09-02-2021, 04:11 PM
বিঃ দ্রঃ - এই পরিচ্ছদ থেকে গল্পটি কিছু বিদেশি/বিদেশিনী চরিত্র সম্বলিত হবে... তাই তাদের ভাষা যেমনই হোক না কেন, তাদের ভাষ্যে বাংলাই ব্যবহৃত হবে... গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে সেখানে হয়তো কখন সখন ইংরাজি ব্যবহার করা হবে, কিন্তু আদতে বাংলা ভাষ্যেই তাদের বক্তব্যগুলি রাখার সচেষ্ট প্রয়াশ করা হয়ে থাকবে...
ধন্যবাদান্তে
‘এই তিতাস... যাস না... ওয়েট... ইয়ু ডোন্ট... লিসিন্ টু মী ডিয়ার... ওদিকের জঙ্গলের মধ্যে কত কি সাপখোপ আছে ঠিক নেই... দাঁড়া... কথা শোন... ওই ভাবে দৌড়স না... এই তিতাস...’ দষ্যি মেয়ের পেছনে ডাক দিয়ে তাকে থামাবার চেষ্টা করে অলিভীয়া ওরফে অনিন্দীতা...
ছোট্ট চন্দ্রকান্তার কানে মায়ের বারণ পৌছয় না... দূরন্ত পায়ে ততক্ষনে সে খিরকী দুয়ার পেরিয়ে পৌছিয়ে গিয়েছে তার অভিষ্ট জায়গায়... তার প্রিয় খেলার সাথীদের কাছে... গড়জঙ্গলের ঠিক মাঝে একটা ফাঁকা জায়গায়, যেখানে সচরাচর জনমানুষ আসতে সাহস করে না, সেখানে...
.
.
.
অনিন্দীতা... জমিদার রুদ্রনারায়ণের পূত্রবধু, সূর্যনারায়ণের সহধর্মী... অনিন্দীতা নামটা তার আসল নাম নয়, অলিভীয়া থেকে অনিন্দীতায় রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল, তাই আজ সে অনিন্দীতা, অনিন্দীতা চৌধুরী... এই ক্ষয়িষ্ণু রাজবংশের পূত্রবধূ... আজ এই রাজবংশেরই সদস্যে রূপান্তরীত হয়ে গিয়েছে...
.
.
.
‘হ্যাভ ইয়ু ড্রন দিস ওয়ান?’ চোস্ত ইংরাজী উচ্চারণে প্রশ্ন করে যুবক... সামনে দাঁড়ানো এক অপরূপ তম্বী সুন্দরীকে... দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখা ছবিটির পানে আঙুল তুলে দেখিয়ে...
লন্ডনের হাইড পার্কে অবস্থিত সার্পেন্টাইন আর্ট গ্যালারি... যেখানে অ্যান্ডি ওয়ারহোল বা ক্রিস ওফিলির মত জগৎ বিখ্যাত শিল্পীদের অমূল্য শিল্পকলা আর ছবির প্রদর্শনীর জন্য বিখ্যাত... এক সুন্দর সকালে সেখানেই বেশ কিছু সম্ভাবনাময় শিল্পীর চিত্রপ্রদর্শনীর আয়েজন করা হয়েছে... তারা তাদের সব থেকে সুচারূ শিল্পকর্ম নিয়ে সাজিয়ে তুলেছে আর্ট গ্যালারীর একটা পুরো ফ্লোর...
যুবকের প্রশ্নে ভ্রূযুগল কিঞ্চিত কুঞ্চিত হয়ে ওঠে সুন্দরীর... ধোপদূরস্ত পোষাক পরিহিত যুবকটি যে ভারতীয়, সেটা বুঝতে ভুল হয়না মুখের দিকে তাকিয়ে... তাই চোখ তুলে পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় সুন্দরী... ‘ইয়ু? ইন্ডিয়ান?’
স্মিত হাসে যুবকটি... সসম্ভ্রমে সামান্য ঘাড় হেলিয়ে সমর্থন করে সে সুন্দরীর প্রশ্নে... তারপর ফের প্রশ্ন করে ফিরিয়ে... ‘কোই? বললেন না তো? এই ছবিটা আপনি এঁকেছেন কি না?’
যুবকের ইঙ্গিত করা ছবিটার পানে এক ঝলকে ফিরে তাকিয়ে ফের মুখ তুলে তাকায় সুন্দরী... ‘হুম্? আমিই এঁকেছি বটে... কেন? হটাৎ এ প্রশ্ন কেন? কিনতে চান?’
যুবকের ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসিটা তখনও লেগে থাকে... মুগ্ধ দৃষ্টিতে আরো খানিক ছবিটাকে দেখে নিয়ে ভরাট গলায় উত্তর দেয় সে, ‘না না... তবে খুব সুন্দর... কিন্তু আমার মনে হয় ছবির প্রেক্ষাপটে যে রঙটার ব্যবহার হয়েছে, সেখানে আর একটু সাদার মিশেল থাকলে সামনের অবজেক্টা আরো বেশি করে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠত!’
যুবকের কথায় সুন্দরীর ভ্রূযুগল যেন আরো বক্র হয়ে ওঠে... দৃঢ় ঠোটদুটি চেপে ধরে একে অপরের সাথে... নিজের সৃষ্টির এ হেন সমালোচনা ঠিক ভালো চোখে নিতে পারে না সে... তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে যুবককে একবার আপদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে কাটা কাটা অক্ষরে বলে ওঠে, ‘আপনিও কি শিল্পী?’
যুবকের বুঝতে অসুবিধা হয় না তার কথায় ক্ষুব্ধ হয়েছে সুন্দরী... সুদর্শণ যুবকের পাতলা ঠোঁটের হাসি আরো যেন একটু বেশি করে ছড়ায় মুখের ওপরে... ‘কেন? শিল্পীরাই কি শুধু শিল্পের কদর বোঝে? শিল্পী না হলে কি সৃষ্টির সমালোচনা করা যায় না?’
বিরক্তির মেঘ ঘনায় সুন্দরীর মুখের ওপরে... একটা ইন্ডিয়ান... হতে পারে তাদের মত করেই একেবারে ধোপধরস্ত পরিচ্ছদে সুসজ্জিত, কিন্তু আদতে তো সেই ইন্ডিয়ানই বটে, আর সে কিনা তার মত অকৃত্রিম একজন ইংরেজ রমনীর সৃষ্টি, তার শিল্পের সমালোচনা করার ধৃষ্টতা দেখায়! হ্যা... তাদের এখন আর সেই একচ্ছত্র অধিকার নেই ইন্ডিয়ার ওপরে, তারা আর ইন্ডিয়ানদের ওপরে প্রভূত্বও করে না সেই আগের মত... কিন্তু তবুও... শিল্পকলা নিয়ে তাদের সমগোত্রীয়... এটা ভাবারও তো কোন অবকাশ নেই... ভাবতে ভাবতেই মুখ ঘুরিয়ে নেয় ত্বম্বী সুন্দরী... যুবকের কথার কোন উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করে না সে...
যুবকও আর সময় নষ্ট করে না... ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে যায় পরবর্তি শিল্পীর আঁকা ছবির দিকে... অপস্মৃত যুবকের শরীরটার দিকে তির্যক একবার দৃষ্টি হেনে মুখ ঘুরিয়ে নেয় সুন্দরী... আজ যেন ওই যুবকের একটা কথাতেই এই বিখ্যাত আর্ট গ্যালারীর প্রদর্শনীতে তার ছবিটা কেমন ম্লান হয়ে গেলো... ভাবতে ভাবতে ফের পেছন ফিরে নিজের ছবিটার দিকে তাকায় সে... অনেক পরিশ্রমের ফল স্বরূপ এই ছবি... সেই ছবিটা একটা উটকো লোক, তাও কিনা একজন ইন্ডিয়ান... সমালোচনা করার ধৃষ্টতা দেখায়... হাঃ...
এক মনে তাকিয়েই থাকে নিজের সৃষ্ট কর্মের দিকে... তারপর কি ভেবে যন্ত্রচালিতের মত তার হাতটা চলে যায় ছবিটার নীচে রাখা রঙের ইজেলের দিকে... তুলি আর ইজেলটা হাতে তুলে নিয়ে রঙের শিশি থেকে খানিকটা সাদা রঙ বের করে ইজেলে গুলে ফেলে... তারপর আলতো হাতে তুলির টান দেয় ছবির ওপরে... একটু একটু করে ছবির পটভূমির গভীরতা হ্রাস হতে থাকে... আর সেই সাথে কোন এক যাদু স্পর্শে ছবির সুক্ষ্ম বিশয় বস্তুগুলো আরো জীবন্ত রূপ ধারণ করতে থাকে... তুলির টান শেষ হলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুন্দরী নিজের সৃষ্টির পানে... বুকের মধ্যেটা কেমন ভারী হয়ে ওঠে তার... নাহ! ভূল হয়ে গিয়েছে... এই ভাবে ভদ্রলোককে হ্যালাছেদ্দা করা উচিত হয় নি... সত্যিই তো... এই ভাবে যদি না তার দৃষ্টি আকর্শন করত ওই যুবক, তাহলে তার ছবিটার এই রূপের প্রকাশই ঘটত না...
ভাবতে ভাবতেই পাশ থেকে এক ইংরেজ দম্পতি এগিয়ে আসে... মুগ্ধ দৃষ্টিতে খানিক ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে বিনম্র ভঙ্গিতে সুন্দরীকে ছবিটা বিক্রি করবে কিনা প্রশ্ন করে তারা... তাদের বক্তব্য, এই ভাবে এত সুন্দর রঙের ব্যবহারে নাকি ছবিটা এই রকম জীবন্ত হয়ে উঠেছে... সুন্দরী মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানায় অচেনা যুবকের প্রতি... ব্যাকুল নয়ন প্রদর্শনীর ভীড়ের মধ্যে খুজে বেড়ায় তার চোখ সেই অচেনা যুবকের জন্য... একটু কৃতজ্ঞতা জানাবার অভিপ্রায়...
.
.
.
‘হাই!’ পেছন থেকে ভরাট গলার সম্বোধনে চমকে উঠে তাকায় সুন্দরী যুবতী... তারপরই তার মুখটা এক নির্মল হাসিতে উজ্জল হয়ে ওঠে... তাড়াতাড়ি হাতে ধরা ব্যাগটা অন্য হাতে সরিয়ে নিয়ে বাড়িয়ে দেয় তার ডান হাতটাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের উদ্দেশ্যে... ‘ওহ! অসংখ্য ধন্যবাদ... সরি... আপনার কথায় প্রথমে বিরক্ত হয়েছিলাম ঠিকই... কিন্তু পরে আপনারই পরামর্শ মত তুলির আঁচড় দিয়ে বুঝলাম আপনি ঠিকই বলেছিলেন...’
নরম হাতটাকে নিজের মুঠোর মধ্যে তুলে নিয়ে অল্প চাপ দেয় যুবক... স্মিত হেসে বলে, ‘না না... এ আর এমন কি? আমার আপনার ছবিটা দেখে মনে হয়েছিল ওইটুকু খামতি রয়েছে, তাই বলে ফেলেছিলাম... আপনাকে আঘাত দিতে চাই নি...’
‘সে বুঝেছি আমিও... তাই তো ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছি আমার ব্যবহারের...’ মাথা নীচু করে উত্তর দেয় সুন্দরী... মুখের উজ্জল গোলাপী ত্বকে লালীমার আভা লাগে... তারপরেই মুখ তুলে বলে ওঠে সে, ‘আর জানেন... ওই ভূলটা শুধরে নেবার পরই আমার ছবিটা বিক্রি হয়ে গিয়েছে... এক দম্পতি এসে কিনে নিয়েছে আমার থেকে...’
শুনে খুশি হয় যুবক... ‘বাহ! এতো খুব ভালো খবর... আমার আন্তরিক অভিনন্দন...’
‘অভিনন্দন আমায় নয়... আপনাকে দেওয়া উচিত... আপনি না বলে দিলে কি আমি পারতাম ছবিটাকে এতটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে?’ লজ্জা মেশানো গলায় বলে সুন্দরী।
‘উহু... কৃতিত্বটা আপনারই... আমি তো শুধু দেখিয়ে দিয়েছিলাম খামতিটুকু... বাকিটা তো আপনারই সৃষ্টি...’ বলতে বলতে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সামনে দাঁড়ানো ত্বম্বীর পানে... সুন্দরীর রক্ত ইংরাজদের হলেও পুরোপুরি সেই তথাকথিত ফ্যাটফ্যাটে ইংরেজদের মত দেখতে নয়... বরঞ্চ অদ্ভুত একটা ভারতীয় কোমল মাধূর্য যেন মিশে রয়েছে অপরূপতার সাথে... আর যেটা সব থেকে বেশি আকর্ষণীয়... সেটা হল সুন্দরীর চোখদুটি... ওই চোখজোড়ার দিকে তাকালে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া মুস্কিল হয়ে পড়ে যেন... স্বপ্নীল মায়াবী গাঢ় নীল সে দৃষ্টি চোখের মণিতে...
হটাৎ করে যুবকের সম্বিত ফেরে সুন্দরীর কথায়... ‘হ্যালো! কি হলো? বললেন না তো?’
অপ্রস্তুত হাসি হাসে যুবক... বুঝতে অসুবিধা হয় না তার যে সুন্দরী তাকে কোন প্রশ্ন করে থাকবে, কিন্তু ক্ষণিকের জন্য সে যে হারিয়ে গিয়েছিল তার নয়ন সৌন্দর্যের মধ্যে... ‘সরি... আমি একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম...’
এবার সুন্দরীর রক্তিম পাতলা ঠোঁটের কোণে হাসি খেলে যায় চকিতে... গভীর চোখে যুবকের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে সে... ‘কি দেখে?’
‘অ্যাঁ?’ এবার সত্যিই অপ্রস্তুত হবার পালা যেন যুবকের... এই ভাবে সরাসরি প্রশ্ন আসবে ঠিক আন্দাজ করতে পারেনি যুবক... ঢোক গিলে বলে, ‘ওহ! মানে...’
খিলখিল করে হেসে ওঠে সুন্দরী... হাসির দমকে উথলে ওঠে সারা শরীরটা তার... পোষাকের আড়ালে থাকা কোমল নারীত্বের সম্ভারের উচ্ছলতা নজর এড়ায় না যুবকের... ‘বুঝেছি... থাক আর এই ভাবে অপ্রস্তুত হতে হবে না...’ বলে ফের রঙ তুলি আর ক্যানভাসের বোঝাটাকে দুই হাতে ভাগ করে নিতে নিতে বলে ওঠে, ‘আপনি কি লন্ডনেই থাকেন?’
‘হ্যা... বলতে পারেন এখন থাকি... অ্যানার্লেতে...’ সতঃস্ফুর্ত উত্তর দেয় যুবক...
শুনেই সুন্দরীর মুখ আরো উজ্জল হয়ে ওঠে... ‘আরে বাহ! আমিও তো ওই দিকটাতেই থাকি, অবস্য অ্যানার্লেতে নয়, ক্যাটফোর্ডএ... কিন্তু তবুও, দুটোই সাউথ ইস্ট লন্ডনেই পড়ছে কিন্তু...’
‘বাহ! তাহলে যদি আপনার আপত্তি না থাকে আমরা কি একসাথেই ফিরতে পারি?’ যুবক প্রশ্ন করে...
কেন জানে না সুন্দরী... বুকের মধ্যেটায় একটা খুশির রেশ মিশে যায়... সপ্রতিভাত হয়ে উত্তর দেয় সে... ‘হ্যা... যদি অবস্য আপনার আপত্তি না থাকে...’
‘আরে... এই ভাবে বলছেন কেন... এতো আমার পরম সৌভাগ্য আপনার মত একজন সুন্দরীর সাথে যাওয়া...’ বলতে বলতেই পাশ দিয়ে যাওয়া ট্যাক্সির উদ্দেশ্যে হাত তোলে যুবক... তারপর এগিয়ে গিয়ে ট্যাক্সির দরজা খুলে সরে দাঁড়ায় সুন্দরীর গাড়িতে ওঠার সুবিদার্থে...
.
.
.
ক্যাট ফোর্ডএ আগে সুন্দরীকে নামিয়ে দেয় যুবক... দরজা খুলে তাড়াতাড়ি সুন্দরীর হাতের সরঞ্জাম নিয়ে এগিয়ে দেয় বাড়ির দরজা অবধি... তারপর একটু ইতঃস্থত করে প্রশ্ন করে সে, ‘যদি কিছু মনে না করেন...’ বলতে বলতে থমকায় সে... ভাবে প্রশ্ন করাটা সমীচিন হবে কি না...
যুবকের এহেন ইতঃস্থত ভাব লক্ষ্য করে যুবতী সহাস্যে বলে ওঠে... ‘হ্যালো মিস্টার... এটা বিংশ শতক... একটা মেয়ের নাম জিজ্ঞাসা করতে এত ইতঃস্থত করার কোনো মানে হয় না... আমি অলিভীয়া... অলিভীয়া ব্রাডফিল্ড...’
হেসে ফেলে যুবক... সলজ্জ মুখে বলে, ‘না, আসলে এই ভাবে একজন যুবতীর নাম জিজ্ঞাসা করাটা অসন্মানের হবে কি না বুঝতে পারছিলাম না, তাই...’
‘সে তো আপনার মুখের ভাব দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম... তাই তো নিজেই উপযাযক হয়ে বলে দিলাম আমার নাম...’ বলে থামে সুন্দরী... তারপর স্মিত হাসি হেসে বলে, ‘আমি আমার নাম বলেছি, কিন্তু এখনও কিন্তু আপনার পরিচয়টা পাওয়া হয় নি আমার...’
‘ওহ! সরি... আমার আগেই নিজের পরিচয় দেওয়া উচিত ছিল... আসলে এই ভাবে মেয়েদের কাছে আমি ঠিক সাবলীল নই...’
‘সে আপনার এই কয়েক মুহুর্তের ব্যবহারেই সেটা বুঝে নিয়েছি মিস্টার... নতুন করে মুখ ফুটে বলার প্রয়োজন দেখি না... আপনি বড়ই লাজুক প্রকৃতির...’ হাসতে হাসতে বলে ওঠে অলিভীয়া...
‘হ্যা... সেটাই আর কি... আসলে আমাদের দেশে মেয়েদের সাথে ছেলেরা চট করে তো এই ভাবে খোলাখুলি মেশে না... যদিও আমি বেশ কিছুদিন হল এখানে এসেছি... কিন্তু বুঝতেই পারছেন... ছোট থেকে যে শিক্ষায় বড় হয়ে ওঠা হয়েছে, সেটা কাটিয়ে ওঠা একটু দুষ্করই বটে...’ লাজুক হেসে উত্তর দেয় যুবক...
পেছন থেকে ট্যাক্সির হর্ন বাজায় গাড়ির ড্রাইভার... তাতে সচকিত হয়ে ওঠে দুজনেই...
‘ড্রাইভারের বোধহয় ইচ্ছা নেই আরো বেশিক্ষণ আপনার সাথে আমি কাটাই... তাই বেরসিকের মত তাড়া দিচ্ছে...’ হাসতে হাসতে বলে যুবক... পেছন ফিরে ড্রাইভারের দিকে ইশারায় অনুনয় করে আর কয়এক মুহুর্ত অপেক্ষা করতে...
অলিভীয়া তার বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে যুবকের থেকে কিছু শোনার অপেক্ষায়...
‘আমি... সূর্য... সূর্যনারায়ণ চৌধুরী... এখানে এসেছি আমার পোস্ট গ্রাজুয়েশনটা শেষ করতে...’ বিনিত কণ্ঠে নিজের পরিচয় দেয় যুবক... কিন্তু কিছুতেই তার অবাধ্য চোখ সরাতে পারে না আঁটো পোশাকের আড়ালে থাকা তম্বীর দূরন্ত যৌবন ভরা শরীর থেকে... বার বার নজর চলে যায় পোষাকের গলার কাছ থেকে উছলে ওথলানো বুকের বিভাজিকার দিকে...
অলিভীয়ার চোখ এড়ায় না সূর্যনারায়নের দৃষ্টির... যুবকের এহেন আচরনে ক্ষুব্দ হওয়ার বদলে বেশ ভালো লাগে তার... দৃষ্টির পরশ লাগে নিজের কোমল নারী দেহে... ইচ্ছা করেই নিজের শরীরটাকে একটু টান টান করে ধরে যুবকের সামনে... যার ফল স্বরূপ পরণের পোশাক আরো যেন শরীরের সাথে লেপ্টে গিয়ে প্রস্ফুটিত করে তোলে নারী সৌন্দর্যকে...
সূর্যর মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যাবে... অতি কষ্টে সংযত করে নিজেকে... মনে মনে নিজের এই ধৃষ্টতার জন্য ধীক্কার দেয় নিজেকেই... জোর করে চোখ নামিয়ে নেয় তরুনীর বুকের ওপর থেকে...
সূর্যর এ হেন অস্বস্থিতে আর যেন মজা পায় যুবতী... হেসে কয়এক কদম এগিয়ে আসে সামনের পানে... এতটাই... যাতে প্রায় তার শরীরটা ঠেকে যাবার যোগাড় হয় সূর্যের শরীরের সাথে...
গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে ওঠে সূর্যর... কানের লতী গরম হয়ে যায় তার... সেই মুহুর্তে ট্যাক্সি ড্রাইভারের হর্ণএর আওয়াজ না পেলে কি করে বসতো, হয়তো সেও জানে না... চকিতে দু কদম পিছিয়ে যায় সে... তারপর অপ্রস্তুত হাসি হেসে বলে, ‘নাহঃ ড্রাইভার চায় না আর বেশিক্ষন এখানে থাকি... ওকে... বাই...’ বলে দ্রুত গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় সে...
চোখের তারায় এক রাশ কৌতুক নিয়ে তাকিয়ে থাকে সূর্যর এ হেন পলায়নের দিকে... গাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেলে অলিভীয়াও দ্রুত এগিয়ে যায় গাড়ির পানে... দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়... তারপর গাড়ির জানলাটা ধরে সামান্য ঝুঁকে পড়ে সামনের পানে... যার ফল স্বরূপ সূর্যের চোখের সামনে উন্মোচিত হয়ে পড়ে এক জোড়া নিটোল স্তনের আরো বেশ খানিকটা লোভনীয় বিভাজিকা...
ওই বিভাজিকার দিকে বারেক তাকিয়ে শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁটের ওপরে জিভ বোলায় সূর্য...
‘আইল বী ওয়েটং... ফর ইয়ু... টুমরো’ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে অলিভীয়া... আর পরক্ষনেই দরজার ছেড়ে পেছন ফিরে হাঁটা লাগায় বাড়ির দিকে... বুঝতে অসুবিধা হয়না তার, সেই মুহুর্তে সূর্যের চোখ দুটো আটকে রয়েছে তার দোলদুলিয়মান তলতলে নিতম্বের দোলূনির ওপরেই...
সূর্যকে আর বেশি দেখার সুযোগ না দিয়ে হুস করে গাড়ি ছেড়ে দেয় ড্রাইভার... একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে সূর্য অলিভীয়ার শরীরটা দৃষ্টির আড়ালে সরে যাওয়াতে...
ক্রমশ...
ধন্যবাদান্তে
– ৪ –
আর্ট গ্যালারি
‘এই তিতাস... যাস না... ওয়েট... ইয়ু ডোন্ট... লিসিন্ টু মী ডিয়ার... ওদিকের জঙ্গলের মধ্যে কত কি সাপখোপ আছে ঠিক নেই... দাঁড়া... কথা শোন... ওই ভাবে দৌড়স না... এই তিতাস...’ দষ্যি মেয়ের পেছনে ডাক দিয়ে তাকে থামাবার চেষ্টা করে অলিভীয়া ওরফে অনিন্দীতা...
ছোট্ট চন্দ্রকান্তার কানে মায়ের বারণ পৌছয় না... দূরন্ত পায়ে ততক্ষনে সে খিরকী দুয়ার পেরিয়ে পৌছিয়ে গিয়েছে তার অভিষ্ট জায়গায়... তার প্রিয় খেলার সাথীদের কাছে... গড়জঙ্গলের ঠিক মাঝে একটা ফাঁকা জায়গায়, যেখানে সচরাচর জনমানুষ আসতে সাহস করে না, সেখানে...
.
.
.
অনিন্দীতা... জমিদার রুদ্রনারায়ণের পূত্রবধু, সূর্যনারায়ণের সহধর্মী... অনিন্দীতা নামটা তার আসল নাম নয়, অলিভীয়া থেকে অনিন্দীতায় রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল, তাই আজ সে অনিন্দীতা, অনিন্দীতা চৌধুরী... এই ক্ষয়িষ্ণু রাজবংশের পূত্রবধূ... আজ এই রাজবংশেরই সদস্যে রূপান্তরীত হয়ে গিয়েছে...
.
.
.
‘হ্যাভ ইয়ু ড্রন দিস ওয়ান?’ চোস্ত ইংরাজী উচ্চারণে প্রশ্ন করে যুবক... সামনে দাঁড়ানো এক অপরূপ তম্বী সুন্দরীকে... দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখা ছবিটির পানে আঙুল তুলে দেখিয়ে...
লন্ডনের হাইড পার্কে অবস্থিত সার্পেন্টাইন আর্ট গ্যালারি... যেখানে অ্যান্ডি ওয়ারহোল বা ক্রিস ওফিলির মত জগৎ বিখ্যাত শিল্পীদের অমূল্য শিল্পকলা আর ছবির প্রদর্শনীর জন্য বিখ্যাত... এক সুন্দর সকালে সেখানেই বেশ কিছু সম্ভাবনাময় শিল্পীর চিত্রপ্রদর্শনীর আয়েজন করা হয়েছে... তারা তাদের সব থেকে সুচারূ শিল্পকর্ম নিয়ে সাজিয়ে তুলেছে আর্ট গ্যালারীর একটা পুরো ফ্লোর...
যুবকের প্রশ্নে ভ্রূযুগল কিঞ্চিত কুঞ্চিত হয়ে ওঠে সুন্দরীর... ধোপদূরস্ত পোষাক পরিহিত যুবকটি যে ভারতীয়, সেটা বুঝতে ভুল হয়না মুখের দিকে তাকিয়ে... তাই চোখ তুলে পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় সুন্দরী... ‘ইয়ু? ইন্ডিয়ান?’
স্মিত হাসে যুবকটি... সসম্ভ্রমে সামান্য ঘাড় হেলিয়ে সমর্থন করে সে সুন্দরীর প্রশ্নে... তারপর ফের প্রশ্ন করে ফিরিয়ে... ‘কোই? বললেন না তো? এই ছবিটা আপনি এঁকেছেন কি না?’
যুবকের ইঙ্গিত করা ছবিটার পানে এক ঝলকে ফিরে তাকিয়ে ফের মুখ তুলে তাকায় সুন্দরী... ‘হুম্? আমিই এঁকেছি বটে... কেন? হটাৎ এ প্রশ্ন কেন? কিনতে চান?’
যুবকের ঠোঁটের কোনে স্মিত হাসিটা তখনও লেগে থাকে... মুগ্ধ দৃষ্টিতে আরো খানিক ছবিটাকে দেখে নিয়ে ভরাট গলায় উত্তর দেয় সে, ‘না না... তবে খুব সুন্দর... কিন্তু আমার মনে হয় ছবির প্রেক্ষাপটে যে রঙটার ব্যবহার হয়েছে, সেখানে আর একটু সাদার মিশেল থাকলে সামনের অবজেক্টা আরো বেশি করে প্রস্ফুটিত হয়ে উঠত!’
যুবকের কথায় সুন্দরীর ভ্রূযুগল যেন আরো বক্র হয়ে ওঠে... দৃঢ় ঠোটদুটি চেপে ধরে একে অপরের সাথে... নিজের সৃষ্টির এ হেন সমালোচনা ঠিক ভালো চোখে নিতে পারে না সে... তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে যুবককে একবার আপদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে কাটা কাটা অক্ষরে বলে ওঠে, ‘আপনিও কি শিল্পী?’
যুবকের বুঝতে অসুবিধা হয় না তার কথায় ক্ষুব্ধ হয়েছে সুন্দরী... সুদর্শণ যুবকের পাতলা ঠোঁটের হাসি আরো যেন একটু বেশি করে ছড়ায় মুখের ওপরে... ‘কেন? শিল্পীরাই কি শুধু শিল্পের কদর বোঝে? শিল্পী না হলে কি সৃষ্টির সমালোচনা করা যায় না?’
বিরক্তির মেঘ ঘনায় সুন্দরীর মুখের ওপরে... একটা ইন্ডিয়ান... হতে পারে তাদের মত করেই একেবারে ধোপধরস্ত পরিচ্ছদে সুসজ্জিত, কিন্তু আদতে তো সেই ইন্ডিয়ানই বটে, আর সে কিনা তার মত অকৃত্রিম একজন ইংরেজ রমনীর সৃষ্টি, তার শিল্পের সমালোচনা করার ধৃষ্টতা দেখায়! হ্যা... তাদের এখন আর সেই একচ্ছত্র অধিকার নেই ইন্ডিয়ার ওপরে, তারা আর ইন্ডিয়ানদের ওপরে প্রভূত্বও করে না সেই আগের মত... কিন্তু তবুও... শিল্পকলা নিয়ে তাদের সমগোত্রীয়... এটা ভাবারও তো কোন অবকাশ নেই... ভাবতে ভাবতেই মুখ ঘুরিয়ে নেয় ত্বম্বী সুন্দরী... যুবকের কথার কোন উত্তর দেবার প্রয়োজন বোধ করে না সে...
যুবকও আর সময় নষ্ট করে না... ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে যায় পরবর্তি শিল্পীর আঁকা ছবির দিকে... অপস্মৃত যুবকের শরীরটার দিকে তির্যক একবার দৃষ্টি হেনে মুখ ঘুরিয়ে নেয় সুন্দরী... আজ যেন ওই যুবকের একটা কথাতেই এই বিখ্যাত আর্ট গ্যালারীর প্রদর্শনীতে তার ছবিটা কেমন ম্লান হয়ে গেলো... ভাবতে ভাবতে ফের পেছন ফিরে নিজের ছবিটার দিকে তাকায় সে... অনেক পরিশ্রমের ফল স্বরূপ এই ছবি... সেই ছবিটা একটা উটকো লোক, তাও কিনা একজন ইন্ডিয়ান... সমালোচনা করার ধৃষ্টতা দেখায়... হাঃ...
এক মনে তাকিয়েই থাকে নিজের সৃষ্ট কর্মের দিকে... তারপর কি ভেবে যন্ত্রচালিতের মত তার হাতটা চলে যায় ছবিটার নীচে রাখা রঙের ইজেলের দিকে... তুলি আর ইজেলটা হাতে তুলে নিয়ে রঙের শিশি থেকে খানিকটা সাদা রঙ বের করে ইজেলে গুলে ফেলে... তারপর আলতো হাতে তুলির টান দেয় ছবির ওপরে... একটু একটু করে ছবির পটভূমির গভীরতা হ্রাস হতে থাকে... আর সেই সাথে কোন এক যাদু স্পর্শে ছবির সুক্ষ্ম বিশয় বস্তুগুলো আরো জীবন্ত রূপ ধারণ করতে থাকে... তুলির টান শেষ হলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুন্দরী নিজের সৃষ্টির পানে... বুকের মধ্যেটা কেমন ভারী হয়ে ওঠে তার... নাহ! ভূল হয়ে গিয়েছে... এই ভাবে ভদ্রলোককে হ্যালাছেদ্দা করা উচিত হয় নি... সত্যিই তো... এই ভাবে যদি না তার দৃষ্টি আকর্শন করত ওই যুবক, তাহলে তার ছবিটার এই রূপের প্রকাশই ঘটত না...
ভাবতে ভাবতেই পাশ থেকে এক ইংরেজ দম্পতি এগিয়ে আসে... মুগ্ধ দৃষ্টিতে খানিক ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে বিনম্র ভঙ্গিতে সুন্দরীকে ছবিটা বিক্রি করবে কিনা প্রশ্ন করে তারা... তাদের বক্তব্য, এই ভাবে এত সুন্দর রঙের ব্যবহারে নাকি ছবিটা এই রকম জীবন্ত হয়ে উঠেছে... সুন্দরী মনে মনে কৃতজ্ঞতা জানায় অচেনা যুবকের প্রতি... ব্যাকুল নয়ন প্রদর্শনীর ভীড়ের মধ্যে খুজে বেড়ায় তার চোখ সেই অচেনা যুবকের জন্য... একটু কৃতজ্ঞতা জানাবার অভিপ্রায়...
.
.
.
‘হাই!’ পেছন থেকে ভরাট গলার সম্বোধনে চমকে উঠে তাকায় সুন্দরী যুবতী... তারপরই তার মুখটা এক নির্মল হাসিতে উজ্জল হয়ে ওঠে... তাড়াতাড়ি হাতে ধরা ব্যাগটা অন্য হাতে সরিয়ে নিয়ে বাড়িয়ে দেয় তার ডান হাতটাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের উদ্দেশ্যে... ‘ওহ! অসংখ্য ধন্যবাদ... সরি... আপনার কথায় প্রথমে বিরক্ত হয়েছিলাম ঠিকই... কিন্তু পরে আপনারই পরামর্শ মত তুলির আঁচড় দিয়ে বুঝলাম আপনি ঠিকই বলেছিলেন...’
নরম হাতটাকে নিজের মুঠোর মধ্যে তুলে নিয়ে অল্প চাপ দেয় যুবক... স্মিত হেসে বলে, ‘না না... এ আর এমন কি? আমার আপনার ছবিটা দেখে মনে হয়েছিল ওইটুকু খামতি রয়েছে, তাই বলে ফেলেছিলাম... আপনাকে আঘাত দিতে চাই নি...’
‘সে বুঝেছি আমিও... তাই তো ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছি আমার ব্যবহারের...’ মাথা নীচু করে উত্তর দেয় সুন্দরী... মুখের উজ্জল গোলাপী ত্বকে লালীমার আভা লাগে... তারপরেই মুখ তুলে বলে ওঠে সে, ‘আর জানেন... ওই ভূলটা শুধরে নেবার পরই আমার ছবিটা বিক্রি হয়ে গিয়েছে... এক দম্পতি এসে কিনে নিয়েছে আমার থেকে...’
শুনে খুশি হয় যুবক... ‘বাহ! এতো খুব ভালো খবর... আমার আন্তরিক অভিনন্দন...’
‘অভিনন্দন আমায় নয়... আপনাকে দেওয়া উচিত... আপনি না বলে দিলে কি আমি পারতাম ছবিটাকে এতটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে?’ লজ্জা মেশানো গলায় বলে সুন্দরী।
‘উহু... কৃতিত্বটা আপনারই... আমি তো শুধু দেখিয়ে দিয়েছিলাম খামতিটুকু... বাকিটা তো আপনারই সৃষ্টি...’ বলতে বলতে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সামনে দাঁড়ানো ত্বম্বীর পানে... সুন্দরীর রক্ত ইংরাজদের হলেও পুরোপুরি সেই তথাকথিত ফ্যাটফ্যাটে ইংরেজদের মত দেখতে নয়... বরঞ্চ অদ্ভুত একটা ভারতীয় কোমল মাধূর্য যেন মিশে রয়েছে অপরূপতার সাথে... আর যেটা সব থেকে বেশি আকর্ষণীয়... সেটা হল সুন্দরীর চোখদুটি... ওই চোখজোড়ার দিকে তাকালে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া মুস্কিল হয়ে পড়ে যেন... স্বপ্নীল মায়াবী গাঢ় নীল সে দৃষ্টি চোখের মণিতে...
হটাৎ করে যুবকের সম্বিত ফেরে সুন্দরীর কথায়... ‘হ্যালো! কি হলো? বললেন না তো?’
অপ্রস্তুত হাসি হাসে যুবক... বুঝতে অসুবিধা হয় না তার যে সুন্দরী তাকে কোন প্রশ্ন করে থাকবে, কিন্তু ক্ষণিকের জন্য সে যে হারিয়ে গিয়েছিল তার নয়ন সৌন্দর্যের মধ্যে... ‘সরি... আমি একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম...’
এবার সুন্দরীর রক্তিম পাতলা ঠোঁটের কোণে হাসি খেলে যায় চকিতে... গভীর চোখে যুবকের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে সে... ‘কি দেখে?’
‘অ্যাঁ?’ এবার সত্যিই অপ্রস্তুত হবার পালা যেন যুবকের... এই ভাবে সরাসরি প্রশ্ন আসবে ঠিক আন্দাজ করতে পারেনি যুবক... ঢোক গিলে বলে, ‘ওহ! মানে...’
খিলখিল করে হেসে ওঠে সুন্দরী... হাসির দমকে উথলে ওঠে সারা শরীরটা তার... পোষাকের আড়ালে থাকা কোমল নারীত্বের সম্ভারের উচ্ছলতা নজর এড়ায় না যুবকের... ‘বুঝেছি... থাক আর এই ভাবে অপ্রস্তুত হতে হবে না...’ বলে ফের রঙ তুলি আর ক্যানভাসের বোঝাটাকে দুই হাতে ভাগ করে নিতে নিতে বলে ওঠে, ‘আপনি কি লন্ডনেই থাকেন?’
‘হ্যা... বলতে পারেন এখন থাকি... অ্যানার্লেতে...’ সতঃস্ফুর্ত উত্তর দেয় যুবক...
শুনেই সুন্দরীর মুখ আরো উজ্জল হয়ে ওঠে... ‘আরে বাহ! আমিও তো ওই দিকটাতেই থাকি, অবস্য অ্যানার্লেতে নয়, ক্যাটফোর্ডএ... কিন্তু তবুও, দুটোই সাউথ ইস্ট লন্ডনেই পড়ছে কিন্তু...’
‘বাহ! তাহলে যদি আপনার আপত্তি না থাকে আমরা কি একসাথেই ফিরতে পারি?’ যুবক প্রশ্ন করে...
কেন জানে না সুন্দরী... বুকের মধ্যেটায় একটা খুশির রেশ মিশে যায়... সপ্রতিভাত হয়ে উত্তর দেয় সে... ‘হ্যা... যদি অবস্য আপনার আপত্তি না থাকে...’
‘আরে... এই ভাবে বলছেন কেন... এতো আমার পরম সৌভাগ্য আপনার মত একজন সুন্দরীর সাথে যাওয়া...’ বলতে বলতেই পাশ দিয়ে যাওয়া ট্যাক্সির উদ্দেশ্যে হাত তোলে যুবক... তারপর এগিয়ে গিয়ে ট্যাক্সির দরজা খুলে সরে দাঁড়ায় সুন্দরীর গাড়িতে ওঠার সুবিদার্থে...
.
.
.
ক্যাট ফোর্ডএ আগে সুন্দরীকে নামিয়ে দেয় যুবক... দরজা খুলে তাড়াতাড়ি সুন্দরীর হাতের সরঞ্জাম নিয়ে এগিয়ে দেয় বাড়ির দরজা অবধি... তারপর একটু ইতঃস্থত করে প্রশ্ন করে সে, ‘যদি কিছু মনে না করেন...’ বলতে বলতে থমকায় সে... ভাবে প্রশ্ন করাটা সমীচিন হবে কি না...
যুবকের এহেন ইতঃস্থত ভাব লক্ষ্য করে যুবতী সহাস্যে বলে ওঠে... ‘হ্যালো মিস্টার... এটা বিংশ শতক... একটা মেয়ের নাম জিজ্ঞাসা করতে এত ইতঃস্থত করার কোনো মানে হয় না... আমি অলিভীয়া... অলিভীয়া ব্রাডফিল্ড...’
হেসে ফেলে যুবক... সলজ্জ মুখে বলে, ‘না, আসলে এই ভাবে একজন যুবতীর নাম জিজ্ঞাসা করাটা অসন্মানের হবে কি না বুঝতে পারছিলাম না, তাই...’
‘সে তো আপনার মুখের ভাব দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম... তাই তো নিজেই উপযাযক হয়ে বলে দিলাম আমার নাম...’ বলে থামে সুন্দরী... তারপর স্মিত হাসি হেসে বলে, ‘আমি আমার নাম বলেছি, কিন্তু এখনও কিন্তু আপনার পরিচয়টা পাওয়া হয় নি আমার...’
‘ওহ! সরি... আমার আগেই নিজের পরিচয় দেওয়া উচিত ছিল... আসলে এই ভাবে মেয়েদের কাছে আমি ঠিক সাবলীল নই...’
‘সে আপনার এই কয়েক মুহুর্তের ব্যবহারেই সেটা বুঝে নিয়েছি মিস্টার... নতুন করে মুখ ফুটে বলার প্রয়োজন দেখি না... আপনি বড়ই লাজুক প্রকৃতির...’ হাসতে হাসতে বলে ওঠে অলিভীয়া...
‘হ্যা... সেটাই আর কি... আসলে আমাদের দেশে মেয়েদের সাথে ছেলেরা চট করে তো এই ভাবে খোলাখুলি মেশে না... যদিও আমি বেশ কিছুদিন হল এখানে এসেছি... কিন্তু বুঝতেই পারছেন... ছোট থেকে যে শিক্ষায় বড় হয়ে ওঠা হয়েছে, সেটা কাটিয়ে ওঠা একটু দুষ্করই বটে...’ লাজুক হেসে উত্তর দেয় যুবক...
পেছন থেকে ট্যাক্সির হর্ন বাজায় গাড়ির ড্রাইভার... তাতে সচকিত হয়ে ওঠে দুজনেই...
‘ড্রাইভারের বোধহয় ইচ্ছা নেই আরো বেশিক্ষণ আপনার সাথে আমি কাটাই... তাই বেরসিকের মত তাড়া দিচ্ছে...’ হাসতে হাসতে বলে যুবক... পেছন ফিরে ড্রাইভারের দিকে ইশারায় অনুনয় করে আর কয়এক মুহুর্ত অপেক্ষা করতে...
অলিভীয়া তার বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে যুবকের থেকে কিছু শোনার অপেক্ষায়...
‘আমি... সূর্য... সূর্যনারায়ণ চৌধুরী... এখানে এসেছি আমার পোস্ট গ্রাজুয়েশনটা শেষ করতে...’ বিনিত কণ্ঠে নিজের পরিচয় দেয় যুবক... কিন্তু কিছুতেই তার অবাধ্য চোখ সরাতে পারে না আঁটো পোশাকের আড়ালে থাকা তম্বীর দূরন্ত যৌবন ভরা শরীর থেকে... বার বার নজর চলে যায় পোষাকের গলার কাছ থেকে উছলে ওথলানো বুকের বিভাজিকার দিকে...
অলিভীয়ার চোখ এড়ায় না সূর্যনারায়নের দৃষ্টির... যুবকের এহেন আচরনে ক্ষুব্দ হওয়ার বদলে বেশ ভালো লাগে তার... দৃষ্টির পরশ লাগে নিজের কোমল নারী দেহে... ইচ্ছা করেই নিজের শরীরটাকে একটু টান টান করে ধরে যুবকের সামনে... যার ফল স্বরূপ পরণের পোশাক আরো যেন শরীরের সাথে লেপ্টে গিয়ে প্রস্ফুটিত করে তোলে নারী সৌন্দর্যকে...
সূর্যর মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যাবে... অতি কষ্টে সংযত করে নিজেকে... মনে মনে নিজের এই ধৃষ্টতার জন্য ধীক্কার দেয় নিজেকেই... জোর করে চোখ নামিয়ে নেয় তরুনীর বুকের ওপর থেকে...
সূর্যর এ হেন অস্বস্থিতে আর যেন মজা পায় যুবতী... হেসে কয়এক কদম এগিয়ে আসে সামনের পানে... এতটাই... যাতে প্রায় তার শরীরটা ঠেকে যাবার যোগাড় হয় সূর্যের শরীরের সাথে...
গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে ওঠে সূর্যর... কানের লতী গরম হয়ে যায় তার... সেই মুহুর্তে ট্যাক্সি ড্রাইভারের হর্ণএর আওয়াজ না পেলে কি করে বসতো, হয়তো সেও জানে না... চকিতে দু কদম পিছিয়ে যায় সে... তারপর অপ্রস্তুত হাসি হেসে বলে, ‘নাহঃ ড্রাইভার চায় না আর বেশিক্ষন এখানে থাকি... ওকে... বাই...’ বলে দ্রুত গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় সে...
চোখের তারায় এক রাশ কৌতুক নিয়ে তাকিয়ে থাকে সূর্যর এ হেন পলায়নের দিকে... গাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে গেলে অলিভীয়াও দ্রুত এগিয়ে যায় গাড়ির পানে... দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়... তারপর গাড়ির জানলাটা ধরে সামান্য ঝুঁকে পড়ে সামনের পানে... যার ফল স্বরূপ সূর্যের চোখের সামনে উন্মোচিত হয়ে পড়ে এক জোড়া নিটোল স্তনের আরো বেশ খানিকটা লোভনীয় বিভাজিকা...
ওই বিভাজিকার দিকে বারেক তাকিয়ে শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁটের ওপরে জিভ বোলায় সূর্য...
‘আইল বী ওয়েটং... ফর ইয়ু... টুমরো’ ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে অলিভীয়া... আর পরক্ষনেই দরজার ছেড়ে পেছন ফিরে হাঁটা লাগায় বাড়ির দিকে... বুঝতে অসুবিধা হয়না তার, সেই মুহুর্তে সূর্যের চোখ দুটো আটকে রয়েছে তার দোলদুলিয়মান তলতলে নিতম্বের দোলূনির ওপরেই...
সূর্যকে আর বেশি দেখার সুযোগ না দিয়ে হুস করে গাড়ি ছেড়ে দেয় ড্রাইভার... একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে সূর্য অলিভীয়ার শরীরটা দৃষ্টির আড়ালে সরে যাওয়াতে...
ক্রমশ...