Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.48 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভিন্ন স্বাদের কিছু গল্পের ঠিকানা
(প্রথম পর্ব আগের পাতায়)


হোটেলের সব ঠিকঠাক থাকলেও একটা ব্যাপারে অভিরূপ বিরক্ত। দুপুরের আর রাতের খাবার রুমে এসে দিয়ে যাবে এমনই কথা হয়েছিল শুরুতে। কিন্তু এখানকার চাকর গুলোর সময়ের কোনো ঠিক নেই। বিচ থেকে ঘুরে এসে অর্ডার দিয়ে এক ঘন্টা ধরে খাবারের অপেক্ষা করতে হয়। বিরক্তিতে অভিরূপ চেয়েছিল এই হোটেল ছেড়ে অন্য হোটেলে উঠতে। কিন্তু তনিমা মুখ বেকিয়ে বলে, এখন সব জিনিসপত্র নিয়ে অন্য হোটেল খোঁজা অনেক হ্যাপা, তার থেকে ভালো নিচে গিয়ে হলে খেয়ে আসবো আমরা, আর তাছাড়া ঘরটা বেশ পছন্দ হয়েছে আমার।


অগত্যা এই দু’দিন ওরা শুধু দুপুরে আর রাতের খাবার সময় নিচে নেমে খেয়েছে আর সমুদ্র তটে ঘুরতে যাওয়া বাদে সারাদিন দরজা বন্ধ করে রুমে থেকে নিজেদের মতো করে সময় কাটিয়েছে। সকালে বালুকাবেলায় শামুক কুড়িয়েছে, ছোটো কাঁকড়া ধরেছে। সূর্যাস্তের পড়ন্ত রোদে অভিরূপের কাঁধে মাথা রেখে তনিমা ওর গায়ের সাথে হেলান দিয়ে বসেছে। তখন অভিরূপের আঙুল গুলো খেলা করেছে তনিমার রেশমের মতো চুলে, কখনও আঙুল গুলো নেমে এসেছে আরও নিচে কাঁধে, কোমরের বাঁকে বা বক্ষযুগলে। একবারও ওদের মনে হয় নি কলকাতার কথা বা বাড়ি ফেরার কথা।   

আজ দুপুরে এসে দেখে খোদ ম্যানেজারই খাবার পরিবেশনে তদারকি করছেন। ওদের দেখতে পেয়েই এগিয়ে এসে একগাল হেসে বললো,  আসুন আসুন সুব্রত বাবু,  আজ চিংড়ি, কাঁকড়া আর মাংসের অনেক ভালো ভালো আইটেম আর স্পেশাল দই আছে।

অভিরূপ  নীরস ভাবে বলল, আমার নাম সুব্রত নয়, আমি অভিরূপ সেনগুপ্ত। সেদিনকেই রেজিস্টার করার সময় নাম দেখলেন…মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই বুড়ো ম্যানেজার বলতে থাকলো, গেল বার আমার হোটেলের রান্নার খুব সুখ্যাতি করলেন আপনারা, বিশেষ করে অজিতবাবু তো-

ঈষৎ বিরক্ত হয়ে অভিরূপ বলল, সেদিনকেই বললাম আমি আগে আসি নি আর অজিত নামেও কাউকে চিনি না। আপনি দু’দিন আগের কথা মনে রাখতে পারেন না তাহলে দু’বছর আগের কথা মনে রাখেন কিভাবে ?

অভিরূপের বিদ্রুপ ম্যানেজার গায়েই মাখল না। মাথা নুইয়ে বিনীত ভাবে বলল, তাহলে আমারই ভুল হবে হয়তো, আসলে বয়স হচ্ছে তো….আজকে অনেক রকম আইটেম হয়েছে, কি খাবেন বলুন, স্পেশাল বিরিয়ানি আনবো ?

অভিরূপ নির্বিকার ভাবে বলল, ওসব কলকাতাতেও পাওয়া যায়। এখানে সি ফিশ কিছু থাকলে দিন, তনিমা তুমি কি নেবে ?

তনিমা বলল, সামুদ্রিক মাছ আমার বিশেষ সহ্য হয় না। আমি বিরিয়ানিই নেবো ভাবছি।

ম্যানেজার নিজেই পরিবেশন করলো বেশ খাতির করে। অভিরূপ আড় চোখে দেখল, হোটেল বেশ বড়সড় আর আধুনিক হলেও ম্যানেজারটি সেকেলে ধরনের। গায়ে পড়ে কথা বলছে, পরনে ধুতি-পাঞ্জাবী আর কপালে চন্দনের তিলক । খাওয়া শেষ হয়ে গেলেও তনিমার সাথে সমানে গল্প করেই যাচ্ছে, ওকে স্বীকার করতেই হল যে রান্না বেশ ভালো, অভিরূপেরও মন্দ লাগে নি।

অভিরূপের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে ম্যানেজার তনিমাকে বলল, আপনার কর্তাটি মনে হয় আমার উপর চটেছেন। আসলে আমারই ভুল, হুবহু একই চেহারার মানুষ হয় ! তবে সেবার ওরা তিনজন কিন্তু পুরো হোটেল জমিয়ে দিয়েছিলেন…

তনিমা বলল, আচ্ছা অজিতবাবুও কি নতুন বিয়ে করে এসেছিলেন ?

ম্যানেজার অভিরূপের দিকে একবার তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল, ইয়ে মানে নতুন বিয়ে কিনা সেটা তো জানি না, তবে ভদ্রমহিলা বেশ জলি। তিনজনেই খুব আমুদে টাইপের ছিলেন, বিশেষ করে আপনার কর্তার মতো যাকে দেখতে মানে সুব্রত বাবু তো নিজের উদ্যোগে এখানে নাচগানের আয়োজন করলেন-উনি আর মনীষা দেবী, মানে অজিত বাবুর স্ত্রী তো পুরো আসর মাতিয়ে রেখেছিলেন।

অভিরূপ ঠাণ্ডা গলায় বলল, শুনুন ম্যানেজারবাবু, ওরা কি কোনো ধার বাকি রেখে গেছিল ?

--হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন ! না মানে সেরকম নয়, জায়গাটা এতো ভালো লেগে গেছিল ওনাদের তাই দশদিনের বদলে সতেরো দিন ছিলেন। তাই যাবার সময় নগদ কিছু টাকা কম পড়ে যায়, বলেছিলেন পরেরবার এসে মিটিয়ে দেবেন…বড়ো অফিসার ছিলেন অজিত বাবু, আমিও বিশ্বাস করে মেনে নিয়েছিলাম, কিন্তু আর আসেন নি।

রুমে ফিরে অভিরূপ দরজা বন্ধ করতেই তনিমা লাফ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল ওর বুকের ওপর আর চুমু খেতে লাগলো অভিরূপের থতে-গালে। অভিরূপ পাঁজাকোলা করে তনিমাকে কোলে তুলে নিয়ে এলো বিছানায়। পুরো দু-মিনিট দুজনের ঠোঁট থেকে ঠোঁট উঠলো না। তারপর তনিমার শাড়ির আঁচল সরিয়ে ব্লাউজের বোতাম খুলতে খুলতে বলল, অফফ বুড়োটা বক বক করে মাথা ধরিয়ে দিয়েছে একদম! তোমারও ভদ্রতা বেশি, সমানে তাল মিলিয়ে যাচ্ছিলে-

--কি করবো, উঠতে পারছিলাম না তো। তবে আমার কথাই কিন্তু ঠিক হল, ধার পাওনা আছে ওই অজিতের থেকে।

--তাছাড়া কেউ অতো মনে রাখে নাকি, কতো লোক আসছে রোজ…

--তারাই বা কি রকম লোক, হোটেলে ধার রেখে গেছে কিন্তু শোধ করেনি। বন্ধু আর বন্ধুর বউয়ের সাথে আবার এক রুমে ছিল।

--বাদ দাও তাদের কথা, আমরা আমাদের কাজ করি এসো, এই বলে অভিরূপ একটু উঠে হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে গায়ের টিশার্টটা খুলে পুনরায় ঝাঁপিয়ে পড়ল তনিমার অর্ধনগ্ন নরম শরীরের ভরাট স্তনের ওপর।

বিকেলে বেড়াতে বেরিয়ে সমুদ্রের ধার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তনিমা বলল, আচ্ছা আমরা কোনারক যাবার কি ব্যবস্থা আছে এখান থেকে খোঁজ নেবে না ? চলো আমরা খোঁজ নিয়ে আসি।

অভিরূপ বলল, বাস ডিপোতে খোঁজ নিতে হবে, সে কি আর এখন খোলা আছে ? কাল সকালে বরং-

--চলোই না দেখে আসি একবার ঘুরতে ঘুরতে।

--কিন্তু বাস ডিপো তো এদিকে নয়, উল্টো দিকে।

--তুমি জানো বুঝি কোথায় ? কি করে জানলে ?

--আসবার সময় আমার কলিগ সান্যাল দা সব বলে দিয়েছেন, ওরা অনেকবার এসেছে এখানে। তুমিও তো আগে এসেছিলে, কোনারক যাও নি ?

--না, প্রথমবার যখন এসেছিলাম তখন খুব ছোটো ছিলাম, ছ’বছর বয়স, তখন কোনারক যাওয়া হয়নি। আর দ্বিতীয়বার মামাবাড়ির সাথে এসেছিলাম, তখনও আর যাওয়া হয়নি।

অভিরূপ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, ভালোই হয়েছে যাও নি, বাড়ির লোকেদের সাথে কোনারক বেড়াতে গেলে ঠিক এঞ্জয় করতে পারতে না।

লজ্জায় তনিমার মুখ ঈষৎ লালচে বর্ণের হয়ে গেল। লাজুক হেসে বলল, হ্যাঁ ভালোই হয়েছে এবার আমরা দুজনেই একসাথে প্রথমবার কোনারক দেখবো।

রাতে দুজনে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অদূরের সমুদ্রের জলের উপর চাঁদের রুপোলী আলোর ঝিকিমিকি ছটা দেখতে দেখতে গল্প করতে লাগলো। আধ ঘণ্টা আগে রুম সার্ভিসে হুইস্কির অর্ডার দিলেও এখনও আসছে না দেখে অভিরূপ তনিমাকে বারান্দায় একটু অপেক্ষা করতে বলে নিজেই গিয়ে আনতে যায়।

নামতে গিয়ে একতলার সিঁড়ির মুখেই বুড়ো মানেজারের সাথে আবার দেখা। অভিরূপকে দেখতে পেয়েই ম্যানেজার বলল, ভালোই হল এখানেই দেখা হয়ে গেল, আসছিলাম আপনার কাছেই। বলছি তখন আপনার স্ত্রীর সামনে ওভাবে ওই কথাটা বলা উচিৎ হয় নি। সে জন্য ক্ষমাপ্রার্থী আমি।   
--কোন কথাটা ?
--আসলে আমার এখানে অনেকেই আসে, তাদের নাম ঠিকানা সবই লেখা থাকে খাতায়…কে কি করলো তাদের ব্যাপারে অতো মাথা ঘামাতে যাই না, কিন্তু…
অভিরূপ ম্যানেজারকে থামিয়ে দিয়ে বললো, দেখুন আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি, আগে কখনও পুরী আসিনি আর আপনার হোটেলে আসার তো প্রশ্নই নেই। কি মতলব আপনার বলুন তো !
দুজনে দুজনের দিকে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কয়েক মুহূর্ত।
ম্যানেজার স্থির ভাবে অভিরূপের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় কেটে কেটে বললো, কেন ভগবানের পুণ্যক্ষেত্রে এসে মিথ্যে কথা বলছেন ? আমার স্মৃতিশক্তি যথেষ্ট ভালো আর আপনাকে স্পষ্ট মনে আছে। সেবারে আপনি আর আপনার বন্ধু ওই বাজারি মেয়েছেলেটাকে নিয়ে এখানে বেড়াতে আসেন নি ? খুব তো ফুর্তি করলেন তিনজনে মিলে ক’দিন...যাবার সময় পাঁচ হাজার টাকা কম, তখন এই আংটিটা আমাকে বন্ধক দিয়ে যান নি ?

অভিরূপ আকাশ থেকে পড়লো, রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আংটি ? আমি ?
হ্যাঁ এই আংটিটা - ম্যানেজার ওর জামার পকেট থেকে একটা সাধারণ সোনার আংটি বার করে অভিরূপের মুখের সামনে তুলে ধরলো, আংটির মাঝে কোনো একটা পাথর বসানো।
অভিরূপ মাথা ঝাকিয়ে বললো, নাহ আপনি আবার ভুল করছেন। আর তাছাড়া আংটি আমি পরি না।
--কেন গরিবের সাথে নক্কা ছক্কা করছেন, এই আংটির দাম হয়তো ওই পাঁচ হাজারের বেশি, কিন্তু এই আংটি রাখার পর থেকে আমার ভাগ্য খারাপ যাচ্ছে। অপয়া পাথরের প্রভাবে ব্যবসায় প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, আর নয়, আপনার আংটি আপনার কাছেই রাখুন।

অভিরূপ রেগে বললো, ধুর মশাই অন্যের জিনিস আমি নেবো কেন ! আমি আগে আপনার মুখ পর্যন্ত দেখিনি তো আংটি দেওয়ার প্রশ্ন আসছে কেন !
--অযথা মিথ্যে বলবেন না, ঠিক আছে ধার শোধ করতে হবে না। আপনি শুধু আংটিটা নিয়ে আমাকে উদ্ধার করুন, আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ, কোনো ঝঞ্ঝাট চাই না।

“ কি হয়েছে এতো সময় লাগছে ? “, পিছন থেকে তনিমার গলার আওয়াজে চমকে ওঠে অভিরূপ। ঘুরে তাকিয়ে দেখে সিঁড়ির উপরে তনিমা এসে দাঁড়িয়েছে, চোখে অজস্র প্রশ্নের উঁকি।
--হ্যাঁ যাচ্ছি চলো, এই বলে আবার বুড়ো ম্যানেজারের দিকে ফিরে বলে, শুনুন, আপনার আংটি আমরা নেবো না, যা ইচ্ছে করে নিন…আর কালকেই আমরা হোটেল থেকে চলে যাবো !
উপরে এসে তনিমা জিজ্ঞেস করে, তুমি অতো রেগে গিয়েছিলে কেন, কি বলছিল আবার ?
--আর বোলো না, লোকটা মহা খচ্চর ! আমাদের দেখে কি ভেবেছে কে জানে, গল্প বানিয়ে একটা পুরোনো আংটি গছিয়ে দিতে চাইছে।
তনিমা গম্ভীর হয়ে বললো, লোকটা সুবিধের নয় তার মানে।
--আমি তো তাই বলছিলাম শুরু থেকে। এখানে আর ভালো লাগছে না, কালকেই সকালে কোনারকের দিকে রওনা দেবো। সাতটায় বাস আছে।

অভিরূপের দিকে তাকিয়ে একটুও দ্বিধা না করে তনিমা বললো, বেশ সেই ভালো। আমার তো পুরী আগেই দেখা, তোমার ভালো লাগছে না যখন তো চলো কোনারকেই যাবো কাল।
--আরেকটু বারান্দায় বসবে না শুয়ে পড়বে ?
--কাল যখন আমরা চলেই যাচ্ছি তখন আজ একটু সমুদ্রের ধারে হাঁটতে যাবে ? অনেকেই তো বেশ গভীর রাত অবধি ঘুরতে যায়।
--বেশ তাই চলো।

সমুদ্র তট এখন নিরিবিলি হলেও একদম জন-মানবশূন্য নয়। দূরে এদিক ওদিক কোনো যুগল হেঁটে বেড়াচ্ছে আলো ছায়ার মধ্যে। পূর্ণিমার কাছাকাছি কোনো একটা তিথি, চাঁদ বেশ ঝকঝকে। মাঝে মাঝে পাতলা মেঘ এসে ঢেকে দিলেও জ্যোৎস্নার ঔজ্জ্বল্য ম্লান করতে পারছে না। সো সো করে হাওয়া দিচ্ছে। সমুদ্রের দিক থেকে স্রোতের আওয়াজ ভেসে আসছে। নির্জন সমুদ্রতীরে অন্ধকারে তনিমার কোমর জড়িয়ে হাঁটতে থাকে অভিরূপ।
 তনিমার কোমল গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে অভিরূপ বললো, কি, ভালো লাগছে না ?
তনিমা মৃদু স্বরে বললো, তুমি আমার থেকে অনেক কথা গোপন করেছো।
অভিরূপ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি গোপন করেছি ?
--তুমি যে আগে পুরীতে এসেছো সেটা বলো নি কেন আমাকে ? নেহাত ওই হোটেল ম্যানেজার বললেন বলে, না হলে তো জানতেই পারতাম না। কি দরকার ছিল আমাকে মিথ্যে বলার ?
--মিথ্যে নয়, আমি সত্যিই আগে আসি নি।
--একদম বাজে কথা বলবে না, ম্যানেজারের কথা বুজরুকি ধরে নিলেও তুমি যেভাবে সমুদ্রে সাঁতার কাটো সেটা যথেষ্ট অভিজ্ঞদের মতো।
অভিরূপ হেসে বললো, আরে আমাদের বাড়ির সামনে হেদুয়া, ছোটো থেকেই সাঁতার শেখা।
--না, হেদুয়ার ঝিলে সাঁতার কাটা আর পুরীর সমুদ্রে সাঁতার কাটা দুটো এক নয়। কেন মিথ্যে বলছো, সত্যিটা বললে কি এমন ক্ষতি হতো ?
--আমি সত্যি বলছি, আমি আগে কখনো আসিনি, আসিনি আর আসিনি- নির্জন সমুদ্রসৈকতে অভিরূপের গলাটা হাহাকারের মতো শোনালো।
তনিমা তাও শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। 

অভিরূপ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ঠিক আছে, বলছি আমি। তোমাকে বলিনি, কিন্তু পাঁচ বছর আগে কলেজে পড়ার সময় ঐন্দ্রিলার সাথে আমার প্রেম হয়, তাকে বিয়ে করবো বলে কথাও দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে কাপুরুষের মতো পিছিয়ে আসি। ঐন্দ্রিলা খুব কষ্টে আছে, একটা বাজে মাতাল লোকের সাথে ওর বিয়ে হয়। ওর এই অবস্থার কথা ভেবে আমিও মাঝে মাঝে কষ্ট পাই। এটাই আমার গোপন কথা। তবে আমি কখনও কোনো অন্য ব্যক্তি আর তার স্ত্রীর সঙ্গে পুরীতে আসি নি, কোনো ফস্টি নষ্টি করিনি অন্য স্ত্রীলোকের সঙ্গে। হয় ওই ম্যানেজার অন্য কারোর সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলেছে নয়তো কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে বলছে এরকম - এটা তোমাকে বিশ্বাস করতেই হবে তনিমা, বলো, করবে না বিশ্বাস আমাকে ?

ব্যাকুল ভাবে আর্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকা অভিরূপের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় তনিমা বললো, থাক আর বোলো না। বিশ্বাস করি তোমাকে, অনেক আগেই বিশ্বাস করেছি।
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে অভিরূপ বললো, আচ্ছা তুমি আমার থেকে কোনোকিছু লুকোও নি তো ?

লম্বা শ্বাস ফেলে তনিমা নীচু স্বরে বললো, তোমাকে বলেছিলাম তুমিই আমার জীবনে প্রথম। কিন্তু না, আসলে একজনের সাথে - না ঠিক প্রেম হয়তো নয়, একটা ভালোলাগা…তিন বছর আগে যখন মামাদের সাথে এসেছিলাম এখানে তখন এখানকার এক স্থানীয় ছেলের সাথে আলাপ হয়, নাম শংকর, মুখটা ঠিক ভালো মনে নেই। তখন মনে হয়েছিল ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমরা কথা দিয়েছিলাম কলকাতা ফিরে গেলেও যোগাযোগ রাখবো, কিন্তু কালের নিয়মে ব্যস্ত শহরে সব ভুলে গেছি, কোনো যোগাযোগ হয়নি আর।

অভিরূপ চুপ করে শুনলো। তারপর হেসে বললো, ও নিয়ে ভাবতে নেই। বিয়ের আগে সবারই একটু আধটু ওরকম হয়।
তনিমা মুখ তুলে ডাগর নয়নে তাকিয়ে বললো, তুমি সত্যিই ক্ষমা করেছো আমায় ?

অভিরূপ কিছু বললো না, মৃদু হেসে এক হাতে তনিমার একটা হাত ধরে অন্য হাতে মাটি থেকে দুটো নুড়ি কুড়িয়ে নিয়ে তার একটা তনিমার অপর হাতে দিয়ে বললো, এসো আজ আমরা এই রাতের তারা খচিত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বিশাল সমুদ্রকে সাক্ষী রেখে শপথ নিই, আমরা আমাদের অতীতের সমস্ত কথা ভুলে যাবো - এই বলে হাতে ধরে থাকা নুড়িটা অদূরে জলে ফেলে দিলো অভিরূপ। ওর দেখাদেখি তনিমাও নিজের হাতে রাখা নুড়িটা ছুঁড়ে দিলো সেদিকে। পরমুহূর্তেই একটা বড়ো ঢেউয়ের স্রোত এসে নুড়ি দুটোকে সমুদ্রের গভীরে নিয়ে গেল।


                              (সমাপ্ত)
[+] 6 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভিন্ন স্বাদের কিছু গল্পের ঠিকানা - by Mr Fantastic - 06-02-2021, 10:01 PM



Users browsing this thread: 33 Guest(s)