Thread Rating:
  • 14 Vote(s) - 3.29 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica স্বীকারোক্তি (প্রথম পর্ব)
#19
।। ১৩ ।।




‘জিস নাম্বার পে আপ কল কর রহে হ্যায়, উসকা উত্তর নহি মিল রহা হ্যায়। কৃপয়া থোড়ি দের বাদ...’
 
মুঠোফোনের ভেতর থেকে ভেসে আসা সুকণ্ঠী ঘোষিকার একটানা যান্ত্রিক স্বর পুরোটা শোনার ধৈর্য হল না। ইংরেজি আর কন্নড়ে গতানুগতিক অনুবাদের ফাটা রেকর্ড শুরু হওয়ার আগেই আঙুলের অস্থির ছোঁয়ায় স্তব্ধ দূরভাষ। অন্ধকার পর্দায় জ্বলজ্বল করছে শুধু নির্বাক সংখ্যারা। স্বয়ংক্রিয় সময়সূচক। বছর-মাস-দিন অতিক্রম করে ঘণ্টা-মিনিট-সেকেণ্ডেরও নির্ভুল পরিমাপ। মহাকালকে নিজেদের নিয়মে বাঁধতে চাওয়া ক্ষুদ্র মানুষের হাস্যকর প্রয়াস। রাত এগারোটা কুড়ি।
 
কল্লোলিনী তিলোত্তমার ঘড়ি অনুযায়ী সবে সন্ধেরাত হলেও কর্মব্যস্ত প্রযুক্তি-নগরীর রবি-নিশির নিরিখে সময়টা নিশুতি। সীমানা রক্ষায় সদাতৎপর কিছু সারমেয়র ইতিউতি আস্ফালন আর পাব-ডিস্কোয় উদ্দাম সায়াহ্নযাপনের শেষে ‘মানডে-মর্নিং-ব্লুজ’-এর তাড়নায় ক্লান্তচোখে অকালে নীড়ে ফিরতে থাকা রাতপাখিদের গাড়ির হর্নের একঘেয়ে আওয়াজ... এ ব্যতীত চরাচর প্রায় সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ। মন দিয়ে কান পাতলে শোনা যায় শুধু দেয়ালে অধিষ্ঠিত কোয়ার্টজ ঘড়ির অবিরাম আত্মঘোষণা। টিকটিক, টিকটিক। ‘তুমি আছো, আমি আছি’সঙ্গে বরাদ্দ অখণ্ড নীরবতা।
 
‘দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া...’
 
খাটের ওপর এলোমেলো ভাবে বিন্যস্ত একজোড়া হাত, দুমড়ে মুচড়ে থাকা দুটো পা। অবসাদে এলিয়ে পড়া শরীরের আর সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। সমষ্টিগতভাবে দেখলে এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। সংসারের মায়াপ্রপঞ্চে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাঁধা। ইহজীবনের বন্ধনমুক্ত হওয়ামাত্র যার প্রতিটি অণু-পরমাণু গিয়ে আশ্রয় নেবে পঞ্চভূতে। নশ্বরদেহের পরিসমাপ্তি চিতাভস্মে। বা গোরের চিরঅন্ধকারের অন্তরালে। বা সুউচ্চ নির্জন প্রাকার-স্তম্ভের আড়ালে ওত পেতে থাকা নরমাংসলোলুপ খেচরের পাকস্থলীতে। কিংবা...
 
কিন্তু শরীরের অভ্যন্তরে, অনেক অনেক গভীরে, রঞ্জন-রশ্মির সন্ধানী দৃষ্টিও যার হদিশ পায় না সেই অতলের নিভৃত কোনও কোটরে বাস করা মন? কি হয় তার গতি? জিয়ন্তে যার অবাধ যাতায়াত সর্বব্যাপী, সর্বগামী; স্বয়ং ধর্মরাজ যাকে দরাজহস্তে শংসাপত্র বিলিয়েছেন ‘বাতাসের চেয়েও দ্রুতগামী’, সেও বুঝি হারিয়ে যায় ইহলীলা সংবরণের সাথে সাথেই? ঐহিক যাত্রার অন্তিমে যখন সব একাঙ্গী, সেই মুহূর্তেই কি রুদ্ধ তার বিচরণ? নাকি আত্মার মত সে অবিনশ্বর? অজর-অমর? মরণের ওপারে বৈতরণী কূলেভেড়ার পরেও সদা জাগরূক?
 
অথবা তার মৃত্যু হয়তো বারংবার। একজীবনে অনেকবার। কোনও অজানা মৃতসঞ্জীবনীর সংস্পর্শে মরণকে জয় করে সে ফিরে আসে নতুন করে বাঁচবে বলে। বা কোনও দুর্ভাগার ক্ষেত্রে, আরও একবার... কি আরও অনেকবার মরার জন্য।যে হতভাগ্যের অন্তিম পরিণতি মৃত মনকে সঙ্গে নিয়ে বেহুলার ভেলায় চেপে জীবনসমুদ্রে ভেসে বেড়ানো, আমৃত্যু।
 
কোনও এক মহাজন একদা বলেছিলেন, কাপুরুষের মৃত্যু হয় বারবার।
 
আজ তবে আমার পৌরুষ নিয়তির সাপ-সিঁড়ির খেলায় একধাপ নীচে নেমে দাঁড়াল? এই অধঃপতন কি তবে মৃত্যুর সমার্থক?
কে বলে দেবে এর উত্তর?

ভূতগ্রস্তের মত উঠে দাঁড়াই। শরীরের ভার দুর্বল পায়েরা কোনওমতে ধরে রেখেছে, হাঁটতে গিয়েই টের পেলাম সমস্ত শক্তি নিঃশেষিত। পড়ে যাওয়ার আগে জানলার গ্রিল ধরে সামাল দিয়েছি। আপাদমস্তক চুঁইয়ে পড়ছে অবসাদ আর ক্লান্তি। মাথা তোলার মত জোরটুকুও আর বাকি নেই। তবুও কি করে তুললাম জানি না। কোনওমতে দেহকাণ্ডকে সোজা রেখে অবসন্ন পায়ে দু’কদম এগোতেই প্রবল ঝটকা। সামনে ওয়ার্ড্রোবের লাগোয়া আয়নাতে এক বীভৎস ছায়া!

কে ও? এই ফ্ল্যাটে ঢুকল কি করে?

চোখে ভাল দেখতে পাচ্ছি না। শেষ ফেব্রুয়ারিতে বিদায় নিতে চলা শহুরে শীতের কুয়াশার আস্তরণ জমেই কি দৃষ্টি এমন ঘোলাটে হয়ে গেল? নাকি ঘরের রাতবাতিটার ঔজ্বল্য কমে কমে কবে ঘরের বাসিন্দার মত নিষ্প্রভ হয়ে গেছে টেরও পাইনি?
আধো-আলো আধো-অন্ধকারের প্রহেলিকা ভেদ করে ধীর স্খলিত পায়ে দাঁড়াই দর্পণের সামনে। একটু আগের ছায়া এখন মূর্তিমান বিভীষিকা হয়ে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে। ও-ও বুঝি কাউকে খুঁজছে এখানে? কিন্তু এই ঠিকানায় তো আর কেউ থাকে না, নেহাত পথ ভুল করে এত রাত্রে... কেমন যাযাবর ভিখারির মত চেহারা! কোটরে বসে যাওয়া দুই ম্লান চোখের আর্ত নীরব দৃষ্টি বলে দিচ্ছে দিন দুয়েক কোনও খাওয়া জোটেনি। পরনের কাপড়গুলোর কেমন ম্যাড়মেড়ে হতশ্রী দশা। উস্কোখুস্কো একমাথা চুল, ম্রিয়মাণ আলোতেও রুক্ষতার আভাস স্পষ্ট। কে জানে কতদিন চান করে না! স্বাস্থ্য খারাপ নয় কিন্তু গোটা শরীর জুড়ে ধুঁকতে থাকা ভাব। বুকটা যেন হাপরের মত অনবরত ওঠা-নামা করে চলেছে। চোখের নীচে ক্লান্তির গাঢ় ছোপ ভেদ করে ওর বিনিদ্র চাহনিটা সার্চলাইটের মত এসে পড়ছে আমার উপর, বুঝি অস্থি-পঞ্জর ভেদ করে দেখে নেবে আমার সমগ্র সত্তা। কার সন্ধানে এসেছো আগন্তুক?

অনেকক্ষণের নীরবতার পলি জমে ঘরের বাতাসটা ভারী, তাই বোধহয় কথা বলতে গিয়েও গলায় স্বর ফোটে না। একটু থেমে, খুব সন্তর্পণে গলাখাঁকারি দিই।

‘কাকে খুঁজছো এত রাতে?’

ছায়ামূর্তি একইভাবে নীরব, নিশ্চল। শুধু তার চোখের পাতায় ক্ষণিকের কাঁপন জেগে উঠে মিলিয়ে যায়।

‘এখানে কাকে চাই?’

তাও কোনও উত্তর নেই। একদৃষ্টে দেখে চলে আমায়। সে দৃষ্টিতে কি অদ্ভুত অভিব্যক্তি! অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে গিয়েও পারি না। আবার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করতে যাব, হঠাৎ সে স্বপ্নোত্থিতের মত বলে ওঠে,

‘এটা কি অয়নাংশু সাহার বাড়ি?’

আশ্চর্য, ভুল ঠিকানা তো নয়! কে ও, কি চায় আমার কাছে?
আর কারওর কিই বা চাওয়ার থাকতে পারে আমার কাছে?
কৌতূহলী মন বাগ মানে না, সে প্রশ্নোত্তর চালিয়ে যায়। একের পর এক। ছায়ামূর্তিও জবাব দেয়, একের পর এক। এতক্ষণের নীরব ফ্ল্যাট অনুরণিত হয় আমাদের আলাপচারিতায়।

বহমান সময়ের প্রতিটি ঢেউ গুনতে থাকা ঘড়িটা শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে অয়নাংশু, অর্থাৎ অন্তুর সাথে তার নিজ প্রতিবিম্বের কথোপকথন।

...

রাত পেরিয়ে দিন আসে, সূর্য ওঠে, ভোর হয়। বীতনিদ্র চোখে দেখতে থাকি একটু একটু করে আলোর স্পর্শে গোটা চরাচরের উপর সোনালি আবরণ বিছিয়ে যাচ্ছে। ঘুম ভেঙে উঠে শুরু হয় পাখিদের রোজনামচা, তারপরে মানুষের। নিস্তব্ধ পৃথিবী মুখর হয় ব্যস্ত কোলাহলে। জানলার পর্দাটা যৎকিঞ্চিৎ ফাঁক, সেই সুযোগে একফালি রোদ চুরি করে ঢুকে পড়েছে  ঘরের ভিতর। ক্রমাগত সাহস সঞ্চয় করে তার অবাধ বিচরণ মেঝে থেকে খাটের উপর, সবশেষে ক্লান্ত দুই চোখের পাতায়। যন্ত্রচালিতের মত নিজেকে টেনে তুলি। অফিস যেতে হবে।

রোদের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার আগে পর্যন্ত সকালের দিকটায় এসময়ে শীতের ভালই কামড় থাকে। বোধহয় যাওয়ার আগে সে নিজের উপস্থিতিটা জানান দিয়ে যেতে চায়। আশপাশের সবার বেশভূষাতেও তার ছাপ। শুধু আমি ছাড়া। সোয়েটার বা জ্যাকেট নেওয়ার কথা ভুলে মেরে দিয়েছি। গোটা শরীরটা যেন এসব পার্থিব অনুভূতির অতীত এখন। খিদে-তেষ্টা-শীতবোধ কিছুই আর স্পর্শ করতে পারছে না। এক অদ্ভুত নিরাসক্তির বলয় আস্তে আস্তে ঘিরে ধরছে আমায় চারিদিক থেকে। নির্লিপ্তি, তার সাথে অভিমান মিশে মনের ভিতর ইস্পাতের কাঠিন্য। ভলভো বাসের আরামদায়ক আসনে বসে, পাশেই এক উদ্ভিন্নযৌবনা যাত্রিনী। শীতবোধ কাটাতে কিংবা আদিম গূঢ়ৈষণা বশত তার তন্বী অবয়ব প্রয়োজনের থেকে একটু বেশি ঘনিষ্ঠ, পেলব উরু বাসের গতির সাথে থেকে থেকে পিষ্ট হচ্ছে আমার ডান উরুতে, আঁটোসাটো টপের আড়াল ভেদ করে বেরিয়ে আসা কমনীয় বাহু ছুঁয়ে রেখেছে পুরুষালি বাহুর প্রান্তদেশ।  দূরভাষে কথা বলার অছিলায় বারকয়েক কোমল স্তন তার উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে গেল। মাদকতাময় সুরভির প্রলেপ বাতাসে। এত আহ্বান, তবু একবারের জন্যও সাড়া জাগল না পৌরুষে। আপাদমস্তক শীতলতার বর্মে ধাক্কা খেয়ে ফিরে যাচ্ছে আদিম রিপুর আবেদন। মস্তিষ্ক আশ্রয় নিয়েছে বোধহীনতার আড়ালে, অসাড় মন শুধু ভেবে চলেছে...

কেউ সকালে ফোন করে জানতে চায়নি ব্রেকফাস্ট করেছি কিনা। কেউ আদর-জড়ানো শাসনের গলায় বলেনি জ্যাকেট আর মাফলার নিতে, এই ওয়েদারেই নাকি ঠাণ্ডা লাগে বেশি। সকালের নীলচে আলো মাখা সুরে কেউ প্রশ্ন করেনি আমি কি শুধুই তার কথা ভাবছি? তাকে প্রচণ্ড মিস করছি?

হায়, কি বিচিত্র এ জগৎ! কি বিচিত্র তার নিয়ম! রোজ এই একই প্রশ্নের প্রাত্যহিকতার একঘেয়েমিতে সময় সময় বিরক্ত হতাম। কিন্তু সেটা সন্তর্পণে গোপন করতে হত। ভুলক্রমেও বিরক্তির আভাসমাত্র যদি ফোনের ওপারে পৌঁছয় তাহলে সে মানভঞ্জনের মেয়াদ সারাদিন, চাই কি গোটা সপ্তাহ।

আর আজ, এই একলা সকালে যখন আমার মনের মেঘলা আকাশ জুড়ে শুধু তার মুখ, তার কথা... পকেটে রাখা দূরভাষ তখন মুখর অনভ্যস্ত মৌনতায়।
দেড়দিনের অভিজ্ঞতা বলছে পরিচিত নম্বরে ডায়াল করলে কেবল ঘোষিকার যান্ত্রিক স্বর শোনা যাবে

গত শনিবার বিকেল থেকে যতবার পিপিকে ফোন করেছি, একটিবারের জন্যও সেই পরিচিত মধুঝরানো গলা শুনতে পাইনি।
গোলাপি আভাময় গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকা জলবিন্দুদের সংবরণ করার কোনওরকম চেষ্টা না করে আমার ঘরের দরজা দিয়ে যখন সে উন্মাদিনীর বেগে বেরিয়ে গিয়েছিল, তখনও তার গলা থেকে একটি শব্দ বেরোয়নি, অস্ফুট কান্নার গোঙানিটুকু ছাড়া। শুধু যাওয়ার আগে মুহূর্তের ভগ্নাংশের জন্য তার তীব্র দৃষ্টি ছুঁয়ে গিয়েছিল আমায়। সে চাহনিতে দেখেছিলাম নারীর বুকের ভিতর জ্বলতে থাকা অপমানের বহ্নিশিখা।

এখনও সেই লেলিহান আগুনে দগ্ধে চলেছি আমি, পুড়তে পুড়তে অন্তরাত্মা মৃতপ্রায়।

বাস থেকে নেমে নিজেকে কোনওমতে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছি অফিসের দিকে। শরীর ভারী পাথরের মত গতিজাড্যহীন, স্থাবর পড়ে থাকতে চায় পথের ধারে। আচমকা এক দমকা হাওয়ার স্পর্শ চোখে-মুখে। আকাশের দিকে তাকাই। দিগন্ত থেকে ছুটে আসা পরদেশী মেঘেরা ভিড় করেছে। ‘রোদ নেই শুধু একটা ছাই রঙের আলো যাতে কোনকিছুরই ছায়া পড়ে না।’
পড়বে কিভাবে? শৈশবে পড়া ভৌতিক গল্পের সূত্র হানা দেয় মনে- মানুষের ছায়া পড়ে, ভূতেদের নয়।
আমি তো এক অশরীরী আজ, মানুষের ছদ্মবেশ ধরে যে যন্ত্রবৎ জীবন কাটাবে, হয়তো আরও কুড়ি, কিংবা তিরিশ, কিংবা চল্লিশ বছর।

সোমবারের কর্মব্যস্ত অফিস, সবাই মগ্ন উইকেণ্ডের আলস্য ঝেড়ে ফেলে দিনগত পাপক্ষয়ের অভ্যস্ততায় নিজেদের মানিয়ে নিতে। তারই মাঝে নিয়মমাফিক কুশল-বিনিময়, সৌজন্যের মুখোশ এঁটে সেসবের প্রত্যুত্তর দিই। অয়নাংশু সাহার নামাঙ্কিত কিউবিক্‌লটা একপ্রান্তে, বিচ্ছিন্ন একটা দ্বীপের মত। কাজ শুরুর আগে স্বাভাবিক প্রবণতায় মেলবক্সে উঁকি, যদি কোনও অপঠিত বার্তা এসে থাকে।

আঙুলের ইশারায় মাউসে চাপ পড়তেই মুহূর্তেকের জন্য মগজে দু’শোকুড়ি ভোল্টের ঝলকানি। তারপরেই আবার সব আগের মত, নিস্পৃহ মুখে মেইল পড়ছি।

‘হাই, হোপ ইউ আর ফাইন। আই অ্যাম সো বিজি দিজ ডেজ, কাণ্ট ফাইণ্ড এনি টাইম টু টক টু ইউ। বাট একটা ব্যাপারে তোমার একটু হেল্প লাগবে। নেক্সট টু নেক্সট মান্থ আমি ব্যাঙ্গালোর যাচ্ছি একটা ইণ্টার্নশিপের জন্য। ফর অলমোস্ট ফোর মান্থস। ওরা অ্যাকোমোডেশন প্রোভাইড করবে বলেছে বাট নট বিফোর আ সার্টেইন ডেট, আর এদিকে আমার ফ্লাইট টিকেটের অ্যাভেলেবিলিটি যেমন তাতে আই হ্যাভ টু রিচ দেয়ার বিফোর। সো... ক্যুড আই স্টে অ্যাট ইয়োর প্লেস ফর দোজ ফিউ ডেজ? ইট ওণ্ট বি মোর দ্যান ওয়ান উইক। প্লিজ লেট মি নো অ্যাস্যাপ।
আই গেস বাড়িতে এগুলো না জানানোই ভাল, ইউ নো হোয়াট আই মীন।
তোমায় কাল অনেকবার কল করার চেষ্টা করেছিলাম বাট ফোন বিজি আসছিল। সো হ্যাড টু ড্রপ অ্যান ইমেইল। হোপ ইউ ডোণ্ট মাইণ্ড। টেক কেয়ার।’
প্রেরক... থুড়ি, প্রেরিকার নাম দীপান্বিতা চৌধুরী।

ভাবলেশহীন মুখে বসে আছি। কর্তব্যকর্ম স্থির করতে কিছুক্ষণের দ্বিধা, তারপর অনায়াস গতিতে টাইপ করছি প্রত্যুত্তর। প্রথমে দীপান্বিতাকে। পরেরটা রিংকুদিকে। এ বোঝা ঘাড় থেকে নামানোর সহজতম পন্থা। রিংকুদি নিশ্চয়ই বুঝবে।

ইলেকট্রনিক বার্তা প্রেরণের পরে সহসা কেমন অবসাদ চারিয়ে এল মনে। নারীসঙ্গের কথা ভাবতে এখন বিবমিষা জাগছে। আপাতত ও প্রসঙ্গটাই অরুচিকর।

আবারও খোলসের মধ্যে ঢুকে যাই। নিস্পন্দ, নির্লিপ্ত জীবন। বেদনাহীন। ব্যথা-বেদনার অনুভূতিগুলোই হারিয়ে গেছে।
সারাদিন যন্ত্রমানবের মত কাজ করি। মাপা কথা, মাপা প্রতিক্রিয়া। অন্য মানুষের সাহচর্য ভাল লাগে না। আমার বীতস্পৃহার নির্মোকে প্রতিহত হয়ে তারাও দূরে সরে যায়। এই বেশ ভাল আছি।

সন্ধেয় ঘরে ফিরে আসি। অন্ধকারে পড়ে থাকি নির্জীবের মত। রাত বাড়ে। ফিকে থেকে ক্রমে গাঢ় হয় ঘরের আঁধার। সে আঁধার তরল আকার ধারণ করে প্রবেশ করে আমার সত্তায়। চারিয়ে যায় কোষে-কোষে, অস্থিমজ্জায়। গোটা জগতসংসার দূরে সরে গেছে। চোখের পাতায় ঘুমের যবনিকা নামার অনন্ত প্রতীক্ষা। সেও আসে কই?

‘আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয়ে পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া...’
[+] 3 users Like অনঙ্গপাল's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: স্বীকারোক্তি (প্রথম ভাগ) - by অনঙ্গপাল - 26-02-2021, 12:55 PM



Users browsing this thread: