03-03-2021, 08:17 PM
আমি তোমাকে ভালোবাসি #
সবাই চলে গেছে শুতে…আমি তিস্তার সাথে বসে আছি…ও এক মনে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে…ওর মধ্যে সেই ছটপটে ভাবটা এখন আর একদম নেই…কেমন যেন শান্ত হয়ে বসে আছে…
একটা সিগারেট ধরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলা্ম…এটা কি ঠিক হচ্ছে…জীবনে অনেক মেয়ে কাছে আসতে চাইলেও আমি এগোতে চাইনি…মাত্র এই কটা দিনের পরিচয়ে আমি তিস্তার প্রতি কেন এত দুর্বল হয়ে পড়ছি…ও যদি আমাদের আত্মীয় না হোত তাহলে হয়তো কোনো অসুবিধা ছিল না…খুব কাছের না হলেও…একটা সম্পর্ক তো আছে…ওর না হয় বয়স কম…এখন অনেক কিছুই বোঝে না…আমার তো বোঝা উচিত…পর পর দুটো সিগারেট খেয়ে ফেললাম…কিছু ভাবতে পারছিলাম না…মাথার ভেতরে সব যেন কেমন জট পাকিয়ে যাচ্ছে…মনে হল কেউ যেন ফুঁফিয়ে কাঁদছে…সমুদ্রের আওয়াজের মাঝে ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না…ভাবলাম মনের ভুল…পরক্ষনেই আবার মনে হল… না…মনে হচ্ছে কেউ কাঁদছে…তিস্তা কাঁদতে পারে একবারও মনে হল না…মেঘে ঢাকা চাঁদের আলোতে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝলামও না…মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এদিক ওদিক তাকালাম…কাউকে দেখতে পেলাম না…আবার মনে হল…সেই কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি…মেঘ সরে গিয়ে চাঁদের আলোতে এখন অনেকটাই পরিস্কার…উঠে তিস্তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বুঝলাম …ও কাঁদছে…ওর বুকের ভেতর থেকে চাপা কান্না গুমরে গুমরে বেরিয়ে আসছে…
নিজেকে ওই অবস্থায় ভীষন অসহায় লাগলো…কোনো কারন বুঝতে পারছি না…অথচ কাঁদছে…জীবনে এই প্রথম এরকম পরিস্থিতে পড়েছি…কি করবো বুঝতে পারছিলাম না…নিজেই এক অদ্ভুত পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি…ওকে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না…পাশে বসে ওর হাতটা ধরে বললাম…এই তিস্তা…কি হয়েছে…প্লিজ বলো…ওর কান্না যেন আরো বেড়ে গেল…ওর কাঁধে হাত দিয়ে নিজের দিকে টেনে নিলাম…এই…কাঁদছো কেন…আমি কি কিছু করেছি…প্লিজ বলো…
আমার কাঁধে মাথা রেখে ও ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে বলল…তুমি কেন বুঝতে চাইছো না…আমি তোমাকে কিছু বলতে চাইছি…
আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল…যা ভাবছিলাম…সত্যি…আমার আর কোনো রাস্তা নেই ওকে ফেরানোর…আমিও তো ওকে কাছে আসার সুযোগ দিয়েছি…আমি নিজেও এগিয়েছি…শুধু ওর দোষ দিয়ে তো লাভ নেই…কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে নিজের মনকে শক্ত করলাম…কাল কি হবে এখনই ভেবে লাভ নেই…ওর দিকে একটু ঘুরে দুহাতে মুখটা ধরে বললাম…আমার দিকে তাকাও…ও এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। তখোনো অল্প অল্প ফুঁফিয়ে উঠছিল…আঙ্গুল দিয়ে ওর দুচোখের জল মুছে দিতে দিতে বললাম…বলো…
আমার চোখে চোখ রেখে কান্না ভেজা গলায় বলল… আমি তোমাকে…
চুপ করে গেলে আস্তে করে বললাম… কি?
ভালোবাসি…
ওকে বুকে টেনে নিয়ে বললাম…জানি…
আমার বুকের ভেতরে ও কেঁপে উঠতে উঠতে কাঁধে মাথা রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরল… কেউ কোনো কথা বলছিলাম না। সময় চলে যাচ্ছে একটু একটু করে…ভাবছিলাম…আমারও তো কিছু বলার আছে ওকে…আস্তে করে বললাম…আমারও তোমাকে কিছু বলার আছে…শুনবে তো?
কাঁধ থেকে মাথা তুলে আমার ঠোঁটে আঙ্গুল ছুঁইয়ে বলল…বলো…
আমিও একজনকে ভালোবাসি…বলতে পারিনি…
কাকে…
আমার সাথে বসে আছে…
জানি…
তাহলে কাঁদছিলে কেন…
তুমি তো আমাকে নিজের মুখে বলোনি…
তারপর আর কোনো কিছু বলার হয়তো ছিল না কারুরই…ও আমার বুকে মাথা রেখে দুহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে…আমার বুকের ভেতর থেকে কেউ যেন ওর কানে কানে বলছে…ভালো…বাসি…ভালো…বাসি…ভালো… বাসি, দুজনে দুজনের স্পর্শেই হয়তো বুঝে নিচ্ছিলাম না বলা কথা গু্লো… কত সময় কেটে গেছে জানি না…ওকে ডাকলাম…তিস্তা…
উঁ…
অনেক রাত হয়েছে…
হোক…
শোবে না?
আরো একটু থাকি না তোমার সাথে …
প্রথম সূর্যোদয়…#
মায়ের ঘরে ওকে পৌঁছে দিয়ে আমি শুতে গেলাম…কিছুতেই ঘুম আসছিল না…ভীষন একটা ভালো লাগার অনুভুতির সাথে সাথে কোথাও যেন একটা কাঁটা বুকে খোঁচা মারছিল…কাজটা কি ঠিক করলাম…ওকে বোঝানো যেত…তারপর ভাবলাম…ও তো শুধু একা চায়নি…আমিও তো চেয়েছি ওকে…কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না…খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল…পাশে তাকিয়ে দেখলাম বাবা ঘুমোচ্ছে…আস্তে আস্তে উঠে জানলা দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকালাম…মনে মনে বললাম আমাদের জীবনে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল তোমার সামনে…তোমার তো কোনো পরিবর্তন নেই…তুমি সেই আগের মতো…ঢেউ তুলছো আর ঢেউ ভাঙ্গছো…তুমি কি বুঝতে পারছো না…এই একটা রাতের ব্যাবধানে আমি কোথা থেকে কোথায় এলাম…আমি এখন আর শুধু আমার বাবা মায়ের আদরের বাবাই নই…আমি এখন আমার প্রেয়শী তিস্তারও…
আর একটু পরেই সুর্য উঠবে…আকাশে অল্প মেঘ থাকলেও পূর্ব দিকটা পরিস্কার…বাবাকে ডাকলাম…সূর্যোদয় দেখার জন্য…
ওদের কে ডেকেছিস?
না…তুমি ওঠো…ওদের কে ডেকে দিচ্ছি…
পাশের ঘরটাই মায়েদের…দরজায় আস্তে আস্তে টোকা মারলাম…
ভেবেছিলাম মা দরজা খুলবে…দরজাটা একটু খানি খুলে একটা মিষ্টি মুখ ঘুম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল…ওর মুখের রং যেন আস্তে আস্তে বদলে গিয়ে খুশীতে ভরে উঠল আমাকে দেখে…
মা ওঠেনি?
মাথা নেড়ে জানালো… না…
আশে পাশে এখন কেউ নেই…ডান হাতের তর্জনী নিজের ঠোঁটে ছুঁইয়ে নিয়ে ওর নরম ঠোঁটে আলতো ভাবে ছুঁইয়ে রেখে জিজ্ঞেস করলাম…ঘুম হয়েছে?
আবার মাথা নেড়ে জানালো…না…
কেন?
ফিসফিস করে বলল…বিচ্ছুটা খুব জ্বালিয়েছে…
ওর চোখে চোখ রেখে বললাম…আরো জ্বালাবে…
আমার আঙ্গুলটা ধরে আলতো করে কামড়ে দিয়ে বলল…জ্বালাক…বয়ে গেছে…
দেরি হয়ে যাচ্ছে…বাবা বেরিয়ে আসতে পারে ভেবে বললাম…মাকে ডেকে নিয়ে তাড়াতাড়ি লবিতে এসো…সান রাইজ দেখতে যাবো…
আঙ্গুলে একটু জোরে কামড়ে দিয়ে বলল…আমি তোমার সাথে একা একা যাবো না?
অল্প হেসে মাথা নেড়ে বললাম…চাঁদের সাথে সূর্যের ঝগড়া হয়ে যাবে…
কেন?
আমাদের দরজায় খুট করে আওয়াজ হল…বাবা বেরোচ্ছে মনে হয়…তাড়াতাড়ি করে বললাম…পরে বলব…এখন যাও…বাবা বেরোচ্ছে…
বাবা ক্যামেরাটা আমার হাতে দিয়ে বলল…মা উঠেছে?
তিস্তা ডেকে দিচ্ছে…লবিতে আসতে বলে দিয়েছি…
ঠিক আছে…তুই লবিতে যা…আমি অরুনকে ডেকে নিয়ে আসছি…
সবাই বিচে গিয়ে বোল্ডারের উপর বসলাম…মায়ের পাশে বসে ছোটো ছোটো লাল কাঁকড়া দেখে তিস্তা বাচ্চাদের মতো খুশীতে ডগমগ করছিল…দু চারটে ঝিনুক কুড়িয়ে নিয়ে ওগুলো নিয়ে কি করবে যেন ভেবে পাচ্ছিল না…
মা…তোমার মেয়েকে বল…ঝিনুক আর কাঁকড়া সারাদিন থাকবে…সূর্য একবারই উঠবে…
আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বেঁকিয়ে ভেংচে দিয়ে মায়ের হাত ধরে জবাব দিলো…বম্মা…তোমার ছেলেকে বলে দাও…সকাল থেকেই আমার পেছনে না লাগতে…আমি কিছু বলিনা বলে এক্কেবারে পেয়ে বসেছে…
মা আমাকে মিষ্টি ধমক দিয়ে বলল…পাজ়ির পা ঝাড়া কোথাকার…আমার মেয়ের পেছনে না লেগে ছবি তোল…ঠিক সূর্য ওঠার মূহুর্তে ছবিটা তুলবি কিন্তু…
ক্যামেরাটা নিয়ে একটা পজিসান খুঁজে নিলাম যেখান থেকে ছবি ভালো আসবে…ক্যামেরা অন করে এপারচার…স্পিড এডজাস্ট করতে গিয়ে পারছিলাম না…তিস্তাকে ক্লোজ আপে নিয়ে এসে ওর দুষ্টুমি ভরা মিষ্টি মুখ থেকে চোখ সরানো যাচ্ছিল না…ও বোধহয় বুঝতে পেরেছিল…আমি ওকে ক্যমেরা দিয়ে দেখছি…মায়ের পাশে বসে থাকা অবস্থায় একটু পেছনে সরে গিয়ে কেউ যাতে বুঝতে না পারে…ঠোঁটে জিব বুলিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে ইসারায় চুমু খেলো আমাকে…তারপর চোখ দিয়ে ইশারা করলো বেশী সময় না নিতে…
হাত দিয়ে ইশারা করে সবাইকে পূর্ব দিকে তাকাতে বলে আমি রেডি হয়ে গেলাম…হঠাত সমুদ্রের মাঝ থেকে সূর্য যেন লাফ দিয়ে উঠল…আশেপাশের সবাই হইহই করে ওঠার সাথে সাথে ক্লিক করলাম…ক্যামেরা কি দেখছে জানি না…আমার দু চোখে তিস্তার উজ্জ্বল মুখ…তা কি ভোরের সূর্যের নরম আলোয় নাকি ভালোবাসার ছোঁয়ায় জানি না…ওর দুচোখে ভোরের সূর্য দেখার মুগ্ধতা…অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল ওকে…আরো কয়েকটা স্ন্যপ নিলাম…ফিরে গিয়ে বাবার হাতে ক্যমেরা দিয়ে মায়ের পাশে বসে পড়লাম…বাবা কয়েকটা ছবি তুলে দিল…
তিস্তা ওর বাপির সাথে আর বাবা মায়ের সাথে কম্বিনেশানে আরো কয়েকটা ছবি নেওয়া হলে…মা বললো…বাবাই…তিস্তার পাশে বসে ছবি তোল…আমার মনের কথাটা মা না বুঝেই বলে দেওয়াতে মনে মনে থ্যাঙ্কস জানালাম মাকে।
ছবি তোলার পর সবাই এগিয়ে গিয়ে সমুদ্রের জল ছুঁলাম…তিস্তা ছোট্ট মেয়ের মতো জলে পা ভেজাতে ভেজাতে খুশিতে ফেটে পড়ছিল…ঢেউ গুলো ফিরে যাওয়ার সাথে সাথে ও এগিয়ে যাচ্ছিল…আবার যেই পরের ঢেউ আসছিল…দৌড়ে ফিরে আসছিল…একটু পরেই হাঁফিয়ে গিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার হাতটা ওর বুকের পাশে চেপে ধরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…কি সুন্দর… না…
চাপা স্বরে বললাম…সবাই কিন্তু বুঝে যাবে…
আমার দিকে তাকিয়ে জিব কেটে ফেলে বলল…ইস…একদম ভুলে গেছি… আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ওর বাপির কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালো…
সবাই চলে গেছে শুতে…আমি তিস্তার সাথে বসে আছি…ও এক মনে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে…ওর মধ্যে সেই ছটপটে ভাবটা এখন আর একদম নেই…কেমন যেন শান্ত হয়ে বসে আছে…
একটা সিগারেট ধরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলা্ম…এটা কি ঠিক হচ্ছে…জীবনে অনেক মেয়ে কাছে আসতে চাইলেও আমি এগোতে চাইনি…মাত্র এই কটা দিনের পরিচয়ে আমি তিস্তার প্রতি কেন এত দুর্বল হয়ে পড়ছি…ও যদি আমাদের আত্মীয় না হোত তাহলে হয়তো কোনো অসুবিধা ছিল না…খুব কাছের না হলেও…একটা সম্পর্ক তো আছে…ওর না হয় বয়স কম…এখন অনেক কিছুই বোঝে না…আমার তো বোঝা উচিত…পর পর দুটো সিগারেট খেয়ে ফেললাম…কিছু ভাবতে পারছিলাম না…মাথার ভেতরে সব যেন কেমন জট পাকিয়ে যাচ্ছে…মনে হল কেউ যেন ফুঁফিয়ে কাঁদছে…সমুদ্রের আওয়াজের মাঝে ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না…ভাবলাম মনের ভুল…পরক্ষনেই আবার মনে হল… না…মনে হচ্ছে কেউ কাঁদছে…তিস্তা কাঁদতে পারে একবারও মনে হল না…মেঘে ঢাকা চাঁদের আলোতে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝলামও না…মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এদিক ওদিক তাকালাম…কাউকে দেখতে পেলাম না…আবার মনে হল…সেই কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি…মেঘ সরে গিয়ে চাঁদের আলোতে এখন অনেকটাই পরিস্কার…উঠে তিস্তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বুঝলাম …ও কাঁদছে…ওর বুকের ভেতর থেকে চাপা কান্না গুমরে গুমরে বেরিয়ে আসছে…
নিজেকে ওই অবস্থায় ভীষন অসহায় লাগলো…কোনো কারন বুঝতে পারছি না…অথচ কাঁদছে…জীবনে এই প্রথম এরকম পরিস্থিতে পড়েছি…কি করবো বুঝতে পারছিলাম না…নিজেই এক অদ্ভুত পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছি…ওকে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না…পাশে বসে ওর হাতটা ধরে বললাম…এই তিস্তা…কি হয়েছে…প্লিজ বলো…ওর কান্না যেন আরো বেড়ে গেল…ওর কাঁধে হাত দিয়ে নিজের দিকে টেনে নিলাম…এই…কাঁদছো কেন…আমি কি কিছু করেছি…প্লিজ বলো…
আমার কাঁধে মাথা রেখে ও ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে বলল…তুমি কেন বুঝতে চাইছো না…আমি তোমাকে কিছু বলতে চাইছি…
আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল…যা ভাবছিলাম…সত্যি…আমার আর কোনো রাস্তা নেই ওকে ফেরানোর…আমিও তো ওকে কাছে আসার সুযোগ দিয়েছি…আমি নিজেও এগিয়েছি…শুধু ওর দোষ দিয়ে তো লাভ নেই…কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে নিজের মনকে শক্ত করলাম…কাল কি হবে এখনই ভেবে লাভ নেই…ওর দিকে একটু ঘুরে দুহাতে মুখটা ধরে বললাম…আমার দিকে তাকাও…ও এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল। তখোনো অল্প অল্প ফুঁফিয়ে উঠছিল…আঙ্গুল দিয়ে ওর দুচোখের জল মুছে দিতে দিতে বললাম…বলো…
আমার চোখে চোখ রেখে কান্না ভেজা গলায় বলল… আমি তোমাকে…
চুপ করে গেলে আস্তে করে বললাম… কি?
ভালোবাসি…
ওকে বুকে টেনে নিয়ে বললাম…জানি…
আমার বুকের ভেতরে ও কেঁপে উঠতে উঠতে কাঁধে মাথা রেখে আমাকে জড়িয়ে ধরল… কেউ কোনো কথা বলছিলাম না। সময় চলে যাচ্ছে একটু একটু করে…ভাবছিলাম…আমারও তো কিছু বলার আছে ওকে…আস্তে করে বললাম…আমারও তোমাকে কিছু বলার আছে…শুনবে তো?
কাঁধ থেকে মাথা তুলে আমার ঠোঁটে আঙ্গুল ছুঁইয়ে বলল…বলো…
আমিও একজনকে ভালোবাসি…বলতে পারিনি…
কাকে…
আমার সাথে বসে আছে…
জানি…
তাহলে কাঁদছিলে কেন…
তুমি তো আমাকে নিজের মুখে বলোনি…
তারপর আর কোনো কিছু বলার হয়তো ছিল না কারুরই…ও আমার বুকে মাথা রেখে দুহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে…আমার বুকের ভেতর থেকে কেউ যেন ওর কানে কানে বলছে…ভালো…বাসি…ভালো…বাসি…ভালো… বাসি, দুজনে দুজনের স্পর্শেই হয়তো বুঝে নিচ্ছিলাম না বলা কথা গু্লো… কত সময় কেটে গেছে জানি না…ওকে ডাকলাম…তিস্তা…
উঁ…
অনেক রাত হয়েছে…
হোক…
শোবে না?
আরো একটু থাকি না তোমার সাথে …
প্রথম সূর্যোদয়…#
মায়ের ঘরে ওকে পৌঁছে দিয়ে আমি শুতে গেলাম…কিছুতেই ঘুম আসছিল না…ভীষন একটা ভালো লাগার অনুভুতির সাথে সাথে কোথাও যেন একটা কাঁটা বুকে খোঁচা মারছিল…কাজটা কি ঠিক করলাম…ওকে বোঝানো যেত…তারপর ভাবলাম…ও তো শুধু একা চায়নি…আমিও তো চেয়েছি ওকে…কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না…খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল…পাশে তাকিয়ে দেখলাম বাবা ঘুমোচ্ছে…আস্তে আস্তে উঠে জানলা দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকালাম…মনে মনে বললাম আমাদের জীবনে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল তোমার সামনে…তোমার তো কোনো পরিবর্তন নেই…তুমি সেই আগের মতো…ঢেউ তুলছো আর ঢেউ ভাঙ্গছো…তুমি কি বুঝতে পারছো না…এই একটা রাতের ব্যাবধানে আমি কোথা থেকে কোথায় এলাম…আমি এখন আর শুধু আমার বাবা মায়ের আদরের বাবাই নই…আমি এখন আমার প্রেয়শী তিস্তারও…
আর একটু পরেই সুর্য উঠবে…আকাশে অল্প মেঘ থাকলেও পূর্ব দিকটা পরিস্কার…বাবাকে ডাকলাম…সূর্যোদয় দেখার জন্য…
ওদের কে ডেকেছিস?
না…তুমি ওঠো…ওদের কে ডেকে দিচ্ছি…
পাশের ঘরটাই মায়েদের…দরজায় আস্তে আস্তে টোকা মারলাম…
ভেবেছিলাম মা দরজা খুলবে…দরজাটা একটু খানি খুলে একটা মিষ্টি মুখ ঘুম চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল…ওর মুখের রং যেন আস্তে আস্তে বদলে গিয়ে খুশীতে ভরে উঠল আমাকে দেখে…
মা ওঠেনি?
মাথা নেড়ে জানালো… না…
আশে পাশে এখন কেউ নেই…ডান হাতের তর্জনী নিজের ঠোঁটে ছুঁইয়ে নিয়ে ওর নরম ঠোঁটে আলতো ভাবে ছুঁইয়ে রেখে জিজ্ঞেস করলাম…ঘুম হয়েছে?
আবার মাথা নেড়ে জানালো…না…
কেন?
ফিসফিস করে বলল…বিচ্ছুটা খুব জ্বালিয়েছে…
ওর চোখে চোখ রেখে বললাম…আরো জ্বালাবে…
আমার আঙ্গুলটা ধরে আলতো করে কামড়ে দিয়ে বলল…জ্বালাক…বয়ে গেছে…
দেরি হয়ে যাচ্ছে…বাবা বেরিয়ে আসতে পারে ভেবে বললাম…মাকে ডেকে নিয়ে তাড়াতাড়ি লবিতে এসো…সান রাইজ দেখতে যাবো…
আঙ্গুলে একটু জোরে কামড়ে দিয়ে বলল…আমি তোমার সাথে একা একা যাবো না?
অল্প হেসে মাথা নেড়ে বললাম…চাঁদের সাথে সূর্যের ঝগড়া হয়ে যাবে…
কেন?
আমাদের দরজায় খুট করে আওয়াজ হল…বাবা বেরোচ্ছে মনে হয়…তাড়াতাড়ি করে বললাম…পরে বলব…এখন যাও…বাবা বেরোচ্ছে…
বাবা ক্যামেরাটা আমার হাতে দিয়ে বলল…মা উঠেছে?
তিস্তা ডেকে দিচ্ছে…লবিতে আসতে বলে দিয়েছি…
ঠিক আছে…তুই লবিতে যা…আমি অরুনকে ডেকে নিয়ে আসছি…
সবাই বিচে গিয়ে বোল্ডারের উপর বসলাম…মায়ের পাশে বসে ছোটো ছোটো লাল কাঁকড়া দেখে তিস্তা বাচ্চাদের মতো খুশীতে ডগমগ করছিল…দু চারটে ঝিনুক কুড়িয়ে নিয়ে ওগুলো নিয়ে কি করবে যেন ভেবে পাচ্ছিল না…
মা…তোমার মেয়েকে বল…ঝিনুক আর কাঁকড়া সারাদিন থাকবে…সূর্য একবারই উঠবে…
আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বেঁকিয়ে ভেংচে দিয়ে মায়ের হাত ধরে জবাব দিলো…বম্মা…তোমার ছেলেকে বলে দাও…সকাল থেকেই আমার পেছনে না লাগতে…আমি কিছু বলিনা বলে এক্কেবারে পেয়ে বসেছে…
মা আমাকে মিষ্টি ধমক দিয়ে বলল…পাজ়ির পা ঝাড়া কোথাকার…আমার মেয়ের পেছনে না লেগে ছবি তোল…ঠিক সূর্য ওঠার মূহুর্তে ছবিটা তুলবি কিন্তু…
ক্যামেরাটা নিয়ে একটা পজিসান খুঁজে নিলাম যেখান থেকে ছবি ভালো আসবে…ক্যামেরা অন করে এপারচার…স্পিড এডজাস্ট করতে গিয়ে পারছিলাম না…তিস্তাকে ক্লোজ আপে নিয়ে এসে ওর দুষ্টুমি ভরা মিষ্টি মুখ থেকে চোখ সরানো যাচ্ছিল না…ও বোধহয় বুঝতে পেরেছিল…আমি ওকে ক্যমেরা দিয়ে দেখছি…মায়ের পাশে বসে থাকা অবস্থায় একটু পেছনে সরে গিয়ে কেউ যাতে বুঝতে না পারে…ঠোঁটে জিব বুলিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে ইসারায় চুমু খেলো আমাকে…তারপর চোখ দিয়ে ইশারা করলো বেশী সময় না নিতে…
হাত দিয়ে ইশারা করে সবাইকে পূর্ব দিকে তাকাতে বলে আমি রেডি হয়ে গেলাম…হঠাত সমুদ্রের মাঝ থেকে সূর্য যেন লাফ দিয়ে উঠল…আশেপাশের সবাই হইহই করে ওঠার সাথে সাথে ক্লিক করলাম…ক্যামেরা কি দেখছে জানি না…আমার দু চোখে তিস্তার উজ্জ্বল মুখ…তা কি ভোরের সূর্যের নরম আলোয় নাকি ভালোবাসার ছোঁয়ায় জানি না…ওর দুচোখে ভোরের সূর্য দেখার মুগ্ধতা…অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল ওকে…আরো কয়েকটা স্ন্যপ নিলাম…ফিরে গিয়ে বাবার হাতে ক্যমেরা দিয়ে মায়ের পাশে বসে পড়লাম…বাবা কয়েকটা ছবি তুলে দিল…
তিস্তা ওর বাপির সাথে আর বাবা মায়ের সাথে কম্বিনেশানে আরো কয়েকটা ছবি নেওয়া হলে…মা বললো…বাবাই…তিস্তার পাশে বসে ছবি তোল…আমার মনের কথাটা মা না বুঝেই বলে দেওয়াতে মনে মনে থ্যাঙ্কস জানালাম মাকে।
ছবি তোলার পর সবাই এগিয়ে গিয়ে সমুদ্রের জল ছুঁলাম…তিস্তা ছোট্ট মেয়ের মতো জলে পা ভেজাতে ভেজাতে খুশিতে ফেটে পড়ছিল…ঢেউ গুলো ফিরে যাওয়ার সাথে সাথে ও এগিয়ে যাচ্ছিল…আবার যেই পরের ঢেউ আসছিল…দৌড়ে ফিরে আসছিল…একটু পরেই হাঁফিয়ে গিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার হাতটা ওর বুকের পাশে চেপে ধরে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল…কি সুন্দর… না…
চাপা স্বরে বললাম…সবাই কিন্তু বুঝে যাবে…
আমার দিকে তাকিয়ে জিব কেটে ফেলে বলল…ইস…একদম ভুলে গেছি… আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ওর বাপির কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালো…