02-04-2021, 12:05 PM
(This post was last modified: 02-04-2021, 12:05 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
কাল থেকেই ফেসবুক খুললেই একটাই জিনিস চোখে পড়ছে - পৌষ পার্বণ! মনে হচ্ছে বেছে বেছে সায়নীর বন্ধুরাই সবাই যেন হয় পিঠে বানিয়েছে, বা পিঠে খাচ্ছে! আর এইসব হাসিখুশি ছবি গুলো দেখে কান্না পাচ্ছে ওর! খালি মনে পড়ে যাচ্ছে গতবছরের কথা। মা আর ঠাম্মি মিলে পাটিসাপটা, দুধপুলি, চিতই পিঠে, চোষির পায়েস বানিয়েছিলেন। আর "এত মিষ্টি খাব না!" বলে ঠোঁট বেঁকিয়েছিল ও।
এই বছর প্লেসমেন্ট যখন মুম্বাইতে হলো, খুব খুশি হয়েছিল সায়নী। মুম্বাই হলো স্বপ্ননগরী! খুব মজা করবে ভেবেছিল ও। কিন্তু মাত্র এই কয়েকদিনেই 'ভাল্লাগছে না' রোগ হয়েছে ওর।অফিস ভাল্লাগছে না, যেখানে পেয়িং গেস্ট থাকে সেখানে ভাল্লাগছে না, কোনো কলিগকেই ভাল্লাগছে না! কিভাবে যে কাটবে এখানে দিন গুলো কে জানে! এই তো, কাল ই সব্বার পিঠে-পায়েসের ছবি দেখছিল ল্যাপটপে, ওর এক সিনিয়ার কলিগ দেখেছে...সেই নিয়েও কোনো ঘোঁট পাকাবে কিনা কে জানে! কিন্তু, এখন টেনশান করতেও ভাল্লাগছে না!
বেজার মুখে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেল ও। প্রথম কয়েকদিন বাইরে থেকেই টিফিন আনিয়ে খাচ্ছিল, কিন্তু রোজ রোজ বাইরের খাবারে পেট মানছে না, খরচাও হচ্ছে বেজায়...তাই পেয়িং গেস্টের আন্টির সাথে কথা বলে কিচেনে সামান্য কিছু বানিয়ে নিয়ে অফিস যাচ্ছে ও। তেমন কিছু নয়, জাস্ট চালিয়ে নেবার মতো...যেমন আজ বানিয়েছে নুডলস।
অফিসে পৌঁছে নিজের ডেস্কে বসেছে জাস্ট, হঠাৎ এক্সটেনশানে ওর ম্যানেজারের ফোন। কিউবিকলে ডাকছেন। হন্তদন্ত হয়ে গিয়ে দেখে সেখানে শ্রেয়া, মানে ওর সেই কলিগ ও আছে, যে কাল ওকে সোশ্যাল মিফিয়ায় স্ক্রল করতে দেখেছিল। শিট! এর মধ্যেই ম্যানেজারের কাছে কমপ্লেন করা হয়ে গেছে তাহলে! ঠোঁট টিপে, কঠিন কথা শোনার জন্য মনে মনে তৈরি হলো সায়নী।
'সায়ানী, তোমাকে একটা নতুন অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। তোমাকে সেটার কোয়ালিটি চেক করে ফিডব্যাক দিতে হবে, কেমন? তোমার ওয়ার্ক প্লেসে স্যাম্পেল রাখা আছে...নাউ গো..."। বসের ঘর থেকে বেরোনোর সময় দেখছিল শ্রেয়ার মুখে চাপা হাসি! নিশ্চয়ই খুব কঠিন কাজ হবে!
ভাবতে ভাবতেই ডেস্কে এসে দেখে -কোনো ফাইল বা মেটিরিয়াল না...একটা টিফিন বাক্স রাখা...আর তার ওপরে পোস্ট এডে লেখা "ওয়েলকাম টু দ্যা টিম"!
টিফিন বাক্স খুলতেই দেখে অপটু হাতে করা পাটিসাপটা আর পায়েস!
"ঠিক হ্যায় ক্যায়া?" প্রশ্ন শুনে তাকিয়ে দেখে শ্রেয়া তাকিয়ে আছে ওর দিকে...
সেই চোখে হাসি, উৎকন্ঠার সাথে মিশে আছে বন্ধুত্বের আহ্বান...।
ওর দিকে তাকিয়ে একগাল হাসল সায়নী। তারপর একটু পাটিসাপটা মুখে দিল।
আহ! জীবন কী মিষ্টি!
এখন সব কিছু 'ভাল্লাগছে' সায়নীর।