24-02-2021, 02:23 PM
আ মরি
আজ বেশ জ্বর জ্বর ভাব ছিল দীপের। কিচ্ছু ভাল লাগছিল না, তাই পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে সারাদিন। মাঝে শুধু লাঞ্চ করতে উঠেছে, তার আগে একটু কাকস্নান মতো করে নিয়েছিল। আজ এতই কাহিল লাগছে যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হওয়া নতুন ছবিটাও দেখেনি ও, যে দীপ নাকি এইসবের পোকা!
তা বলতে নেই, সারাদিন রেস্ট নেবার পর সন্ধ্যের পরে শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছিল ওর। মায়ের করা এক কাপ কড়া কফি খেয়ে বেশ 'ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ' টাইপ লাগছিল! তাই একটু সোস্যাল মিডিয়াটা খুলেছিল ও।
ফেসবুক খোলার সাথে সাথেই একের পর এক পোস্ট। বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে। তারমধ্যে একটা পোস্ট দেখল...কী সুন্দর ভাবে বিভিন্ন নাম দিয়ে বোঝানো হয়েছে বাংলা ভাষাকে ভাল না বেসে কেন পারা যায় না! ওর বাবা মা নিজেরা বাংলা মিডিয়াম ছিলেন, কিন্তু ওকে 'যুগের সাথে তাল মেলাবার জন্য' ইংলিশ মিডিয়ামে পড়িয়েছিলেন । তবে তার জন্য সত্যজিৎ - স্বপন বুড়ো-সুনীল-শীর্ষেন্দু পড়ায় বাধা ছিল না কোনো। বরং শুকতারা আর আনন্দমেলা পড়েই তো বড় হয়েছে ও। আর সত্যিই তো, যে ভাষা এত সুন্দর, সেই ভাষাকে ভাল না বেসে পারা যায়! এই তো, ওর এক মারাঠি কলিগ, বিশাল গায়কোয়াড় কিছুদিন আগেই বলল "ইয়ার, বেঙ্গলি বহোৎ স্যুইট ল্যাঙ্গোয়েজ হ্যায়!" শুনে যে ওর কী গর্ব হচ্ছিল! এক বর্ণ বাংলা না বোঝা মানুষের কাছেও বাংলাকে মিষ্টি শোনায়। আহা! এজন্যই তো বলে "আ মরি বাংলা ভাষা!"
কথাটা ভাবতেই একটু থমকে গেল দীপ।
সেইদিনের কথাটা মনে পড়ে গেল। বিশালের কথা শুনে আনন্দে আটখানা হয়ে করে ফেলা একটা মন্তব্যের কথা মনে পড়ে গেল...
বুকের ভেতরটা কেমন ছ্যাঁত করে উঠল দীপের। নিজেকে কথায় কথায় 'রেসপনসিবল সিটিজেন' ভাবে, এমনকি 'ভালো মানুষ' ভাবে...আর সেই কিনা...অবলীলায়...ছিঃ! আর তখন...মনেও হয় নি কোন ভুল করছে বলে!
ভাবতে ভাবতেই ফোনটা তুলে নিল।
কন্টাক্ট লিস্ট খুলে বের করল একটা নাম্বার।
সরস্বতী স্বামীনাথন। ওর প্রজেক্ট টিমের একজন সদস্য...অত্যন্ত কর্মদক্ষ এই মেয়েটিকে আড়ালে ওরা 'ত্যান্ডাই ম্যান্ডাই' বলে ডাকে। আর সেদিন তো সবার সামনেই ও মন্তব্য করে ফেলেছিল দক্ষিণ ভারতীয় ভাষাগুলির দুর্বোধ্যতা নিয়ে... এমনকি জনপ্রিয় বলিউডি গানের আগের কিছু কথা নিয়েও ব্যঙ্গ করতে ছাড়ে নি। সরস্বতী চুপ করে বসেছিল। কিছু বলেনি। কিন্তু...ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল নিশ্চয়ই। আহা রে...
ফোনের কল বাটনটা টিপে দিল দীপ।
আজ ওকে ক্ষমা চাইতে হবে সরস্বতীর কাছে সেদিনের জন্য। এতগুলো দিনের জন্য। আর কোনোদিন ও এমনি করবে না ও...বরং অন্য কেউ করলে তাকে আটকাবে...এটা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিল দীপ।
মাতৃভাষা দিবসে এরচেয়ে বড় উপহার, নিজেকে দেওয়া... নিজের ভাষাকে দেওয়া আর কি কিছু হতে পারে?
আজ বেশ জ্বর জ্বর ভাব ছিল দীপের। কিচ্ছু ভাল লাগছিল না, তাই পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে সারাদিন। মাঝে শুধু লাঞ্চ করতে উঠেছে, তার আগে একটু কাকস্নান মতো করে নিয়েছিল। আজ এতই কাহিল লাগছে যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হওয়া নতুন ছবিটাও দেখেনি ও, যে দীপ নাকি এইসবের পোকা!
তা বলতে নেই, সারাদিন রেস্ট নেবার পর সন্ধ্যের পরে শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছিল ওর। মায়ের করা এক কাপ কড়া কফি খেয়ে বেশ 'ফুর্তির প্রাণ গড়ের মাঠ' টাইপ লাগছিল! তাই একটু সোস্যাল মিডিয়াটা খুলেছিল ও।
ফেসবুক খোলার সাথে সাথেই একের পর এক পোস্ট। বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস সম্পর্কে। তারমধ্যে একটা পোস্ট দেখল...কী সুন্দর ভাবে বিভিন্ন নাম দিয়ে বোঝানো হয়েছে বাংলা ভাষাকে ভাল না বেসে কেন পারা যায় না! ওর বাবা মা নিজেরা বাংলা মিডিয়াম ছিলেন, কিন্তু ওকে 'যুগের সাথে তাল মেলাবার জন্য' ইংলিশ মিডিয়ামে পড়িয়েছিলেন । তবে তার জন্য সত্যজিৎ - স্বপন বুড়ো-সুনীল-শীর্ষেন্দু পড়ায় বাধা ছিল না কোনো। বরং শুকতারা আর আনন্দমেলা পড়েই তো বড় হয়েছে ও। আর সত্যিই তো, যে ভাষা এত সুন্দর, সেই ভাষাকে ভাল না বেসে পারা যায়! এই তো, ওর এক মারাঠি কলিগ, বিশাল গায়কোয়াড় কিছুদিন আগেই বলল "ইয়ার, বেঙ্গলি বহোৎ স্যুইট ল্যাঙ্গোয়েজ হ্যায়!" শুনে যে ওর কী গর্ব হচ্ছিল! এক বর্ণ বাংলা না বোঝা মানুষের কাছেও বাংলাকে মিষ্টি শোনায়। আহা! এজন্যই তো বলে "আ মরি বাংলা ভাষা!"
কথাটা ভাবতেই একটু থমকে গেল দীপ।
সেইদিনের কথাটা মনে পড়ে গেল। বিশালের কথা শুনে আনন্দে আটখানা হয়ে করে ফেলা একটা মন্তব্যের কথা মনে পড়ে গেল...
বুকের ভেতরটা কেমন ছ্যাঁত করে উঠল দীপের। নিজেকে কথায় কথায় 'রেসপনসিবল সিটিজেন' ভাবে, এমনকি 'ভালো মানুষ' ভাবে...আর সেই কিনা...অবলীলায়...ছিঃ! আর তখন...মনেও হয় নি কোন ভুল করছে বলে!
ভাবতে ভাবতেই ফোনটা তুলে নিল।
কন্টাক্ট লিস্ট খুলে বের করল একটা নাম্বার।
সরস্বতী স্বামীনাথন। ওর প্রজেক্ট টিমের একজন সদস্য...অত্যন্ত কর্মদক্ষ এই মেয়েটিকে আড়ালে ওরা 'ত্যান্ডাই ম্যান্ডাই' বলে ডাকে। আর সেদিন তো সবার সামনেই ও মন্তব্য করে ফেলেছিল দক্ষিণ ভারতীয় ভাষাগুলির দুর্বোধ্যতা নিয়ে... এমনকি জনপ্রিয় বলিউডি গানের আগের কিছু কথা নিয়েও ব্যঙ্গ করতে ছাড়ে নি। সরস্বতী চুপ করে বসেছিল। কিছু বলেনি। কিন্তু...ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল নিশ্চয়ই। আহা রে...
ফোনের কল বাটনটা টিপে দিল দীপ।
আজ ওকে ক্ষমা চাইতে হবে সরস্বতীর কাছে সেদিনের জন্য। এতগুলো দিনের জন্য। আর কোনোদিন ও এমনি করবে না ও...বরং অন্য কেউ করলে তাকে আটকাবে...এটা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নিল দীপ।
মাতৃভাষা দিবসে এরচেয়ে বড় উপহার, নিজেকে দেওয়া... নিজের ভাষাকে দেওয়া আর কি কিছু হতে পারে?