Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
আমার সংগৃহীত গল্প
#19
আবার ফিরে দেখা #

কাল রাতে আমার বিচ্ছুর কাছে কথাটা শোনার পর থেকে কি যে ভালো লাগছে বোঝাতে পারবো না। কখন হাসছি, কখন নেচে উঠছি নিজেই জানি না। আবার আমি আমার ওকে দেখতে পাবো… ও আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকবে...আমিও চোখের পলক না ফেলে ওর চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকবো...ওকে ছুঁতে পারবো… ও আমাকে বুকে টেনে নিয়ে আদর করবে, আমিও ওকে আদর করে চুমু দেবো…উঃ…ভাবতেই পারছি না। ওর বুকে মাথা রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে থাকবো চুপ করে। ও আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করে ডাকবে…এই তিস্তা। আমি খুব আস্তে করে বলবো…উঁ… হারিয়ে গিয়েছিলাম স্বপ্নের ভেতরে… কাজের দিদির ডাকে ফিরে এলাম বাস্তবে… কাজের দিদির বাসন ধোয়া হয়ে গেছে, এবারে ফিরে যাবে। বাইরের দরজাটা আটকে দিয়ে ফিরে এলাম নিজের বিছানায়…উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশটা দুহাতে জড়িয়ে ধরে আবার স্বপ্নটা দেখতে শুরু করলাম…ও আমাকে কোলে তুলে নিয়েছে…আমি ওর গলা জড়িয়ে ধরে আছি…সবে মাত্র ও আমাকে একটা চুমু দিয়েছে... বেলটা বেজে উঠল। বাপি এসে গেছে। দৌড়োলাম দরজা খুলতে… বাপিকে কি আমিই খবরটা দেবো? না…থাক… আগে বম্মা ফোন করুক। আমার আগ বাড়িয়ে বলাটা ভালো দেখাবে না, তার থেকেও বড় কথা আর আমি তো এখোনো জানি না…আমার বিচ্ছু আমাকে চুপি চুপি জানিয়েছে…তাই না?

বাপি আর নিজের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এলাম। আগে কাজের দিদি চা বানিয়ে ফ্লাস্কে রেখে যেত। এখন আমি নিজেই বানাই, মাঝে মাঝে একটু আধটু রান্নাও করি বম্মাকে জিজ্ঞেস করে করে…বাপি খুব খুশী হয় খেয়ে, যদিও আমি জানি খুব একটা ভালো হয়না। এবারে গিয়ে বম্মার কাছে আরো কিছু রান্না শিখে নিতে হবে ভাবছিলাম। বাপির ডাকে চমক ভাঙ্গলো…
- এই তিস্তা…
- ব’লো...
- তোকে কিছুদিন তোর বম্মার কাছে থাকতে হবে…বুঝলি?
- কেন?
- তোকে ব’লেছিলাম না…আমি একটা থিসিস লিখছি...
- হু
- লেখাটা পাঠিয়েছিলাম জার্মানীতে…ওরা ডেকে পাঠিয়েছে...
ভীষন আনন্দে বাপিকে জড়িয়ে ধরলাম। বাপীর অনেক দিনের চেষ্টার ফল। উঃ...কি ভালো যে লাগছে। বাপী আমার পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে বলল… তোকেও নিয়ে যেতে পারলে ভালো হ’ত… কিন্তু খবরটা এত দেরীতে এলো… এত তাড়াতাড়ি তোর পাসপোর্ট ভিসা করানো মুশকিল।
- ঠিক আছে বাপী… তুমি ঘুরে এসো…আমার মন খারাপ হবে না...
- ঠিক তো?
- উমম…একটুও যে হবে না তা নয় তবে…
- তবে কি?
- বম্মার কাছে থাকবো… তাই...
বাপিকে তো আর বলতে পারিনা এখন বম্মার কাছে থাকার চেয়েও আরো বেশি ভালো লাগছে আমি আমার বিচ্ছুকে কাছে পাবো ভেবে। বাপীর সাথে কথা বলতে বলতেই বম্মার ফোন এলো। বাপী কথা বলছে বম্মার সাথে, আমি পাশে বসে ভাবছি… আমি আমার বিচ্ছুর সাথে দেখা হলে কি কি করবো। বাপী আমাকে ডেকে বম্মার সাথে কথা বলতে বলল।

পূজোর দিন পনেরো আগে আমার রিজ সোনা আসবে আমাকে নিতে। বাপীর একেবারেই হাতে সময় ছিল না যে আমাকে কোলকাতা পৌঁছে দিয়ে তারপর যাবে। অবশ্য একেবারেই যে ছিল না তা নয়… বিচ্ছু আছে তাই বাপীকে আর চাপ নিতে হয়নি। আজ দুপুরের ফ্লাইটে ও আসছে। আমাদের বাড়ী পৌঁছোতে পৌঁছোতে পাঁচটা বাজবে প্রায়। সকাল থেকেই আমার ছটপটানি শুরু হয়ে গেছে। কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি চলে এলাম, বন্ধুদের বলেছি পরশু চলে যাবো…এখোনো ব্যাগ গোছানো হয়নি। সাড়ে চারটে বাজে...ওর আসার সময় হয়ে এসেছে...একবার ঘরে একবার বাইরে করে যাচ্ছি, নিজের মনে গুন গুন করে গাইছি… আমার বেলা যে যায় সাঁঝ বেলাতে… তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে…

গান থেমে গেছে আমার, চোখের পলক না ফেলে তাকিয়ে আছি বাইরের দিকে। গেট খুলে একজন ভেতরে আসছে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে। হাতে একটা ছোট ব্যাগ। বাইরের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার দিকে চোখ পড়তেই কি ও ফ্রিজ হয়ে গেল… ইস, শুধু ও নাকি? আমিও তো তাই…আমাকে দেখতে পেয়ে ওর চোখে মুখে যেন সাত রং এর খেলা…নিজেকে তো আর দেখতে পাচ্ছি না…আমার মুখেও হয়তো তাই হচ্ছে… কখন ও আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতে পারিনি নাকি? দরজাটা নিজেই ঠেলে দিয়ে আমাকে বুকে টেনে নিয়েছে, কেউ কোনো কথা বলছি না। আমি ওর বুকে মাথা রেখে দুহাতে জড়িয়ে ধরে আছি… মনে হচ্ছে সহস্র বছর পরে আমরা দুজন দুজনকে কাছে পেয়েছি। ওর বুকে কান পেতে শুনছি… ও যেন বলছে আমায়…তিস্তা…তুমি শুধু আমার। আমিও চোখ বুজে থেকে নীরবে বললাম…আমার রিজ সোনা…শুধু আমার…আর কারুর নয়…গাইতে ইচ্ছে হ’চ্ছিল... প্রান চায় চক্ষু না চায়।

______________________________
 
অভিসার #

সন্ধে হয়ে গেছে, ওর বাপি এখোনো ফেরেননি। সাধারনত ফিরে আসেন অনেক আগেই কিন্তু বাইরে যাবার ব্যাপার নিয়ে খুব ব্যাস্ত থাকায় প্রায় দিনই নাকি মোটামুটি রাত হয় ফিরতে আজকাল। তবে বাড়ী ফিরতে না পারলেও তিস্তাকে ফোন করে জেনে নিয়েছেন আমি ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছোতে পেরেছি কিনা। আমি এসে গেছি শুনে তিস্তাকে আমার খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে কিছু বললেন মনে হয়েছিল। তিস্তা বাপিকে বলেছে...বাপি, তুমি চিন্তা কোরো না, আমি আছি তো...
দুজনে মিলে কি করবো যেন ঠিক করতে পারছিলাম না। আমাদের আবোল তাবোল গল্প হয়েছে বেশ কিছুক্ষন, কখোনো বা দুজনে দুজনের পেছনে লেগেছি...এসবের মাঝে ও হঠাৎ লাফিয়ে উঠে বলল...এই যাঃ...তোমাকে যে আমাদের বাড়ীটা দেখানো হল না! কথাটা বলেই আমার হাত ধরে টান দিয়ে বলল এই চলো না... ওর সাথে ঘুরে ঘুরে সব ঘর গুলো এক এক করে দেখছি। পুরোনো বাড়ী হলেও দেখলাম যতটা সম্ভব সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে। আমাকে নিয়ে এটা ওটা দেখাতে দেখাতে সাথে অবশ্য এটা বলতে বাকি রাখেনি যে ওদের বাড়ীটা নিজেদের নয়, ভাড়ার... তাই নাকি আমাদের বাড়ীর মতো এত সুন্দর নয়। আমিও হাসি মুখে বলেছি, যে বাড়ীতে তুমি থাকো সেখানে আর কিছু থাকলো বা না থাকলো তাতে কিছু যায় আসে না। ও আমার কথা শুনে ঘাড় কাত করে আমাকে ভ্রু বেঁকিয়ে দেখতে দেখতে বলল...ইস, তাই নাকি? আর কিছু না থাকলে চলবে? ওর ওই ভাবে ঘাড় বেঁকিয়ে টিয়া পাখীর মতো তাকাতে দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি দেখে ওর টানা টানা চোখ দুটোকে আরো ছোট করে বলল...এই, তুমি কি এত আমাকে দেখো বলোতো... উত্তরে আমি ওর দিকে তাকিয়ে শুধু মুখ টিপে হেসেছি আর মনে মনে ভেবেছি... কি দেখি বলতে পারবো না কিন্তু এইটুকু বলতে পারি, সারাজীবন তোমাকে এইভাবে দেখে গেলেও আমার আশ মিটবে না.. ও কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে অস্ফুট স্বরে বলেছে... তুমি এমন ভাবে তাকালে যে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি রিজ। আমি ওর আরো কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বললাম... তুমি চাও না হারিয়ে যেতে? ও আর কাছে এসে আগের মতোই মৃদু স্বরে বলল... চাই তো...
সবার শেষে ওর ঘরে নিয়ে এলো আমাকে। আমি ওর বিছানায় বসে আছি...ও এক এক করে ওর গান আর নাচের প্রাইজ গুলো দেখানোর পর ওর ছোটোবেলার কিছু খেলনা, পুতুল বের করে দেখাতে শুরু করেছে। সব কিছুই এত যত্নে রেখেছে যে দেখলে মনেই হয়না খুব একটা পুরোনো। ওর ভীষন প্রিয় জিনিষ গুলো আমাকে দেখাতে পেরে এত খুশী যে আমিও বাধ্য ছেলের মতো মন দিয়ে দেখছি...মাঝে মাঝে ওর পেছনে লাগছি কচি খুকী বলে। ও একবার আমার পিঠে কিল মেরে বলেছে...এই ভালো হবে না কিন্তু, আমি কচি খুকী? তারপরেই আমার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলেছে...এই...তুমি আমাকে আলাদা একটা শোকেশ বানিয়ে দিও। তোমার কাছে যখন একেবারে চলে যাবো, সব কিন্তু সাথে করে নিয়ে যাবো। আমি ওর চোখে চোখ রেখে আস্তে করে জিজ্ঞেস করেছি...আমার থেকেও বেশী ভালোবাসো এদেরকে? ও কিছুক্ষন আমার দিকে চুপ করে তাকিয়ে থেকে মাথা নেড়ে বলেছে... উঁ হু...তুমি তো আমার বুকে থাকবে আর এরা থাকবে শোকেশে...তাহলে আমি কাকে বেশী ভালোবাসি বলো...
এত ভালো লাগছে ওকে এতদিন পর কাছে পেয়ে যে কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে। ভীষন ইচ্ছে করছিল ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে বসে থাকতে। ইচ্ছে হলেই তো আর হবে না...এতো আর সেই দীঘার সমুদ্র সৈকতের ঝাউ জঙ্গল নয় যে যা খুশী করবো। ওর অবস্থাও আমার মতোই, এত খুশীতে কি করবে যেন বুঝে উঠতে পারছে না। কখনও আমার পাশে বসে পড়ছে, কখনও উঠে গিয়ে কিচেনে গিয়ে দেখে আসছে রান্নার কি অবস্থা, তারপরে হয়তো ফিরে এসে আমার দিকে মুখ করে বসে আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখছে। মাঝে একবার উঠে গিয়ে শালোয়ার কামিজ পালটে একটা জঙ্গলা প্রিন্টের স্লিভলেস মিডি পরে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল ...এই...কেমন লাগছে আমাকে? আমি নির্বাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি...ওর যৌবন টলমল শরীরের সৌন্দর্য আর আকর্ষন যেন এক লাফে হাজার গুন বেড়ে গেছে... কোন দিকে তাকাবো যেন বুঝতেই পারছি না...অনাবৃত হাত...পা নাকি উদ্ধত বুক নাকি মেদহীন সরু কোমর...সবকিছুই যেন আলাদা লাগছে আজ... আমাকে ওর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাছে এসে ফিসফিস করে বলল...এই, বলো না। ও আমার দিকে সামান্য ঝুঁকে থাকায় স্তন সন্ধির স্পষ্ট আভাস আমার চোখে...ওর উষ্ণ শ্বাস প্রশ্বাস আমার মুখে ...মন পাগল করা মেয়েলী ঘ্রান আমাকে যেন অবশ করে দিয়েছে...আগেও ও অনেকবার আমার কাছে এসেছে কিন্তু নিজেকে এত দুর্বল কোনোদিন মনে হয় নি। ইচ্ছে করছে ওকে আরো কাছে নিয়ে এসে বুকে মুখ গুঁজে দি। ভাবলাম...না থাক, এত ইচ্ছে ভালো নয়... ওদের রান্নার দিদি দেখে ফেললে আমাদের গোপন সম্পর্ক আর গোপন থাকবে না। এই তো মাঝে আর দুটো দিন...তারপরে বেশ কয়েক দিন তো ও আমার কাছেই থাকবে। ও আমার দিকে তাকিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল আমি কি বলি শোনার জন্য...ডিং ডং করে বেল-টা বেজে উঠতেই আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে মুখটা ব্যাজার করে ধ্যাত বলেই সাথে সাথে মুখে দুষ্টুমি মাখানো হাসি এনে বলল...তোমার ফাদার ইন ল এসে গেছে। আমি হাসি মুখে আস্তে করে বললাম... তুমিও কম বিচ্ছু নও। ও হাসি মুখে কোমর দুলিয়ে নাচের ভঙ্গী করে..আমি আমার বিচ্ছুর বিচ্ছুনী...বলে দৌড়ে গেল দরজা খুলে দিতে। আমি পেছন থেকে ওর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থেকে ওর চলে যাওয়ার মুহুর্তগুলো মনের ক্যামেরায় এক এক করে তুলে রাখছিলাম যখন ও আমার কাছে থাকবে না তখনকার জন্য...ও চলে গেছে কিন্তু আমার মনের ভেতরে ও থেকে গেছে যেমন ভাবে ও থাকে সব সময় , মনের অতল গভীর থেকে একটা গানের কলি যেন ভেসে উঠতে চাইলো... তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহুর্তে...কি আবেশে আমি দিশাহারা...
রাত ন-টা মতো বাজে, এমন কিছু রাত হয়নি। আমরা সবাই মিলে ওদের ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছি। সোফার একদিকে আমি, মাঝে ওর বাপি আর ও বাপির একেবারে গা ঘেঁষে ওদিকে বসেছ। আমার আর ওর পড়াশোনা নিয়ে কথা হচ্ছিল। ওর বাপির ইচ্ছে গ্র্যাজুয়েশান হয়ে যাবার পর ও কোলকাতায় থেকে এমবিএ করুক। তিস্তা ওর বাপির কাঁধে থুতনি রেখে চুপচাপ আমাদের কথা শুনছিল। কোলকাতায় গিয়ে থাকতে পারবে শুনে খুশী ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বাপিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল...ইস, আমি হোস্টেলে থাকতে পারবো না। আমি কি তোকে হোস্টেলে থাকতে বলেছি? তোর বম্মার সাথে আমার কথা হয়ে গেছে তোর থাকার ব্যাপারে... বাপির কথা শুনে তিস্তা আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে বলল...না বাবা...ইস... এই বিচ্ছুটার সাথে আমি থাকতে পারবো না। পেছনে লেগে লেগে আমার মাথা খারাপ করে দেবে। আমি হেসে ফেলে বলেছি...তুমি যখন যাবে তখন তো আমি আর নেই...এই তো সামনের বছর আমার ক্যাম্পাস ইন্টারভিউ হয়ে যাবে... তাতে আমার বিচ্ছুনীর আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে উত্তর দেওয়া হল...বাব্বা, বাঁচলাম, আমার আর থাকতে কোনো অসুবিধা নেই বাপি। তুমি বম্মাকে বলে দিও আমি একা একা বম্মার আদর খাবো...ইস, কি মজা...
রাতে খাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষন গল্প করার পর ওর বাপি শুতে চলে গেলে আমাকেও উঠতে হল। তিস্তা আমাকে সাথে করে নিয়ে গিয়ে দেখিয়ে দিল কোথায় শোবো। ও আগে থেকেই আমার বিছানা ঠিক করে রেখেছিল...আমি শুয়ে পড়লে ও আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি মুখে ইশারায় চুমু দিয়ে বলল...এই, আমি পাশের ঘরে আছি... দরকার হলে ডাকবে কিন্তু। আমাকে এক দৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর মুখ থেকে আস্তে আস্তে হাসিটা মিলিয়ে গিয়ে একটা অব্যাক্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন। তারপরেই ‘আসি’ বলে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ও ফিরে চলে যাচ্ছে দেখে মনে হল একবার ডাকি। পারলাম না ওকে ডাকতে...ভাবলাম, না থাক... ওর বাপি হয়তো এত তাড়াতাড়ি ঘুমোন নি। কাছে পেয়েও না পাওয়ার ব্যাথায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ও একবার পেছন ঘুরে আমাকে দেখে আলোটা নিভিয়ে দিল। অন্ধকার ঘর...নিস্ফল চেস্টা করলাম ওকে শেষবারের মতো দেখতে...পেলাম না দেখতে... ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে চোখ বুজলাম। ওর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়বো। কিছুক্ষন কেটে গেছে ওর কথা ভাবতে ভাবতে... মনে হল...ও আমার খুব কাছে...ওর নিশ্বাস আমার চোখ মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে...আমার বুক ভরে যাচ্ছে মিষ্টি সুগন্ধে। না...কি করে হবে...আমার মনের ভুল হয়তো। ও তো চলে গেছে। আমার মন ভাবছে ও আমার কাছে আছে...তাই হয়তো আমি ভাবছি এই সব...তবুও মন চাইলো ওকে একবার মনে মনে ছুঁয়ে দেখতে। আস্তে আস্তে হাত বাড়ালাম অদৃশ্য আমার ভালোবাসাকে ছুঁতে... একি স্বপ্ন... নাকি সত্যি? নাঃ, স্ব প্ন তো নয়...আমি ওকে সত্যিই ছুঁতে পারছি...ও চলে যেতে পারেনি, ফিরে এসেছে আমার কাছে...আমি ওকে অনুভব করতে পারছি... বুকে টেনে নিলাম। আমার দুহাতের বাঁধনে ও থরথর করে কেঁপে উঠছে। নিজের সাথে ওকে মিশিয়ে নিতে চাইলাম। পাগলের মতো চুমু চুমুতে ওর চোখ মুখ ভরিয়ে দিচ্ছি। ও চুপ করে আমার বুকের ভেতরে থেকে আমার আদর মন প্রান দিয়ে অনুভব করছে। আস্তে আস্তে আমি শান্ত হয়ে এলে ও আস্তে করে বলল...বাপি ঘুমোয়নি হয়তো। বুঝতে পারলাম ও বলতে চাইছে...চাইছিলাম না ওকে ছেড়ে দিতে...তবুও দিতে হল। ও মন থেকে না চাইলেও আস্তে আস্তে নিজেকে আমার হাতের বাঁধন থেকে আলাদা করে নিয়ে ফিরে যাওয়ার আগে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে বলল...আসি?
থেকে থেকে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে...রাত এখন কত জানি না। কি হয়েছে আজ আমার বুঝতে পারছি না, কেন জানি না ওকে আজ আবার কাছে পেতে ভীষন ইচ্ছে করছে। এই তো পাশের ঘরেই ও আছে। যাবো? নাঃ থাক... এতদিন ওকে ছেড়ে থাকতে পেরেছি...আমাদের ভালোবাসাকে গোপন ভাবে রেখেছি নিজের বুকের ভেতরে। নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ করছি...একবার যাই না ওর কাছে। কেউ জানবে না। একটু আদর করেই চলে আসবো। আস্তে আস্তে উঠে বসে থাকলাম কিছুক্ষন...ভাবছি, এত রাতে ওর কাছে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? যদি ওর বাপি উঠে পড়েন আর বুঝতে পারেন আমি এত রাতে ওর কাছে গেছি...ভীষন বিচ্ছিরি হয়ে যাবে ব্যাপারটা। আরো কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকার পরেও ঠিক করতে পারিনি যাবো কি যাবো না। শেষে ওকে কাছে পাওয়ার অদম্য ইচ্ছের কাছে হেরে গেল বাকি সব কিছু...বিছানা থেকে নেমে আস্তে আস্তে দরজার দিকে এগোচ্ছি, বুকের ভেতরে যেন ছাত পেটানোর আওয়াজ..ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে নয়...ওকে আবার কাছে পাবো...আদর করতে পারবো...এই ভেবে উত্তেজনায় হাত পা কাঁপছে। দরজার পর্দাটা সরিয়ে চমকে উঠলাম...দরজার ঠিক সামনে আবছা আলোয় এক নারী মুর্তি, আমার তিস্তা আমার মতোই ঘুমোতে পারেনি আমাকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছেয়। ফিরে এসেছে আবার আমায় কাছে পাবার ইচ্ছে বুকে নিয়ে। হাত বাড়িয়ে ওকে টেনে আনলাম ভেতরে নাকি ও নিজেই আমাকে দেখে চলে এলো জানি না। ও আমার বুকে মাথা রেখে দুহাতে জড়িয়ে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। চুপ করে আছে বলাটা হয়তো ঠিক হবে না একেবারেই...আমার মতোই ও থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। বেশ কিছুক্ষন কেটে গেছে...একটু একটু করে আমরা স্বাভাবিক হয়ে আসছি...এক হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে থেকে আর এক হাতে ওর মুখটা তুলে ধরলাম...আবছা আলোয় আমাকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফিস ফিস করে বলল...কোথায় যাচ্ছিলে? মুখ নামিয়ে আলতো ভাবে ওর গালে মুখ লাগিয়ে বললাম...তোমার কাছে। ও দুষ্টুমি করে জিজ্ঞেস করল...কেন? আলতো ভাবে ওর গালে কামড়ে দিয়ে জবাব দিলাম...আমার শ্রীরাধিকাকে আদর করতে। ও আস্তে করে বলল...খুব সাহস...বাপির কাছে ধরা পড়ে গেলে কি হবে জানো? ওর নরম পাৎলা ঠোঁট দুটো মুখে নিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দিলে ও আমাকে বুকে চেপে ধরে পিষে ফেলতে চাইলো দেখে ওকে কোলে তুলে নিয়ে ফিরে এলাম... বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আবছা আলোয় চোখের পলক না ফেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছি...ও দুহাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরে বুকের উপরে টেনে নিয়ে বলল... তোমার তো আমার কাছে আসার কথা নয় রিজ...আমি তোমার শ্রীরাধিকা...আমিই তো আসবো অভিসারে...তাই না? কি করবো বলো? আমার শ্রীরাধিকাকে যে কাছে পেতে ভীষন ইচ্ছে করছিল...বলাতে ও ফিসফিস করে বলল...এই, জানো তো...
- কি
- ভীষন ভালো লাগছে...মনে হচ্ছে আর আমার কিছু চাই না...
- তাই?
- হু...
- আমার কি মনে হচ্ছে জানো?
- কি?
- তোমাকে নিয়ে এখুনি কোথাও চলে যাই...
- তাই?
- হু...
- এই...কোথায় যেতে ইচ্ছে করছে?
- দুরে কোথাও...
ও আমাকে চুমু খেয়ে ফিস ফিস করে বলল...আমারও ইচ্ছে করছে তোমার সাথে পালিয়ে যেতে...যেখানে থাকবো শুধু তুমি আর আমি...
এই, এখুনি যাবে? বলাতে ও আস্তে করে বলল...ইচ্ছে তো করছে কিন্তু কাল সকালে যে বাপি আমাকে দেখতে না পেয়ে কান্নাকাটি করবে...নিস্তব্ধ রাত...জানলার ঠিক পাশেই একটা ফুলে ভরা গুলঞ্চ গাছ দেখেছিলাম বিকেলে আসার সময়... খোলা জানলা দিয়ে মাঝে মাঝে হু হু করে বাতাস বয়ে আসছে, সাথে করে বয়ে নিয়ে আসছে ফুলের মিষ্টি গন্ধ... সেই মন মাতানো ফুলের গন্ধ আর আমার বুকে আমার তিস্তা...আমার নদী...অবর্ননীয় ভালো লাগায় ভেসে যাচ্ছি...আমরা দুজনে প্রলাপ বকে যাচ্ছি যেমন এতদিন করে এসেছি, পার্থক্য শুধু একটাই...আজ আমরা আর কয়েকশো কিলোমিটার দুরে নয়...আজ আমরা খুব কাছে...একে অপরের আলিঙ্গনে...সময়ের খেয়াল থাকার কথা নয়, তাই নেই...পৃথিবী রসাতলে যেতে চাইলে যাক না আজ...বয়ে গেছে আমাদের...সাথে যদি আমাদেরকে নিয়ে যেতে চায় তো তাও মানা নেই। থাকবো আমরা একসাথে সে যেখানে খুশী হোক না কেন..ও আমার পাশে থাকলে...যেখানেই থাকবো সেটাই আমার কাছে স্বর্গের চেয়েও দামী। কথা বলতে বলতে তিস্তা হঠাৎ জিজ্ঞেস করল...এই, তুমি কি জানো শ্রীরাধিকা যখন অভিসারে যেতেন তখন ঠিক কি কি হোতো? আমার ঠিক জানা না থাকায় বললাম... কি জানি কি হোতো...তবে মনে হয়না শুধু বাঁশির আওয়াজ শুনে ওনার মন ভরে যেতো। আরো হয়তো কিছু হোতো। আমার কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ও বলল...সেটাই তো জানতে চাইছি। ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললাম...সে যা পারতো করতো...আমার শ্রীরাধিকার এখন কি ইচ্ছে করছে? ও আস্তে করে বলল...জানি না। ওর ওই ছোট্ট করে বলা ‘জানি না’ কথাটার ভেতরে কতটা আবেগ ছিল সেটা হয়তো আমি ছাড়া আর কেউ বুঝবে না... আর সাথে সাথে এটাও বুঝলাম ও কি চাইছে...মনে পড়ে গেলো ওর সেই দিনের কথাগুলো... তুমি তো আমাকে সে ভাবে ছোঁয়ার চেস্টা করো না। তখন আমি নিজেই চাইনি আমাদের সম্পর্কের ভেতরে এতো তাড়াতাড়ি শরীর চলে আসুক। ওকে সেটা জানিয়েছিলাম আর কথাটা শুনে ও সেদিন কেঁদেছিল... তবে বুঝে। এতদিন পর আমার আর সেই ভয় নেই, আমাদের সম্পর্ক এখন অনেক অনেক গভীর...দুজনেই জানি... দুজনেই বুঝি। পুরোটা না হলেও সামান্য কিছুটা এগোনো যেতে পারে ভেবে ওর কানের লতিতে আলতো ভাবে কামড়ে দিয়ে বললাম... এই তিস্তা। ও খুব ছোট্ট করে সাড়া দিল...উঁ। এর পর আর মুখে কিছু না বলে ওকে ছুঁয়ে বুঝিয়েছি আমি কি চাই। ও নিশ্চুপ থেকেও শরীরের ভাষায় সাড়া দিয়েছে, কাঁপা কাঁপা হাতে নিজেকে উন্মুক্ত করে বুঝিয়েছে...আমি তো তোমাকে দিতে চাই রিজ...তুমি কেন নাও না। ওকে আলতো ভাবে ছুঁয়ে থেকেছি কত সময় নিজেই বুঝিনি...এক অদ্ভুত আনন্দে সারা শরীর মন ভরে উঠছিল...মনে হচ্ছিল এইভাবে যদি সারাজীবন ওকে এইভাবে ছুঁয়ে থাকতে পারতাম...
গভীর রাত আরো গভীর হয়েছে, আমার শ্রীরাধিকা অভিসারে এসে আমাকে আদর করে নিজেও খুশী মনে ফিরে গেছে।
জানি না ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি...স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি ওকে নিয়ে...
[+] 1 user Likes রাজা রাম's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আমার সংগৃহীত গল্প - by রাজা রাম - 04-03-2021, 04:55 PM



Users browsing this thread: 3 Guest(s)