26-02-2021, 07:31 PM
আমি সুটকেস থেকে ঝুমার জন্য আনা মেকআপ বক্স টা বাড়িয়ে দিলাম । কোন দ্বিরুক্তি করলনা ঝুমা হাত বাড়িয়ে নিলো , তারপর উল্টে পাল্টে দেখে জিজ্ঞাস করলো
“এইটার ভিতরে কি ?”
আমি বললাম “মেকআপ বক্স , তুমি তো মাঝে মাঝে একটু সাঁজতে পছন্দ করো তাই নিয়ে এসেছি তোমার জন্য"
“ তহন দিলেন না যে" মুচকি হেঁসে জিজ্ঞাস করলো ঝুমা
আমিও হেঁসে বললাম “ তুমি তো লুকিয়ে লুকিয়ে সাজো তাই আমিও লুকিয়ে লুকিয়ে দিলাম “
“ কিন্তু এই জিনিস তো আমার কামে আইবো না ছোট মিয়াঁ , আমি তো খালি কাজল দেই, আর এইগুলা ক্যামনে দেয় হেইটাও আমি জানি না“ ঝুমা মেকাপবক্স খুলে বলল
“ না জানলে নাই তুমি রেখে দাও তাতেই চলবে “
“আচ্ছা রাখলাম , এহন আমি যাই , আপার লগে ঘুমামু আমি “ এই বলে ঝুমা চলে গেলো ।
মনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ,ঝুমা আমার আর ওর মাঝে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটা আর সামনে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয় সেটা বুঝতে পারায় বেশ হালকা লাগছে নিজেকে আবার এই ভেবে খারাপ লাগছে যে ঝুমা সে রাতের ঘটনাকে সুধুই একটা দুর্ঘটনা ভাবছে ।
রাতে শুয়ে শুয়ে ঝুমার বিষয়টা নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম ।
পরদিন সকালে সোনিয়া আর করিমের দুই ছেলে এসে হাজির । আগেরবার কিছু না বলে চলে যাওয়ায় আমাকে বেশ কিছু কথা শুনীয়ে দিলো সোনিয়া । আমি ওদের জন্য নিয়ে আসা জিনিস গুলি দিতে গেলে ওরা নিলো না , বলল ওদের বাড়ি গিয়ে তারপর দিয়ে আসতে হবে। আমি তাতে রাজি হয়ে গেলাম ।
দেখলাম যে ঝুমার সাথে অনিলার বেশ খাতির হয়ে গেছে , ঝুমা যেদিক যায় অনিলাও সেদিক যায় । সারাদিন এই করেই কাটাচ্ছে , মনে মনে ভাবলাম মেয়েকে গ্রাম দেখতে নিয়ে যাওয়া উচিৎ । কিন্তু আলসেমি লাগছে খুব , ঢাকায় যে কটা দিন ছিলাম তখন তো মলে মলে ঘুরে কাটাতে হয়েছে ।
বিকেলে বারান্দায় বসে চা আর পিঠা খাচ্ছিলাম আর নিচে অনিলার আনন্দ দেখছিলাম ঝুমার সাথে গরুকে খাবার দিচ্ছে অনিলা। গাড়িতে বসে সেই যে মেয়েটা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করেছে এর পর আর তেমন কথা হয়নি ।
“ পিঠা কেমন হইসে ছোট মিয়াঁ , হেই কাশীপুর থেইকা খেজুর রস নিয়া আইসি আমি নিজে গিয়া “ আজমল চাচা এসে আমার পাশে দাঁড়ালো ।
“আরে আজমল চাচা যে বসেন” আমি আজমল চাচাকে সামনের চেয়ার দেখিয়ে বললাম । আজমল চাচা প্রথমে বসতে না চাইলেও কয়েকবার বলাতে বসে পরলো ।
“ আমাগো দিদি ভাই কিন্তু মাসাল্লাহ দেখতে অনেক সুন্দর হইসে “ আজমল চাচা নিচে অনিলার দিকে তাকিয়ে বলল । “ তয় মাইয়া দিয়া তো আর বংস রক্ষা হইবো না ছোট মিয়াঁ , আপনের পর এই মিয়াঁ বাড়ি দেখবো কে?” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আজমল চাচা
আমি আজমল চাচার দিকে তাকালাম , ওনার বক্তব্য ঠিক কি সেটা বুঝতে চাইছি । আজমল চাচা আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে বললেন
“ রাগ কইরেন না ছোট মিয়াঁ আমার কথা শুইনা , আমি পুরান দিনের লোক তাই কইয়া ফালাইসি” এই বলে আরও একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলল আজমল চাচা তারপর আবার বলল “তয় মনটা খালি কান্দে , আমি জতদিন বাইচা আসি এই বাড়ি আগলায় রাখুম , কিন্তু আমার মরনের পর কি হইবো সেইটা চিন্তা করলে রাইতে আর ঘুম হয় না আমার “ এই বলে একটু থামল আজমল চাচা তারপর আবার বলল “আমার ও তো কোন বংসধর নাই থাকলে অগো হাতে তুইলা দিতাম”
“ আরে চাচা এতো দুঃখ পাওয়ার কি আছে , অনিলা আছে না আমার পর ও এই বাড়ির উত্তরআধিকারি হবে” আমি হেঁসে বললাম ।
“ সেইটা কি আর হয় বাজান , মাইয়া হইলো পরের ধন , পরের আমানত , পাইল্লা পুইষা বড় কইরা পরের হাতে তুইলা দিতে হয় , মাইয়ার কাম হইলো পরের বাড়ি সাম্লাইন্না পরের বংশ রক্ষা করা , নিজের বংস রক্ষা করতে হইলে পোলা লাগে”
“ ধুর চাচা কি যে বলেন , আগের দিন আর আছে নাকি , এখন মেয়েরাও কত কিছু করছে, আমার অনিলার ছেলে পুলেরাই আমার বংসধর হবে “ আমি হাসতে হাসতে বললাম ।
“সেইটা কি হয় ছোট মিয়াঁ , মাইয়া বিয়া দিলে পরের অদিন , স্বামী যা কইব হের তাই করতে হইবো , ডাইনে জাইতে কইলে ডাইনে বায়ে যাইতে কইলে বায়ে , মাইয়া বিয়ার পর এই বাড়ির মালিক হইয়া যাইব পরের পোলা , আর পরের পোলার কি এই বাড়ির লইগা দরদ লাগবো”
বুঝালাম আজমল চাচা কিছুতেই এই টপিক আর ছারবেন না তাই আমি শেষ করার জন্য বললাম “সবই তো বুঝলাম চাচা আপনার কথায় যুক্তি আছে কিন্তু কি আর করা , আমার তো আর ছেলে নেই “
“ নাই তো কি হইসে , এহন হইবো” আজমল চাচার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো ।
আমি চায়ে একটা চুমুক দিয়েছিলাম , আজমল চাচার কথা শুনে ভিষম খেলাম । এই লোক বলে কি আমার নাকি এখন আবার ছেলে হবে ।
“ অবাক হওনের কিছু না বাজান , আপনের আর কত বয়স , তাছারা পোলা মানুষের আবার বয়স কি , একটা পাত্রি আছে আমার খোঁজে , আমি কতা ও কইসি কিছু , বাপে মির্জা পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান , তয় চেয়ারম্যান হইলে কি হইবো এম পি গো চেয়ে পাওয়ার বেশি সরাসরি মন্ত্রি পর্যায়ে খাতির আছে”
“ ধুর চাচা কি যে বলেন আপনি এ কি আর হয় , আমার পক্ষে আর বিয়ে সাদি করা সম্ভব নয় , তাছারা গ্রামে থাকার ও আমার কোন ইচ্ছা নেই “ আমি হেঁসে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম । কিন্তু আজমল চাচা সিরিয়াস
“ মাইয়ার বাপ কিন্তু রাজি ছোট মিয়াঁ , আর মাইয়া দেখতেও মাসসাল্লাহ পরীর মতন , আমার কাছে ছবি আছে” এই বলে আজমল চাচা পকেট থেকে একটা ফটো বের করে দেখালেন , একটা ১৫-১৬ বছরের মেয়ে সরা গাঁয়ে সোনার গয়না জড়িয়ে ছবি তুলেছে ।
“ ধুর চাচা আপনি রাখেন তো এই মেয়ে তো অনিলার চেয়েও ছোট “ আমি ছবি ফিরিয়ে দিয়ে বললাম
“ মাইয়া কিন্তু সুলক্ষণা , পোলা কপালি আমি জ্যোতিষ দেখাইসি , আপনের কিচ্ছু করতে হইবো না খালি বিয়া কইরা রাইখা জাইবেন আর বছরে দুই একবার আইসা বেরাইয়া জাইবেন , আপনের বউ আর পোলা আমি আগ্লাইয়া রাখুম ,” ছবি পকেতে রাখতে রাখতে বললেন আজমল চাচা ।
“ ঠিক আছে আমি ভেবে দেখবো” এই বলে আমি চা খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম আর নিচে অনিলা আর ঝুমার দিকে তাকালাম । ঝুমা গাইয়ের দুধ দোয়াচ্ছে আর অনিলা বাছুর এর দড়ি ধরে রেখছে । একটা চিন্তা মনের মাঝে উঁকি দিলো , আচ্ছা যদি সত্যি সত্যি আমি বিয়ে করি তাহলে কেমন হয় ? পাত্রি তো রেডি আছে , এখানেই থাকবে , আর আজমল চাচার আপন লোক বলে আমল চাচা তার খেয়াল ও রাখবে ।
পরক্ষনেই আমি সে চিন্তা বাদ দিলাম , কেমন জানি লাগছে ব্যাপারটা শত হোক রাবুর মেয়ে তো । এই মেয়েকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না ।
সন্ধ্যা হতেই অনিলা দোতলায় উঠে এলো , মুখে ঝলমলে হাঁসি । দেখে আমার মনটা ভালো হয়ে গেলো , যাক মেয়েটা হাঁসি খুসি আছে । অনিলা এসেই আমার চেয়ারের হাতলে বসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো । গা থেকে গরুর গন্ধ আসছে ওর ।
“কিরে মা এতো আদর হচ্ছে আজ , কিছু কি লাগবে?” আমি হেঁসে জিজ্ঞাস করলাম
অমনি ঠোট ফুলিয়ে বলল “ আমি কি সুধু চাওয়ার সময় ই তোমাকে আদর করি”
“ না না তা কেন তুই তো আমার মা” আমি হেঁসে বললাম ।
“ আব্বু একটা কথা বলি?” কিছুক্ষন আমার মাথায় বিলি কাঁটার পর অনিলা বলল
“বল মা”
“ আমি কি এখান থেকে ঐ বাছুরটা নিয়ে যেতে পারি ? ঝুমা আপা দিয়ে দেবে সুধু তোমার পারমিশন চাইছে”
আমি অবাক হয়ে গেলাম , “বলিস কি বাছুর দিয়ে তুই কি করবি?”
“আমি পেট হিসেবে আমার কাছে রাখবো।“ অনিলা আদুরে গলায় বলল
“ তুই কি পাগল রে মা , এই বাছুর কি পোষার জিনিস , এটা কত বড় হবে তুই জানিস”
“ কেন আমি ইউ টিউব এ দেখেছি একটা মেয়ে একটা গ্রোনআপ গরু কে পেট হিসাবে ঘরে রাখে” অনিলা আমার কথায় প্রতিবাদ করলো
“ গরু ঘরে রাখার জিনিস না রে মা এরা ক্ষণে ক্ষণে টয়লেট করে, আর ঘরে গরু রাখলে তোদের ফ্ল্যাট থেকে বের করে দেবে” আমি অনিলাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম । কিন্তু অনিলা কিছুতেই বুঝতে চাইছে না , বাচুর টা নাকি খুব কিউট । শেষে বললাম “পড়ে ভেবে দেখবো”
এমন সময় আমার নজর পরলো সিঁড়ির দিকে । সেখানে ঝুমা দাড়িয়ে আছে , এক দৃষ্টিতে আমার আর অনিলার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওর দৃষ্টিতে কেমন জানি একটা লোভী ভাব ছিলো আমি তাকাতেই সেটা দূরে সরিয়ে দিয়ে হেঁসে ফেলল ।
“ বাপ বেটিতে মহাব্বত হইতাসে দেখি , এই নেন দুইজনে দুধ খাইয়া লন” এই বলে হাতের প্লেট আমাদের সামনে এগিয়ে ধরলো , সেখানে দুইটা কাচের গ্লাস ভর্তি গরম দুধ
“ ওয়াক , আমি দুধ খাইনা” আমি আর অনিলা এক সাথে বলে উঠলাম ।
“এইটার ভিতরে কি ?”
আমি বললাম “মেকআপ বক্স , তুমি তো মাঝে মাঝে একটু সাঁজতে পছন্দ করো তাই নিয়ে এসেছি তোমার জন্য"
“ তহন দিলেন না যে" মুচকি হেঁসে জিজ্ঞাস করলো ঝুমা
আমিও হেঁসে বললাম “ তুমি তো লুকিয়ে লুকিয়ে সাজো তাই আমিও লুকিয়ে লুকিয়ে দিলাম “
“ কিন্তু এই জিনিস তো আমার কামে আইবো না ছোট মিয়াঁ , আমি তো খালি কাজল দেই, আর এইগুলা ক্যামনে দেয় হেইটাও আমি জানি না“ ঝুমা মেকাপবক্স খুলে বলল
“ না জানলে নাই তুমি রেখে দাও তাতেই চলবে “
“আচ্ছা রাখলাম , এহন আমি যাই , আপার লগে ঘুমামু আমি “ এই বলে ঝুমা চলে গেলো ।
মনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ,ঝুমা আমার আর ওর মাঝে ঘটে যাওয়া ব্যাপারটা আর সামনে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয় সেটা বুঝতে পারায় বেশ হালকা লাগছে নিজেকে আবার এই ভেবে খারাপ লাগছে যে ঝুমা সে রাতের ঘটনাকে সুধুই একটা দুর্ঘটনা ভাবছে ।
রাতে শুয়ে শুয়ে ঝুমার বিষয়টা নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম ।
পরদিন সকালে সোনিয়া আর করিমের দুই ছেলে এসে হাজির । আগেরবার কিছু না বলে চলে যাওয়ায় আমাকে বেশ কিছু কথা শুনীয়ে দিলো সোনিয়া । আমি ওদের জন্য নিয়ে আসা জিনিস গুলি দিতে গেলে ওরা নিলো না , বলল ওদের বাড়ি গিয়ে তারপর দিয়ে আসতে হবে। আমি তাতে রাজি হয়ে গেলাম ।
দেখলাম যে ঝুমার সাথে অনিলার বেশ খাতির হয়ে গেছে , ঝুমা যেদিক যায় অনিলাও সেদিক যায় । সারাদিন এই করেই কাটাচ্ছে , মনে মনে ভাবলাম মেয়েকে গ্রাম দেখতে নিয়ে যাওয়া উচিৎ । কিন্তু আলসেমি লাগছে খুব , ঢাকায় যে কটা দিন ছিলাম তখন তো মলে মলে ঘুরে কাটাতে হয়েছে ।
বিকেলে বারান্দায় বসে চা আর পিঠা খাচ্ছিলাম আর নিচে অনিলার আনন্দ দেখছিলাম ঝুমার সাথে গরুকে খাবার দিচ্ছে অনিলা। গাড়িতে বসে সেই যে মেয়েটা আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করেছে এর পর আর তেমন কথা হয়নি ।
“ পিঠা কেমন হইসে ছোট মিয়াঁ , হেই কাশীপুর থেইকা খেজুর রস নিয়া আইসি আমি নিজে গিয়া “ আজমল চাচা এসে আমার পাশে দাঁড়ালো ।
“আরে আজমল চাচা যে বসেন” আমি আজমল চাচাকে সামনের চেয়ার দেখিয়ে বললাম । আজমল চাচা প্রথমে বসতে না চাইলেও কয়েকবার বলাতে বসে পরলো ।
“ আমাগো দিদি ভাই কিন্তু মাসাল্লাহ দেখতে অনেক সুন্দর হইসে “ আজমল চাচা নিচে অনিলার দিকে তাকিয়ে বলল । “ তয় মাইয়া দিয়া তো আর বংস রক্ষা হইবো না ছোট মিয়াঁ , আপনের পর এই মিয়াঁ বাড়ি দেখবো কে?” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আজমল চাচা
আমি আজমল চাচার দিকে তাকালাম , ওনার বক্তব্য ঠিক কি সেটা বুঝতে চাইছি । আজমল চাচা আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে বললেন
“ রাগ কইরেন না ছোট মিয়াঁ আমার কথা শুইনা , আমি পুরান দিনের লোক তাই কইয়া ফালাইসি” এই বলে আরও একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলল আজমল চাচা তারপর আবার বলল “তয় মনটা খালি কান্দে , আমি জতদিন বাইচা আসি এই বাড়ি আগলায় রাখুম , কিন্তু আমার মরনের পর কি হইবো সেইটা চিন্তা করলে রাইতে আর ঘুম হয় না আমার “ এই বলে একটু থামল আজমল চাচা তারপর আবার বলল “আমার ও তো কোন বংসধর নাই থাকলে অগো হাতে তুইলা দিতাম”
“ আরে চাচা এতো দুঃখ পাওয়ার কি আছে , অনিলা আছে না আমার পর ও এই বাড়ির উত্তরআধিকারি হবে” আমি হেঁসে বললাম ।
“ সেইটা কি আর হয় বাজান , মাইয়া হইলো পরের ধন , পরের আমানত , পাইল্লা পুইষা বড় কইরা পরের হাতে তুইলা দিতে হয় , মাইয়ার কাম হইলো পরের বাড়ি সাম্লাইন্না পরের বংশ রক্ষা করা , নিজের বংস রক্ষা করতে হইলে পোলা লাগে”
“ ধুর চাচা কি যে বলেন , আগের দিন আর আছে নাকি , এখন মেয়েরাও কত কিছু করছে, আমার অনিলার ছেলে পুলেরাই আমার বংসধর হবে “ আমি হাসতে হাসতে বললাম ।
“সেইটা কি হয় ছোট মিয়াঁ , মাইয়া বিয়া দিলে পরের অদিন , স্বামী যা কইব হের তাই করতে হইবো , ডাইনে জাইতে কইলে ডাইনে বায়ে যাইতে কইলে বায়ে , মাইয়া বিয়ার পর এই বাড়ির মালিক হইয়া যাইব পরের পোলা , আর পরের পোলার কি এই বাড়ির লইগা দরদ লাগবো”
বুঝালাম আজমল চাচা কিছুতেই এই টপিক আর ছারবেন না তাই আমি শেষ করার জন্য বললাম “সবই তো বুঝলাম চাচা আপনার কথায় যুক্তি আছে কিন্তু কি আর করা , আমার তো আর ছেলে নেই “
“ নাই তো কি হইসে , এহন হইবো” আজমল চাচার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো ।
আমি চায়ে একটা চুমুক দিয়েছিলাম , আজমল চাচার কথা শুনে ভিষম খেলাম । এই লোক বলে কি আমার নাকি এখন আবার ছেলে হবে ।
“ অবাক হওনের কিছু না বাজান , আপনের আর কত বয়স , তাছারা পোলা মানুষের আবার বয়স কি , একটা পাত্রি আছে আমার খোঁজে , আমি কতা ও কইসি কিছু , বাপে মির্জা পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান , তয় চেয়ারম্যান হইলে কি হইবো এম পি গো চেয়ে পাওয়ার বেশি সরাসরি মন্ত্রি পর্যায়ে খাতির আছে”
“ ধুর চাচা কি যে বলেন আপনি এ কি আর হয় , আমার পক্ষে আর বিয়ে সাদি করা সম্ভব নয় , তাছারা গ্রামে থাকার ও আমার কোন ইচ্ছা নেই “ আমি হেঁসে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম । কিন্তু আজমল চাচা সিরিয়াস
“ মাইয়ার বাপ কিন্তু রাজি ছোট মিয়াঁ , আর মাইয়া দেখতেও মাসসাল্লাহ পরীর মতন , আমার কাছে ছবি আছে” এই বলে আজমল চাচা পকেট থেকে একটা ফটো বের করে দেখালেন , একটা ১৫-১৬ বছরের মেয়ে সরা গাঁয়ে সোনার গয়না জড়িয়ে ছবি তুলেছে ।
“ ধুর চাচা আপনি রাখেন তো এই মেয়ে তো অনিলার চেয়েও ছোট “ আমি ছবি ফিরিয়ে দিয়ে বললাম
“ মাইয়া কিন্তু সুলক্ষণা , পোলা কপালি আমি জ্যোতিষ দেখাইসি , আপনের কিচ্ছু করতে হইবো না খালি বিয়া কইরা রাইখা জাইবেন আর বছরে দুই একবার আইসা বেরাইয়া জাইবেন , আপনের বউ আর পোলা আমি আগ্লাইয়া রাখুম ,” ছবি পকেতে রাখতে রাখতে বললেন আজমল চাচা ।
“ ঠিক আছে আমি ভেবে দেখবো” এই বলে আমি চা খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম আর নিচে অনিলা আর ঝুমার দিকে তাকালাম । ঝুমা গাইয়ের দুধ দোয়াচ্ছে আর অনিলা বাছুর এর দড়ি ধরে রেখছে । একটা চিন্তা মনের মাঝে উঁকি দিলো , আচ্ছা যদি সত্যি সত্যি আমি বিয়ে করি তাহলে কেমন হয় ? পাত্রি তো রেডি আছে , এখানেই থাকবে , আর আজমল চাচার আপন লোক বলে আমল চাচা তার খেয়াল ও রাখবে ।
পরক্ষনেই আমি সে চিন্তা বাদ দিলাম , কেমন জানি লাগছে ব্যাপারটা শত হোক রাবুর মেয়ে তো । এই মেয়েকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না ।
সন্ধ্যা হতেই অনিলা দোতলায় উঠে এলো , মুখে ঝলমলে হাঁসি । দেখে আমার মনটা ভালো হয়ে গেলো , যাক মেয়েটা হাঁসি খুসি আছে । অনিলা এসেই আমার চেয়ারের হাতলে বসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো । গা থেকে গরুর গন্ধ আসছে ওর ।
“কিরে মা এতো আদর হচ্ছে আজ , কিছু কি লাগবে?” আমি হেঁসে জিজ্ঞাস করলাম
অমনি ঠোট ফুলিয়ে বলল “ আমি কি সুধু চাওয়ার সময় ই তোমাকে আদর করি”
“ না না তা কেন তুই তো আমার মা” আমি হেঁসে বললাম ।
“ আব্বু একটা কথা বলি?” কিছুক্ষন আমার মাথায় বিলি কাঁটার পর অনিলা বলল
“বল মা”
“ আমি কি এখান থেকে ঐ বাছুরটা নিয়ে যেতে পারি ? ঝুমা আপা দিয়ে দেবে সুধু তোমার পারমিশন চাইছে”
আমি অবাক হয়ে গেলাম , “বলিস কি বাছুর দিয়ে তুই কি করবি?”
“আমি পেট হিসেবে আমার কাছে রাখবো।“ অনিলা আদুরে গলায় বলল
“ তুই কি পাগল রে মা , এই বাছুর কি পোষার জিনিস , এটা কত বড় হবে তুই জানিস”
“ কেন আমি ইউ টিউব এ দেখেছি একটা মেয়ে একটা গ্রোনআপ গরু কে পেট হিসাবে ঘরে রাখে” অনিলা আমার কথায় প্রতিবাদ করলো
“ গরু ঘরে রাখার জিনিস না রে মা এরা ক্ষণে ক্ষণে টয়লেট করে, আর ঘরে গরু রাখলে তোদের ফ্ল্যাট থেকে বের করে দেবে” আমি অনিলাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম । কিন্তু অনিলা কিছুতেই বুঝতে চাইছে না , বাচুর টা নাকি খুব কিউট । শেষে বললাম “পড়ে ভেবে দেখবো”
এমন সময় আমার নজর পরলো সিঁড়ির দিকে । সেখানে ঝুমা দাড়িয়ে আছে , এক দৃষ্টিতে আমার আর অনিলার দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওর দৃষ্টিতে কেমন জানি একটা লোভী ভাব ছিলো আমি তাকাতেই সেটা দূরে সরিয়ে দিয়ে হেঁসে ফেলল ।
“ বাপ বেটিতে মহাব্বত হইতাসে দেখি , এই নেন দুইজনে দুধ খাইয়া লন” এই বলে হাতের প্লেট আমাদের সামনে এগিয়ে ধরলো , সেখানে দুইটা কাচের গ্লাস ভর্তি গরম দুধ
“ ওয়াক , আমি দুধ খাইনা” আমি আর অনিলা এক সাথে বলে উঠলাম ।