04-03-2021, 04:58 PM
উত্তরন #
কিরকম একটা অদ্ভুত ঘোরের ভেতরে ঘুমের দেশ থেকে ফিরে আসছিলাম। আস্তে আস্তে চোখ খুলে আবছা আলোয় বুঝতে পারছিলাম না কোথায় আছি। কেমন যেন অচেনা লাগছে সব কিছু ... ঘুমের ঘোর কেটে গেলে বুঝলাম আমি ওর বুকের ভেতরে শুয়ে আছি। ঠিক যেন প্রেমিক পুরুষের বলিষ্ঠ বাহুবন্ধনে সমর্পিতা নারী নিশ্চিন্তে আদুরে মিনি বেড়ালের মতো ওম নিচ্ছে। যে বাঁধনের ভেতরে থাকলে থাকে না কোনো চিন্তা, থাকে না কোনো ভাবনা...শুধু থাকে নিজেকে সমর্পন করার আকুলতা। একটু একটু করে রাতের সেই মুহুর্ত গুলোর কথা মনে পড়তে শুরু করলে অনাবিল এক সুখে প্লাবিত হতে হতে শুনলাম ওর ঘুম জড়ানো গলায় আদরের ডাক…তিস্তা…
আমার আর কোনো নাম নেই বলে সবাই আমাকে তিস্তা বলেই ডাকে, কেন জানি না ও আমাকে সেই একই নামে ডাকলেও কেন এত ভালো লাগে আমার... কি যেন একটা আছে সেই ডাকে বুঝি না... শুনলেই বুকের ভেতরে জল তরঙ্গের মতো বেজে ওঠে...ছোট্ট করে আবেশ ভরা স্বরে সাড়া দিলাম...উঁ...
ও আমাকে আরো নিবিড় করে বুকে টেনে নেবার বৃথা চেস্টা করে বলল... তুমি এতো দুরে কেন তিস্তা? আস্তে করে উত্তর দিলাম...আমি তো তোমার বুকের ভেতরে রিজ...বুঝতে পারছো না? ও বিড় বিড় করে বলল...কি জানি, মনে হচ্ছে তুমি কতো দুরে... তারপরে একটু সময় চুপ করে থেকে বলল... রাজকুমারীর ঘুম হয়েছে? ওর ঘুমের ঘোর না কাটলেও আমি স্বপ্নের ভেতরে থেকে ভাবছিলাম ‘জানি না সোনা ঘুমিয়েছি কিনা কিন্তু এটা জানি তুমি আমাকে এত আদর...এত আদর করেছো যে আমি হয়তো কোনোদিন ভুলতে পারবো না এই রাতটার কথা। আমার সারা শরীর মন দিয়ে আরো একবার অনুভব করেছি তুমি আমাকে কতো ভালোবাসো, কতো সম্মান করো। মন প্রান দিয়ে বুঝেছি আমার শরীরটা তোমার কাছে নিছক ভোগের বস্তু নয়... আমার শরীরটা যেন এক মন্দীর আর তুমি সেই মন্দীরের পুজারী যে একনিষ্ঠ ভাবে ভগবানের সেবা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। তুমি শুধু নিজের সুখের কথা ভাবোনি, তোমার রাজকুমারীকে নিয়ে গেছো এক স্বপ্ন রাজ্যে... তোমার কুঁড়িসম রাজকুমারীকে একটু একটু করে আধ ফোটা গোলাপে পরিনত করেছো... শিখিয়েছো কিভাবে সুখ পেতে আর সুখ দিতে হয়...
হঠাৎ মনে পড়ে গেল...আরে, তুমি যে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলে আর আমি উত্তর না দিয়ে কি সব ভেবে যাচ্ছি। এই, তুমি রাগ করোনি তো? আবারও ভুল করলাম নীরবে তোমাকে প্রশ্নটা করে। তোমার দিকে তাকিয়ে দেখবো যে তারও কি উপায় আছে, তুমি আমাকে এমন ভাবে বুকের ভেতরে আগলে রেখেছো যেন তুমি ভয় পেয়েছো এই ভেবে যে আমি হারিয়ে যেতে পারি। আস্তে করে তোমাকে বললাম...এই... তুমি কোনো সাড়া দিলে না। আবার ডাকলাম তোমায়, এবারেও কোনো সাড়া নেই। বুঝেছি, তুমি আবার ঘুমিয়ে পড়েছো। ঘুমোও সোনা... আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। কাল রাতে তুমি দেখতে চেয়েছিলে আমায়, ভীষন লজ্জা পেয়েছিলাম, নিজেকে দেখতে দিই নি। তখন কি আর জানতাম তুমি ওই অন্ধকারের ভেতরে আমাকে ছুঁয়ে যেতে যেতে মনের ক্যামেরায় তুলে রাখবে তোমার আদরের রাজকুমারীর নগ্নতার প্রতিচ্ছবি। তোমার অস্ফুট স্বরে বলা ... তিস্তা, কি সুন্দর তুমি... শুনে মনে মনে ভাবছিলাম...ইস, কেন ওকে বললাম আলো নিভিয়ে দিতে, কেন ওকে নিজের চোখে দেখতে দিলাম না... একটু না হয় লজ্জা পেতাম...না হয় চোখ বুজে থাকতাম। তারপরেই মনে হয়েছিল...ভালোই তো হয়েছে... তুমি আমাকে যেভাবে আলতো ভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছো আর আমি শিউরে শিউরে উঠছি সেই অনুভুতির কি কোনো তুলনা আছে? ভীষন ইচ্ছে করছে আজ তুমি আমাকে দেখো মন প্রান ভরে...ইস, ভাবতেই পারছি না...তুমি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছো...আমি লাজুক মুখে মুখ নিচু করে পা ভাঁজ করে এক হাতে ভর দিয়ে বসে আছি...আমার খোলা চুলে ঢাকা আধো উন্মুক্ত নগ্ন বুকের দিকে তুমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছো... নিজের অজান্তেই হাত বাড়িয়েছো আলতো ভাবে ছুঁয়ে দেখার জন্য...তোমার ছোঁয়া পেয়ে আমি আবার শিউরে উঠেছি...অনেক সময় পরে কি মনে করে মুখটা একটু তুলে তোমার দিকে তাকিয়েছি...দেখলাম, তুমি এক দৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছো। পারলাম না চোখ সরাতে... বুঝতে পারছি কিছু যেন তুমি বলতে চাইছো... একটু একটু করে পড়তে পারছি তোমার চোখের ভাষায় বলতে চাওয়া মনের কথা। আস্তে আস্তে চোখ নামিয়ে নিয়েছি। কয়েক মুহুর্ত নিশ্চল ভাবে বসে থেকে ভেবেছি, তুমি কি ভাবছো এখন...তুমি কি ভাবছো আমি তোমার মনের কথা বুঝতে পারিনি? হয়তো তা নয়...তুমি ভাবছো যে আমি মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করছি। ঠিকই তো, তুমি আমাকে দেখতে চাইলে আমি কেন না করবো বলো? আমি তো শুধু তোমার-ই...আমার সবকিছু তো তোমার। আস্তে আস্তে আমার ভাঁজ করে রাখা পা দুটো সরাতে শুরু করেছি...তোমার দিকে না তাকালেও আমি জানি তুমি চোখের পলক না ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছো। শুধু তোমারই জন্য তোমার আধফোটা গোলাপ আরো একটু প্রস্ফুটিত করেছে নিজেকে। এক একটা মুহুর্ত কেটে যাচ্ছে... বুঝতে পারছি তুমি আমার নগ্নতার রুপে অভিভুত কিন্তু আমি যে আর পারছি না সোনা, আমার শরীর আমার কথা শুনতে চাইছে না। যেন বলতে চাইছে কেন তুমি ওকে দুর থেকে শুধু দেখে যেতে দিচ্ছো...ওকে কাছে ডাকো, আবার নিজেকে উজ়াড় করে দাও। হয়তো তুমিও বুঝেছো আমি কি চাই... কখন আমার কাছে এসেছো হয়তো বুঝিনি। কখন যেন আমি তোমার বুকের উপরে এলিয়ে পড়েছি লতার মতো। তোমার হাত সেই আগের মতো আমার শরীরে খেলে বেড়াচ্ছে। ছুঁতে চেয়েও যেন ছুঁয়ে যাচ্ছো না... আমার মুখে তোমার উষ্ণ শ্বাস প্রশ্বাসের ছোঁয়া আমাকে একটু একটু করে গ্রাস করছে। আমার ঠোঁট দুটো কেঁপে কেঁপে চেয়েছে তোমার স্পর্শ পেতে। তুমি তাদেরকে নিরাশ করোনি... ভুল বললাম যে... শুধু আমার ঠোঁট নয়, আমার সারা শরীর চেয়েছে তোমাকে। বুঝিনি তুমি কখন তোমার বক্ষলগ্না রাজকুমারীকে শুইয়ে দিয়ে সারা শরীরে চুমু দিতে শুরু করেছো। আমার পায়ের পাতাও পেয়েছে তোমার ঠোঁটের স্পর্শ। তোমার হাত আর ঠোঁট আমাকে যেন পাগল করে দিচ্ছে... নিজের অজান্তে বেরিয়ে আসা আমার অস্ফুট শিৎকার তোমাকে করে তুলেছে আরো দুষ্টু... মাঝে মাঝে তুমি মুখ তুলে দুষ্টুমি ভরা হাসির সাথে আমার দিকে তাকিয়ে দেখছিলে আমি কেমন ভাবে অসহায় হরিন শিশুর মতো তোমার দিকে তাকিয়ে আছি... তাতেও তোমার মন গলেনি...তুমি আবার শুরু করেছো তোমার দুষ্টুমি... তোমার মাথা দুহাতে চেপে ধরে ছটপট করেছি...বলতে চেয়েছি আমাকে মেরে ফেল রিজ, আর পারছি না... তবুও তুমি আমাকে রেহাই দাওনি...আমি এক সদ্য ফোটা কুঁড়ি যে জানে না নিজেকে কি করে আটকাতে হয়, পারিনি সেই অসহ্য সুখ সয়ে যেতে...অস্ফুট আর্তনাদের সাথে সাথে আমি নিজেকে উজ়াড় করে দিয়েছি...
আস্তে আস্তে ঘোর কেটে গেলে চোখ মেলে তাকালাম... তুমি তখোনো আমার দিকে তাকিয়ে আছো দুষ্টুমি ভরা চোখে। নীরবে হয়তো বলতে চেয়েছো তুমি একদিন আমাকে বলেছিলে না মেয়েদের শরীরের ব্যাপারে কি তুমি একটু নিঃস্পৃহ। আমার ক্লান্ত চোখে ফিরে আসছে সুখ মেশানো খুশী...ভীষন ইচ্ছে করছে তোমাকে কানে কানে বলি... তুমি খুব দুষ্টু...আগে কেন তুমি আমায় দাওনি এই সুখ রিজ। তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নীরবে তোমাকে কাছে ডাকলাম... তুমি এলে না...যেন বলতে চাইলে, আমি কেন যাবো তোমার কাছে? তুমি এসো... দু চোখের ভাষায় অনুনয় করে জানালাম, আমার যে ওঠার ক্ষমতা নেই সোনা, তুমি তো আমাকে অবশ করে দিয়েছো শরীর মন দুদিক থেকেই...জানি তো আমার সোনা আমাকে জানে...বোঝে। একটু একটু করে এগিয়ে এসে আমাকে বুকে তুলে নিয়ে অনেক সময় ধরে আলতো ভাবে আমার নগ্ন পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করেছো... একটু একটু করে আমি ফিরে পেয়েছি নিজেকে। তোমার হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে আলাদা করে তোমার দিকে তাকিয়ে থেকে ভেবেছি... আমাকে এখন কি করতে হবে... তুমি বুঝলে আমার মনের কথা, অপেক্ষা করছিলে কখন আমি তোমাকে দেখবো, আস্তে আস্তে মুখ নিচু করে তাকালাম ওর দিকে...এর আগে ওকে ছুঁয়েছি, আদর করেছি নিজের হাতে নিয়ে...এই প্রথম নিজের চোখে দেখছি সেই পরম আকাঙ্খিত দুষ্টুটাকে...যে আমাকে করে তুলেছে অনাঘ্রাতা কুঁড়ি থেকে ফুল। ওর দিকে তাকিয়ে ভাবছি...এই দুষ্টু, কাল রাতে তুমি কি করেছো মনে আছে? তোমার আদরের সোনামনি তো তোমাকে পারেনি সবটুকু দিতে... রাগ করোনি তো? আস্তে আস্তে নিচু হয়ে ওকে আলতো ভাবে ধরে ওকে চুমু দিলাম...ও সাড়া দিল আমার ডাকে...তাকিয়ে আছি ওর দিকে... ছটপট করছে দুষ্টুটা আমার নরম হাতের ভেতরে... না সোনা, আর তোমাকে কষ্ট দেবো না, এসো তোমাকে আদর করি...এই না...একটু অপেক্ষা করো সোনা, একবার দেখে নি বড় দুষ্টুটা কি করছে। মুখ তুলে হাসি মুখে তাকালাম...তুমি তাকিয়ে আছো আমার দিকে...আস্তে আস্তে চোখ বুজে গেল তোমার...বুঝলাম আমার দিতে চাওয়া সুখ তুমি মন প্রান ভরে অনুভব করতে চাইছো...আরো কিছুটা সময় কেটে গেছে...তোমার অস্ফুট সুখের গোঙ্গানী আমাকে একটু একটু করে তুলছে আরো পরিনত...শিখছি তোমাকে সুখ দিতে গেলে আমাকে কি কি করতে হবে। তুমি চাইছো আরো কিছু সময় আমার দেওয়া সুখ পেতে কিন্তু পারলে না নিজেকে আটকে রাখতে...তোমার পৌরুষ হেরে গেল এক সদ্য ফোটা কুঁড়ির কাছে...যেমন ভাবে আমার নারীত্ব বিসর্জিত হয়েছিল তোমার পৌরুষের কাছে...তোমার উষ্ণতায় নিজেকে শিহরিত করতে করতে ভাবছিলাম... তুমি যে সুখ আমাকে দিয়েছিলে সেই সুখ আমিও দিলাম তোমাকে ফিরিয়ে... তারপর? তারপর আর কিছু মনে নেই...এইটুকু মনে আছে তোমার সুখে ভরা ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তুমি যেন আমাকে বললে...কাছে এসো...
ঘুমের আবেশ কেটে যাচ্ছে একটু একটু করে। স্বপ্ন দেখছিলাম নাকি আধো ঘুম আধো জাগরনের ভেতরে কল্পনার জাল বুনছিলাম এত সময় ভাবতে ভাবতে চোখ মেলে তাকালাম... তুমি আমার বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে আছো। হয়তো বুঝলে আমি আর ঘুমিয়ে নেই...আস্তে আস্তে উঠে আমার দিকে তাকালে। আবেশ ভরা গলায় যা বললে তাতে বুঝলাম... স্বপ্ন-ও নয়...কল্পনার জাল-ও নয়...আমরা দুজনে ছিলাম স্বপ্নসম বাস্তবে...তোমার কথা শুনে লজ্জায় চোখ বুজে গেল...আমি চোখ বুজলে কি হবে তুমি তো আমাকে দেখে যাচ্ছো দুষ্টুমি ভরা চোখে...আর তো কোনো জায়গা নেই আমার তাই তোমার বুকেই মুখ লুকিয়েছি নিজেকে আড়াল করার জন্য...
______________________________
চিঠি #
দেখতে দেখতে তিস্তার ফিরে যাবার সময় এগিয়ে আসছে। সেই দুটো দিনের পর ওকে আর সেইভাবে কাছে পাওয়ার সুযোগ ছিল না। সবার সামনে আগের মতোই আমাদের খুনসুটি, পেছনে লাগা, লোক দেখানো ঝগড়া সবই বজায় থাকলেও ছোট ছোট কিছু কাছে পাওয়ার মুহুর্ত কিছুতেই ভোলার নয়। মনের সাথে সাথে স্বাভাবিক ভাবেই শরীর চলে এলেও আমরা দুজনের কেউই তাতে ভেসে যেতে চাইনি। তার থেকে বরং এই ভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে কাছে পেতে ভালোই লাগে। হঠাৎ কোত্থেকে চলে এসে ছোট্ট একটা চুমু দিয়েই ওর দৌড়ে ফিরে যাওয়ার পর আমি যখন বুঝতে পারলাম তখন ও আর আমার কাছে নেই, আমি হাত তুলে ইশারা করে কাছে আসার কথা বললে ও আমাকে তার বম্মার ভয় দেখিয়ে পালিয়ে যায়। কখোনো বা ওর অজান্তেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলে মুখে এই, না না...কেউ দেখে ফেললে...বলেও নিজেকে ছাড়াবার কোনো ইচ্ছেই দেখায় না...ও ভালো করেই জানে আমি কেউ আশেপাশে নেই বুঝেই কাছে এসেছি।
আজ বিকেলে ও মায়ের সাথে কেনাকাটা করতে বেরিয়েছে। ও নাকি গড়িয়াহাট চিনে গেছে তাই আর আমাকে ওর লাগবে না... বম্মা চলো না আমরা একা একা যাই...তোমার বিচ্ছু ছেলে বড্ড কথা শোনায়... বলে বায়না করলে মা রাজী না হয়ে পারেনি। যাওয়ার আগে এক ফাঁকে আমার কাছে এসে বলে গেছে...এই, পালাবে না কিন্তু কোথাও...ফিরে এসে তোমার সাথে অনেক কথা আছে। সন্ধের পর ফিরে আসার পর আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে দেখালো কি কি কিনেছে, আমার পছন্দ কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। পরবে তো তুমি, আমার আবার পছন্দ হবার কি আছে বললে ও তার বম্মাকে নালিশ করে বলে দিল দেখলে তো বম্মা, এই জন্যই তোমার ছেলের সাথে আমার ঝগড়া হয়। মা আর কি বলবে, ভালো করেই জানে আমরা এরকমই। মা হেসে ফেলে তিস্তাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল... চিন্তা করিস না, দেখবি বিয়ের পর কেমন বৌয়ের পেছন পেছন ঘুরে বেড়ায়। মাকে-ও যথারীতি তিস্তার দলে ভিড়ে যেতে দেখে আমিও উঠে চলে এসেছি একটু মিথ্যে রাগ দেখিয়ে যাতে একটু পরেই ও আমার রাগ ভাঙ্গানোর ছুতোয় আমার ঘরে আসতে পারে। যা ভেবেছিলাম সেই মতো একটু পরেই ও চলে এসেছে আমার কাছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ইশারায় মা কোথায় জিজ্ঞেস করলে মুচকি হেসে আমার কোলে বসে পড়ে গলা জড়িয়ে ধরেই গোটা কয়েক চুমু খেয়ে বলল...বম্মা তোমাদের পাশের বাড়ী গে-ছে...এখন শুধু আমরা দু-জ-ন...আ-র কে-উ নে-ই...কি ম-জা...
বাড়িতে মা নেই, আমার কোলে আমার রাজকুমারী, এই সুযোগ কি আর ছাড়া উচিৎ নাকি ভেবে আদর করতে গেলে হেসে ফেলে বলল...তুমি না বড্ড লোভী হয়ে গেছো...মুখে যাই বলুক না কেন ওর-ও তো আমার কাছে আসার ইচ্ছে হয়। শুধু আমি নয়, ও নিজেও আমাকে মন ভরে আদর করেছে। তারপর আলাদা হয়ে বসে কথা বলতে বলতে জিজ্ঞেস করলাম ও কি বলতে চেয়েছিল যেন আজ। ও আমার কথা শুনে একটু সময় চুপ করে থেকে বলল...এই যে আমরা ফোনে কথা বলি... এর তো কোন রেকর্ডিং থাকছে না ...মানে আমি বলছি ...ধরো ভবিষ্যতে আমরা কি কি কথা হয়েছিল সেটা জানতে পারবো না...
- হু ঠিক...
- ভাবছি সেই আগেকার দিনের মতো চিঠি লিখলে কেমন হয়...অনেক বছর পরে চিঠিগুলো পড়বো আর মনে পড়বে আমাদের পুরোনো দিনের কথা...
- হু ঠিক...
- কি খালি হু ঠিক ঠিক বলে যাচ্ছো...এই বলো না...
- চিঠি লিখলে তো কবে পৌঁছোবে ঠিক নেই...হারিয়েও যেতে পারে...তার থেকে মেল করা যেতে পারে...
- ধ্যাত...আমি ওসব মেল ফেল বুঝি না...
- আমি শিখিয়ে দেবো...
- আমার তো কম্পিউটার নেই...কি করে হবে?
- আমার একটা ল্যাপটপ পড়ে আছে...তোমাকে দিয়ে দেবো...
- ইস...তাই? কবে শেখাবে?
- আগে বলো কি দেবে আমাকে?
- সব কিছুতেই কি দেবে বলো? লোভী কোথাকার...কিচ্ছু দেবো না...পাজী কোথাকার...
- তাহলে থাক...
- ইস...তাহলে থাক? এই...প্লিজ...বলো না...বলো না... কবে শেখাবে...এই...আমার মোবাইলে হবে না?
- কিছু না দিলে কোথাও কিছু হবে না...
- আচ্ছা বাবা...দেবো...আমার সব কিছুই তো তোমার...তাই না...
- আগে দাও...
উঃ... কি বিচ্ছু ছেলে বলে ও এগিয়ে এসেছে আমার দিকে...তারপর...
ওকে মেল কিভাবে করতে হয় শেখাতে গেলে ইচ্ছে করে বার বার ভুল করছিল যাতে আমি ওকে বকুনি দি বা হয়তো আমার কাছে মেল করতে শেখার নাম করে আরো বেশী সময় থাকতে পারে। কারনটা যাই হোক না কেন আমিও তো সেটাই চাইছি যা ও চাইছে। ধুস, তোমার মাথায় কিছু নেই, এইটুকু মনে রাখতে পারছো না বললে হেসে ফেলে বলে দিল তুমি শেখাতে পারছো না তো আমার কি দোষ। দুজনে খুনসুটি করতে করতে একে অপরকে কাছে পেতে চেয়েছি। ও হয়তো খুব মন দিয়ে কিছু লিখছে, আমি ওর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কাছে আসতে চেয়েছি, ও মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসিতে মুখ ভরিয়ে ফিসফিস করে বলেছে এই, একদম দুষ্টুমি নয়... তারপরেই নিজেই হয়তো আমার কাছে সরে এসে আমি যা চেয়েছি তাতে সায় দিয়েছে। মেল করতে শেখানোর সাথে সাথে ওর জন্য নতুন মেল আইডি খুলে দিয়ে পাসওয়ার্ড বদলে নিতে বললে কিছুক্ষন আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল...তোমাকে বিশ্বাস করতে না পারলে কাকে করবো রিজ? ওকে এই মুহুর্তে আর বুঝিয়ে লাভ নেই, মুখে হয়তো কিছু বলবে না কিন্তু মনে মনে কষ্ট পাবে ভেবে মেনে নিয়েছি। ও উঠে চলে যাবার পর ভাবছিলাম সত্যিইতো স্মৃতি হিসেবে চিঠির কোনো তুলনা হয় না।
আমার চিঠি #
ফিরে এসেছি বাপির সাথে। এবারের ফিরে আসার সাথে আগেরবারের তুলনা করে লাভ নেই। দুষ্টুটা কি যে করে দিয়েছে আমার সে তো শুধু আমিই জানি। মাঝে মাঝে ওকে ভীষন কাছে পেতে ইচ্ছে করে, একা একা যেন ঘুমোতে ইচ্ছে করে না, যদিও তাতে ওর কোনো দোষ ছিল না, আমিই তো এগোতে চেয়েছিলাম। ও তো আর নিজের থেকে আমাকে জোর করেনি। ওকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছেটাকে ভুলে যাওয়ার জন্য মাঝ রাতে উঠে পড়ি চিঠি লেখার জন্য। গালে হাত দিয়ে জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে থাকি আর আপনমনে ভাবতে থাকি কি লিখবো। অনেক কিছু ভেবে ভেবে আবোল তাবোল লিখি আর তারপর পড়তে গিয়ে দুর ছাই বলে মুছে দিয়ে আবার নতুন করে লিখতে শুরু করি। চিঠি আর আমার পাঠানো হয়ে ওঠে না। রোজ ও আমাকে জিজ্ঞেস করে কবে পাবো তোমার চিঠি আর আমি ওকে রোজ কথা দি... আমাদের দুজনের কাছেই ব্যাপারটা বেশ মজার হয়ে উঠেছে। ও আমার পেছনে লাগে, আমার প্রথম চিঠি নাকি ও আমাদের বিয়ের আগের দিন পাবে, তার মানে এখোনো বেশ কয়েক বছর ওকে অপেক্ষা করতে হবে। আমিও অভিমান করে বলেছি আমি না হয় কি লিখবো ভেবে পাচ্ছি না, তুমিও তো পারতে পাঠাতে। ও গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলেছিল... তোমার প্রথম চিঠি পাওয়ার জন্য আমি সারা জীবন অপেক্ষা করতে রাজী। বেশ কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পরও যখন আমি কিছুই লিখে উঠতে পারলাম না তখন বাধ্য হয়ে মৌলী আর চয়িকে বলেছি এই তোরা একটু বল না বাবা কি লিখবো। চয়ী আমার কথা শুনে বেশ গম্ভীর হয়ে বলল... বলতে পারি, তবে একটা শর্ত আছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি কি শর্ত শোনার জন্য আর ও শুধু মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে দেখে ইচ্ছে করছিল দি এক গাট্টা। আমারই দরকার তাই ওর ফাজলামো হজম করে নিয়ে বললাম...এই প্লিজ বল না। ও মৌলীর কানে কানে কি একটা বললে মৌলী হেসে ফেলে ওর হাতে চিমটি কেটে বলল... এই তিস্তা, কি বলছে জানিস...তুই যদি একদিনের জন্য সৃজনের সাথে ওকে প্রেম করতে দিস তবেই ও বলে দেবে কি লিখবি। কথাটা শুনে না ভালো না লাগলেও না হেসে পারলাম না, ভালো করেই জানি ও আমার পেছনে লাগছে। চিঠিতে কি লিখবো ভাবা ছেড়ে দিয়ে তিনজনে বেশ কিছুক্ষন মজা করেছি... পালটা পালটি করে কে কার প্রেমিকের সাথে প্রেম করতে গিয়ে কি বলবো আর কি করবো।
আরো দুটো দিন কেটে গেছে। ওকে বারন করে দিয়েছিলাম ফোন করতে। ফোনেই যদি সব কথা হয়ে যায় তো চিঠিতে কি আর লিখবো বলে...আমার কথা শুনে ও মেনে নিয়ে বলেছিল তাড়াতাড়ি পাঠিও কিন্তু। নাঃ, আজ আমি লিখবোই ভেবে রোজকার মতোই জানলার বাইরে তাকিয়ে আছি আর এক একটা লাইন লিখে যাচ্ছি। কত সময় কেটে গেছে জানি না...কিছুটা লেখা হয়ে গেলে পড়তে শুরু করলাম প্রথম থেকে...একটু যেন খাপছাড়া লাগছে...লাগুক, আজ আমাকে পাঠাতেই হবে যে...
আমার রিজ সোনা,
তোমাকে লেখা আমার প্রথম চিঠি... লাভ লেটার? কি জানি...তাই হবে হয়তো... এই, কি করছি বলোতো এখন...উমম...বলতে পারলে না তো...আমি এখন শুধু একজনের কথা ভাবছি। তোমার কথা...তুমি এখন কি করছো...খেয়েছো কিনা...তোমার তো আবার কখন কি ইচ্ছে হয় নিজেও জানো না...রাত জেগে পড়ছো নাকি শুধু আমার কথাই ভাবছো বলোতো? তোমার কাছে না থাকলে কি হবে, আমি জানি, তুমি দুটোই করছো...পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে বাইরের দিকে উদাশ হয়ে তাকিয়ে তোমার তিস্তার কথা ভাবছো...কখোনো বা নিজের মনেই হাসছো আমার ছেলেমানুষীর কথা ভেবে। আবার পড়ায় মন দিচ্ছো আর তারপর ভাবছো কখন আমার চিঠি তুমি পাবে...
এই জানোতো...আমাদের এখানে আজ খুব বৃষ্টি হচ্ছে। জানোই তো আমাদের উত্তরবঙ্গে তোমাদের ওখানকার থেকে সারা বছর ধরেই অনেক বেশী বৃষ্টি হয়। এই কিছুক্ষন আগেও আমি খোলা জানলার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম...ঝম ঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে...ভাবছিলাম এখন যদি তুমি আমার পাশে থাকতে তাহলে কি করতাম আমরা...সেদিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল...অজানা এক আনন্দ মেশানো ভয় পাচ্ছিলাম সেদিন...আচ্ছা থাক, এখন ওসব কথা আর লিখবো না...আমার তো মন খারাপ আছেই, তোমারও যদি মন খারাপ করে তাহলে কি সেটা ঠিক হবে। উঁ হুঁ...মোটেও নয়...তোমার আবার সামনেই পরীক্ষা...তাই না।
এই শোনো না...একটা কথা তোমায় কেন কাউকেই বলিনি... তোমার মনটা চুরি করে তো আমি লুকিয়ে রেখেছিই নিজের কাছে... তার সাথে সাথে আরো একটা জিনিষ চুরি করে এনেছি তোমাদের বাড়ী থেকে...সেটাও অনেক দামী কিন্তু তোমার মনের থেকে দামী নয়। খুব জানতে ইচ্ছে করছে তো? জানি তো, তোমার জায়গায় আমি থাকলেও তাই ভাবতাম। ভেবেছিলাম বলবো না কিন্তু তোমার কাছে তো আমার কিছুই লুকোনো উচিৎ নয় তাই না...তাই বলেই দি...এই, হাসবে না কিন্তু...তোমার একটা ফটো সব সময় আমার সাথে সাথে রাখি...হাতে করে নিয়ে তাকিয়ে থাকি চোখের পলক না ফেলে। ইশ, কি ভালো যে লাগে তোমাকে দেখে যেতে...সময় কিভাবে কেটে যায় বুঝতেই পারি না...তোমার সাথে মনে মনে কথা বলি...তোমাকে আদর করি...আচ্ছা, কি আছে বলোতো, তোমার ওই চোখ দুটোতে...কিছুতেই যেন বুঝতে পারি না...কখোনো মনে হয়...ভীষন... ভীষন দুষ্টু...কখোনো মনে হয় স্বপ্ন দেখছো...আবার কখোনো বা মনে হয় ভালোবাসা ঝরে ঝরে পড়ছে...অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি...বুকের ভেতরটা গর্বে ভরে উঠে যেন বলতে চায়...তুমি শুধু আমার...আর কারো নয়। তারপরেই কেমন যেন খালি খালি মনে হয় বুকের ভেতরটা...ইচ্ছে করে তোমাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে...কি করি বলোতো তখন...তোমাকে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দি...বুকে চেপে ধরে মনে মনে বলি খুব দুষ্টু তুমি...বলতে ইচ্ছে করে কেন তুমি আমাকে এত ভালোবাসো...কেন তুমি আমায় সেদিন এত আদর করলে...কি করে থাকি বলোতো এখন একা একা...এত কিছু বলি তোমায় আর তুমি শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকো...ধ্যাত, তুমি ভীষন খারাপ...বিচ্ছিরি বলে তোমায় ভেঙ্গিয়ে দি...
এই, আজ এখানেই শেষ করি...কেমন। তুমি সময় করে উত্তর দিও...মন খারাপ করবে না...মন দিয়ে পড়বে...আমার কথা বেশী ভাববে না...বম্মাকে জ্বালাবে না...এই, কাল রাতে একবার ফোন করবে? ভীষন ইচ্ছে করছে একবার তোমার সাথে কথা বলতে...
তোমার...শুধু তোমার,
তিস্তা
কিরকম একটা অদ্ভুত ঘোরের ভেতরে ঘুমের দেশ থেকে ফিরে আসছিলাম। আস্তে আস্তে চোখ খুলে আবছা আলোয় বুঝতে পারছিলাম না কোথায় আছি। কেমন যেন অচেনা লাগছে সব কিছু ... ঘুমের ঘোর কেটে গেলে বুঝলাম আমি ওর বুকের ভেতরে শুয়ে আছি। ঠিক যেন প্রেমিক পুরুষের বলিষ্ঠ বাহুবন্ধনে সমর্পিতা নারী নিশ্চিন্তে আদুরে মিনি বেড়ালের মতো ওম নিচ্ছে। যে বাঁধনের ভেতরে থাকলে থাকে না কোনো চিন্তা, থাকে না কোনো ভাবনা...শুধু থাকে নিজেকে সমর্পন করার আকুলতা। একটু একটু করে রাতের সেই মুহুর্ত গুলোর কথা মনে পড়তে শুরু করলে অনাবিল এক সুখে প্লাবিত হতে হতে শুনলাম ওর ঘুম জড়ানো গলায় আদরের ডাক…তিস্তা…
আমার আর কোনো নাম নেই বলে সবাই আমাকে তিস্তা বলেই ডাকে, কেন জানি না ও আমাকে সেই একই নামে ডাকলেও কেন এত ভালো লাগে আমার... কি যেন একটা আছে সেই ডাকে বুঝি না... শুনলেই বুকের ভেতরে জল তরঙ্গের মতো বেজে ওঠে...ছোট্ট করে আবেশ ভরা স্বরে সাড়া দিলাম...উঁ...
ও আমাকে আরো নিবিড় করে বুকে টেনে নেবার বৃথা চেস্টা করে বলল... তুমি এতো দুরে কেন তিস্তা? আস্তে করে উত্তর দিলাম...আমি তো তোমার বুকের ভেতরে রিজ...বুঝতে পারছো না? ও বিড় বিড় করে বলল...কি জানি, মনে হচ্ছে তুমি কতো দুরে... তারপরে একটু সময় চুপ করে থেকে বলল... রাজকুমারীর ঘুম হয়েছে? ওর ঘুমের ঘোর না কাটলেও আমি স্বপ্নের ভেতরে থেকে ভাবছিলাম ‘জানি না সোনা ঘুমিয়েছি কিনা কিন্তু এটা জানি তুমি আমাকে এত আদর...এত আদর করেছো যে আমি হয়তো কোনোদিন ভুলতে পারবো না এই রাতটার কথা। আমার সারা শরীর মন দিয়ে আরো একবার অনুভব করেছি তুমি আমাকে কতো ভালোবাসো, কতো সম্মান করো। মন প্রান দিয়ে বুঝেছি আমার শরীরটা তোমার কাছে নিছক ভোগের বস্তু নয়... আমার শরীরটা যেন এক মন্দীর আর তুমি সেই মন্দীরের পুজারী যে একনিষ্ঠ ভাবে ভগবানের সেবা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। তুমি শুধু নিজের সুখের কথা ভাবোনি, তোমার রাজকুমারীকে নিয়ে গেছো এক স্বপ্ন রাজ্যে... তোমার কুঁড়িসম রাজকুমারীকে একটু একটু করে আধ ফোটা গোলাপে পরিনত করেছো... শিখিয়েছো কিভাবে সুখ পেতে আর সুখ দিতে হয়...
হঠাৎ মনে পড়ে গেল...আরে, তুমি যে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলে আর আমি উত্তর না দিয়ে কি সব ভেবে যাচ্ছি। এই, তুমি রাগ করোনি তো? আবারও ভুল করলাম নীরবে তোমাকে প্রশ্নটা করে। তোমার দিকে তাকিয়ে দেখবো যে তারও কি উপায় আছে, তুমি আমাকে এমন ভাবে বুকের ভেতরে আগলে রেখেছো যেন তুমি ভয় পেয়েছো এই ভেবে যে আমি হারিয়ে যেতে পারি। আস্তে করে তোমাকে বললাম...এই... তুমি কোনো সাড়া দিলে না। আবার ডাকলাম তোমায়, এবারেও কোনো সাড়া নেই। বুঝেছি, তুমি আবার ঘুমিয়ে পড়েছো। ঘুমোও সোনা... আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। কাল রাতে তুমি দেখতে চেয়েছিলে আমায়, ভীষন লজ্জা পেয়েছিলাম, নিজেকে দেখতে দিই নি। তখন কি আর জানতাম তুমি ওই অন্ধকারের ভেতরে আমাকে ছুঁয়ে যেতে যেতে মনের ক্যামেরায় তুলে রাখবে তোমার আদরের রাজকুমারীর নগ্নতার প্রতিচ্ছবি। তোমার অস্ফুট স্বরে বলা ... তিস্তা, কি সুন্দর তুমি... শুনে মনে মনে ভাবছিলাম...ইস, কেন ওকে বললাম আলো নিভিয়ে দিতে, কেন ওকে নিজের চোখে দেখতে দিলাম না... একটু না হয় লজ্জা পেতাম...না হয় চোখ বুজে থাকতাম। তারপরেই মনে হয়েছিল...ভালোই তো হয়েছে... তুমি আমাকে যেভাবে আলতো ভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছো আর আমি শিউরে শিউরে উঠছি সেই অনুভুতির কি কোনো তুলনা আছে? ভীষন ইচ্ছে করছে আজ তুমি আমাকে দেখো মন প্রান ভরে...ইস, ভাবতেই পারছি না...তুমি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছো...আমি লাজুক মুখে মুখ নিচু করে পা ভাঁজ করে এক হাতে ভর দিয়ে বসে আছি...আমার খোলা চুলে ঢাকা আধো উন্মুক্ত নগ্ন বুকের দিকে তুমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছো... নিজের অজান্তেই হাত বাড়িয়েছো আলতো ভাবে ছুঁয়ে দেখার জন্য...তোমার ছোঁয়া পেয়ে আমি আবার শিউরে উঠেছি...অনেক সময় পরে কি মনে করে মুখটা একটু তুলে তোমার দিকে তাকিয়েছি...দেখলাম, তুমি এক দৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছো। পারলাম না চোখ সরাতে... বুঝতে পারছি কিছু যেন তুমি বলতে চাইছো... একটু একটু করে পড়তে পারছি তোমার চোখের ভাষায় বলতে চাওয়া মনের কথা। আস্তে আস্তে চোখ নামিয়ে নিয়েছি। কয়েক মুহুর্ত নিশ্চল ভাবে বসে থেকে ভেবেছি, তুমি কি ভাবছো এখন...তুমি কি ভাবছো আমি তোমার মনের কথা বুঝতে পারিনি? হয়তো তা নয়...তুমি ভাবছো যে আমি মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করছি। ঠিকই তো, তুমি আমাকে দেখতে চাইলে আমি কেন না করবো বলো? আমি তো শুধু তোমার-ই...আমার সবকিছু তো তোমার। আস্তে আস্তে আমার ভাঁজ করে রাখা পা দুটো সরাতে শুরু করেছি...তোমার দিকে না তাকালেও আমি জানি তুমি চোখের পলক না ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছো। শুধু তোমারই জন্য তোমার আধফোটা গোলাপ আরো একটু প্রস্ফুটিত করেছে নিজেকে। এক একটা মুহুর্ত কেটে যাচ্ছে... বুঝতে পারছি তুমি আমার নগ্নতার রুপে অভিভুত কিন্তু আমি যে আর পারছি না সোনা, আমার শরীর আমার কথা শুনতে চাইছে না। যেন বলতে চাইছে কেন তুমি ওকে দুর থেকে শুধু দেখে যেতে দিচ্ছো...ওকে কাছে ডাকো, আবার নিজেকে উজ়াড় করে দাও। হয়তো তুমিও বুঝেছো আমি কি চাই... কখন আমার কাছে এসেছো হয়তো বুঝিনি। কখন যেন আমি তোমার বুকের উপরে এলিয়ে পড়েছি লতার মতো। তোমার হাত সেই আগের মতো আমার শরীরে খেলে বেড়াচ্ছে। ছুঁতে চেয়েও যেন ছুঁয়ে যাচ্ছো না... আমার মুখে তোমার উষ্ণ শ্বাস প্রশ্বাসের ছোঁয়া আমাকে একটু একটু করে গ্রাস করছে। আমার ঠোঁট দুটো কেঁপে কেঁপে চেয়েছে তোমার স্পর্শ পেতে। তুমি তাদেরকে নিরাশ করোনি... ভুল বললাম যে... শুধু আমার ঠোঁট নয়, আমার সারা শরীর চেয়েছে তোমাকে। বুঝিনি তুমি কখন তোমার বক্ষলগ্না রাজকুমারীকে শুইয়ে দিয়ে সারা শরীরে চুমু দিতে শুরু করেছো। আমার পায়ের পাতাও পেয়েছে তোমার ঠোঁটের স্পর্শ। তোমার হাত আর ঠোঁট আমাকে যেন পাগল করে দিচ্ছে... নিজের অজান্তে বেরিয়ে আসা আমার অস্ফুট শিৎকার তোমাকে করে তুলেছে আরো দুষ্টু... মাঝে মাঝে তুমি মুখ তুলে দুষ্টুমি ভরা হাসির সাথে আমার দিকে তাকিয়ে দেখছিলে আমি কেমন ভাবে অসহায় হরিন শিশুর মতো তোমার দিকে তাকিয়ে আছি... তাতেও তোমার মন গলেনি...তুমি আবার শুরু করেছো তোমার দুষ্টুমি... তোমার মাথা দুহাতে চেপে ধরে ছটপট করেছি...বলতে চেয়েছি আমাকে মেরে ফেল রিজ, আর পারছি না... তবুও তুমি আমাকে রেহাই দাওনি...আমি এক সদ্য ফোটা কুঁড়ি যে জানে না নিজেকে কি করে আটকাতে হয়, পারিনি সেই অসহ্য সুখ সয়ে যেতে...অস্ফুট আর্তনাদের সাথে সাথে আমি নিজেকে উজ়াড় করে দিয়েছি...
আস্তে আস্তে ঘোর কেটে গেলে চোখ মেলে তাকালাম... তুমি তখোনো আমার দিকে তাকিয়ে আছো দুষ্টুমি ভরা চোখে। নীরবে হয়তো বলতে চেয়েছো তুমি একদিন আমাকে বলেছিলে না মেয়েদের শরীরের ব্যাপারে কি তুমি একটু নিঃস্পৃহ। আমার ক্লান্ত চোখে ফিরে আসছে সুখ মেশানো খুশী...ভীষন ইচ্ছে করছে তোমাকে কানে কানে বলি... তুমি খুব দুষ্টু...আগে কেন তুমি আমায় দাওনি এই সুখ রিজ। তোমার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নীরবে তোমাকে কাছে ডাকলাম... তুমি এলে না...যেন বলতে চাইলে, আমি কেন যাবো তোমার কাছে? তুমি এসো... দু চোখের ভাষায় অনুনয় করে জানালাম, আমার যে ওঠার ক্ষমতা নেই সোনা, তুমি তো আমাকে অবশ করে দিয়েছো শরীর মন দুদিক থেকেই...জানি তো আমার সোনা আমাকে জানে...বোঝে। একটু একটু করে এগিয়ে এসে আমাকে বুকে তুলে নিয়ে অনেক সময় ধরে আলতো ভাবে আমার নগ্ন পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করেছো... একটু একটু করে আমি ফিরে পেয়েছি নিজেকে। তোমার হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে আলাদা করে তোমার দিকে তাকিয়ে থেকে ভেবেছি... আমাকে এখন কি করতে হবে... তুমি বুঝলে আমার মনের কথা, অপেক্ষা করছিলে কখন আমি তোমাকে দেখবো, আস্তে আস্তে মুখ নিচু করে তাকালাম ওর দিকে...এর আগে ওকে ছুঁয়েছি, আদর করেছি নিজের হাতে নিয়ে...এই প্রথম নিজের চোখে দেখছি সেই পরম আকাঙ্খিত দুষ্টুটাকে...যে আমাকে করে তুলেছে অনাঘ্রাতা কুঁড়ি থেকে ফুল। ওর দিকে তাকিয়ে ভাবছি...এই দুষ্টু, কাল রাতে তুমি কি করেছো মনে আছে? তোমার আদরের সোনামনি তো তোমাকে পারেনি সবটুকু দিতে... রাগ করোনি তো? আস্তে আস্তে নিচু হয়ে ওকে আলতো ভাবে ধরে ওকে চুমু দিলাম...ও সাড়া দিল আমার ডাকে...তাকিয়ে আছি ওর দিকে... ছটপট করছে দুষ্টুটা আমার নরম হাতের ভেতরে... না সোনা, আর তোমাকে কষ্ট দেবো না, এসো তোমাকে আদর করি...এই না...একটু অপেক্ষা করো সোনা, একবার দেখে নি বড় দুষ্টুটা কি করছে। মুখ তুলে হাসি মুখে তাকালাম...তুমি তাকিয়ে আছো আমার দিকে...আস্তে আস্তে চোখ বুজে গেল তোমার...বুঝলাম আমার দিতে চাওয়া সুখ তুমি মন প্রান ভরে অনুভব করতে চাইছো...আরো কিছুটা সময় কেটে গেছে...তোমার অস্ফুট সুখের গোঙ্গানী আমাকে একটু একটু করে তুলছে আরো পরিনত...শিখছি তোমাকে সুখ দিতে গেলে আমাকে কি কি করতে হবে। তুমি চাইছো আরো কিছু সময় আমার দেওয়া সুখ পেতে কিন্তু পারলে না নিজেকে আটকে রাখতে...তোমার পৌরুষ হেরে গেল এক সদ্য ফোটা কুঁড়ির কাছে...যেমন ভাবে আমার নারীত্ব বিসর্জিত হয়েছিল তোমার পৌরুষের কাছে...তোমার উষ্ণতায় নিজেকে শিহরিত করতে করতে ভাবছিলাম... তুমি যে সুখ আমাকে দিয়েছিলে সেই সুখ আমিও দিলাম তোমাকে ফিরিয়ে... তারপর? তারপর আর কিছু মনে নেই...এইটুকু মনে আছে তোমার সুখে ভরা ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তুমি যেন আমাকে বললে...কাছে এসো...
ঘুমের আবেশ কেটে যাচ্ছে একটু একটু করে। স্বপ্ন দেখছিলাম নাকি আধো ঘুম আধো জাগরনের ভেতরে কল্পনার জাল বুনছিলাম এত সময় ভাবতে ভাবতে চোখ মেলে তাকালাম... তুমি আমার বুকে মুখ গুঁজে শুয়ে আছো। হয়তো বুঝলে আমি আর ঘুমিয়ে নেই...আস্তে আস্তে উঠে আমার দিকে তাকালে। আবেশ ভরা গলায় যা বললে তাতে বুঝলাম... স্বপ্ন-ও নয়...কল্পনার জাল-ও নয়...আমরা দুজনে ছিলাম স্বপ্নসম বাস্তবে...তোমার কথা শুনে লজ্জায় চোখ বুজে গেল...আমি চোখ বুজলে কি হবে তুমি তো আমাকে দেখে যাচ্ছো দুষ্টুমি ভরা চোখে...আর তো কোনো জায়গা নেই আমার তাই তোমার বুকেই মুখ লুকিয়েছি নিজেকে আড়াল করার জন্য...
______________________________
চিঠি #
দেখতে দেখতে তিস্তার ফিরে যাবার সময় এগিয়ে আসছে। সেই দুটো দিনের পর ওকে আর সেইভাবে কাছে পাওয়ার সুযোগ ছিল না। সবার সামনে আগের মতোই আমাদের খুনসুটি, পেছনে লাগা, লোক দেখানো ঝগড়া সবই বজায় থাকলেও ছোট ছোট কিছু কাছে পাওয়ার মুহুর্ত কিছুতেই ভোলার নয়। মনের সাথে সাথে স্বাভাবিক ভাবেই শরীর চলে এলেও আমরা দুজনের কেউই তাতে ভেসে যেতে চাইনি। তার থেকে বরং এই ভাবে লুকিয়ে চুরিয়ে কাছে পেতে ভালোই লাগে। হঠাৎ কোত্থেকে চলে এসে ছোট্ট একটা চুমু দিয়েই ওর দৌড়ে ফিরে যাওয়ার পর আমি যখন বুঝতে পারলাম তখন ও আর আমার কাছে নেই, আমি হাত তুলে ইশারা করে কাছে আসার কথা বললে ও আমাকে তার বম্মার ভয় দেখিয়ে পালিয়ে যায়। কখোনো বা ওর অজান্তেই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলে মুখে এই, না না...কেউ দেখে ফেললে...বলেও নিজেকে ছাড়াবার কোনো ইচ্ছেই দেখায় না...ও ভালো করেই জানে আমি কেউ আশেপাশে নেই বুঝেই কাছে এসেছি।
আজ বিকেলে ও মায়ের সাথে কেনাকাটা করতে বেরিয়েছে। ও নাকি গড়িয়াহাট চিনে গেছে তাই আর আমাকে ওর লাগবে না... বম্মা চলো না আমরা একা একা যাই...তোমার বিচ্ছু ছেলে বড্ড কথা শোনায়... বলে বায়না করলে মা রাজী না হয়ে পারেনি। যাওয়ার আগে এক ফাঁকে আমার কাছে এসে বলে গেছে...এই, পালাবে না কিন্তু কোথাও...ফিরে এসে তোমার সাথে অনেক কথা আছে। সন্ধের পর ফিরে আসার পর আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে দেখালো কি কি কিনেছে, আমার পছন্দ কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। পরবে তো তুমি, আমার আবার পছন্দ হবার কি আছে বললে ও তার বম্মাকে নালিশ করে বলে দিল দেখলে তো বম্মা, এই জন্যই তোমার ছেলের সাথে আমার ঝগড়া হয়। মা আর কি বলবে, ভালো করেই জানে আমরা এরকমই। মা হেসে ফেলে তিস্তাকে কাছে টেনে নিয়ে বলল... চিন্তা করিস না, দেখবি বিয়ের পর কেমন বৌয়ের পেছন পেছন ঘুরে বেড়ায়। মাকে-ও যথারীতি তিস্তার দলে ভিড়ে যেতে দেখে আমিও উঠে চলে এসেছি একটু মিথ্যে রাগ দেখিয়ে যাতে একটু পরেই ও আমার রাগ ভাঙ্গানোর ছুতোয় আমার ঘরে আসতে পারে। যা ভেবেছিলাম সেই মতো একটু পরেই ও চলে এসেছে আমার কাছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে ইশারায় মা কোথায় জিজ্ঞেস করলে মুচকি হেসে আমার কোলে বসে পড়ে গলা জড়িয়ে ধরেই গোটা কয়েক চুমু খেয়ে বলল...বম্মা তোমাদের পাশের বাড়ী গে-ছে...এখন শুধু আমরা দু-জ-ন...আ-র কে-উ নে-ই...কি ম-জা...
বাড়িতে মা নেই, আমার কোলে আমার রাজকুমারী, এই সুযোগ কি আর ছাড়া উচিৎ নাকি ভেবে আদর করতে গেলে হেসে ফেলে বলল...তুমি না বড্ড লোভী হয়ে গেছো...মুখে যাই বলুক না কেন ওর-ও তো আমার কাছে আসার ইচ্ছে হয়। শুধু আমি নয়, ও নিজেও আমাকে মন ভরে আদর করেছে। তারপর আলাদা হয়ে বসে কথা বলতে বলতে জিজ্ঞেস করলাম ও কি বলতে চেয়েছিল যেন আজ। ও আমার কথা শুনে একটু সময় চুপ করে থেকে বলল...এই যে আমরা ফোনে কথা বলি... এর তো কোন রেকর্ডিং থাকছে না ...মানে আমি বলছি ...ধরো ভবিষ্যতে আমরা কি কি কথা হয়েছিল সেটা জানতে পারবো না...
- হু ঠিক...
- ভাবছি সেই আগেকার দিনের মতো চিঠি লিখলে কেমন হয়...অনেক বছর পরে চিঠিগুলো পড়বো আর মনে পড়বে আমাদের পুরোনো দিনের কথা...
- হু ঠিক...
- কি খালি হু ঠিক ঠিক বলে যাচ্ছো...এই বলো না...
- চিঠি লিখলে তো কবে পৌঁছোবে ঠিক নেই...হারিয়েও যেতে পারে...তার থেকে মেল করা যেতে পারে...
- ধ্যাত...আমি ওসব মেল ফেল বুঝি না...
- আমি শিখিয়ে দেবো...
- আমার তো কম্পিউটার নেই...কি করে হবে?
- আমার একটা ল্যাপটপ পড়ে আছে...তোমাকে দিয়ে দেবো...
- ইস...তাই? কবে শেখাবে?
- আগে বলো কি দেবে আমাকে?
- সব কিছুতেই কি দেবে বলো? লোভী কোথাকার...কিচ্ছু দেবো না...পাজী কোথাকার...
- তাহলে থাক...
- ইস...তাহলে থাক? এই...প্লিজ...বলো না...বলো না... কবে শেখাবে...এই...আমার মোবাইলে হবে না?
- কিছু না দিলে কোথাও কিছু হবে না...
- আচ্ছা বাবা...দেবো...আমার সব কিছুই তো তোমার...তাই না...
- আগে দাও...
উঃ... কি বিচ্ছু ছেলে বলে ও এগিয়ে এসেছে আমার দিকে...তারপর...
ওকে মেল কিভাবে করতে হয় শেখাতে গেলে ইচ্ছে করে বার বার ভুল করছিল যাতে আমি ওকে বকুনি দি বা হয়তো আমার কাছে মেল করতে শেখার নাম করে আরো বেশী সময় থাকতে পারে। কারনটা যাই হোক না কেন আমিও তো সেটাই চাইছি যা ও চাইছে। ধুস, তোমার মাথায় কিছু নেই, এইটুকু মনে রাখতে পারছো না বললে হেসে ফেলে বলে দিল তুমি শেখাতে পারছো না তো আমার কি দোষ। দুজনে খুনসুটি করতে করতে একে অপরকে কাছে পেতে চেয়েছি। ও হয়তো খুব মন দিয়ে কিছু লিখছে, আমি ওর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কাছে আসতে চেয়েছি, ও মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসিতে মুখ ভরিয়ে ফিসফিস করে বলেছে এই, একদম দুষ্টুমি নয়... তারপরেই নিজেই হয়তো আমার কাছে সরে এসে আমি যা চেয়েছি তাতে সায় দিয়েছে। মেল করতে শেখানোর সাথে সাথে ওর জন্য নতুন মেল আইডি খুলে দিয়ে পাসওয়ার্ড বদলে নিতে বললে কিছুক্ষন আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বলল...তোমাকে বিশ্বাস করতে না পারলে কাকে করবো রিজ? ওকে এই মুহুর্তে আর বুঝিয়ে লাভ নেই, মুখে হয়তো কিছু বলবে না কিন্তু মনে মনে কষ্ট পাবে ভেবে মেনে নিয়েছি। ও উঠে চলে যাবার পর ভাবছিলাম সত্যিইতো স্মৃতি হিসেবে চিঠির কোনো তুলনা হয় না।
আমার চিঠি #
ফিরে এসেছি বাপির সাথে। এবারের ফিরে আসার সাথে আগেরবারের তুলনা করে লাভ নেই। দুষ্টুটা কি যে করে দিয়েছে আমার সে তো শুধু আমিই জানি। মাঝে মাঝে ওকে ভীষন কাছে পেতে ইচ্ছে করে, একা একা যেন ঘুমোতে ইচ্ছে করে না, যদিও তাতে ওর কোনো দোষ ছিল না, আমিই তো এগোতে চেয়েছিলাম। ও তো আর নিজের থেকে আমাকে জোর করেনি। ওকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছেটাকে ভুলে যাওয়ার জন্য মাঝ রাতে উঠে পড়ি চিঠি লেখার জন্য। গালে হাত দিয়ে জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে থাকি আর আপনমনে ভাবতে থাকি কি লিখবো। অনেক কিছু ভেবে ভেবে আবোল তাবোল লিখি আর তারপর পড়তে গিয়ে দুর ছাই বলে মুছে দিয়ে আবার নতুন করে লিখতে শুরু করি। চিঠি আর আমার পাঠানো হয়ে ওঠে না। রোজ ও আমাকে জিজ্ঞেস করে কবে পাবো তোমার চিঠি আর আমি ওকে রোজ কথা দি... আমাদের দুজনের কাছেই ব্যাপারটা বেশ মজার হয়ে উঠেছে। ও আমার পেছনে লাগে, আমার প্রথম চিঠি নাকি ও আমাদের বিয়ের আগের দিন পাবে, তার মানে এখোনো বেশ কয়েক বছর ওকে অপেক্ষা করতে হবে। আমিও অভিমান করে বলেছি আমি না হয় কি লিখবো ভেবে পাচ্ছি না, তুমিও তো পারতে পাঠাতে। ও গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলেছিল... তোমার প্রথম চিঠি পাওয়ার জন্য আমি সারা জীবন অপেক্ষা করতে রাজী। বেশ কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পরও যখন আমি কিছুই লিখে উঠতে পারলাম না তখন বাধ্য হয়ে মৌলী আর চয়িকে বলেছি এই তোরা একটু বল না বাবা কি লিখবো। চয়ী আমার কথা শুনে বেশ গম্ভীর হয়ে বলল... বলতে পারি, তবে একটা শর্ত আছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি কি শর্ত শোনার জন্য আর ও শুধু মুচকি মুচকি হেসে যাচ্ছে দেখে ইচ্ছে করছিল দি এক গাট্টা। আমারই দরকার তাই ওর ফাজলামো হজম করে নিয়ে বললাম...এই প্লিজ বল না। ও মৌলীর কানে কানে কি একটা বললে মৌলী হেসে ফেলে ওর হাতে চিমটি কেটে বলল... এই তিস্তা, কি বলছে জানিস...তুই যদি একদিনের জন্য সৃজনের সাথে ওকে প্রেম করতে দিস তবেই ও বলে দেবে কি লিখবি। কথাটা শুনে না ভালো না লাগলেও না হেসে পারলাম না, ভালো করেই জানি ও আমার পেছনে লাগছে। চিঠিতে কি লিখবো ভাবা ছেড়ে দিয়ে তিনজনে বেশ কিছুক্ষন মজা করেছি... পালটা পালটি করে কে কার প্রেমিকের সাথে প্রেম করতে গিয়ে কি বলবো আর কি করবো।
আরো দুটো দিন কেটে গেছে। ওকে বারন করে দিয়েছিলাম ফোন করতে। ফোনেই যদি সব কথা হয়ে যায় তো চিঠিতে কি আর লিখবো বলে...আমার কথা শুনে ও মেনে নিয়ে বলেছিল তাড়াতাড়ি পাঠিও কিন্তু। নাঃ, আজ আমি লিখবোই ভেবে রোজকার মতোই জানলার বাইরে তাকিয়ে আছি আর এক একটা লাইন লিখে যাচ্ছি। কত সময় কেটে গেছে জানি না...কিছুটা লেখা হয়ে গেলে পড়তে শুরু করলাম প্রথম থেকে...একটু যেন খাপছাড়া লাগছে...লাগুক, আজ আমাকে পাঠাতেই হবে যে...
আমার রিজ সোনা,
তোমাকে লেখা আমার প্রথম চিঠি... লাভ লেটার? কি জানি...তাই হবে হয়তো... এই, কি করছি বলোতো এখন...উমম...বলতে পারলে না তো...আমি এখন শুধু একজনের কথা ভাবছি। তোমার কথা...তুমি এখন কি করছো...খেয়েছো কিনা...তোমার তো আবার কখন কি ইচ্ছে হয় নিজেও জানো না...রাত জেগে পড়ছো নাকি শুধু আমার কথাই ভাবছো বলোতো? তোমার কাছে না থাকলে কি হবে, আমি জানি, তুমি দুটোই করছো...পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে বাইরের দিকে উদাশ হয়ে তাকিয়ে তোমার তিস্তার কথা ভাবছো...কখোনো বা নিজের মনেই হাসছো আমার ছেলেমানুষীর কথা ভেবে। আবার পড়ায় মন দিচ্ছো আর তারপর ভাবছো কখন আমার চিঠি তুমি পাবে...
এই জানোতো...আমাদের এখানে আজ খুব বৃষ্টি হচ্ছে। জানোই তো আমাদের উত্তরবঙ্গে তোমাদের ওখানকার থেকে সারা বছর ধরেই অনেক বেশী বৃষ্টি হয়। এই কিছুক্ষন আগেও আমি খোলা জানলার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম...ঝম ঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে...ভাবছিলাম এখন যদি তুমি আমার পাশে থাকতে তাহলে কি করতাম আমরা...সেদিনের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল...অজানা এক আনন্দ মেশানো ভয় পাচ্ছিলাম সেদিন...আচ্ছা থাক, এখন ওসব কথা আর লিখবো না...আমার তো মন খারাপ আছেই, তোমারও যদি মন খারাপ করে তাহলে কি সেটা ঠিক হবে। উঁ হুঁ...মোটেও নয়...তোমার আবার সামনেই পরীক্ষা...তাই না।
এই শোনো না...একটা কথা তোমায় কেন কাউকেই বলিনি... তোমার মনটা চুরি করে তো আমি লুকিয়ে রেখেছিই নিজের কাছে... তার সাথে সাথে আরো একটা জিনিষ চুরি করে এনেছি তোমাদের বাড়ী থেকে...সেটাও অনেক দামী কিন্তু তোমার মনের থেকে দামী নয়। খুব জানতে ইচ্ছে করছে তো? জানি তো, তোমার জায়গায় আমি থাকলেও তাই ভাবতাম। ভেবেছিলাম বলবো না কিন্তু তোমার কাছে তো আমার কিছুই লুকোনো উচিৎ নয় তাই না...তাই বলেই দি...এই, হাসবে না কিন্তু...তোমার একটা ফটো সব সময় আমার সাথে সাথে রাখি...হাতে করে নিয়ে তাকিয়ে থাকি চোখের পলক না ফেলে। ইশ, কি ভালো যে লাগে তোমাকে দেখে যেতে...সময় কিভাবে কেটে যায় বুঝতেই পারি না...তোমার সাথে মনে মনে কথা বলি...তোমাকে আদর করি...আচ্ছা, কি আছে বলোতো, তোমার ওই চোখ দুটোতে...কিছুতেই যেন বুঝতে পারি না...কখোনো মনে হয়...ভীষন... ভীষন দুষ্টু...কখোনো মনে হয় স্বপ্ন দেখছো...আবার কখোনো বা মনে হয় ভালোবাসা ঝরে ঝরে পড়ছে...অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি...বুকের ভেতরটা গর্বে ভরে উঠে যেন বলতে চায়...তুমি শুধু আমার...আর কারো নয়। তারপরেই কেমন যেন খালি খালি মনে হয় বুকের ভেতরটা...ইচ্ছে করে তোমাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে...কি করি বলোতো তখন...তোমাকে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দি...বুকে চেপে ধরে মনে মনে বলি খুব দুষ্টু তুমি...বলতে ইচ্ছে করে কেন তুমি আমাকে এত ভালোবাসো...কেন তুমি আমায় সেদিন এত আদর করলে...কি করে থাকি বলোতো এখন একা একা...এত কিছু বলি তোমায় আর তুমি শুধু আমার দিকে তাকিয়ে থাকো...ধ্যাত, তুমি ভীষন খারাপ...বিচ্ছিরি বলে তোমায় ভেঙ্গিয়ে দি...
এই, আজ এখানেই শেষ করি...কেমন। তুমি সময় করে উত্তর দিও...মন খারাপ করবে না...মন দিয়ে পড়বে...আমার কথা বেশী ভাববে না...বম্মাকে জ্বালাবে না...এই, কাল রাতে একবার ফোন করবে? ভীষন ইচ্ছে করছে একবার তোমার সাথে কথা বলতে...
তোমার...শুধু তোমার,
তিস্তা