07-03-2021, 02:54 PM
হঠাৎ নরম হাতের স্পর্শে চমকে পেছন ফিরে তাকালাম, মিত্রা কখন এসে পাশে দাঁড়িয়েছে জানি না। ওকে এই মুহূর্তে রাত পরির মতো লাগছে। পরনে ফিন ফিনে একটা সাদা নাইট গাউন। ভেতর থেকে অন্তর্বাস পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।
কিরে আমার দিকে তাকাতে লজ্জা করছে।
কিছু বললাম না। মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
আমি সামনের আধা-অন্ধকার বাগানের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মিত্রা আমাকে পেছন থেকে সাপের মতো আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো। বুঝতে পারছি ওর নরম ঠোঁট আমার পিঠে আঁকি বুকি কাটছে। ওর ঘন নিঃশ্বাস আমার পিঠ ময় ছড়িয়ে পড়ছে।
সামনের গাছটা জুঁই ফুলের গাছ। সাদা থোকা থোকা ফুল ফুটে আছে। চারিদিকে তার গন্ধে ম ম করছে। ওর সুডৌল বুকের স্পর্শ আমার শরীরে কাঁপন ধরাল, ঠোঁটটা আমার পিঠে ঘষতে ঘষতে বললো।
কথা বলবি না—
আমি সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। মিত্রার নিবিড় হাতের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করে মুখ মুখি হলাম। একটা সুন্দর পারফিউমের গন্ধ নাকে এসে লাগল। গন্ধটায় নেশা হয়। এই আলো আঁধারি ছায়া ঘেরা বারান্দায় ওর চোখে চোখ রাখলাম। মিত্রা সাজেনি। না সাজলে ওকে সত্যি খুব সুন্দর লাগে। প্লাক করা ভ্রু। টানা টানা দীঘল চোখ। পান পাতার মতো ওর মুখমণ্ডল। অনেক দিন পর মিত্রাকে এত কাছ থেকে দেখছি। আমি ওর প্রসারিত দু-কাঁধে হাত রাখলাম। ও আমার কোমরে হাত রাখলো।
অনেকক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। চোখের পলক পড়ছে না। মিত্রাও আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। পারফিউমের গন্ধের আড়ালে ওর শরীরের পরিচিত গন্ধটা আমাকে ধীরে ধীরে মাতাল করে তুলছে।
একদিন মিত্রা আমার ছিল। আজ ও অন্য কারুর। কথাটা মনে পড়তেই, বুকের ভেতরটা কেমন চিন চিন করে উঠলো। অনি এ তুই কি করছিস?
যা ঘরে যা, কেউ দেখে ফেললে, কি ভাববে।
কে দেখবে! ধারে কাছে কেউ নেই। আমি এখানে একা।
আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম! কথাটা কানের মধ্যে দিয়ে ঠিক অন্তরে প্রবেশ করলো না। ঠোঁট দুটো নিজের অজান্তেই কেঁপে উঠল। মিত্রা একা থাকে!
চল ঘরে যাই।
মিত্রা আমার বাম হাতটা চেপে ধরলো। পায়ে পায়ে ওর শোবার ঘরে এলাম।
আমার নির্দিষ্ট করা ঘরের থেকে দুটো ঘর পরে। হাল্কা আলোয় ওর ঘরটা স্বপ্নপুরীর মতো লাগছে।
একদিকে বিশাল সোফা। সেন্টার টেবিল। আর একদিকে ওর শোবার পালঙ্ক। সমস্ত আসবাব পত্রের মধ্যে একটা রুচির ছাপ। কয়েকটা মনে হচ্ছে মিত্রার শ্যামবাজারের পুরনো বাড়িতেও দেখেছি। সেই পুরনো আসবাবপত্র পালিশ করে নতুন রূপ পেয়েছে। বিশেষ করে সোফার কাছে কাঠের মিনিয়েচার করা সেন্টার টেবিলটা।
বোস, ড্রিংক করিস?
না।
তুই ভালো ছেলে। আমি খারাপ মেয়ে।
আমি ওকে লক্ষ্য করছিলাম, ও ওয়ার্ডোবের সামনে গিয়ে ওয়ার্ডোবটা খুললো।
আমার চোখ চলেগেল। বিদেশী মদের বোতলে ঠাসা। সঙ্গে সব উপকরণ।
তুই তো কোনও দিন এসব খেতিস না!
খেতাম না। এখন খাই।
কেন?
স্ট্যাটস শিম্বল।
না খেলে কি স্ট্যাটাস মেইনটেইন করা যায় না?
তুই এখনও সেই এঁদো গলিতেই রয়ে গেলি।
মনে মনে বললাম, ঠিক। মুখে কিছু বললাম না।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল। চোখে শ্লেষের হাসি।
আজ আমার সঙ্গে একটু শেয়ার কর।
না।
কেন?
তুই প্রত্যেক দিন খাস?
যার স্বামী মাসের পর মাস বাড়ির বাইরে থাকে। তাকে কিছু একটা নিয়ে বাঁচতে হয় বুঝলি বুবুন।
সে তো কাজের জন্য বাইরে আছে। অতো বড় একজন ডাক্তার….।
মিত্রা আমার দিকে ফিরে তাকাল। ওর চোখ দুটো গনগনে আগুনের কয়লার টুকরোর মতো। ঠোঁটের গোড়ায় সেই শ্লেষের হাসি।
ঝটতি আমার চোখে চোখ রেখে সরিয়ে নিল।
পুরুষরা ভীষণ স্বার্থপর।
একটু থামলো।
তুইও।
আমিও!
মিত্রা আমার দিকে তাকাল। মাথাটা নিচু করলো।
ওয়ার্ডোব থেকে একটা স্কচের বোতল বার করলো। দুটো গ্লাস একটা সোডার বোতল নিয়ে এলো। আর একটা কাজুর প্যাকেট। সেন্টার টেবিলে রেখে আমার পাশে এসে বসলো।
মিত্রা নিজেই পরিপাটি করে সব সাজিয়ে নিল।
আমার দিকে তাকিয়ে বললো, একটু নে।
না।
তাহলে আমি একা একা খাই।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি।
মিত্রা ঠোঁটে গ্লাস ছোঁয়াল।
সত্যি তুই খাবি!
নিমেষের মধ্যে গ্লাসটা শূন্য করে টেবিলে রাখলো।
বুঝলি বুবুন, না খেলে ঠিক থাকি না।
কি বলছিস!
হ্যাঁরে, ঠিক বলছি।
তোর হাজবেণ্ড জানে?
মিত্রা আবার একটা গ্লাস নিঃশেষ করলো।
আমি ওকে দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি।
ওর কাছ থেকেই এ সবের দীক্ষা নিয়েছি। পতি পরম গুরু।
শেষের শব্দগুলো তীব্র শ্লেষে পরিপূর্ণ।
আমি ওর দিকে অবাক চোখে তাকালাম। ওর চোখ মুখটা কেমন যেন বদলে যাচ্ছে।
তোকে সব বলবো। সঅঅঅব।
মিত্রা টেবিল থেকে বোতলটা নিয়ে গ্লাসে ঢাললো। তারপর বোতলটা আবার টেবিলে রাখলো। চোখের কোনা দিয়ে আমাকে একবার দেখে নিল। আমি স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার দেখা কলেজ লাইফের মিত্রার সঙ্গে এই মুহূর্তের দেখা মিত্রার কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছি না।
মিত্রা ঠোঁট থেকে শূন্য গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখলো।
তুই আমার জীবনে প্রথম পুরুষ। প্রথম ভালোবেসেছিলাম তোকে।
মিত্রার চোখে চোখ রাখলাম।
আমার শরীরের স্পর্শ তোকে প্রথম দিয়েছিলাম। সেই দিনটার কথা তোর মনে আছে?
মিত্রা কি আমার সঙ্গে অভিনয় করছে? তাহলে পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটতে যাচ্ছে কেন? আমাকে দিয়ে কোনও কাজ বাগাবার ধান্দা। নিশ্চই আমার সমস্ত খোঁজ খবর ও রাখে। কাজের কাজ হয়ে গেল তারপর আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
মিত্রা আবার বোতলটায় হাত দিতে গেল আমি বোতলটার দিকে তাকালাম।
আচ্ছা বাবা এখন খাবো না, সাজিয়ে রাখি, একটু পরে খাব। রাগ করিস কেন।
মিত্রা আবার নিজের মতো করে গ্লাসে ঢালতে শুরু করেছে।
আচ্ছা তাই যদি হয়, আজ দুপুরে আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মিত্রা সব ডিসিশন চেঞ্জ করল কেন? ধ্যুস, আমার কাছে পাস্ট ইজ পাস্ট? আমি পেছন ফিরে তাকাই না। তবে মাঝে মাঝে নিজের আয়নায় নিজেকে দেখার চেষ্টা করি।
পূর্ণ গ্লাসটা টেবিলে রেখে, মিত্রা সরাসরি আমার দিকে তাকাল।
তোর সেই ব্যামোটা এখনও যায়নি দেখছি।
কি?
কিছু বললেই উদাস চোখে ভাবিস।
হ্যাঁ।
কি হ্যাঁ!
তুই যা বললি।
কোথায় বল তো তোর শরীরটা প্রথম ছুঁয়ে ছিলাম?
বীনা সিনেমা।
তুই এখনও মনে রেখেছিস!
হ্যাঁ।
আমাকে দেখে তোর ঘেন্না হয় না?
কেন!
একটা মেয়ে তোকে না জানিয়ে….।
আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল।
তুই চুপ করবি। একটু জোরে বলে ফেললাম।