Thread Rating:
  • 6 Vote(s) - 3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কাজলদীঘি শশ্মান ও পীরসাহেবের থান
#15
আমি মাথা নিচু করে বসেছিলাম। অনেক দিন পর কারুর সঙ্গে এইরকম রাফ ব্যবহার করলাম। নিজেরই খুব খারাপ লাগছিল। এসির হাওয়াটা ভীষণ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে। সহ্য হচ্ছিল না।
কিরে আমার সঙ্গে কথা বলবি না?
মাথা নিচু করে বললাম, বলুন।
বাবাঃ, এখনও রাগ পড়েনি।
রাগের কি আছে, চাকরি করতে এসেছি, তা বলে নিজের ব্যক্তিসত্ত্বাকে বিসর্জন দিতে আসি নি।
মিত্রা নিজের চেয়ার ছেরে উঠে এলো। আমিও ওর চোখে চোখ রেখে উঠে দাঁড়ালাম। মিত্রা এসে সটাং আমার গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
তুই রাগ করলে আমি যাব কোথায়, আমি এখন বড়ো একা।
মিত্রার গলাটা ভাড়ি হয়ে এলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম, ওর চোখ দু-টো ছল ছল করছে।
তুই আমার পাশে থাকবি না?
ওর চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করলাম। না আমার কলেজ লাইফের মিত্রাই। ওর চোখের মধ্যে কোনও দৈত সত্ত্বা নেই। এক দৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তুই এসব কি করলি!
আমি করিনি। আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে। আমাকে ছেড়ে, মিত্রা মাথা নিচু করলো।
তার মানে! ব্যবসা করতে বসেছিস, মালকিন হয়েছিস।
সে অনেক কথা। আর ভালো লাগছে না। তোর সঙ্গে আটমাস আগে দেখা হয়েছিল। সেই যে তোকে ধরে নিয়েগেলাম, তারপর অনেক করে যেতে বলেছিলাম। তুই যাসনি।
চুপ করে থাকলাম।
বোস।
চেয়ারে বসলাম।
আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মাথাটা ঘুরিয়ে বললো, বল কেন যাস নি?
আমার চোখ দুটো ভাড়ি হয়ে এসেছিল। নিজেকে সামলে নিলাম।
ও আমার পাশে একটা চেয়ার নিয়ে মুখোমুখি বসলো।
কখন ফিরলি?
ঘণ্টা খেনেক হলো।
বাড়ি গেছিলি?
না।
একটু কফি খা।
না।
ফোনটা বেজে উঠলো, বড়োমার ফোন। ফোন ধরতেই বড়োমার গলায় অভিমানের সুর।
কিরে কখন আসবি, আমরা না খেয়ে বসে আছি।
একটু পড়ে যাচ্ছি।
বড়োমা আমার গলার স্বরে বুঝতে পারলো, কিছু একটা হয়েছে।
তোর কি হয়েছে?
কিছু হয়নি, তুমি এখন রাখো। আমি ঘণ্টা খানেকের মধ্যে চলে যাচ্ছি।
আচ্ছা। বড়োমা ফোনটা রেখে দিল।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল।
কার ফোন!
বড়োমা।
মিত্রার চোখে বিস্ময়ের কাজল।
অমিতাভদার স্ত্রী।
মিত্রার মুখটা হঠাৎ কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল। আমার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে নিল। কি ভাবলো কে জানে, দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। ওর হাত আমার ডান হাতটা ধরে আছে। আমাকে একটা কথা দে?
মিত্রার মুখের দিকে তাকালাম।
কি!
আজ রাতে আমার বাড়ি আসবি। তোকে আজ থাকতে হবে। থাকবি?
বলতে পারছি না।
না তোকে কথা দিতে হবে।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি। ওর চোখে বিস্ময়।
বললাম, ঠিক আছে।
তুই আমার গাড়ি নিয়ে যা।
না, তা হয় না।
কেন!
এরা কি ভাববে।
ব্যাবসাটা আমার।
এরা কেউ জানেনা তুই আমার পূর্ব পরিচিত।
জানি। সেই জন্য আমি অনেক ভুল কাজ করে ফেলেছি। আমায় তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। তুই আমায় সাহায্য কর। তোর প্রমিসের কথা মাথায় আছে?
আমি মিত্রার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম। কিছুতেই মাথায় কিছু ঢুকছে না। কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।
খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছিলাম।
অবাক হয়ে বললাম, কি?
না জেনে তোর ফাইলটাও প্রায় সই করে ফেলেছিলাম।
ভালোই তো।
মিত্রা আমার মাথার চুলটা ধরে ঘেঁটে দিল। অনেক দিন পর আজ আমার বুবুনের সেই রাফ এ্যান্ড টাফ রূপটা দেখতে পেলাম।
ওর দিকে তাকালাম।
মিত্রা হেসে ফেললো। চোখ চক চক করছে।
তাকাস নি। চোখ গেলে দেব। দাঁতে দাঁত চিপলো।
আমি এখন যাব।
রাতের কথা মনে রাখিস।
আমি আফিস থেকে বেরিয়ে এলাম। নিউজরুমে আর গেলাম না। নীচে এসে আমার ব্যাগটা নিয়ে বড় রাস্তায় এলাম। একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা অমিতাভদার বাড়ি চলে এলাম।
খাওয়া দাওয়ার পর সবাই এক সঙ্গে বড়ো সোফায় বসে কথা বলছিলাম। আমি, বড়োমা, ছোটোমা লম্বা সোফায়। মল্লিকদা, দাদা মুখো মুখি দুটো চেয়ারে। মিত্রার সঙ্গে কি হয়েছে না হয়েছে তার একটি কথাও বলিনি। ওখানকার গল্পই করছিলাম। আর অফিসে এতদিন কি হয়েছে, তার গল্প দাদার কাছে শুনছিলাম।
বাইরে থেকে ছগনলাল চেঁচিয়ে উঠলো মাইজি কৌন আয়া। মল্লিকদা বললো, দাঁড়া আমি যাচ্ছি।
ছোটোমা বললো, তুমি কথা বলো আমি গিয়ে দেখছি।
কিছুক্ষণ পর ছোটোমা ফিরে এলো, হাতে একটা চিঠি। মুখটা কেমন শুকনো শুকনো।
আমি হেসে বললাম কি হলো আবার।
আমার হাতে চিঠি দিয়ে বললো, তোর চিঠি।
খামটা হাতে নিলাম। সকলে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কেমন যেন ভয় ভয়।
আমি চিঠিটা খুললাম।
মিত্রার চিঠি।
গাড়ি পাঠালাম, চলে আয়। অমিতাভদা, মল্লিকদা, বড়োমা, ছোটোমাকে আমার প্রণাম দিস। দেরি করিসনা। মিত্রা।
চিঠিটা পড়ে সকলের মুখের দিকে তাকালাম। সবাই উৎসুক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বড়োমার হাতে চিঠিটা দিলাম। বড়োমা পড়ে ছোটোমাকে দিল, ছোটোমা অমিতাভদার হাতে, অমিতাভদা চিঠিটা পড়ার পর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।
মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, চোখে মুখে দুষ্টুমি। ছোটোমার দিকে তাকিয়ে বললো, কেশটা বেশ জটিল।
বড়োমা খেঁকিয়ে উঠলো। আর বকিস না। কাগজের এডিটর হয়েছে। দুই মক্কেল বসে বসে বিরাট কাজ করেছেন। সবাই মিলে তোদের তাড়িয়ে দিলে, আর তোরা বসে বসে খাবি খাচ্ছিস।
না না তুমি শোন। অমিতাভদা বলে উঠলো।
আর শুনে কাজ নেই অনেক হয়েছে। বড়োমা বললো।
বুঝলাম এখন যুদ্ধ চলবে। আমি উঠে বাথরুমে গেলাম। বেরিয়ে এসে বড়োমাকে বললাম, আমাকে একটা পাজামা, পাঞ্জাবী বার করে দাও।
পাজামা, পাঞ্জাবী পরতে হবে না, প্যান্ট-গেঞ্জি পরে যা। ছোটোমা বললো।
এই যথেষ্ট।
ছোটোমা বুঝলো একে বলে কিছু হবে না, বাধ্য হয়ে ঘর থেকে একটা পাজামা-পাঞ্জাবী বার করে আনল। আজ আমায় কেউ বাধা দিল না। কেউ কোনও প্রশ্ন করল না। আজ সবাই জানলো মিত্রা শুধু আমার পরিচিতই নয় খুব ঘনিষ্ঠ।
আমি আমার ঘর থেকে রেডি হয়ে বাইরে এলাম।
ওরা সবাই সোফায় বসে গল্প করছিল। আমি বড়োমাকে প্রণাম করলাম। তারপর ছোটোমাকে। তারপর অমিতাভদাকে। অমিতাভদা আমার মাথায় হাত রেখে বুকে জড়িয়ে ধরলো। চোখদুটো ছলছল করছে, মুখে করুণ আর্তি।
তোর ওপর আজ সব কিছু নির্ভর করছে।
আমি মাথা নিচু করলাম।
তুমি একথা বলছো কেন! সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি আমার সঙ্গে যাবে?
না।
কেন?
তুই যা, তুই যা ডিসিশন নিবি তাই হবে।
মল্লিকদাকে প্রণাম করতে যেতেই বললো, থাক থাক আমার চেয়ারের একটা বন্দোবস্ত কর। না হলে বেকার হয়ে যাব। এই বুড়ো বয়সে আর ভালো লাগছে না।
কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, মল্লিকদা আমার মুখটা চেপে ধরলো। আজ নয়, সুখবর এনে বলিস।
horseride horseride 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কাজলদীঘি শশ্মান ও পীরসাহেবের থান - by Troya A1 - 07-03-2021, 02:53 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)