11-03-2021, 07:20 PM
যখন আমার জ্ঞান ফিরলো তখনো আমারা ঐ নৌকাতেই আছি । তারাতারি আমি অনিলার খোঁজ নিলাম, কিন্তু জেসমিন আমাকে উঠতে দিলো না বলল “ ভাই আপনি সুইয়া থাকেন , অনিলা অহন ঠিক আছে , তবে দুর্বল , সোনিয়া ভাবি ওরে দেখতাসে” । দেখলাম সোনিয়া দ্রুত অনিলার পায়ের পাতা মালিশ করে দিচ্ছে ।
“ নৌকা চলছে না কেনো?” আমি দুর্বল স্বরে জিজ্ঞাস করলাম ।
“ মাঝি পালাইসে ভাই , জালাল কইলো , মাঝি লগি নেয়ার সময় অনিলার শরীরে আঘাত লাগসে , হেই ডরে মাঝি পলাইসে , এখন অন্য লোক আইতাসে নৌকা চালানোর জন্য”
কিছুক্ষন পর দেখলাম আরও একটি ইঞ্জিন ট্রলার এসে ভিরলো আমাদেরটার সাথে , সেখানে করিম আর নাল্টু বাদে আরও একজন লোক আছে । ওরা তিনজনেই লাফিয়ে আমাদের নৌকায় এসে নামলো । নাল্টু আর করিম সরাসরি অনিলার কাছে এগিয়ে গেলো, নাল্টুর সাথে কম্বল টাইপ কিছু আছে । সেটা দিয়ে অনিলাকে জড়িয়ে রাখা হলো । আমি অনেক চেষ্টা করলাম অনিলার কাছে যেতে কিন্তু আমার হাত পা কাপছিলো । এতো দুর্বল হয়ে গেছে আমার শরীর !!! মনে মনে খুব অবাক হলাম ।
আমাদের ট্রলারের ইঞ্জিন চালু করা হলো , দ্রুত ডাঙ্গার কাছে নিয়ে যাওয়া হলো । সেখানে আমাদের জন্য কয়েকটি ব্যাটারি চালিত অটো ছিলো । তাতে করে আমারা দ্রুত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর দিকে গেলাম । সেখানে অনিলার ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে দেয়া হলো । মনে মনে খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম আমি , একবার বললাম করিম কে যে অনিলাকে শহরে নিয়ে যাই । কিন্তু সোনিয়া আশ্বস্ত করলো যে তার কোন দরকার নেই । তেমন কিছু হয়নি অনিলার , খুব বেশি ভয় পাওয়ার কারনে এমন হয়েছে ।
ঘণ্টা দুই পর আমারা মিয়াঁ বাড়ির পথ ধরলাম । খবর পেয়ে আজমল চাচা ও চলে এসেছে সাথে করে একটা ভ্যান নিয়ে এসেছিলেন উনি , তাতে করেই অনিলাকে নিয়ে যাওয়া হলো । অনিলার তেমন কিছু হয়নি এটা সোনার পর একদিকে যেমন একটু স্বস্তি পাচ্ছিলাম অন্য দিকে আরও একটা ভয় এসে মনে দানা বাধতে লাগলো । সেটা হচ্ছে মেয়ের মায়ের কাছে কি জবাব দেবো । লিজা কিছুতেই আমার সাথে অনিলাকে একা দিতে চায়নি , এখন যদি মেয়ের এই হালের কথা জানতে পারে তখন হয়ত আর কোনদিন আমি অনিলাকে কোথাও নিয়ে যেতে পারবো না ।
বাড়িতে আসার পর সোনিয়া জেসমিন আর ঝুমা প্রচুর সেবা করলো অনিলার । হাতে পায়ে গরম সেঁক দেয়া হলো , সরিষার তেল মালিশ করা হলো । ধিরে ধিরে জ্ঞান ফিরলো অনিলার ঠোট দুটো ফ্যাঁকাসে হয়ে আছে এখনো । জ্ঞান ফিরে অনিলা পানি খেতে চাইলো । আমি দ্রুত গিয়ে অনিলার পাশে এসে বসলাম । মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম “কি রে মা এখন কেমন বোধ করছিস “
এই অসুস্থ অবস্থায় ও ফিক করে হেঁসে ফেললো অনিলা বলল “ আব্বু তুমি খুব ভয় পেয়েছো তাই না”
“ ভয় পাওয়ার ই তো কথা , তাই নয় কি?” আমি একটু গম্ভির কণ্ঠে বললাম
“ হ্যাঁ কিন্ত তোমার সবচেয়ে বেশি ভয় লাগছে আম্মু কে , তাই না? সমস্যা নেই আমি এসব এর কিছুই বলবো না আম্মুর কাছে” এই বলে অনিলা হাসতে লাগলো ।
আমিও আর গম্ভির থাকতে পারলাম না , আসলেই মেয়েটা একটা বিচ্ছু , এই অবস্থায় ও জোঁক করছে ।
“ হইসে আর মজা করতে হইবো না , এই গরম দুধ খাও , সইল্লে জোড় পাইবা” ঝুমা এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে এসেছে । অনিলা অনেক না করলো কিন্তু ঝুমা ওর কথা শুনল না জোড় করে গরম দুধ খাইয়ে দিলো । দুধ খাওয়ার পর অনিলা আবার ঘুমিয়ে পরলো ।
আমাকেও এক গ্লাস গরম দুধ খেতে হলো , ঝুমার জরাজুরিতে । তবে গরম দুধ খেয়ে শরীর টা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠলো । একটু পর জেসমিন আর লান্টু চলে গেলো । জেসমিন এতক্ষন ভেজা কাপড়েই ছিলো । অনিলার চিন্তায় এতক্ষন আমি সেটা লক্ষ করিনি , যখন খেয়াল হলো তখন খুব খারাপ লাগলো আমার কাছে , আরও আগেই ওদের পাঠিয়ে দেয়া দরকার ছিলো । যাওয়ার আগে নাল্টু আমার কাছে সেদিনের জন্য ক্ষমা চেয়ে গেলো । আসলে নৌকায় নাল্টু কে দেখে আমি খুব খুসি হয়েছিলাম । ক্ষমা আমারি চাওয়া উচিৎ ছিলো ওর কাছে , কিন্তু সেটা আমি চাইতে পারলাম না , বরং নাল্টু ই আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো । জেসমিন খুব করে বলে গেলো আমি আর অনিলা জেনো অবশ্যই ওদের বাড়ি যাই ।
সন্ধার পর সোনিয়া ও চলে গেলো । এখন সুধু ঝুমা অনিলার পাশে বসে আছে । হালকা জ্বর আসতে শুরু করেছে অনিলার তাই এখন আর গরম সেঁক দেয়া হচ্ছে না । অবশ্য সোনিয়া বলে গেছে , এটা কোন সমস্যা না , রাতে যদি জ্বর বেশি হয় একটা ঔষধ খাইয়ে দিতে । সবাই চলে যেতেই আজমল চাচার আবির্ভাব হলো ।
“ ছোট হুজুর একটা কথা আসিলো , একটু যদি বাইরে আহেন” আমার সামনে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে বলল আজমল চাচা । গতকাল এর পর ওনার আচরণে অনেক পরিবর্তন এসেছে । আগের সেই অভিবাবক সুলভ আচরন আর নেই । ব্যাপারটা আমার কাছে বেশি একটা ভালো লাগলো না , আসলে এক মেয়ে ছাড়া আমার আর কেউ নেই দুনিয়ায় তাই ওনার এই অনম আচরন টা আমার কাছে মন্দ লাগতো না। হ্যাঁ উনি কিছু খারাপ কাজ করেছে কিন্তু তার জন্য এমন করা উচিৎ হয়নি আমার। কিন্তু আমি জতদিন আছে ওনার ভয়টা ও ভাঙ্গাতে চাই না । আমি আজমল চাচার সাথে বাইরে আসলাম । তারপর বললাম
“ কিছু বলবেন চাচা?”
“ আমি মির্জা পুরের চেয়ারম্যান এর লগে কথা কইসি , আপনের আর বিয়া নিয়া টেনশন করন লাগবো না” এই বলে আজমল চাচা চুপ করে রইলেন । মনে হচ্ছে আরও কিছু বলতে চান । তাই আমি জিজ্ঞাস করলাম
“ আরও কিছু কি বলেবন চাচা “
আজমল চাচা কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকার পর আমার দু হাত ধরে কেঁদে ফেললেন । কাঁদতে কাঁদতে বললেন “ ছোট হুজুর আমি চাকর মানুষ , কিন্তু চাকর হইলেও আপ্নেগো নুন খাইসি , হের লইগা কইতাসি , আপনে চইলা যান , আজকা রাইতের ভিতর চইলা যান , নাইলে আপনেরে জানে বাচতে দিবো না “
আমি একেবারে হতচকিয়ে গেলাম , এই সব কি বলছে আজমল চাচা ! তাহলেকে মির্জা পুরের চেয়ারম্যান ওনাকে কোন হুমকি দিয়েছে?
“ কি বলছেন চাচা এই সব , কে আমাকে মারবে , আমি কার ক্ষতি করলাম , আপনাকে কি মির্জা পুরের চেয়ারম্যান কিছু বলেছে?” আমি জিজ্ঞাস করলাম চাচা কে । কিন্তু চাচা কিছুতেই কিছু বলতে চাইলো না , বার বার খালি আমাকে আর অনিলাকে চলে যেতে বলছে । শেষে অনেক জোর করার পর মুখ খুলল আজমল চাচা ।
“ হুজুর আমি ছোট মানুষ কেমন কইরা কই , যারা আপনের ক্ষতি করতে চায় হেরা আপনের আশেপাশের লোক জন , এইবার আপনে বুইঝা লন “
চাচার এই কথা আমাকে আরও বিপাকে ফেলে দিলো , এখানে আমার আশেপাশের লোক বলতে কে আছে । “ চাচা ঠিক করে বলেন তো কি হয়েছে “ আমি এবার একটু ধমক এর সুরে জানতে চাইলাম ।
“ আমি কইলে আবার আমার দোষ হইবো হুজুর , কিন্তু না কইয়া ও পারতাসিনা , আজকা নৌকা কে ঠিক করসিলো ? আমাগো চেয়ারম্যান করিম না ?”
আমি বললাম হ্যাঁ , তখন চাচা আবার বলা শুরু করলো “ ঐ মাঝি রে আমি চিনি , দুই বার জেল খাঁটা লোক , ঐ ইচ্ছা কইরা আপনের মাইয়ারে নৌকা থেইকা ফালাইয়া দিসে , এহন ওরে গেরামে কোন জায়গায় খুইজা পাওয়া যাইতাসেনা “
আমি চুপ হয়ে গেলাম , মনে মনে ভাবছি ,করিম কেনো এমন কাজ করবে , আমি চলে গেলে , অথবা আমার ক্ষতি হলে ওর কি লাভ । এমন সময় আজমল চাচা আবার বলা শুরু করলো
“ আমি জানতাম হুজুর আপনে আমার কথা বিশ্বাস করবেন না , কিন্তু দোহাই লাগে আপনের আপনে চইলা যান , আমার কথা বিশ্বাস না হইলেও চইলা যান , আপনে এইখনে জতদিন থকবেন আপনের আর মিয়াঁ বাড়ির শত্রুরা ততো ভয়ানক হইয়া উঠবো “ এই বলে আজমল চাচা চলে গেলেন ।
নাহ করিম এই ধরনের কাজ কোনদিন করবে না ... মনে মনে ভাবলাম আমি । কিন্তু একেবারে নিসচিন্ত হতে পারলাম না ।
“ নৌকা চলছে না কেনো?” আমি দুর্বল স্বরে জিজ্ঞাস করলাম ।
“ মাঝি পালাইসে ভাই , জালাল কইলো , মাঝি লগি নেয়ার সময় অনিলার শরীরে আঘাত লাগসে , হেই ডরে মাঝি পলাইসে , এখন অন্য লোক আইতাসে নৌকা চালানোর জন্য”
কিছুক্ষন পর দেখলাম আরও একটি ইঞ্জিন ট্রলার এসে ভিরলো আমাদেরটার সাথে , সেখানে করিম আর নাল্টু বাদে আরও একজন লোক আছে । ওরা তিনজনেই লাফিয়ে আমাদের নৌকায় এসে নামলো । নাল্টু আর করিম সরাসরি অনিলার কাছে এগিয়ে গেলো, নাল্টুর সাথে কম্বল টাইপ কিছু আছে । সেটা দিয়ে অনিলাকে জড়িয়ে রাখা হলো । আমি অনেক চেষ্টা করলাম অনিলার কাছে যেতে কিন্তু আমার হাত পা কাপছিলো । এতো দুর্বল হয়ে গেছে আমার শরীর !!! মনে মনে খুব অবাক হলাম ।
আমাদের ট্রলারের ইঞ্জিন চালু করা হলো , দ্রুত ডাঙ্গার কাছে নিয়ে যাওয়া হলো । সেখানে আমাদের জন্য কয়েকটি ব্যাটারি চালিত অটো ছিলো । তাতে করে আমারা দ্রুত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর দিকে গেলাম । সেখানে অনিলার ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে দেয়া হলো । মনে মনে খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম আমি , একবার বললাম করিম কে যে অনিলাকে শহরে নিয়ে যাই । কিন্তু সোনিয়া আশ্বস্ত করলো যে তার কোন দরকার নেই । তেমন কিছু হয়নি অনিলার , খুব বেশি ভয় পাওয়ার কারনে এমন হয়েছে ।
ঘণ্টা দুই পর আমারা মিয়াঁ বাড়ির পথ ধরলাম । খবর পেয়ে আজমল চাচা ও চলে এসেছে সাথে করে একটা ভ্যান নিয়ে এসেছিলেন উনি , তাতে করেই অনিলাকে নিয়ে যাওয়া হলো । অনিলার তেমন কিছু হয়নি এটা সোনার পর একদিকে যেমন একটু স্বস্তি পাচ্ছিলাম অন্য দিকে আরও একটা ভয় এসে মনে দানা বাধতে লাগলো । সেটা হচ্ছে মেয়ের মায়ের কাছে কি জবাব দেবো । লিজা কিছুতেই আমার সাথে অনিলাকে একা দিতে চায়নি , এখন যদি মেয়ের এই হালের কথা জানতে পারে তখন হয়ত আর কোনদিন আমি অনিলাকে কোথাও নিয়ে যেতে পারবো না ।
বাড়িতে আসার পর সোনিয়া জেসমিন আর ঝুমা প্রচুর সেবা করলো অনিলার । হাতে পায়ে গরম সেঁক দেয়া হলো , সরিষার তেল মালিশ করা হলো । ধিরে ধিরে জ্ঞান ফিরলো অনিলার ঠোট দুটো ফ্যাঁকাসে হয়ে আছে এখনো । জ্ঞান ফিরে অনিলা পানি খেতে চাইলো । আমি দ্রুত গিয়ে অনিলার পাশে এসে বসলাম । মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম “কি রে মা এখন কেমন বোধ করছিস “
এই অসুস্থ অবস্থায় ও ফিক করে হেঁসে ফেললো অনিলা বলল “ আব্বু তুমি খুব ভয় পেয়েছো তাই না”
“ ভয় পাওয়ার ই তো কথা , তাই নয় কি?” আমি একটু গম্ভির কণ্ঠে বললাম
“ হ্যাঁ কিন্ত তোমার সবচেয়ে বেশি ভয় লাগছে আম্মু কে , তাই না? সমস্যা নেই আমি এসব এর কিছুই বলবো না আম্মুর কাছে” এই বলে অনিলা হাসতে লাগলো ।
আমিও আর গম্ভির থাকতে পারলাম না , আসলেই মেয়েটা একটা বিচ্ছু , এই অবস্থায় ও জোঁক করছে ।
“ হইসে আর মজা করতে হইবো না , এই গরম দুধ খাও , সইল্লে জোড় পাইবা” ঝুমা এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে এসেছে । অনিলা অনেক না করলো কিন্তু ঝুমা ওর কথা শুনল না জোড় করে গরম দুধ খাইয়ে দিলো । দুধ খাওয়ার পর অনিলা আবার ঘুমিয়ে পরলো ।
আমাকেও এক গ্লাস গরম দুধ খেতে হলো , ঝুমার জরাজুরিতে । তবে গরম দুধ খেয়ে শরীর টা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠলো । একটু পর জেসমিন আর লান্টু চলে গেলো । জেসমিন এতক্ষন ভেজা কাপড়েই ছিলো । অনিলার চিন্তায় এতক্ষন আমি সেটা লক্ষ করিনি , যখন খেয়াল হলো তখন খুব খারাপ লাগলো আমার কাছে , আরও আগেই ওদের পাঠিয়ে দেয়া দরকার ছিলো । যাওয়ার আগে নাল্টু আমার কাছে সেদিনের জন্য ক্ষমা চেয়ে গেলো । আসলে নৌকায় নাল্টু কে দেখে আমি খুব খুসি হয়েছিলাম । ক্ষমা আমারি চাওয়া উচিৎ ছিলো ওর কাছে , কিন্তু সেটা আমি চাইতে পারলাম না , বরং নাল্টু ই আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো । জেসমিন খুব করে বলে গেলো আমি আর অনিলা জেনো অবশ্যই ওদের বাড়ি যাই ।
সন্ধার পর সোনিয়া ও চলে গেলো । এখন সুধু ঝুমা অনিলার পাশে বসে আছে । হালকা জ্বর আসতে শুরু করেছে অনিলার তাই এখন আর গরম সেঁক দেয়া হচ্ছে না । অবশ্য সোনিয়া বলে গেছে , এটা কোন সমস্যা না , রাতে যদি জ্বর বেশি হয় একটা ঔষধ খাইয়ে দিতে । সবাই চলে যেতেই আজমল চাচার আবির্ভাব হলো ।
“ ছোট হুজুর একটা কথা আসিলো , একটু যদি বাইরে আহেন” আমার সামনে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে বলল আজমল চাচা । গতকাল এর পর ওনার আচরণে অনেক পরিবর্তন এসেছে । আগের সেই অভিবাবক সুলভ আচরন আর নেই । ব্যাপারটা আমার কাছে বেশি একটা ভালো লাগলো না , আসলে এক মেয়ে ছাড়া আমার আর কেউ নেই দুনিয়ায় তাই ওনার এই অনম আচরন টা আমার কাছে মন্দ লাগতো না। হ্যাঁ উনি কিছু খারাপ কাজ করেছে কিন্তু তার জন্য এমন করা উচিৎ হয়নি আমার। কিন্তু আমি জতদিন আছে ওনার ভয়টা ও ভাঙ্গাতে চাই না । আমি আজমল চাচার সাথে বাইরে আসলাম । তারপর বললাম
“ কিছু বলবেন চাচা?”
“ আমি মির্জা পুরের চেয়ারম্যান এর লগে কথা কইসি , আপনের আর বিয়া নিয়া টেনশন করন লাগবো না” এই বলে আজমল চাচা চুপ করে রইলেন । মনে হচ্ছে আরও কিছু বলতে চান । তাই আমি জিজ্ঞাস করলাম
“ আরও কিছু কি বলেবন চাচা “
আজমল চাচা কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকার পর আমার দু হাত ধরে কেঁদে ফেললেন । কাঁদতে কাঁদতে বললেন “ ছোট হুজুর আমি চাকর মানুষ , কিন্তু চাকর হইলেও আপ্নেগো নুন খাইসি , হের লইগা কইতাসি , আপনে চইলা যান , আজকা রাইতের ভিতর চইলা যান , নাইলে আপনেরে জানে বাচতে দিবো না “
আমি একেবারে হতচকিয়ে গেলাম , এই সব কি বলছে আজমল চাচা ! তাহলেকে মির্জা পুরের চেয়ারম্যান ওনাকে কোন হুমকি দিয়েছে?
“ কি বলছেন চাচা এই সব , কে আমাকে মারবে , আমি কার ক্ষতি করলাম , আপনাকে কি মির্জা পুরের চেয়ারম্যান কিছু বলেছে?” আমি জিজ্ঞাস করলাম চাচা কে । কিন্তু চাচা কিছুতেই কিছু বলতে চাইলো না , বার বার খালি আমাকে আর অনিলাকে চলে যেতে বলছে । শেষে অনেক জোর করার পর মুখ খুলল আজমল চাচা ।
“ হুজুর আমি ছোট মানুষ কেমন কইরা কই , যারা আপনের ক্ষতি করতে চায় হেরা আপনের আশেপাশের লোক জন , এইবার আপনে বুইঝা লন “
চাচার এই কথা আমাকে আরও বিপাকে ফেলে দিলো , এখানে আমার আশেপাশের লোক বলতে কে আছে । “ চাচা ঠিক করে বলেন তো কি হয়েছে “ আমি এবার একটু ধমক এর সুরে জানতে চাইলাম ।
“ আমি কইলে আবার আমার দোষ হইবো হুজুর , কিন্তু না কইয়া ও পারতাসিনা , আজকা নৌকা কে ঠিক করসিলো ? আমাগো চেয়ারম্যান করিম না ?”
আমি বললাম হ্যাঁ , তখন চাচা আবার বলা শুরু করলো “ ঐ মাঝি রে আমি চিনি , দুই বার জেল খাঁটা লোক , ঐ ইচ্ছা কইরা আপনের মাইয়ারে নৌকা থেইকা ফালাইয়া দিসে , এহন ওরে গেরামে কোন জায়গায় খুইজা পাওয়া যাইতাসেনা “
আমি চুপ হয়ে গেলাম , মনে মনে ভাবছি ,করিম কেনো এমন কাজ করবে , আমি চলে গেলে , অথবা আমার ক্ষতি হলে ওর কি লাভ । এমন সময় আজমল চাচা আবার বলা শুরু করলো
“ আমি জানতাম হুজুর আপনে আমার কথা বিশ্বাস করবেন না , কিন্তু দোহাই লাগে আপনের আপনে চইলা যান , আমার কথা বিশ্বাস না হইলেও চইলা যান , আপনে এইখনে জতদিন থকবেন আপনের আর মিয়াঁ বাড়ির শত্রুরা ততো ভয়ানক হইয়া উঠবো “ এই বলে আজমল চাচা চলে গেলেন ।
নাহ করিম এই ধরনের কাজ কোনদিন করবে না ... মনে মনে ভাবলাম আমি । কিন্তু একেবারে নিসচিন্ত হতে পারলাম না ।