20-02-2021, 04:46 PM
(This post was last modified: 20-02-2021, 04:48 PM by cuck son. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
তিনজন মিলে অনিলার একার জেদের কাছে আমাদের পরাজিত হতে হলো । কিছুতেই সফিপুর যাওয়া থেকে বিরত করা গেলো না ওকে। এমনকি ও লিজা আর মাসুদ সাহেব কেও সাথে নিতে নারাজ । শেষে বাধ্য হয়ে আমি লিজা কে বুঝিয়ে বললাম যে মেয়ের এই একটি আব্দার পুরন করার জন্য আমাকে অনুমতি দেয় । হয়ত কথাটি বলার সময় আমার কণ্ঠে যে আবেগ ছিলো সেটা লিজাকে একটু নমনীয় হতে সাহায্য করলো । আমি দুরু দুরু বুকে মেয়েকে নিয়ে রউনা হলাম ।
এবার অবশ্য বাসে নয় একটি গাড়ি ভারা করে নিয়েছি । আমাদের সফিপুর নামিয়ে দিয়ে চলে আসবে আবার এক সপ্তা পর গিয়ে নিয়ে আসবে । পুরনো লক্কর মার্কা বাসের তুলনায় নতুন গাড়িটি বেশ স্মুথ আর দ্রুত এগিয়ে চলছে । ঢাকার যানজট আর দুষিত বাতাস থেকে একটু দূরে আসতেই অনিলা গাড়ির এসি বন্ধ করে জানলা খুলে দিলো । বেশ ফুরফুরে বাতাস আসছে গাড়ির খোলা জানলা দিয়ে । এমন বাতাসে আমার খুব ঘুম পায় , সেবার যাওয়ার সময় ও ঘুমিয়ে পরেছিলাম । না চাইতেও ধিরে ধিরে আমার চোখের পাতা ভারি হয়ে এলো। ধিরে ধিরে গভির ঘুমে তলিয়ে গেলাম ।
যখন ঘুম ভাংলো তখন দেখলাম অনিলাও ঘুমিয়ে আছে , আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে । বাতাসে ওর চুল উড়ে এসে আমার নাকে মুখে ঝাপটা দিচ্ছে । এই কারনেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে । একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে নিয়ে ভালো হতো মনে হচ্ছে , কিন্তু আমি সেটা করলাম না, ঘুমন্ত মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম , কি নিস্পাপ সরল একটা মুখ । অনেকটাই আমার মায়ের আদলে , বুকের ভেতর টা চিনচিন করে উঠলো , যদি লিজার কথা যদি সত্য হয় , যদি আমার সাথে কিছুদিন থাকার পর আমার উপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে , যদি ওর মনে এই চিন্তা চলে আসে যে এই দুরত্বর জন্য আমি ই দায়ী যদি মনে ঘৃণা জন্মায় আমার জন্য , তখন কি করবো আমি ?
একটা দীর্ঘশ্বাস নিজের অজান্তেই চলে এলো , আর তাতে অনিলার ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।
“ ঈশ আব্বু তুমি আমার মুখের উপর শ্বাস ফেললে কেনো , মজার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো আমার ।“
আমি হেঁসে ফেললাম বললাম “ তুই ও কি আমার মতো গাড়িতে ঘুমিয়ে পরিস “
“ হ্যাঁ , চলন্ত গাড়ির চেয়ে মজার ঘুম আর হয় না তার উপর তোমার মতো কুশনের মতো নরম ভুঁড়ি ওয়ালা একটা আব্বু যদি পাশে থাকে তবে তো কথাই নেই “ এই বলে অনিলা আমাকে আরও জোড় পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো , ওর একটা হাত আমার ভুঁড়ির উপর ।
“ এই আমার ভুঁড়ি কিন্তু অতটা বড় না “ আমি মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বললাম
ফিক করে হেঁসে ফেলল অনিলা বলল “ ঠিক আছে তোমার সিক্স প্যাক ভুঁড়ি এবার আমাকে ঘুমাতে দাও , আর একটি কথা বললে ভুঁড়ি গালিয়ে দেবো “ এই বলে আমাকে আমারও একটু জোরে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলো , মুখে এক চিলতে হাঁসি লেগেই আছে । আমি আর কথা না বলে মেয়ের মাথায় আট বুলিয়ে দিতে লাগলাম ।
কিছুক্ষন পর টের ফেলাম , অনিলা ঘুমাচ্ছে না , ও কাদছে সুধু কাদছে না প্রায় হিচকির মতো উঠে গেছে । আমি দ্রুত জিজ্ঞাস করলাম “অনিলা মা কাদছিস কেন ? “ কোন উত্তর দিলো না আমাকে আরও জরেরিয়ে ধরলো । আমি খব বিচলিত বোধ করতে লাগলাম । হঠাত এমন কি হলো ভেবে পাচ্ছিলাম না । বিব্রত অবস্থায় চুপ করে রইলাম ।
কিছুক্ষন পর অনিলা নিজের থেকেই বলল “ আর মাত্র এক সপ্তাহ তারপর তুমি চলে যাবে , আবার কবে আসবে ঠিক নেই , আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চলো , আমি তোমার কাছে থাকবো , বিশ্বাস করো আমি কোন সমস্যা করবো না “ এই বলে অনিলা আবার কাদতে লাগলো ।
কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না , হ্যাঁ বলার জন্য আমার ভেতরটা আকুল হয়ে আছে । ইচ্ছে করছে বলি তুই আমার সাথেই থাকবি । কিন্তু আমি জানি একটা কিশোরী মেয়ের দায়িত্ব নেয়ার জন্য কতটা আনফিট একজন লোক আমি । তাই কিছু না বলে শুধু মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে গেলাম । বেশ কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর অনিলা নিজে থেকেই কান্না বন্ধ করে দিলো । আমার কাছ থেকে দূরে সরে জানালার দিকে মুখ করে বাইরে তাকিয়ে থাকলো । বাতাসে চুল গুলি উরছে , মুখের ভাজ গুলি কঠোর হয়ে আছে । হয়ত বাবার প্রতি ক্ষোভের গাছটি বড় হতে শুরু করেছে , এর পর ঐ গাছে ডাল পালা হবে , নতুন নতুন শাখা তৈরি হবে । হয়ত একদিন মহীরুহে পরিনত হয়ে যাবে । আর আমার কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে নিয়ে যাবে ওকে ।
গাড়ি যখন গ্যাস নেয়ার জন্য থামল তখনো অনিলা গাড়ি থেকে নামলো না , খাওয়ার জন্য ডাব সাধলাম তাও খেলো না , এমন কি আইস ক্রিম কেও না করে দিলো । আমি জানি অনিলা আইসক্রিম কতটা পছন্দ করে । বাকি রাস্তা টুকু আর কোন কথাই বলল না অনিলা আমার বহু চেষ্টা সত্ত্বেও ।
শীতের দিন হওয়ায় সন্ধ্যা খুব দ্রুত হয়ে যায় । আমরা সন্ধার ঠিক আগ মুহূর্তে এসে নামলাম মিয়াঁ বাড়ির সামনে । দোকান ঘর গুলির কাজ শেষ দুটো দোকান ভারাও হয়ে গেছে মনে হলো , একটি মুদি দোকান অন্যটি টেইলারস এর দোকান । এবার অবশ্য না বলে আসার মতো ভুল করিনি । খবর দিয়ে রেখেছিলাম প্রায় সপ্তা খানেক আগে । বলেছিলাম যতটা সম্ভব যেন পরিস্কার করে রাখে । অনিলা যেন নিজের বাপ দাদার ভিটায় এসে আসাভঙ্গ না হয় । দেখলাম কাজ করেছে আজমল চাচা , পুকুর দুটি পরিস্কার করা হয়েছে । বাড়ির গেঁট ও রং করা , রাস্তায় খোয়া বিছানো আছে । বাড়ির গেটের ভেতর ঢুকতেই ঝুমার সাথে দেখা , কোমরে আচল গোঁজা আছে মাথায় খোপা করা । মুখে সেই অমনিল ঝকঝকে হাঁসি ।
ঝুমা কে দেখেই আমি দৃষ্টি অবনত করে ফেললাম , ওর দিকে তাকাতে আমার লজ্জা হচ্ছিলো । তবে ঝুমার ভেতর কোন জড়তা দেখতে পেলাম না , হাঁসি মুখে এগিয়ে এলো । এসেই অনিলার একটি হাত ধরলো “ আল্লা কি সোন্দর দেখতে হইসে “
অনিলা আমার মুখের দিকে চাইলো , ইশারায় জিজ্ঞাস করলো এ কে । আমি উত্তর দেয়ার আগেই ঝুমা উত্তর দিয়ে দিলো “ আমি আপনে গো বাড়ির আশ্রিতা , আমার নাম ঝুমা, আমার নানাজান এর লগে থাকি , উনি বাজারে গেসে , আহেন আহেন ভিতরে আহেন “ এই বলে ঝুমা অনিলার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো । বাড়িটা বেশ পরিস্কার লাগছে , দেখলাম কল পাড়ে পাকা দেয়াল তোলা হয়েছে । দালান ঘরের দেয়ালা গজানো গাছ গুলি আর নেই । এছাড়া তেমন আগাছাও দেখা যাচ্ছে না ।
দালান ঘরের ভেতরে ও আস্তর আর চুনকাম করা হয়েছে । দুটো ঘর পরিস্কার করে রাখা , আমাকে সেই আগের ঘড়টি দেয়া হলো আর অনিলা কে পাশের ঘর । এমনকি মোটর লাগিয়ে উপরে পানি তোলার ব্যাবস্থাও করা হয়ছে । আজমল চাচা প্রথমবার ধরা খেয়ে এবার অনেক কাজ করেছে । এতটা আসা আমি করিনি । গরম পানি করে বেশ করে একটা গোসল দিলাম । তারপর ই গরম গরম পিঠা চলে এলো।
সবচেয়ে ভালো লাগলো জালাল কে দেখে ওর পেট আর আগের মতো ফাঁপা নয় । বুঝলাম করিম আমার কথা রেখেছে , ভালোই চিকিৎসা হয়েছে ওর । আমি একে একে ওদের জন্য আনা উপহার গুলি দিতে লাগলাম । তবে সবার সামনে ঝুমাকে ওর জন্য আনা মেকআপ বক্স দিতে কেমন জানি লাগলো । হয়ত কেউ কিছ মনে করবে না তবুও কেমন জানি লাগলো । অন্য কিছু হলে সবার সামনেই দিয়ে দেয়া যেত, কিন্তু মেকআপ বক্স কেমন জানি দেখায় ।
“ আব্বু তুমি ঝুমার জন্য কিছু আনোনি “ অনিলা অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো । আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম । মনে মনে ভাবছিলাম কেন যে মেকআপ বক্স কিনেছিলাম অন্য কিছু কিনলে দিয়ে দেয়া যেত ।
“ আমার লইগা কিসু আনোন লাগবো না আপনেরা আইসেন হেইতেই আমি খুসি “ ঝুমা মুচকি হেঁসে বলল । কিন্তু অনিলা কিছুতেই মেনে নিলো না ঝুমার কথা জোড় করে ওর জন্য ঢাকা থেকে কেনা একটা ব্রেসলেট দিয়ে দিলো । ঝুমা অবশ্য অনেক আপত্তি করলো কিন্তু অনিলা কিছুই শুনল না । জোড় করে ঝুমাকে পড়িয়ে দিলো ।
রাতে শোয়ার আগে যখন ঝুমা আমার জন্য খাবার পানির জগ নিয়ে আসলে আমি ঝুমাকে ডাকলাম । এ পর্যন্ত এসে আমি ঝুমার সাথে তেমন কথাই বলিনি । কেমন জানি বাধো বাধো লাগছিলো , মনে হচ্ছিলো ঝুমার সাথে কথা বলতে গেলে আমি অতিরিক্ত আবেগ দেখিয়ে ফেলবো আর সেটা সবার নজরে পড়ে যাবে ।
“ কেমন আছো ঝুমা “ ঝুমা কাছে আসতেই আমি জিজ্ঞাস করলাম
“ আমি ভালা আছি “ তারপর দুজনেই কিছুক্ষন চুপচাপ রইলাম ।
“ ঝুমা তুমি কি এখনো আমার উপর রেগে আছো ? “ মেঝের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলাম আমি
“ আপনের উপর রাগুম ক্যান “ অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো ঝুমা তারপর বলল “ আপনে কি এমুন করসেন যে আপনের উপর রাগ করুম , আমার পোলার চিকিৎসা করাইয়া দিসেন , এহন অয় আগের চেয়ে অনেক ভালা আসে “
“ আমি যা করেছি তা আমাদের দুজনের ভালোর জন্য ই করেছি ঝুমা , আমাদের মাঝে এমন কোন সম্পর্ক সম্ভব নয় কিন্তু বিশ্বাস করো আমি চলে যাওয়ার পর তোমার কথা এক মুহূর্তের জন্য ও ভুলতে পারিনি “ কথা গুল বলেই বুঝলাম কাজটা ঠিক হয়নি । ঝুমার মুখের ভাব বদলে গেলো
“ আপনেরা কি ভাবেন কন তো ছোট মিয়াঁ , আমরা মাইয়া মানুষ কি এতই দুর্বল , যদি এতো নরম হইতাম তাইলে একলা একলা নিজের পোলারে লইয়া থাকতে পারতাম না , কবে রাস্তায় ফালাইয়া গলায় ফাঁশ নিতাম । যা হইসিলো তাতে আমার ও সমান দোষ আসিলো , আর আমি এইটাও বুঝি আপনের পক্ষে আমারে নিয়া কিসু ভাবন সম্ভব না , আর আমি এমন কিসু চাই ও না , আপনেরে দেইখা আমার কেমুন জানি লাগসিলো , আপনেরে অনেক আপন মনে হইসিলো, হের লইগা একটু দুর্বল হইয়া পরসিলাম আর ভুল কইরা ফালাইসিলাম “
আমি ঝুমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । অন্য রকম লাগছে মেয়েটিকে , মনে হচ্ছে গ্রামের কোন সাধারন মেয়ে এ নয় , কোন সাধারন মেয়ে এমন কথা বলতে পাড়ে না । এই মেয়ে অসাধারণ ।
এবার অবশ্য বাসে নয় একটি গাড়ি ভারা করে নিয়েছি । আমাদের সফিপুর নামিয়ে দিয়ে চলে আসবে আবার এক সপ্তা পর গিয়ে নিয়ে আসবে । পুরনো লক্কর মার্কা বাসের তুলনায় নতুন গাড়িটি বেশ স্মুথ আর দ্রুত এগিয়ে চলছে । ঢাকার যানজট আর দুষিত বাতাস থেকে একটু দূরে আসতেই অনিলা গাড়ির এসি বন্ধ করে জানলা খুলে দিলো । বেশ ফুরফুরে বাতাস আসছে গাড়ির খোলা জানলা দিয়ে । এমন বাতাসে আমার খুব ঘুম পায় , সেবার যাওয়ার সময় ও ঘুমিয়ে পরেছিলাম । না চাইতেও ধিরে ধিরে আমার চোখের পাতা ভারি হয়ে এলো। ধিরে ধিরে গভির ঘুমে তলিয়ে গেলাম ।
যখন ঘুম ভাংলো তখন দেখলাম অনিলাও ঘুমিয়ে আছে , আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে । বাতাসে ওর চুল উড়ে এসে আমার নাকে মুখে ঝাপটা দিচ্ছে । এই কারনেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে । একটু আড়মোড়া ভেঙ্গে নিয়ে ভালো হতো মনে হচ্ছে , কিন্তু আমি সেটা করলাম না, ঘুমন্ত মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম , কি নিস্পাপ সরল একটা মুখ । অনেকটাই আমার মায়ের আদলে , বুকের ভেতর টা চিনচিন করে উঠলো , যদি লিজার কথা যদি সত্য হয় , যদি আমার সাথে কিছুদিন থাকার পর আমার উপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে , যদি ওর মনে এই চিন্তা চলে আসে যে এই দুরত্বর জন্য আমি ই দায়ী যদি মনে ঘৃণা জন্মায় আমার জন্য , তখন কি করবো আমি ?
একটা দীর্ঘশ্বাস নিজের অজান্তেই চলে এলো , আর তাতে অনিলার ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।
“ ঈশ আব্বু তুমি আমার মুখের উপর শ্বাস ফেললে কেনো , মজার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো আমার ।“
আমি হেঁসে ফেললাম বললাম “ তুই ও কি আমার মতো গাড়িতে ঘুমিয়ে পরিস “
“ হ্যাঁ , চলন্ত গাড়ির চেয়ে মজার ঘুম আর হয় না তার উপর তোমার মতো কুশনের মতো নরম ভুঁড়ি ওয়ালা একটা আব্বু যদি পাশে থাকে তবে তো কথাই নেই “ এই বলে অনিলা আমাকে আরও জোড় পাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো , ওর একটা হাত আমার ভুঁড়ির উপর ।
“ এই আমার ভুঁড়ি কিন্তু অতটা বড় না “ আমি মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বললাম
ফিক করে হেঁসে ফেলল অনিলা বলল “ ঠিক আছে তোমার সিক্স প্যাক ভুঁড়ি এবার আমাকে ঘুমাতে দাও , আর একটি কথা বললে ভুঁড়ি গালিয়ে দেবো “ এই বলে আমাকে আমারও একটু জোরে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলো , মুখে এক চিলতে হাঁসি লেগেই আছে । আমি আর কথা না বলে মেয়ের মাথায় আট বুলিয়ে দিতে লাগলাম ।
কিছুক্ষন পর টের ফেলাম , অনিলা ঘুমাচ্ছে না , ও কাদছে সুধু কাদছে না প্রায় হিচকির মতো উঠে গেছে । আমি দ্রুত জিজ্ঞাস করলাম “অনিলা মা কাদছিস কেন ? “ কোন উত্তর দিলো না আমাকে আরও জরেরিয়ে ধরলো । আমি খব বিচলিত বোধ করতে লাগলাম । হঠাত এমন কি হলো ভেবে পাচ্ছিলাম না । বিব্রত অবস্থায় চুপ করে রইলাম ।
কিছুক্ষন পর অনিলা নিজের থেকেই বলল “ আর মাত্র এক সপ্তাহ তারপর তুমি চলে যাবে , আবার কবে আসবে ঠিক নেই , আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চলো , আমি তোমার কাছে থাকবো , বিশ্বাস করো আমি কোন সমস্যা করবো না “ এই বলে অনিলা আবার কাদতে লাগলো ।
কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না , হ্যাঁ বলার জন্য আমার ভেতরটা আকুল হয়ে আছে । ইচ্ছে করছে বলি তুই আমার সাথেই থাকবি । কিন্তু আমি জানি একটা কিশোরী মেয়ের দায়িত্ব নেয়ার জন্য কতটা আনফিট একজন লোক আমি । তাই কিছু না বলে শুধু মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে গেলাম । বেশ কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর অনিলা নিজে থেকেই কান্না বন্ধ করে দিলো । আমার কাছ থেকে দূরে সরে জানালার দিকে মুখ করে বাইরে তাকিয়ে থাকলো । বাতাসে চুল গুলি উরছে , মুখের ভাজ গুলি কঠোর হয়ে আছে । হয়ত বাবার প্রতি ক্ষোভের গাছটি বড় হতে শুরু করেছে , এর পর ঐ গাছে ডাল পালা হবে , নতুন নতুন শাখা তৈরি হবে । হয়ত একদিন মহীরুহে পরিনত হয়ে যাবে । আর আমার কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে নিয়ে যাবে ওকে ।
গাড়ি যখন গ্যাস নেয়ার জন্য থামল তখনো অনিলা গাড়ি থেকে নামলো না , খাওয়ার জন্য ডাব সাধলাম তাও খেলো না , এমন কি আইস ক্রিম কেও না করে দিলো । আমি জানি অনিলা আইসক্রিম কতটা পছন্দ করে । বাকি রাস্তা টুকু আর কোন কথাই বলল না অনিলা আমার বহু চেষ্টা সত্ত্বেও ।
শীতের দিন হওয়ায় সন্ধ্যা খুব দ্রুত হয়ে যায় । আমরা সন্ধার ঠিক আগ মুহূর্তে এসে নামলাম মিয়াঁ বাড়ির সামনে । দোকান ঘর গুলির কাজ শেষ দুটো দোকান ভারাও হয়ে গেছে মনে হলো , একটি মুদি দোকান অন্যটি টেইলারস এর দোকান । এবার অবশ্য না বলে আসার মতো ভুল করিনি । খবর দিয়ে রেখেছিলাম প্রায় সপ্তা খানেক আগে । বলেছিলাম যতটা সম্ভব যেন পরিস্কার করে রাখে । অনিলা যেন নিজের বাপ দাদার ভিটায় এসে আসাভঙ্গ না হয় । দেখলাম কাজ করেছে আজমল চাচা , পুকুর দুটি পরিস্কার করা হয়েছে । বাড়ির গেঁট ও রং করা , রাস্তায় খোয়া বিছানো আছে । বাড়ির গেটের ভেতর ঢুকতেই ঝুমার সাথে দেখা , কোমরে আচল গোঁজা আছে মাথায় খোপা করা । মুখে সেই অমনিল ঝকঝকে হাঁসি ।
ঝুমা কে দেখেই আমি দৃষ্টি অবনত করে ফেললাম , ওর দিকে তাকাতে আমার লজ্জা হচ্ছিলো । তবে ঝুমার ভেতর কোন জড়তা দেখতে পেলাম না , হাঁসি মুখে এগিয়ে এলো । এসেই অনিলার একটি হাত ধরলো “ আল্লা কি সোন্দর দেখতে হইসে “
অনিলা আমার মুখের দিকে চাইলো , ইশারায় জিজ্ঞাস করলো এ কে । আমি উত্তর দেয়ার আগেই ঝুমা উত্তর দিয়ে দিলো “ আমি আপনে গো বাড়ির আশ্রিতা , আমার নাম ঝুমা, আমার নানাজান এর লগে থাকি , উনি বাজারে গেসে , আহেন আহেন ভিতরে আহেন “ এই বলে ঝুমা অনিলার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলো । বাড়িটা বেশ পরিস্কার লাগছে , দেখলাম কল পাড়ে পাকা দেয়াল তোলা হয়েছে । দালান ঘরের দেয়ালা গজানো গাছ গুলি আর নেই । এছাড়া তেমন আগাছাও দেখা যাচ্ছে না ।
দালান ঘরের ভেতরে ও আস্তর আর চুনকাম করা হয়েছে । দুটো ঘর পরিস্কার করে রাখা , আমাকে সেই আগের ঘড়টি দেয়া হলো আর অনিলা কে পাশের ঘর । এমনকি মোটর লাগিয়ে উপরে পানি তোলার ব্যাবস্থাও করা হয়ছে । আজমল চাচা প্রথমবার ধরা খেয়ে এবার অনেক কাজ করেছে । এতটা আসা আমি করিনি । গরম পানি করে বেশ করে একটা গোসল দিলাম । তারপর ই গরম গরম পিঠা চলে এলো।
সবচেয়ে ভালো লাগলো জালাল কে দেখে ওর পেট আর আগের মতো ফাঁপা নয় । বুঝলাম করিম আমার কথা রেখেছে , ভালোই চিকিৎসা হয়েছে ওর । আমি একে একে ওদের জন্য আনা উপহার গুলি দিতে লাগলাম । তবে সবার সামনে ঝুমাকে ওর জন্য আনা মেকআপ বক্স দিতে কেমন জানি লাগলো । হয়ত কেউ কিছ মনে করবে না তবুও কেমন জানি লাগলো । অন্য কিছু হলে সবার সামনেই দিয়ে দেয়া যেত, কিন্তু মেকআপ বক্স কেমন জানি দেখায় ।
“ আব্বু তুমি ঝুমার জন্য কিছু আনোনি “ অনিলা অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো । আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম । মনে মনে ভাবছিলাম কেন যে মেকআপ বক্স কিনেছিলাম অন্য কিছু কিনলে দিয়ে দেয়া যেত ।
“ আমার লইগা কিসু আনোন লাগবো না আপনেরা আইসেন হেইতেই আমি খুসি “ ঝুমা মুচকি হেঁসে বলল । কিন্তু অনিলা কিছুতেই মেনে নিলো না ঝুমার কথা জোড় করে ওর জন্য ঢাকা থেকে কেনা একটা ব্রেসলেট দিয়ে দিলো । ঝুমা অবশ্য অনেক আপত্তি করলো কিন্তু অনিলা কিছুই শুনল না । জোড় করে ঝুমাকে পড়িয়ে দিলো ।
রাতে শোয়ার আগে যখন ঝুমা আমার জন্য খাবার পানির জগ নিয়ে আসলে আমি ঝুমাকে ডাকলাম । এ পর্যন্ত এসে আমি ঝুমার সাথে তেমন কথাই বলিনি । কেমন জানি বাধো বাধো লাগছিলো , মনে হচ্ছিলো ঝুমার সাথে কথা বলতে গেলে আমি অতিরিক্ত আবেগ দেখিয়ে ফেলবো আর সেটা সবার নজরে পড়ে যাবে ।
“ কেমন আছো ঝুমা “ ঝুমা কাছে আসতেই আমি জিজ্ঞাস করলাম
“ আমি ভালা আছি “ তারপর দুজনেই কিছুক্ষন চুপচাপ রইলাম ।
“ ঝুমা তুমি কি এখনো আমার উপর রেগে আছো ? “ মেঝের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলাম আমি
“ আপনের উপর রাগুম ক্যান “ অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলো ঝুমা তারপর বলল “ আপনে কি এমুন করসেন যে আপনের উপর রাগ করুম , আমার পোলার চিকিৎসা করাইয়া দিসেন , এহন অয় আগের চেয়ে অনেক ভালা আসে “
“ আমি যা করেছি তা আমাদের দুজনের ভালোর জন্য ই করেছি ঝুমা , আমাদের মাঝে এমন কোন সম্পর্ক সম্ভব নয় কিন্তু বিশ্বাস করো আমি চলে যাওয়ার পর তোমার কথা এক মুহূর্তের জন্য ও ভুলতে পারিনি “ কথা গুল বলেই বুঝলাম কাজটা ঠিক হয়নি । ঝুমার মুখের ভাব বদলে গেলো
“ আপনেরা কি ভাবেন কন তো ছোট মিয়াঁ , আমরা মাইয়া মানুষ কি এতই দুর্বল , যদি এতো নরম হইতাম তাইলে একলা একলা নিজের পোলারে লইয়া থাকতে পারতাম না , কবে রাস্তায় ফালাইয়া গলায় ফাঁশ নিতাম । যা হইসিলো তাতে আমার ও সমান দোষ আসিলো , আর আমি এইটাও বুঝি আপনের পক্ষে আমারে নিয়া কিসু ভাবন সম্ভব না , আর আমি এমন কিসু চাই ও না , আপনেরে দেইখা আমার কেমুন জানি লাগসিলো , আপনেরে অনেক আপন মনে হইসিলো, হের লইগা একটু দুর্বল হইয়া পরসিলাম আর ভুল কইরা ফালাইসিলাম “
আমি ঝুমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । অন্য রকম লাগছে মেয়েটিকে , মনে হচ্ছে গ্রামের কোন সাধারন মেয়ে এ নয় , কোন সাধারন মেয়ে এমন কথা বলতে পাড়ে না । এই মেয়ে অসাধারণ ।