19-03-2021, 10:50 AM
প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর ১১
নির্জন এলার্মের শব্দে চোখ মেলতেই দেখল, রুপা ওর বুকের কাছে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। কাচের জানলায় রোদ এসে পড়েছে, ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকারের ক্লান্ত হলুদ রঙ।
আজ ওদের হামহাম ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার কথা। হামহাম পড়েছে কমলগঞ্জ উপজেলায়, মাধবপুর লেকও তাই। শুনেছে, মূল জনপদ থেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে দুতিন ঘণ্টার পথ হেঁটে পৌঁছতে হবে ওখানে। কাল রাতেই ঠিক করেছিল, গাইডের সাহায্য নেবে ওরা।
রুপার ঘুমন্ত নিঃশ্বাস পড়ছে নির্জনের খোলা বুকে। চোখ কচলে ওর দিকে তাকাল নির্জন– কী নিখুঁত মুখের গড়ন! মোমের মতো গালে এই শীতেও লালচে ভাব, নিমীলিত চোখদুটো যেন তুলিতে আঁকা। কপালে চুমু দিল নির্জন।
“রুপা? উঠতে হবে তো। হামহামে যাবে না?”
ঘুমগলায় ভাঙ্গা স্বরে রুপা বলল, “আরেকটু প্লিজ! আর দশ মিনিট!”
“আটটা বাজে। দুতিন ঘণ্টা হাঁটতে হবে পৌঁছাতে, ফিরতে হবে আবার। এখন না উঠলে ওখানে আটকা পড়ে যাব যে!”
“আর দশ মিনিট প্লিজ!”
বুঝল, এভাবে জাগানো যাবে না ওকে। নির্জন মুখ তুলে চুমু দিতে লাগল ওর গলায়, ঘাড়ে। রুপার গলার নিঃসঙ্গ কালো তিলগুলো লক্ষ্য করে ঠোঁট ছোঁয়াতে লাগল নির্জন, হাত বুলিয়ে দিল সারা দেহে।
পারিজার সাথে পরশু রাতে ঘণ্টা কয়েক কাটানোর পর, নির্জন বুঝে গিয়েছে, শরীরের অসম্মতিতে শুধুই মনের ক্ষুধা মেটাতে বারংবার মিলিত হওয়ার মানে নেই কোন। রস থাকতেই আসর ভাঙ্গতে হয়, কথাটা যে’ই বলুন, বহু ঘাটের জল খাওয়া অভিজ্ঞতা থেকেই বলেছেন। পাহাড়ে অসংখ্যবার চুড়াই– উৎরাইয়ের পর, ক্লান্ত ছিল দুজনই। ঘুমানোর আগে তাই একবার শুধু মিলিত হয়েছিল ওরা, শেষবারের মতো শরীরকে ক্লান্ত করতে।
নির্জনের ঘুমঘুম ভাব যা একটু ছিল, উবে গেল রুপার সুকোমল স্তনের চড়ুইয়ের লেজের মতো ছোট্ট কালো বোঁটায় মুখ রাখতেই। স্তনবৃন্ত ভালো করে মুখে পুরে, চুষতে লাগল নির্জন। ডান হাত রুপার খোলা দেহের মসৃণ পেছল দেহের খানাখন্দ পেরিয়ে খুঁজে নিল যোনি। নির্জনের আঙ্গুলের ডগায় অনুভূত হলো বালের খসখসে ভাব। মাঘের বৃষ্টিহীন প্রান্তরের ঘাসের মতো বালে হাত ঘষতে ঘষতে পেল যোনিমুখের ঠাণ্ডা ভেজা স্পর্শ!
“উম্মম্ম… ঘুম থেকে উঠতেই শুরু হয়ে গেল!”, আদুরে গলায় বলল রুপা, কোমর মন্থর দুলিয়ে।
“আর একটু ঘুমাতে চাইলাম…উম্মম… আর কি ঘুম হয়!”, আবার বলল রুপা নিজের হাতটা নির্জনের ঈষৎকঠিন (!) ঈষদুষ্ণ বাড়ার উপর রেখে।
স্তন থেকে মুখ তুলে রুপার চোখদুটো দেখেই বুঝল নির্জন, ও এখন সম্পূর্ণ সজাগ! চট করে উঠে, লেপ সরিয়ে রুপার দুপায়ের মাঝে চলে গেল ও। রুপার পা দুটো ফাঁক করে, পাছা খামচে ধরে, মুখ লাগিয়ে দিল গুদে। আচমকা হতচকিয়ে গেলেও বুঝে উঠল সময় নিল না রুপা– নিজের মাথাটা নির্জনের দুপায়ের মাঝে নিয়ে মুখে পুরে নিল ওর কলার মতো ঝুলতে থাকা বাড়া!
“ও আল্লাহ! এইটা কী! এইটা কেমন কথা! আল্লাহ…”
ঠিক তখনই প্রচণ্ড আর্তচিৎকারে হতকিয়ে গেল নির্জন।
“ও আল্লাহ… এইটা কী!”, আবারও বলে উঠল কেউ কাঁপা কাঁপা গলায়। তারপরই করিডোর ধরে দৌড়ানোর ধপধপ আওয়াজ শোনা গেল। রুপার দেহ থেকে সরে এসে বিছানায় বসে পড়েছে ও, রুপাও কান খাঁড়া করে দূরাগত আওয়াজ শুনে বুঝতে চেষ্টা করছে এমন আর্তচিতকারের কারণ।
“কী হলো?”, শঙ্কিত গলায় বলল রুপা, নির্জনের দিকে অর্থহীন চোখে তাকিয়ে।
নির্জন চট করে প্যান্টটা পায়ে গলিয়ে ফুলহাতা একটা গেঞ্জি পরতে পরতে বলল, “কিছু একটা হয়েছে! তুমি জামাকাপড় পরে ফেলো!”
“আপনি যাবেন না এখন!”, ওর হাতটা টেনে ধরল রুপা, “আগে বুঝি কী হয়েছে!”
সিঁড়ি বেয়ে একসাথে অনেকে উঠে আসছে, শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে পুরো ফ্লোর জুড়েই। আর্তচিতকার করে উঠেছিল যে লোকটা, সে’ই বলছে, “এমন আর কোনদিন দেখি নাই! ও আল্লাহ… এইটা কী দেখলাম!”
রুপার কথা মানতে পারল না নির্জন। বিপদে পড়তে পারে কেউ– হার্ট এটাক কিংবা স্ট্রোক বা অন্যকিছু– সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে কারো–
ওদের দরজার সামনেই এসে পড়েছে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসা দলটা, কথা বলছে নিজেদের মধ্যে সিলেটি ভাষায়, বুঝতে পারল না নির্জন।
“আমি দেখে আসছি। তুমি তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নাও! আমি না বললে ঘর থেকে বের হবে না!”
রুপার মুখটা ছোট হয়ে এসেছে ভয়ে। ওর দিকে আশ্বাসের চাহনি নিক্ষেপ করে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো নির্জন।
বাদল ব্যানার্জিকে দেখতে পেল নির্জন, হোটেলের চিফ স্টাফ কোর্ডিনেটর, সঙ্গে চারপাঁচ জন উর্দি পরিহিত বেয়াহা। ওরা সবাই একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তাহমিনা হায়াতের রুমের খোলা দরজার দিকে!
নিজেদের মধ্যে উত্তেজিত কথা বলছে ওরা, বাদল ব্যানার্জি কানে লাগিয়েছে ফোন। গোলগাল ফোলা মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে, টাকে জমেছে ঘাম। কিছু হয়েছে তাহমিনা হায়াতের?
পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল নির্জন, দাঁড়াল দরজার সামনে। দরজা আটকে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন হোটেল বয়েরর কাঁধের উপর দিকে যা দেখল নির্জন– মুখ থেকে তার অজান্তেই বেরিয়ে এলো, “মাই গড!”
চট করে সরে এলো নির্জন ৩০৮ নম্বর রুমের দরজা থেকে। বড় করে নিঃশ্বাস নিল একবার– মাথাটাকে ঠাণ্ডা করতে হবে, ভাবতে হবে সুস্থ মস্তিষ্কে।
নিজের রুমে ফিরে এলো নির্জন।
“তাহমিনা হায়াতের গলা কে যেন কেটে ফেলেছে! ছুরি দিয়ে!”, বলল নির্জন শূন্যদৃষ্টি মেলে।
“কী?”, বজ্রাহত গলায় বলল রুপা। “কী বালছাল বলছেন এসব!”
“সত্যি। শি ইজ কিল্ড!”
“ও মাই গড! ও মাই গড!”, চোখ ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে রুপার, কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না সদ্য সংবাদটি।
“শান্ত হও, রুপা!”, বলল নির্জন জুতা পরতে পরতে। “তুমি ঘর থেকে বের হবে না! আর আমার ব্যাগ খুললে একটা কালো ছোট ব্যাগ পাবে– দাও আমাকে।”
নির্জনের কথাগুলো বুঝতে পারল না যেন রুপা। নিশ্চল অবাক চোখে, তাকিয়ে রইল ওর দিকে। কথাগুলো আবার বলতেই চেতনা ফিরে পেল যেন, দ্রুত নির্জনের ব্যাগ খুলে খুঁজতে লাগল কালো থলি।
প্রথম দিনের বাদুরে টুপিটা মাথায় ভালোভাবে পরল নির্জন, যাতে একটা চুলও টুপির বাইরে না থাকে, হাতে পরে নিল রুপার হাতমোজা।
“প্রচণ্ড বাজে অবস্থা। আমি তোমাকে পরে ছবি দেখাব! এখন রুম থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই!”
থলিটা খুলে ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটর ইউভি লাইটের টর্চটা হাতে নিল নির্জন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিয়ে গিয়েছিল সেও। সাধারণ একটা অভারসিস তদন্তে এসে, ব্যাপারটা এমন মোড় নেবে, কল্পনাও করেনি ও।
কিন্তু এখন নিজের করণীয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ ও আত্মবিশ্বাসী নির্জন। আর যা করা প্রয়োজন, করতে হবে পুলিশ আসার আগেই!
দরজার বাইরে বেড়ে গিয়েছে শোরগোল, চেঁচামেচি। এর মধ্যেই নির্ঘাত আরো অনেকে এসে পৌঁছেছে।
ঘর থেকে বেড়িয়েই ডান হাতের মোজা খুলে ফোনের ক্যামেরা অন করল নির্জন। প্রমাণ লোপাটের আগেই পুলিশের দায়িত্ব ক্রাইম সিন লক করে দেয়া। সে কাজ নির্জনের একতিয়ারে নেই, পুলিশের পৌঁছতে সময় লাগবে আরো অন্তত আধঘণ্টা। এর মধ্যেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যাবে। আর ইনট্যাক্ট সিনের ছবি তুলে রাখতে হবে ওকে।
হোটেলের আরো কয়েকজন স্টাফ এসে জড় হয়েছে দরজার সামনে। সকলের মুখেই কেমন থমথমে ভাব, অবিশ্বাসী চাহনি। কেউ আর কথা বলছে না উচ্চস্বরে, তাকিয়ে আছে সকলেই বিস্মিত চোখে তাহমিনা হায়াতের ঘরের দিকে। কয়েকজন এর মধ্যেই ঢুকে পড়েছে ঘরের ভেতর। ইতস্তত দাঁড়িয়ে কথা বলছে নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে। নির্জনের উপস্থিতি টেরই পেল না ওরা।
দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন হোটেল বয়েরর কাঁধের উপর দিয়ে ক্যামেরার ৬৪ মেগাপিক্সেল মুড অন করে একের পর এক ছবি তুলতে লাগল নির্জন।
তাহমিনা হায়াতের প্রাণহীন নগ্ন দেহ বিছানার ঠিক মাঝখানে শোয়ানো, গলায় ছুরির পোঁচ, প্রকটভাবে ফাঁক হয়ে আছে ভকালকর্ড। সাদা চাদরের বিছানা লাল হয়ে গিয়েছে শুকিয়ে যাওয়া রক্তে।
রক্তের দাগ আর গলায় ছুরির পোচের চিহ্ন না থাকলে, মনে হতেই পারে, এক অপূর্ব দেহাবয়বের মধ্যবয়সী নারী নগ্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন কারো অপেক্ষায় থাকতে থাকতে! চোখ দুটো খোলা, যেন প্রচণ্ড বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন সিলিঙের দিকে, মুখে ব্যথার স্পষ্ট ছাপ।
ঘরের সবগুলো বাতি জ্বেলে দিয়েছে কেউ। অবাক হয়ে লক্ষ্য করল নির্জন, বিছানার বাইরে কোথাও এক ফোঁটা রক্ত নেই! হত্যাকারী কি মুছে ফেলেছে রক্ত? নাকি ছুরি চালানোর সময় তাহমিনা হায়াত ছিলেন বিছানাতেই। কয়েক ফোঁটা রক্ত তো এদিকে ওদিকে ছিটকে পড়ার কথা!
বেশ কয়েকটা ছবি তুলে ভিডিও অন করল নির্জন। ফোনটা এমনভাবে হাতে রেখে দিল, যেন বুঝতে না পারে কেউ! ঘরের ভিতরে সামান্য ঢুকে, দেখতে লাগল চারপাশ।
নির্জনদের রুমটার সাথে এই রুমের কোন পার্থক্য নেই– ঠিক মাঝে বিছানা, পাশেই ড্রেসিং টেবল; তার বিপরীতে বিশাল একটা আলমারির উপরে এলইডি টিভি। বিছানার পেছন দিকের দেয়ালে বাথরুম– দরজা হাট করে খোলা।
হঠাত নারী কণ্ঠের চিতকারে চমক ভাঙল নির্জনের। পিছন ফিরতেই দেখল পারিজার দেহটা পরে যাচ্ছে মাটিতে– কেউ একজন ধরে ফেলল ওকে। জ্ঞান হারিয়েছে ও, লোকটা ওকে বসিয়ে দিল দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে।
হাফপ্যান্ট আর টপ্স পরিহিত অজ্ঞান পারিজা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে সকলের। নগ্ন মৃতা মধ্যবয়সীর দেহের চেয়ে জীবন্ত তরুণী বেশি আগ্রহ জন্ম দেয়। ঘরের ভেতরের লোকগুলোও বেরিয়ে গেল ওকে দেখতে।
এই সুযোগে ইউভি লাইট ফেলল নির্জন তাহমিনা হায়াতের দেহে– এসুযোগ পাবে আশা করেনি ও। সারাদেহে রশ্মি ফেলতে লাগল নির্জন, ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করল বেগুনি হয়ে যাওয়া দেহচিত্র। বিছানাতেও ফেলল আলো।
পারিজার থেকে সকলের মনোযোগ তাহমিনা হায়াতের নিথর দেহে ফিরে আসার আগেই, লাইট অফ করে বাইরে এলো নির্জন। বাড়তে শুরু করেছে লোকসমাগম। এরমধ্যেই সামনের লন থেকে অনেকেই তাকিয়ে আছে তিনতলার এই জটলার দিকে, হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে অনেকে উপরের দিকে।
ঘরে ঢুকে দরজা লাগাতেই রুপা বলল, “আমি বাইরে যাব! আমি দেখব!”
এবারে আর ওকে বাঁধা দিল না নির্জন।
বাথরুমে ঢুকে একটা পলিথিনের ভেতরে ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটরটা ঢুকিয়ে মেঝেতে আছাড় মারল একটা, কয়েক টুকরো হয়ে গেল লাইটটা। আরো কয়েকবার আছাড় মেরে আরো ছোট করল টুকরোগুলোকে। তারপর সেই টুকরোগুলো কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশ করল নির্জন।
এবারে ভিডিও আর ছবিগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে। হোটেলের ফ্রি ওয়াইফাই থাকলেও ফোনের ইন্টারনেট কানকশন অন করে বেনামে খোলা একটা আউটলুক একাউন্টের ওয়ানড্রাইভে আপলোড করল ভিডিও আর ছবিগুলোকে। একাউন্টের সমস্ত তথ্য ফোন থেকে সরিয়ে ডিলিট করে দিল ছবি আর ভিডিও স্টোরেজ থেকে।
নির্জন জানে, পুলিশের জেরা আর খানা তল্লাশির মুখে পড়তে হবে ওদেরও। কোনভাবে যদি পুলিশ বুঝতে পারে, তাহমিনা হায়াতের উপর নজর রাখতেই ওরা এসেছে ঢাকা থাকে, ফ্যাসাদে পড়তে হবে প্রচণ্ড!
‘খেচর’ শুরু করার কয়েকদিনের মধ্যেই, যখন নির্জন জানত না ওকে শুধু পরকিয়া প্রেমের রহস্য আর বিয়ের ফ্যাক্ট চেক’ই করতে হবে সিংহভাগ সময়, কিনেছিল অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটিং কিট। শিখে নিয়েছিল তার ব্যবহার। এর আগে কোনদিন ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। কিটটা সবসময় ওর ঘরে আলমারির ভেতরেই থাকে, সঙ্গে শুধু রাখে এই ইন্সট্যান্ট ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটর ইউভি লাইটটা; সে ইনভেস্টিগেটর– সেটা নিজেকে মাঝেমাঝে মনে করিয়ে দিতে!
আজ কাজে লেগে গেল যে যন্ত্র! আর ভাঙতেও হলো আজই। কোনভাবে লাইটটা পুলিশের হাতে গেলে, রক্ষা ছিল না আর।
“আমি সকালের খাবার দিতে আসছিলাম। ম্যাডাম প্রতিদিন এই সময়ে খাবার দিতে বলছে! আইসা দেখি দরজা অল্প অল্প খোলা, লাইট জ্বলতাছে… কয়েকবার ডাকলাম, সাড়া দিল না। দরজা খুলতেই এই অবস্থা! এইটা কী দেখলাম, আল্লাহ! কী দেখাইলা খোদা তুমি আমারে!”
লোকটাকে ঘিরে ধরেছে অনেকেই, প্রশ্ন করছে একের পর এক। পুরো করিডরে পা ফেলার জায়গা নেই। হোটেলের প্রত্যেককেই যেন ভেঙ্গে এসেছে লাশ দেখতে। ৩০৮ নম্বর রুমের দরজায় তিনচার জন ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে, আরো কয়েকজন মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করছে ভেতরটা। রুমের ভেতরে এতক্ষণে লোক যে গিজগিজ করছে, সে ব্যাপারে নিঃসন্দেহ নির্জন।
নির্জন এলার্মের শব্দে চোখ মেলতেই দেখল, রুপা ওর বুকের কাছে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। কাচের জানলায় রোদ এসে পড়েছে, ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকারের ক্লান্ত হলুদ রঙ।
আজ ওদের হামহাম ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার কথা। হামহাম পড়েছে কমলগঞ্জ উপজেলায়, মাধবপুর লেকও তাই। শুনেছে, মূল জনপদ থেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে দুতিন ঘণ্টার পথ হেঁটে পৌঁছতে হবে ওখানে। কাল রাতেই ঠিক করেছিল, গাইডের সাহায্য নেবে ওরা।
রুপার ঘুমন্ত নিঃশ্বাস পড়ছে নির্জনের খোলা বুকে। চোখ কচলে ওর দিকে তাকাল নির্জন– কী নিখুঁত মুখের গড়ন! মোমের মতো গালে এই শীতেও লালচে ভাব, নিমীলিত চোখদুটো যেন তুলিতে আঁকা। কপালে চুমু দিল নির্জন।
“রুপা? উঠতে হবে তো। হামহামে যাবে না?”
ঘুমগলায় ভাঙ্গা স্বরে রুপা বলল, “আরেকটু প্লিজ! আর দশ মিনিট!”
“আটটা বাজে। দুতিন ঘণ্টা হাঁটতে হবে পৌঁছাতে, ফিরতে হবে আবার। এখন না উঠলে ওখানে আটকা পড়ে যাব যে!”
“আর দশ মিনিট প্লিজ!”
বুঝল, এভাবে জাগানো যাবে না ওকে। নির্জন মুখ তুলে চুমু দিতে লাগল ওর গলায়, ঘাড়ে। রুপার গলার নিঃসঙ্গ কালো তিলগুলো লক্ষ্য করে ঠোঁট ছোঁয়াতে লাগল নির্জন, হাত বুলিয়ে দিল সারা দেহে।
পারিজার সাথে পরশু রাতে ঘণ্টা কয়েক কাটানোর পর, নির্জন বুঝে গিয়েছে, শরীরের অসম্মতিতে শুধুই মনের ক্ষুধা মেটাতে বারংবার মিলিত হওয়ার মানে নেই কোন। রস থাকতেই আসর ভাঙ্গতে হয়, কথাটা যে’ই বলুন, বহু ঘাটের জল খাওয়া অভিজ্ঞতা থেকেই বলেছেন। পাহাড়ে অসংখ্যবার চুড়াই– উৎরাইয়ের পর, ক্লান্ত ছিল দুজনই। ঘুমানোর আগে তাই একবার শুধু মিলিত হয়েছিল ওরা, শেষবারের মতো শরীরকে ক্লান্ত করতে।
নির্জনের ঘুমঘুম ভাব যা একটু ছিল, উবে গেল রুপার সুকোমল স্তনের চড়ুইয়ের লেজের মতো ছোট্ট কালো বোঁটায় মুখ রাখতেই। স্তনবৃন্ত ভালো করে মুখে পুরে, চুষতে লাগল নির্জন। ডান হাত রুপার খোলা দেহের মসৃণ পেছল দেহের খানাখন্দ পেরিয়ে খুঁজে নিল যোনি। নির্জনের আঙ্গুলের ডগায় অনুভূত হলো বালের খসখসে ভাব। মাঘের বৃষ্টিহীন প্রান্তরের ঘাসের মতো বালে হাত ঘষতে ঘষতে পেল যোনিমুখের ঠাণ্ডা ভেজা স্পর্শ!
“উম্মম্ম… ঘুম থেকে উঠতেই শুরু হয়ে গেল!”, আদুরে গলায় বলল রুপা, কোমর মন্থর দুলিয়ে।
“আর একটু ঘুমাতে চাইলাম…উম্মম… আর কি ঘুম হয়!”, আবার বলল রুপা নিজের হাতটা নির্জনের ঈষৎকঠিন (!) ঈষদুষ্ণ বাড়ার উপর রেখে।
স্তন থেকে মুখ তুলে রুপার চোখদুটো দেখেই বুঝল নির্জন, ও এখন সম্পূর্ণ সজাগ! চট করে উঠে, লেপ সরিয়ে রুপার দুপায়ের মাঝে চলে গেল ও। রুপার পা দুটো ফাঁক করে, পাছা খামচে ধরে, মুখ লাগিয়ে দিল গুদে। আচমকা হতচকিয়ে গেলেও বুঝে উঠল সময় নিল না রুপা– নিজের মাথাটা নির্জনের দুপায়ের মাঝে নিয়ে মুখে পুরে নিল ওর কলার মতো ঝুলতে থাকা বাড়া!
“ও আল্লাহ! এইটা কী! এইটা কেমন কথা! আল্লাহ…”
ঠিক তখনই প্রচণ্ড আর্তচিৎকারে হতকিয়ে গেল নির্জন।
“ও আল্লাহ… এইটা কী!”, আবারও বলে উঠল কেউ কাঁপা কাঁপা গলায়। তারপরই করিডোর ধরে দৌড়ানোর ধপধপ আওয়াজ শোনা গেল। রুপার দেহ থেকে সরে এসে বিছানায় বসে পড়েছে ও, রুপাও কান খাঁড়া করে দূরাগত আওয়াজ শুনে বুঝতে চেষ্টা করছে এমন আর্তচিতকারের কারণ।
“কী হলো?”, শঙ্কিত গলায় বলল রুপা, নির্জনের দিকে অর্থহীন চোখে তাকিয়ে।
নির্জন চট করে প্যান্টটা পায়ে গলিয়ে ফুলহাতা একটা গেঞ্জি পরতে পরতে বলল, “কিছু একটা হয়েছে! তুমি জামাকাপড় পরে ফেলো!”
“আপনি যাবেন না এখন!”, ওর হাতটা টেনে ধরল রুপা, “আগে বুঝি কী হয়েছে!”
সিঁড়ি বেয়ে একসাথে অনেকে উঠে আসছে, শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে পুরো ফ্লোর জুড়েই। আর্তচিতকার করে উঠেছিল যে লোকটা, সে’ই বলছে, “এমন আর কোনদিন দেখি নাই! ও আল্লাহ… এইটা কী দেখলাম!”
রুপার কথা মানতে পারল না নির্জন। বিপদে পড়তে পারে কেউ– হার্ট এটাক কিংবা স্ট্রোক বা অন্যকিছু– সাহায্যের প্রয়োজন হতে পারে কারো–
ওদের দরজার সামনেই এসে পড়েছে সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসা দলটা, কথা বলছে নিজেদের মধ্যে সিলেটি ভাষায়, বুঝতে পারল না নির্জন।
“আমি দেখে আসছি। তুমি তাড়াতাড়ি কাপড় পরে নাও! আমি না বললে ঘর থেকে বের হবে না!”
রুপার মুখটা ছোট হয়ে এসেছে ভয়ে। ওর দিকে আশ্বাসের চাহনি নিক্ষেপ করে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো নির্জন।
বাদল ব্যানার্জিকে দেখতে পেল নির্জন, হোটেলের চিফ স্টাফ কোর্ডিনেটর, সঙ্গে চারপাঁচ জন উর্দি পরিহিত বেয়াহা। ওরা সবাই একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে তাহমিনা হায়াতের রুমের খোলা দরজার দিকে!
নিজেদের মধ্যে উত্তেজিত কথা বলছে ওরা, বাদল ব্যানার্জি কানে লাগিয়েছে ফোন। গোলগাল ফোলা মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে, টাকে জমেছে ঘাম। কিছু হয়েছে তাহমিনা হায়াতের?
পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল নির্জন, দাঁড়াল দরজার সামনে। দরজা আটকে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন হোটেল বয়েরর কাঁধের উপর দিকে যা দেখল নির্জন– মুখ থেকে তার অজান্তেই বেরিয়ে এলো, “মাই গড!”
চট করে সরে এলো নির্জন ৩০৮ নম্বর রুমের দরজা থেকে। বড় করে নিঃশ্বাস নিল একবার– মাথাটাকে ঠাণ্ডা করতে হবে, ভাবতে হবে সুস্থ মস্তিষ্কে।
নিজের রুমে ফিরে এলো নির্জন।
“তাহমিনা হায়াতের গলা কে যেন কেটে ফেলেছে! ছুরি দিয়ে!”, বলল নির্জন শূন্যদৃষ্টি মেলে।
“কী?”, বজ্রাহত গলায় বলল রুপা। “কী বালছাল বলছেন এসব!”
“সত্যি। শি ইজ কিল্ড!”
“ও মাই গড! ও মাই গড!”, চোখ ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে রুপার, কোনভাবেই বিশ্বাস করতে পারছে না সদ্য সংবাদটি।
“শান্ত হও, রুপা!”, বলল নির্জন জুতা পরতে পরতে। “তুমি ঘর থেকে বের হবে না! আর আমার ব্যাগ খুললে একটা কালো ছোট ব্যাগ পাবে– দাও আমাকে।”
নির্জনের কথাগুলো বুঝতে পারল না যেন রুপা। নিশ্চল অবাক চোখে, তাকিয়ে রইল ওর দিকে। কথাগুলো আবার বলতেই চেতনা ফিরে পেল যেন, দ্রুত নির্জনের ব্যাগ খুলে খুঁজতে লাগল কালো থলি।
প্রথম দিনের বাদুরে টুপিটা মাথায় ভালোভাবে পরল নির্জন, যাতে একটা চুলও টুপির বাইরে না থাকে, হাতে পরে নিল রুপার হাতমোজা।
“প্রচণ্ড বাজে অবস্থা। আমি তোমাকে পরে ছবি দেখাব! এখন রুম থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই!”
থলিটা খুলে ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটর ইউভি লাইটের টর্চটা হাতে নিল নির্জন। ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিয়ে গিয়েছিল সেও। সাধারণ একটা অভারসিস তদন্তে এসে, ব্যাপারটা এমন মোড় নেবে, কল্পনাও করেনি ও।
কিন্তু এখন নিজের করণীয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ ও আত্মবিশ্বাসী নির্জন। আর যা করা প্রয়োজন, করতে হবে পুলিশ আসার আগেই!
দরজার বাইরে বেড়ে গিয়েছে শোরগোল, চেঁচামেচি। এর মধ্যেই নির্ঘাত আরো অনেকে এসে পৌঁছেছে।
ঘর থেকে বেড়িয়েই ডান হাতের মোজা খুলে ফোনের ক্যামেরা অন করল নির্জন। প্রমাণ লোপাটের আগেই পুলিশের দায়িত্ব ক্রাইম সিন লক করে দেয়া। সে কাজ নির্জনের একতিয়ারে নেই, পুলিশের পৌঁছতে সময় লাগবে আরো অন্তত আধঘণ্টা। এর মধ্যেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যাবে। আর ইনট্যাক্ট সিনের ছবি তুলে রাখতে হবে ওকে।
হোটেলের আরো কয়েকজন স্টাফ এসে জড় হয়েছে দরজার সামনে। সকলের মুখেই কেমন থমথমে ভাব, অবিশ্বাসী চাহনি। কেউ আর কথা বলছে না উচ্চস্বরে, তাকিয়ে আছে সকলেই বিস্মিত চোখে তাহমিনা হায়াতের ঘরের দিকে। কয়েকজন এর মধ্যেই ঢুকে পড়েছে ঘরের ভেতর। ইতস্তত দাঁড়িয়ে কথা বলছে নিচু স্বরে নিজেদের মধ্যে। নির্জনের উপস্থিতি টেরই পেল না ওরা।
দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন হোটেল বয়েরর কাঁধের উপর দিয়ে ক্যামেরার ৬৪ মেগাপিক্সেল মুড অন করে একের পর এক ছবি তুলতে লাগল নির্জন।
তাহমিনা হায়াতের প্রাণহীন নগ্ন দেহ বিছানার ঠিক মাঝখানে শোয়ানো, গলায় ছুরির পোঁচ, প্রকটভাবে ফাঁক হয়ে আছে ভকালকর্ড। সাদা চাদরের বিছানা লাল হয়ে গিয়েছে শুকিয়ে যাওয়া রক্তে।
রক্তের দাগ আর গলায় ছুরির পোচের চিহ্ন না থাকলে, মনে হতেই পারে, এক অপূর্ব দেহাবয়বের মধ্যবয়সী নারী নগ্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন কারো অপেক্ষায় থাকতে থাকতে! চোখ দুটো খোলা, যেন প্রচণ্ড বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন সিলিঙের দিকে, মুখে ব্যথার স্পষ্ট ছাপ।
ঘরের সবগুলো বাতি জ্বেলে দিয়েছে কেউ। অবাক হয়ে লক্ষ্য করল নির্জন, বিছানার বাইরে কোথাও এক ফোঁটা রক্ত নেই! হত্যাকারী কি মুছে ফেলেছে রক্ত? নাকি ছুরি চালানোর সময় তাহমিনা হায়াত ছিলেন বিছানাতেই। কয়েক ফোঁটা রক্ত তো এদিকে ওদিকে ছিটকে পড়ার কথা!
বেশ কয়েকটা ছবি তুলে ভিডিও অন করল নির্জন। ফোনটা এমনভাবে হাতে রেখে দিল, যেন বুঝতে না পারে কেউ! ঘরের ভিতরে সামান্য ঢুকে, দেখতে লাগল চারপাশ।
নির্জনদের রুমটার সাথে এই রুমের কোন পার্থক্য নেই– ঠিক মাঝে বিছানা, পাশেই ড্রেসিং টেবল; তার বিপরীতে বিশাল একটা আলমারির উপরে এলইডি টিভি। বিছানার পেছন দিকের দেয়ালে বাথরুম– দরজা হাট করে খোলা।
হঠাত নারী কণ্ঠের চিতকারে চমক ভাঙল নির্জনের। পিছন ফিরতেই দেখল পারিজার দেহটা পরে যাচ্ছে মাটিতে– কেউ একজন ধরে ফেলল ওকে। জ্ঞান হারিয়েছে ও, লোকটা ওকে বসিয়ে দিল দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে।
হাফপ্যান্ট আর টপ্স পরিহিত অজ্ঞান পারিজা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে সকলের। নগ্ন মৃতা মধ্যবয়সীর দেহের চেয়ে জীবন্ত তরুণী বেশি আগ্রহ জন্ম দেয়। ঘরের ভেতরের লোকগুলোও বেরিয়ে গেল ওকে দেখতে।
এই সুযোগে ইউভি লাইট ফেলল নির্জন তাহমিনা হায়াতের দেহে– এসুযোগ পাবে আশা করেনি ও। সারাদেহে রশ্মি ফেলতে লাগল নির্জন, ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করল বেগুনি হয়ে যাওয়া দেহচিত্র। বিছানাতেও ফেলল আলো।
পারিজার থেকে সকলের মনোযোগ তাহমিনা হায়াতের নিথর দেহে ফিরে আসার আগেই, লাইট অফ করে বাইরে এলো নির্জন। বাড়তে শুরু করেছে লোকসমাগম। এরমধ্যেই সামনের লন থেকে অনেকেই তাকিয়ে আছে তিনতলার এই জটলার দিকে, হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছে অনেকে উপরের দিকে।
ঘরে ঢুকে দরজা লাগাতেই রুপা বলল, “আমি বাইরে যাব! আমি দেখব!”
এবারে আর ওকে বাঁধা দিল না নির্জন।
বাথরুমে ঢুকে একটা পলিথিনের ভেতরে ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটরটা ঢুকিয়ে মেঝেতে আছাড় মারল একটা, কয়েক টুকরো হয়ে গেল লাইটটা। আরো কয়েকবার আছাড় মেরে আরো ছোট করল টুকরোগুলোকে। তারপর সেই টুকরোগুলো কমোডে ফেলে ফ্ল্যাশ করল নির্জন।
এবারে ভিডিও আর ছবিগুলোর ব্যবস্থা করতে হবে। হোটেলের ফ্রি ওয়াইফাই থাকলেও ফোনের ইন্টারনেট কানকশন অন করে বেনামে খোলা একটা আউটলুক একাউন্টের ওয়ানড্রাইভে আপলোড করল ভিডিও আর ছবিগুলোকে। একাউন্টের সমস্ত তথ্য ফোন থেকে সরিয়ে ডিলিট করে দিল ছবি আর ভিডিও স্টোরেজ থেকে।
নির্জন জানে, পুলিশের জেরা আর খানা তল্লাশির মুখে পড়তে হবে ওদেরও। কোনভাবে যদি পুলিশ বুঝতে পারে, তাহমিনা হায়াতের উপর নজর রাখতেই ওরা এসেছে ঢাকা থাকে, ফ্যাসাদে পড়তে হবে প্রচণ্ড!
‘খেচর’ শুরু করার কয়েকদিনের মধ্যেই, যখন নির্জন জানত না ওকে শুধু পরকিয়া প্রেমের রহস্য আর বিয়ের ফ্যাক্ট চেক’ই করতে হবে সিংহভাগ সময়, কিনেছিল অনলাইনে অর্ডার দিয়ে ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটিং কিট। শিখে নিয়েছিল তার ব্যবহার। এর আগে কোনদিন ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। কিটটা সবসময় ওর ঘরে আলমারির ভেতরেই থাকে, সঙ্গে শুধু রাখে এই ইন্সট্যান্ট ফিংগারপ্রিন্ট ডিটেকটর ইউভি লাইটটা; সে ইনভেস্টিগেটর– সেটা নিজেকে মাঝেমাঝে মনে করিয়ে দিতে!
আজ কাজে লেগে গেল যে যন্ত্র! আর ভাঙতেও হলো আজই। কোনভাবে লাইটটা পুলিশের হাতে গেলে, রক্ষা ছিল না আর।
“আমি সকালের খাবার দিতে আসছিলাম। ম্যাডাম প্রতিদিন এই সময়ে খাবার দিতে বলছে! আইসা দেখি দরজা অল্প অল্প খোলা, লাইট জ্বলতাছে… কয়েকবার ডাকলাম, সাড়া দিল না। দরজা খুলতেই এই অবস্থা! এইটা কী দেখলাম, আল্লাহ! কী দেখাইলা খোদা তুমি আমারে!”
লোকটাকে ঘিরে ধরেছে অনেকেই, প্রশ্ন করছে একের পর এক। পুরো করিডরে পা ফেলার জায়গা নেই। হোটেলের প্রত্যেককেই যেন ভেঙ্গে এসেছে লাশ দেখতে। ৩০৮ নম্বর রুমের দরজায় তিনচার জন ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে, আরো কয়েকজন মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করছে ভেতরটা। রুমের ভেতরে এতক্ষণে লোক যে গিজগিজ করছে, সে ব্যাপারে নিঃসন্দেহ নির্জন।