08-02-2021, 07:23 PM
(26-01-2021, 07:28 PM)anangadevrasatirtha Wrote: গুরু বচন
১.গভীর রাত্রি। কুপকুপে অন্ধকার। কেউ কোথাও নেই। পথে মেয়েটি একা।সামনে কুয়াশায় ঢাকা পথ; পথের দু'পাশে অভেদ্য গাছগাছালির সারি।এই শীতের রাতেও মেয়েটি ঘেমে উঠেছে। ভয়ে।বেশ কিছুটা পিছনে, চাপা গর্জন করতে-করতে, একটা বাইক ওর দিকে এগিয়ে আসছে। যেন কোনও ক্ষুধার্ত নেকড়ে!মেয়েটি রোগা। বয়স আন্দাজ তেইশ-চব্বিশ। গায়ের রং মাঝারি। মুখটা সাধারণ। সংসারের চাপে, শহরের একটা নার্সিংহোমে আয়ার চাকরি নিতে বাধ্য হয়েছে। আট ঘন্টার ডিউটি সেরে, শেষ ট্রেনে ফিরতে-ফিরতে, প্রায়শই এমন রাত হয়ে যায় ওর।স্টেশন থেকে ওর বাড়ির পথে যেতে, মেইন রাস্তার মাঝে এই জঙ্গুলে পথটা পড়ে।অন্যদিন এ পথে এতো রাতেও টুকটাক সাইকেল, রিক্সা, পথচলতি মানুষ যাওয়া-আসা করে। ফলে এতোটা ভয়ের কিছু থাকে না।কিন্তু আজ ঠাণ্ডাটা জাঁকিয়ে পড়েছে। পথে একটা কুকুর-বেড়াল পর্যন্ত নেই।মেয়েটি হনহন করে হাঁটছে; পারলে এখনই ছুট দেয়।কিন্তু ওর পায়ের সস্তার চটিটার স্ট্র্যাপ ছিঁড়ে গেছে। পকেটে টান, সংসারে হাঁড়ির হাল, তাই আর সারানো হয়ে ওঠেনি।বাইক-নেকড়েটা আরও কাছাকাছি এসে পড়ল বলে!ঘাড় ঘুরিয়ে দেখবারও সাহস হচ্ছে না। তা ছাড়া তীব্র হেডলাইটের পিছনে, কালো জ্যাকেট পড়ে বসে থাকা সওয়ারিটার কেবল মজবুত, ঋজু দেহের অবয়বটাই আবছা বোঝা যাচ্ছে; মুখ দেখা যাচ্ছে না।মেয়েটি ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছে। অন্যদিন ওর সঙ্গে সিনিয়ার নার্স সুমিত্রাদি ফেরেন; আজ সুমিত্রাদি ছুটি নিয়েছেন। তাই ও এই অন্ধকার রাত্রে সম্পূর্ণ একা।
শেষ:ভাষ্য সমাপণ করিয়া যোগিপুরুষ ভক্তের পানে সহাস্যে তাকাইলেন; অর্থাৎ, 'কী বুঝিলে?'ভক্ত অতঃপর সাধকশ্রেষ্ঠর চরণরেণু আপন মস্তকে স্পর্শ করিয়া, কৃতজ্ঞ চিত্তে বলিল: "অদ্ভূত কাহিনি!এক্ষণে স্পষ্ট বুঝিলাম, চরম জিঘাংসা হইতেও মানব-মনে নরম প্রেম বিকশিত হইতে পারে।এ বিশ্ব-সংসারে কোনও কিছুই অসম্ভব নহে।"ভক্তের উপলব্ধিতে তুষ্ট হইয়া সবে সাধক আপনার দক্ষিণ হস্ত আশির্বাদ মুদ্রায় উত্থিত করিয়াছেন, এমতাবস্থায় অদূরবর্তী সাধক-কুটির হইতে একখানি কংস-ঘটিকা অকস্মাৎ প্রবল বেগে সাধকের মস্তকোদ্দেশে ধাবিত হইয়া আসিল।সাধক চমকিত হইয়া, বিদ্যুৎবেগে আপনার মস্তকখানি সরাইয়া লইলেন; তাই অধিক দুর্ঘটনা কিছু ঘটিল না।কংস-পাত্রটি সশব্দে ভূমি স্পর্শ করিল এবং তৎসঙ্গে সাধকের কুটিরাভ্যন্তর হইতে তীক্ষ্ম বামা-কন্ঠের ঝঙ্কার উদ্গত হইয়া উঠিল: "বলি ও বুড়ো মিংসে, রাতদিন বসে-বসে শুধু জ্ঞান ঝাড়লেই চলবে?এদিকে সংসারে চাল যে বাড়ন্ত!রাত গেলে গিলবে কী? আমার মাথা?"ভক্তগণ এইরূপ অযাচিত ঘটনাক্রমে যারপরনাই চমকিত হইয়া উঠিল।তখন সাধক স্মিতহাস্যে বলিলেন: "এ হইল কাহিনির বিপরীত ক্রম, ঘোর বাস্তব!কাহিনিতে পরাক্রমী হিংসা কোমল প্রেমের রসে দ্রবীভূত হইয়াছে, আর বাস্তবে কঠোর প্রেমই সংহারমুর্তি ধরিয়া এইরূপে প্রতিভাত হইতেছে!সত্য, এই বিশ্বসংসারে বিচিত্র ঘটনার কোনও অন্ত নাই।"ভক্তগণ অতঃপর সাধকের ভিক্ষাপাত্রে কিছু-কিছু কড়ি ও মুদ্রা দান পূর্বক, আপন-আপন গৃহোদ্দেশে প্রস্থান করিল।সাধকও তখন ভিক্ষাপাত্র লইয়া ভীরুপদে কুটির অভিমুখে অগ্রসর হইয়া, হ্রস্বকন্ঠে বলিলেন: "বলি, শুনছ? পয়সা এনেছি গো, গিন্নি, এবার তো দোর খোলো!"এই ঘটনার পশ্চাৎ সায়াহ্নের শেষ আলোকরেখা আকাশপটে অবসৃত হইয়া, দিগন্তে সন্ধাতারা প্রস্ফূটিত হইল।২৬.০১.২০২১
কি লিখলেন দাদা, প্রথমটা ভয়ঙ্কর আর শেষটা সুন্দর - সবমিলিয়ে ভয়ঙ্কর সুন্দর !!