10-02-2021, 05:19 PM
নকশা তোলা কাঠের চেয়ারে বসে আছে করিম , বিশাল ভুঁড়ির চাপে শার্টের বোতাম গুলি যেন ছিরে যাবে । দুই বোতামের মধ্যবর্তী ফাঁকা দিয়ে ওর লোমশ ভুঁড়ি দেখা যাচ্ছে । মাথায় এখনো ঝাকালো কোঁকড়া চুল , পান খেয়ে ঠোট লাল । তবে নাল্টুর মতো একেবারে অচেনা মনে হচ্ছে না ওকে । চোখে মুখে সেই চিরচেনা বিদ্রোহী ভাবটা এখনো খুঁজে পাওয়া যায় বয়সের চর্বির আড়ালে ।
“ আসেন আসেন ছোট মিয়াঁ নাম ধইরা ডাকায় রাগ করসেন নি?” এবার কথা বলে উঠলো নাল্টু , ওদের দুজনের এমন বেঙ্গাত্তক আচরণে আমি কয়কে মুহূর্তের জন্য থমকে গেলাম । বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়ার উত্তেজনা উবে গেলো আমার । মনে মনে ভাবলাম সময়ের নোনা বাতাস হয়ত বন্ধুত্বের ভিতে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে । ওরা এখন আমাকে ওদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে ।ওদের কাছে এখন আমার পরিচয় ছোট বেলার জামি নয় মিয়াঁ বাড়ির কর্তা ছোট মিয়াঁ ।
“ ঐ ব্যাটা আদব কায়দা কি সব ধুইয়া খাইসস করিম্মা , ছোট মিয়ার সামনে বইয়া রইসস , খাড়া হালার পুত “ এই বলে নাল্টু নিজে উঠে দাঁড়ালো সাথে সাথে করিম কেও হাত ধরে টেনে তুলল । তারপর দুজনে এক সাথে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লো । “ এহন কি হুজুর রে কোলে কইরা নিয়া আসতে হইব রে নাল্টু এমনেই আমার কোমর বেদনা “ করিম এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল ।
বুকের উপর থেকে যেন একটা পাহাড় নেমে গেলো আমার , এগিয়ে গেলাম ছোট বেলার সঙ্গিদের দিকে , কেমন জানি একটা অনুভুতি হচ্ছে সামনে দাঁড়ানো লোক দুটির শেষ যে ছবি আমার মনে আঁকা ছিলো তার সাথে বর্তমান অবস্থার আকাশ পাতাল তফাৎ অথচ কত আপন মনে হচ্ছে এদের ।
কাছাকাছি আসতেই জড়িয়ে ধরল নাল্টু , বলল “ শালা তুই হিরু থেইকা হিরুর বাপ হইয়া গেসস “ ওর কণ্ঠ কেপে যাওয়া টের পেলাম , গলার মাঝে কি যেন দলা পাকিয়ে উঠলো আমারও , অনেক দিন এমন সত্যিকারের আবেগ থেকে আমি বঞ্চিত । মা মারা যাওয়ার পর মেয়ে অনিলার কাছেই সুধু নিঃস্বার্থ ভালবাসা পেয়েছি , বাকি সব লেনদেনের খেলা । তুমি আমাকে দাও আমিও তোমাকে দেবো এমন টাইপ । আজ অনেকদিন পর মনে হলো সত্যি সত্যি আমি কারো কাছে আকাঙ্খিত ।
নাল্টুর পর আমাকে করিমের ভুরির চাপ ও সহ্য করতে হলো । তারপর জমে উঠলো আড্ডা , আগে মনে করতাম সুধু মাত্র একদল মেয়ে মানুষ এক সাথে বসলে এতো কথা বলতে পারে । কিন্তু আমার কাছে মনে হলো আমারা তিনজন অদেকে বিশাল বেবধানে পরাজিত করতে পারবো । কি নিয়ে কথা হলো না আমাদের মাঝে সেটাই ভেবে দেখার বিষয় । ছোট বেলার সব বদমায়েশি আরেকবার রোমন্থ করতে পেরে নিজেকে যেন আবার সেই কিশোর বয়েসে খুঝে পেলাম ।
“ এক কাম কর দস্ত , তুই আমাগো লগে সুদ্ধ ভাষায় কথা না বইলা ইংরাজিতে কথা ক , তাইলে আমারা আরও ভালা বুঝতে পারুম “ আড্ডার এক পর্যায়ে করিম বলে উঠলো । সাথে সাথে নাল্টু হেঁসে ফেলল । বুঝলাম আমি এতক্ষন ওদের সাথে শহুরে ভাষায় কথা বলার কারনে এই খোঁচা দিলো আমায় করিম । তাই আমিও ফিরে গেলাম , আদি একেবারে খাতি গ্রাম্য ভাষায় ।
“ তাইলে হেইটাই সই , এহন ক এতদিন আমার লগে দেহা অরতে যাস নাই ক্যান “ প্রস্ন ছুরে দিলাম আমি দুই বন্ধুর দিকে ।
“ ওইটা এখন শত্রু এলাকা দস্ত , ঐখানে আর যাই না , তুই এতদিন পলাইয়া থাক্লি ক্যান , গেরামে আইসস তো হেই কবে “ পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুরে দিলো আমায় করিম ।
“ বাড়িটার অবস্থা দেইখা মনটা খারাপ হইয়া গেসিলো রে , বাইর হইতে মন চায় নাই , কি হইসে মিয়াঁ বাড়ির অবস্থা “ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম আমি ।
“ এর লইগা অবশ্য আমারা দুইজন ও একটু দায়ী , আজমল চাচা ভালোই চালাইতাসিল মিয়াঁ বাড়ি আমারা হের কাছ থাইকা চেয়ারমেনি কাইরা নেওয়ার পর এই অবস্থা হইসে মিয়াঁ বাড়ির ......” আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো নাল্টু কিন্তু আমি ওকে থামিয়ে দিলাম । যে দোষে ওরা দোষী নয় সেই দোষ আমি ওদের নিতে দিতে পারি না । আমি বললাম
“ আরে না কি কস , দোষ আমারই , বাড়ির মানুষ ই যদি বাড়ির খেয়াল না রাখে তাইলে বাইরের লোক কি করবো “
“ ঠিক কইসস , তোর আব্বার চইলা যাওয়ার পর তুই নাকি আর কোন খবর ই নেস নাই , এইটা একদম ঠিক করস নাই , এই সুজুগে আজমল চাচা নিজে মিয়াঁ সাইজা এই গেরামের উপরে অনেক অত্যাচার করসে , তাই আমরা ক্ষমতা নিয়া নিসি এহন তুই রাগ করস আর যাই করস , তোর লগে যোগাযোগ করার ও কোন উপায় আসিলো না “ করিমের কথা গুলয় এক ধরনের অপরাধ বোধ আর রাগ দুটোরই মিশেল দেখতে পেলাম আমি ।
“ হ প্রথম প্রথম আমারা চুপ আসিলাম , একমাত্র তোর কথা চিন্তা কইরা , কিন্তু জহন লাভ্লুর উপরে আইসা পরলো তহন আর চুপ থাকতে পারলাম না ।“ নাল্টু যোগ করলো করিমের সাথে । লাভুলুর কথা উঠতেই ঘরটায় যেন একটা শোকের ছায়া নেমে এলো । মনে মনে ভাবলাম আমার আরও আগেই লাভ্লুর কথা জিজ্ঞাস করার দরকার ছিলো ।
“ কি হইসিলো লাভ্লুর ?” জিজ্ঞাস করলাম আমি , কয়েক সেকেন্ড কেউ উত্তর দিলো না । করিম তো এক প্রকার মুখ ফিরিয়ে নিলো আমার দিক থেকে । তার পর নাল্টু বলতে শুরু করলো ধিরে ধিরে ।
“ আজমল চাচা নিজের ক্ষমতা ধইরা রাখনের লইগা একটা গুন্ডা বাহিনী রাখতো নিজের লগে , সেই বাহিনীর নেতা আসিলো মজিদ নামে একটা পোলা । এমুন কোন আকাম কুকাম আসিলো না যে মজিদ করতো না , কেউ কিছু কইতনা ডরে । তবে আমাগো এরাইয়া জাইত মজিদ আর আজমল চাচা , মনে করতো আমারা যদি তরে কিছু বইলা দেই । সেই মজিদ জারে ইচ্ছা তার মাইর ধইর করতো , চান্দা তুলত যার তার কাছ থাইকা । এই পর্যন্ত ঠিক আসিলো , আস্তে আস্তে মজিদের সাহস বারতে লাগলো । গেরামের বউ ঝি গো দিকে হাত বাড়াইতে লাগলো । একদিন সন্ধার পর লাভ্লু আমার কাছে আইয়া হাজির , ওর চেহারায় কইতাসিল খারাপ কিসু হইসে , আমি জিগাইতেই লাভ্লু কাইন্দা দিলো, কইলো ওর মাইয়া ইকলেজ থাইকা বাড়ি আহে নাই । আমাগো কারো ই মাইয়া নাই হের লইগা লাভ্লুর মাইয়ারে আমারা সবাই অনেক আদর করতাম ।“ এই পর্যন্ত বলে নাল্টু একটু থামল , এক চুমুক পানি খেলো । নাল্টু যদিও এখনো পুরো কথা বলেনাই তবুও আমি ব্যাপারটা আঁচ করতে পারছি । আর এও বুঝতে পারছি মেয়েটিকে নাল্টু আর করিম দুজনেই খুব আদরর করতো । চুপ করে বসে রইলাম আমি , নাল্টু সময় নিয়ে বলুক ।
“ সারা গ্রাম তন্ন তন্ন কইরা খুইজাও পাইনাই মাইয়াটারে , পরদিন সকালে দেহি নদির পাড়ে ওর লাশ ঝুলতাসে , নিজেই গলায় দড়ি দিসে নাকি কেউ মাইড়া ঝুলাইয়া রাখসে কেউ কইতে পাড়ে না । ডাক্তারি পরীক্ষায় পাওয়া গেলো ওরে ;., করা হইসে । কিন্তু আত্মহত্যা করসে নাকি কেউ মারসে সেইটা বোঝা গেলো না । মাইয়ার লাশ দেইখা লাভ্লু পাগল হইয়া গেলো । গেরামের মানুষ তো আর ডাক্তারি কথা বার্তা বোঝে না , আজমল চাচা ছড়াইয়া দিলো ঐ মাইয়া আকাম কইরা পোয়াতি হইসে তাই ফাঁশ লইসে । মাইয়াটার জানাজা ও হইতে দেয় নাই। পুলিশ কেইস হইলেও কোন কিছু হয় নাই , খালি মজিদ হাওয়া হইয়া গেসিলো ।“
“ আর লাভ্লু ?”
“ ওরে ঢাকা হাসপাতালে ভর্তি কইরা রাখসি , পুরা পাগল এহন , ওর বউ ও মইরা গেসে “ শেষে উত্তর দিলো করিম , ওর চোখ দুটো ছল ছল করছে পানিতে , আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম করিমের দিকে । আমাদের মাঝে করিম সবচেয়ে বেশি কঠিন ছিলো । সেই করিম এর চোখে পানি !!! , আমি আরও ভালো করে তাকালাম করিমের দিকে । ওর চোখে সুধু পানি নয় , সাথে আমার জন্য বেশ কয়েকটি প্রস্ন ও আছে । এবং আমি সেই প্রস্ন গুলি জানি , তবে প্রস্ন গুলি জানা থাকলেও অগুলির উত্তর আমার জানা নেই ।
এর পর আর আড্ডা বেশি জমল না , বাড়ি ফেরার পথে বার বার করিমের না উচ্চারিত প্রস্ন গুলি আমার কানে বাজতে লাগলো । হ্যাঁ এক দিক থেকে করিম যে আমাকে দোষারোপ করছে তার যুক্তি আছে । কিছু না জেনে কিছু না করেও আমি ল্ভলুর এই অবস্থার জন্য কিছুটা হলেও দায়ী । এই দায়ভার আমি কিছুতেই নিজের কাধ থেকে সরাতে পারবো না । কারন মিয়াঁ বাড়ির জন্য ই আজমল চাচা ক্ষমতা পেয়েছিলো ।
“ কি হইসে খাইতাসেন না ক্যান ? “ প্লেতে ভাত মেখে বসে ছিলাম , লাভ্লুর ব্যাপারটা কিছুতেই মাথা থেকে দূর করতে পারছিলাম না। ঝুমার ডাকে হুস ফিরলো । প্লেতে মেখে রাখা ভাত ঠাণ্ডা হয়ে গেছে , এক গ্রাস মুখে নিতেই আর ভালো লাগলো না । আমি বললাম “ আর খাবো না ঝুমা , তুমি নিয়ে যাও এগুলা “ ।
“ ক্যান খাওন কি ভালা হয় নাই ?” প্রস্ন করলো ঝুমা , কিন্তু আমি এর কোন উত্তর দিলাম না । ঝুমা আবার জিজ্ঞাস করলো “ তরকারি কি গরম কইরা দিমু আবার “
“ আচ্ছা ঝুমা লাভ্লুর মেয়ের সাথে কি হয়েছিলো তুমি জানো ?” হাত ধুতে ধুতে প্রস্ন করলাম আমি ।
“ হো জানি কিন্তু আপনের কাসে তহন কই নাই , মাইয়াটার কার লগে জানি ভালবাসা আসিলো , পোয়াতি আসিলো মাইয়াটা তাই ফাঁশ লইসিলো “ এই বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছারলো ঝুমা । বুঝলাম আজমল চাচার বলা কথা গুলই ঝুমা জানে আসল ঘটনা ঝুমা জানে না ।
“ মাইয়াটা অনেক ভালা আসিলো ছোট মিয়াঁ মামা “ এই বলে আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছারলো ঝুমা । তারপর আবার বলতে শুরু করলো
“ কারো লগে যে ওর ভালবাসা আসিলো সেইটা কেউ টের পায়নাই , আমার লগে কত কথা কইত কোনদিন আমারেও কয় নাই , কাউরে কিছু কইলনা একদিন নিজে নিজে ফাঁশ লইলো “ থালা বাটি নিয়ে চলে গেলো ঝুমা ।
রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ধরমর করে উঠে বসলাম , সারা শরীর ঘেমে গেছে , হাপরের মতো ওঠা নামা করছে বুক । পানির তেষ্টা পেয়েছে খুব , মনে হচ্ছে গলা স্কিয়ে একেবারে কাঠ হয়ে আছে । খাটে পাশেই একটা পানির জগ থাকার কথা । আমি পানি খাওয়ার জন্য সেদিকে হাত বারালাম । ঢক ঢক করে পুরো গ্লাস পানি খেয়ে ফেললাম । গলার শুকনো ভাব চলে গেলেও বুকটা ধক ধক করতে লাগলো । কি আজব স্বপ্ন, লাভ্লুর মেয়ের ঘটনা টা যে আমাকে পেয়ে বসেছে সেটা বুঝতে পারলাম । এই ঘটনা আমাকে অনেক দিন ভোগাবে সেটাও বুঝতে পারলাম।
চুপচাপ কিছুক্ষন শুয়ে রইলাম , ঘুম আসছে না একদম । স্বপ্ন টা নিয়ে ভাবতে লাগলাম , আমি জানি লাভুলুর মেয়ের ঘটনাটা আমার মনে প্রভাব ফেলায় আমি স্বপ্নটা দেখেছি । কিন্তু সপ্নে আমি ঝুমা আর রাবু কেও দেখলাম সেটা বুঝতে পারছি না । আমি আবার স্বপ্নটা মনে করতে লাগলাম । নদির পার ধরে হাঁটছিলাম আমি । হঠাত দেখি দূরে গাছের ডাল থেকে কি যেন একটা ঝুলছে দড়ির সাথে । প্রথমে আমি পাত্তা দিলাম না , কিন্তু আমার মনে হতে লাগলো আমার পাত্তা দেয়া উচিৎ । এক প্রকার নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি সেই ঝুলন্ত বস্তুর দিকে এগিয়ে গেলাম । যতই কাছে জাচ্ছি ততই স্পষ্ট হচ্ছে সেই ঝুলন্ত বস্তুতি । একটু পর আমার মনে হলো ওটা একটা মানুষের দেহ এবং মেয়ে মানুষের । গলায় দড়ি দেয়া তবে এখনো জীবিত বিড়বিড় করে কি যেন বলছে । এতো সময় ধরে কি করে জীবিত রইলো সেটা ভেবে আমি অবাক হলাম । ইচ্ছে হলো ফিরে যাই , কাছে গিয়ে ঝামেলা বাড়িয়ে কি লাভ । কিন্তু ফিরে গেলাম না আমি বরং আরও এগিয়ে গেলাম ঝুলন্ত দেহটির দিকে । একটা লাল ওড়না দিয়ে ফাঁশ নেয়া , পুরো মুখে ছোপ ছোপ নীলচে দাগ ।
আমি আরও একটু কাছে গেলাম মেয়েটি কি বলছে সোনার জন্য । যখন আমি একেবারে কাছে চলে গেলাম তখন শুনলাম মেয়েটি বলছে “আব্বু আমাকে বাঁচাও “। চমকে আমি মেয়েটির মুখের দিকে তাকালাম । আর তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম মেয়েটি আর কেউ নয় আমার মেয়ে অনিলা । প্রান পনে আমি অনিলাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে লাগলাম । কিন্তু কিছুতেই কিছু করতে পারছিলাম না , এমন সময় আরও একটি মেয়ে কণ্ঠ শুনতে পেলাম , বলছে “ আমারে বাচাইবেন না “ । আমি আসে পাশে তাকালাম দেখলাম পাশের ডালে আর একটি ঝুলন্ত দেহ হাঁসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে । ওটা ঝুমার দেহ , আমি অনিলার কথা ভুলে গেলাম দৌরে ঝুমার দিকে জাচ্ছিলাম এমন সময় রাবু এসে দাঁড়ালো আমার সামনে । আমার পথ আটকে দাঁড়ালো সপ্নে রাবুর বয়স অনেক বেশি । চেনাই যায় না প্রায় তবে আমি চিনে ফেললাম। রাবু আমাকে কিছুতেই ঝুমার কাছে যেতে দিতে চাচ্ছে না । বলছে “ ছোট মিয়াঁ খবরদার আমার মাইয়ার কাছে জাইবেন না “ আমি ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু রাবু কিছুতেই আমাকে ঝুমার কাছে যেতে দিলো না । আর তখনি আমার ঘম ভেঙ্গে গেলো ।
কি আশ্চর্য স্বপ্ন , আমার মনে হয় জীবনে আমি এমন স্বপ্ন দেখিনি । বৃথা কিছুক্ষন শুয়ে রইলাম , ঘুম আসবেনা বুঝতে পেরে আবার উঠে বসলাম । খেয়াল করলাম ঘরময় জোছনার আলো । খোলা জানালা দিয়ে চাদের আলো এসে ঢুকেছে আমার ঘরে । অসম্ভব সুন্দর লাগছে সেই আলো । পসচিমা বৈদ্যুতিক আলোর ঝলসানিতে এই অপার্থিব আলো কোনদিন আমার চোখে পরেনি । এই দৃশ্য আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন । কারন এরকম দৃশ্য সুধু গ্রাম বাংলায় ই দেখা পাওয়া যায় । আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো উঠে জানালার কাছে গেলাম । চোখ রাখলাম বাইরে ।
যা দেখলাম তাতে আমার মনে হচ্ছে আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে । সত্যি দম বন্ধ করা সৌন্দর্য , এমন সৌন্দর্য দেখলে ইচ্ছে হয় দম বন্ধ করে রাখি , যদি নিঃশ্বাস ফেলার সাথে সাথে গায়েব হয়েযায় । তারচেয়ে ভালো নিঃশ্বাস বন্ধ রেখে চোখের সামনে এমন সৌন্দর্য নিয়ে নিজের জিবনের ইতি টানি ।
ধুর কি যাতা ভাবছি , মাথা ঝাকিয়ে মনে মনে একবার হেঁসে নিলাম । গ্রাম্য পরিবেশে জোছনা রাত কে আসলেই বাহবা দিতে হবে । আমার মতো মানুষের মন কেও ভাবুক বানিয়ে দিয়েছে । তবে সত্যি দারুন লাগছে সব কিছু দেখতে । আমি বাইরের দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। স্বপ্নের আছর একটু একটু করে কমতে লাগলো আমার উপর থেকে । ঠিক তখনি আমার দৃষ্টি গেলো আমার আর রাবুর গোপন অভিসারের সাক্ষি সেই ভাঙ্গা ঘরতির কঙ্কালের দিকে । আর এবার সত্যি সত্যি আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো । কেউ একজন হাঁটা চলা করছে ওখানে। পরনে সাড়ি , আপন মনে হাঁটছে । এই জংলা যায়গায় এতো রাতে কে হাঁটে , ভুত প্রেতে আমার বিশ্বাস নেই , কিন্তু চোখের সামনে যা দেখছি তাকে কি বলবো সেটা ভেবে পেলাম না ।
চট করে জানালার কাছ থেকে চলে এলাম , এক রাতে এতো চাপ আমার মস্তিষ্ক নিতে পারবে না । সুইচ টিপলাম কিন্তু আলো জ্বলল না , বুঝলাম গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে কিন্তু এক অনন্ত লোড সেডিং কে সঙ্গি করে । একটা হেরিকেন অবশ্য আছে কিন্তু আমি আর সেদিকে গেলাম না । চাদের আলই চলবে আমার জন্য । নিজের সুটকেস এর কাছে গিয়ে সেটা খুলে জায়গা মতো হাত দিতেই বোতল টা পেলাম । এমনিতে আমি তেমন খাই না তবে মাঝে মাঝে খাই তাই সব সময় সাথেই একটা থাকে । আজ খুব কাজে দেবে জিসিন টা । বতলে মুখ লাগিয়েই কয়েক ঢোঁক গিলে ফেললাম । সাথে সিগারেট হলে ভালো হতো কিন্তু নেই ।
কয়েক পেগ পেটে যেতেই আমি একটু স্থির হলাম , স্বপ্নটার চেয়ে বাইরে দেখা জিনিসটাই আমাকে বেশি অস্থির করে তুলেছিলো । টপাটপ আরও দু পেগ চালান করে দিলাম । একটু সাহস এলো মনে আবার জানালার কাছে গেলাম । এখনো আছে কিনা দেখতে , অবাক করা বিষয় হলো এখনো আছে । এখন বসে আছে , এবং আমি তাকে এবার চিনতে পারলাম । না চেনার কারন নেই এ হচ্ছে ঝুমা । খুব অবাক হলাম সারাদিন এতো খাটনি খেঁটে মেয়েটা এতো রাতে জেগে আছে কিভাবে ।
আরও এক পেগ খেয়ে আমি ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলাম , ঝুমাকে দেখে আমারও খুব ইচ্ছে হচ্ছে বাইরে ঘুরে বেরাতে ।
“ ডরাইসিলেন ছোট মিয়াঁ ?“ এই বলে খিল খিল করে হেঁসে উঠলো ঝুমা । অদ্ভুত সেই হাঁসি , এক ধরনের পাগলামি মেশানো আছে সেই হাসিতে ।
“ না ভয় নয় চমকে গিয়েছিলাম , তুমি কি এমন করে প্রায় রাতেই হাঁটো ?” আমি জিজ্ঞাস করলাম । উত্তরে ঝুমা আবারো হাসল , জোছনা রাতের সুনসান পরিবেশে এমন খিলখিলে হাঁসিতে আমার শরীরে এক ধরনের শিরশিরে অনুভুতি টের পেলাম । ভালো করে তাকালাম ঝুমার দিকে । অন্য রকম লাগছে মেয়েটাকে , আরও একটু ভালো করে তাকালাম , চাদের আলোয় দেখলাম মেয়েটা সাঁজ সজ্জা করেছে হালকা ।
“ তুমি কি সেজেছো ঝুমা “ প্রশ্নটা করেই একটু বিব্রত বোধ করমাল । এ কেমন প্রস্ন , বুঝলাম মদের প্রভাব পড়েছে আমার উপর ।
“ হো সাজছি , রাইতের অন্ধকারে আমি সাজি , দিনের বেলা সাজলে গুনা হইব , বিধবার সাজগোজ করতে নাই আপনে জানেন না “ এই বলে আবার খিল খিল করে হাসতে লাগলো ঝুমা । আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো ঝুমার দিকে এগিয়ে গেলাম । চাদের আলোতে তাকালাম ঝুমার গাড়ো করে কাজল টানা চোখ দুটোর দিকে ।
“ চাইয়া রইলেন যে ?” ফিস্ফিসিয়ে জিজ্ঞাস করলো ঝুমা ,
“ তোমারে দেহি চাইয়া চাইয়া “ আমিও ফিস্ফিসিয়ে উত্তর দিলাম , নিজের অজান্তেই আমি গ্রাম্য ভাষায় কথা বলে ফেলেছি ঝুমার সাথে । কেন এমন বললাম সেটা আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না , মনে হয় নিজেকে ঝুমার সমপর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য আমার ভেতরের আমি এটা করেছে । দু হাতে আমি ঝুমার দু বাহু ধরে ঝুমাকে আমার কাছে টেনে আনলাম । এতো কাছে যে ঝুমার উচু বুক দুটো আমার বুকের সাথে ঘষা খাচ্ছে ।
“ আমারও কিন্তু জানাজা হইবো না “ কাজল টানা ডাগর চোখ দুটো দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ঝুমা ।
“ তুমি আমারে কি ভাবো ঝুমা , আমি কোনদিন তোমার লগে খারাপ কিছু হইতে দিমু না “ এই বলে আমি ঝুমাকে চুমু খেলাম । গভির চুমু ঝুমার নরম নধর ঠোট মুখের ভেতর নিয়ে চুষতে লাগলাম । যদিও আমার মস্তিস্কের একটা অংশ আমার এই কাজের তিব্র বিরধিতা করছিলো , বার বার আমাকে শাসিয়ে যাচ্ছিলো । বলছিলো এই কি করছিস তুই , নিজের অবস্থানের কথা ভাব কোথায় তুই আর কোথায় এই গ্রাম্য মেয়ে । মাথায় সস্তা নারকেল তেলের গন্ধ, গা থেকে এখনো মশলার ঘন্ধ আসছে । কিন্তু আমার শরীর আর মন কেউ সেই নিরীহ মস্তিস্কের বারণ শুনতে রাজি নয় এই মুহূর্তে । হ্যাঁ সুধু শরীর নয় মন ও , মেয়েটির প্রতি আমি সুধু সারিরক টান অনুভব করছি না সাথে সাথে এক ধরনের প্রচণ্ড মমতা আমার মনের অন্তস্থল থেকে উগ্রে আসছে । নিবির ভাবে ওষ্ঠ চোষণের সময় বার বার মনে হচ্ছে এই মেয়ে আমার অনেক আপন , এর কোন ক্ষতি আমি হতে দেবো না ।
চোখে রোদ পরতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো , মাথায় তিব্র জন্ত্রনা । ভোতা যন্ত্রণা নিয়ে কিছুক্ষন শুয়ে রইলাম । হঠাত খেয়াল হলো আমি উলঙ্গ সম্পূর্ণ উলঙ্গ , একটা পাতলা কাঁথা আমার শরীরের উপর দেয়া । চট করে উঠে বসলাম আমি । হ্যাঁ গত রাতে ঝুমাকে আমি এই রুমে নিয়ে এসেছিলাম । এই বিছানায় একে একে ঝুমার শরীরের সব আবরন নিজের হাতে সরিয়েছি আমি । তারপরের দৃশ্য গুলিও আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো । চাদেয় আলোয় আলোকিত থাকায় ঝুমার নগ্ন দেহের প্রতিটি বাঁক আমার চোখের সামনে স্পষ্ট ছিলো।
রাগে নিজের মাথা দেয়ালে ঠুকতে ইচ্ছে হচ্ছে , এ কি করলাম আমি । কি ভাববে এখন মেয়েটা , যদি মেয়েটা এখন আমাকে নিয়ে কনকিছু ভেবে বসে তখন কি হবে । রাতে দেখা স্বপ্নের কথা আমার মনে পরে গেলো , রাবু কিভাবে আমাকে নিষেধ করছিলো ঝুমার কাছে যাওয়ার জন্য । উফ কি করবো আমি এখন । সবচেয়ে বড় কথা ঝুমা রাবুর মেয়ে “রাবু” যার সাথে আমার এক সময় শারীরিক সম্পর্ক ছিলো । না সুধু শারীরিক সম্পর্ক নয় , সুধু সারিরিরক সম্পর্ক বললে ঐ সম্পর্ককে অসম্মান করা হবে । তার চেয়ে বেশি কিছু ছিলো আমাদের মাঝে । হ্যাঁ ওটাকে ভালবাসা ঠিক বলা যাবে না । তবে সুধু সারিরের মোহে আমি রাবু কে ব্যাবহার করিনি ।
কিন্তু আজ আমি সেই সম্পর্ককে চরম অপমান করলাম । এম্নিতেই মেয়েটা দুঃখী তার উপর যদি আমাকে নিয়ে কোন আশা করে ফেলে তখন আরও বড় দুঃখ পাবে । যতটুকু আমি ওকে জেনেছি , কাউকে এম্নিতেই নিজের শরীর বিলিয়ে দেয়ার মতো মেয়ে ঝুমা না । উফ এর পর ভাবতেও আমার কষ্ট হচ্ছে ।
কোমরে কাঁথা পেচিয়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম , মেঝেতে পরে থাকা প্রায় খালি বোতল এর দিকে দৃষ্টি পরতেই মনটা আরও বিষিয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে এই বোতলটাই সব নষ্টের মুল । তারপর আমি একটা ছেলেমানুষি কাজ করে ফেললাম একটা লাথি বসিয়ে দিলাম বোতলের উপর। এতে লাভের লাভ হলো ডান পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলে প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়ে চেচিয়ে উঠলাম আর আমার কোমরে জড়িয়ে থাকা কাঁথা পরে গিয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে গেলাম ।
অনেক দেরি হয়ে গেলো আপডেট দিতে । এর জন্য আর ক্ষমা চাইব না কত আর ক্ষমা করবেন আপ্নারা । একটা কথা বলার আছে , সেটি হচ্ছে আমি এই গল্পে কোন ট্যাগ ব্যাবহার করছি না , কারন এটা সুধুই একটি গল্প এতে যে ধরণেরই যৌনতা থাকুক না কেন সেটা সুধু গল্পের প্র্যজনেই আসবে । গল্পের জন্য যৌনতা , যৌনতার জন্য গল্প নয় অনেকটা এই ধরনের ব্যাপার সেপার আরকি । আর যৌন দৃশের তেমন বর্ণনা ও থাকবে না ।
“ আসেন আসেন ছোট মিয়াঁ নাম ধইরা ডাকায় রাগ করসেন নি?” এবার কথা বলে উঠলো নাল্টু , ওদের দুজনের এমন বেঙ্গাত্তক আচরণে আমি কয়কে মুহূর্তের জন্য থমকে গেলাম । বন্ধুদের সাথে দেখা হওয়ার উত্তেজনা উবে গেলো আমার । মনে মনে ভাবলাম সময়ের নোনা বাতাস হয়ত বন্ধুত্বের ভিতে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে । ওরা এখন আমাকে ওদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে ।ওদের কাছে এখন আমার পরিচয় ছোট বেলার জামি নয় মিয়াঁ বাড়ির কর্তা ছোট মিয়াঁ ।
“ ঐ ব্যাটা আদব কায়দা কি সব ধুইয়া খাইসস করিম্মা , ছোট মিয়ার সামনে বইয়া রইসস , খাড়া হালার পুত “ এই বলে নাল্টু নিজে উঠে দাঁড়ালো সাথে সাথে করিম কেও হাত ধরে টেনে তুলল । তারপর দুজনে এক সাথে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লো । “ এহন কি হুজুর রে কোলে কইরা নিয়া আসতে হইব রে নাল্টু এমনেই আমার কোমর বেদনা “ করিম এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল ।
বুকের উপর থেকে যেন একটা পাহাড় নেমে গেলো আমার , এগিয়ে গেলাম ছোট বেলার সঙ্গিদের দিকে , কেমন জানি একটা অনুভুতি হচ্ছে সামনে দাঁড়ানো লোক দুটির শেষ যে ছবি আমার মনে আঁকা ছিলো তার সাথে বর্তমান অবস্থার আকাশ পাতাল তফাৎ অথচ কত আপন মনে হচ্ছে এদের ।
কাছাকাছি আসতেই জড়িয়ে ধরল নাল্টু , বলল “ শালা তুই হিরু থেইকা হিরুর বাপ হইয়া গেসস “ ওর কণ্ঠ কেপে যাওয়া টের পেলাম , গলার মাঝে কি যেন দলা পাকিয়ে উঠলো আমারও , অনেক দিন এমন সত্যিকারের আবেগ থেকে আমি বঞ্চিত । মা মারা যাওয়ার পর মেয়ে অনিলার কাছেই সুধু নিঃস্বার্থ ভালবাসা পেয়েছি , বাকি সব লেনদেনের খেলা । তুমি আমাকে দাও আমিও তোমাকে দেবো এমন টাইপ । আজ অনেকদিন পর মনে হলো সত্যি সত্যি আমি কারো কাছে আকাঙ্খিত ।
নাল্টুর পর আমাকে করিমের ভুরির চাপ ও সহ্য করতে হলো । তারপর জমে উঠলো আড্ডা , আগে মনে করতাম সুধু মাত্র একদল মেয়ে মানুষ এক সাথে বসলে এতো কথা বলতে পারে । কিন্তু আমার কাছে মনে হলো আমারা তিনজন অদেকে বিশাল বেবধানে পরাজিত করতে পারবো । কি নিয়ে কথা হলো না আমাদের মাঝে সেটাই ভেবে দেখার বিষয় । ছোট বেলার সব বদমায়েশি আরেকবার রোমন্থ করতে পেরে নিজেকে যেন আবার সেই কিশোর বয়েসে খুঝে পেলাম ।
“ এক কাম কর দস্ত , তুই আমাগো লগে সুদ্ধ ভাষায় কথা না বইলা ইংরাজিতে কথা ক , তাইলে আমারা আরও ভালা বুঝতে পারুম “ আড্ডার এক পর্যায়ে করিম বলে উঠলো । সাথে সাথে নাল্টু হেঁসে ফেলল । বুঝলাম আমি এতক্ষন ওদের সাথে শহুরে ভাষায় কথা বলার কারনে এই খোঁচা দিলো আমায় করিম । তাই আমিও ফিরে গেলাম , আদি একেবারে খাতি গ্রাম্য ভাষায় ।
“ তাইলে হেইটাই সই , এহন ক এতদিন আমার লগে দেহা অরতে যাস নাই ক্যান “ প্রস্ন ছুরে দিলাম আমি দুই বন্ধুর দিকে ।
“ ওইটা এখন শত্রু এলাকা দস্ত , ঐখানে আর যাই না , তুই এতদিন পলাইয়া থাক্লি ক্যান , গেরামে আইসস তো হেই কবে “ পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুরে দিলো আমায় করিম ।
“ বাড়িটার অবস্থা দেইখা মনটা খারাপ হইয়া গেসিলো রে , বাইর হইতে মন চায় নাই , কি হইসে মিয়াঁ বাড়ির অবস্থা “ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম আমি ।
“ এর লইগা অবশ্য আমারা দুইজন ও একটু দায়ী , আজমল চাচা ভালোই চালাইতাসিল মিয়াঁ বাড়ি আমারা হের কাছ থাইকা চেয়ারমেনি কাইরা নেওয়ার পর এই অবস্থা হইসে মিয়াঁ বাড়ির ......” আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো নাল্টু কিন্তু আমি ওকে থামিয়ে দিলাম । যে দোষে ওরা দোষী নয় সেই দোষ আমি ওদের নিতে দিতে পারি না । আমি বললাম
“ আরে না কি কস , দোষ আমারই , বাড়ির মানুষ ই যদি বাড়ির খেয়াল না রাখে তাইলে বাইরের লোক কি করবো “
“ ঠিক কইসস , তোর আব্বার চইলা যাওয়ার পর তুই নাকি আর কোন খবর ই নেস নাই , এইটা একদম ঠিক করস নাই , এই সুজুগে আজমল চাচা নিজে মিয়াঁ সাইজা এই গেরামের উপরে অনেক অত্যাচার করসে , তাই আমরা ক্ষমতা নিয়া নিসি এহন তুই রাগ করস আর যাই করস , তোর লগে যোগাযোগ করার ও কোন উপায় আসিলো না “ করিমের কথা গুলয় এক ধরনের অপরাধ বোধ আর রাগ দুটোরই মিশেল দেখতে পেলাম আমি ।
“ হ প্রথম প্রথম আমারা চুপ আসিলাম , একমাত্র তোর কথা চিন্তা কইরা , কিন্তু জহন লাভ্লুর উপরে আইসা পরলো তহন আর চুপ থাকতে পারলাম না ।“ নাল্টু যোগ করলো করিমের সাথে । লাভুলুর কথা উঠতেই ঘরটায় যেন একটা শোকের ছায়া নেমে এলো । মনে মনে ভাবলাম আমার আরও আগেই লাভ্লুর কথা জিজ্ঞাস করার দরকার ছিলো ।
“ কি হইসিলো লাভ্লুর ?” জিজ্ঞাস করলাম আমি , কয়েক সেকেন্ড কেউ উত্তর দিলো না । করিম তো এক প্রকার মুখ ফিরিয়ে নিলো আমার দিক থেকে । তার পর নাল্টু বলতে শুরু করলো ধিরে ধিরে ।
“ আজমল চাচা নিজের ক্ষমতা ধইরা রাখনের লইগা একটা গুন্ডা বাহিনী রাখতো নিজের লগে , সেই বাহিনীর নেতা আসিলো মজিদ নামে একটা পোলা । এমুন কোন আকাম কুকাম আসিলো না যে মজিদ করতো না , কেউ কিছু কইতনা ডরে । তবে আমাগো এরাইয়া জাইত মজিদ আর আজমল চাচা , মনে করতো আমারা যদি তরে কিছু বইলা দেই । সেই মজিদ জারে ইচ্ছা তার মাইর ধইর করতো , চান্দা তুলত যার তার কাছ থাইকা । এই পর্যন্ত ঠিক আসিলো , আস্তে আস্তে মজিদের সাহস বারতে লাগলো । গেরামের বউ ঝি গো দিকে হাত বাড়াইতে লাগলো । একদিন সন্ধার পর লাভ্লু আমার কাছে আইয়া হাজির , ওর চেহারায় কইতাসিল খারাপ কিসু হইসে , আমি জিগাইতেই লাভ্লু কাইন্দা দিলো, কইলো ওর মাইয়া ইকলেজ থাইকা বাড়ি আহে নাই । আমাগো কারো ই মাইয়া নাই হের লইগা লাভ্লুর মাইয়ারে আমারা সবাই অনেক আদর করতাম ।“ এই পর্যন্ত বলে নাল্টু একটু থামল , এক চুমুক পানি খেলো । নাল্টু যদিও এখনো পুরো কথা বলেনাই তবুও আমি ব্যাপারটা আঁচ করতে পারছি । আর এও বুঝতে পারছি মেয়েটিকে নাল্টু আর করিম দুজনেই খুব আদরর করতো । চুপ করে বসে রইলাম আমি , নাল্টু সময় নিয়ে বলুক ।
“ সারা গ্রাম তন্ন তন্ন কইরা খুইজাও পাইনাই মাইয়াটারে , পরদিন সকালে দেহি নদির পাড়ে ওর লাশ ঝুলতাসে , নিজেই গলায় দড়ি দিসে নাকি কেউ মাইড়া ঝুলাইয়া রাখসে কেউ কইতে পাড়ে না । ডাক্তারি পরীক্ষায় পাওয়া গেলো ওরে ;., করা হইসে । কিন্তু আত্মহত্যা করসে নাকি কেউ মারসে সেইটা বোঝা গেলো না । মাইয়ার লাশ দেইখা লাভ্লু পাগল হইয়া গেলো । গেরামের মানুষ তো আর ডাক্তারি কথা বার্তা বোঝে না , আজমল চাচা ছড়াইয়া দিলো ঐ মাইয়া আকাম কইরা পোয়াতি হইসে তাই ফাঁশ লইসে । মাইয়াটার জানাজা ও হইতে দেয় নাই। পুলিশ কেইস হইলেও কোন কিছু হয় নাই , খালি মজিদ হাওয়া হইয়া গেসিলো ।“
“ আর লাভ্লু ?”
“ ওরে ঢাকা হাসপাতালে ভর্তি কইরা রাখসি , পুরা পাগল এহন , ওর বউ ও মইরা গেসে “ শেষে উত্তর দিলো করিম , ওর চোখ দুটো ছল ছল করছে পানিতে , আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম করিমের দিকে । আমাদের মাঝে করিম সবচেয়ে বেশি কঠিন ছিলো । সেই করিম এর চোখে পানি !!! , আমি আরও ভালো করে তাকালাম করিমের দিকে । ওর চোখে সুধু পানি নয় , সাথে আমার জন্য বেশ কয়েকটি প্রস্ন ও আছে । এবং আমি সেই প্রস্ন গুলি জানি , তবে প্রস্ন গুলি জানা থাকলেও অগুলির উত্তর আমার জানা নেই ।
এর পর আর আড্ডা বেশি জমল না , বাড়ি ফেরার পথে বার বার করিমের না উচ্চারিত প্রস্ন গুলি আমার কানে বাজতে লাগলো । হ্যাঁ এক দিক থেকে করিম যে আমাকে দোষারোপ করছে তার যুক্তি আছে । কিছু না জেনে কিছু না করেও আমি ল্ভলুর এই অবস্থার জন্য কিছুটা হলেও দায়ী । এই দায়ভার আমি কিছুতেই নিজের কাধ থেকে সরাতে পারবো না । কারন মিয়াঁ বাড়ির জন্য ই আজমল চাচা ক্ষমতা পেয়েছিলো ।
“ কি হইসে খাইতাসেন না ক্যান ? “ প্লেতে ভাত মেখে বসে ছিলাম , লাভ্লুর ব্যাপারটা কিছুতেই মাথা থেকে দূর করতে পারছিলাম না। ঝুমার ডাকে হুস ফিরলো । প্লেতে মেখে রাখা ভাত ঠাণ্ডা হয়ে গেছে , এক গ্রাস মুখে নিতেই আর ভালো লাগলো না । আমি বললাম “ আর খাবো না ঝুমা , তুমি নিয়ে যাও এগুলা “ ।
“ ক্যান খাওন কি ভালা হয় নাই ?” প্রস্ন করলো ঝুমা , কিন্তু আমি এর কোন উত্তর দিলাম না । ঝুমা আবার জিজ্ঞাস করলো “ তরকারি কি গরম কইরা দিমু আবার “
“ আচ্ছা ঝুমা লাভ্লুর মেয়ের সাথে কি হয়েছিলো তুমি জানো ?” হাত ধুতে ধুতে প্রস্ন করলাম আমি ।
“ হো জানি কিন্তু আপনের কাসে তহন কই নাই , মাইয়াটার কার লগে জানি ভালবাসা আসিলো , পোয়াতি আসিলো মাইয়াটা তাই ফাঁশ লইসিলো “ এই বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছারলো ঝুমা । বুঝলাম আজমল চাচার বলা কথা গুলই ঝুমা জানে আসল ঘটনা ঝুমা জানে না ।
“ মাইয়াটা অনেক ভালা আসিলো ছোট মিয়াঁ মামা “ এই বলে আবার একটা দীর্ঘশ্বাস ছারলো ঝুমা । তারপর আবার বলতে শুরু করলো
“ কারো লগে যে ওর ভালবাসা আসিলো সেইটা কেউ টের পায়নাই , আমার লগে কত কথা কইত কোনদিন আমারেও কয় নাই , কাউরে কিছু কইলনা একদিন নিজে নিজে ফাঁশ লইলো “ থালা বাটি নিয়ে চলে গেলো ঝুমা ।
রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ধরমর করে উঠে বসলাম , সারা শরীর ঘেমে গেছে , হাপরের মতো ওঠা নামা করছে বুক । পানির তেষ্টা পেয়েছে খুব , মনে হচ্ছে গলা স্কিয়ে একেবারে কাঠ হয়ে আছে । খাটে পাশেই একটা পানির জগ থাকার কথা । আমি পানি খাওয়ার জন্য সেদিকে হাত বারালাম । ঢক ঢক করে পুরো গ্লাস পানি খেয়ে ফেললাম । গলার শুকনো ভাব চলে গেলেও বুকটা ধক ধক করতে লাগলো । কি আজব স্বপ্ন, লাভ্লুর মেয়ের ঘটনা টা যে আমাকে পেয়ে বসেছে সেটা বুঝতে পারলাম । এই ঘটনা আমাকে অনেক দিন ভোগাবে সেটাও বুঝতে পারলাম।
চুপচাপ কিছুক্ষন শুয়ে রইলাম , ঘুম আসছে না একদম । স্বপ্ন টা নিয়ে ভাবতে লাগলাম , আমি জানি লাভুলুর মেয়ের ঘটনাটা আমার মনে প্রভাব ফেলায় আমি স্বপ্নটা দেখেছি । কিন্তু সপ্নে আমি ঝুমা আর রাবু কেও দেখলাম সেটা বুঝতে পারছি না । আমি আবার স্বপ্নটা মনে করতে লাগলাম । নদির পার ধরে হাঁটছিলাম আমি । হঠাত দেখি দূরে গাছের ডাল থেকে কি যেন একটা ঝুলছে দড়ির সাথে । প্রথমে আমি পাত্তা দিলাম না , কিন্তু আমার মনে হতে লাগলো আমার পাত্তা দেয়া উচিৎ । এক প্রকার নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি সেই ঝুলন্ত বস্তুর দিকে এগিয়ে গেলাম । যতই কাছে জাচ্ছি ততই স্পষ্ট হচ্ছে সেই ঝুলন্ত বস্তুতি । একটু পর আমার মনে হলো ওটা একটা মানুষের দেহ এবং মেয়ে মানুষের । গলায় দড়ি দেয়া তবে এখনো জীবিত বিড়বিড় করে কি যেন বলছে । এতো সময় ধরে কি করে জীবিত রইলো সেটা ভেবে আমি অবাক হলাম । ইচ্ছে হলো ফিরে যাই , কাছে গিয়ে ঝামেলা বাড়িয়ে কি লাভ । কিন্তু ফিরে গেলাম না আমি বরং আরও এগিয়ে গেলাম ঝুলন্ত দেহটির দিকে । একটা লাল ওড়না দিয়ে ফাঁশ নেয়া , পুরো মুখে ছোপ ছোপ নীলচে দাগ ।
আমি আরও একটু কাছে গেলাম মেয়েটি কি বলছে সোনার জন্য । যখন আমি একেবারে কাছে চলে গেলাম তখন শুনলাম মেয়েটি বলছে “আব্বু আমাকে বাঁচাও “। চমকে আমি মেয়েটির মুখের দিকে তাকালাম । আর তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম মেয়েটি আর কেউ নয় আমার মেয়ে অনিলা । প্রান পনে আমি অনিলাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে লাগলাম । কিন্তু কিছুতেই কিছু করতে পারছিলাম না , এমন সময় আরও একটি মেয়ে কণ্ঠ শুনতে পেলাম , বলছে “ আমারে বাচাইবেন না “ । আমি আসে পাশে তাকালাম দেখলাম পাশের ডালে আর একটি ঝুলন্ত দেহ হাঁসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে । ওটা ঝুমার দেহ , আমি অনিলার কথা ভুলে গেলাম দৌরে ঝুমার দিকে জাচ্ছিলাম এমন সময় রাবু এসে দাঁড়ালো আমার সামনে । আমার পথ আটকে দাঁড়ালো সপ্নে রাবুর বয়স অনেক বেশি । চেনাই যায় না প্রায় তবে আমি চিনে ফেললাম। রাবু আমাকে কিছুতেই ঝুমার কাছে যেতে দিতে চাচ্ছে না । বলছে “ ছোট মিয়াঁ খবরদার আমার মাইয়ার কাছে জাইবেন না “ আমি ওকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু রাবু কিছুতেই আমাকে ঝুমার কাছে যেতে দিলো না । আর তখনি আমার ঘম ভেঙ্গে গেলো ।
কি আশ্চর্য স্বপ্ন , আমার মনে হয় জীবনে আমি এমন স্বপ্ন দেখিনি । বৃথা কিছুক্ষন শুয়ে রইলাম , ঘুম আসবেনা বুঝতে পেরে আবার উঠে বসলাম । খেয়াল করলাম ঘরময় জোছনার আলো । খোলা জানালা দিয়ে চাদের আলো এসে ঢুকেছে আমার ঘরে । অসম্ভব সুন্দর লাগছে সেই আলো । পসচিমা বৈদ্যুতিক আলোর ঝলসানিতে এই অপার্থিব আলো কোনদিন আমার চোখে পরেনি । এই দৃশ্য আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন । কারন এরকম দৃশ্য সুধু গ্রাম বাংলায় ই দেখা পাওয়া যায় । আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো উঠে জানালার কাছে গেলাম । চোখ রাখলাম বাইরে ।
যা দেখলাম তাতে আমার মনে হচ্ছে আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে । সত্যি দম বন্ধ করা সৌন্দর্য , এমন সৌন্দর্য দেখলে ইচ্ছে হয় দম বন্ধ করে রাখি , যদি নিঃশ্বাস ফেলার সাথে সাথে গায়েব হয়েযায় । তারচেয়ে ভালো নিঃশ্বাস বন্ধ রেখে চোখের সামনে এমন সৌন্দর্য নিয়ে নিজের জিবনের ইতি টানি ।
ধুর কি যাতা ভাবছি , মাথা ঝাকিয়ে মনে মনে একবার হেঁসে নিলাম । গ্রাম্য পরিবেশে জোছনা রাত কে আসলেই বাহবা দিতে হবে । আমার মতো মানুষের মন কেও ভাবুক বানিয়ে দিয়েছে । তবে সত্যি দারুন লাগছে সব কিছু দেখতে । আমি বাইরের দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। স্বপ্নের আছর একটু একটু করে কমতে লাগলো আমার উপর থেকে । ঠিক তখনি আমার দৃষ্টি গেলো আমার আর রাবুর গোপন অভিসারের সাক্ষি সেই ভাঙ্গা ঘরতির কঙ্কালের দিকে । আর এবার সত্যি সত্যি আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো । কেউ একজন হাঁটা চলা করছে ওখানে। পরনে সাড়ি , আপন মনে হাঁটছে । এই জংলা যায়গায় এতো রাতে কে হাঁটে , ভুত প্রেতে আমার বিশ্বাস নেই , কিন্তু চোখের সামনে যা দেখছি তাকে কি বলবো সেটা ভেবে পেলাম না ।
চট করে জানালার কাছ থেকে চলে এলাম , এক রাতে এতো চাপ আমার মস্তিষ্ক নিতে পারবে না । সুইচ টিপলাম কিন্তু আলো জ্বলল না , বুঝলাম গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে কিন্তু এক অনন্ত লোড সেডিং কে সঙ্গি করে । একটা হেরিকেন অবশ্য আছে কিন্তু আমি আর সেদিকে গেলাম না । চাদের আলই চলবে আমার জন্য । নিজের সুটকেস এর কাছে গিয়ে সেটা খুলে জায়গা মতো হাত দিতেই বোতল টা পেলাম । এমনিতে আমি তেমন খাই না তবে মাঝে মাঝে খাই তাই সব সময় সাথেই একটা থাকে । আজ খুব কাজে দেবে জিসিন টা । বতলে মুখ লাগিয়েই কয়েক ঢোঁক গিলে ফেললাম । সাথে সিগারেট হলে ভালো হতো কিন্তু নেই ।
কয়েক পেগ পেটে যেতেই আমি একটু স্থির হলাম , স্বপ্নটার চেয়ে বাইরে দেখা জিনিসটাই আমাকে বেশি অস্থির করে তুলেছিলো । টপাটপ আরও দু পেগ চালান করে দিলাম । একটু সাহস এলো মনে আবার জানালার কাছে গেলাম । এখনো আছে কিনা দেখতে , অবাক করা বিষয় হলো এখনো আছে । এখন বসে আছে , এবং আমি তাকে এবার চিনতে পারলাম । না চেনার কারন নেই এ হচ্ছে ঝুমা । খুব অবাক হলাম সারাদিন এতো খাটনি খেঁটে মেয়েটা এতো রাতে জেগে আছে কিভাবে ।
আরও এক পেগ খেয়ে আমি ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলাম , ঝুমাকে দেখে আমারও খুব ইচ্ছে হচ্ছে বাইরে ঘুরে বেরাতে ।
“ ডরাইসিলেন ছোট মিয়াঁ ?“ এই বলে খিল খিল করে হেঁসে উঠলো ঝুমা । অদ্ভুত সেই হাঁসি , এক ধরনের পাগলামি মেশানো আছে সেই হাসিতে ।
“ না ভয় নয় চমকে গিয়েছিলাম , তুমি কি এমন করে প্রায় রাতেই হাঁটো ?” আমি জিজ্ঞাস করলাম । উত্তরে ঝুমা আবারো হাসল , জোছনা রাতের সুনসান পরিবেশে এমন খিলখিলে হাঁসিতে আমার শরীরে এক ধরনের শিরশিরে অনুভুতি টের পেলাম । ভালো করে তাকালাম ঝুমার দিকে । অন্য রকম লাগছে মেয়েটাকে , আরও একটু ভালো করে তাকালাম , চাদের আলোয় দেখলাম মেয়েটা সাঁজ সজ্জা করেছে হালকা ।
“ তুমি কি সেজেছো ঝুমা “ প্রশ্নটা করেই একটু বিব্রত বোধ করমাল । এ কেমন প্রস্ন , বুঝলাম মদের প্রভাব পড়েছে আমার উপর ।
“ হো সাজছি , রাইতের অন্ধকারে আমি সাজি , দিনের বেলা সাজলে গুনা হইব , বিধবার সাজগোজ করতে নাই আপনে জানেন না “ এই বলে আবার খিল খিল করে হাসতে লাগলো ঝুমা । আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো ঝুমার দিকে এগিয়ে গেলাম । চাদের আলোতে তাকালাম ঝুমার গাড়ো করে কাজল টানা চোখ দুটোর দিকে ।
“ চাইয়া রইলেন যে ?” ফিস্ফিসিয়ে জিজ্ঞাস করলো ঝুমা ,
“ তোমারে দেহি চাইয়া চাইয়া “ আমিও ফিস্ফিসিয়ে উত্তর দিলাম , নিজের অজান্তেই আমি গ্রাম্য ভাষায় কথা বলে ফেলেছি ঝুমার সাথে । কেন এমন বললাম সেটা আমি নিজেও বুঝতে পারলাম না , মনে হয় নিজেকে ঝুমার সমপর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য আমার ভেতরের আমি এটা করেছে । দু হাতে আমি ঝুমার দু বাহু ধরে ঝুমাকে আমার কাছে টেনে আনলাম । এতো কাছে যে ঝুমার উচু বুক দুটো আমার বুকের সাথে ঘষা খাচ্ছে ।
“ আমারও কিন্তু জানাজা হইবো না “ কাজল টানা ডাগর চোখ দুটো দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ঝুমা ।
“ তুমি আমারে কি ভাবো ঝুমা , আমি কোনদিন তোমার লগে খারাপ কিছু হইতে দিমু না “ এই বলে আমি ঝুমাকে চুমু খেলাম । গভির চুমু ঝুমার নরম নধর ঠোট মুখের ভেতর নিয়ে চুষতে লাগলাম । যদিও আমার মস্তিস্কের একটা অংশ আমার এই কাজের তিব্র বিরধিতা করছিলো , বার বার আমাকে শাসিয়ে যাচ্ছিলো । বলছিলো এই কি করছিস তুই , নিজের অবস্থানের কথা ভাব কোথায় তুই আর কোথায় এই গ্রাম্য মেয়ে । মাথায় সস্তা নারকেল তেলের গন্ধ, গা থেকে এখনো মশলার ঘন্ধ আসছে । কিন্তু আমার শরীর আর মন কেউ সেই নিরীহ মস্তিস্কের বারণ শুনতে রাজি নয় এই মুহূর্তে । হ্যাঁ সুধু শরীর নয় মন ও , মেয়েটির প্রতি আমি সুধু সারিরক টান অনুভব করছি না সাথে সাথে এক ধরনের প্রচণ্ড মমতা আমার মনের অন্তস্থল থেকে উগ্রে আসছে । নিবির ভাবে ওষ্ঠ চোষণের সময় বার বার মনে হচ্ছে এই মেয়ে আমার অনেক আপন , এর কোন ক্ষতি আমি হতে দেবো না ।
চোখে রোদ পরতেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো , মাথায় তিব্র জন্ত্রনা । ভোতা যন্ত্রণা নিয়ে কিছুক্ষন শুয়ে রইলাম । হঠাত খেয়াল হলো আমি উলঙ্গ সম্পূর্ণ উলঙ্গ , একটা পাতলা কাঁথা আমার শরীরের উপর দেয়া । চট করে উঠে বসলাম আমি । হ্যাঁ গত রাতে ঝুমাকে আমি এই রুমে নিয়ে এসেছিলাম । এই বিছানায় একে একে ঝুমার শরীরের সব আবরন নিজের হাতে সরিয়েছি আমি । তারপরের দৃশ্য গুলিও আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো । চাদেয় আলোয় আলোকিত থাকায় ঝুমার নগ্ন দেহের প্রতিটি বাঁক আমার চোখের সামনে স্পষ্ট ছিলো।
রাগে নিজের মাথা দেয়ালে ঠুকতে ইচ্ছে হচ্ছে , এ কি করলাম আমি । কি ভাববে এখন মেয়েটা , যদি মেয়েটা এখন আমাকে নিয়ে কনকিছু ভেবে বসে তখন কি হবে । রাতে দেখা স্বপ্নের কথা আমার মনে পরে গেলো , রাবু কিভাবে আমাকে নিষেধ করছিলো ঝুমার কাছে যাওয়ার জন্য । উফ কি করবো আমি এখন । সবচেয়ে বড় কথা ঝুমা রাবুর মেয়ে “রাবু” যার সাথে আমার এক সময় শারীরিক সম্পর্ক ছিলো । না সুধু শারীরিক সম্পর্ক নয় , সুধু সারিরিরক সম্পর্ক বললে ঐ সম্পর্ককে অসম্মান করা হবে । তার চেয়ে বেশি কিছু ছিলো আমাদের মাঝে । হ্যাঁ ওটাকে ভালবাসা ঠিক বলা যাবে না । তবে সুধু সারিরের মোহে আমি রাবু কে ব্যাবহার করিনি ।
কিন্তু আজ আমি সেই সম্পর্ককে চরম অপমান করলাম । এম্নিতেই মেয়েটা দুঃখী তার উপর যদি আমাকে নিয়ে কোন আশা করে ফেলে তখন আরও বড় দুঃখ পাবে । যতটুকু আমি ওকে জেনেছি , কাউকে এম্নিতেই নিজের শরীর বিলিয়ে দেয়ার মতো মেয়ে ঝুমা না । উফ এর পর ভাবতেও আমার কষ্ট হচ্ছে ।
কোমরে কাঁথা পেচিয়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম , মেঝেতে পরে থাকা প্রায় খালি বোতল এর দিকে দৃষ্টি পরতেই মনটা আরও বিষিয়ে উঠলো। মনে হচ্ছে এই বোতলটাই সব নষ্টের মুল । তারপর আমি একটা ছেলেমানুষি কাজ করে ফেললাম একটা লাথি বসিয়ে দিলাম বোতলের উপর। এতে লাভের লাভ হলো ডান পায়ের বৃদ্ধা আঙ্গুলে প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়ে চেচিয়ে উঠলাম আর আমার কোমরে জড়িয়ে থাকা কাঁথা পরে গিয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে গেলাম ।
অনেক দেরি হয়ে গেলো আপডেট দিতে । এর জন্য আর ক্ষমা চাইব না কত আর ক্ষমা করবেন আপ্নারা । একটা কথা বলার আছে , সেটি হচ্ছে আমি এই গল্পে কোন ট্যাগ ব্যাবহার করছি না , কারন এটা সুধুই একটি গল্প এতে যে ধরণেরই যৌনতা থাকুক না কেন সেটা সুধু গল্পের প্র্যজনেই আসবে । গল্পের জন্য যৌনতা , যৌনতার জন্য গল্প নয় অনেকটা এই ধরনের ব্যাপার সেপার আরকি । আর যৌন দৃশের তেমন বর্ণনা ও থাকবে না ।