07-03-2021, 02:47 PM
জানতাম না। আজ জানলাম।
বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে।
কয়েক মাস আগে ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল বেঙ্গল ক্লাবে। দাদা পাঠিয়েছিল।
কি জন্য?
একটা এ্যাশাইনমেন্টে গেছিলাম। দেখা হলো। ওর হাসবেন্ডের সঙ্গে আমায় আলাপ করিয়ে দিল। তারপর জোর করে ওর বাড়িতে টেনে নিয়ে গেল। অনেক রাত পর্যন্ত ওর বাড়িতে ছিলাম। সেদিন তোমার এখানে আসার কথা ছিল। আসা হয়নি। ছোটোমাকে আমি সব বলেছি।
ছোটো বলেছিল। বয়স হয়েছে, এখন আর খেয়াল থাকে না।
কিরে খাওয়া হলো, সাড়ে সাতটায় ট্রেন। একটু চটপট কর। এতটা পথ যেতে হবে। অমিতাভদার গলায় অভিযোগের সুর।
নিজেরা চব্বচষ্য গিলেছ। আমাদের একটু শান্তিতে খেতেও দেবেনা? বড়োমা খিঁচিয়ে উঠলো।
ছোটোমা হাসছে।
কি হিংসুটে ব্যাটাছেলে-রে বাবা।
বড়োমার কথাবলার ধরণই এরকম।
মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে একবার চোখ মারল।
নে নে তোর কাগজপত্র সব বুঝে নে। আমায় আবার অফিসে যেতে হবে। দাদা বলে চলেছে।
খেয়ে উঠে আমি আমার ট্রেনের টিকিট, হোটেল বুকিংয়ের কাগজপত্র, অফিসিয়াল কিছু কাগজপত্র, সব মল্লিকদার কাছ থেকে বুঝে নিলাম।
সবাইকে একে একে প্রণাম করলাম। বড়োমার চোখ ছলছল। আমার হাতে একটা খাম দিয়ে বললো, সঙ্গে রাখ। জানি তোর কাছে আছে। লাগলে খরচ করিস। না লাগলে এসে ফেরত দিস।
আমি হাসলাম। আজ পর্যন্ত বড়োমা আমার কাছে থেকে কিছু ফেরত নেয়নি। শুধু দিয়ে গেছে। আমিও ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করেছি বলে মনে পড়ছে না।
আমি মুখের দিকে তাকালাম।
বেরিয়ে এলাম। অফিসের গাড়ি রেডি আছে।
অমিতাভদা বললো, শোন আমাদের একজন কোরেসপন্ডেন্স আছে ওখানে। বালচন্দ্রন নাম। ও কাল তোর সঙ্গে যোগাযোগ করে নেবে। তোর জন্য স্টেশনে অফিসের গাড়ি থাকবে। অফিসিয়াল ফাইলের ওপরে যে চিঠিটা আছে দেখবি ওতে গাড়ির নম্বর লেখা আছে। আমি ওখানকার অফিসে ফোন করে বলে দিয়েছি। তোর কোচ নং টিকিটের নম্বর ওদের দিয়ে দিয়েছি।
মোদ্দা কথা হলো আমার যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তার জন্য সমস্ত বন্দবস্তই পাকাপাকি ভাবে তৈরি করা হয়েছে।
বড়োমা, ছোটোমা কাপরের খুঁট দিয়ে চোখ মোছে।
কাছে গিয়ে বললাম, এই শুরু করে দিলে।
সাবধানে থাকিস। বড়োমার গলাটা একটু ধরা ধরা।
দু-জনকে একটু জড়িয়ে ধরলাম।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে দেখি ট্রেন ছাড়তে আর দশ মিনিট বাকি। নয় নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে। আমার টিকিট এসি ফার্স্টক্লাস। টিকিটের সঙ্গে কোচ মিলিয়ে নিয়ে ট্রেনে উঠলাম। দেখলাম আমার জন্য একটি কুপ বুক করা হয়েছে। মাত্র দুটি সিট। সেখানে আর একজন যাত্রীকে দেখতে পেলাম না।
যাই হোক আমার একটা মাত্র ব্যাগ। সিটের তলায় ঢুকিয়ে দিয়ে একটু বাইরে বেরিয়ে এলাম। বহু মানুষের দৌড়দৌড়ি। চেঁচামেচি। গাড়ির ড্রাইভার কাছে এগিয়ে এসে বললো, অনিদা আমি এবার যাই।
আমি বললাম, হ্যাঁ যাও। পৌঁছে দাদাকে বলে দিও আমি ঠিকঠিক ট্রেনে উঠেছি।
ছেলেটি হেসে ফেলল। আমি ভেতরে চলে এলাম। ট্রেনটা একটু দুলে উঠেই চলতে শুরু করল।
আমি আমার জায়গায় এসে বসলাম। কুপের দরজাটা খোলাই রেখেছি। একটু পরেই টিটি আসবে। রাতের জার্নি। অতএব ঠেসে ঘুম। খাওয়া দাওয়া বেশ ভালোই হয়েছে। এককাপ গরম কফি পেলে বেশ জমতো। কপাল ভালো থাকলে হয়তো এরা দেবে। না হলে নয়।
বাপের জম্মে কোনওদিন কুপে যাইনি। পেছনে খুঁটির জোর থাকলে কত কিছু হয়। এবার হাড়েহাড়ে বুঝতে পারছি। জানলার ধারে মাথার শিয়রে একটা টেবিল ল্যাম্পের মতো আলো। সুইচ টিপতেই জেলে উঠলো। বেশ ভালো।
যাক ঘুম না আসা পর্যন্ত শুয়ে শুয়ে বই পড়া যাবে। কালকূট সমগ্রের একটা খণ্ড সঙ্গে নিয়ে এসেছি। গোটা আষ্টেক উপন্যাস আছে। ট্রেনটা কতো জোরে যাচ্ছে, কিভাবে যাচ্ছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম। অন্ধকার ছাড়া কিছুই ঠাহর করতে পারছি না।
এই কামড়ারই কয়েকজনের চেঁচামিচির শব্দ কানে আসছে। তারা এখনও মনে হয় নিজেদের গুছিয়ে উঠতে পারেনি।
ফোনটা বেজে উঠল। দেখলাম বড়োমার নম্বর। সমস্ত ব্যাপার পঙ্খানুপুঙ্খ রূপে জানিয়ে দিলাম। শেষে বড়োমা বললো, সাবধানে থাকিস।
নিচু হয়ে সিটের তলা থেকে ব্যাগটা টেনে বার করলাম। পাম্পার বালিশটা বার করে ফুলিয়ে নিলাম। যদিও রেল কোম্পানী বালিশ, সাদা চাদর, তোয়ালে দিয়েছে। তবু পাম্পার বালিশটা আমার চাই। উপন্যাস সমগ্রটা বার করে কুপের দরজাটা টেনে দিলাম। টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম। আঃ কি আরাম।
আবার ফোনটা বেজে উঠল। দেখলাম তনুর নম্বর।
হ্যালো।
কি হলো বাবাজীবন। ট্রেন ছেড়েছে?
হ্যাঁ।
এখন কোথায়?
জানিনা। ট্রেন চলছে এটুকু বলতে পারি।
কেনো!
আমার টিকিট এসি ফার্স্টক্লাস কোচের একটা কুপে। বলতে পারো আমি নির্বাসিত। সেখানে দুটো সিট আছে। আমি একা।
ইস, ব্যাডলাক। আমি যাব নাকি?
চলে এসো।
শখ দেখো।
তুমি এখন কোথায়?
বাড়ি ফিরছি। বড় সাহেবের মাথাটা বেশ গরম।
আবার কি হলো!
অফিসে একটা ঝামেলা হয়েছে।
কাকে নিয়ে?
আবার কাকে নিয়ে, ওই চিফ-রিপোর্টার।
তোমার এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিয়েছ।
হুঁ। অনি ভালো লাগছে না। তোমার কথা বার বার মনে পড়ছে।
মনটাকে বশে আনার চেষ্টা করো।
তনু চুপচাপ।
তনু।
উঁ।
মন খারাপ লাগছে।
একটু লাগছে।
সব সময় কাজের মধ্যে থাকার চেষ্টা করো। আমি তোমাকে সম্পূর্ণ ফিরিয়ে দিইনি।
তনু চুপচাপ।
কি হলো কথা বলছোনা যে—
তনুর ফোঁপানর শব্দ পেলাম। কাঁদছে।
আবার মন খারাপ করে। আরে, আমি মাত্র পনেরো দিনের জন্য এসেছি। আবার ফিরে যচ্ছি।
হয়তো তোমার সঙ্গে নাও দেখা হতে পারে।
এ কথা বলছো কেন?
ফিরে এসো বলবো।
এই বললে দেখা নাও হতে পারে।
তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
আচ্ছা।
ফোনটা তনু নিজেই কেটে দিল।
কুপের দরজাটা কেউ নক করল। শুয়ে শুয়েই বললাম, খোলা আছে, ভেতরে আসুন।
দেখলাম টিটি সাহেব এসেছেন। উঠে বসলাম। ওনাকে ভেতরে এসে বসতে বললাম। উনি ভেতরে এলেন। আমি ব্যাগ থেকে টিকিট বার করে ওনাকে দিলাম। উনি দেখে বললেন, স্যার আপনার কোনও অসুবিধা হলে আমাকে বলবেন।
টিটির কথা শুনে একটু অবাক হলাম। স্যার বলে সম্বোধন করছে! ব্যাপার কি? লেবু কচলালাম না। যদি তেঁতো হয়ে যায়।
একটু কফি পাওয়া যাবে?
অবশ্যই। আমি গিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
টি টি সাহেব একবারে গদো গদো। বুঝলাম ক্ষমতার অপপ্রয়োগ।
এনি প্রবলেম, আমাকে একটু জানাবেন। আমি পাশেই আছি।
ঠিক আছে।
উনি চলে গেলেন।
একটু পরেই দেখলাম একজন এসে একটা ট্রে হ্যাঙ্গিং টেবিলের ওপরে রাখল। কফির পট কাপ ডিস দেখে আমার একটু সন্দেহ হলো। আমি নিশ্চই কোন সাধারণ ব্যক্তি নই। এদের ব্যবস্থাপনা, চাল-চলন সেই কথাই বলছে।
একজন সাধারণ সাংবাদিকের জন্য এরকম ব্যবস্থা! কেমন যেন সন্দেহ হলো। মুখে কিছু বললাম না। পকেট থেকে মানিপার্সটা বার করে পয়সা দিতে গেলাম।
এ্যাটেনডেন্ট ছেলেটি বললো, না স্যার আপনার যখন যা চাই বলবেন, আমরা চলে আসব। পাশেই আছি।
হাঁ করে ছেলেটির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
তারমানে বড়োসাহেব ভালোই খেলেছেন।
কফি খাওয়ার পর বইটা পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল নেই।
হঠাৎ দরজায় টোকা মারার শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দেখলাম টিটি ভদ্রলোক মুখটা আমসি করে গেটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
নিজেরই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগলো। তাড়াহুড়ো করে উঠে বসলাম।
সরি স্যার, একটু বিরক্ত করলাম। যদি পার্মিসন দেন তাহলে একটা কথা বলবো।
আবার অবাক হলাম। বিনয়ের অবতার।
বলুন।
স্যার আপনার এই কুপে একটা সিট খালি আছে একজন ভদ্রমহিলাকে যদি একটু লিফট দেন?
আমি লিফট দেবার কে! ফাঁকা আছে। আপনি এ্যালট করবেন।
না স্যার, এই কুপটা আজ রাতটুকু আপনার জন্য। জিএম সাহেবের হুকুম।
জিএম সাহেব!
হ্যাঁ স্যার। আপনার যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, তার জন্যও আমাদের বলে দেওয়া হয়েছে।
তাই নাকি! জিএম! মানে সোমনাথ মুখার্জী?
হ্যাঁ স্যার।
এতক্ষণে বুঝতে পারলাম। খেলাটা কোথায় খেলা হয়েছে।
ঠিক আছে, আপনি যান। ওনাকে নিয়ে আসুন।
চোখের নিমেষে ভদ্রলোক গেটের মুখ থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে বছর কুড়ির একজন তরুণীকে নিয়ে এসে হাজির।
দেখেই আমার চোক্ষু চড়কগাছ।
গায়ের রং পাকা গমের মতো। পানপাতার মতো লম্বাটে মুখ। পাতলা ঠোঁটের ঠিক ওপরে একটা বাদামী রং-এর তিল। পিঠময় মেঘের মতো ঘন কালো চুল। মাঝে মাঝে হাইলাইট করা। মুখের সঙ্গে মানানসই চোখে রিমলেশ চশমা। উদ্ধত বুক। পরনে জিনসের প্যাণ্ট। টাইট একটা হাতাকাটা গেঞ্জি। প্রথম দর্শনেই যে কোনও ছেলের মাথা ঘুরিয়ে দেবার পক্ষে যথেষ্ট।
টিটি ভদ্রলোক আমার পরিচয় দিতেই, আমি বুকের ওপর হাত তুললাম।
আমার নাম ঝিমলি।
আমি হাতজোড় করে মাপছি। বয়সের ধর্ম।
আমি ম্যাডামকে আপনার সব কথা বলেছি। তাছাড়া সোমনাথবাবুও ওঁকে আপনার সম্বন্ধে সব বলেছেন।
বুঝলাম জল অনেক দূর পর্যন্ত গড়িয়েছে।
ঝিমলির বাবা আমাদের ডিভিসনের এজিএম। উনিও আপনাকে খুব ভালোকরে চেনেন। আপনার লেখার খুব ভক্ত।
টিটি ভদ্রলোক গড়গড় করে সব মুখস্থ বলে চলেছেন।
মোবাইলটা বেজে উঠল। পকেট থেকে বার করতেই দেখলাম, বড়োসাহেবের ফোন।
মেজাজ খাট্টা হয়ে গেল।
তুই কোথায়?
যেখানে রেখেছো।
উঃ কোন স্টেশন পেরলি?
কি করে বলবো। একটা কুপের মধ্যে টিকিট কেটেছ। আমি এতটা ভিআইপি আগে জানতাম না।
সারা রাতের জার্নি তোর বড়োমা বললো….।
একটু ধরো।
আমরা এখন কোথায় আছি? টিটি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম।
খড়গপুর ছেড়ে এলাম।
এখন খড়গপুর ছেড়ে এলাম।
সোমনাথ ফোন করেছিল। ওদের এক কলিগের মেয়ে….কি পরীক্ষা আছে। তোর স্টেশনেই নামবে। আমাকে রিকোয়েস্ট করেছিল। তোর কুপে পারলে একটু ব্যবস্থা করে দিস। আর শোন।
বলো।
তোর বড়োমাকে বলার দরকার নেই।
হাসলাম। ওনারা আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন।
আচ্ছা আচ্ছা। দু-একটা ভালো লেখা কাল পরশুর মধ্যে পাঠাস।
আগে পৌঁছতে দাও।
দাদা ফোনটা রেখে দিল।
আমার কথাবার্তা শুনে ওরা বুঝে গেছে আমি কার সঙ্গে এতক্ষণ কথা বলছিলাম।
টিটি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললাম, কটা বাজে?
দশটা পনেরো।
কিছু খাবার পাওয়া যাবে? আমার কুপে গেস্ট এলেন—
ওকে স্যার গেস্ট বলবেন না। ঠিক আছে আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আর একটু কফি।
আচ্ছা স্যার।
ঝিমলির দিকে তাকালাম। বসুন।
আপনার সঙ্গে একই কুপে যাচ্ছি, নিজেকে খুব ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে।
লিঙ্গে ভুল করলেন, ওটা ভাগ্যবান হবে না, ভাগ্যবতী।
আমি আপনি নয় তুমি, এটাই প্রথম এটাই শেষ।
দু-জনেই হেসে উঠলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝিমলির সঙ্গে আলাপ জমিয়ে ফেললাম। বোবার মতো বসে থাকার থেকে কিছুটা অন্তত বকবক করার সঙ্গী পাওয়া গেল।
জানলাম ও আমার ওপর বেশ ভালো হোমওয়ার্ক করেই এই কুপে এসেছে। ও উঠেছে হাওড়া থেকেই, একবারে শেষ মুহূর্তে জায়গা না পাবার জন্য প্যানট্রিকারেই ছিল।
তারপর খোঁজ খবর নিয়ে, যোগাযোগ করে, অমিতাভদার পার্মিসন নিয়ে এখানে স্থানান্তরিত হয়েছে। সোর্স থাকলে কি-না হয়। বাঘের দুধ পর্যন্ত পাওয়া যায়।
আমার প্রতি কৃতজ্ঞতায় ঝিমলির দু-চোখ ভড়ে গেছে।
আমি আসাতে আপনার কোনও অসুবিধা হবে না?
এই তো….।
সরি।
এটাই শেষ।
ঝিমলি বেশ মিষ্টি করে হাসছে।
হলে তোমাকে আসতে দিতাম না।
কথায় কথায় জানলাম, ঝিমলি ভাইজ্যাকে একটা মেডিক্যাল এক্সাম দিতে যাচ্ছে। পর্শুদিন ওর এক্সাম।
এ-ও জানলাম ওখানে ওর থাকার কোনও বন্দবস্ত এখনও হয়নি। ওর বাবা ভাইজ্যাকের স্টেশন মাস্টারকে বলে দিয়েছেন। ওরাই সব ব্যবস্থা করে দেবে।
পর্শু পরীক্ষা, তুমি আজ যাচ্ছ!
এখনও এ্যাডমিট হাতে পাইনি।
ঝিমলির দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালাম। বলে কি মেয়েটা! ঝিমলি মনে হয় আমার মুখ দেখে মনের কথাটা পড়তে পারলো।
পরীক্ষার ডেটটা মনে ছিল। নেটে দেখে ওদের সব জানালাম। ওরা বললো এখানে চলে আসুন, এ্যাডমিটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
এখন কতো আধুনিক হয়ে পরেছি আমরা।
ঝিমলি হাসছে।
বাবাকে যখন টিকিটের ব্যবস্থা করতে বললাম, রিজার্ভেসন লিস্ট তৈরি হয়ে গেছে। বাবা খোঁজ খবর নিয়ে জানাল একটা সিট ফাঁকা আছে। তবে সেটা রিজার্ভ। কিন্তু প্যাসেঞ্জার উঠবে না। শুনে কেমন যেন লাগলো। তারপর আমাকে বললো, তুমি আগে ট্রেনে উঠে পরো, একটা ব্যবস্থা নিশ্চই হয়ে যাবে।
সেই একটা সিট আমার কুপে।
ঝিমলি মুচকি মুচকি হাসছে।
খাবার চলে এল। ঝিমলি না করলো না। আমরা দু-জনে একসঙ্গে খেলাম। খেতে খেতে ওর সঙ্গে অনেক গল্প হলো। পড়াশুনর বিষয়, আমার লেখার বিষয়ে। আরও কতো গল্প।
আমার কিন্তু বারবার ওর উদ্ধত বুকের দিকে নজর চলে যাচ্ছিল। ও সেটা ভালো রকম বুঝতে পারছিল। কিন্তু তার কোনও বর্হিপ্রকাশ ওর চোখেমুখে দেখতে পেলাম না। বরং আমার চোখের এই লোভাতুর দৃষ্টি ও বেশ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছিল।
খাওয়া শেষ হতেই একজন এ্যাটেনডেণ্ট এসে সব পরিষ্কার করে নিয়ে চলে গেল। আমি ব্যাগ থেকে একটা পাজামা পাঞ্জাবী বার করে, বাথরুমে চলে গেলাম। একেবারে ফ্রেস হয়ে চলে এলাম।
আমি চলে আসার পর ঝিমলি গেল।
ঝিমলি ফিরে এল একটা ঢলঢলে গেঞ্জি আর একটা ঢলঢলে বারমুডা পরে। মোবাইল থেকে দুটো ম্যাসেজ করলাম। একটা বড়োমাকে আর একটা তনুকে।
রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়ছি।
মোবাইলের শুইচ অফ করলাম। রেলের দেওয়া কম্বলটা বার্থে পাতলাম। ব্যাগ থেক একটা চাদর বার করে কম্বলের ওপর বিছিয়ে দিলাম।
বেশ শীত শীত করছে, আর একটা কম্বল বালিশ চেয়ে নিলাম।
ঝিমলি বললো, কি হলো শুয়ে পরবেন নাকি?
হ্যাঁ।
আমি একা একা জেগে বসে থাকব?
জাগবে কেন, ঘুমিয়ে পড়ো।
তারমানে!
তাহলে কি করবে?
কেন! গল্প করবো।
সব গল্প তো শেষ হয়ে গেল।
বারে। আমার আরও জানার বাকি আছে। আপনাকে পেয়েছি গোগ্রাসে কিছুটা গিলি।
উরি বাবা, আমি এত বড়ো আঁতেল এখনও হইনি।
ঝিমলি হাসছে।
আমি টানটান হয়ে শুয়ে পরলাম। ঝিমলি আমার মুখের দিকে কপট রাগ করে তাকাল।
দেখো ঝিমলি তুমি না থাকলেও আমি ঘুমতাম। রাত জাগা আমার অভ্যাসে নেই।
আপনি না সাংবাদিক?
তাতে কি হয়েছে! সারা রাত জেগে কি আমরা সংবাদ লিখি নাকি। কারা লেখে জানি না। এটুকু বলতে পারি আমি লিখি না।
ঝিমলির মুখের দিকে তাকালাম। চোখের থেকে চশমাটা খুলে সামনের টেবিলের ওপরে রাখল। সঙ্গে সঙ্গে ঝিমলির মুখশ্রীটা কেমন বদলে গেল।
ঝিমলির শরীরের বাঁধুনিটা চোখে পরার মতো। সরু কোমর। তানপুরার মতো ভরাট নিতম্ব। তবে ঝিমলি তনুর থেকে অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন। দেখলেই বোঝা যায়। বয়সটাও কম। তাছাড়া আজকালকার মেয়েরা স্লিম হওয়ার জন্য কত কিছু করে। আমার জায়গায় আমার অফিসের অন্য কোনও ছেলে থাকলে এরই মধ্যে ঝিমলিকে পটিয়ে নিত।
অফিসে তো দেখি সেক্সটা এখন যেন ডিনার, লাঞ্চের মতো। ডিনারে একরকম খাও আবার লাঞ্চে একটু মুখের স্বাদ বদল করো। আমার দ্বারা এসব হয় না।
তাকিয়ে তাকিয়ে একটু দেখি। ঈশ্বর যখন সুন্দর জিনিস দেখার জন্য চোখ দিয়েছেন।
চুপচাপ ঘুমের ভান করে মরার মতো পরে রইলাম। ঝিমলি একবার দরজা খুলে বাইরে গেল। টিটি ভদ্রলোক সামনই বসেছিলেন তাকে কি যেন বললো। তারপর ভেতরে এসে দরজা লক করে দিল। কূপের বড়ো লাইটটা নিভিয়ে, নীল লাইটটা জ্বালিয়ে দিল।
নিজের ব্যাগ খুলে একটা পাতলা মতন বাক্স বার করল। বুঝলাম ল্যাপটপ।
তারপর আমার দিকে পা করে দরজার দিকে মাথা করে ওর বার্থে শুয়ে ল্যাপটপটা খুলল।
আমি মিটিমিটি চোখে ঝিমলির শুয়ে থাকার দিকে তাকিয়ে আছি। উঃ কি ভরাট পাছা। যদি একবার সেক্স করতে পারতাম জীবন ধন্য হয়ে যেত। মাথার ভেতরটা কেমন ঝিমঝিম করে উঠলো।
তারপর নিজেকে বোঝালাম, সব জিনিস তোর জন্য নয় গাধা। যে টুকু চেয়েচুয়ে দেখেছিস ওটাই যথেষ্ট।
বেশ কিছুক্ষণ একটা গেম খেলার পর ঝিমলি উঠে বসল। আমার দিকে তাকাল। ধীরে আমার দিকে এগিয়ে এলো। খুব সন্তর্পনে মুখের কাছে মুখটা নামিয়ে নিয়ে এল। পরোখ করে দেখতে চাইল আমি সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছি কিনা। আমি ওর গরম নিঃশ্বাসের স্পর্শ পেলাম।
ভীষণ ইচ্ছে করছিল ওর মাথাটা ধরে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াই। পারলাম না। নিজেকে পুরুষ বলে পরিচয় দিতে সেই মুহূর্তে আমার খুব খারাপ লাগছিল। কুপের ভেতর হাল্কা সবুজ রং-এর ছোটো লাইটটা জ্বলছে।
ঝিমলি ওর বার্থে বাবু হয়ে বসলো। আমার দিকে এরবার তাকাল, আবার যাচাই করে দেখল, আমি জেগে আছি কিনা। আবার একবার উঠে এসে, আমার মুখের কাছে মুখটা নামিয়ে নিয়ে এল।
ওর নিঃশ্বাস এখন আরও ঘন হয়ে পড়ছে। আমি ইচ্ছে করেই জিভটা বার করে আমার ঠোঁটটা চাটলাম। ঝিমলি ত্রস্তে মুখটা সরিয়ে নিল। আমি একটু নড়েচড়ে একটা বড় নিঃশ্বাস ফেললাম।
ওর চোখে মুখে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরেছে।
ঝিমলি ওর সিটে গিয়ে বসলো। আমার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে একভাবে বসে রইল। তারপর আস্তে আস্তে আমার দিকে একপাশ হয়ে শুল। ল্যাপটপটা কাছে টেনে নিল। একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আর একবার ল্যাপটপের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ এইরকম করার পর ও একটা ফাইলে গিয়ে রাইট ক্লিক করে ওপেন উইথ করে একটা ফ্লিম চালাল।
ল্যাপটপটা ওর দিকে একটু ঘুরিয়ে নিল। আমি ল্যাপটপের স্ক্রিনটা পুরোটা দেখতে পাচ্ছিনা। তবে কিছুটা দেখতে পাচ্ছি। মনে হলো ও যেন একটা ব্লু-ফ্লিম দেখছে।
আমি আবঝা আবঝা দেখতে পাচ্ছি।
ঝিমলি এবার সিটের ওপর উঠে বসল। আবার ল্যাপটপটা ঘুরিয়ে নিল। হ্যাঁ আমি যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। একটা টিন এজের বিদেশি ব্লু-ফ্লিম। আমি এবার পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি।
আজকালকার এই ইয়ং জেনারেশনের মেয়েগুলো কেমন যেন।
আমি গ্রামের ছেলে।
এরা কেরিয়ারিস্ট আবার সেক্সটা এদের কাছে জলভাত। ঝিমলি নিশ্চই ধরে নিয়েছে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি। নাহলে ও নীল ছবি দেখতো না।
খুব ইচ্ছে করছিল। ছবি দেখে ওর কি রি-অ্যাকসন হয় দেখার জন্য। নিজেকে খুব ছোটো মনে হলো।
কিছুক্ষণ আগেই ওকে নিয়ে যা তা ভাবছিলাম। মনের আর দোষ কোথায়। ঝিমলিকে দেখেই মনে হচ্ছে ওর বাবা-মা ওকে অভাবে রাখেনি। দু-হাত ভরে দিয়েছেন।
আর আমি ক্লাস টেনে ব্যাং কাটার জন্য একটা বায়লজি বক্স কাকার কাছে চেয়ে পাইনি। হয়তো না পাওয়ার জন্য আমার খিদে আরও বেড়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বাবলা কাঁটা, ব্লেড আর মুলি বাঁশের পাতলা কঞ্চি দিয়ে বায়লজি বক্সের কাজ সেরেছিলাম। তাই আর সায়েন্স পড়া হয়ে ওঠে নি। আমি ভেতো বাঙালী।
এখনও ল্যাপটপে হাত দিইনি। অফিসের কমপিউটারে মাঝে মাঝে বসি। আমি পাশ ফিরে শুলাম। মাথার মধ্যে যতসব উল্টপাল্টা চিনতা ভিড় করে আসছে।
বড়োমার মুখটা মনে পড়ে গেল। পৃথিবীতে প্রথম কাউকে মা বলে ডেকেছি।
বড়োমার স্নেহের ছায়ায় আজ আমি এখানে। খুব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখেছি। আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্টগুলো সব মেয়েরা দখল করে আছে। কেউ আমার প্রেমিক। কাউকে মাসী জ্ঞানে সম্মান করেছি। আবার কেউ আমার মা। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না।
একটা নরম হাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙলো। মুখের কাছে সুন্দর একটা মুখ।
মিত্রা এখানে কোথা থেকে এলো!
সম্বিত ফিরে পেলাম। না এ মিত্রা নয়। ঝিমলি। তারাহুড়ো করে উঠে বসলাম।
বাবাঃ কিছু ঘুমতে পারেন।
হেসে ফেললাম। কেন তুমি সারারাত জেগেছ নাকি?
তা নয়তো কি।
সত্যিতো একটা সমত্ত পুরুষের সঙ্গে এক কুপে একটা রাত কাটান সত্যি খুব টাফ।