03-03-2021, 08:14 PM
ভোরের রজনীগন্ধা #
খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যেতে পাশ ফিরে জানলার দিকে তাকিয়ে দেখলাম…আকাশটা তখোনো মেঘে ভরা…গাছের নতুন পাতা গুলো বৃষ্টিতে ধুয়ে যেন অনাঘ্রাতা কুমারী মেয়ের মতো দেখাচ্ছে…কাল রাতের কথা ভাবতে ভীষন ভালো লাগছিল…বুকের ভেতরটা এক অজানা খুশিতে ভরা…খুব ইচ্ছে করছিল কেউ ওঠার আগে ছাদে গিয়ে রাতের সেই অনুভুতি গুলোকে আরো একবার নিজের হৃদয়ে ছুঁইয়ে দিতে…
জুঁই ফুলের গাছটা ফুলে ফুলে ভরে আছে…ফুল গুলোতে আলতো হাত বোলাতে বোলাতে ভাবছিলাম…ও কি কিছু বলতে চেয়েছিল…কেমন অদ্ভুত মায়াবী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল…যে দৃষ্টিতে ছিল না উগ্র কামনা…ছিল না কোনো উত্তেজনা…একেই কি বলে প্রেম…জানি না…আচ্ছা…ও কিছু বলতে চাইলে…বলতে পারতো…আমি না হয় লজ্জায় বলতে পারছি না…ও তো একটা ছেলে…ওর তো লজ্জা পাওয়া উচিত নয়…
কি রে তিস্তা…এতো সকালে ছাদে কি করছিস…ঘুমিয়েছিস তো… পেছন ফিরে দেখলাম বম্মা।
বম্মা…দেখো…জুঁই ফুলের গন্ধে চারদিক ভরে গেছে…ভীষন ভালো লাগছে…না…
বম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল…আমার মেয়েটা খুব মিষ্টি…আয়…ওদিকে চল…আমি পুজোর ফুল তুলবো…
বম্মা…কত রজনীগন্ধা ফুটেছে…কয়েকটা নেবো গো?
ওমা…ফুল নিবি…আবার আমাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে…কি করবি রে…আমাকে তো দিলি কাল সন্ধেবেলা…
তোমার ছেলেকে দেবো…ও না থাকলে কাল রাতে তো বৃষ্টিতে ভিজতে পারতাম না…জানো তো…একটা গান গাইলাম ভিজতে ভিজতে…তোমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম…কেমন লাগলো…কিছুই বললো না…তোমাকে গানটা শোনাবো…তুমি বলবে তো আমি কেমন গাই…ও বোললো না তো আমার বয়ে গেল…
ফুল তোলা হয়ে গেলে নিচে এলাম… বম্মা চা বানিয়ে আমাকে ডেকে বলল…তিস্তা…বাপিকে ডেকে দে না মা…চা হয়ে গেছে…
চা খেতে খেতে বাপি জিজ্ঞেস করল…বাবাই কই…দেখছি না তো…
বম্মা হেসে বলল…বাবুর একটু দেরীতে ঘুম ভাঙ্গে…বিছানায় চা না পেলে উঠবেই না…আমাকে পাশে বসতে হবে…আমার গায়ে হেলান দিয়ে বসে চা খেয়ে তার পর উনি উঠবেন।
বম্মা তুমি তাহলে যাও…চা ঠান্ডা হয়ে যাবে তো…
আজ বরং তুই নিয়ে যা…আমরা তোর বাপির সাথে গল্প করি…
আমাকে আবার ওনার পাশে বসতে হবে নাকি…তাহলে বাবা আমি নেই…
আরে না না…ওর যত আব্দার আমার কাছে…বাইরে গেলে দিব্বি নিজেই সব করে নেয়…
চায়ের কাপ আর রজনিগন্ধার স্টিক গুলো নিয়ে ওর ঘরের পর্দা সরিয়ে দেখলাম…পাশ ফিরে কোল বালিশ টাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে…ওর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবছিলাম…কি সুন্দর মায়া মাখানো মুখটা…একটু যেন দুষ্টুমিতে ভরা…
রজনীগন্ধার ফুলগুলো ওর কপালে, গালে আলতো ভাবে বুলিয়ে দিতে দিতে আস্তে আস্তে ডাকলাম…এই…ওঠো…না…
ও চোখ খুলে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো…ঘুম চোখে হঠাৎ বুঝতে পারছিল না…কে এসেছে…হয়তো ভাবছিল মা তো এভাবে ডাকে না…
ওঠো না…চা নিয়ে এসেছি…
ও উঠে বালিশে হেলান দিয়ে বসে বলল…বোসো…
রজনীগন্ধার স্টিক গুলো ওর দিকে এগিয়ে বললাম…আগে এটা নাও…
ফুল গুলো হাতে নিয়ে বুক ভরে গন্ধ নিতে নিতে জিজ্ঞেস করল…কিসের জন্য?
আমাকে একটা সুন্দর রাত উপহার দিয়েছো না…এটা তার জন্য।
তোমাকে যতবার দেখি…ততবারই নতুন লাগে…তোমার দেওয়া ফুল নিয়ে একটা গান মনে পড়ছে…
আমি দুচোখ ভরা আগ্রহ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম…শোনার জন্য…
রজনীগন্ধা ফুল তুমহারী……তুমি গানটা জানো? গাইবে একবার?
এখন নয়…পরে কখোনো…যদি তুমি আমাকে কখোনো বলো কাল রাতের গান শুনে তোমার কেমন লেগেছিল…
আমার চোখে চোখ রেখে ও মৃদু স্বরে বলল…জানি…না…সেই দিনটা আসবে কিনা…যেদিন তোমাকে বলতে পারবো…
ওর মতোই মৃদু স্বরে বললাম...আমি অপেক্ষা করবো…
প্রথম শাড়ীর প্রেমে পড়া #
সকালে সেই যে সৃজনকে চা দিতে গিয়ে ওর সাথে কিছুক্ষন ছিলাম তারপর আর ওর সাথে দেখা হয়নি। কোথায় যেন গেছে। খুব অভিমান হচ্ছিল…আমাকে তো একবার বলে যেতে পারতো। মনটা খুব খারাপ লাগছিল।
বাপি নিজের কাজে বেরিয়ে গেছে…দাদাই অফিসে…এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে ভাবলাম…বম্মার কাছে গিয়ে রান্না করা দেখি। রান্না ঘরে গিয়ে পেছন থেকে বম্মাকে জড়িয়ে ধরলাম।
কি রে…তিস্তা…কেউ নেই… সময় কাটছে না তো?
তুমি তো আছো…
আমি তো রান্না করতে ব্যাস্ত…
এত কি রান্না কোরছো?…কেউ তো বাড়ীতে নেই।
আমার মেয়ে আছে না…বাবাইও তো বাড়ী ফিরে খাবে…
ও আসবে শুনে ভীষন ভালো লাগলো…যাওয়ার আগে বলে যায়নি…আসুক আগে…খুব বকুনি দিতে ইচ্ছে করছিল…হঠাৎ মনে হল…ওকে কিছু একটা করে চমকে দেবো আজ। বম্মার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে রান্না করা দেখতে দেখতে ভাবছিলাম কি করা যায়…
আমার মেয়েটা এক্কেবারে চুপচাপ কেন?
এমনিই…তোমার রান্না করা দেখছি…ভাবছি আর একবার স্নান করে নি…
আমার রান্না হয়ে এসেছে…তুই বরং চান করে নে…বাবাই এসে গেলে আমরা এক সাথে খেতে বসবো…
বম্মা…তোমার একটা শাড়ি পরতে দেবে গো…
ওমা শুধু শাড়ী কি করে পরবি…আমার ব্লাউজ় তো তোর হবে না…
দেখো না…তোমার পুরোনো কিছু যদি থাকে…তুমি তো আগে আমার মতো রোগা ছিলে…তোমার পুরোনো ফটো দেখছিলাম না…
ঠিক বলেছিস…মনে হয় আলমারীতে খুঁজলে পাওয়া যাবে…তুই জানিস তো শাড়ী পরতে?
আগে কখোনো পরেছি নাকি…তুমি আছো তো…পরিয়ে দেবে…
বম্মা আলমারীতে যত জামা কাপড় ছিল টেনে বের করলো…বেছে বেছে একটা লালের উপর হালকা সবুজ কাজ করা সুতির শাড়ী আর তার সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ আর সায়া বের করে শাড়ীটা আমার গায়ে ফেলে বললো…তোকে বেশ মানাবে কিন্তু…
বম্মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম…ভাগ্যিস কাউকে দিয়ে দাওনি…তাহলে আমি আর পরতে পারতাম না…
এগুলো রেখেছি বাবাই এর বৌ কে দেবো বলে…অবশ্য যদি নিতে চায়…আজকালকার মেয়ে…বলা তো যায় না…না নিলে অন্য কাউকে দিয়ে দেবো…
কাউকে ঠিক করে রেখেছো নাকি?
তোর মাথা খারাপ…আগে নিজের পায়ে দাঁড়াক…তারপর ও নিজে ঠিক না করলে তারপর না হয় আমরা দেখবো…
দেখো গিয়ে ঠিক করে রেখেছে…তোমাদের কে বলেনি…
না রে…সে রকম কেউ থাকলে আমাকে ঠিক বলে দিতো…ওর কলেজের কেউ কেউ প্রপোজ করেছিল…সব আমাকে বলেছে…
কথাটা শুনে ভীষন ভালো লাগছিল…ইচ্ছে করলো কিছুক্ষন একদম একা একা নিজের সাথে সময় কাটাতে। বম্মাকে বললাম…বম্মা…আমি স্নান করে আসছি…তুমি কিন্তু শাড়ী পরিয়ে দেবে…
বাথরুম থেকে কোনোরকমে শাড়ীটা জড়িয়ে বেরোলাম…ব্লাউজটা একটু যেন টাইট লাগছে…লাগুক…প্রথম শাড়ী পরার খুশিতে মনটা নেচে উঠতে চাইছে…
কি রে তিস্তা…কখন থেকে বসে আছি তোকে শাড়ী পরাবো বলে…এক ঘন্টা হয়ে গেল…মেয়ে আমার আর বেরোয় না…কারুর কথা ভাবছিলি নাকি…
লজ্জা পেয়ে গেলাম…ধ্যাত তুমি না বম্মা…কার কথা ভাববো…মনে মনে বললাম…বম্মা…কিছু মনে কোরো না…তোমার বিচ্ছু ছেলেটা আমার মনটা চুরি করে নিয়েছে…তার কথাই ভাবছিলাম…কিন্তু তোমাকে কি করে বলি বলোতো…
আমার এত সুন্দর মেয়েটাকে কারুর পছন্দ হয়নি নাকি…
ধ্যাত…তুমিও…তোমার ছেলের মতো পেছনে লাগছো…
আয়…তোকে শাড়ীটা পরিয়ে দিই…বাবাই এসে চানে ঢুকেছে…এখুনি বেরিয়ে মা খেতে দাও বলে চেঁচাবে…
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম বম্মা কিভাবে শাড়ী পরাচ্ছে…নিজেকেই চিনতে পারছিলাম না…
শাড়ী পরিয়ে দিয়ে বম্মা বলল…তোকে তো চেনাই যাচ্ছে না রে…কি সুন্দর লাগছে…
আয়নার সামনে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বম্মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম…থ্যাঙ্ক ইউ…বম্মা…
এই মেয়ে…মাকে থ্যাঙ্ক ইউ বলে নাকি…
বম্মা…তোমার ছেলেকে একবার দেখিয়ে আসি?
ঠিক আছে…যা…ও তো পেছনে লাগবেই… রাগ করবি না কিন্তু…
লাগুক না…আমি কি সত্যি সত্যি রাগ করি নাকি…
শাড়ীটা দুহাতে একটু তুলে ধরে প্রায় দৌড়ে সৃজনের ঘরে গেলাম…ওকে দেখাবার জন্য যেন আর দেরী সহ্য হচ্ছিল না…বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম ও আমাকে দেখে কি বলতে পারে…পেছনে লাগবে…নাকি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে…কখন যে ও স্নান করে বেরিয়ে এসেছে বুঝতে পারিনি…
অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল…ওর দুচোখে কেমন অদ্ভুত এক ভালোলাগার ছোঁয়া…
লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে জিজ্ঞেস করলাম…ভালো লাগছে?
ও আমার হাত ধরে বলল…চলো
কোথায়?
আয়নাটা দেখিয়ে বলল…যেখানে তুমি নিজেকে দেখতে পাবে।
আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে বলল…আয়না কি বলছে জানো?
কিছু না বলে আয়নার ভেতর দিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে তাকিয়েছিলাম ও কি বলে শোনার জন্য…
আমার কাঁধে দুহাত রেখে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আমার দিকে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো…কিছু যেন বলতে চাইছে…ওর উষ্ণ শ্বাস আমার মুখে আলতো ছোঁয়া দিয়ে যেতে যেতে যেন বলছে…কোথায় ছিলে এতদিন…আগে কেন আসোনি আমার কাছে…
বম্মার ডাকে সম্বিত ফিরে এলো…খেতে ডাকছে আমাদের…
তুমি যাও…আমি চুল আঁচড়ে আসছি…
নিজেকে সামলে নিয়ে ওর চুল গুলো আরো একটু এলোমেলো করে দিয়ে বললাম…দুষ্টু ছেলেদের এলোমেলো চুলে বেশী ভালো লাগে দেখতে…
আমার ঠোঁটে আলতো ভাবে আঙ্গুল বুলিয়ে বলল…মিষ্টি মেয়েরা এতো কাছে এলে কি ভালো থাকা যায়?
আমি কি বলেছি…ভালো হয়ে থাকতে?
দুপুরে না শুয়ে বাপির জন্য অপেক্ষা করছিলাম…কখন আসবে…কখন বাপিকে আমার শাড়ী পরা দেখাবো…দুটো নাগাদ বেল বাজতেই দৌড়ে গিয়ে বম্মাকে ডেকে নিয়ে এসে বম্মার পেছনে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম…
বম্মা দরজা খুলে দিয়ে বাপি ভেতরে আসার পর বলল…অরুন…একটু দাঁড়াও…তোমাকে একটা নতুন জিনিস দেখাবো…
এই মেয়ে…সামনে আয়… বলে আমার হাত ধরে সামনে টেনে নিয়ে এসে বাপিকে বলল…দেখো তো এই মেয়েটাকে চিনতে পারো কিনা…
বাপি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল…কি বলবে যেন বুঝে উঠতে পারছিল না কিন্তু মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল ভীষন খুশী হয়েছে…
আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে বাপিকে জড়িয়ে ধরে বললাম…বম্মা পরিয়ে দিয়েছে…কেমন লাগছে বললে না তো…
ভীষন সুন্দর লাগছে আমার মেয়েকে…
খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যেতে পাশ ফিরে জানলার দিকে তাকিয়ে দেখলাম…আকাশটা তখোনো মেঘে ভরা…গাছের নতুন পাতা গুলো বৃষ্টিতে ধুয়ে যেন অনাঘ্রাতা কুমারী মেয়ের মতো দেখাচ্ছে…কাল রাতের কথা ভাবতে ভীষন ভালো লাগছিল…বুকের ভেতরটা এক অজানা খুশিতে ভরা…খুব ইচ্ছে করছিল কেউ ওঠার আগে ছাদে গিয়ে রাতের সেই অনুভুতি গুলোকে আরো একবার নিজের হৃদয়ে ছুঁইয়ে দিতে…
জুঁই ফুলের গাছটা ফুলে ফুলে ভরে আছে…ফুল গুলোতে আলতো হাত বোলাতে বোলাতে ভাবছিলাম…ও কি কিছু বলতে চেয়েছিল…কেমন অদ্ভুত মায়াবী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল…যে দৃষ্টিতে ছিল না উগ্র কামনা…ছিল না কোনো উত্তেজনা…একেই কি বলে প্রেম…জানি না…আচ্ছা…ও কিছু বলতে চাইলে…বলতে পারতো…আমি না হয় লজ্জায় বলতে পারছি না…ও তো একটা ছেলে…ওর তো লজ্জা পাওয়া উচিত নয়…
কি রে তিস্তা…এতো সকালে ছাদে কি করছিস…ঘুমিয়েছিস তো… পেছন ফিরে দেখলাম বম্মা।
বম্মা…দেখো…জুঁই ফুলের গন্ধে চারদিক ভরে গেছে…ভীষন ভালো লাগছে…না…
বম্মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল…আমার মেয়েটা খুব মিষ্টি…আয়…ওদিকে চল…আমি পুজোর ফুল তুলবো…
বম্মা…কত রজনীগন্ধা ফুটেছে…কয়েকটা নেবো গো?
ওমা…ফুল নিবি…আবার আমাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে…কি করবি রে…আমাকে তো দিলি কাল সন্ধেবেলা…
তোমার ছেলেকে দেবো…ও না থাকলে কাল রাতে তো বৃষ্টিতে ভিজতে পারতাম না…জানো তো…একটা গান গাইলাম ভিজতে ভিজতে…তোমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম…কেমন লাগলো…কিছুই বললো না…তোমাকে গানটা শোনাবো…তুমি বলবে তো আমি কেমন গাই…ও বোললো না তো আমার বয়ে গেল…
ফুল তোলা হয়ে গেলে নিচে এলাম… বম্মা চা বানিয়ে আমাকে ডেকে বলল…তিস্তা…বাপিকে ডেকে দে না মা…চা হয়ে গেছে…
চা খেতে খেতে বাপি জিজ্ঞেস করল…বাবাই কই…দেখছি না তো…
বম্মা হেসে বলল…বাবুর একটু দেরীতে ঘুম ভাঙ্গে…বিছানায় চা না পেলে উঠবেই না…আমাকে পাশে বসতে হবে…আমার গায়ে হেলান দিয়ে বসে চা খেয়ে তার পর উনি উঠবেন।
বম্মা তুমি তাহলে যাও…চা ঠান্ডা হয়ে যাবে তো…
আজ বরং তুই নিয়ে যা…আমরা তোর বাপির সাথে গল্প করি…
আমাকে আবার ওনার পাশে বসতে হবে নাকি…তাহলে বাবা আমি নেই…
আরে না না…ওর যত আব্দার আমার কাছে…বাইরে গেলে দিব্বি নিজেই সব করে নেয়…
চায়ের কাপ আর রজনিগন্ধার স্টিক গুলো নিয়ে ওর ঘরের পর্দা সরিয়ে দেখলাম…পাশ ফিরে কোল বালিশ টাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে…ওর ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবছিলাম…কি সুন্দর মায়া মাখানো মুখটা…একটু যেন দুষ্টুমিতে ভরা…
রজনীগন্ধার ফুলগুলো ওর কপালে, গালে আলতো ভাবে বুলিয়ে দিতে দিতে আস্তে আস্তে ডাকলাম…এই…ওঠো…না…
ও চোখ খুলে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো…ঘুম চোখে হঠাৎ বুঝতে পারছিল না…কে এসেছে…হয়তো ভাবছিল মা তো এভাবে ডাকে না…
ওঠো না…চা নিয়ে এসেছি…
ও উঠে বালিশে হেলান দিয়ে বসে বলল…বোসো…
রজনীগন্ধার স্টিক গুলো ওর দিকে এগিয়ে বললাম…আগে এটা নাও…
ফুল গুলো হাতে নিয়ে বুক ভরে গন্ধ নিতে নিতে জিজ্ঞেস করল…কিসের জন্য?
আমাকে একটা সুন্দর রাত উপহার দিয়েছো না…এটা তার জন্য।
তোমাকে যতবার দেখি…ততবারই নতুন লাগে…তোমার দেওয়া ফুল নিয়ে একটা গান মনে পড়ছে…
আমি দুচোখ ভরা আগ্রহ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম…শোনার জন্য…
রজনীগন্ধা ফুল তুমহারী……তুমি গানটা জানো? গাইবে একবার?
এখন নয়…পরে কখোনো…যদি তুমি আমাকে কখোনো বলো কাল রাতের গান শুনে তোমার কেমন লেগেছিল…
আমার চোখে চোখ রেখে ও মৃদু স্বরে বলল…জানি…না…সেই দিনটা আসবে কিনা…যেদিন তোমাকে বলতে পারবো…
ওর মতোই মৃদু স্বরে বললাম...আমি অপেক্ষা করবো…
প্রথম শাড়ীর প্রেমে পড়া #
সকালে সেই যে সৃজনকে চা দিতে গিয়ে ওর সাথে কিছুক্ষন ছিলাম তারপর আর ওর সাথে দেখা হয়নি। কোথায় যেন গেছে। খুব অভিমান হচ্ছিল…আমাকে তো একবার বলে যেতে পারতো। মনটা খুব খারাপ লাগছিল।
বাপি নিজের কাজে বেরিয়ে গেছে…দাদাই অফিসে…এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে ভাবলাম…বম্মার কাছে গিয়ে রান্না করা দেখি। রান্না ঘরে গিয়ে পেছন থেকে বম্মাকে জড়িয়ে ধরলাম।
কি রে…তিস্তা…কেউ নেই… সময় কাটছে না তো?
তুমি তো আছো…
আমি তো রান্না করতে ব্যাস্ত…
এত কি রান্না কোরছো?…কেউ তো বাড়ীতে নেই।
আমার মেয়ে আছে না…বাবাইও তো বাড়ী ফিরে খাবে…
ও আসবে শুনে ভীষন ভালো লাগলো…যাওয়ার আগে বলে যায়নি…আসুক আগে…খুব বকুনি দিতে ইচ্ছে করছিল…হঠাৎ মনে হল…ওকে কিছু একটা করে চমকে দেবো আজ। বম্মার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে রান্না করা দেখতে দেখতে ভাবছিলাম কি করা যায়…
আমার মেয়েটা এক্কেবারে চুপচাপ কেন?
এমনিই…তোমার রান্না করা দেখছি…ভাবছি আর একবার স্নান করে নি…
আমার রান্না হয়ে এসেছে…তুই বরং চান করে নে…বাবাই এসে গেলে আমরা এক সাথে খেতে বসবো…
বম্মা…তোমার একটা শাড়ি পরতে দেবে গো…
ওমা শুধু শাড়ী কি করে পরবি…আমার ব্লাউজ় তো তোর হবে না…
দেখো না…তোমার পুরোনো কিছু যদি থাকে…তুমি তো আগে আমার মতো রোগা ছিলে…তোমার পুরোনো ফটো দেখছিলাম না…
ঠিক বলেছিস…মনে হয় আলমারীতে খুঁজলে পাওয়া যাবে…তুই জানিস তো শাড়ী পরতে?
আগে কখোনো পরেছি নাকি…তুমি আছো তো…পরিয়ে দেবে…
বম্মা আলমারীতে যত জামা কাপড় ছিল টেনে বের করলো…বেছে বেছে একটা লালের উপর হালকা সবুজ কাজ করা সুতির শাড়ী আর তার সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ আর সায়া বের করে শাড়ীটা আমার গায়ে ফেলে বললো…তোকে বেশ মানাবে কিন্তু…
বম্মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম…ভাগ্যিস কাউকে দিয়ে দাওনি…তাহলে আমি আর পরতে পারতাম না…
এগুলো রেখেছি বাবাই এর বৌ কে দেবো বলে…অবশ্য যদি নিতে চায়…আজকালকার মেয়ে…বলা তো যায় না…না নিলে অন্য কাউকে দিয়ে দেবো…
কাউকে ঠিক করে রেখেছো নাকি?
তোর মাথা খারাপ…আগে নিজের পায়ে দাঁড়াক…তারপর ও নিজে ঠিক না করলে তারপর না হয় আমরা দেখবো…
দেখো গিয়ে ঠিক করে রেখেছে…তোমাদের কে বলেনি…
না রে…সে রকম কেউ থাকলে আমাকে ঠিক বলে দিতো…ওর কলেজের কেউ কেউ প্রপোজ করেছিল…সব আমাকে বলেছে…
কথাটা শুনে ভীষন ভালো লাগছিল…ইচ্ছে করলো কিছুক্ষন একদম একা একা নিজের সাথে সময় কাটাতে। বম্মাকে বললাম…বম্মা…আমি স্নান করে আসছি…তুমি কিন্তু শাড়ী পরিয়ে দেবে…
বাথরুম থেকে কোনোরকমে শাড়ীটা জড়িয়ে বেরোলাম…ব্লাউজটা একটু যেন টাইট লাগছে…লাগুক…প্রথম শাড়ী পরার খুশিতে মনটা নেচে উঠতে চাইছে…
কি রে তিস্তা…কখন থেকে বসে আছি তোকে শাড়ী পরাবো বলে…এক ঘন্টা হয়ে গেল…মেয়ে আমার আর বেরোয় না…কারুর কথা ভাবছিলি নাকি…
লজ্জা পেয়ে গেলাম…ধ্যাত তুমি না বম্মা…কার কথা ভাববো…মনে মনে বললাম…বম্মা…কিছু মনে কোরো না…তোমার বিচ্ছু ছেলেটা আমার মনটা চুরি করে নিয়েছে…তার কথাই ভাবছিলাম…কিন্তু তোমাকে কি করে বলি বলোতো…
আমার এত সুন্দর মেয়েটাকে কারুর পছন্দ হয়নি নাকি…
ধ্যাত…তুমিও…তোমার ছেলের মতো পেছনে লাগছো…
আয়…তোকে শাড়ীটা পরিয়ে দিই…বাবাই এসে চানে ঢুকেছে…এখুনি বেরিয়ে মা খেতে দাও বলে চেঁচাবে…
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম বম্মা কিভাবে শাড়ী পরাচ্ছে…নিজেকেই চিনতে পারছিলাম না…
শাড়ী পরিয়ে দিয়ে বম্মা বলল…তোকে তো চেনাই যাচ্ছে না রে…কি সুন্দর লাগছে…
আয়নার সামনে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বম্মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম…থ্যাঙ্ক ইউ…বম্মা…
এই মেয়ে…মাকে থ্যাঙ্ক ইউ বলে নাকি…
বম্মা…তোমার ছেলেকে একবার দেখিয়ে আসি?
ঠিক আছে…যা…ও তো পেছনে লাগবেই… রাগ করবি না কিন্তু…
লাগুক না…আমি কি সত্যি সত্যি রাগ করি নাকি…
শাড়ীটা দুহাতে একটু তুলে ধরে প্রায় দৌড়ে সৃজনের ঘরে গেলাম…ওকে দেখাবার জন্য যেন আর দেরী সহ্য হচ্ছিল না…বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম ও আমাকে দেখে কি বলতে পারে…পেছনে লাগবে…নাকি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে…কখন যে ও স্নান করে বেরিয়ে এসেছে বুঝতে পারিনি…
অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল…ওর দুচোখে কেমন অদ্ভুত এক ভালোলাগার ছোঁয়া…
লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে জিজ্ঞেস করলাম…ভালো লাগছে?
ও আমার হাত ধরে বলল…চলো
কোথায়?
আয়নাটা দেখিয়ে বলল…যেখানে তুমি নিজেকে দেখতে পাবে।
আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে বলল…আয়না কি বলছে জানো?
কিছু না বলে আয়নার ভেতর দিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে তাকিয়েছিলাম ও কি বলে শোনার জন্য…
আমার কাঁধে দুহাত রেখে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আমার দিকে কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো…কিছু যেন বলতে চাইছে…ওর উষ্ণ শ্বাস আমার মুখে আলতো ছোঁয়া দিয়ে যেতে যেতে যেন বলছে…কোথায় ছিলে এতদিন…আগে কেন আসোনি আমার কাছে…
বম্মার ডাকে সম্বিত ফিরে এলো…খেতে ডাকছে আমাদের…
তুমি যাও…আমি চুল আঁচড়ে আসছি…
নিজেকে সামলে নিয়ে ওর চুল গুলো আরো একটু এলোমেলো করে দিয়ে বললাম…দুষ্টু ছেলেদের এলোমেলো চুলে বেশী ভালো লাগে দেখতে…
আমার ঠোঁটে আলতো ভাবে আঙ্গুল বুলিয়ে বলল…মিষ্টি মেয়েরা এতো কাছে এলে কি ভালো থাকা যায়?
আমি কি বলেছি…ভালো হয়ে থাকতে?
দুপুরে না শুয়ে বাপির জন্য অপেক্ষা করছিলাম…কখন আসবে…কখন বাপিকে আমার শাড়ী পরা দেখাবো…দুটো নাগাদ বেল বাজতেই দৌড়ে গিয়ে বম্মাকে ডেকে নিয়ে এসে বম্মার পেছনে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম…
বম্মা দরজা খুলে দিয়ে বাপি ভেতরে আসার পর বলল…অরুন…একটু দাঁড়াও…তোমাকে একটা নতুন জিনিস দেখাবো…
এই মেয়ে…সামনে আয়… বলে আমার হাত ধরে সামনে টেনে নিয়ে এসে বাপিকে বলল…দেখো তো এই মেয়েটাকে চিনতে পারো কিনা…
বাপি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল…কি বলবে যেন বুঝে উঠতে পারছিল না কিন্তু মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল ভীষন খুশী হয়েছে…
আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে বাপিকে জড়িয়ে ধরে বললাম…বম্মা পরিয়ে দিয়েছে…কেমন লাগছে বললে না তো…
ভীষন সুন্দর লাগছে আমার মেয়েকে…