03-03-2021, 04:30 PM
‘আমি তো ভাবতেই পারছি না সূর্য, আমাদের সূর্য এটা কি করে করতে পারে? আমাদের এ হেন রাজ বংশে এই রকম মতি হয় কি করে সূর্যর?’ বিশাল বৈঠকখানায় মাথা নিচু করে দণ্ডায়মান পরিবারের সমস্ত কয়জন সদস্য… চুপ করে থাকা ব্যতিত আর কিছু কারুর করার কথাও নয়… রুদ্রনারায়ণ ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্ট… ঘরের মধ্যে তখন তাঁর ব্যঘ্রের ন্যায় পদসঞ্চালনা… সেখানে, সেই মুহুর্তে কেউ কথা বলবে, এমন বুকের পাটা উপস্থিত কারই বা আছে? তাই মাথা নত করে চুপ করে দাড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কারুর কিছু করণিয় নেই…
“কখন আসছে, সেই কুলাঙ্গারটা?” ফের একবার গম গম করে ওঠে ঘরের মধ্যেটা রুদ্রনারায়ণের ভরাট জলদ গম্ভীর কন্ঠস্বরে… কথাটা যদিও জ্যেষ্ঠ পুত্র বিপ্রনারায়ণের উদ্দেশ্যেই ছুড়ে দিয়েছিলেন রুদ্রনারায়ণ, কিন্তু পাশ থেকে রুদ্রনারায়ণের সহধর্মী, সরযূদেবী উত্তরটা দেন… “কেন? কি এমন করেছে আমার ছেলেটা যে এই ভাবে চিৎকার করছ? মেমই তো বিয়ে করেছে… খুন তো আর করে নি…”
উপস্থিত আর সবার মধ্যে একমাত্র এই মানুষটাই সম্ভবত রুদ্রনারায়ণের মুখোমুখি দাঁড়াবার, ওনার মুখের উপরে কথা বলার ক্ষমতা রাখেন… তাছাড়া আর কারুর পক্ষে এই ভাবে তাঁর কথার ওপরে কথা বলার হিম্মৎ নেই এতটুকুও…
রুষ্ট দৃষ্টিতে নিজের পত্নীর দিকে তাকান রুদ্রনারায়ণ… “খুন করে এলে আমি খুশিই হতাম গিন্নি… আমাদের বংশে খুন করাটা বড় কথা নয়… সেটা আমরা অজস্রবার আর অবলীলায় করে এসেছি এ যাবত কাল… কিন্তু তোমার মেজ ছেলে যেটা করেছে, সেটা আমাদের বংশের মুখে কলঙ্ক লেপন ছাড়া আর কিছু বলতে পারি না আমি…” উত্তেজনায় হাঁফায় প্রৌঢ়… হাতের লাঠিটাকে মাটির ওপরে ঠুকে শরীরটাকে সোজা করে রাখার চেষ্টা করেন… বার্ধক্য এখনও সেই ভাবে কামড় বসাতে পারেনি… এখনও সকাল বিকেল নিয়মিত ব্যায়াম চর্চার মধ্যে রেখে দিয়েছেন নিজেকে… এই বয়সে এসেও এখনও সোজা শিড়দাঁড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে তদরকি করেন মাঠের কাজ… আজও লাঠি হাতে নিলে দশটা লেঠেলের মহড়া নিতে পারেন অবলিলায়…
কথা বলতে বলতে দৃষ্টি বুলিয়ে নেন ঘরের উপস্থিত আর সবার মুখের ওপরে… সরযূদেবী ছাড়া প্রত্যেকেই তখনও মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে রয়েছে… রুদ্রনারায়ণের সন্মুখে কিছু বলা মানে হাঁড়ি কাঠে মাথা দেওয়া, সেটা ভালো করেই জানে সবাই…
তাই চুপ চাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকাই শ্রেয় মনে করে উপস্থিত সকলে… রুদ্রনারায়ণের জ্যেষ্ঠপুত্র, বিপ্রনারায়ণ, তার সহধর্মী কণকপ্রভা, কনিষ্ঠ পুত্র চন্দ্রনারায়ণ, কন্যা রত্নকান্তা, আর এ ছাড়া রুদ্রনারায়ণের দীর্ঘদিনের সঙ্গী, ওনার খাস লোক যদু… সরযূ দেবী ছাড়া প্রত্যেকের যদুকাকা…
বিপ্রনারায়ণের প্রতি রুদ্রনারায়ণএর আস্থা একটু বেশিই, কারণ আর ভাইদের মধ্যে সেই রাজা দর্পনারায়ণ বা অধুনা জমিদারি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া রুদ্রনারায়নের প্রভূত পরাক্রমের প্রকৃত উত্তসুরী বলা যেতে পারে… অন্য ভাইদের মত সে অত শিল্প টিল্প বা লেখা পড়া নিয়ে বোঝে না… সে জানে ব্যবসা কি ভাবে চালাতে হয়, কি ভাবে কঠিন হাতে রাজ্যপাট সামলাতে হয়… আর জানে কি ভাবে ভোগ করতে হয়… ঠিক তার বাপ ঠাকুরদাদার মতই… প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি উচ্চতা যুবক বিপ্রনারায়ণের… তারও বাপের মতই নিয়মিত ব্যায়াম করে মেদহীন পেটা শরীর… লাঠি চালানো আর বন্দুক ছোঁড়ায় সিদ্ধ হস্ত সে… আর সেই সাথে ভোগের লিপ্সা… যখনই নিজের গ্রামের জমিদার বাড়িতে যায় সে… রোজ তার নিত্যনতুন কোন সয্যা শঙ্গিনীর আবস্যতা পড়ে… তাঁর খাস লোক বিধুকে সেই ভার ন্যাস্ত করা রয়েছে… বিছানায় তাঁর কোন রকম রুচির সীমাবদ্ধতা নেই… এটার কোন রাখঢাকের প্রয়োজনও সে বোধ করে নি কখনও… কি বাইরের লোকের থেকে, কি নিজের স্ত্রী, কণকপ্রভার কাছ থেকে…
কিন্তু আজ সেই মানুষটাও মেজ ভাইয়ের এহেন আচরণে বাবামশায়ের মতই কিঞ্চিত বিষ্মিত… বিদেশে গিয়ে পঠন পাঠন শেষ করার বদলে এই রকম একজন বিদেশিনীকে নিয়ে সূর্যনারায়ণ দেশে ফিরছে, এটা কিছুতেই যেন সেও হজম করতে পারছে না … সত্যিই তো… তারও বাবামশায়ের মতই অভিমত যে তাদের বংশ মর্যদায় এই রকম আচরণ যেন কালিমা লিপ্ত করে দিয়েছে সূর্য… কিন্তু বাবামশায় যখন কথা বলছেন, তখন সেখানে নিজের কোন বক্তব্য রাখা সমূচিন মনে করে না সে, তাই সেও চুপ করেই থাকে, মনে মনে সূর্যের এ হেন কাজে সায় না দিলেও…
‘না, না… এই বংশে এটা মানা সম্ভব নয় কখনই… এটা মানা যায় না… দেশে কি মেয়েমানুষের অভাব পড়েছে? শেষে কিনা আমাদের বংশে ম্লেচ্ছ মেয়ে… বউ হয়ে?... অসম্ভব… আমি জীবিত থাকতে তা কখনই হতে দিতে পারি না… এটা আমাদের পূর্বপুরুষদের অপমানের সমান…’ মাথা নাড়াতে নাড়াতে আওড়াতে থাকেন প্রৌঢ়… সেই সাথে চলতে থাকে দৃঢ় পায়ের পদচালনা… ‘এই বাড়িতে স্থান হতে পারে না ওদের… নিজের ছেলে… তাই তাড়িয়ে তো দিতে পারি না… কিন্তু এই বাড়িতে আর সবার সাথে থাকা হবে না তার… ওরা এলে তাদের কে আমাদের গ্রামের খামার বাড়িতেই আশ্রয় নিতে হবে… এটাই আমার শেষ কথা…’
ঘরের মধ্যে উপস্থিত ব্যক্তিরা নির্বাক হয়ে শুধু শুনে যায়… একমাত্র সরযূ দেবী কথা কাটেন রুদ্রনারায়ণের… “আচ্ছা, ছেলেটা এতদিন পর বাড়ি ফিরছে… সেখানে তোমার এত রাগ কিসের শুনি… আগে তাকে আসতে দাও… তারপর না হয় একটা কিছু উপায় বের করা যাবে’খন… তারও তো বিয়ের বয়েস হয়েছে… না হয় মেমই বিয়ে করতে চেয়েছে… তার বেশি তো কিছু নয়…” স্বামীর ওপরে একটু এবার ঝাঁঝিয়েই ওঠেন বৃদ্ধা… একটু জোরে না বলে উঠলে ওনার যে রাগ কমবে না, সেটা ভালো করেই জানেন তিনি…
স্ত্রীর কথার জোরে একটু দমে যান রুদ্রনারায়ণ… যতই হোক, বয়সটা যে হয়েছে, সেটা মনে মনে তিনিও মানেন, আর কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ি এসে পৌছাবার কথা… চিঠিতে সূর্য জানিয়েছে যে সে দেশে ফিরছে… এই অবধি সব ঠিক ছিল… কিন্তু চিঠির শেষটাতে যে কথা লিখে সমাপ্তি টেনেছে, সেটাতেই যেন আগুন জ্বলে গিয়েছে চৌধূরী পরিবারে… এক বিদেশিনির পাণিপ্রার্থি সে… আর তাকে নিয়েই সে ফিরছে দেশে… ফের মাথার মধ্যে কথাটা ফিরে আসতেই যেন আবার নতুন করে জ্বলে ওঠেন… “তাই বলে ম্লেচ্ছ? এই পরিবারে? কক্ষনও নয়… আমি অন্তত সেটা মেনে নিতে পারবো না… এই তোমায় বলে দিলাম…” বলতে বলতে লাঠি ঠুকে দৃপ্ত পায়ে বেরিয়ে যান ঘরের থেকে…
ঘরের বাকিরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় তাদের জননীর পানে… সরযূদেবী হাত তুলে আসস্থ করেন… ইশারায় চুপ থাকতে বলেন তাদের… তিনি জানেন এ বংশের ছেলেদের কোন মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করাতে কোন দোষের নেই… সেটাই দস্তুর… খুবই স্বাভাবিক ঘটনা… কিন্তু তাই বলে জীবন সঙ্গীনি? সেটাই যে সব থেকে আপত্তিকর এই পরিবারের কাছে… এই বংশের কাছে… ব্যাপারটা যে তাঁকেই সামলাতে হবে… সেটা তিনি ভালো করেই বুঝে গেছেন…
বংশমর্যাদায় নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে বলি দেবার ঘটনা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা রত্নকান্তাও নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছে… আজকে বাবামশাইয়ের এই ক্ষোভ, বিরক্তি আর অহমিকার সংমিশ্রণের উদ্গিরণকে অনুভব করার মত মনের অবস্থা তার থেকে আর কার বেশি হতে পারে? একটা মুখ ভেসে ওঠে রত্নকান্তার মনের মণিকোঠায়… ফায়েদ্… পরক্ষনেই প্রায় জোর করে প্রকট হতে থাকা ওই আবছা মুখের ছবিটাকে সরিয়ে দেয় সে মন থেকে… বুকচাপা দীর্ঘশ্বাসটা সকলের অলক্ষে যেন মিশে যায় ঘরের পরিবেশে…
এর মধ্যেই দেউরি পেরিয়ে গাড়ি ঢোকার শব্দে সচকিত হয়ে ওঠে ঘরে উপস্থিত সকলে… বিপ্রনারায়ণও বিনা বাক্যব্যয় কাছের একটি চেয়ারে গিয়ে চুপ করে বসে পড়ে পায়ের ওপরে পা তুলে… সকলে অপেক্ষা করতে থাকে মনের মধ্যে একরাশ সঙ্কা আর প্রশ্ন নিয়ে…
এতদিন পর বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরছে, অন্য দিন হলে সারা বাড়িতে একটা উৎসবের আয়োজনের ধূম পড়ে যেত হয়ত… কিন্তু আজকে সব কিছুই কেমন নিষ্প্রভ… সবার মুখে কলুপ আঁটা… কারুর যেন কোন উৎসাহই নেই… যে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, সে সেখানে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করতে থাকে… শুধু সব জোড়া চোখ আটকে থাকে সদর দরজার দিকে… কানে আসে গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ…
.
.
.
বৈঠকখানায় প্রথমে প্রবেশ করে বাড়ির পরিচারকরা… ঢাউস ঢাউস ব্যাগ বয়ে নিয়ে… ঘরের মধ্যে বিপ্রনারায়ণকে বসে থাকে দেখতে একটু তথষ্ট হয়ে ওঠে তারা… সসন্মানে মাথা ঝুঁকিয়ে অভিবাদন করে… তারপর সেই জড়োসড়ো মনোভাব নিয়েই ব্যাগগুলো সমেত ঢুকে যায় বাড়ির ভেতরে…
ধীর পায়ে এবারে ঢোকে সূর্যনারায়ণ… মুখে মার্জিত স্মিত হাসি… আর তার সাথে ঘরের মধ্যে পা রাখে সূর্যর বাহু এক হাতে ধরে থাকা অলিভীয়া…
সূর্যকে দেখেও কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না বিপ্রনারায়ণ… বাবামশাইয়ের মনভাবের যেন প্রতিফলন ঘটনার জন্যই বসে রয়েছে সে… ভাবটা এমন করে উপস্থাপনা করার চেষ্টায় থাকে… বাবামশাইয়ের অসন্তুষ্টি যে তারও অসন্তুষ্টি সেটাই প্রকাশ করার চেষ্টায় থাকে বিপ্রনারায়ণ… কিন্তু সূর্যের পাশে অলিভীয়ার উপস্থিতি যেন তার সমস্ত কিছু এলোমেলো করে দিয়ে যায়… ঘরের মধ্যে বাকিদের উপস্থিতি বিস্মৃত হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেও অন্যান্যদের মত… তাঁর সন্মুখে দাড়িয়ে থাকা অলিভীয়ার অপরূপ সৌন্দর্য আর শরীর সুধায় মহিত হয়ে যায় বিপ্রনারায়ণ…
স্থান কাল পাত্র ভুলে ড্যাবড্যাবে চোখে তাকিয়ে থাকে সে অলিভীয়ার দিকে… অলিভীয়ার রূপে ধাঁধিয়ে যায় চোখ… ভাবতে পারেনি সে অলিভীয়াকে এতটা সুন্দরী দেখতে হবে বলে… ভেবেছিল হয়তো ফ্যাট ফ্যাটে ফর্সা মেমদের মতই কেউ একজন… কিন্তু অলিভীয়ার রূপে যেন চোখে ঝলসে যাবার যোগাড় হয় তার… সু-দীর্ঘাঙ্গি… টিকালো নাক… বাঁকা চাঁদের মত ভ্রু জোড়া… গভীর নীল চোখ… পাতলা লালচে ঠোঁট… দৃঢ় চিবুক… মরাল গ্রিবাদেশ… অপূর্ব শরীরি বিস্তার… মিহি সুতির কাপড়ে তৈরী হাল্কা হলুদ রঙা ফ্রকের মত একটি জামা পরনে … অলিভীয়ার ত্বকের শুভ্রতাকে যেন আরো উজ্জল করে তুলেছে ওই হাল্কা হলুদ রঙ… জামার গলার কাছটায় বেশ খানিকটা গোল করে কাটা… আঁটসাঁট বক্ষবন্ধনীর চাপে দুটো বৃত্তাকার গোলক দুই পাশ থেকে চাপ খেয়ে যেন খানিকটা উথলিয়ে উঠেছে উপর পানে… বুকের ওপরে একটা গভীর বিভাজিকা, যার খানিকটার দৃশ্যমান্যতা ধরা পড়ে ফ্রকের ওপর দিয়ে… ভরাট বুকের পরেই একটা তিক্ষ্ণ ঢাল… স্বল্প মেদের সুগোল তলপেট বেয়ে স্বয়ংচলে যেন চোখ পিছলে নেমে যায় নীচের দিকে… যেখানে দেহের দুপাশ থেকে চাপ খেয়ে ফের স্ফিত হয়ে উঠেছে উরুদেশ… ফ্রকের আড়ালে থাকা নিটোল ভরাট দুটো উরুর উপস্থিতি বিপ্রনারায়ণের অভিজ্ঞ দৃষ্টি এড়ায় না… সেই সাথে দন্ডায়মান অলিভীয়ার পেছন থেকে খোলা দরজা দিয়ে আসা আলো পড়ে একটা অস্পষ্ট আভাস তৈরী করেছে তার দুই উরুর অসচ্ছ প্রতিচ্ছবির… সামনে থেকে নিতম্বের পরিমাপ না দেখতে পেলেও, অনুমান করতে এতটুকুও অসুবিধা হয় না বিপ্রনারায়ণের, সেই লোভনীয় নিতম্বের ব্যাপ্তির বা আয়তনের… চোখ গিয়ে আটকে যায় সুডৌল পায়ের গোছের ওপরে… ফ্রকের হেমের নীচ থেকে বেরিয়ে আসা দুটো সুডৌল ফর্সা পায়ের গোছ যেন একটা দুর্নির্বার আকর্ষণ তৈরী করে তুলেছে… পায়ের গোছ দেখে বিপ্রনারায়ণের বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না অলিভীয়ার শরীরের কামুকতার মাত্রার… পরণের পোষাকে কেউ বলবে না যে মেয়েটি কোন রূপ উত্তেজক কিছু পরে রয়েছে… তার পোষাক আষাকে কোন প্রলোভনিয়তার লেশ মাত্র নেই… কিন্তু তবুও… অলিভীয়ার পুরো শরীরটাই এতটাই আকর্ষণীয়, যে ওই সামান্য একটা হাঁটু ঝুল ফ্রকেই যেন তাকে ভিষনভাবে মোহিনী করে তুলেছে… প্রস্ফুটিত করে তুলেছে শরীরের প্রতিটা বাঁক, চড়াই উৎরাই…
বিপ্রনারায়ণের মুখের কথা যেন খনিকের জন্য সত্যিই হারিয়ে গিয়েছে… মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অপলক তার হবু ভাতৃবধূর পানে… সে দৃষ্টিতে যত না মুগ্ধতা থাকে, তার থেকে দ্বিগুণ একরাশ কামনা… কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে দেয় না সবার সন্মুখে এই মুহুর্তে… বিশেষ করে সন্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা অলিভীয়ার কাছে… শুধু একবার পাশে দাঁড়ানো কণকপ্রভার দিকে চকিতে দৃষ্টি হানে … দুজনের চোখে চোখে যেন কোন কথা চালাচালি হয়ে যায় সবার অলক্ষ্যে, নির্বাকে…
সূর্য অলিভীয়ার পীঠের ওপরে হাত রেখে ইশারায় সরযূদেবীর দিকে নির্দেশ করে… চাপা গলায় ইংরাজিতে বলে ওঠে, “দেয়ার… শি ইজ মাই মাদার… গো আন্ড গিভ রেস্পেক্ট টু হার… অ্যাজ আই হ্যাভ শোন ইয়ু… প্রণাম… ইউ রেমেম্বার ইট, না?”
সূর্যের কথায় মাথা নাড়ে অলিভীয়া… “ইয়েস ইয়েস… আই ডু… আই মাস্ট…” বলে অন্য হাতে ধরা ছোট ব্যাগটা সূর্যের হাতে তুলে দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে যায় সে বিপ্রনারায়ণের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা সরযূ দেবীর দিকে… সামনে পৌছে মাথা ঝুঁকিয়ে পা ছোঁয় তাঁর… ঠিক যেমনটা সূর্য তাকে করতে শিখিয়ে দিয়েছিল এখানে আসার আগে… পা ছুঁয়ে বড়োদের প্রণাম করাটাই এ দেশের রীতি বলে জেনে এসেছে এখানে আসার আগে সূর্যের কাছ থেকে অলিভীয়া… আর সূর্যের দেশের রীতি মানে তারও রীতিই এখন থেকে…
সামনে ঝুঁকতেই চেয়ারে বসে থাকা বিপ্রনারায়ণের শ্যেণ দৃষ্টিতে ধরা পড়ে অলিভীয়ার পরণের ফ্রকের আড়ালে ঢাকা গোলাকৃত নিতম্বদলের… যার অবয়ব এতক্ষনে সম্পুর্ণরূপে দৃশ্যমণ্য তার আকার নিয়ে ফ্রকের টান হয়ে থাকা কাপড়ের ওপর দিয়ে ফলে… শুধু তাইই নয়… একটা হাল্কা রেখা নিতম্বের দুই পাশ থেকে বেয়ে হারিয়ে গিয়েছে খানিকটা নীচের দিকে নামার সাথে সাথে… ওটা যে অলিভীয়ার পরণের প্যান্টির হেমরেখা, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না অভিজ্ঞ বিপ্রনারায়ণের চোখে… আরো একবার ফিরে তাকায় স্ত্রীয়ের দিকে… চোখে চোখ মেলে দুজনের…
“থাক, থাক মা… ওই ভাবে ঝুঁকে প্রনাম করতে হবে না তোমায়…” বলতে বলতে হাত তুলে অলিভীয়ার চিবুক ছোয়ান সরযূদেবী… তারপর নিজের ঠোঁটে হাত নিয়ে চুমু খান… চোখের সামনে এসে দাঁড়ানো অলিভীয়ার রূপের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যান তিনি… “বেঁচে থাকো মা… বেঁচে থাকো… সুখে শান্তিতে সংসার কর তুমি…” প্রসন্ন মুখে আশির্বাদ করেন নিজের হবু বৌমাকে… “দেখ তো কান্ড… এত সুন্দর মেয়েটা… আর তাকেই কিনা কর্তার পছন্দ নয়?” তারপর অলিভীয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, “তুমি একদম এই সব নিয়ে ভেবো না কিছু… আমি বলছি তোমায়… তুমিই এই বাড়ির মেজ বউই হবে, তোমার মত লক্ষ্মীমন্ত বউ কি আমি ফেরাতে পারি মা?”
ভারতে আসার আগে সূর্য তাকে কিছু কিছু বাংলা শিখিয়ে নিয়ে এসেছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা এতটাও নয় যে সরযূদেবীর গড়গড় করে বলে যাওয়া কথাগুলো সবটা সে বুঝতে পারবে… তাও, ওনার হাসি ভরা উজ্জল মুখ দেখে এটা সে বুঝতে পারে যে, ভদ্রমহিলা তাকে এই পরিবারের বধূ হিসাবে গ্রহণ করেছেন, স্বীকৃতি দিয়েছেন তাকে এই পরিবারের পরিজন হিসাবে… মুখ ফিরিয়ে সূর্যের পানে একবার তাকায় সে… দূর থেকে সূর্য তার দিকে তাকিয়ে ইতিবাচক ঘাড় নাড়ে… চোখের ইশারায় তাকে আস্বস্থ করে… সূর্যের ইশারা বুঝে খুশিতে উজ্জল হয়ে ওঠে অলিভীয়ার মুখ…
কিন্তু সেটা সম্ভবতঃ ক্ষনিকের জন্য… কারণ তারপরেই চমকে ওঠে সে একটা জলদগম্ভীর কন্ঠস্বরে… “কে দিয়েছে একে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে?” এই ভাবে রুদ্রনারায়ণ ফের ঘুরে আসবেন, সেটা বোধহয় কেউ আশা করেনি… তার তখনকার প্রস্থানে ঘরের পরিবেশটা যেটুকু স্বাভাবিক হয়েছিল, আবার যেন সকলের মুখে আগের চাপা উত্তেজনাটা ফিরে এলো… প্রত্যেকে ততষ্ঠ হয়ে উঠল তৎক্ষনাৎ… চেয়ার থেকে তড়িতে উঠে দাঁড়ায় বিপ্রনারায়ণ… সচকিত হয়ে খানিকটা পিছিয়ে যায় কিশোর চন্দ্রনারায়ণ আর রত্নকান্তা দুজনেই, সভয়ে… এবার কি ঘটতে চলেছে তার শঙ্কায়…
“এই ভাবে তুমি কাকে কি বলছ?” কর্তার কথার খুব একটা আমল না দিয়ে পাশ থেকে প্রতিবাদ করে ওঠেন সরযূদেবী… “ও আমার ছেলের বউ হতে চলেছে… তার সাথে এই ভাবে কেউ কথা বলে? ও কি তোমার গ্রামের প্রজা?”
“মানি না আমি এই ম্লেচ্ছ মেয়েমানুষকে আমার ছেলের বউ বলে…” গর্জে ওঠেন রুদ্রনারায়ণ… প্রচন্ড ক্ষোভে ততক্ষনে লাল হয়ে উঠেছে ফর্সা মুখ… একটু আগে এরা আসবে তিনি জানতেন, কিন্তু এখন চোখের সন্মুখে অলিভীয়াকে দেখে যেন ক্রোধে কেউ ঘৃতাহুতি দিয়েছে বলে মনে হয়… রাগে থমথমে হয়ে ওঠে মুখ… “আর তা ছাড়া পোষাক দেখেছ? ঘরের বউএর পোষাকের এই ছিরি? অর্ধউলঙ্গ মেয়েছেলে কোথাকার…” গর্জাতে থাকেন রুদ্রনারায়ণ…
“বাবামশাই… আপনি এই ভাবে ওর সাথে কথা বলতে পারেন না…” এবার প্রতিবাদ করে ওঠে সূর্য…
কিন্তু চকিতে সে প্রতিবাদ নসাৎ করে দেন রুদ্রনারায়ণ… “থামাও তোমার কথা… লজ্জা করছে না আমার সামনে দাঁড়িয়ে এই কান্ড ঘটানোর পর কথা বলতে? তোমায় আমার নিজের ছেলে বলেই তো মনে করতে ঘৃণা হচ্ছে…” গম গম করে ওঠে ঘরের মধ্যেটা রুদ্রনারায়ণের গলার আওয়াজে…
এতক্ষণ একটাও কোন কথা বলে নি অলিভীয়া… বুঝতে অসুবিধা হয় না তার, যে তাকে কেন্দ্র করেই রুদ্রনারায়ণের ক্ষোভের উদ্গিরণ… তাই ইশারায় হাত তুলে চুপ থাকতে বলে সূর্যকে… তারপর ধীর কিন্তু দৃপ্ত পায়ে হেঁটে গিয়ে দাঁড়ায় রুদ্রনারায়ণের সন্মুখে… কর জোরে… তারপর গলা নামিয়ে সসম্ভ্রমে বলে সে, “আমি জানে যে টুমি আমাকে লাইক করছে না… কিন্তু আমি সত্যিই টোমার এই ফ্যামিলিতে বঊ হয়ে থাকতে চায়… আমি টোমাদের সবটুকু রেসপেক্ট দেবে… শুধু একবার, জাস্ট ওয়ান্স আমাকে টোমার বিসসাসটা ডাও… আই ওন্ট ডিস্আপয়েন্ট ইয়ু…”
অলিভীয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য পানে তাকায় রুদ্রনারায়ণ… যেন ঘৃণায় মুখটাও দেখতে তাঁর ইচ্ছা করে না অলিভীয়ার… “আমি যেটা বলার সেটা বলে দিয়েছি… তোমায় এই পরিবারে কেউ গ্রহণ করবে না… দূর হয়ে যাও এখান থেকে…”
“কিন্তু আমি কোতায় যাবে? টুমি বলো… আমি তো কিছু চেনে না এখানে… যদি টুমি না আমায় মেনে নাও… তাহলে আমার তো যাবার কোনো জায়গা নেই… প্লিজ বাবা… প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড… আই রিয়েলি লাভ ইয়োর সন্…”
অলিভীয়ার কথায় যেন আরো ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে রুদ্রনারায়ণ… “চোওওওপ… একদম চুপ করে থাকো… লজ্জা করছে না আমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে? এত সাহস কে দিয়েছে তোমায়?” গর্জন করে ওঠেন বৃদ্ধ…
“বাট… বাট… দিস ইজ ট্রু… হোয়েদার ইয়ু আক্সেট অর নট… আই রেয়েলি লাভ ইয়োর সন্… আন্ড আই ওয়ান্ট টু ম্যারি হিম… আমি তাকে বিয়া করতে চায়… বিসাস করো… আমি ভালোবাসে তোমার ছেলেকে… আমি বাড়ির সবাইকে ছেড়ে এখানে থাকতে চলে এসেছে…” রুদ্রনারায়ণকে আবার বোঝাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে অলিভীয়া… কারণ সে বুঝে গিয়েছে, এই ব্যক্তিটিই পরিবারের মূল স্তম্ভ, এনাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে বাকিরা তাকে মেনে নেবে…
“আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না… দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে… বেরিয়ে যাও বাড়ি থেকে… যেখানে খুশি যেতে পারো তুমি… তবে এই বাড়িতে তোমার কোন স্থান নেই… তাতে যদি আমার ছেলেকে ত্যাজ্য করতে হয়, তাতেও আমি পিছুপা হব না…” ফের গর্জন করে ওঠেন রুদ্রনারায়ণ…
পাশ থেকে রুদ্রনারায়নের সমর্থনে বিপ্রনারায়ণ বলে ওঠে, “বাবামশাই তো ঠিকই বলছেন… তুমি আর কথা বাড়িও না… এবার এসো… যেখান থেকে এসেছিলে, সেখানেই ফিরে যাও… তোমার ফেরার ভাড়ার চিন্তা করোনা… আমরাই তোমার ফেরার ব্যবস্থা করে দেবো…”
“এটা তুমি কি বলছ দাদা…” প্রতিবাদ করে ওঠে সূর্যনারায়ণ… বাড়ির কেউই বাবার মুখের ওপরে কথা বলার সাহস করে না ঠিকই, কিন্তু সেও ভাবতে পারেনি যে দাদা, বাবার সুরে সুর মিলিয়ে তার হবু স্ত্রীকে এই ভাবে বলতে পারে বলে… “তুমি…”
“দাঁড়াও সূর্য…” হাত তুলে থামায় সরযূদেবী, সূর্যনারায়ণের কথার মধ্যেই… তারপর বড় ছেলের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে ওঠে, “বড়রা যখন কথা বলে, তখন তুমি তার মধ্যে কথা বলো কি হিসাবে?” বিপ্রনারায়ণের এ হেন আচরণে তিনি যে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাতে তার কথায় প্রকাশ পায়…
“না মানে, বাবামশাই যেহেতু…” মায়ের বক্তব্যের মিনমিনে প্রতিবাদ করতে যায় বিপ্রনারায়ণ… হাত তুলে তাকে থামিয়ে দেয় সরযূদেবী… তারপর নিজের স্বামীর দিকে ফিরে বলে ওঠেন তিনি, “শোনো… আমি তোমার কোন কথার ওপরে কথা কখনও বলি নি… কিন্তু আজ আমি এই মেয়েকে আমার ছেলের বউ হিসাবে আশির্বাদ করেছি… তাই এর পরে আর সে এই পরিবার ছেড়ে যেতে পারে না… আমি থাকতে তো নয়ই… একে আমার সূর্যের বঊ বলেই আমি মেনেছি… সে তাইই থাকবে… আমার মুখ থেকে যখন একবার বেরিয়ে গিয়েছে, তখন এটাই আমার শেষ কথা…”
ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে নিজের সহধর্মীর দিকে একবার তাকায় বৃদ্ধ… তারপর হাতের লাঠির ওপরে ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে ওঠেন… “বেশ… কিন্তু এটাও ওদেরকে বলে দাও, তোমার ছেলের বউ হলেও, এই বাড়িতে তাদের জায়গা হবে না… আমার চোখের সন্মুখে যেন তারা না থাকে… ওদের কে গ্রামের বাড়িতে গিয়েই থাকতে হবে… তাতে যদি তারা রাজি থাকে, তাহলে আমার কিছু বলার নেই…” বলে আর দাঁড়ান না রুদ্রনারায়ণ… বৈঠকখানা থেকে বেরিয়ে যান বাড়ির অন্দরের দিকে…
অলিভীয়ার কাছে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরেন সরযূদেবী… “আর চিন্তা নেই মা… তোমায় কেউ এই পরিবার থেকে আলাদা করতে পারবে না… আমি তো রয়েছি… শুধু ক’টা দিন একটু গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকবে… তারপর আমি কত্তাকে মানিয়ে নিয়ে তোমায় আবার এখানেই ফিরিয়ে আনবো… আসলে বোঝই তো, আগের দিনের মানুষ তো… তাই মেনে নিতে একটু অসুবিধা হচ্ছে… তবে তোমার মত একট মিষ্টি মেয়েকে কে বেশি দিন দূরে সরিয়ে রাখতে পারে? হু? দেখবে… কিছুদিন পর, এই মানুষটাই তোমায় স্নেহ মমতা দিয়ে মাথায় করে রাখবে…” বলতে বলতে সস্নেহে হাত ছোঁয়ান অলিভীয়ার চিবুকে…
পুরো কথা বুঝতে না পারলেও এটা বুঝতে অসুবিধা নয় না অলিভীয়ার যে সূর্যের মা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন, এবং সূর্যের পিতার বিরোধীতা করে তাকে এই পরিবারের পুত্রবধূর সন্মান এনে দিয়েছেন… কৃতজ্ঞতায় চোখ ভিজে ওঠে অলভীয়ার… সরযূদেবীকে জড়িয়ে ধরে সে আনন্দে…
“ওরে পাগলী মেয়ে, ছাড় ছাড়… এখন তোর সামনে অনেকটা পথ বাকি… আগে নিজে বউ হয়ে এই বাড়িতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা কর… তারপর একটু একটু করে নিজের শ্বশুরের মন জয় করে নিবি’খন…” হাসতে হাসতে বলেন সরযূদেবী… হাত বোলান অলিভীয়ার পীঠের ওপরে…
ঘরের পরিবেশ একটু হাল্কা হয়ে উঠতে উপস্থিত সবাই যেন হাঁফ ছাড়ে… এগিয়ে আসে রত্নকান্তা… এসে অলিভীয়ার কাঁধের ওপরে হাত রাখে… পরিষ্কার ইংরাজীতে বলে ওঠে সে, ‘আই অ্যাাম রত্নকান্তা… সূর্যস্ সিস্টার…”
রত্নকান্তার কথায় সরযূদেবীকে ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ায় অলিভীয়া… চোখের জল মুছে হাসি মুখে তাকায় তার পানে… “ইয়া… আই নো… আই হ্যাভ সিন ইয়োর পিকচার… সূর্য হ্যাড টোল্ড মী দ্যাট হি হ্যাজ আ বিউটিফুল সিস্টার… রটনকান্টা… মাই ননড…” বলে জড়িয়ে ধরে রত্নকান্তাকে বুকের মধ্যে… রত্নকান্তা হেসে ফেলে অলিভীয়ার উচ্চারণে… অলিভীয়ার আলিঙ্গন ছেড়ে যোগ করে, ‘তুমিও তো খুব মিষ্টি মেয়ে গো…’
রন্তকান্তার কথায় বড় বড় চোখে তাকায় অলিভীয়া… ‘আমি জানে… মিসটি মানে সুইট… আমাকে টোমার সুইট লাগে? সট্টিই?’
এবার রত্নকান্তা নিজেই অলিভীয়াকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে… হেসে বলে, ‘হ্যা গো হ্যা… সত্যিই বলছি… তোমাকে সত্যিই ভিষন মিষ্টি দেখতে…’
‘না না… এটা তো ভালো কথা নয়…’ ভীত মুখ করে তাকায় সূর্যনারায়ণের পানে… বলে, ‘সূর্য, আমি যদি সুইট হয়, তাহলে তো এরা আমাকে সনডেশ ভেবে খায়ে ফেলবে… দেন? হোয়াট উইল হ্যাপেন?’
অলিভীয়ার কথায় ঘরের মধ্যে হাসির রোল ওঠে… আগের সেই আবহাওয়াই নিমেশে যেন কেটে যায় এক লহমায়… শুধু বিপ্রনারায়ণ একভাবে দাঁড়িয়ে আপাদমস্তক মেপে নিতে থাকে অলিভীয়াকে… বর্তুল বুকের ওপরে চোখ দুটো বুলিয়ে নিতে নিতে মনে মনে বলে ওঠে সে… ‘আজ যদি সূর্যের ভাবি স্ত্রী না হতে, তাহলে এতক্ষনে সত্যি সত্যিই খেয়ে ফেলতাম আমি তোমায়…’
তাদের কথার মধ্যে সরযূদেবী ঘর থেকে প্রস্থান করেন… হয়তো এবার তিনি তাঁর স্বামীর মানভঞ্জনের তাগিদে এগিয়ে যান ঘরের দিকে…
মায়ের কাছ থেকে বকুনি খাবার পর থেকে আর একটাও কথা বলে নি বিপ্রনারায়ণ… ওনারা বেরিয়ে যেতে ফের চেয়ারে বসে পড়ে সে… গম্ভীর মুখে… রুদ্রনারায়ণের মত সেও এই সম্পর্কটা মেনে নিতে পারেনি… মেম নিয়ে ফুর্তি করা আর তাকে বিয়ে করে পরিবারে নিয়ে আসা, দুটো তার কাছে এক ব্যাপার কখনই নয়… তাই মা মেনে নিলেও, সেও তার পিতার মতই একটু ক্ষুব্ধই রয়ে যায়… কিন্তু মায়ের মুখের ওপরে কথা বলার অধিকার নেই বলেই চুপ থাকতে খানিকটা বাধ্যই হয়…
ইতিমধ্যে রত্নকান্তার বাহুলগ্ন ছেড়ে তাকায় অলিভীয়া, সূর্যেরও মনে হয় পরিবারের বাকিদের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেওয়াটা উচিত… তাই অলিভীয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে ওঠে সে, ‘অলিভীয়া… হি ইজ মাই এল্ডার ব্রাদার…’ হাত তুলে বিপ্রনারায়ণের পানে ইশারা করে পরিচয় করাতে উদ্যত হয় সূর্য… কিন্তু তাকে কথার মাঝপথেই থামিয়ে দেয় অলিভীয়া… এতক্ষনে অনেকটাই নিজেকে সামলে নিয়েছে সে, তাই তাড়াতাড়ি ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলে ওঠে সে… ‘আমি জানে… আমি ছবিতে দেখেছে… ইনি বিপরোনাড়ায়ন আছে… রাইট? আই অ্যাাম নট রং… টাই না?’
তার এ হেন বাংলায় বিপ্রনারায়ণ এর উচ্চারণের অবস্থা শুনে ঘরের মধ্যে উপস্থিত সকলেই ফের চাপা স্বরে হেসে ওঠে… ভালো লাগে তাদের অলিভীয়ার নিজেকে এই ভাবে মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায়… কিন্তু পরক্ষনেই তাদের সেই খুশি যেন কর্পূরের মত উবে যায় অলিভীয়ার পরবর্তী পদক্ষেপে… কেউ কিছু বোঝার আগেই চকিত পায়ে রত্নকান্তা কাছ ছেড়ে এগিয়ে যায় চেয়ার উপবিষ্ট বিপ্রনারায়নের দিকে… তারপর সকলকে একেবারে হতবাক করে দিয়ে ঝুঁকে জড়িয়ে ধরে সে বলে ওঠে… ‘হাই ডাডা… হাউ ডু ইয়ু ডু…’
হতচকিত শুধু ঘরের মধ্যে উপস্থিত মানুষই নয়… হতচকিত হয়ে পড়েন বিপ্রনারায়ণ নিজেও… দূর থেকে অলিভীয়ার সৌন্দর্য সূধা পান করা এক কথা, আর নিজের শরীরের সাথে অলিভীয়ার নব্য যৌবনা নমনীয়, মোলায়ম, নরম দেহের স্পর্শে ক্ষনিকের জন্য বাক্যহারা হয়ে যায় সে… নারী শরীর তার কাছে নতুন কিছু নয়… এই জীবনে বহু নারী ভোগ করা হয়ে গিয়েছে তার… কিন্তু তাও, খানিক আগের এত কিছু ঘটনার পরে, সেই অলিভীয়ারই নরম স্তনের সংস্পর্শ তার বাহুতে, এটা একেবারেই প্রত্যাশা করে নি সে… বক্ষবন্ধনীর মধ্যে আবদ্ধ থাকলেও, স্তনের জমাট কোমলতায় বিহ্বল সে ততক্ষনে… এই পরিস্থিতিতে সবার সামনে কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না … পরনের ধূতির নীচে কামদন্ডে অনুভব করে চকিত শিরশিরানী… অলিভীয়ার পরিপক্ক দেহ থেকে উঠে আসা মাতাল করা গন্ধ বিপ্রনারায়ণের দেহের প্রতিটি স্নায়ুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে যেন… আড় চোখে ঘরে উপস্থিত সকলের মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে অপ্রস্তুত বিপ্রনারায়ণ হালকা করে হাত রাখেন অলিভীয়ার পীঠের ওপরে… কোনমতে বলে ওঠে সে… ‘আচ্ছা, আচ্ছা… ঠিক আছে… ঠিক আছে…’
অস্বস্থি বিপ্রনারায়ণের… কিন্তু এটা অলিভীয়ার কাছে খুবই স্বাভাবিক একটা ভদ্রতার নিদর্শণ মাত্র… তাই বিপ্রনারায়ণকে ছেড়ে ফের সোজা হয়ে দাঁড়ায় সে… এগিয়ে যায় পাশেই দাঁড়ানো চন্দ্রনারায়ণের দিকে, তার সাথে পরিচিত হতে… কিশোর চন্দ্রনারায়নকে নিজের ভায়ের মত লাগে তার… বেশ মিষ্টি ভিরু ভিরু চোখের চন্দ্রনারায়ণ… অন্যান্য ভাইদের মত অত উধ্যত নয় সেটা এক পলক দেখলেই বোঝা যায়… কতই বা বয়স হবে তার… খুব বেশি হলে ১৬… সবে মাত্র যৌবনের প্রারম্ভে দাড়িয়ে রয়েছে… গালের চারপাশে আর গোঁফের কাছে কচি দাড়ির প্রলেপ… এগিয়ে গিয়ে পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরে তাকেও অলিভীয়া… বলে, “টুমি আমার ভাই… ছোট ভাই… কেমন? ইয়ু আর মাই সুইট ব্রাদার… আমার নিজের কোন ভাই নেই… ডাডা আছে… তাই তুমিই ভাই আমার…”
অস্বস্থি মাখা মুখে চুপ করে থাকে চন্দ্রনারায়ণ… এই পরিস্থিতিতে কি করা উচিত ঠিক বুঝে উঠতে পারে না সে… নব্য যৌবনের সন্ধিক্ষণে এই ভাবে একজন নারীর শরীরের পরশে প্রায় ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা তখন তার…
সূর্য খানিকটা ইতস্থত করে দাদাকে প্রশ্ন করে, আমি তাহলে ভেতরে গেলাম, কিন্তু অলিভীয়া কোথায়…’
পাশ থেকে কণক বলে ওঠে… ‘ওটা তোমায় ভাবতে হবে না ঠাকুরপো… তুমি যাও, আমি দেখছি অলিভীয়া কোথায় থাকবে, মা যখন অনুমতি দিয়ে গিয়েছেন, তখন তার থাকা নিয়ে তোমায় আর ভাবতে হবে না… তবে নিশ্চিন্তে থাকো, বিয়ে না হওয়া অবধি তোমার ঘরে প্রবেশ নিষেধ তার…’ বলতে বলতে হেঁসে ওঠে কণকপ্রভা… তার কথায় হাঁসে রত্নকান্তাও…
বৌদির কথায় লজ্জা পায় সূর্য… তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, ‘না, না, সে তো জানি… এখন থেকে ও তোমার দায়িত্বে রইল… আমার তো আর কোন চিন্তাই রইল না আর… আমি নিশ্চিন্ত…’
এতক্ষন দেওর বৌদির কথপোকথন শুনছিল অলিভীয়া… পুরোটা না হলেও, ওদের দুজনের অঙ্গবিক্ষেপে কিছুটা আন্দাজ করার চেষ্টা করে কথার বক্তব্য… সে বলে ওঠে… ‘হ্যা হ্যা… ইয়ু গো… নাউ আইলবী উইথ ডিডি ওনলি… তাই না ডিডি?’
‘হ্যা হ্যা… তাইই তো… এখন তুমি আমারই শুধু অলিভীয়া…’ বলতে বলতে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় স্বামীর পানে… চোখা চুখি হতে নিরবে সন্মতির ঘাড় নাড়ে বিপ্রনারায়ণ… কারন বিপ্রনারায়ণ জানে, এখন তার কোন কথারই কাজে আসবে না, যখন সরযূদেবী নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন… কণকও প্রসন্ন চিত্তে অলিভীয়াকে নিয়ে বাড়ির অন্দরের দিকে রওনা দেয়…
ক্রমশ
“কখন আসছে, সেই কুলাঙ্গারটা?” ফের একবার গম গম করে ওঠে ঘরের মধ্যেটা রুদ্রনারায়ণের ভরাট জলদ গম্ভীর কন্ঠস্বরে… কথাটা যদিও জ্যেষ্ঠ পুত্র বিপ্রনারায়ণের উদ্দেশ্যেই ছুড়ে দিয়েছিলেন রুদ্রনারায়ণ, কিন্তু পাশ থেকে রুদ্রনারায়ণের সহধর্মী, সরযূদেবী উত্তরটা দেন… “কেন? কি এমন করেছে আমার ছেলেটা যে এই ভাবে চিৎকার করছ? মেমই তো বিয়ে করেছে… খুন তো আর করে নি…”
উপস্থিত আর সবার মধ্যে একমাত্র এই মানুষটাই সম্ভবত রুদ্রনারায়ণের মুখোমুখি দাঁড়াবার, ওনার মুখের উপরে কথা বলার ক্ষমতা রাখেন… তাছাড়া আর কারুর পক্ষে এই ভাবে তাঁর কথার ওপরে কথা বলার হিম্মৎ নেই এতটুকুও…
রুষ্ট দৃষ্টিতে নিজের পত্নীর দিকে তাকান রুদ্রনারায়ণ… “খুন করে এলে আমি খুশিই হতাম গিন্নি… আমাদের বংশে খুন করাটা বড় কথা নয়… সেটা আমরা অজস্রবার আর অবলীলায় করে এসেছি এ যাবত কাল… কিন্তু তোমার মেজ ছেলে যেটা করেছে, সেটা আমাদের বংশের মুখে কলঙ্ক লেপন ছাড়া আর কিছু বলতে পারি না আমি…” উত্তেজনায় হাঁফায় প্রৌঢ়… হাতের লাঠিটাকে মাটির ওপরে ঠুকে শরীরটাকে সোজা করে রাখার চেষ্টা করেন… বার্ধক্য এখনও সেই ভাবে কামড় বসাতে পারেনি… এখনও সকাল বিকেল নিয়মিত ব্যায়াম চর্চার মধ্যে রেখে দিয়েছেন নিজেকে… এই বয়সে এসেও এখনও সোজা শিড়দাঁড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে তদরকি করেন মাঠের কাজ… আজও লাঠি হাতে নিলে দশটা লেঠেলের মহড়া নিতে পারেন অবলিলায়…
কথা বলতে বলতে দৃষ্টি বুলিয়ে নেন ঘরের উপস্থিত আর সবার মুখের ওপরে… সরযূদেবী ছাড়া প্রত্যেকেই তখনও মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে রয়েছে… রুদ্রনারায়ণের সন্মুখে কিছু বলা মানে হাঁড়ি কাঠে মাথা দেওয়া, সেটা ভালো করেই জানে সবাই…
তাই চুপ চাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকাই শ্রেয় মনে করে উপস্থিত সকলে… রুদ্রনারায়ণের জ্যেষ্ঠপুত্র, বিপ্রনারায়ণ, তার সহধর্মী কণকপ্রভা, কনিষ্ঠ পুত্র চন্দ্রনারায়ণ, কন্যা রত্নকান্তা, আর এ ছাড়া রুদ্রনারায়ণের দীর্ঘদিনের সঙ্গী, ওনার খাস লোক যদু… সরযূ দেবী ছাড়া প্রত্যেকের যদুকাকা…
বিপ্রনারায়ণের প্রতি রুদ্রনারায়ণএর আস্থা একটু বেশিই, কারণ আর ভাইদের মধ্যে সেই রাজা দর্পনারায়ণ বা অধুনা জমিদারি চালিয়ে নিয়ে যাওয়া রুদ্রনারায়নের প্রভূত পরাক্রমের প্রকৃত উত্তসুরী বলা যেতে পারে… অন্য ভাইদের মত সে অত শিল্প টিল্প বা লেখা পড়া নিয়ে বোঝে না… সে জানে ব্যবসা কি ভাবে চালাতে হয়, কি ভাবে কঠিন হাতে রাজ্যপাট সামলাতে হয়… আর জানে কি ভাবে ভোগ করতে হয়… ঠিক তার বাপ ঠাকুরদাদার মতই… প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি উচ্চতা যুবক বিপ্রনারায়ণের… তারও বাপের মতই নিয়মিত ব্যায়াম করে মেদহীন পেটা শরীর… লাঠি চালানো আর বন্দুক ছোঁড়ায় সিদ্ধ হস্ত সে… আর সেই সাথে ভোগের লিপ্সা… যখনই নিজের গ্রামের জমিদার বাড়িতে যায় সে… রোজ তার নিত্যনতুন কোন সয্যা শঙ্গিনীর আবস্যতা পড়ে… তাঁর খাস লোক বিধুকে সেই ভার ন্যাস্ত করা রয়েছে… বিছানায় তাঁর কোন রকম রুচির সীমাবদ্ধতা নেই… এটার কোন রাখঢাকের প্রয়োজনও সে বোধ করে নি কখনও… কি বাইরের লোকের থেকে, কি নিজের স্ত্রী, কণকপ্রভার কাছ থেকে…
কিন্তু আজ সেই মানুষটাও মেজ ভাইয়ের এহেন আচরণে বাবামশায়ের মতই কিঞ্চিত বিষ্মিত… বিদেশে গিয়ে পঠন পাঠন শেষ করার বদলে এই রকম একজন বিদেশিনীকে নিয়ে সূর্যনারায়ণ দেশে ফিরছে, এটা কিছুতেই যেন সেও হজম করতে পারছে না … সত্যিই তো… তারও বাবামশায়ের মতই অভিমত যে তাদের বংশ মর্যদায় এই রকম আচরণ যেন কালিমা লিপ্ত করে দিয়েছে সূর্য… কিন্তু বাবামশায় যখন কথা বলছেন, তখন সেখানে নিজের কোন বক্তব্য রাখা সমূচিন মনে করে না সে, তাই সেও চুপ করেই থাকে, মনে মনে সূর্যের এ হেন কাজে সায় না দিলেও…
‘না, না… এই বংশে এটা মানা সম্ভব নয় কখনই… এটা মানা যায় না… দেশে কি মেয়েমানুষের অভাব পড়েছে? শেষে কিনা আমাদের বংশে ম্লেচ্ছ মেয়ে… বউ হয়ে?... অসম্ভব… আমি জীবিত থাকতে তা কখনই হতে দিতে পারি না… এটা আমাদের পূর্বপুরুষদের অপমানের সমান…’ মাথা নাড়াতে নাড়াতে আওড়াতে থাকেন প্রৌঢ়… সেই সাথে চলতে থাকে দৃঢ় পায়ের পদচালনা… ‘এই বাড়িতে স্থান হতে পারে না ওদের… নিজের ছেলে… তাই তাড়িয়ে তো দিতে পারি না… কিন্তু এই বাড়িতে আর সবার সাথে থাকা হবে না তার… ওরা এলে তাদের কে আমাদের গ্রামের খামার বাড়িতেই আশ্রয় নিতে হবে… এটাই আমার শেষ কথা…’
ঘরের মধ্যে উপস্থিত ব্যক্তিরা নির্বাক হয়ে শুধু শুনে যায়… একমাত্র সরযূ দেবী কথা কাটেন রুদ্রনারায়ণের… “আচ্ছা, ছেলেটা এতদিন পর বাড়ি ফিরছে… সেখানে তোমার এত রাগ কিসের শুনি… আগে তাকে আসতে দাও… তারপর না হয় একটা কিছু উপায় বের করা যাবে’খন… তারও তো বিয়ের বয়েস হয়েছে… না হয় মেমই বিয়ে করতে চেয়েছে… তার বেশি তো কিছু নয়…” স্বামীর ওপরে একটু এবার ঝাঁঝিয়েই ওঠেন বৃদ্ধা… একটু জোরে না বলে উঠলে ওনার যে রাগ কমবে না, সেটা ভালো করেই জানেন তিনি…
স্ত্রীর কথার জোরে একটু দমে যান রুদ্রনারায়ণ… যতই হোক, বয়সটা যে হয়েছে, সেটা মনে মনে তিনিও মানেন, আর কিছুক্ষনের মধ্যেই গাড়ি এসে পৌছাবার কথা… চিঠিতে সূর্য জানিয়েছে যে সে দেশে ফিরছে… এই অবধি সব ঠিক ছিল… কিন্তু চিঠির শেষটাতে যে কথা লিখে সমাপ্তি টেনেছে, সেটাতেই যেন আগুন জ্বলে গিয়েছে চৌধূরী পরিবারে… এক বিদেশিনির পাণিপ্রার্থি সে… আর তাকে নিয়েই সে ফিরছে দেশে… ফের মাথার মধ্যে কথাটা ফিরে আসতেই যেন আবার নতুন করে জ্বলে ওঠেন… “তাই বলে ম্লেচ্ছ? এই পরিবারে? কক্ষনও নয়… আমি অন্তত সেটা মেনে নিতে পারবো না… এই তোমায় বলে দিলাম…” বলতে বলতে লাঠি ঠুকে দৃপ্ত পায়ে বেরিয়ে যান ঘরের থেকে…
ঘরের বাকিরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় তাদের জননীর পানে… সরযূদেবী হাত তুলে আসস্থ করেন… ইশারায় চুপ থাকতে বলেন তাদের… তিনি জানেন এ বংশের ছেলেদের কোন মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করাতে কোন দোষের নেই… সেটাই দস্তুর… খুবই স্বাভাবিক ঘটনা… কিন্তু তাই বলে জীবন সঙ্গীনি? সেটাই যে সব থেকে আপত্তিকর এই পরিবারের কাছে… এই বংশের কাছে… ব্যাপারটা যে তাঁকেই সামলাতে হবে… সেটা তিনি ভালো করেই বুঝে গেছেন…
বংশমর্যাদায় নিজের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে বলি দেবার ঘটনা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা রত্নকান্তাও নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছে… আজকে বাবামশাইয়ের এই ক্ষোভ, বিরক্তি আর অহমিকার সংমিশ্রণের উদ্গিরণকে অনুভব করার মত মনের অবস্থা তার থেকে আর কার বেশি হতে পারে? একটা মুখ ভেসে ওঠে রত্নকান্তার মনের মণিকোঠায়… ফায়েদ্… পরক্ষনেই প্রায় জোর করে প্রকট হতে থাকা ওই আবছা মুখের ছবিটাকে সরিয়ে দেয় সে মন থেকে… বুকচাপা দীর্ঘশ্বাসটা সকলের অলক্ষে যেন মিশে যায় ঘরের পরিবেশে…
এর মধ্যেই দেউরি পেরিয়ে গাড়ি ঢোকার শব্দে সচকিত হয়ে ওঠে ঘরে উপস্থিত সকলে… বিপ্রনারায়ণও বিনা বাক্যব্যয় কাছের একটি চেয়ারে গিয়ে চুপ করে বসে পড়ে পায়ের ওপরে পা তুলে… সকলে অপেক্ষা করতে থাকে মনের মধ্যে একরাশ সঙ্কা আর প্রশ্ন নিয়ে…
এতদিন পর বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরছে, অন্য দিন হলে সারা বাড়িতে একটা উৎসবের আয়োজনের ধূম পড়ে যেত হয়ত… কিন্তু আজকে সব কিছুই কেমন নিষ্প্রভ… সবার মুখে কলুপ আঁটা… কারুর যেন কোন উৎসাহই নেই… যে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, সে সেখানে দাঁড়িয়েই অপেক্ষা করতে থাকে… শুধু সব জোড়া চোখ আটকে থাকে সদর দরজার দিকে… কানে আসে গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ…
.
.
.
বৈঠকখানায় প্রথমে প্রবেশ করে বাড়ির পরিচারকরা… ঢাউস ঢাউস ব্যাগ বয়ে নিয়ে… ঘরের মধ্যে বিপ্রনারায়ণকে বসে থাকে দেখতে একটু তথষ্ট হয়ে ওঠে তারা… সসন্মানে মাথা ঝুঁকিয়ে অভিবাদন করে… তারপর সেই জড়োসড়ো মনোভাব নিয়েই ব্যাগগুলো সমেত ঢুকে যায় বাড়ির ভেতরে…
ধীর পায়ে এবারে ঢোকে সূর্যনারায়ণ… মুখে মার্জিত স্মিত হাসি… আর তার সাথে ঘরের মধ্যে পা রাখে সূর্যর বাহু এক হাতে ধরে থাকা অলিভীয়া…
সূর্যকে দেখেও কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না বিপ্রনারায়ণ… বাবামশাইয়ের মনভাবের যেন প্রতিফলন ঘটনার জন্যই বসে রয়েছে সে… ভাবটা এমন করে উপস্থাপনা করার চেষ্টায় থাকে… বাবামশাইয়ের অসন্তুষ্টি যে তারও অসন্তুষ্টি সেটাই প্রকাশ করার চেষ্টায় থাকে বিপ্রনারায়ণ… কিন্তু সূর্যের পাশে অলিভীয়ার উপস্থিতি যেন তার সমস্ত কিছু এলোমেলো করে দিয়ে যায়… ঘরের মধ্যে বাকিদের উপস্থিতি বিস্মৃত হয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেও অন্যান্যদের মত… তাঁর সন্মুখে দাড়িয়ে থাকা অলিভীয়ার অপরূপ সৌন্দর্য আর শরীর সুধায় মহিত হয়ে যায় বিপ্রনারায়ণ…
স্থান কাল পাত্র ভুলে ড্যাবড্যাবে চোখে তাকিয়ে থাকে সে অলিভীয়ার দিকে… অলিভীয়ার রূপে ধাঁধিয়ে যায় চোখ… ভাবতে পারেনি সে অলিভীয়াকে এতটা সুন্দরী দেখতে হবে বলে… ভেবেছিল হয়তো ফ্যাট ফ্যাটে ফর্সা মেমদের মতই কেউ একজন… কিন্তু অলিভীয়ার রূপে যেন চোখে ঝলসে যাবার যোগাড় হয় তার… সু-দীর্ঘাঙ্গি… টিকালো নাক… বাঁকা চাঁদের মত ভ্রু জোড়া… গভীর নীল চোখ… পাতলা লালচে ঠোঁট… দৃঢ় চিবুক… মরাল গ্রিবাদেশ… অপূর্ব শরীরি বিস্তার… মিহি সুতির কাপড়ে তৈরী হাল্কা হলুদ রঙা ফ্রকের মত একটি জামা পরনে … অলিভীয়ার ত্বকের শুভ্রতাকে যেন আরো উজ্জল করে তুলেছে ওই হাল্কা হলুদ রঙ… জামার গলার কাছটায় বেশ খানিকটা গোল করে কাটা… আঁটসাঁট বক্ষবন্ধনীর চাপে দুটো বৃত্তাকার গোলক দুই পাশ থেকে চাপ খেয়ে যেন খানিকটা উথলিয়ে উঠেছে উপর পানে… বুকের ওপরে একটা গভীর বিভাজিকা, যার খানিকটার দৃশ্যমান্যতা ধরা পড়ে ফ্রকের ওপর দিয়ে… ভরাট বুকের পরেই একটা তিক্ষ্ণ ঢাল… স্বল্প মেদের সুগোল তলপেট বেয়ে স্বয়ংচলে যেন চোখ পিছলে নেমে যায় নীচের দিকে… যেখানে দেহের দুপাশ থেকে চাপ খেয়ে ফের স্ফিত হয়ে উঠেছে উরুদেশ… ফ্রকের আড়ালে থাকা নিটোল ভরাট দুটো উরুর উপস্থিতি বিপ্রনারায়ণের অভিজ্ঞ দৃষ্টি এড়ায় না… সেই সাথে দন্ডায়মান অলিভীয়ার পেছন থেকে খোলা দরজা দিয়ে আসা আলো পড়ে একটা অস্পষ্ট আভাস তৈরী করেছে তার দুই উরুর অসচ্ছ প্রতিচ্ছবির… সামনে থেকে নিতম্বের পরিমাপ না দেখতে পেলেও, অনুমান করতে এতটুকুও অসুবিধা হয় না বিপ্রনারায়ণের, সেই লোভনীয় নিতম্বের ব্যাপ্তির বা আয়তনের… চোখ গিয়ে আটকে যায় সুডৌল পায়ের গোছের ওপরে… ফ্রকের হেমের নীচ থেকে বেরিয়ে আসা দুটো সুডৌল ফর্সা পায়ের গোছ যেন একটা দুর্নির্বার আকর্ষণ তৈরী করে তুলেছে… পায়ের গোছ দেখে বিপ্রনারায়ণের বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না অলিভীয়ার শরীরের কামুকতার মাত্রার… পরণের পোষাকে কেউ বলবে না যে মেয়েটি কোন রূপ উত্তেজক কিছু পরে রয়েছে… তার পোষাক আষাকে কোন প্রলোভনিয়তার লেশ মাত্র নেই… কিন্তু তবুও… অলিভীয়ার পুরো শরীরটাই এতটাই আকর্ষণীয়, যে ওই সামান্য একটা হাঁটু ঝুল ফ্রকেই যেন তাকে ভিষনভাবে মোহিনী করে তুলেছে… প্রস্ফুটিত করে তুলেছে শরীরের প্রতিটা বাঁক, চড়াই উৎরাই…
বিপ্রনারায়ণের মুখের কথা যেন খনিকের জন্য সত্যিই হারিয়ে গিয়েছে… মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অপলক তার হবু ভাতৃবধূর পানে… সে দৃষ্টিতে যত না মুগ্ধতা থাকে, তার থেকে দ্বিগুণ একরাশ কামনা… কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে দেয় না সবার সন্মুখে এই মুহুর্তে… বিশেষ করে সন্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা অলিভীয়ার কাছে… শুধু একবার পাশে দাঁড়ানো কণকপ্রভার দিকে চকিতে দৃষ্টি হানে … দুজনের চোখে চোখে যেন কোন কথা চালাচালি হয়ে যায় সবার অলক্ষ্যে, নির্বাকে…
সূর্য অলিভীয়ার পীঠের ওপরে হাত রেখে ইশারায় সরযূদেবীর দিকে নির্দেশ করে… চাপা গলায় ইংরাজিতে বলে ওঠে, “দেয়ার… শি ইজ মাই মাদার… গো আন্ড গিভ রেস্পেক্ট টু হার… অ্যাজ আই হ্যাভ শোন ইয়ু… প্রণাম… ইউ রেমেম্বার ইট, না?”
সূর্যের কথায় মাথা নাড়ে অলিভীয়া… “ইয়েস ইয়েস… আই ডু… আই মাস্ট…” বলে অন্য হাতে ধরা ছোট ব্যাগটা সূর্যের হাতে তুলে দিয়ে দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে যায় সে বিপ্রনারায়ণের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা সরযূ দেবীর দিকে… সামনে পৌছে মাথা ঝুঁকিয়ে পা ছোঁয় তাঁর… ঠিক যেমনটা সূর্য তাকে করতে শিখিয়ে দিয়েছিল এখানে আসার আগে… পা ছুঁয়ে বড়োদের প্রণাম করাটাই এ দেশের রীতি বলে জেনে এসেছে এখানে আসার আগে সূর্যের কাছ থেকে অলিভীয়া… আর সূর্যের দেশের রীতি মানে তারও রীতিই এখন থেকে…
সামনে ঝুঁকতেই চেয়ারে বসে থাকা বিপ্রনারায়ণের শ্যেণ দৃষ্টিতে ধরা পড়ে অলিভীয়ার পরণের ফ্রকের আড়ালে ঢাকা গোলাকৃত নিতম্বদলের… যার অবয়ব এতক্ষনে সম্পুর্ণরূপে দৃশ্যমণ্য তার আকার নিয়ে ফ্রকের টান হয়ে থাকা কাপড়ের ওপর দিয়ে ফলে… শুধু তাইই নয়… একটা হাল্কা রেখা নিতম্বের দুই পাশ থেকে বেয়ে হারিয়ে গিয়েছে খানিকটা নীচের দিকে নামার সাথে সাথে… ওটা যে অলিভীয়ার পরণের প্যান্টির হেমরেখা, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না অভিজ্ঞ বিপ্রনারায়ণের চোখে… আরো একবার ফিরে তাকায় স্ত্রীয়ের দিকে… চোখে চোখ মেলে দুজনের…
“থাক, থাক মা… ওই ভাবে ঝুঁকে প্রনাম করতে হবে না তোমায়…” বলতে বলতে হাত তুলে অলিভীয়ার চিবুক ছোয়ান সরযূদেবী… তারপর নিজের ঠোঁটে হাত নিয়ে চুমু খান… চোখের সামনে এসে দাঁড়ানো অলিভীয়ার রূপের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যান তিনি… “বেঁচে থাকো মা… বেঁচে থাকো… সুখে শান্তিতে সংসার কর তুমি…” প্রসন্ন মুখে আশির্বাদ করেন নিজের হবু বৌমাকে… “দেখ তো কান্ড… এত সুন্দর মেয়েটা… আর তাকেই কিনা কর্তার পছন্দ নয়?” তারপর অলিভীয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন, “তুমি একদম এই সব নিয়ে ভেবো না কিছু… আমি বলছি তোমায়… তুমিই এই বাড়ির মেজ বউই হবে, তোমার মত লক্ষ্মীমন্ত বউ কি আমি ফেরাতে পারি মা?”
ভারতে আসার আগে সূর্য তাকে কিছু কিছু বাংলা শিখিয়ে নিয়ে এসেছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা এতটাও নয় যে সরযূদেবীর গড়গড় করে বলে যাওয়া কথাগুলো সবটা সে বুঝতে পারবে… তাও, ওনার হাসি ভরা উজ্জল মুখ দেখে এটা সে বুঝতে পারে যে, ভদ্রমহিলা তাকে এই পরিবারের বধূ হিসাবে গ্রহণ করেছেন, স্বীকৃতি দিয়েছেন তাকে এই পরিবারের পরিজন হিসাবে… মুখ ফিরিয়ে সূর্যের পানে একবার তাকায় সে… দূর থেকে সূর্য তার দিকে তাকিয়ে ইতিবাচক ঘাড় নাড়ে… চোখের ইশারায় তাকে আস্বস্থ করে… সূর্যের ইশারা বুঝে খুশিতে উজ্জল হয়ে ওঠে অলিভীয়ার মুখ…
কিন্তু সেটা সম্ভবতঃ ক্ষনিকের জন্য… কারণ তারপরেই চমকে ওঠে সে একটা জলদগম্ভীর কন্ঠস্বরে… “কে দিয়েছে একে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে?” এই ভাবে রুদ্রনারায়ণ ফের ঘুরে আসবেন, সেটা বোধহয় কেউ আশা করেনি… তার তখনকার প্রস্থানে ঘরের পরিবেশটা যেটুকু স্বাভাবিক হয়েছিল, আবার যেন সকলের মুখে আগের চাপা উত্তেজনাটা ফিরে এলো… প্রত্যেকে ততষ্ঠ হয়ে উঠল তৎক্ষনাৎ… চেয়ার থেকে তড়িতে উঠে দাঁড়ায় বিপ্রনারায়ণ… সচকিত হয়ে খানিকটা পিছিয়ে যায় কিশোর চন্দ্রনারায়ণ আর রত্নকান্তা দুজনেই, সভয়ে… এবার কি ঘটতে চলেছে তার শঙ্কায়…
“এই ভাবে তুমি কাকে কি বলছ?” কর্তার কথার খুব একটা আমল না দিয়ে পাশ থেকে প্রতিবাদ করে ওঠেন সরযূদেবী… “ও আমার ছেলের বউ হতে চলেছে… তার সাথে এই ভাবে কেউ কথা বলে? ও কি তোমার গ্রামের প্রজা?”
“মানি না আমি এই ম্লেচ্ছ মেয়েমানুষকে আমার ছেলের বউ বলে…” গর্জে ওঠেন রুদ্রনারায়ণ… প্রচন্ড ক্ষোভে ততক্ষনে লাল হয়ে উঠেছে ফর্সা মুখ… একটু আগে এরা আসবে তিনি জানতেন, কিন্তু এখন চোখের সন্মুখে অলিভীয়াকে দেখে যেন ক্রোধে কেউ ঘৃতাহুতি দিয়েছে বলে মনে হয়… রাগে থমথমে হয়ে ওঠে মুখ… “আর তা ছাড়া পোষাক দেখেছ? ঘরের বউএর পোষাকের এই ছিরি? অর্ধউলঙ্গ মেয়েছেলে কোথাকার…” গর্জাতে থাকেন রুদ্রনারায়ণ…
“বাবামশাই… আপনি এই ভাবে ওর সাথে কথা বলতে পারেন না…” এবার প্রতিবাদ করে ওঠে সূর্য…
কিন্তু চকিতে সে প্রতিবাদ নসাৎ করে দেন রুদ্রনারায়ণ… “থামাও তোমার কথা… লজ্জা করছে না আমার সামনে দাঁড়িয়ে এই কান্ড ঘটানোর পর কথা বলতে? তোমায় আমার নিজের ছেলে বলেই তো মনে করতে ঘৃণা হচ্ছে…” গম গম করে ওঠে ঘরের মধ্যেটা রুদ্রনারায়ণের গলার আওয়াজে…
এতক্ষণ একটাও কোন কথা বলে নি অলিভীয়া… বুঝতে অসুবিধা হয় না তার, যে তাকে কেন্দ্র করেই রুদ্রনারায়ণের ক্ষোভের উদ্গিরণ… তাই ইশারায় হাত তুলে চুপ থাকতে বলে সূর্যকে… তারপর ধীর কিন্তু দৃপ্ত পায়ে হেঁটে গিয়ে দাঁড়ায় রুদ্রনারায়ণের সন্মুখে… কর জোরে… তারপর গলা নামিয়ে সসম্ভ্রমে বলে সে, “আমি জানে যে টুমি আমাকে লাইক করছে না… কিন্তু আমি সত্যিই টোমার এই ফ্যামিলিতে বঊ হয়ে থাকতে চায়… আমি টোমাদের সবটুকু রেসপেক্ট দেবে… শুধু একবার, জাস্ট ওয়ান্স আমাকে টোমার বিসসাসটা ডাও… আই ওন্ট ডিস্আপয়েন্ট ইয়ু…”
অলিভীয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য পানে তাকায় রুদ্রনারায়ণ… যেন ঘৃণায় মুখটাও দেখতে তাঁর ইচ্ছা করে না অলিভীয়ার… “আমি যেটা বলার সেটা বলে দিয়েছি… তোমায় এই পরিবারে কেউ গ্রহণ করবে না… দূর হয়ে যাও এখান থেকে…”
“কিন্তু আমি কোতায় যাবে? টুমি বলো… আমি তো কিছু চেনে না এখানে… যদি টুমি না আমায় মেনে নাও… তাহলে আমার তো যাবার কোনো জায়গা নেই… প্লিজ বাবা… প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড… আই রিয়েলি লাভ ইয়োর সন্…”
অলিভীয়ার কথায় যেন আরো ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে রুদ্রনারায়ণ… “চোওওওপ… একদম চুপ করে থাকো… লজ্জা করছে না আমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে? এত সাহস কে দিয়েছে তোমায়?” গর্জন করে ওঠেন বৃদ্ধ…
“বাট… বাট… দিস ইজ ট্রু… হোয়েদার ইয়ু আক্সেট অর নট… আই রেয়েলি লাভ ইয়োর সন্… আন্ড আই ওয়ান্ট টু ম্যারি হিম… আমি তাকে বিয়া করতে চায়… বিসাস করো… আমি ভালোবাসে তোমার ছেলেকে… আমি বাড়ির সবাইকে ছেড়ে এখানে থাকতে চলে এসেছে…” রুদ্রনারায়ণকে আবার বোঝাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে অলিভীয়া… কারণ সে বুঝে গিয়েছে, এই ব্যক্তিটিই পরিবারের মূল স্তম্ভ, এনাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে বাকিরা তাকে মেনে নেবে…
“আমি তোমার কোন কথা শুনতে চাই না… দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে… বেরিয়ে যাও বাড়ি থেকে… যেখানে খুশি যেতে পারো তুমি… তবে এই বাড়িতে তোমার কোন স্থান নেই… তাতে যদি আমার ছেলেকে ত্যাজ্য করতে হয়, তাতেও আমি পিছুপা হব না…” ফের গর্জন করে ওঠেন রুদ্রনারায়ণ…
পাশ থেকে রুদ্রনারায়নের সমর্থনে বিপ্রনারায়ণ বলে ওঠে, “বাবামশাই তো ঠিকই বলছেন… তুমি আর কথা বাড়িও না… এবার এসো… যেখান থেকে এসেছিলে, সেখানেই ফিরে যাও… তোমার ফেরার ভাড়ার চিন্তা করোনা… আমরাই তোমার ফেরার ব্যবস্থা করে দেবো…”
“এটা তুমি কি বলছ দাদা…” প্রতিবাদ করে ওঠে সূর্যনারায়ণ… বাড়ির কেউই বাবার মুখের ওপরে কথা বলার সাহস করে না ঠিকই, কিন্তু সেও ভাবতে পারেনি যে দাদা, বাবার সুরে সুর মিলিয়ে তার হবু স্ত্রীকে এই ভাবে বলতে পারে বলে… “তুমি…”
“দাঁড়াও সূর্য…” হাত তুলে থামায় সরযূদেবী, সূর্যনারায়ণের কথার মধ্যেই… তারপর বড় ছেলের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে ওঠে, “বড়রা যখন কথা বলে, তখন তুমি তার মধ্যে কথা বলো কি হিসাবে?” বিপ্রনারায়ণের এ হেন আচরণে তিনি যে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাতে তার কথায় প্রকাশ পায়…
“না মানে, বাবামশাই যেহেতু…” মায়ের বক্তব্যের মিনমিনে প্রতিবাদ করতে যায় বিপ্রনারায়ণ… হাত তুলে তাকে থামিয়ে দেয় সরযূদেবী… তারপর নিজের স্বামীর দিকে ফিরে বলে ওঠেন তিনি, “শোনো… আমি তোমার কোন কথার ওপরে কথা কখনও বলি নি… কিন্তু আজ আমি এই মেয়েকে আমার ছেলের বউ হিসাবে আশির্বাদ করেছি… তাই এর পরে আর সে এই পরিবার ছেড়ে যেতে পারে না… আমি থাকতে তো নয়ই… একে আমার সূর্যের বঊ বলেই আমি মেনেছি… সে তাইই থাকবে… আমার মুখ থেকে যখন একবার বেরিয়ে গিয়েছে, তখন এটাই আমার শেষ কথা…”
ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে নিজের সহধর্মীর দিকে একবার তাকায় বৃদ্ধ… তারপর হাতের লাঠির ওপরে ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে ওঠেন… “বেশ… কিন্তু এটাও ওদেরকে বলে দাও, তোমার ছেলের বউ হলেও, এই বাড়িতে তাদের জায়গা হবে না… আমার চোখের সন্মুখে যেন তারা না থাকে… ওদের কে গ্রামের বাড়িতে গিয়েই থাকতে হবে… তাতে যদি তারা রাজি থাকে, তাহলে আমার কিছু বলার নেই…” বলে আর দাঁড়ান না রুদ্রনারায়ণ… বৈঠকখানা থেকে বেরিয়ে যান বাড়ির অন্দরের দিকে…
অলিভীয়ার কাছে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরেন সরযূদেবী… “আর চিন্তা নেই মা… তোমায় কেউ এই পরিবার থেকে আলাদা করতে পারবে না… আমি তো রয়েছি… শুধু ক’টা দিন একটু গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকবে… তারপর আমি কত্তাকে মানিয়ে নিয়ে তোমায় আবার এখানেই ফিরিয়ে আনবো… আসলে বোঝই তো, আগের দিনের মানুষ তো… তাই মেনে নিতে একটু অসুবিধা হচ্ছে… তবে তোমার মত একট মিষ্টি মেয়েকে কে বেশি দিন দূরে সরিয়ে রাখতে পারে? হু? দেখবে… কিছুদিন পর, এই মানুষটাই তোমায় স্নেহ মমতা দিয়ে মাথায় করে রাখবে…” বলতে বলতে সস্নেহে হাত ছোঁয়ান অলিভীয়ার চিবুকে…
পুরো কথা বুঝতে না পারলেও এটা বুঝতে অসুবিধা নয় না অলিভীয়ার যে সূর্যের মা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন, এবং সূর্যের পিতার বিরোধীতা করে তাকে এই পরিবারের পুত্রবধূর সন্মান এনে দিয়েছেন… কৃতজ্ঞতায় চোখ ভিজে ওঠে অলভীয়ার… সরযূদেবীকে জড়িয়ে ধরে সে আনন্দে…
“ওরে পাগলী মেয়ে, ছাড় ছাড়… এখন তোর সামনে অনেকটা পথ বাকি… আগে নিজে বউ হয়ে এই বাড়িতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা কর… তারপর একটু একটু করে নিজের শ্বশুরের মন জয় করে নিবি’খন…” হাসতে হাসতে বলেন সরযূদেবী… হাত বোলান অলিভীয়ার পীঠের ওপরে…
ঘরের পরিবেশ একটু হাল্কা হয়ে উঠতে উপস্থিত সবাই যেন হাঁফ ছাড়ে… এগিয়ে আসে রত্নকান্তা… এসে অলিভীয়ার কাঁধের ওপরে হাত রাখে… পরিষ্কার ইংরাজীতে বলে ওঠে সে, ‘আই অ্যাাম রত্নকান্তা… সূর্যস্ সিস্টার…”
রত্নকান্তার কথায় সরযূদেবীকে ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ায় অলিভীয়া… চোখের জল মুছে হাসি মুখে তাকায় তার পানে… “ইয়া… আই নো… আই হ্যাভ সিন ইয়োর পিকচার… সূর্য হ্যাড টোল্ড মী দ্যাট হি হ্যাজ আ বিউটিফুল সিস্টার… রটনকান্টা… মাই ননড…” বলে জড়িয়ে ধরে রত্নকান্তাকে বুকের মধ্যে… রত্নকান্তা হেসে ফেলে অলিভীয়ার উচ্চারণে… অলিভীয়ার আলিঙ্গন ছেড়ে যোগ করে, ‘তুমিও তো খুব মিষ্টি মেয়ে গো…’
রন্তকান্তার কথায় বড় বড় চোখে তাকায় অলিভীয়া… ‘আমি জানে… মিসটি মানে সুইট… আমাকে টোমার সুইট লাগে? সট্টিই?’
এবার রত্নকান্তা নিজেই অলিভীয়াকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে… হেসে বলে, ‘হ্যা গো হ্যা… সত্যিই বলছি… তোমাকে সত্যিই ভিষন মিষ্টি দেখতে…’
‘না না… এটা তো ভালো কথা নয়…’ ভীত মুখ করে তাকায় সূর্যনারায়ণের পানে… বলে, ‘সূর্য, আমি যদি সুইট হয়, তাহলে তো এরা আমাকে সনডেশ ভেবে খায়ে ফেলবে… দেন? হোয়াট উইল হ্যাপেন?’
অলিভীয়ার কথায় ঘরের মধ্যে হাসির রোল ওঠে… আগের সেই আবহাওয়াই নিমেশে যেন কেটে যায় এক লহমায়… শুধু বিপ্রনারায়ণ একভাবে দাঁড়িয়ে আপাদমস্তক মেপে নিতে থাকে অলিভীয়াকে… বর্তুল বুকের ওপরে চোখ দুটো বুলিয়ে নিতে নিতে মনে মনে বলে ওঠে সে… ‘আজ যদি সূর্যের ভাবি স্ত্রী না হতে, তাহলে এতক্ষনে সত্যি সত্যিই খেয়ে ফেলতাম আমি তোমায়…’
তাদের কথার মধ্যে সরযূদেবী ঘর থেকে প্রস্থান করেন… হয়তো এবার তিনি তাঁর স্বামীর মানভঞ্জনের তাগিদে এগিয়ে যান ঘরের দিকে…
মায়ের কাছ থেকে বকুনি খাবার পর থেকে আর একটাও কথা বলে নি বিপ্রনারায়ণ… ওনারা বেরিয়ে যেতে ফের চেয়ারে বসে পড়ে সে… গম্ভীর মুখে… রুদ্রনারায়ণের মত সেও এই সম্পর্কটা মেনে নিতে পারেনি… মেম নিয়ে ফুর্তি করা আর তাকে বিয়ে করে পরিবারে নিয়ে আসা, দুটো তার কাছে এক ব্যাপার কখনই নয়… তাই মা মেনে নিলেও, সেও তার পিতার মতই একটু ক্ষুব্ধই রয়ে যায়… কিন্তু মায়ের মুখের ওপরে কথা বলার অধিকার নেই বলেই চুপ থাকতে খানিকটা বাধ্যই হয়…
ইতিমধ্যে রত্নকান্তার বাহুলগ্ন ছেড়ে তাকায় অলিভীয়া, সূর্যেরও মনে হয় পরিবারের বাকিদের সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেওয়াটা উচিত… তাই অলিভীয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে ওঠে সে, ‘অলিভীয়া… হি ইজ মাই এল্ডার ব্রাদার…’ হাত তুলে বিপ্রনারায়ণের পানে ইশারা করে পরিচয় করাতে উদ্যত হয় সূর্য… কিন্তু তাকে কথার মাঝপথেই থামিয়ে দেয় অলিভীয়া… এতক্ষনে অনেকটাই নিজেকে সামলে নিয়েছে সে, তাই তাড়াতাড়ি ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলে ওঠে সে… ‘আমি জানে… আমি ছবিতে দেখেছে… ইনি বিপরোনাড়ায়ন আছে… রাইট? আই অ্যাাম নট রং… টাই না?’
তার এ হেন বাংলায় বিপ্রনারায়ণ এর উচ্চারণের অবস্থা শুনে ঘরের মধ্যে উপস্থিত সকলেই ফের চাপা স্বরে হেসে ওঠে… ভালো লাগে তাদের অলিভীয়ার নিজেকে এই ভাবে মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টায়… কিন্তু পরক্ষনেই তাদের সেই খুশি যেন কর্পূরের মত উবে যায় অলিভীয়ার পরবর্তী পদক্ষেপে… কেউ কিছু বোঝার আগেই চকিত পায়ে রত্নকান্তা কাছ ছেড়ে এগিয়ে যায় চেয়ার উপবিষ্ট বিপ্রনারায়নের দিকে… তারপর সকলকে একেবারে হতবাক করে দিয়ে ঝুঁকে জড়িয়ে ধরে সে বলে ওঠে… ‘হাই ডাডা… হাউ ডু ইয়ু ডু…’
হতচকিত শুধু ঘরের মধ্যে উপস্থিত মানুষই নয়… হতচকিত হয়ে পড়েন বিপ্রনারায়ণ নিজেও… দূর থেকে অলিভীয়ার সৌন্দর্য সূধা পান করা এক কথা, আর নিজের শরীরের সাথে অলিভীয়ার নব্য যৌবনা নমনীয়, মোলায়ম, নরম দেহের স্পর্শে ক্ষনিকের জন্য বাক্যহারা হয়ে যায় সে… নারী শরীর তার কাছে নতুন কিছু নয়… এই জীবনে বহু নারী ভোগ করা হয়ে গিয়েছে তার… কিন্তু তাও, খানিক আগের এত কিছু ঘটনার পরে, সেই অলিভীয়ারই নরম স্তনের সংস্পর্শ তার বাহুতে, এটা একেবারেই প্রত্যাশা করে নি সে… বক্ষবন্ধনীর মধ্যে আবদ্ধ থাকলেও, স্তনের জমাট কোমলতায় বিহ্বল সে ততক্ষনে… এই পরিস্থিতিতে সবার সামনে কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না … পরনের ধূতির নীচে কামদন্ডে অনুভব করে চকিত শিরশিরানী… অলিভীয়ার পরিপক্ক দেহ থেকে উঠে আসা মাতাল করা গন্ধ বিপ্রনারায়ণের দেহের প্রতিটি স্নায়ুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে যেন… আড় চোখে ঘরে উপস্থিত সকলের মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে নিয়ে অপ্রস্তুত বিপ্রনারায়ণ হালকা করে হাত রাখেন অলিভীয়ার পীঠের ওপরে… কোনমতে বলে ওঠে সে… ‘আচ্ছা, আচ্ছা… ঠিক আছে… ঠিক আছে…’
অস্বস্থি বিপ্রনারায়ণের… কিন্তু এটা অলিভীয়ার কাছে খুবই স্বাভাবিক একটা ভদ্রতার নিদর্শণ মাত্র… তাই বিপ্রনারায়ণকে ছেড়ে ফের সোজা হয়ে দাঁড়ায় সে… এগিয়ে যায় পাশেই দাঁড়ানো চন্দ্রনারায়ণের দিকে, তার সাথে পরিচিত হতে… কিশোর চন্দ্রনারায়নকে নিজের ভায়ের মত লাগে তার… বেশ মিষ্টি ভিরু ভিরু চোখের চন্দ্রনারায়ণ… অন্যান্য ভাইদের মত অত উধ্যত নয় সেটা এক পলক দেখলেই বোঝা যায়… কতই বা বয়স হবে তার… খুব বেশি হলে ১৬… সবে মাত্র যৌবনের প্রারম্ভে দাড়িয়ে রয়েছে… গালের চারপাশে আর গোঁফের কাছে কচি দাড়ির প্রলেপ… এগিয়ে গিয়ে পরম ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরে তাকেও অলিভীয়া… বলে, “টুমি আমার ভাই… ছোট ভাই… কেমন? ইয়ু আর মাই সুইট ব্রাদার… আমার নিজের কোন ভাই নেই… ডাডা আছে… তাই তুমিই ভাই আমার…”
অস্বস্থি মাখা মুখে চুপ করে থাকে চন্দ্রনারায়ণ… এই পরিস্থিতিতে কি করা উচিত ঠিক বুঝে উঠতে পারে না সে… নব্য যৌবনের সন্ধিক্ষণে এই ভাবে একজন নারীর শরীরের পরশে প্রায় ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা তখন তার…
সূর্য খানিকটা ইতস্থত করে দাদাকে প্রশ্ন করে, আমি তাহলে ভেতরে গেলাম, কিন্তু অলিভীয়া কোথায়…’
পাশ থেকে কণক বলে ওঠে… ‘ওটা তোমায় ভাবতে হবে না ঠাকুরপো… তুমি যাও, আমি দেখছি অলিভীয়া কোথায় থাকবে, মা যখন অনুমতি দিয়ে গিয়েছেন, তখন তার থাকা নিয়ে তোমায় আর ভাবতে হবে না… তবে নিশ্চিন্তে থাকো, বিয়ে না হওয়া অবধি তোমার ঘরে প্রবেশ নিষেধ তার…’ বলতে বলতে হেঁসে ওঠে কণকপ্রভা… তার কথায় হাঁসে রত্নকান্তাও…
বৌদির কথায় লজ্জা পায় সূর্য… তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, ‘না, না, সে তো জানি… এখন থেকে ও তোমার দায়িত্বে রইল… আমার তো আর কোন চিন্তাই রইল না আর… আমি নিশ্চিন্ত…’
এতক্ষন দেওর বৌদির কথপোকথন শুনছিল অলিভীয়া… পুরোটা না হলেও, ওদের দুজনের অঙ্গবিক্ষেপে কিছুটা আন্দাজ করার চেষ্টা করে কথার বক্তব্য… সে বলে ওঠে… ‘হ্যা হ্যা… ইয়ু গো… নাউ আইলবী উইথ ডিডি ওনলি… তাই না ডিডি?’
‘হ্যা হ্যা… তাইই তো… এখন তুমি আমারই শুধু অলিভীয়া…’ বলতে বলতে জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় স্বামীর পানে… চোখা চুখি হতে নিরবে সন্মতির ঘাড় নাড়ে বিপ্রনারায়ণ… কারন বিপ্রনারায়ণ জানে, এখন তার কোন কথারই কাজে আসবে না, যখন সরযূদেবী নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন… কণকও প্রসন্ন চিত্তে অলিভীয়াকে নিয়ে বাড়ির অন্দরের দিকে রওনা দেয়…
ক্রমশ