19-03-2021, 10:50 AM
প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর ১০
কী একটা পাখির কর্কশ ডাকে ঘুম ভাঙাল নির্জনের। ফোনে চারটা মিসডকল; ঘড়িতে ন’টা বেজে সাত। বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে ফিরে কল ব্যাক করবে ভেবে বিছানা ছাড়াল ও।
কাল রাতে পারিজার রুম থেকে ঠিক একটায় বেড়িয়েছিল নির্জন। প্রায় টলতে টলতে এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঢলে পড়েছিল বিছানায়। মাথা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল ওর। পারিজাকে চতুর্থবার পেছন দিক থেকে চোদার সময় কোন অনুভূতিই হচ্ছিল না আর– পারিজাও সাড়া দিচ্ছিল না আগের মতো। প্রচণ্ড আগ্রহ আর উত্তেজনা নিয়ে শুরু হওয়া দীর্ঘ ট্যুর যেমন শেষ হয় ক্লান্তিকর ফেরতযাত্রা দিয়ে, তেমনই শ্রান্ত সমাপ্তি হয়েছিল ওদের।
ফেরার সময় একটা চুমু পর্যন্ত দেয়নি নির্জন পারিজার ঠোঁটে!
বাথরুম থেকে বেড়িয়েই রুপার মুখোমুখি নির্জন। বাইরে কোথাও গিয়েছিল ও, ফিরেছে রুম সার্ভিসকে নিয়ে।
হোটেল বয় রুটির সাথে ভাজা ডিম আর বুটের ডাল টেবিলে সার্ভ করে বেরিয়ে গেলে, রুপা বলল, “আমি একটু হাঁটলাম পেছনের বাগানে। এত্ত ঠাণ্ডা! কুয়াশায় দুহাত দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছে না ”
“তাহলে তো আমাদের মাধবপুর লেকে যাওয়াই হচ্ছে না আজ!”, বলল নির্জন খাবারের প্লেট তুলে নিয়ে।
“সে দেখা যাবে! সুপ্রভা ফোন দিয়েছিল। বলল, জুলফিকার আমান নাকি আবার ফোনে হুমকি দিয়েছে ওকে।“
নির্জন আগ্রহ দেখালো না কোন, একমনে ডালের বাটিতে রুটির টুকরো ডুবিয়ে পুরতে লাগল মুখে।
“উনি নাকি শ্রীমঙ্গলে আসছেন। রাতের ট্রেনেই। এসে যদি দেখেন কেউ ওর বৌয়ের পিছনে এখনো লেগে আছে, তাহলে নাকি ফল ভালো হবে না!”
এবারে মুখ তুলে তাকাল নির্জন। সরাসরি রুপার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “তারমানে তো এসে গেছেন এতক্ষণে!”
“হ্যাঁ। শুধু আসেননি, রীতিমত আমাদের বারোটা বাজানোর পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন!”
“সেই ভয় নেই।“, আবারও খেতে শুরু করল নির্জন। রুটি মুখেই বলল, “জুলফিকার আমাদের ছবি দেখেননি!”
“তবে আমাদের বৌয়ের পিছনে লাগিয়ে, হঠাৎ মুভ করতে বারণ করা– ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত, তাই না? এমনটা এর আগে হয়নি কোনদিন!”
“হয়তো নিজেই প্রমাণ পেয়েছেন বৌয়ের কীর্তিকলাপের! আমাদের আর দরকার নেই! এত ভাবছেন কেন?”, বলল রুপা।
“সেটাই হয়তো!”
রুটি, ডিম আর বুটের ডাল দিয়ে জম্পেশ ব্রেকফাস্টের পর বেরিয়ে পড়ল ওরা। তাহমিনা হায়াতের রুমে তালা দেয়া–পারিজার রুম যে ভেতর থেকে বন্ধই থাকবে, সে ব্যাপারে প্রায় নিঃসন্দেহ ছিল নির্জন। বাইরে হাড় কাঁপানো শীত– শুরু হয়েছে মাঘের তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। ঘড়িতে বাজছে প্রায় দশটা, এখনো চারিদিকে ভোরের কুয়াশা; শ্রীমঙ্গলের সিগ্ধ শান্ত প্রকৃতি আজ কীসের খেয়ালে লুকোচুরি খেলছে আবছায়া আবডালে থেকে, গতরাতের শিশির গাছের পাতা থেকে এখনো টপটপ ঝরে পড়ছে আধভেজা ধুলো মাটিতে।
তিনতলার ফাঁকা করিডোর পেরিয়ে সিঁড়ি বিয়ে নিচে নেমে এলো ওরা। রুপা গ্যাবারডিনের মেরুন প্যান্টের সাথে পরেছে নীল জ্যাকেট– মাথায় গোলাপি কানঢাকা টুপি, হাতে হাতমোজা। সকালের মেঘলা আলোয় ওকে লাগছে মাছরাঙার মতো।
রিসেপশন পেরিয়ে লনে পা দিতেই তাহমিনা হায়াতকে দেখতে পেল নির্জন। বাঁ হাত জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে ডান হাতে চায়ের কাপ নিয়ে কথা বলছেন তার দিকে মুখ করে থাকা দুজন ভদ্রলোকের সাথে। বেশ লম্বা, স্বাস্থ্যবান পেটানো শরীরের মনোয়ার ওমরের পাশের পাঁচ ফুট সাড়ে তিন ইঞ্চি প্রায় টেকো ভদ্রলোক যে জুলফিকার আমান, এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ নির্জন।
সুপ্রভা অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে একটা ফ্রেম দেখিয়েছিল জুলফিকার আমানের– সেই ফ্রেমে আরো খাটো লাগছিল ওকে।
নির্জনকে দেখতে পেয়েই হাত নেড়ে কী যেন বলে উঠলেন তাহমিনা হায়াত, নির্জন শুনতে পেল না। কাছেই যেতেই তিনি বললেন, “এই ফুলের মতো মেয়টা কে? কাল এর কথা বলনি তো!”
“আমার গার্লফ্রেন্ড, রুপা। কাল তো এর কথা বলার সুযোগই হয়নি!”, হেসে বলল নির্জন।
“গার্ল ফ্রেন্ড? মানে প্রি ম্যারিটাল হানিমুন?”, রুপার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেন জুলফিকার আমান।
কথাটায় ধিক্কার ছিল একধরণের, ভালো লাগল না নির্জনের। তবু ভদ্রতার মুখোশ না খুলে বলল, “খানিকটা তেমনই বলতে পারেন! একসাথে থেকে বোঝার চেষ্টা করছি, আমাদের বোঝাপড়াটা বিয়ে করে সারাজীবন একসাথে থাকার উপযোগী কিনা!”
“ওয়েল!”, বললেন জুলফিকার আমান, “ভালো করে বুঝে নাও! না হলে পরে পস্তাবে!”
রুপা চট করে বলে বসল, “আপনাকে পস্তাতে হচ্ছে বুঝি?”
ভদ্রলোক হতচকিয়ে গেলেন রুপার প্রশ্নে। ফ্যাঁকাসে হেসে প্রায় আমতা আমতা করে বললেন, “না না। তা নয়। এমন সুন্দরী স্ত্রী থাকলে পস্তাবার সুযোগই থাকে না!”
“থাক! তোমাকে আর ওদের সামনে আমার রূপের প্রশংসা করতে হবে না!”, বললেন তাহমিনা হায়াত।
মনোয়ার ওমর চুপ করে ছিলেন এতক্ষণ। তামাক পোড়ার গন্ধ নাকে আসতেই নির্জন লক্ষ্য করল, সিগারেট জ্বালিয়েছেন মনোয়ার ওমর। তিনি বললেন, “প্রশংসা করতে দাও, তাহমিনা! সৌন্দর্য নিয়ে জন্মালে স্তুতি সহ্য করার দক্ষতাটাও আয়ত্ত করতে হয়!”
“তাহমিনা হায়াতের সৌন্দর্যের প্রশংসা আপনি ভালোমতোই করছেন বটে!”, মনে মনে বলল নির্জন– ফুটে উঠল ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি।
“তোমরা এই শীতে বের হচ্ছো কোথায়?”, জিজ্ঞেস করলেন তাহমিনা হায়াত।
“মাধবপুর লেকের দিকে একবার যাওয়ার কথা ভাবছি। দেখা যাক গাড়িটারি কিছু পাওয়া যায় কিনা!”
জুলফিকার আমান বললেন, “ঘুরে এসো। এটাই তো বয়স!”
“আপনাদের কী প্ল্যান? কোথাও যাচ্ছেন আজ?”, জিজ্ঞেস করল নির্জন।
উত্তরটা দিলেন তাহমিনা। বললেন, “প্ল্যান সবটা ডিপেন্ড করছে আবহাওয়ার উপর। অবস্থা এমনটাই থাকলে জানি না কী করব!”
হঠাৎ খেয়াল হওয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠলেন আবার, “তোমাদের তো পরিচয় করিয়ে দেয়াই হলো না। ইনি আমার হাবি জুলফি– জুলফিকার আমান আর ইনি কলিগ মনোয়ার ওমর।“
কথাটা এতক্ষণে মনে পড়ল নির্জনেরও। প্রত্যেককেই ও চেনে যদিও পেশার সুবাদে, আনুষ্ঠানিক আলাপ হয়নি এখনো। দুজনের সাথেই হ্যান্ডশেক করল নির্জন।
জুলফিকার আমান বললেন, “ভাগ্যটা দেখলে? একটা দিনের জন্য এলাম– আর এই আবহাওয়া! কথায় আছে না, অভাগা যেদিকে যায়…”
“আজ থেকে যান না হয়”, জুলফিকারকে কথাটা শেষ করতে দিলেন না মনোয়ার ওমর। “এই শীতে বৌকে ছেড়ে ঢাকা গিয়ে ভালো লাগবে আপনার?”
উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন মনোয়ার ওমর কথাটা বলেই। মুগ্ধ হলো নির্জন, এমন প্রাণোচ্ছল মুক্তকণ্ঠ হাসিতে– সবাই এমন উদাত্ত উদারভাবে হাসতে জানে না।
কিন্তু মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল জুলফিকার আমানের। কারণটা আর কেউ না বুঝলেও, নির্জন বুঝেছি ভালোভাবেই। জুলফি বিষণ্ণ গলায় বললেন, “কিছুই করার নেই! আমার বিজনেস আর ওর রিসার্চ!”
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে বিদায় নিল ওরা। ওদের থেকে সামান্য দূরে গিয়ে রুপা বলল, “এই ঠাণ্ডায় মাধবপুর যাওয়া ঠিক হবে?”
“এখনো তো শীত শুরুই হয়নি। একটানা সাতদিন যদি এমন আবহাওয়া থাকে, কী করবে? সারাদিন ঘরে লেপের নিচে বসে থাকবে?”
“আমি বলছিলাম”, নির্জনের দিকে দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকিয়ে বলল রুপা, “ঘরে গিয়ে একবার শরীরটা গরম করে নিলে হতো না?”
এই হয়েছে! কাল রাতে পারিজার সাথে ওমন উথাল পাতাল সেক্সের পর আজ সকালে বিছানা ছাড়তেই ইচ্ছে করছিল না ওর। এখন রুপার সাথে বিছানায় যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারছে না নির্জন! কিন্তু সেটা বুঝতে দিল না ও রুপাকে। ওর হাতটা ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল, “একবার রুমে ফেরত গেলে তোমাকে আর বেরুতে হবে না! সারাদিন ছাদের দিকে তাকিয়ে কাটাতে হবে!”
“থাক। ঢাকায়ও সারাদিন ঘরবন্দী থেকে সেক্স করা যাবে। কিন্তু লেক তো আর ঢাকায় পাব না!”
মাধবপুর লেক যে এত দূরে হবে হোটেল থেকে, ভাবেনি নির্জন। সিএনজিতেই সময় লাগল প্রায় ঘণ্টাখানেক। লাল মাটির পথের দুপাশে সার সার টিলা উঠে গেছে কিছুদূর আকাশে। টিলার গায়ের কাঁচা আর গাঢ় সবুজ ঝোপে হুটোপুটি করছে পাখি। রঙিন ধুলোয় পথের সাথে লেগে থাকা ঝোপগুলো মেদুর। মাঝে বেশ কয়েকটা টি স্টে– তারকাটায় ঘেরা সেসব টিস্টেটের সাইনবোর্ডে লেখা– প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত।
“রুপা, মাধবপুর হ্রদ কিন্তু প্রাকৃতিক নয়, জানো তো?”
মাধবপুর টি স্টেট লেখা বিশাল একটা নামফলকের সামনে সিএনজি থেকে নেমে বলল নির্জন।
“না তো! এটা ম্যানমেড?”, রুপার অবাক জিজ্ঞাসা।
“হ্যাঁ। চা বাগানের কাজের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন। তাই বাঁধ দিয়ে এই হ্রদ তৈরি করা হয়েছে, উইকিপিডিয়ায় পড়েছি কাল। ফয়েজ লেকও!”
গেট থেকে বেশ কিছুদূর চা বাগানের ভেতর দিয়ে হেঁটে লেকের সামনে এসে পড়ল ওরা।
“কৃত্রিম হোক আর প্রাকৃতিক, এটা স্বর্গীয়!”
সূর্য দেখা না দিলেও কুয়াশা কেটে গিয়েছে এর মধ্যে, আকাশে বেশ পরিষ্কার আলো। মেঘলা আকাশ নেমে এসেছে লেকের নীল জলে, মেঘের মেদুর রঙের প্রচ্ছদে ভাসছে কয়েকটা হাঁস আর লাল পদ্ম।
পাহাড় বেয়ে উঠে এলো ওরা। হাঁটতে লাগল বাগানের ভেতরের পায়ে চলা পথ ধরে। কিছুদূর হেঁটে থামল ওরা, বসল ছ’সাত বছরের শিশু বটের নিচে।
নিচে লেকের স্বচ্ছ জল– নিখুঁত শিল্পীর আঁকা ছবির মতো– এতো বেশি সুন্দর, বিশ্বাস হয় না বাস্তব বলে।
অনেকটা চড়াইয়ের পর হাঁপাচ্ছে দুজনই। রুপা বলল, “এত সুন্দর! এত সৌন্দর্য ছেড়ে আমরা থাকি ঢাকার মতো একটা বিশ্রী শহরে?”
“থেকে যাও না!”, ঠাট্টা করে বলল নির্জন। “কাজ নাও চা বাগানে। প্রতি কেজি চা পাতা তুলে পাবে ৪ টাকা! সারাদিনে সর্বোচ্চ পনেরো কিংবা ২০ কেজি চা পাতা তুলতে পারবে! দৈনিক একশো টাকা করে রোজগার আর সঙ্গে সৌন্দর্য!”
“সত্যিই! চা শ্রমিকদের সাথে খুব অবিচার করা হয়!”, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল রুপা।
“এক কাপ চায়ের দাম ৫ টাকা– চা শ্রমিকেরা এক কেজি পাতা তুলে এক কাপ চায়ের দামটাও পায় না! চালের কেজি এদিকে পঞ্চাশ। সারাদিন কাজ করে এরা দুই কেজি চালের টাকাও রোজগার করতে পারে না, ভাবতে পারো?”
“কেউ কিছু করছে না কেন?”, বলল রুপা অধৈর্য গলায়।
কিছুদূরে একজোড়া বুলবুলি নিজেদের মধ্যে ম্যান্ডারিনে ঝগড়া করছে, সেদিকে তাকিয়ে সিগারেট অগ্নিসংযোগ করল নির্জন। বলল, “কে করবে?
শ্রমিকদের নিয়ে যারা কাজ করে, সত্যিই ভাবে বলে আমরা জানি, সেই সমাজতান্ত্রিক দলগুলো তো নিজেদের মধ্যে মার্কসবাদ লেনিনবাদের তত্বকথা নিয়ে ব্যস্ত। বারো গণ্ডা দল–উপদলে বিভক্ত। ওরা এদের নিয়ে কাজ করবে কখন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দশ বারোজন নিয়ে মিছিল করলে তো আর শ্রমিক অধিকার আদায় হয় না! বাকিদের দোষ আমি দেই না। ওরা বুর্জোয়া দল– এসব চা বাগানয়াগানের শেয়ার হোল্ডার দেখবে ওরাই!”
“তাই বলে কেউ কিছু করবে না!”, বিস্মিত গলায় বলল রুপা।
“করবে না!”, বলল নির্জন। “আমরা তো পাহাড়ে উপভোগ করতে আসি। পাহাড়ের কান্না ক’জন শোনে? দেশটা বহুদিন আগেই চলে গিয়েছে বুর্জোয়াদের হাতে। এখন দিন দিন বৈষম্য বাড়বে শুধু, কমবে না।“
সেখানেই কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠল ওরা। হাঁটতে লাগল টিলার উপর দিয়ে। যতদূর চোখ যায় পাহাড়ের সারি– সাগরের ঢেউয়ের মতো একে অপরের গায়ে ঢলে পড়ছে যেন টিলার মাথাগুলো। ওদের মাথায় কুয়াশা জমেছে মেঘের মতো– মেঘ ফুঁড়ে আকাশে উঁকি মেরেছে চাঁদের মতো কোমল নিস্তেজ সূর্য– অকারণেই ছিটগ্রস্ত কয়েকটি ফিঙে ঘুরে ঘুরে উড়ছে একটানা।
মাধবপুর লেকেই কয়েক ঘণ্টা কাঁটিয়ে ফিরে এলো ওরা, সন্ধ্যা নামার আগেই।
সিগারেট জ্বালিয়ে ঘরে ফেরার সময় সিঁড়িতে দেখা হলো জুলফিকার আমানের সাথে, সঙ্গে তাহমিনা হায়াত ও পারিজা।
জুলফিকার বললেন, “চলে যাচ্ছি, ইয়াং ম্যান। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে!”
পাশ কাঁটিয়ে যাওয়ার সময় পারিজা ওর দিকে তাকিয়ে চোখ নাচিয়ে হাসল ঠোঁটের কোণে।
ঘরে ফেরার আগে রিসেপশনে গিয়ে আরো তিনদিন থাকার কথা বলল নির্জন। প্রথমদিনের সেই পর্বতস্তনের রেসেপশনিস্ট আজও র কে ড় উচ্চারণ করে বলল, “এনজয় দ্যা ডে, স্যাড়!”
কী একটা পাখির কর্কশ ডাকে ঘুম ভাঙাল নির্জনের। ফোনে চারটা মিসডকল; ঘড়িতে ন’টা বেজে সাত। বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে ফিরে কল ব্যাক করবে ভেবে বিছানা ছাড়াল ও।
কাল রাতে পারিজার রুম থেকে ঠিক একটায় বেড়িয়েছিল নির্জন। প্রায় টলতে টলতে এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ঢলে পড়েছিল বিছানায়। মাথা ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল ওর। পারিজাকে চতুর্থবার পেছন দিক থেকে চোদার সময় কোন অনুভূতিই হচ্ছিল না আর– পারিজাও সাড়া দিচ্ছিল না আগের মতো। প্রচণ্ড আগ্রহ আর উত্তেজনা নিয়ে শুরু হওয়া দীর্ঘ ট্যুর যেমন শেষ হয় ক্লান্তিকর ফেরতযাত্রা দিয়ে, তেমনই শ্রান্ত সমাপ্তি হয়েছিল ওদের।
ফেরার সময় একটা চুমু পর্যন্ত দেয়নি নির্জন পারিজার ঠোঁটে!
বাথরুম থেকে বেড়িয়েই রুপার মুখোমুখি নির্জন। বাইরে কোথাও গিয়েছিল ও, ফিরেছে রুম সার্ভিসকে নিয়ে।
হোটেল বয় রুটির সাথে ভাজা ডিম আর বুটের ডাল টেবিলে সার্ভ করে বেরিয়ে গেলে, রুপা বলল, “আমি একটু হাঁটলাম পেছনের বাগানে। এত্ত ঠাণ্ডা! কুয়াশায় দুহাত দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছে না ”
“তাহলে তো আমাদের মাধবপুর লেকে যাওয়াই হচ্ছে না আজ!”, বলল নির্জন খাবারের প্লেট তুলে নিয়ে।
“সে দেখা যাবে! সুপ্রভা ফোন দিয়েছিল। বলল, জুলফিকার আমান নাকি আবার ফোনে হুমকি দিয়েছে ওকে।“
নির্জন আগ্রহ দেখালো না কোন, একমনে ডালের বাটিতে রুটির টুকরো ডুবিয়ে পুরতে লাগল মুখে।
“উনি নাকি শ্রীমঙ্গলে আসছেন। রাতের ট্রেনেই। এসে যদি দেখেন কেউ ওর বৌয়ের পিছনে এখনো লেগে আছে, তাহলে নাকি ফল ভালো হবে না!”
এবারে মুখ তুলে তাকাল নির্জন। সরাসরি রুপার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, “তারমানে তো এসে গেছেন এতক্ষণে!”
“হ্যাঁ। শুধু আসেননি, রীতিমত আমাদের বারোটা বাজানোর পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন!”
“সেই ভয় নেই।“, আবারও খেতে শুরু করল নির্জন। রুটি মুখেই বলল, “জুলফিকার আমাদের ছবি দেখেননি!”
“তবে আমাদের বৌয়ের পিছনে লাগিয়ে, হঠাৎ মুভ করতে বারণ করা– ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত, তাই না? এমনটা এর আগে হয়নি কোনদিন!”
“হয়তো নিজেই প্রমাণ পেয়েছেন বৌয়ের কীর্তিকলাপের! আমাদের আর দরকার নেই! এত ভাবছেন কেন?”, বলল রুপা।
“সেটাই হয়তো!”
রুটি, ডিম আর বুটের ডাল দিয়ে জম্পেশ ব্রেকফাস্টের পর বেরিয়ে পড়ল ওরা। তাহমিনা হায়াতের রুমে তালা দেয়া–পারিজার রুম যে ভেতর থেকে বন্ধই থাকবে, সে ব্যাপারে প্রায় নিঃসন্দেহ ছিল নির্জন। বাইরে হাড় কাঁপানো শীত– শুরু হয়েছে মাঘের তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। ঘড়িতে বাজছে প্রায় দশটা, এখনো চারিদিকে ভোরের কুয়াশা; শ্রীমঙ্গলের সিগ্ধ শান্ত প্রকৃতি আজ কীসের খেয়ালে লুকোচুরি খেলছে আবছায়া আবডালে থেকে, গতরাতের শিশির গাছের পাতা থেকে এখনো টপটপ ঝরে পড়ছে আধভেজা ধুলো মাটিতে।
তিনতলার ফাঁকা করিডোর পেরিয়ে সিঁড়ি বিয়ে নিচে নেমে এলো ওরা। রুপা গ্যাবারডিনের মেরুন প্যান্টের সাথে পরেছে নীল জ্যাকেট– মাথায় গোলাপি কানঢাকা টুপি, হাতে হাতমোজা। সকালের মেঘলা আলোয় ওকে লাগছে মাছরাঙার মতো।
রিসেপশন পেরিয়ে লনে পা দিতেই তাহমিনা হায়াতকে দেখতে পেল নির্জন। বাঁ হাত জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে ডান হাতে চায়ের কাপ নিয়ে কথা বলছেন তার দিকে মুখ করে থাকা দুজন ভদ্রলোকের সাথে। বেশ লম্বা, স্বাস্থ্যবান পেটানো শরীরের মনোয়ার ওমরের পাশের পাঁচ ফুট সাড়ে তিন ইঞ্চি প্রায় টেকো ভদ্রলোক যে জুলফিকার আমান, এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ নির্জন।
সুপ্রভা অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে একটা ফ্রেম দেখিয়েছিল জুলফিকার আমানের– সেই ফ্রেমে আরো খাটো লাগছিল ওকে।
নির্জনকে দেখতে পেয়েই হাত নেড়ে কী যেন বলে উঠলেন তাহমিনা হায়াত, নির্জন শুনতে পেল না। কাছেই যেতেই তিনি বললেন, “এই ফুলের মতো মেয়টা কে? কাল এর কথা বলনি তো!”
“আমার গার্লফ্রেন্ড, রুপা। কাল তো এর কথা বলার সুযোগই হয়নি!”, হেসে বলল নির্জন।
“গার্ল ফ্রেন্ড? মানে প্রি ম্যারিটাল হানিমুন?”, রুপার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেন জুলফিকার আমান।
কথাটায় ধিক্কার ছিল একধরণের, ভালো লাগল না নির্জনের। তবু ভদ্রতার মুখোশ না খুলে বলল, “খানিকটা তেমনই বলতে পারেন! একসাথে থেকে বোঝার চেষ্টা করছি, আমাদের বোঝাপড়াটা বিয়ে করে সারাজীবন একসাথে থাকার উপযোগী কিনা!”
“ওয়েল!”, বললেন জুলফিকার আমান, “ভালো করে বুঝে নাও! না হলে পরে পস্তাবে!”
রুপা চট করে বলে বসল, “আপনাকে পস্তাতে হচ্ছে বুঝি?”
ভদ্রলোক হতচকিয়ে গেলেন রুপার প্রশ্নে। ফ্যাঁকাসে হেসে প্রায় আমতা আমতা করে বললেন, “না না। তা নয়। এমন সুন্দরী স্ত্রী থাকলে পস্তাবার সুযোগই থাকে না!”
“থাক! তোমাকে আর ওদের সামনে আমার রূপের প্রশংসা করতে হবে না!”, বললেন তাহমিনা হায়াত।
মনোয়ার ওমর চুপ করে ছিলেন এতক্ষণ। তামাক পোড়ার গন্ধ নাকে আসতেই নির্জন লক্ষ্য করল, সিগারেট জ্বালিয়েছেন মনোয়ার ওমর। তিনি বললেন, “প্রশংসা করতে দাও, তাহমিনা! সৌন্দর্য নিয়ে জন্মালে স্তুতি সহ্য করার দক্ষতাটাও আয়ত্ত করতে হয়!”
“তাহমিনা হায়াতের সৌন্দর্যের প্রশংসা আপনি ভালোমতোই করছেন বটে!”, মনে মনে বলল নির্জন– ফুটে উঠল ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি।
“তোমরা এই শীতে বের হচ্ছো কোথায়?”, জিজ্ঞেস করলেন তাহমিনা হায়াত।
“মাধবপুর লেকের দিকে একবার যাওয়ার কথা ভাবছি। দেখা যাক গাড়িটারি কিছু পাওয়া যায় কিনা!”
জুলফিকার আমান বললেন, “ঘুরে এসো। এটাই তো বয়স!”
“আপনাদের কী প্ল্যান? কোথাও যাচ্ছেন আজ?”, জিজ্ঞেস করল নির্জন।
উত্তরটা দিলেন তাহমিনা। বললেন, “প্ল্যান সবটা ডিপেন্ড করছে আবহাওয়ার উপর। অবস্থা এমনটাই থাকলে জানি না কী করব!”
হঠাৎ খেয়াল হওয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠলেন আবার, “তোমাদের তো পরিচয় করিয়ে দেয়াই হলো না। ইনি আমার হাবি জুলফি– জুলফিকার আমান আর ইনি কলিগ মনোয়ার ওমর।“
কথাটা এতক্ষণে মনে পড়ল নির্জনেরও। প্রত্যেককেই ও চেনে যদিও পেশার সুবাদে, আনুষ্ঠানিক আলাপ হয়নি এখনো। দুজনের সাথেই হ্যান্ডশেক করল নির্জন।
জুলফিকার আমান বললেন, “ভাগ্যটা দেখলে? একটা দিনের জন্য এলাম– আর এই আবহাওয়া! কথায় আছে না, অভাগা যেদিকে যায়…”
“আজ থেকে যান না হয়”, জুলফিকারকে কথাটা শেষ করতে দিলেন না মনোয়ার ওমর। “এই শীতে বৌকে ছেড়ে ঢাকা গিয়ে ভালো লাগবে আপনার?”
উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন মনোয়ার ওমর কথাটা বলেই। মুগ্ধ হলো নির্জন, এমন প্রাণোচ্ছল মুক্তকণ্ঠ হাসিতে– সবাই এমন উদাত্ত উদারভাবে হাসতে জানে না।
কিন্তু মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল জুলফিকার আমানের। কারণটা আর কেউ না বুঝলেও, নির্জন বুঝেছি ভালোভাবেই। জুলফি বিষণ্ণ গলায় বললেন, “কিছুই করার নেই! আমার বিজনেস আর ওর রিসার্চ!”
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে বিদায় নিল ওরা। ওদের থেকে সামান্য দূরে গিয়ে রুপা বলল, “এই ঠাণ্ডায় মাধবপুর যাওয়া ঠিক হবে?”
“এখনো তো শীত শুরুই হয়নি। একটানা সাতদিন যদি এমন আবহাওয়া থাকে, কী করবে? সারাদিন ঘরে লেপের নিচে বসে থাকবে?”
“আমি বলছিলাম”, নির্জনের দিকে দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকিয়ে বলল রুপা, “ঘরে গিয়ে একবার শরীরটা গরম করে নিলে হতো না?”
এই হয়েছে! কাল রাতে পারিজার সাথে ওমন উথাল পাতাল সেক্সের পর আজ সকালে বিছানা ছাড়তেই ইচ্ছে করছিল না ওর। এখন রুপার সাথে বিছানায় যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারছে না নির্জন! কিন্তু সেটা বুঝতে দিল না ও রুপাকে। ওর হাতটা ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বলল, “একবার রুমে ফেরত গেলে তোমাকে আর বেরুতে হবে না! সারাদিন ছাদের দিকে তাকিয়ে কাটাতে হবে!”
“থাক। ঢাকায়ও সারাদিন ঘরবন্দী থেকে সেক্স করা যাবে। কিন্তু লেক তো আর ঢাকায় পাব না!”
মাধবপুর লেক যে এত দূরে হবে হোটেল থেকে, ভাবেনি নির্জন। সিএনজিতেই সময় লাগল প্রায় ঘণ্টাখানেক। লাল মাটির পথের দুপাশে সার সার টিলা উঠে গেছে কিছুদূর আকাশে। টিলার গায়ের কাঁচা আর গাঢ় সবুজ ঝোপে হুটোপুটি করছে পাখি। রঙিন ধুলোয় পথের সাথে লেগে থাকা ঝোপগুলো মেদুর। মাঝে বেশ কয়েকটা টি স্টে– তারকাটায় ঘেরা সেসব টিস্টেটের সাইনবোর্ডে লেখা– প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত।
“রুপা, মাধবপুর হ্রদ কিন্তু প্রাকৃতিক নয়, জানো তো?”
মাধবপুর টি স্টেট লেখা বিশাল একটা নামফলকের সামনে সিএনজি থেকে নেমে বলল নির্জন।
“না তো! এটা ম্যানমেড?”, রুপার অবাক জিজ্ঞাসা।
“হ্যাঁ। চা বাগানের কাজের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন। তাই বাঁধ দিয়ে এই হ্রদ তৈরি করা হয়েছে, উইকিপিডিয়ায় পড়েছি কাল। ফয়েজ লেকও!”
গেট থেকে বেশ কিছুদূর চা বাগানের ভেতর দিয়ে হেঁটে লেকের সামনে এসে পড়ল ওরা।
“কৃত্রিম হোক আর প্রাকৃতিক, এটা স্বর্গীয়!”
সূর্য দেখা না দিলেও কুয়াশা কেটে গিয়েছে এর মধ্যে, আকাশে বেশ পরিষ্কার আলো। মেঘলা আকাশ নেমে এসেছে লেকের নীল জলে, মেঘের মেদুর রঙের প্রচ্ছদে ভাসছে কয়েকটা হাঁস আর লাল পদ্ম।
পাহাড় বেয়ে উঠে এলো ওরা। হাঁটতে লাগল বাগানের ভেতরের পায়ে চলা পথ ধরে। কিছুদূর হেঁটে থামল ওরা, বসল ছ’সাত বছরের শিশু বটের নিচে।
নিচে লেকের স্বচ্ছ জল– নিখুঁত শিল্পীর আঁকা ছবির মতো– এতো বেশি সুন্দর, বিশ্বাস হয় না বাস্তব বলে।
অনেকটা চড়াইয়ের পর হাঁপাচ্ছে দুজনই। রুপা বলল, “এত সুন্দর! এত সৌন্দর্য ছেড়ে আমরা থাকি ঢাকার মতো একটা বিশ্রী শহরে?”
“থেকে যাও না!”, ঠাট্টা করে বলল নির্জন। “কাজ নাও চা বাগানে। প্রতি কেজি চা পাতা তুলে পাবে ৪ টাকা! সারাদিনে সর্বোচ্চ পনেরো কিংবা ২০ কেজি চা পাতা তুলতে পারবে! দৈনিক একশো টাকা করে রোজগার আর সঙ্গে সৌন্দর্য!”
“সত্যিই! চা শ্রমিকদের সাথে খুব অবিচার করা হয়!”, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল রুপা।
“এক কাপ চায়ের দাম ৫ টাকা– চা শ্রমিকেরা এক কেজি পাতা তুলে এক কাপ চায়ের দামটাও পায় না! চালের কেজি এদিকে পঞ্চাশ। সারাদিন কাজ করে এরা দুই কেজি চালের টাকাও রোজগার করতে পারে না, ভাবতে পারো?”
“কেউ কিছু করছে না কেন?”, বলল রুপা অধৈর্য গলায়।
কিছুদূরে একজোড়া বুলবুলি নিজেদের মধ্যে ম্যান্ডারিনে ঝগড়া করছে, সেদিকে তাকিয়ে সিগারেট অগ্নিসংযোগ করল নির্জন। বলল, “কে করবে?
শ্রমিকদের নিয়ে যারা কাজ করে, সত্যিই ভাবে বলে আমরা জানি, সেই সমাজতান্ত্রিক দলগুলো তো নিজেদের মধ্যে মার্কসবাদ লেনিনবাদের তত্বকথা নিয়ে ব্যস্ত। বারো গণ্ডা দল–উপদলে বিভক্ত। ওরা এদের নিয়ে কাজ করবে কখন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দশ বারোজন নিয়ে মিছিল করলে তো আর শ্রমিক অধিকার আদায় হয় না! বাকিদের দোষ আমি দেই না। ওরা বুর্জোয়া দল– এসব চা বাগানয়াগানের শেয়ার হোল্ডার দেখবে ওরাই!”
“তাই বলে কেউ কিছু করবে না!”, বিস্মিত গলায় বলল রুপা।
“করবে না!”, বলল নির্জন। “আমরা তো পাহাড়ে উপভোগ করতে আসি। পাহাড়ের কান্না ক’জন শোনে? দেশটা বহুদিন আগেই চলে গিয়েছে বুর্জোয়াদের হাতে। এখন দিন দিন বৈষম্য বাড়বে শুধু, কমবে না।“
সেখানেই কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠল ওরা। হাঁটতে লাগল টিলার উপর দিয়ে। যতদূর চোখ যায় পাহাড়ের সারি– সাগরের ঢেউয়ের মতো একে অপরের গায়ে ঢলে পড়ছে যেন টিলার মাথাগুলো। ওদের মাথায় কুয়াশা জমেছে মেঘের মতো– মেঘ ফুঁড়ে আকাশে উঁকি মেরেছে চাঁদের মতো কোমল নিস্তেজ সূর্য– অকারণেই ছিটগ্রস্ত কয়েকটি ফিঙে ঘুরে ঘুরে উড়ছে একটানা।
মাধবপুর লেকেই কয়েক ঘণ্টা কাঁটিয়ে ফিরে এলো ওরা, সন্ধ্যা নামার আগেই।
সিগারেট জ্বালিয়ে ঘরে ফেরার সময় সিঁড়িতে দেখা হলো জুলফিকার আমানের সাথে, সঙ্গে তাহমিনা হায়াত ও পারিজা।
জুলফিকার বললেন, “চলে যাচ্ছি, ইয়াং ম্যান। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে!”
পাশ কাঁটিয়ে যাওয়ার সময় পারিজা ওর দিকে তাকিয়ে চোখ নাচিয়ে হাসল ঠোঁটের কোণে।
ঘরে ফেরার আগে রিসেপশনে গিয়ে আরো তিনদিন থাকার কথা বলল নির্জন। প্রথমদিনের সেই পর্বতস্তনের রেসেপশনিস্ট আজও র কে ড় উচ্চারণ করে বলল, “এনজয় দ্যা ডে, স্যাড়!”