23-02-2021, 05:30 AM
ইন্দ্র যখন ব্যাগ নিয়ে রিমির কাছে ফেরত আসে তখন ট্রেন বেলুড় ক্রস করে লিলুয়া ঢুকছে। ইন্দ্র রিমির কাছে আসতেই, ভদ্রমহিলা রিমির পাশ থেকে উঠে, ইন্দ্রর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে নিজের সীটে চলে যায়। ইন্দ্র ব্যাপারটা লক্ষ্য করেই রিমির দিকে তাকাতেই, রিমি ইন্দ্রর দিকে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে ইশারাতে চুপ করতে বলে। এই ব্যাপার টা দারুন লাগে ইন্দ্রর। রিমি যখন এমন কোনও ইশারা করে, সেই সময় টা খুব দুষ্টু মিষ্টি মনে হয় রিমিকে। প্রথম বার যখন সে রিমির বাড়িতে গিয়েছিল, বিমান এসে সামনে বসতেই, রিমি এমন করে চোখ গোল করে ঘুরিয়ে তাকে ইশারা করেছিল, কম কথা বলার জন্য। ট্রেনের স্পীড কমে এসেছে। ট্রেন হাওড়া ঢুকছে। রিমিকে উঠতে বলে, রিমির ব্যাগ টাও হাতে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায় দুজনে।
কোলাহল মুখর হাওড়া স্টেশান। সর্বদাই প্রচণ্ড ব্যাস্ত। কুলির সাথে বাকবিতণ্ডা, হকার দের চিৎকার, তারই মধ্যে পরবর্তী ট্রেনের ঘোষণা সব মিলিয়ে জমজমাট। দুজনেই নেমে আসে ট্রেন থেকে নিজেদের লাগেজ নিয়ে প্লাটফর্মে। পেছন পেছন সেই ভদ্রমহিলাও নেমে এসে রিমির দিকে তাকিয়ে বললেন, “খুব ভালো করে হানিমুন কাটিয়ে আসবে। তোমাদের দেখে খুব ভালো লাগলো। এক মুহূর্ত একে অন্যকে ছাড়া থাকবে না বলে দিলাম”। ইন্দ্র অবাক হয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। হানিমুন……… শব্দ টা কানে ঢুকতেই বিস্ময় ভরা দৃষ্টি নিয়ে রিমির দিকে তাকিয়ে থাকে। রিমি ভদ্রমহিলা কে পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ, কাকিমা, আশীর্বাদ করুন আমাদের”। ইন্দ্র অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকিয়েছিল। ভদ্রমহিলার থেকে বিদায় নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে ইন্দ্র প্রশ্ন করে রিমিকে, “তুমি এই সব কি গুল মেরেছ ওই মহিলা কে? তোমার কি পরিচিত নাকি? উনি এই সব উল্টোপাল্টা কি বলছেন”? ইন্দ্রর প্রশ্নে হাসতে হাসতে রিমি বলতে থাকে, “আরে না না………পরিচিত না ঘোড়ার ডিম…… মুখে যা এসেছিল, বলে দিয়েছিলাম। উনি খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করছিলেন। কিছু একটা বলতে হবে তো? তা বলে দিয়েছিলাম, আমার ডিভোর্স হওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছে বাবা মায়ের অমতেই, এই প্রথম আমি আর আমার স্বামী বাইরে যাচ্ছি”। রিমির কথা শুনে ইন্দ্রর হাসি পায়, “তুমি কি পাগল? কে না কে, চেনা নেই, জানা নেই, এমন করে বলতে আছে নাকি? কি না কি ভেবে বসেছেন হয়তো”? ইন্দ্রর কথা মুখের থেকে কেড়ে নিয়ে রিমি বলে ওঠে, “বয়েই গেল, চিনি না, জানিনা কোনোদিন দেখা হওয়ার ও সুযোগ নেই, এমন কিছু বলতে বাধা কোথায়? আর সত্যি তো আমরা হানিমুনের জন্যই তো যাচ্ছি”, বলে হাঁটতে হাঁটতে, ইন্দ্রর হাত টায় একটা চিমটি কেটে দেয়। “উফফফফ……… তোমাকে নিয়ে না আমি আর পারি না। খুব দুষ্টু তুমি। এখন থেকে আমার সব কথা শুনবে বলে দিলাম। আমি কিন্তু খুব রাগি”। হাঁটতে হাঁটতে আবার দাঁড়িয়ে যায় রিমি, কপট অভিমান করে ইন্দ্রর দিকে তাকিয়ে থাকে ঠোঁট ফুলিয়ে বলে ওঠে, “বকছ কেন আমাকে”? রিমি দাঁড়িয়ে যেতেই অল্প এগিয়ে ইন্দ্র ও থেমে যায় হাঁটতে হাঁটতে,আবার পিছিয়ে এসে ফিসফিস করে বলে, “লোকে দেখছে রিমি, এমন ছেলেমানুষি করতে নেই, আচ্ছা, আর বকব না, কথা দিলাম। এবার চল আমার সাথে”, ইন্দ্রর মুখে এমন কথা শুনে খুশি হয়ে যায় রিমি। ইন্দ্রর হাত টা এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাঁটতে থাকে। ইন্দ্র মনে মনে দারুন খুশি হয়ে যায়। নিজের অজান্তেই হেঁসে ফেলে। এমনই তো গৃহিণী চেয়েছিল সে। কিন্তু চাইলেই কি আর পাওয়া যায়?
তোমাকে খুঁজে বেড়াই