Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.48 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
ভিন্ন স্বাদের কিছু গল্পের ঠিকানা
            

                ** সমুদ্রের তটে **                    
                                                  


অভিরূপের ইচ্ছে ছিল খুব দামি হোটেলে ওঠার, কিন্তু তনিমা শুরু থেকেই আপত্তি করছে। ট্রেন স্টেশন ছোঁয়ার আগে তনিমা বলল, “ না তুমি পাগলামি করবে না কিন্তু, দামি হোটেলের মোটেই দরকার নেই। আমাদের অন্তত দিন পনেরো চালাতে হবে তো নাকি? তাছাড়া কোনারকও যাবো “। অভিরূপ হাসতে হাসতে বলল, “ নাই বা থাকলাম পনেরো দিন, তবু যেক’টা দিন থাকবো একটু জমিদারি ভঙ্গিতে “।
তনিমা ভ্রুকুটি করে বলল, “ ও তোমার বুঝি বেশীদিন থাকার ইচ্ছে নেই? “
-- ইচ্ছে তো করে সমুদ্রপারে অনন্তকাল তোমার মুখোমুখি বসে থাকি !
-- বাঃ তাহলে তো হোটেল খরচই লাগবে না। বালির ওপর মুখোমুখি বসে থাকব আর হাওয়া খাবো।
-- শুধু হাওয়া খাবো ? এই বলে সেকেন্ড ক্লাস কামরার অল্প ভিড়ের মধ্যেও তনিমার ভেজা ভেজা গোলাপী ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে অভিরূপ একটা ইশারা করল। তনিমাও চোখ পাকিয়ে বলল, অসভ্য!

ট্রেন থেকে নেমে আবারও হোটেলের প্রসঙ্গ উঠলো। অভিরূপের খুব ইচ্ছে বড়ো হোটেলে থাকবে আয়েশ করে। তাতে যদি দু’দিন কম থাকতে হয় তাও ভালো। কিন্তু তনিমা অতো টাকা খরচ করতে রাজি নয়। কুলি আর লোকজনের ভিড়ে ঠাসা প্ল্যাটফর্মেই দাঁড়িয়ে ওরা তর্ক করতে লাগলো।

বিয়ে হয়েছে ওদের ছয় মাস আগে, কিন্তু এখনও দুজনে একসঙ্গে বাইরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারে নি। ইচ্ছে ছিল কাশ্মীরে যাবার, কিন্তু মায়ের অপারেশনে জমানো টাকার অনেকটাই খরচ হয়ে যাওয়ায় অগত্যা হানিমুনে ওদের পুরী আসা। তবুও, একান্নবর্তী বাড়িতে তনিমাকে সবসময়ের জন্য নিজের কাছে পায় নি, তাই অভিরূপের শখ কয়েকটা দিন ভালো কোনো হোটেলে কাটানো, যেখানে তাদের কেউ ব্যাঘাত ঘটাবে না।

তনিমাই জিতল। বলাই বাহুল্য বিয়ের অন্তত বছরখানেকের মধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে তর্কে কোন স্বামীই জিততে পারে ? তনিমা কিছুতেই হোটেলের পিছনে গুচ্ছের টাকা খরচ করতে রাজি নয়। 
অগত্যা অভিরূপ বলল, ঠিক আছে মাঝারি ধরনের হোটেলেই যাবো, কিন্তু এমন হোটেল চাই যেন সমুদ্রের সামনে দোতলায় ঘর থাকবে, খোলা বারান্দা আর খাবার খেতে নিচে যেতে হবে না।
--ইসস, পুরীতে হোটেল পাওয়া অতো সহজ কিনা! আগে থেকে ব্যবস্থা করো নি, এখন দ্যাখো সব ভর্তি কিনা।
একটার পর একটা হোটেল ঘুরছে, কোনোটাই ঠিক পছন্দ হয় না। অনেক হোটেলেই জায়গা নেই। শেষে একটা হোটেল মোটামুটি পছন্দ হল। সমুদ্রের দিকে ঘর আছে দোতলায়, বারান্দাও আছে, কিন্তু রুম লাগোয়া বাথরুম নেই-বাথরুম সেই একতলায়। তনিমা তাতেই রাজি।

মালপত্র ঢুকিয়েই দরজা দরজা বন্ধ করলো অভিরূপ, পিছন থেকে এসে তনিমাকে জড়িয়ে ধরে পাক খেয়ে বলল, আঃ ছুটি, ছুটি, এবার তোমাতে আমাতে মিলে মজা লুটি ! আমার তনু সোনা, উমম-ম…
--এই ছাড়ো ছাড়ো, বাইরে থেকে দেখতে পাবে !
--ধ্যাত, কে দেখবে ?
--ওই যে জানলা দিয়ে, সমুদ্রে যারা স্নান করছে তারা দেখতে পাবে।
--ওদের ওখানেই অনেক কিছু দেখার আছে। ওরা এদিকে তাকাবে না।
আচমকা দরজায় ঠকঠক শব্দ হতেই অভিরূপ বিরক্ত হয়ে বলল, এখনই আবার কে জ্বালাতে এলো !

দরজা খুলতে দেখল বুড়ো ম্যানেজার। একটা লম্বা ভারী খাতা এগিয়ে দিয়ে বলল, নাম সই করতে ভুলে গেছেন।
--এক্ষুনি করতে হবে নাকি ?
--তাই তো নিয়ম।
বুড়ো ম্যানেজার এবার অভিরূপের মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলল, নমস্কার নমস্কার, খবর টবর সব ভালো তো ? অজিত বাবু কেমন আছেন ?
অভিরূপ বেশ হকচকিয়ে বলল, কে অজিত বাবু ?
--সেই যে আগেরবার আপনি যাদের সাথে ছিলেন, অজিত সাহা, বেশ হাসি-খুসি মানুষ আর তার স্ত্রী মনীষা, আপনাদের কি ভোলা যায় ? এই ঘরটাতেই ছিলেন সবাই।
অভিরূপ হাত তুলে ম্যানেজারকে থামিয়ে বলল, আমি অজিত নামের কাউকে চিনি না আর এই প্রথম পুরী এলাম।
ম্যানেজার বিস্মিত হয়ে বলল, সেকি, আপনার মনে নেই ? এখনও টাটা স্টিলেই আছেন ?
অভিরূপ নীরস ভাবে বলল, আমি টাটা স্টিলে কখনও চাকরি করিনি।
তনিমা সকৌতুকে একবার অভিরূপের মুখে, আরেকবার মানেজারের দিকে তাকাচ্ছে।
বুড়ো ম্যানেজার ভ্রু কুঁচকে বলল, তাহলে কি আমার কোথাও ভুল হচ্ছে ? তারপর অস্ফুট স্বরে বললেন, হবে হয়তো, বয়স হচ্ছে কিনা। ঠিক আছে, কোনকিছুর দরকার হলে বলবেন।

বুড়ো ম্যানেজার চলে যেতে অভিরূপ দরজা বন্ধ করে হাঁফ ছেড়ে বলল, উফফ ভয় পাইয়ে দিয়েছিল মাইরি ! এমন ভাবে তাকাচ্ছিল যেন আমি মিথ্যে কথা বলছি।
তনিমা বলল, আমার মনে হয় আন্দাজে ঢিল মেরেছে, যদি লেগে যায়, হি হি। দ্যাখো অজিত নামের কেউ হয়তো হোটেল ভাড়ার টাকা মেরে দিয়েছিল, আর তোমার চেহারার সাথে হয়তো অজিতের মিল পেয়েছে।
--আরে না, আমাকে তো অজিত বলেনি। ও বলছে অজিত আর তার স্ত্রীয়ের সাথে যে ব্যক্তি এসেছিলেন সেই লোকটি হচ্ছি আমি ! আশ্চর্য, কেউ এভাবে ঘুরতে আসে অন্য কাপলের সাথে, তাও আবার এক রুমে !
--যাক গে, আমার ব্যাগের চাবিটা দাও। আর বাথরুম তো ঘরে নেই, স্নান করতে নিচের বাথরুমেই যেতে হবে।
--ধুর, সমুদ্রে এসে কেউ বাথরুমে স্নান করে নাকি, আমরা আজ সমুদ্রে স্নান করবো এবং এখনই!


অভিরূপ ভালোই সাঁতার জানে। প্রথমবার সমুদ্রে নামলেও ভয় পায় না। নুলিয়ার সাহায্য না নিয়েই বড়ো বড়ো ঢেউয়ের সামনে এগিয়ে যায়। তনিমাও সাঁতার জানে, কিন্তু বিশাল ঢেউ দেখে ভয় পায়। আগে একবার পুরী এলেও ভয় কাটে নি। অভিরূপ ওর হাত ধরে একটু দূরে সমুদ্রের মাঝে নিয়ে যেতে চাইলে তনিমা যাবো না বলে চেঁচিয়ে ওঠে। কিন্তু অভিরূপ শোনে না। তনিমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে এগিয়ে যায় কোমর সমান জলের দিকে। খোলা আকাশের নিচে নীল সমুদ্রের মাঝে এই প্রথম দুটো শরীর স্বাধীনতা পেয়েছে। বড়ো ঢেউয়ের সামনে পিছন থেকে তনিমার নধর দেহবল্লরীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভিরূপ। অবাধ্য হাত বিচরণ করে বেড়ায় তনিমার জলে ভেজা আঁটোসাঁটো টপের ওপর দিয়ে শরীর জুড়ে। ঢেউয়ের ঝাপটায় আর অভিরূপের বাহুবন্ধনে চাপা পড়ে তনিমা ছটফট করে ওঠে, খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। 

                                                  
                                                  (পরের পর্বে সমাপ্ত) 
[+] 5 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: ভিন্ন স্বাদের কিছু গল্পের ঠিকানা - by Mr Fantastic - 05-02-2021, 08:38 PM



Users browsing this thread: 27 Guest(s)