Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
আমার সংগৃহীত গল্প
#5
বাবা এই কয়েক দিন আগে জ্বর থেকে উঠেছে…তার উপরে আবার সকাল সকাল উঠে স্টেশনে যেতে হয়েছে…বাড়ীতে গেস্ট…মায়ের ফর্দটা আজ বেশ লম্বা দেখে নিজেই বাজারে গেলাম এমন নয় এই প্রথম, মাঝে মাঝেই যেতে হয় যদিও বাবা পারতপক্ষে যতটা সম্ভব নিজে করে নেয় বাজার থেকে ফিরে এসে খেয়ে নিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে একটা গল্পের বই নিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে পড়ার চেষ্টা করলাম…এখন আর কিছু করার নেই…মা রান্না ঘরে ব্যাস্ত, তিস্তাকে দেখতে পেলাম না, বাবা তিস্তার বাপির সাথে বসে গল্প করছে…কিছুটা পড়ার পর মন বসাতে পারলাম না… একটু অন্য মনস্কহয়ে জানলার বাইরে তাকিয়ে কিছু ভাবছিলাম…জীবনে অনেক মেয়ের কাছাকাছি এসেছি কিন্তু কোনোদিন তো এরকম মনে হয়নি…ওর টানা টানা দীঘল কালো চোখে যেন কিছু বলার আর্তি…কিছু কি ও বলতে চায়? সেটাই বা কিভাবে সম্ভব…সবে মাত্র আজ সকালেই ওর সাথে দেখা…এত তাড়াতাড়ি কোনো মেয়ে তো কাউকে কিছু বলতে পারে না তাছাড়া বলবেই বা কি করে? ওদের সাথে নাকি আমাদের কোনো দিক থেকে আত্মীয়তা আছে হতে পারে আমি ভুল বুঝেছি…যা ভাবছি তা নয় কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভুতি বুকের মধ্যে নিয়ে পড়ার দিকে মন দেবার চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না…বার বার তিস্তার চোখ দুটো মনের আয়নায় ছায়া ফেলতে লাগলো…কি সুন্দর মিষ্টি মুখটা…দেখলেই যেন আদর করতে ইচ্ছে করবে…সারা শরীরে যৌবন উছলে পড়ছে কিন্তু তা তীব্র কামনা না জাগিয়ে ভীষন ভালোলাগার এক অনুভুতিতে মন প্রান ভরিয়ে দেয়

প্রথম শিহরন #

খুব ইচ্ছে করছিল সৃজনকে একবার দেখার…বসার ঘরের দিকে না গিয়ে অন্য দিকে চলে গেলাম…ওখানে বাপিরা বসে আছে…এ ঘর ও ঘর খুঁজে কোথাও বিচ্ছুটাকে দেখতে পেলাম না… দোতলায় উঠে প্রথম ঘরটায় উঁকি দিয়ে ওকে দেখতে পেয়েই…বুকের ভেতরে আবার সেই সকালের মতো দ্রিম দ্রিম করে আওয়াজটা শুরু হয়ে গেল…

জিজ্ঞেস করলাম…আসবো?

ও ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার কাছে আমাকে কে দেখে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিল… হয়তো আমাকে স্নান করে নেওয়াতে আগের থেকে ফ্রেস দেখাচ্ছিল বলে ও তাকিয়ে আছে

লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিয়ে বললাম…ভেতরে আসতে বলবে নাকি চলে যাবো…

চলে গেলে তোমারই ক্ষতি…

মানে?

মানে…আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে কিছুটা সময় কাটানোর চান্স মিস করবে…

খুব অহ্নকার না …তোমার…

একদম নয়…শুধু অহ্নকার নয়…মিশলে দেখবে আমার মতো পাজীর পা ঝাড়া ছেলেও আর নেই…

হাসি আটকাতে না পেরে বললাম…তুমি যে পাজী সেটা তোমার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে…এত সময় তোমার দরজায় দাঁড়িয়ে আছি…এখোনো ভেতরে আসতে বললে না…তুমি বোধ হয়…

আরে না না…এসো…এমনিই… একটা গল্পের বই পড়ছিলাম…

ভেতরে গিয়ে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম…কার লেখা?

ও উঠে বসতে বসতে উত্তর দিল…সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের শ্বেতপাথরের টেবিল…আমার খুব ফেভারিট…

তাই…আমার ও ভীষন ভালো লাগে…অনেকবার পড়েছি…

আরে তুমি বোসো…দাঁড়িয়ে আছো কেন…

না বললে বসা যায় নাকি… 

খুব বসা যায়…নিজের মনে করলেই বসা যায়…

বিছানায় বসে ঘরটার এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললাম…তোমাদের বাড়ীটা খুব সুন্দর …

বাড়ীটা সুন্দর হয়তো কিন্ত কিছু একটার অভাব ছিল … তুমি এসে সেই অভাবটা মিটিয়ে দিয়েছো…

ঠিক বুঝলাম না…কিসের অভাব ছিল…

একজন সুন্দর অল্প বয়সী মেয়ের অভাব ছিল… 

ওর দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বললাম…আমি কি আর এমন সুন্দর…আমার থেকেও অনেক বেশী সুন্দরী মেয়ে আছে

তা হয়তো আছে…কিন্তু তোমার সৌন্দর্য ঠিক মোমবাতির আলোর মতো স্নিগ্ধ…অল্প উত্তাপ, জ্বলে যাবার ভয় নেই তাই এড়িয়ে যাওয়া ভীষন মুশকিল…আর তার সাথে…আছে…নীরব আহ্বান…কই এসো…আমার বুকে ঝাঁপ দাও…

তোমার অনেক বান্ধবী আছে…তাই না…

তা আছে…কিন্তু তুমি কি ভাবে বুঝলে?

নিজেকে একটু দুরে দুরে রেখে এরকম মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে পারে যে ছেলে…তার বান্ধবী থাকাটা খুব স্বাভাবিক…

ও একটু অবাক হয়ে আমার দিকে ঝুঁকে জিজ্ঞেস করল…তোমার এই একটু দূরে দূরে থেকে…কথাটার মানে কি বলোতো?

মানে…তুমি নিজেকে সহজলভ্য না করেও মেয়েদেরকে কাছে টেনে নিয়ে আসতে পারো…

আমি যে নিজেকে সহজলভ্য করিনা…বুঝলে কি করে?

আজ অব্দি আমি কোনো ছেলে দেখিনি…যারা কোনো না কোনো ছুতোয় মেয়েদের কাছে আসার চেষ্টা করে না…বা…ইম্প্রেস করার চেষ্টা করে না…তুমিই আমার দেখা একমাত্র ব্যাতিক্রম…

মাত্র তিন ঘন্টায় তুমি বুঝে গেলে যে আমি অন্য ছেলেদের থেকে আলাদা? কিভাবে সম্ভব?

ও তুমি বুঝবে না, মেয়েদের একটা আলাদা বোঝার ক্ষমতা আছে…ছেলেদের চাউনি দেখলে বুঝতে পারে…

ও একটু উদাস হয়ে…জানলার দিকে তাকিয়ে বলল…তা…আমার এই স্বভাবটা কি ভালো…না কি খারাপ…

ওর কথা বলার ধরন দেখে হাসি পেয়ে গেল…মুখ টিপে হেসে বললাম…সাঙ্ঘাতিক ডেঞ্জারাস…মেয়েদের জন্য…

হুঁমম…আমার থেকে তোমার দুরে থাকাই ভালো…

একটা কথা জিজ্ঞেস কোরবো…কিছু মনে করবে নাতো?

মনে করার আবার কি আছে…

তোমার কি কোনো খুব কাছের বান্ধবী আছে? কথাটা জিজ্ঞেস করে বুকের ভেতরটা ভীষন ভাবে কাঁপছিল…ভগবান…ওর উত্তরটা যেন ‘না’ হয়… 

ও কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে যেন কিছু ভাবলো…তারপর আবার জানলার দিকে তাকিয়ে বলল…নাঃ…তুমি যা ভাবছো…তা নয়…আমার সেরকম কেউ নেই…মানে…সেভাবে কাউকে নিজের করে নেওয়ার মতো কারুর দেখা পাইনি…

নিজের বুকের ভেতরে অদম্য খুশী আটকে রেখে বললাম…আমার বিশ্বাসই হছে না…তোমার মতো ছেলে…এতদিন প্রেম না করে থাকতে পারে… 

সে তুমি যা খুশী ভাবতে পারো…আমার কাউকে ভালো লাগে নি সেভাবে…যদিও অনেকেই কাছে আসতে চেয়েছে…যদি কোনোদিন…কাউকে পাই…তোমাকেই আগে জানাবো…

আমাকে কেন জানাবে?

আমার ইচ্ছে…

তুমি খুব ঝগড়ুটে…মেয়েদের মতো… 

এটাও আমার আর একটা গুন…তাহলে মোট কটা হল বলোতো? তিনটে…অহ্নকার… মেয়েদের কাছে টানার ক্ষমতা…আর ঝগড়ুটে…আর কটা দিন থাকো…আরো বেরোবে এক এক করে…

সত্যিই ওর কথা বলার ধরনটাই এমন যে না হেসে পারা যায় না…হাসতে হাসতে বললাম…আরো একটা পেয়েছি…

কি?

তুমি খুব সহজেই মানুষের দুঃখ ভুলিয়ে দিতে পারো…জানো তো…সারা রাস্তা চিন্তা করতে করতে এসেছি…তোমরা আমাকে কেমন ভাবে নেবে…আসার পর বুঝতে পারছি…না এলে…কত কিছু না জানা থেকে যেত…কত কিছু না পাওয়ার ব্যাথা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হত… 

আমার তাহলে গুনের শেষ নেই বলো…এত গুন থাকতেও কেন যে একটা মেয়ে তুলতে পারলাম নাকে জানে?...সবই কপাল…বুঝলে…

চেষ্টা করলেই পাবে…

তাই নাকি…আমি তো জানি…প্রেম নিজেই এসে ধরা দেয়…

কখোনো কখোনো…প্রেম নীরবে এসে চলে যায়…বুঝতে যদি না পারো…সারা জীবন... প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে…আমার এই দুয়ার প্রান্তে…আমি পারিনি তা জানতে…গাইতে হবে…

তোমার গলা খুব মিষ্টি…একটা গান শোনাবে?

উঁ হুঁ…এখন আমার তোমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে… 

আচ্ছা…এবার তোমার কথা বলো…মানে তোমার বয়ফ্রেন্ড কেমন…কি করে…কতদিন ধরে তোমরা প্রেম কোরছো…তোমার বাপিকে জানিয়েছো কিনা…

হেসে ফেলে বললাম…বাব্বাঃ…এক সাথে এত গুলো প্রশ্ন…উত্তর দিই কি করে…

ঠিক আছে…একটা একটা করে উত্তর দাও…

আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই…নেই যখন…কি করে…বা…কতদিন প্রেম করছির কোনো উত্তর দেওয়া যাচ্ছে না…

অসম্ভব…তোমাদের ওখানকার ছেলে গুলোর কি চোখ নেই নাকি? নাকি…তুমি * পরে রাস্তায় বেরোও?

চোখ থাকবে না কেন…রাস্তায় বেরোলে মনে হয় যেন গিলে খাবে…আসলে আমার কপালটাও তোমারই মতো…কাউকে মনেই ধরে নি…

যাঃ…বাজে বোকোনা…

সত্যি…বিশ্বাস কর…

ঠিক আছে…বিশ্বাস করলাম…এক কাজ করা যাক…আমরা দুজনে একটা করে ছেলে আর মেয়ে খুঁজি…আমারটা তুমি ঠিক করে দাও…আর আমি তোমার টা…

না বাবা…এই বেশ ভালো আছি…তুমি যদি আমাকে এখন তোমাদের বাড়ীটা ঘুরিয়ে দেখাও তাহলেই আমি খুশী…

ও চোখ ছোটো ছোটো করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল…কেন… আমার সাথে বসে গল্প করতে ভালো লাগছে না? এই যে বললে…আমার সাথে গল্প করবে…

তুমি না সত্যিই ভীষন বিচ্ছু…তোমার সাথে গল্প কোরবো বলেই তো এলাম… আমি বম্মাকে বলে এলাম যে তোমাদের বাড়ীটা ঘুরে দেখবো…সেটা না করে তোমার সাথে গল্প করতে দেখলে কি ভাববে…তাই না? 

হুঁমম…সৌন্দর্যের সাথে সাথে বুদ্ধি ও আছে…যার কপালে আছো…তার ভাগ্যটা সত্যিই ভালো…এই অভাগার ভাগ্যে আবার কি আছে কে জানে…চলো…তোমাকে বাড়ী দেখাই…

দোতলার সব ঘরগুলো দেখার পর…দুজনে ছাদে গেলাম…ছাদের বাগানটা দেখে ভীষন ভালো লাগছিল…কত রকমের ফুল ফুটে আছে…নিজের অজান্তেই বলে ফেললাম…ইস…কি সুন্দর ফুল ফূটে আছে…কে দেখাশোনা করে গো? কথাটা বলেই খুব লজ্জা পেয়ে গেল…মুখ নিচু করে ভাবছিলাম…ইস…কি ভাবছে ও


ও আমার অবস্থা দেখে হেসে বলল…থাক আর লজ্জা পেতে হবে না…আমি কিছু ভাবিনি…

অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করলাম…ঠিক বোলছো…

ও আমার হাতটা ধরে বলল…চলো…ওদিকে আরো কিছু ফুলের গাছ আছে…

সারা শরীরটা এক অজানা শিহরনে কেঁপে উঠল…অস্ফুট স্বরে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললাম…প্লিজ ছাড়ো…কেউ দেখে ফেলবে…
[+] 2 users Like রাজা রাম's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: আমার সংগৃহীত গল্প - by রাজা রাম - 02-03-2021, 07:06 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)