27-02-2021, 02:44 PM
(This post was last modified: 01-03-2021, 04:04 PM by bourses. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
উপর থেকে তারা দুজনে নেমে আসে একতলায়… এসে ঢোকে ডাইনিং রুমে… এখানেও বৈভবের ছড়াছড়ি… কাঠের কারুকাজ ঘরের সমগ্র সিলিং জুড়ে… সমগ্র দেওয়াল জুড়ে বিশাল বিশাল অয়েলপেন্টিং ঝোলানো… এ বাড়িরই পূর্বপুরুষদের বলে মনে হয় সূর্যের… ঘরের মাঝখানে বিশাল কাঠের পায়ার উপরে ভারী কাঁচের একটি ডাইনিং টেবিল পাতা… যার চার ধারে দশটি গদী মোড়া কেদারা রাখা… টেবিলের উপরে সুদৃশ ফুলদানীতে মরসুমী ফুলের সমারোহ… প্রতিটা চেয়ারের সামনে, টেবিলের উপরে রাখা দামী কাঁচের কাজকরা প্লেট, ডিশ্, কাটা চামচ সাজিয়ে রাখা…
টেবিলের একেবারে শেষ মাথার চেয়ারে উপবিষ্ট এক ভদ্রমহিলা… আর ঠিক তার বিপরীত দিকের টেবিলের অপর শেষ মাথা এক ভদ্রলোক বসে রয়েছেন… পরণে কেতাদূরস্ত স্যুট… মাথায় সামান্য টাক্, মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, নিপুন ভাবে কামানো… তবে চেহারাটা খুবই সুন্দর… এই বয়েশেও একেবারে নির্মেদ বলা যায়… রীতিমত বেয়ামপুষ্ট…
ঘরের ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে যায় সূর্যের… বুঝতে অসুবিধা হয় না তার, ইনিই কাউন্টেস্… অলিভীয়ার মম্… কিন্তু দেখে মনে হয় তার উনি যেন অলিভীয়ার মা নন, তার কোন বড় দিদি যেন… এতটাই অপূর্ব ওনাকে দেখতে… সেই ভাবে এতটুকুও যেন বয়শের কোন ছাপ পড়েনি এখনও… অলিভীয়া আর একটু পরিপক্ক বয়েশে কেমন দেখতে হবে যেন তারই প্রমাণ স্বরূপ… তবে ওনার মাথার চুল অলিভীয়ার মত কালো নয়… বরং পুরোটাই সোনালী… তুলে সুন্দর করে বাঁধা খোঁপার আকারে… পরণে ওনারও ইভিনিং গাউন… কাঁধ খোলা… বুকের উপর থেকে শুরু হয়ে নেমে গিয়েছে নীচের পানে… আর যেহেতু কাঁধ খোলা… তাই বোধহয়, স্তনের উপরিবক্ষ প্রকট হয়ে রয়েছে গাউনের কাপড়ের উপর থেকে… ভরাট স্তনের বিভাজিকা লক্ষ্যনীয়… গায়ের রঙ যেন অলিভীয়ার থেকেও উজ্জল… সম্ভবত অলিভীয়া লন্ডনের রাস্তায় রাস্তায় ঘোরার ফলে একটু পুড়ে গিয়ে থাকবে, যেটা সম্ভব হয়নি এই ভদ্রমহিলার বেলায়… পড়ন্ত বিকেলের আলোয় যেন ওনার শরীর থেকে সে রঙ বিচ্ছুরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা ঘরের মধ্যে… মুখে হাল্কা প্রসাধন করা… ঠোঁট দুটি রাঙানো লাল রঙে… কানের লতী থেকে ঝুলতে থাকা ঝোলা দুলের থেকে উজ্জল হীরকদ্যুতি... গলার ঘেরে জড়ানো চওড়া হিরের লেকলেস…
বসে থাকার জন্য আর কিছু সূর্যের চোখে পড়ে না ঠিকই… কিন্তু তার অভিজ্ঞ চোখ বলে, চেহারাও যথেষ্ট লোভনীয় ভদ্রমহিলার… ওনার কাঁধের প্রসস্তিই বলে দিচ্ছে ওনার শারিরিক উচ্চতা… শরিরী গঠনের…
ঘরে ঢুকে তারা দাঁড়াতেই মুখ তুলে তাকান ভদ্রমহিলা… তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার দেখে নেন সূর্যকে আপদমস্তক… তারপরে তাকান নিজের কন্যার পানে… যেন সূর্যের উপস্থিতি কোন ধর্তব্যের মধ্যেই আনেন না… সেই মত মৃদু হেঁসে বলে ওঠেন অলিভীয়ার দিকে তাকিয়ে… “ওহ! মাই ডিয়ার… তুমি আসছে সেটা আমাকে জানাতে পারতে আগে… আমি তাহলে আমার মিটিং ক্যান্সেল করে দিতাম…”
সূর্যের পাশ থেকে দ্রুত পায়ে নিজের মম্ এর দিকে এগিয়ে যায় অলিভীয়া… সামান্য নীচু হয়ে ঝুঁকে নিজের মা কে দুই হাতে আলিঙ্গন করে গাল ঠেঁকায় মায়ের গালে… তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে স্মিত হেঁসে বলে, “আসলে তা নয় মম্… তোমাদের সার্প্রাইজ দেবার জন্যই এই ভাবে হুট করে চলে এলাম…”
“ইয়ু আর আলয়েজ নটি লাই দ্যট…” মৃদু হেসে বলে ওঠেন ভদ্রমহিলা… “তুমি তো জানো… হাউ বিজি উই আর অলয়েজ…”
“জানি তো মম্… আসলে অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম তোমাদের সাথে সূর্যের আলাপটা করিয়ে দেবার… তাই…” স্মিত হেঁসে উত্তর দেয় অলভীয়া…
“সূর্য? কে?” ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করেন ভদ্রমহিলা…
মাথা ফিরিয়ে সূর্যের পানে আঙুল তুলে দেখায় অলিভীয়া… “দেয়ার হি ইজ… সূর্য… সূর্য নারায়ণ চৌধুরী…”
অলিভীয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে আর একবার তাকায় অনতিদূরে দাঁড়িয়ে থাকা সূর্যের পানে ভদ্রমহিলাম… আর একবার তাকে মেপে নেয় মাথা থেকে পা অবধি… তারপর অলিভীয়ার দিকে ফিরে প্রশ্ন করে, “ইয়োর ফ্রেন্ড?”
ভদ্রমহিলার প্রশ্ন যেন উজ্জল হয়ে ওঠে অলিভীয়ার মুখ… এক গাল হেঁসে বলে ওঠে সে… “মোর দ্যান দ্যাট… মাই এভ্রিথিং… মাই হার্ট…”
অলিভীয়ার কথায় যেন এক লহমার জন্য ভদ্রমহিলার ভ্রুযগল আরো কুঞ্চিত হয়ে ওঠে… পরক্ষনেই অতি দ্রততায় স্বাভাবিক হয়ে যায় মুখের অভিব্যক্তি… স্মিত হেঁসে কন্যার পানে তাকিয়ে বলেন, “ওহ! আই সি…” তারপর সূর্যের পানে তাকিয়ে হাতের ইশারায় চেয়ারে বসার ইঙ্গিত করেন…
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা টম্ শশব্যস্ত হয়ে এগিয়ে এসে টেনে ধরে একটা চেয়ার, সূর্যের বসার জন্য… সূর্য এগিয়ে গিয়ে ধীর ভাবে বসে সেই চেয়ারে… এই মুহুর্তে সে টেবিলের দুই প্রান্তের দুই মানুষের থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করছে…
ওখানে বসেই একটা জিনিস সে খেয়াল করেছে…এতক্ষনে একটা কথাও কিন্তু টেবিলের আর এক প্রান্তে বসা ভদ্রলোক বলেন নি… চুপ করে তাঁর সামনে মেলে রাখা এক গোছা কাগজের মধ্যেই ডুবে আছেন একান্ত মননিবেশে…
অলিভীয়া ঘুরে সূর্যের উল্টো দিকের চেয়ারে গিয়ে বসে… টম্ আর তার সাথে আরো কিছু পরিচারক পরিচারিকা খাবার ও পানিয় পরিবেশনে ব্যস্ত হয়ে ওঠে… একটা অদ্ভুত নিরবতা বিরাজ করে ঘরের মধ্যে… কারুর মুখে হটাৎ করেই যেন কথা হারিয়ে গিয়েছে… চুপচাপ বসে খেতে থাকে তারা…
নিরবতা ভাঙে অলিভীয়া… রেড ওয়াইনের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে ভদ্রমহিলার পানে তাকিয়ে প্রশ্ন করে সে, “দাদাদের দেখছি না!”
“ওহ!... ওদের কি আর এক জায়গায় বসার সময় আছে ডিয়ার… ওরা ভি-ষ-ন ব্যস্ত… সকাল থেকে রাত অবধি ব্যবসার কাজে ছুটে বেড়াচ্ছে…” কাঁটার সাহায্যে একটা মাংসের ছোট টুকরো মুখের মধ্যে পুরে নেবার আগে বলে ওঠেন… তারপর সেটা মুখের মধ্যে শেষ করে তাকান সূর্যের দিকে, সরাসরি… “তোমার কি ব্যবসা? কিসের?”
তখন সবে ওয়াইনের পেয়ালায় চুমুক দিতে যাচ্ছিল সূর্য… ভদ্রমহিলার কথায় থমকে যায় সে… আস্তে করে পেয়ালাটা টেবিলের উপরে নামিয়ে রেখে ন্যাপকিনে মুখ মুছে তাকায় ভদ্রমহিলার পানে, বলে, “না… আমি শিল্পী…”
“শিল্পী!...” সূর্যের কথাটাই আর একবার পুনরাবৃত্তি করেন ভদ্রমহিলা… আর বলার অভিব্যক্তিতে একটা শ্লেষের রেশ লেগে থাকে যেন… “আর তুমি ভারতীয়… রাইট?”
“হ্যা… আমি ভারতীয়…” মাথা উঁচু করে উত্তর দেয় সূর্য, ভদ্রমহিলার প্রশ্নে…
শুনে চুপ করে যান ভদ্রমহিলা… মনোনিবেশ করেন নিজের খাবারের প্লেটে… সূর্যও আর কিছু বলে না…
খাওয়া শেষে উঠে দাঁড়ায় অলিভীয়া… তার ড্যাড্ আর সূর্য চেয়ার সরিয়ে…
সূর্য বোঝে, আর কোন কথা হবে না অলিভীয়ার বাবা মায়ের সাথে… বাবা তো আগাগোড়াই চুপ করেই থাকলেন, এমন ভাবে, যেন তিনি তাঁর নিজের কাজের মধ্যেই ডুবে রয়েছেন… ওনার ভাবগতিক দেখে একটা ব্যাপারে পরিষ্কার হয়ে যায় সূর্যের কাছে, যে এ বাড়ির সর্বময় কত্রী অলিভীয়ার মম্ই… উনিই শেষ কথা… সেখানে অলিভীয়ার বাবার বক্তব্য খুব একটা কার্যকর নয়… বা… ভুলও হতে পারে সে… মনে মনে ভাবে… হয়তো সত্যিই তিনি কাজের মধ্যে এতটাই নিয়জিত যে তার উপস্থিতিও খেয়াল করেন নি… যদিও সেটা কতটা সম্ভবপর, সেটা বিচার্যের বিশয় বইকি…
টেবিল ছেড়ে যাওয়ার উদ্যগ করতেই মুখ তোলেন কাউন্টেস্… স্মিত হেঁসে অলিভীয়াকে বলেন, “উইল ইয়ু প্লিজ লিভ মী অ্যান্ড ইয়োর বয়ফ্রেন্ড ফর সাম টাইম প্লিজ?”
এতক্ষন তার মম্ এর থেকে কোন আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে বোধহয় কিছুটা হতদ্যম হয়ে পড়েছিল অলিভীয়া… তার এখানে আসার সময়ের উৎসাহে ভাঁটা পড়েছিল অনেকটাই… তাই, কাউন্টেসের কথায় যেন শেষ মুহুর্তের একটা আশার আলো চোখে পড়ে তার… ফিরে আসে আগের সে উত্তেজনা, তার চোখে মুখে… উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে মুখ… “হ্যা হ্যা মম্… সার্টেনলি… তোমরা কথা বলো, আমি ততক্ষন বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসছি…” বলতে বলতে তাকায় সূর্যের পানে সে… চোখের ইশারায় বরাভয় দেওয়ার চেষ্টা করে যেন… যেন বলতে চায়, “আর কোন চিন্তা নেই… তোমরা কথা বলো… আমি আসছি এখুনি… তারপর তো…”
অলিভীয়ার সাথে তার বাবাও বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, পেছন থেকে থামালেন কাউন্টেস্… “তুমি যেও না… তুমি বরং আর একটু অপেক্ষা করে যাও…” তারপর সূর্যের পানে তাকিয়ে নরম গলায় বললেন, “ইয়ু আলসো সিট ইয়োং ম্যান… লেট আস টক সামথিং অ্যাবাউট ইয়ু…”
এক পলক অলিভিয়াকে দেখে নিয়ে চেয়ারটাকে ফের টেনে নিয়ে বসে সূর্য… কাউন্টেসের মুখোমুখি ফিরে… মাথা তুলে সোজা দৃষ্টিতে তাকায় ভদ্রমহিলার পানে…
“ওকে মাই বয়… তাহলে তুমি শুধু মাত্র একজন শিল্পী… অ্যান্ড নাথিং এলস্…” সূর্যের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে ভদ্রমহিলা…
“নাহ!... আর কিছু করি না আমি… আমি শু-ধু-উ মাত্র শিল্পীই বটে…” মাথা হেলিয়ে উত্তর দেয় সূর্য… কথার মধ্যে ওই ‘শুধু’টির উপরে টান দেয় সে ইচ্ছা করেই কতকটা… তার অভিজ্ঞতা বলছে যে অলিভীয়ার মম্ তাকে সেই অর্থে নিজেদের বরাবর মনে করছেন না মোটেই… আর করছেন না বলেই হয়তো তাকে উনি অপদস্ত করার ইচ্ছাতেই একলা এই ভাবে কথা বলার নাম করে বসিয়েছেন… অলিভীয়াকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে… কারণ তা না হলে এতক্ষন ধরে সে রয়েছে ঘরের মধ্যে, কিন্তু অলিভীয়ার কাছ থেকে তার আগমনের হেতু শোনার পরেও একটা কথাও খরচ করেননি অলিভীয়ার সম্নুখে…
“হোয়াট ইয়ু থিঙ্ক?” সূর্যর দিকে চোখ রেখেই ফের প্রশ্ন করেন ভদ্রমহিলা… “তোমার যা স্ট্যাটাস… তাতে অলিভীয়ার মত মেয়ের সাথে তোমায় আমরা জীবন সঙ্গি হিসাবে মেনে নেব?”
সূর্য হুট করে ভদ্রমহিলার কথার জবাব দেয় না… কয়েক সেকেন্ড সময় নেয় সে… কারন সেই মুহুর্তে তার শরীরের মধ্যে চৌধূরী বংশের রক্ত যেন জেগে উঠেছে… এত সহজে এই ভদ্রমহিলার সামনে মাথা নোয়াতে সে পারবে না… অথচ সে এটাও চায় না কোন রকম অশালিন আচরণ করে অলিভীয়ার নির্বাচনকে ছোট প্রমানিত করতে… ধীর কন্ঠে নম্র ভাবে উত্তর দেয় মুখ তুলে, “দেখুন ম্যাম… আমি আপনার মেয়েকে প্রকৃতই ভালোবাসী… এ ভালোবাসায় কোন অসচ্ছতা নেই… ঠিক যেমন আপনার মেয়ে ভালোবাসে আমায়… আর তাছাড়া… আমরা দুজনেই প্রাপ্ত বয়স্ক… তাই আপনারা আমাকে আপনার মেয়ের জীবন সঙ্গী হিসাবে মেনে নেবেন কি নেবেন না, সেটা সম্পূর্ণই আপনাদের বিচার্য… আমার নয়… তবে হ্যা… এটা বলতে পারি আপনাকে… যদি আপনার মেয়ে চায়… তাহলে… ইয়েস… আই অ্যাম হার উডবী হাসবেন্ড… এবং সেটা খুবই শিঘ্রই…”
স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে সূর্যের দিকে ভদ্রমহিলা… অত সুন্দর মুখের এক অচেনা ক্রুরতা নেমে আসে যেন… সূর্যের উত্তরে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ওনার… “তুমি আমাকে চেন?” শান্ত গলায় বলে ওঠেন কাউন্টেস্…
মাথা নাড়ে সূর্য… দৃঢ়তায়… “নাহ!... আগে চিনতাম না আপনাকে… এখানে এসে আলাপ হলো… অলিভীয়ার মা বলে…” শান্ত গলায় উত্তর দেয় সে…
“কিন্তু আমি শুধু মাত্র অলিভীয়ার মা’ই নই… আমি কাউন্টেস… কাউন্টেস্ অফ ব্রাডফিন্ডস্…” বলতে বলতে একটু থামেন ভদ্রমহিলা… তারপর ফের বলে ওঠেন… “আমার সাথে রয়াল ফ্যামিলির একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে… আমি চাইলে তোমার এখানে থাকা যে কোন মুহুর্তে অসহনীয় করে তুলতে পারি… আর সেটা করতে আমার বেশি সময় লাগবে না… জাস্ট আ ফোন কল অনলি…”
ভদ্রমহিলার কথায় এতটুকুও বিচলিত হয় না সূর্য… বলে, “আপনিও বোধহয় আমার সম্পূর্ণ পরিচয় পান নি… হ্যা… এটা ঠিক… আমি আপনার মেয়ের পাণিপ্রার্থি… আবার এটাও ঠিক… আমি রাজা দর্পনারায়ণ চৌধুরীর বংশধর… তাই আপনার রাজবংশের সাথে কতটা আলাপ চারিতা আছে কি নেই জানি না, তবে আমি নিজেই রাজ বংশের সন্তান… এক গর্বিত ভারতীয়… তাই…”
কাউন্টেসের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এই ভাবে সূর্য মানবে না… তাই সাথে সাথে মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায় ভদ্রমহিলার… নরম হয়ে আসে মুখের চেহারা ওনার… “দেখো সূর্য… আমি বুঝতে পারছি যে তোমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসো… কিন্তু একটা জিনিস বোঝার চেষ্টা করো… অলিভীয়া আমার এক মাত্র মেয়ে… সে এই বংশের সব থেকে আদরের… আর সব থেকে বড় কথা ও একজন ব্রিটিশ পরিবারের মেয়ে… সেখানে ওর সাথে একজন তোমার মত ভারতীয়র কি করে সম্পর্কে মত দিতে পারি আমি?”
“ওই যে বললাম আপনাকে… সেটা আপনার বিচার্য… আমার নয়… বা আমাদের নয় বলাটা আরো ভালো করে বোঝায়…” নরম অথচ দৃঢ় স্বরে উত্তর দেয় সূর্য… “তাই আমার মনে হয় আপনাকে জানানোটা আমাদের কর্তব্য ছিল, তাই জানালাম… এখন আপনি সেটা কি ভাবে নেবেন বা কি করবেন সেটা জেনে, সেটা সম্পূর্ণ আপনার হাতে… এখানে আমরা কিছু বলতে পারি না…” তারপর একটু থেমে ফের বলে ওঠে… “আমার মনে হয় এর পরে আর আমাদের কোন কথা এগুতে পারে না…”
“তাহলে এটাই তোমার শেষ কথা?” ফের মুখ কঠিন হয়ে ওঠে কাউন্টেসের…
উত্তরে কিছু বলতে যাচ্ছিল সূর্য, কিন্তু তার আগেই কাঁধের উপরে আলতো হাতের চাপ পড়তে মুখ ফিরিয়ে তুলে তাকায় সে… কখন তাদের কথার মধ্যে অলিভীয়া এসে দাঁড়িয়েছে পেছনে, সেটা খেয়াল করে নি সে…
উত্তরটা দেয় অলিভীয়াই… “আমি সবটাই শুনেছি মম্… আমিও সূর্যের সাথে এক মত… আমাদের তোমায় জানাবার প্রয়োজন ছিল, তাই জানিয়েছি… এবার তোমরা যদি মেনে না নিতে চাও, আমাদের কিছু করার নেই তাতে…”
“নো… ইয়ু কান্ট… আমি না চাইলে তোমরা কিছুই করতে পারো না… আর আমি কি পারি আর না পারি সেটা তো তুমি ভালো করেই জানো অলিভীয়া… আমাকে সেটা করতে নিশ্চয়ই তুমি বাধ্য করবে না…” কঠিন স্বরে বলে ওঠেন কাউন্টেস্…
“না… পারো না… কিছু করতেই পারো না…” মাথা নাড়িয়ে দৃঢ় স্বরে উত্তর দেয় অলিভীয়া… “আমি সূর্যকে ভালোবাসী… সেখানে ও কি করে বা কোন দেশের, তাতে আমার কিছু যায় আসে না… কারণ আমি কোন তোমার সম্পত্তি নয় যে তোমার যার সাথে ইচ্ছা হবে তার সাথেই আমায় জীবন বাঁধতে হবে… আর তোমার ইচ্ছাতে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে…” বলতে বলতে গলার স্বর চড়ে অলিভীয়ার…
এবারে কথা বলেন সূর্যের পাশে উপবিষ্ট ভদ্রলোক… এতক্ষন উনি একটি কথাও বলেন নি এর মধ্যে… কিন্তু মেয়েকে বলতে দেখে বোধহয় চুপ করে থাকতে পারেন না… উঠে এসে অলিভীয়ার কাঁধে হাত রাখেন… “কাম ডাউন বেবী… কাম ডাউন…” তারপর নিজের স্ত্রীর পানে ফিরে বলেন, “ওরা তো ভুল কিছু বলছে না… ইয়ু মাস্ট অ্যাপ্রিশিয়েট দেয়ার লভ্…”
“হেল উইথ দেয়ার লভ্…” গর্জে ওঠেন কাউন্টেস্… “আমি আমার মেয়েকে একজন ব্রিটিশ রমনী হয়ে একটি ভারতীয়ের হাতে তুলে দিতে পারি না… দ্যটস্ নট আওয়ার কালচার…”
ফুঁসে ওঠে অলিভীয়াও সাথে সাথে… “ইটস্ অলসো নট আওয়ার কালচার টু ডিগ্রেড আ পারসন, হুম আই লভ্…” তারপর নিজের বাবার দিকে ফিরে বলে ওঠে সে… “তুমি মম্ কে বোঝাও ড্যাড… আমি সূর্যকেই বিয়ে করবো… এবং ওকেই এক মাত্র… তাতে মম্ রাজি থাকুক বা না থাকুক… আই ডোন্ট কেয়ার…”
“ইয়ু সি… ফোর ইয়ু… ফোর আ ব্লাডি ইন্ডিয়ান… হাউ মাউ ডটার ইস বিহেভিং উইথ হার মাদার…” সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন ভদ্রমহিলা… গলার স্বরে তখন রীতি মত ঘৃণা ঝরে পড়ছে যেন…
“এনাফ ইস এনাফ…” উঠে দাঁড়ায় সূর্য… উনি শুধু মাত্র এই মুহুর্তে তাকে অপমান করেন নি… করেছেন গোটা ভারতীয় সভ্যতাকে… আর সেখানে একজন ভারতীয় হিসাবে সেটা সে মেনে নিতে পারে না কোনমতেই… “শুনুন ম্যাম… এখানে একটা কথা আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি… আপনারা এই যে নিজেদের ব্রিটিশ বলে গর্ব বোধ করেন, অ্যাকচুয়ালি ইয়ু আর নট আ অরিজিনাল ব্রিটিশার… আপনারা শুধু মাত্র নিজেদের ঐতিহ্যের অহঙ্কারে একটা ফানুসের মত অবস্থান করেন… কিন্তু বেসিক্যালি আপনাদের মধ্যে মনুষ্যত্বটাই অনুপস্থিত… তা না হলে এখনও… এখনও আপনারা ভারতীয়দের মানুষ বলেই ভাবতে পারেনা… এটা সত্যিই দুঃখের… আপনাদের মানসিকতার কৃশতার…” তারপর একটু থেমে বলে সে, “আপনি মানবেন কি মানবেন না… আপনার মেয়ে আমায় বিয়ে করতে চায় কি চায় না সেটা আর আমি জানতে চাই না… এই যে একটা কথা বলে দিলেন… এর পরে আমার পক্ষে এক মুহুর্ত এখানে থাকা সম্ভব নয়… আপনি থাকুন আপনার উন্নাসিকতা নিয়ে… আপনার সামনে দাঁড়াতেও আমার রুচিতে বাঁধছে… আপনার এই বৈভব, এই বিত্তর কোন দামীই নেই আমার কাছে… এতটাই নীচ আপনার মানসিকতা…” বলে ঘরের বাইরে পা বাড়াবার উপক্রম করে সূর্য…
পেছন থেকে দ্রুত এগিয়ে এসে ওর হাত চেপে ধরে অলিভীয়া… “ওয়েট সূর্য… আমিও তোমার সাথেই যাবো… তবে যাবার আগে মম্ কে একটা কথা শুধু বলে যেতে চাই… এক মিনিট…” বলে পেছন ফিরে সামনে উপবিষ্ট কাউন্টেসের দিকে ফিরে অলিভীয়া বলে ওঠে… “মম্… একটা কথা পরিষ্কার শুনে রাখো… আই অ্যাম লিভিং দিস প্লেস ফর এভার… অ্যান্ড উইথ মাই লভ্… আর কখনও কোনদিন আমি তোমার কাছে ফিরে আসবো না… কারণ আজকে তুমি যে ভাবে, আর যে ভাষায় সূর্যকে অপমান করেছ, তাতে আমার মনে হয় সেটা আমার অপমানও… কারণ ভারতীয় আমার স্বামী… তাই আমিও ভারতীয়ও সেই সাথেই… সেই জন্য একজন ভারতীয় হয়ে এই অপমান সহ্য করে নেবার কোন ইচ্ছাই আমার নেই…” বলে ফের সূর্যের দিকে ফিরে বলে সে, “চলো সূর্য… লেটস্ গো ব্যাক টু আওয়ার ওন প্লেস… আমরা ফিরে যাই আমাদের জায়গায়… যেখানে আমাদের ভালোবাসার সন্মান আছে…”
পেছন থেকে তাও শেষ বারের মত চেষ্টা করেন কাউন্টেস্… “তুমি যদি এখন এই ভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও… দেন আমি অ্যাম টেলিং ইয়ু… আর কোন দিন এখানে ফিরতে পারবে না… আর এই বাড়ির সমস্ত সম্পত্তি থেকে তুমি বঞ্চিত হবে…”
ওনার কথায় বাধা দিয়ে কিছু বলতে ওঠেন অলিভীয়ার ড্যাড… কিন্তু তার আগেই হাত তুলে থামিয়ে দেন কাউন্টেস… “ওটাই আমার শেষ কথা…”
ফিরে দাঁড়ায় অলিভীয়া তার মম্ এর দিকে… হাতে ধরে থাকে শক্ত করে সূর্যের হাতখানি… “সেটা তোমায় না বললেও চলতো মম্… আমি তোমারই তো মেয়ে… তাই আমিও যখন একবার ডিসিশন নিয়েছি যে আমি চলে যাব… তার মানে এই নয় যে তোমার এই সম্পত্তির লোভে আবার আমি গুটি গুটি ফিরে আসবো… আমি চলে যাবো সূর্যেরই হাত ধরে… ওর কাছে… চিরতরে… সে যেভাবে আমায় রাখবে, আমি সেই ভাবেই থাকবো… ওর স্ত্রী হয়ে… সারা জীবন…”
শক্ত চোয়ালে চুপ করে তাকিয়ে থাকেন কাউন্টেস ওদের চলে যাবার দিকে… তাঁর চোখের সামনে দিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় অলিভীয়া সূর্যের হাত ধরে…
ক্রমশ…
ঘরের ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে যায় সূর্যের… বুঝতে অসুবিধা হয় না তার, ইনিই কাউন্টেস্… অলিভীয়ার মম্… কিন্তু দেখে মনে হয় তার উনি যেন অলিভীয়ার মা নন, তার কোন বড় দিদি যেন… এতটাই অপূর্ব ওনাকে দেখতে… সেই ভাবে এতটুকুও যেন বয়শের কোন ছাপ পড়েনি এখনও… অলিভীয়া আর একটু পরিপক্ক বয়েশে কেমন দেখতে হবে যেন তারই প্রমাণ স্বরূপ… তবে ওনার মাথার চুল অলিভীয়ার মত কালো নয়… বরং পুরোটাই সোনালী… তুলে সুন্দর করে বাঁধা খোঁপার আকারে… পরণে ওনারও ইভিনিং গাউন… কাঁধ খোলা… বুকের উপর থেকে শুরু হয়ে নেমে গিয়েছে নীচের পানে… আর যেহেতু কাঁধ খোলা… তাই বোধহয়, স্তনের উপরিবক্ষ প্রকট হয়ে রয়েছে গাউনের কাপড়ের উপর থেকে… ভরাট স্তনের বিভাজিকা লক্ষ্যনীয়… গায়ের রঙ যেন অলিভীয়ার থেকেও উজ্জল… সম্ভবত অলিভীয়া লন্ডনের রাস্তায় রাস্তায় ঘোরার ফলে একটু পুড়ে গিয়ে থাকবে, যেটা সম্ভব হয়নি এই ভদ্রমহিলার বেলায়… পড়ন্ত বিকেলের আলোয় যেন ওনার শরীর থেকে সে রঙ বিচ্ছুরিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারা ঘরের মধ্যে… মুখে হাল্কা প্রসাধন করা… ঠোঁট দুটি রাঙানো লাল রঙে… কানের লতী থেকে ঝুলতে থাকা ঝোলা দুলের থেকে উজ্জল হীরকদ্যুতি... গলার ঘেরে জড়ানো চওড়া হিরের লেকলেস…
বসে থাকার জন্য আর কিছু সূর্যের চোখে পড়ে না ঠিকই… কিন্তু তার অভিজ্ঞ চোখ বলে, চেহারাও যথেষ্ট লোভনীয় ভদ্রমহিলার… ওনার কাঁধের প্রসস্তিই বলে দিচ্ছে ওনার শারিরিক উচ্চতা… শরিরী গঠনের…
ঘরে ঢুকে তারা দাঁড়াতেই মুখ তুলে তাকান ভদ্রমহিলা… তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার দেখে নেন সূর্যকে আপদমস্তক… তারপরে তাকান নিজের কন্যার পানে… যেন সূর্যের উপস্থিতি কোন ধর্তব্যের মধ্যেই আনেন না… সেই মত মৃদু হেঁসে বলে ওঠেন অলিভীয়ার দিকে তাকিয়ে… “ওহ! মাই ডিয়ার… তুমি আসছে সেটা আমাকে জানাতে পারতে আগে… আমি তাহলে আমার মিটিং ক্যান্সেল করে দিতাম…”
সূর্যের পাশ থেকে দ্রুত পায়ে নিজের মম্ এর দিকে এগিয়ে যায় অলিভীয়া… সামান্য নীচু হয়ে ঝুঁকে নিজের মা কে দুই হাতে আলিঙ্গন করে গাল ঠেঁকায় মায়ের গালে… তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে স্মিত হেঁসে বলে, “আসলে তা নয় মম্… তোমাদের সার্প্রাইজ দেবার জন্যই এই ভাবে হুট করে চলে এলাম…”
“ইয়ু আর আলয়েজ নটি লাই দ্যট…” মৃদু হেসে বলে ওঠেন ভদ্রমহিলা… “তুমি তো জানো… হাউ বিজি উই আর অলয়েজ…”
“জানি তো মম্… আসলে অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম তোমাদের সাথে সূর্যের আলাপটা করিয়ে দেবার… তাই…” স্মিত হেঁসে উত্তর দেয় অলভীয়া…
“সূর্য? কে?” ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করেন ভদ্রমহিলা…
মাথা ফিরিয়ে সূর্যের পানে আঙুল তুলে দেখায় অলিভীয়া… “দেয়ার হি ইজ… সূর্য… সূর্য নারায়ণ চৌধুরী…”
অলিভীয়ার থেকে মুখ ফিরিয়ে আর একবার তাকায় অনতিদূরে দাঁড়িয়ে থাকা সূর্যের পানে ভদ্রমহিলাম… আর একবার তাকে মেপে নেয় মাথা থেকে পা অবধি… তারপর অলিভীয়ার দিকে ফিরে প্রশ্ন করে, “ইয়োর ফ্রেন্ড?”
ভদ্রমহিলার প্রশ্ন যেন উজ্জল হয়ে ওঠে অলিভীয়ার মুখ… এক গাল হেঁসে বলে ওঠে সে… “মোর দ্যান দ্যাট… মাই এভ্রিথিং… মাই হার্ট…”
অলিভীয়ার কথায় যেন এক লহমার জন্য ভদ্রমহিলার ভ্রুযগল আরো কুঞ্চিত হয়ে ওঠে… পরক্ষনেই অতি দ্রততায় স্বাভাবিক হয়ে যায় মুখের অভিব্যক্তি… স্মিত হেঁসে কন্যার পানে তাকিয়ে বলেন, “ওহ! আই সি…” তারপর সূর্যের পানে তাকিয়ে হাতের ইশারায় চেয়ারে বসার ইঙ্গিত করেন…
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা টম্ শশব্যস্ত হয়ে এগিয়ে এসে টেনে ধরে একটা চেয়ার, সূর্যের বসার জন্য… সূর্য এগিয়ে গিয়ে ধীর ভাবে বসে সেই চেয়ারে… এই মুহুর্তে সে টেবিলের দুই প্রান্তের দুই মানুষের থেকে সমান দূরত্বে অবস্থান করছে…
ওখানে বসেই একটা জিনিস সে খেয়াল করেছে…এতক্ষনে একটা কথাও কিন্তু টেবিলের আর এক প্রান্তে বসা ভদ্রলোক বলেন নি… চুপ করে তাঁর সামনে মেলে রাখা এক গোছা কাগজের মধ্যেই ডুবে আছেন একান্ত মননিবেশে…
অলিভীয়া ঘুরে সূর্যের উল্টো দিকের চেয়ারে গিয়ে বসে… টম্ আর তার সাথে আরো কিছু পরিচারক পরিচারিকা খাবার ও পানিয় পরিবেশনে ব্যস্ত হয়ে ওঠে… একটা অদ্ভুত নিরবতা বিরাজ করে ঘরের মধ্যে… কারুর মুখে হটাৎ করেই যেন কথা হারিয়ে গিয়েছে… চুপচাপ বসে খেতে থাকে তারা…
নিরবতা ভাঙে অলিভীয়া… রেড ওয়াইনের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে ভদ্রমহিলার পানে তাকিয়ে প্রশ্ন করে সে, “দাদাদের দেখছি না!”
“ওহ!... ওদের কি আর এক জায়গায় বসার সময় আছে ডিয়ার… ওরা ভি-ষ-ন ব্যস্ত… সকাল থেকে রাত অবধি ব্যবসার কাজে ছুটে বেড়াচ্ছে…” কাঁটার সাহায্যে একটা মাংসের ছোট টুকরো মুখের মধ্যে পুরে নেবার আগে বলে ওঠেন… তারপর সেটা মুখের মধ্যে শেষ করে তাকান সূর্যের দিকে, সরাসরি… “তোমার কি ব্যবসা? কিসের?”
তখন সবে ওয়াইনের পেয়ালায় চুমুক দিতে যাচ্ছিল সূর্য… ভদ্রমহিলার কথায় থমকে যায় সে… আস্তে করে পেয়ালাটা টেবিলের উপরে নামিয়ে রেখে ন্যাপকিনে মুখ মুছে তাকায় ভদ্রমহিলার পানে, বলে, “না… আমি শিল্পী…”
“শিল্পী!...” সূর্যের কথাটাই আর একবার পুনরাবৃত্তি করেন ভদ্রমহিলা… আর বলার অভিব্যক্তিতে একটা শ্লেষের রেশ লেগে থাকে যেন… “আর তুমি ভারতীয়… রাইট?”
“হ্যা… আমি ভারতীয়…” মাথা উঁচু করে উত্তর দেয় সূর্য, ভদ্রমহিলার প্রশ্নে…
শুনে চুপ করে যান ভদ্রমহিলা… মনোনিবেশ করেন নিজের খাবারের প্লেটে… সূর্যও আর কিছু বলে না…
খাওয়া শেষে উঠে দাঁড়ায় অলিভীয়া… তার ড্যাড্ আর সূর্য চেয়ার সরিয়ে…
সূর্য বোঝে, আর কোন কথা হবে না অলিভীয়ার বাবা মায়ের সাথে… বাবা তো আগাগোড়াই চুপ করেই থাকলেন, এমন ভাবে, যেন তিনি তাঁর নিজের কাজের মধ্যেই ডুবে রয়েছেন… ওনার ভাবগতিক দেখে একটা ব্যাপারে পরিষ্কার হয়ে যায় সূর্যের কাছে, যে এ বাড়ির সর্বময় কত্রী অলিভীয়ার মম্ই… উনিই শেষ কথা… সেখানে অলিভীয়ার বাবার বক্তব্য খুব একটা কার্যকর নয়… বা… ভুলও হতে পারে সে… মনে মনে ভাবে… হয়তো সত্যিই তিনি কাজের মধ্যে এতটাই নিয়জিত যে তার উপস্থিতিও খেয়াল করেন নি… যদিও সেটা কতটা সম্ভবপর, সেটা বিচার্যের বিশয় বইকি…
টেবিল ছেড়ে যাওয়ার উদ্যগ করতেই মুখ তোলেন কাউন্টেস্… স্মিত হেঁসে অলিভীয়াকে বলেন, “উইল ইয়ু প্লিজ লিভ মী অ্যান্ড ইয়োর বয়ফ্রেন্ড ফর সাম টাইম প্লিজ?”
এতক্ষন তার মম্ এর থেকে কোন আশানুরূপ সাড়া না পেয়ে বোধহয় কিছুটা হতদ্যম হয়ে পড়েছিল অলিভীয়া… তার এখানে আসার সময়ের উৎসাহে ভাঁটা পড়েছিল অনেকটাই… তাই, কাউন্টেসের কথায় যেন শেষ মুহুর্তের একটা আশার আলো চোখে পড়ে তার… ফিরে আসে আগের সে উত্তেজনা, তার চোখে মুখে… উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে মুখ… “হ্যা হ্যা মম্… সার্টেনলি… তোমরা কথা বলো, আমি ততক্ষন বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসছি…” বলতে বলতে তাকায় সূর্যের পানে সে… চোখের ইশারায় বরাভয় দেওয়ার চেষ্টা করে যেন… যেন বলতে চায়, “আর কোন চিন্তা নেই… তোমরা কথা বলো… আমি আসছি এখুনি… তারপর তো…”
অলিভীয়ার সাথে তার বাবাও বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, পেছন থেকে থামালেন কাউন্টেস্… “তুমি যেও না… তুমি বরং আর একটু অপেক্ষা করে যাও…” তারপর সূর্যের পানে তাকিয়ে নরম গলায় বললেন, “ইয়ু আলসো সিট ইয়োং ম্যান… লেট আস টক সামথিং অ্যাবাউট ইয়ু…”
এক পলক অলিভিয়াকে দেখে নিয়ে চেয়ারটাকে ফের টেনে নিয়ে বসে সূর্য… কাউন্টেসের মুখোমুখি ফিরে… মাথা তুলে সোজা দৃষ্টিতে তাকায় ভদ্রমহিলার পানে…
“ওকে মাই বয়… তাহলে তুমি শুধু মাত্র একজন শিল্পী… অ্যান্ড নাথিং এলস্…” সূর্যের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে ভদ্রমহিলা…
“নাহ!... আর কিছু করি না আমি… আমি শু-ধু-উ মাত্র শিল্পীই বটে…” মাথা হেলিয়ে উত্তর দেয় সূর্য… কথার মধ্যে ওই ‘শুধু’টির উপরে টান দেয় সে ইচ্ছা করেই কতকটা… তার অভিজ্ঞতা বলছে যে অলিভীয়ার মম্ তাকে সেই অর্থে নিজেদের বরাবর মনে করছেন না মোটেই… আর করছেন না বলেই হয়তো তাকে উনি অপদস্ত করার ইচ্ছাতেই একলা এই ভাবে কথা বলার নাম করে বসিয়েছেন… অলিভীয়াকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে… কারণ তা না হলে এতক্ষন ধরে সে রয়েছে ঘরের মধ্যে, কিন্তু অলিভীয়ার কাছ থেকে তার আগমনের হেতু শোনার পরেও একটা কথাও খরচ করেননি অলিভীয়ার সম্নুখে…
“হোয়াট ইয়ু থিঙ্ক?” সূর্যর দিকে চোখ রেখেই ফের প্রশ্ন করেন ভদ্রমহিলা… “তোমার যা স্ট্যাটাস… তাতে অলিভীয়ার মত মেয়ের সাথে তোমায় আমরা জীবন সঙ্গি হিসাবে মেনে নেব?”
সূর্য হুট করে ভদ্রমহিলার কথার জবাব দেয় না… কয়েক সেকেন্ড সময় নেয় সে… কারন সেই মুহুর্তে তার শরীরের মধ্যে চৌধূরী বংশের রক্ত যেন জেগে উঠেছে… এত সহজে এই ভদ্রমহিলার সামনে মাথা নোয়াতে সে পারবে না… অথচ সে এটাও চায় না কোন রকম অশালিন আচরণ করে অলিভীয়ার নির্বাচনকে ছোট প্রমানিত করতে… ধীর কন্ঠে নম্র ভাবে উত্তর দেয় মুখ তুলে, “দেখুন ম্যাম… আমি আপনার মেয়েকে প্রকৃতই ভালোবাসী… এ ভালোবাসায় কোন অসচ্ছতা নেই… ঠিক যেমন আপনার মেয়ে ভালোবাসে আমায়… আর তাছাড়া… আমরা দুজনেই প্রাপ্ত বয়স্ক… তাই আপনারা আমাকে আপনার মেয়ের জীবন সঙ্গী হিসাবে মেনে নেবেন কি নেবেন না, সেটা সম্পূর্ণই আপনাদের বিচার্য… আমার নয়… তবে হ্যা… এটা বলতে পারি আপনাকে… যদি আপনার মেয়ে চায়… তাহলে… ইয়েস… আই অ্যাম হার উডবী হাসবেন্ড… এবং সেটা খুবই শিঘ্রই…”
স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে সূর্যের দিকে ভদ্রমহিলা… অত সুন্দর মুখের এক অচেনা ক্রুরতা নেমে আসে যেন… সূর্যের উত্তরে চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ওনার… “তুমি আমাকে চেন?” শান্ত গলায় বলে ওঠেন কাউন্টেস্…
মাথা নাড়ে সূর্য… দৃঢ়তায়… “নাহ!... আগে চিনতাম না আপনাকে… এখানে এসে আলাপ হলো… অলিভীয়ার মা বলে…” শান্ত গলায় উত্তর দেয় সে…
“কিন্তু আমি শুধু মাত্র অলিভীয়ার মা’ই নই… আমি কাউন্টেস… কাউন্টেস্ অফ ব্রাডফিন্ডস্…” বলতে বলতে একটু থামেন ভদ্রমহিলা… তারপর ফের বলে ওঠেন… “আমার সাথে রয়াল ফ্যামিলির একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে… আমি চাইলে তোমার এখানে থাকা যে কোন মুহুর্তে অসহনীয় করে তুলতে পারি… আর সেটা করতে আমার বেশি সময় লাগবে না… জাস্ট আ ফোন কল অনলি…”
ভদ্রমহিলার কথায় এতটুকুও বিচলিত হয় না সূর্য… বলে, “আপনিও বোধহয় আমার সম্পূর্ণ পরিচয় পান নি… হ্যা… এটা ঠিক… আমি আপনার মেয়ের পাণিপ্রার্থি… আবার এটাও ঠিক… আমি রাজা দর্পনারায়ণ চৌধুরীর বংশধর… তাই আপনার রাজবংশের সাথে কতটা আলাপ চারিতা আছে কি নেই জানি না, তবে আমি নিজেই রাজ বংশের সন্তান… এক গর্বিত ভারতীয়… তাই…”
কাউন্টেসের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এই ভাবে সূর্য মানবে না… তাই সাথে সাথে মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায় ভদ্রমহিলার… নরম হয়ে আসে মুখের চেহারা ওনার… “দেখো সূর্য… আমি বুঝতে পারছি যে তোমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসো… কিন্তু একটা জিনিস বোঝার চেষ্টা করো… অলিভীয়া আমার এক মাত্র মেয়ে… সে এই বংশের সব থেকে আদরের… আর সব থেকে বড় কথা ও একজন ব্রিটিশ পরিবারের মেয়ে… সেখানে ওর সাথে একজন তোমার মত ভারতীয়র কি করে সম্পর্কে মত দিতে পারি আমি?”
“ওই যে বললাম আপনাকে… সেটা আপনার বিচার্য… আমার নয়… বা আমাদের নয় বলাটা আরো ভালো করে বোঝায়…” নরম অথচ দৃঢ় স্বরে উত্তর দেয় সূর্য… “তাই আমার মনে হয় আপনাকে জানানোটা আমাদের কর্তব্য ছিল, তাই জানালাম… এখন আপনি সেটা কি ভাবে নেবেন বা কি করবেন সেটা জেনে, সেটা সম্পূর্ণ আপনার হাতে… এখানে আমরা কিছু বলতে পারি না…” তারপর একটু থেমে ফের বলে ওঠে… “আমার মনে হয় এর পরে আর আমাদের কোন কথা এগুতে পারে না…”
“তাহলে এটাই তোমার শেষ কথা?” ফের মুখ কঠিন হয়ে ওঠে কাউন্টেসের…
উত্তরে কিছু বলতে যাচ্ছিল সূর্য, কিন্তু তার আগেই কাঁধের উপরে আলতো হাতের চাপ পড়তে মুখ ফিরিয়ে তুলে তাকায় সে… কখন তাদের কথার মধ্যে অলিভীয়া এসে দাঁড়িয়েছে পেছনে, সেটা খেয়াল করে নি সে…
উত্তরটা দেয় অলিভীয়াই… “আমি সবটাই শুনেছি মম্… আমিও সূর্যের সাথে এক মত… আমাদের তোমায় জানাবার প্রয়োজন ছিল, তাই জানিয়েছি… এবার তোমরা যদি মেনে না নিতে চাও, আমাদের কিছু করার নেই তাতে…”
“নো… ইয়ু কান্ট… আমি না চাইলে তোমরা কিছুই করতে পারো না… আর আমি কি পারি আর না পারি সেটা তো তুমি ভালো করেই জানো অলিভীয়া… আমাকে সেটা করতে নিশ্চয়ই তুমি বাধ্য করবে না…” কঠিন স্বরে বলে ওঠেন কাউন্টেস্…
“না… পারো না… কিছু করতেই পারো না…” মাথা নাড়িয়ে দৃঢ় স্বরে উত্তর দেয় অলিভীয়া… “আমি সূর্যকে ভালোবাসী… সেখানে ও কি করে বা কোন দেশের, তাতে আমার কিছু যায় আসে না… কারণ আমি কোন তোমার সম্পত্তি নয় যে তোমার যার সাথে ইচ্ছা হবে তার সাথেই আমায় জীবন বাঁধতে হবে… আর তোমার ইচ্ছাতে আমার ভালোবাসার মানুষটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে…” বলতে বলতে গলার স্বর চড়ে অলিভীয়ার…
এবারে কথা বলেন সূর্যের পাশে উপবিষ্ট ভদ্রলোক… এতক্ষন উনি একটি কথাও বলেন নি এর মধ্যে… কিন্তু মেয়েকে বলতে দেখে বোধহয় চুপ করে থাকতে পারেন না… উঠে এসে অলিভীয়ার কাঁধে হাত রাখেন… “কাম ডাউন বেবী… কাম ডাউন…” তারপর নিজের স্ত্রীর পানে ফিরে বলেন, “ওরা তো ভুল কিছু বলছে না… ইয়ু মাস্ট অ্যাপ্রিশিয়েট দেয়ার লভ্…”
“হেল উইথ দেয়ার লভ্…” গর্জে ওঠেন কাউন্টেস্… “আমি আমার মেয়েকে একজন ব্রিটিশ রমনী হয়ে একটি ভারতীয়ের হাতে তুলে দিতে পারি না… দ্যটস্ নট আওয়ার কালচার…”
ফুঁসে ওঠে অলিভীয়াও সাথে সাথে… “ইটস্ অলসো নট আওয়ার কালচার টু ডিগ্রেড আ পারসন, হুম আই লভ্…” তারপর নিজের বাবার দিকে ফিরে বলে ওঠে সে… “তুমি মম্ কে বোঝাও ড্যাড… আমি সূর্যকেই বিয়ে করবো… এবং ওকেই এক মাত্র… তাতে মম্ রাজি থাকুক বা না থাকুক… আই ডোন্ট কেয়ার…”
“ইয়ু সি… ফোর ইয়ু… ফোর আ ব্লাডি ইন্ডিয়ান… হাউ মাউ ডটার ইস বিহেভিং উইথ হার মাদার…” সূর্যের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন ভদ্রমহিলা… গলার স্বরে তখন রীতি মত ঘৃণা ঝরে পড়ছে যেন…
“এনাফ ইস এনাফ…” উঠে দাঁড়ায় সূর্য… উনি শুধু মাত্র এই মুহুর্তে তাকে অপমান করেন নি… করেছেন গোটা ভারতীয় সভ্যতাকে… আর সেখানে একজন ভারতীয় হিসাবে সেটা সে মেনে নিতে পারে না কোনমতেই… “শুনুন ম্যাম… এখানে একটা কথা আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি… আপনারা এই যে নিজেদের ব্রিটিশ বলে গর্ব বোধ করেন, অ্যাকচুয়ালি ইয়ু আর নট আ অরিজিনাল ব্রিটিশার… আপনারা শুধু মাত্র নিজেদের ঐতিহ্যের অহঙ্কারে একটা ফানুসের মত অবস্থান করেন… কিন্তু বেসিক্যালি আপনাদের মধ্যে মনুষ্যত্বটাই অনুপস্থিত… তা না হলে এখনও… এখনও আপনারা ভারতীয়দের মানুষ বলেই ভাবতে পারেনা… এটা সত্যিই দুঃখের… আপনাদের মানসিকতার কৃশতার…” তারপর একটু থেমে বলে সে, “আপনি মানবেন কি মানবেন না… আপনার মেয়ে আমায় বিয়ে করতে চায় কি চায় না সেটা আর আমি জানতে চাই না… এই যে একটা কথা বলে দিলেন… এর পরে আমার পক্ষে এক মুহুর্ত এখানে থাকা সম্ভব নয়… আপনি থাকুন আপনার উন্নাসিকতা নিয়ে… আপনার সামনে দাঁড়াতেও আমার রুচিতে বাঁধছে… আপনার এই বৈভব, এই বিত্তর কোন দামীই নেই আমার কাছে… এতটাই নীচ আপনার মানসিকতা…” বলে ঘরের বাইরে পা বাড়াবার উপক্রম করে সূর্য…
পেছন থেকে দ্রুত এগিয়ে এসে ওর হাত চেপে ধরে অলিভীয়া… “ওয়েট সূর্য… আমিও তোমার সাথেই যাবো… তবে যাবার আগে মম্ কে একটা কথা শুধু বলে যেতে চাই… এক মিনিট…” বলে পেছন ফিরে সামনে উপবিষ্ট কাউন্টেসের দিকে ফিরে অলিভীয়া বলে ওঠে… “মম্… একটা কথা পরিষ্কার শুনে রাখো… আই অ্যাম লিভিং দিস প্লেস ফর এভার… অ্যান্ড উইথ মাই লভ্… আর কখনও কোনদিন আমি তোমার কাছে ফিরে আসবো না… কারণ আজকে তুমি যে ভাবে, আর যে ভাষায় সূর্যকে অপমান করেছ, তাতে আমার মনে হয় সেটা আমার অপমানও… কারণ ভারতীয় আমার স্বামী… তাই আমিও ভারতীয়ও সেই সাথেই… সেই জন্য একজন ভারতীয় হয়ে এই অপমান সহ্য করে নেবার কোন ইচ্ছাই আমার নেই…” বলে ফের সূর্যের দিকে ফিরে বলে সে, “চলো সূর্য… লেটস্ গো ব্যাক টু আওয়ার ওন প্লেস… আমরা ফিরে যাই আমাদের জায়গায়… যেখানে আমাদের ভালোবাসার সন্মান আছে…”
পেছন থেকে তাও শেষ বারের মত চেষ্টা করেন কাউন্টেস্… “তুমি যদি এখন এই ভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও… দেন আমি অ্যাম টেলিং ইয়ু… আর কোন দিন এখানে ফিরতে পারবে না… আর এই বাড়ির সমস্ত সম্পত্তি থেকে তুমি বঞ্চিত হবে…”
ওনার কথায় বাধা দিয়ে কিছু বলতে ওঠেন অলিভীয়ার ড্যাড… কিন্তু তার আগেই হাত তুলে থামিয়ে দেন কাউন্টেস… “ওটাই আমার শেষ কথা…”
ফিরে দাঁড়ায় অলিভীয়া তার মম্ এর দিকে… হাতে ধরে থাকে শক্ত করে সূর্যের হাতখানি… “সেটা তোমায় না বললেও চলতো মম্… আমি তোমারই তো মেয়ে… তাই আমিও যখন একবার ডিসিশন নিয়েছি যে আমি চলে যাব… তার মানে এই নয় যে তোমার এই সম্পত্তির লোভে আবার আমি গুটি গুটি ফিরে আসবো… আমি চলে যাবো সূর্যেরই হাত ধরে… ওর কাছে… চিরতরে… সে যেভাবে আমায় রাখবে, আমি সেই ভাবেই থাকবো… ওর স্ত্রী হয়ে… সারা জীবন…”
শক্ত চোয়ালে চুপ করে তাকিয়ে থাকেন কাউন্টেস ওদের চলে যাবার দিকে… তাঁর চোখের সামনে দিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় অলিভীয়া সূর্যের হাত ধরে…
ক্রমশ…