটাকে। বেশ হ্যান্ডু আছে! সাথে ফটোগ্রাফির হাত টা ও দারুন। কিন্তু সে ও কে নিজে থেকে মেসেজ করেছে!
'হাই!'
'হ্যালো!'
'আপনি কি বিজি?'
'নট মাচ...বলুন?'
'অ্যাকচুয়ালি একটা জিনিস জিজ্ঞেস করার ছিল...আপনি কি সেক্টর ফাইভ দিয়ে যাতায়াত করেন? কলেজ মোড় দিয়ে?'
'হ্যাঁ...কিন্তু আপনি জানলেন কি করে?'
'আসলে এর মধ্যে এক দিন আপনাকে দেখলাম মনে হলো বাসে...আজ অনলাইন দেখে মনে হলো আপনিই ছিলেন...তাই আর কি...'
বাবা! 'একদিন' বাসে দেখেই মনে রেখেছে! সেদিন কি জামা পরে ছিল কে জানে! ভাল লাগছিল তো, ওকে দেখতে? নাহ্, কায়দা করে জিজ্ঞেস করতে হবে তো!
'তাই? কবে?'
'একজ্যাক্ট ডেট টা মনে নেই...লাস্ট উইক হবে!'
'বাবা, আপনার এত দিন ধরে মনে আছে?' টাইপ করতে করতে সেই বিজ্ঞাপনের মতো 'মন মে লাড্ডু ফুটা' হচ্ছিল রাহীর।
'আসলে...সেদিন আপনি খুব রেগে ছিলেন...একটু...মানে...চিৎকার করছিলেন...তাই...'
শিট! প্রায় জোরেই বলে দিল রাহী। গত বুধবারের ঘটনা। বাসে নামতে যাবে, ওর আগে একটা কলেজ ছাত্রী, ড্রেস দেখেই মনে হচ্ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজটায় পড়ে, তার গায়ে একজন অভদ্র লোক হাত দিয়ে দিল বাজে ভাবে। ফলে প্রতিবাদ করেছিল ও। কিন্তু 'আপনার কি অ্যাঁ...আপনাকে কিছু করা হয়েছে' শুনে মাথা ঠিক ছিল না ওর। দিয়েছে আচ্ছাসে ঝেড়ে। সোজা মুখের ওপর বলে দিয়েছে 'আপনাদের জানোয়ার বলা জানোয়ারকে অপমান..ওরা অনেক ভদ্র হয়...নরাধম আপনারা!' ঝগড়ার চোটে সেদিন প্রায় স্টপেজ মিস হচ্ছিল। সেই কলেজ ছাত্রীটি 'দিদি ছেড়ে দাও' বলার পর হুঁশ হয়েছিল। তবে মেয়েটিকেও ছাড়েনি ও। বলে দিয়েছে 'অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শেখো...' আর এই ছেলেটি, একমাত্র ছেলে যাকে মাঝে মাঝে স্টক করে ও, সে ব্যাটা আর দিন পেল না, সেদিন ই ঘাপটি মেরে বসে ছিল বাসে?
-'ওহ্ ওকে'...পালাতে পারলে বাঁচে এখন রাহী। তারপর চুপ করে যায়।
অ্যাপে দেখাচ্ছে 'বিমল রাউত' ওর খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে, কুড়ি মিনিট লাগবে। কুড়িইইইই মিনিট! এখন অনলাইন ও থাকা যাবে না, ক্রাশের কাছে বাঁশ খেয়েছে!
হঠাৎ, আবার 'টুং'
'প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড...'
'না না, ইটস ওকে...আসলে আমিই খুব মাথা গরম করে ফেলেছিলাম...'
'না রাহী, আমি সেজন্য স্যরি বলিনি...আসলে...আমিও বাকি বাসের মতো চুপ করে ছিলাম...আপনাকে সাপোর্ট না করে...'
একটু চুপ করে রইল রাহী। সত্যি এই জিনিস টা খুব খারাপ লেগেছিল ওর সেদিন। এক বাস লোক...কেউ প্রোটেস্ট করল না?
'হুম...ইটস ওকে..'
'আসলে রাহী, আপনি যখন কথা বলছিলেন...লোকটা পুরো চুপসে যাচ্ছিল...পুরো দুর্গা ঠাকুরের মতো লাগছিল আপনাকে...'
মাথাটা ঝিমঝিম করছিল রাহীর।
'অ্যাঁ' তো লেখা যায় না মেসেঞ্জারে, তাই একটা স্মাইলি পাঠিয়ে দিল রাহী।
'রাহী, আমার অফিস ও কাছাকাছি এরিয়াতে...সেদিন আপনার পেছন পেছন অন্য গেট টা দিয়ে নেমে পড়েছিলাম। দেখি, আপনি ব্যাগ থেকে একটা বিস্কুটের প্যাকেট বের করলেন...তারপর দুটো কুকুর কে খাওয়ালেন...ছুঁড়ে ছুঁড়ে না...হাত দিয়ে...দেখেই মনে হলো রোজ খাওয়ান ওদের...তারপর রাস্তা ক্রস করে চলে গেলেন...'
'বাব্বা...আপনি তো বেশ ফলো করেছেন আমাকে?'
'ফলো কোথায় করতে পারলাম? সেই বুধবারের পর আরেক বুধ চলে গিয়ে আজ শুক্কুর...আপনাকে একদিন ও দেখতে পাইনি। ভাবছিলাম কাল কুকুর দুটোকেই জিজ্ঞেস করব... ওদের ভাষা কিভাবে বুঝব ভেবে টেনশান করছিলাম, তাও ভাল "বাবা" আপনার দেখা পাইয়ে দিলেন...'
ফ্লাটারড হতে হতেও চুপ করে গেল রাহী। "বাবা" টা কে রে বাবা!
'বাবা মানে?'
'আরে "বাবা" জানেন না? খুব জাগ্রত, জানেন? ওনাকে মাথা ঠেকিয়েছিলাম কাল...আর আজই পেয়ে গেলাম আপনাকে...'
'কে বলুন না...'
'সেন্ট ভ্যালেন্টাইন...বললাম না খুব জাগ্রত ঠাকুর...'
উত্তর দিতে যাবে, হঠাৎ ফোন, খাবার এসে গেছে...কিন্তু ওদের বিল্ডিং এর ব্লক টা খুঁজে পাচ্ছেন না ডেলিভারি দিতে আসা মানুষটি। ওনাকে বুঝিয়ে ফোন রেখে দেখে আরো কয়েকটা মেসেজ এসে গেছে...
'স্যরি, আপনি অফলাইন হয়ে গেলেন মেসেজ দেখে...'
'আমি কি ভুল কিছু বললাম?'
'প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড...'
হাসি পেল রাহীর। তারপর লিখল 'শাক্য, আমি আমি যাকে খুব ভালবাসি, তার সাথে আছি এখন...'
'ওহ্, শিওর, আই আন্ডারস্ট্যান্ড। স্যরি...আই বদারড ইউ...'
'জিজ্ঞেস করবেন না, সে কে?'
'আমি কিভাবে চিনব? সেলিব্রিটি কেউ?'
'না শাক্য...বিরিয়ানি আর চিকেন চাঁপ। আজ আবার ফিরনি ও অর্ডার করেছিলাম...।'
এবার ওই দিক চুপ! কি হলো রে বাবা! একেই রাহীর কেমন স্বপ্নের মতো লাগছে সব...তারমধ্যে...
'হাই! স্যরি...আসলে..বাবা ভ্যালেন্টাইনকে প্রনাম করছিলাম, তাই রিপ্লাই করতে দেরি হলো...
কি খাচ্ছেন? বিরিয়ানি, চাঁপ, ফিরনি...এহ হে...কোল্ড ড্রিংক টা বাকি রয়ে গেল তো...'
'হুম...কিন্তু ওটা...আপনি খাওয়ান...'
'বেশ! সাড়ে ছ টা? আর ডি বি র কফি শপে? অসুবিধা হবে না তো মা দুর্গার আসতে?'
'মা দুর্গা! যাঃ...'
'যাঃ! জানেন তো? যাঃ মানেই হ্যাঁ...স্বয়ং পরশুরাম বলে গেছেন...'
ঠোঁট কামড়ে লেখা টা পড়তে পড়তে হাসছিল রাহী...আর মনে মনে বলছিল 'জয় বাবা ভ্যালেন্টাইনের জয়'।।