05-02-2021, 05:35 PM
আমি বুঝতে পারিনি মামিমা ঘর থেকে বেরিয়েই হয়ত কিছু নিতে ভুলে গেছে বলে আবার ফিরে এসেছে। হঠাত মনে হল বেডরুমের দরজার বাইরে কেও দাঁড়িয়ে আছে। আমার মাথায় যেন বজ্রপাত ঘটল। ব্রা থেকে মুখ তুলে দেখলাম মামিমা। আমি মামিমার চোখে আগুন দেখলাম। এই শান্ত মহিলার চোখে এত রাগ আমি কখনো দেখিনি। আমার হাত থেকে ব্রা পড়ে গেল।
মামিমা একটা কথা না বলে এগিয়ে এসে ব্রাটা মেঝে থেকে তুলে আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখল।
আমি মাথা নিচু করে দ্রুতপায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। সারাদিন বাইরে কাটিয়ে রাতে যখন বাড়ি ফিরলাম, ঊর্মি বলল মামা ঘরে ডাকছে। আমি ঘরে গিয়ে দেখলাম, মামা ভয়ানক গম্ভীর হয়ে বিছানায় বসে আছে। পাশে মামিমা দাঁড়িয়ে। আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বিস্ফোরণের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সারাদিন ধরে আমি বহু এক্সকিউজ মনে মনে বানিয়ে রেখেছি। কিন্তু এটাও জানি কিছু ধোপে টিকবে না। শুধু একটা বাপার নিশ্চিত ভেবে রেখেছি। ব্রাটা ভুল করে বুঝতে না পেরে বের করে ফেলেছি এটা মেনে নিলেও গন্ধ শুঁকেছি এটা মরে গেলেও মানব না। আর সারাদিন ধরে এটাও ভেবেছি, মামিমা হয়ত এই জায়গাটা বাদ দেবে। কারণ মামিমা মত শান্ত ভদ্র মানুষের পক্ষে এটা বলা অসম্ভব।
মামা খুব আস্তে আস্তে গম্ভীর গলায় বলল
– আমি তাহলে এতদিন দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষেছি।
আমি কোন উত্তর দিলাম না । চুপ করে রইলাম।
– ছিঃ ছিঃ তোর কাছে এটা আমি এক্সপেক্ট করিনি শুভ। তোকে আর ঊর্মিকে আমি চিরদিন এক চোখে দেখে এসেছি। আমার হাজার কষ্টের মধ্যেও আমি কখনো তোর পড়াশুনোর কোন খরচায় কার্পণ্য করিনি। আর তুই তার এই প্রতিদান দিলি। তুই আলমারি থেকে টাকা চুরি করলি।
আমি অবাক হয়ে মামিমার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। ভালই চালটা দিয়েছে। আমাকে চোর বানিয়েছে। কিন্তু আবার ভাবলাম একদিকে তাই ভাল। আমার জন্য ব্যাপারটা খুব খারাপ হলেও । মামিমা চালটা দিয়ে সাপও মারল আবার লাঠিও ভাঙল না।
আমি চুপ করে রইলাম।
মামা বলল
– তুই এত শাস্তি পাবি শুভ। তোর মা আমাকে তোর দায়িত্ব দিয়ে গেছে , আমি তোকে চোর হতে দিতে পারি না। তুই ভয়ানক শাস্তি পাবি।
মামা ঊর্মি কে ডেকে বলল পেয়ারা গাছ থেকে একটা ডাল ভেঙে আনতে।
একটু পর ঊর্মি ডাল নিয়ে ঘরে ঢুকল।
মামা ডাল হাতে নিয়েই আমাকে ভয়ানক ভাবে মার শুরু করল। অকস্মাত আক্রমণে আমি মেঝেতে পড়ে গেলাম। আমি হাত দুটো দিয়ে মাথাটা বাঁচিয়ে শুয়ে রইলাম। মারের বর্ষণ আমার ওপরে শুরু হয়ে গেল। আমি মারের চোটে ছটফট করতে লাগলাম। আকুতি মিনতি করতে লাগলাম। একটু পর মামা দেখলাম পাগলের মত হাঁপাচ্ছে। শুনলাম মামা মামিমাকে বলছে।
– তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন? বাড়ির ছেলেকে শিক্ষা তো দিতে পারনি। লাঠিটা দিয়ে অন্তত মার। কিছু তো ওর শেখা উচিত।
মামি এবার মামার থেকে লাঠি নিয়ে মার শুরু করল। ঘরের কাজ করে করে মামিমার হাতের জোর মামার থেকে বেশি বই কম না। মামিমা পাগলের মত মার আরম্ভ করল। আমি যন্ত্রণায় আর সহ্য করতে পারছিলাম না। মামিমার পায়ের ওপর পড়ে বলতে লাগলাম
– আর করব না। প্লিজ ছেড়ে দাও। তোমার পা ছুঁয়ে বলছি।
মামিমা ছিটকে সরে গিয়ে বলল
– অসভ্য চোর, তুই আমাকে টাচ করবি না।
আমি দেখলাম দূরে ঊর্মি দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে। একমাত্র মামা দেখলাম বিছানায় মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। মনে মনে বুঝলাম এই লোকটা শুধু কষ্ট পাচ্ছে।
প্রহার পর্ব শেষ হওয়ার পরো আমার শাস্তি শেষ হল না। । আমি জানতাম মামা চুরিকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করেন। কিন্তু আমি ও এটাও জানতাম , আসল সত্যিটা আমি বলতে পারব না। তার থেকে শাস্তি মেনে নেওয়া অনেক ভাল।
মামা পরের দিনের শাস্তি ঘোষণা করলেন। সপ্তমীর সারা দিন আমাকে বাড়িতে নীল ডাউন হয়ে বসে থাকতে হবে। আর এক ঘন্টা পর পর ৫০ টা করে কান ধরে উঠবস করতে হবে।
আমি সেই দিনের অপমান সারা জীবন ভুলতে পারব না। সকালে উঠে কান ধরে বসে পরলাম।
আমাকে রান্নাঘরে সামনে বসতে বলা হয়েছিল যাতে মামিমা রান্না করতে করতে নজর রাখতে পারে। ২ ঘন্টা বসে থেকে হাঁটুতে ব্যাথা ধরে গেল। কিন্তু আমি একটু ভর দিয়ে বসতে গেলেই মামিমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আমাকে পেয়ারা গাছের ডাল দিয়ে মারছিল। আমি নীল ডাউন হয়ে বসে যাচ্ছিলাম আবার।
কিছুক্ষণ পর পুজোর নতুন শাড়ি পড়ে ঊর্মির সব বন্ধুরা এল ঘুরতে যাওয়ার জন্য ঊর্মিকে ডাকতে। সবার সামনে মাথা নিচু করে আমি বসে রইলাম। সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে বুঝতে পারলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম ঊর্মির অনেক বন্ধু দেখছে আর হাসছে। হয়ত ঊর্মি বলে দিয়েছে, কি জন্য শাস্তি পেয়েছি। এর মধ্যে মামিমা এসে আমাকে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে দিল। উঠবস করার সময় হয়ে গেছে।
আমি মাথা নিচু করে উঠবস করা শুরু করলাম। জীবনে এত অপমানিত কখন হইনি। দেখলাম ঊর্মির একটা বন্ধু হাসতে হাসতে ঊর্মির গায়ে পড়ে যাচ্ছে । একটা বাইশ বছর বয়সি ছেলে, একদল হায়ার সেকেন্ডারি মেয়ের সামনে উঠবস করছে।
মামিমা কিছুক্ষণ পর সবাইকে খেতে দিল পুজোর নাড়ু মোয়া। আমি খালি পেটে বসে রইলাম। হঠাত আমার খুব কান্না পেল। আমার মনে হল বাকি সবার সাথে আমার একটাই পার্থক্য । এদের সবার মা আছে। আমার মা নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ আমার কাছে নেই। মাকে আমি খুব বেশিদিন পাইনি। কিন্তু জীবনের যে কটা দিনই সজ্ঞানে পেয়েছিলাম, সে সময়ের মায়ের উষ্ণ কোলের কথা মনে করার চেষ্টা করলাম। আর ফিস ফিস করে যেন আমার মৃত মাকে উদ্যেশ্য করে বললাম
– মা তুমি যেখানেই থাকো আমার এই অবস্থা থেকে দুঃখ পেয়ো না। একদিন আমি অনেক বড় হব মা। তোমার ছেলে একজন আর্টিস্ট মা। একজন আর্টিস্ট। আর দুঃখ না পেলে কখনো বড় আর্টিস্ট হওয়া যায় না।
আমি অনুভব করলাম আমার দু চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে। একবার ফুঁপিয়ে অস্পষ্টভাবে মা কে ডেকে নিজেকে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। কাঁদা যাবে না। যার চোখের জল পৃথিবীতে কারোর কাছে মূল্য রাখে না, তাকে কাঁদতে নেই।
হঠাত দেখলাম ঊর্মির একটা বন্ধু বলল
– এই দাদাটা চুরি করেনি।
আমি অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে চোখ তুলে তাকালাম। দেখলাম মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির চোখ ছলছল করছে। ও কি আমার ভেতরে যে রক্তটা ঝরছে সেটা উপলব্ধি করে ফেলেছে। হে ঈশ্বর! না …। আমি কারোর সহানুভূতি চাই না। সব যন্ত্রণা দাও, সব আঘাত দাও কিন্তু কারো সহানুভূতি দিও না প্লিজ। কারোর না। জাস্ট কারোর না ।।
আমি মাথা নামিয়ে নিলাম।
আমি জানতাম ইচ্ছে করলেই আমি ব্যাগ নিয়ে এই মুহূর্তে বেরিয়ে যেতে পারি কলকাতায়। কিন্তু আমি গেলাম না। শুধু মামার জন্য। যে নুন এতদিন খেয়েছি তার শোধ করে যেতে হবে বন্ধু। যে পাপ করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত করে যেতে হবে।
আমি পাথরের মূর্তির মত বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমার শাস্তিকালের সময়সীমা অতিক্রমের জন্য। আজকের পর এ বাড়ি আর আমার জন্য না।
এক বছর পরের কথা। আমি সেদিনের পর থেকে আর মামারবাড়িতে আর যায়নি। মামার থেকে একটা টাকাও আর নিই নি কখনো। কখনো ফোন ও করিনি একটাবারের জন্যও। স্ট্রাগল করা শুরু করেছিলাম মারাত্মকভাবে। কলেজের ফার্স্ট ইয়ার থেকেই আমার কাজের প্রশংসা সর্বত্র করা হত। আরও খাটতে যখন শুরু করলাম, কাজের আরও উন্নতি শুরু হল।
অয়নদা , অপুদিও খুব হেল্প করেছে। টিউশানি জোগাড় করে দিয়েছে। কখনও টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে। সে ঋণ ভোলার না। অনেক ক্লাসমেটও করেছে। একদিন অপুদা বলল ,তুই এক্সিবিশান কর। তোর ছবি লোকে কিনবে , আমি সিওর।
প্রথম একটা সপ্তাহ শুধু এটা ভেবে কাটিয়ে দিলাম কি ছবি আঁকব? কি হবে আমার ছবির বিষয়? একদিন মাঝরাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মত একটা চিন্তা খেলে গেল। মনে পড়ল আয়নদার আঁকা সেই বিখ্যাত গর্ভধারিণী সিরিজের কথা। যাকে একটা সময় মানুষ খুব ভালোবাসে, সেই যখন নির্ম্মমতম আঘাত দেয়, তখন যে তীব্র ঘৃণা তৈরি হয় তা থেকেই গর্ভধারিণী সিরিজের মত ছবি আঁকা সম্ভব হয়।
আমি ছবি আঁকা শুরু করলাম । নাম রাখলাম “ন হন্যতে” । ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে একটা তরুণ পাথরের ওপর বিভিন্ন ভঙ্গিমায় নগ্ন হয়ে শুয়ে। তার পুরুষাঙ্গ উত্থিত হয়ে আছে। এক যৌনময়ি মহিলা চাবুক দিয়ে সেই ছেলেকে আঘাত করছে। মহিলা কখনো সায়া আর ব্লাউজ পড়ে আছেন। ব্লাউজের সব হুক খোলা।
কখনো বা মহিলা শুধু সায়া পড়ে আছেন। সায়াটার একদিক পুরো ছেড়া। আর হাওয়াতে তা উড়ছে। যোনিদেশে ঘন চুলের জঙ্গল দেখা যাচ্ছে। একটা ছবি জুড়ে শুধু দেখা যাচ্ছে মহিলা ছেলেটির মুখের ওপর বসে প্রসাব ত্যাগ করছেন।
প্রতিটা ছবিতে মহিলার মুখে মামিমার মুখটা কেটে বসানো।
তিন মাস রাত জেগে জেগে ছবি আঁকা শেষ করলাম । তারপর সাহস করে এক্সিবিশান নামিয়ে দিলাম। অভাবনীয় সাফল্য পেলাম কিছুটা ভাগ্যের জন্য। কাকতালীয় ভাবে কলকাতায় আসা একজন কানাডার টুরিস্টের পছন্দ হয়ে গেল ছবিগুলো। ভদ্রলোকের নাম গ্রেগ। উনি কানাডায় ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে থাকেন।
গ্রেগ ওখানকার একজন বেশ নামকরা ইন্টেরিয়ার ডেকরেটার। আমাকে বললেন আমার ছবি ওর জায়গায় খুব ভাল মার্কেট পাবে। গ্রেগ আমাকে সরাসরি কানাডায় ওর কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার জন্য অফার করলেন। আমি বললাম পরে সুযোগ পেলে নিশ্চয় চেষ্টা করব।
আমার সতেরো খানা ছবিই গ্রেগ কিনে নিলেন। পাঠক বন্ধুরা শুনলে আপনারা খুশি হবেন, ডলারগুলো যেদিন আমি আর অয়নদা টাকাতে ভাঙিয়ে নিয়ে এলাম আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
সবচেয়ে কম টাকায় গ্রেগ আমার যে ছবিটা কিনেছে তার দাম চল্লিশ হাজার। সব মিলিয়ে বারো লাখ টাকা আয় হয়েছে আমার। গ্রেগ যাওয়ার আগে বলে গেল – ইয়ং ম্যান এনি ডে ইউ আর ওয়েলকাম টু মাই প্লেস। জাস্ট গিভ এ কল।
সারারাত সেদিন আমি , অয়নদা, অপুদি , অপুদির আর রঞ্জন বলে আমার একটা বন্ধু সেলিব্রেট করলাম। ঠিক হল, আমরা গোয়া যাব সবাই মিলে। উৎসাহে টগবগ করতে লাগলাম। প্রথম এত বড় ট্যুরের প্ল্যান।
কিন্তু গোয়া যাওয়ার আগের দিন আমার একটা ফোন এল।ফোনটা ঊর্মির। আমি অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম ঊর্মি কিছু না বলতে পেরে কাঁদছে।
আমি বললাম কি হয়েছে ঊর্মি বল।
ঊর্মি বলল – শুভদা তুমি একবার তারকেশ্বর আসতে পারবে? বাবা তোমার সাথে একবার দেখা করতে চেয়েছে।
আমি বললাম – সেটা সম্ভব না ।
ঊর্মি বলল
– বাবা আর বাঁচবে না শুভদা। বাবার ক্যান্সার হয়েছে। লাস্ট ষ্টেজ ।
আমি গোয়া যাওয়া ক্যান্সেল করে সেদিন রাতেই তারকেশ্বর গেলাম।
আমি মামাকে দেখে চমকে উঠলাম। একি চেহারা হয়েছে। শরীরে যেন কিছু নেই আর। একটা কঙ্কাল পাতলা চামড়ার চাদর পরে শুয়ে রয়েছে।
আমি ঊর্মিকে চিৎকার করে বললাম – তোরা আমাকে এতদিন বলিসনি কেন? এখুনি অ্যাম্বুলেন্সে ফোন কর। আমি মামাকে অ্যাপেলো হসপিটালে নিয়ে যাব কলকাতায়।
মামা স্মিত একটা হাসল।
ক্ষীণ গলায় বলল
– আয় পাশে বস।
আমি বিছানয় মামার পাশে গিয়ে বসলাম।
ঊর্মি বলল
– আমরা এক সপ্তাহ আগে ভেলোর থেকে ফিরেছি।
আমার মুখটা কষ্টে ভরে গেল। ও তার মানে আমি কিছুই জানি না। আমাকে জানানোরও কেও প্রয়োজন বোধ করেনি।
মামা বলল
– লুকোচুরির কিছু নেই আর শুভ। ডক্টর স্বামি ইন্ডিয়ার সেরা ডাক্তার। উনি আমাকে বলেছেন, যা যা করার সব করে নিতে। ক্যান্সার লাস্ট ষ্টেজ এ। চিকিৎসার যদি কিছু করার থাকত তোকে নিশ্চয়ই বলতাম ।
আমার চোখ জল টলটল করতে লাগল।
মামা বলল
– তোকে কিছু বলার আছে শুভ । ক্যান্সারের ট্রিটমেন্টে সব গেছে রে। তোর মামিমাকে এত খরচ করতে বারণ করলাম। ও তো শুনল না। তবু তোর কলেজের শেষ বছরের জন্য কিছু টাকা ব্যাঙ্কে রাখা আছে। ওটা তুই নিয়ে নিস। বাকি তোকে আর কিছু দিয়ে যেতে পারলাম না রে।
আমি এটা শুনে আর থাকতে পারলাম না। বিছানায় ওপর আছড়ে পড়লাম ।
বললাম
– না মামা তুমি প্লিজ ছেড়ে যেও না। মা ছোটবেলায় যখন গেছে, বারণ করতে পারিনি । ছোট ছিলাম। আটকাতে পারিনি। তোমাকে আমি যেতে দেব না।
আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম।
মামা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
– পাগল ছেলে আমার।
আমি বললাম
– আর তোমাকে টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না মামা। আমার ছবির এক্সিবিশান হয়েছে। সব ছবি বিক্রি হয়েছে। টোটাল বারো লাখ টাকা পেয়েছি।
মামা মুখ আনন্দে উজ্বল হয়ে উঠল। বাচ্চা ছেলের মত মামা হাততালি দিতে শুরু করল। ঊর্মিকে বলল
– তোর মাকে এখুনি ডেকে আন ঊর্মি।
মামিমা ঢোকার সাথে সাথে মামা বলল।
– কাবেরি , আমাদের শুভ কি করেছ শুনেছ? ওর সব ছবি বিক্রি হয়েছে । বারো লাখ টাকা পেয়েছে ও। আমি চিরকাল বলেছি শুভ কিছু একটা করবে। বংশের নাম উজ্বল করবে।
মামিমা আমার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন।
বললেন
– শুভ বাবা ভাল আছ ? আমাদের সব অবস্থা শুনেছ বাবা?
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।
মামিমা কে দেখলাম , মুখটা কেমন সাদা হয়ে আছে। বুঝলাম প্রচণ্ড স্ট্রেসের মধ্যে আছে। ভয়ানক যে দুর্যোগ নেমে এসেছে ওর জীবনে সেটা যেন মেনে নিতে পারছেন না।
মামিমা বললেন
– হাত পা ধুয়ে এস বাবা। তোমাদের রান্না করছি। তুমি মুরগি ভালবাসো বলে মুরগির ঝোল করছি। একটু পরে খেতে দিয়ে দেব। আর মামার সাথে কথা শেষ হলে একবার রান্নাঘরে শুনে যেও।
কিছুক্ষণ পর রান্নাঘরে গেলাম। মামিমা রান্না করছিলেন। আমাকে দেখে গ্যাসটা কম করে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন।
আমাকে বললেন
– একটু দরজাটা ভেজিয়ে দাও।
আমি দরজা ভেজিয়ে আসতেই মামিমা বললেন
– শুভ আমি জানি তুমি তোমার মামিমার ওপরে অনেক রেগে আছ।
– না, না । মামিমা।
– না শুভ মিথ্যে বল না। তুমি সেই যে গেলে আর একবারো আসোনি । একবার ফোন পর্যন্ত করনি। আমি জানি আমি খুব অন্যায় করেছিলাম বাবা। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও ।
আমি কিছু বললাম না। পুরনো সেই অপমানের কথা মনে পরতেই আমার মুখ শক্ত হয়ে গেল ।মামিমা আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন
– আমি কি ক্ষমার যোগ্য নই শুভ?
আমি কিছু উত্তর দিলাম না। মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম।
হঠাৎ মামিমা দুম করে আমার পায়ে পড়ে গেলেন। আমার পা ধরে আমার দিকে মুখ তুলে বললেন
– শুভ আমি কি আর তোমাদের মত এত শিক্ষিত ? মফস্বলের সাধারণ গৃহবধূ । আমাকে মাফ করে দাও। এরকম ভুল আর আমার কোনদিন হবে না বাবা । আমাকে ক্ষমা করে দাও ।
আমি বললাম
– ছিঃ ছিঃ । এটা কি করছ মামিমা।
হঠাত দেখলাম দরজাটা খুলে গেল। ঊর্মি “ মা …” বলে কিছু বলতে গিয়ে আমাদের দেখে থেমে গেল।
মামিমা বললেন
– আমি তোমার শুভদার সাথে একটু কথা বলছি ঊর্মি। তুমি একটু পরে এস ।
ঊর্মি “ ঠিক আছে মা ” বলে দরজা ভেজিয়ে আবার চলে গেল ।
আমি মামিমার কাঁধ ধরে মামিমাকে তুলে দাঁড় করালাম।
মামিমা আমার বুকে মাথা রেখে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগল। আমি মামিমার পিঠে হাত বুলিয়ে মামিমাকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। মামিমা বলল
– একবার বল শুভ একবার বল আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ।
আমি শান্ত গলায় বললাম
– ঠিক আছে মামিমা। তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
মামিমা শুনে আকুল হয়ে আমাকে দুহাত দিয়ে ধরে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলেন ।আমার শরীরে যেন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল। এই প্রথম আমি মামিমার সাথে এতটা ঘনিষ্ঠ হলাম জীবনে। এর আগে পায়ের পাতা ছাড়া মামিমাকে স্পর্শ করিনি কখনো। আমি পিঠ থেকে আস্তে আস্তে হাতটা নামিয়ে মামিমার কোমরে রাখলাম। তারপর বললাম
– আর কেঁদো না মামিমা।
মামিমা আমার দিকে মুখ তুলে বলল
– এতদিনে আমার বুকের ছেলেকে আবার ফিরে পেলাম
খাবার টেবিলে অনেকদিন পর সবাই একসাথে খেতে বসলাম। মামাকেও ধরে ধরে বালিশ দিয়ে কোনভাবে বসানো হল।
মামা বলল
– শুভ , তুই দাঁড়িয়ে গেছিস। এর থেকে বড় আনন্দ আর আমি পাইনি। ওপরে গিয়ে তোর মাকে ফেস করতে আর আমার অসুবিধে হবে না।
আমি বললাম
– তুমি কোথাও যাচ্ছ না মামা।
মামা হাসল। বলল
– শুধু আমার একটা চিন্তা বাকি থেকে গেছে রে। ঊর্মির পড়াশুনোর কি হবে?
– কেন ?
– ও হায়ার সেকেন্ডারিতে তো খুব খারাপ রেজাল্ট করেনি। কোলকাতায় একটা ভাল কলেজে ইংলিশ হর্নাসে ও ভরতি হয়েছিল। কিন্তু আর যেতে পারেনি। দুম করে সব এসব ঘটে গেল। ও এখন এখানকার একটা কলেজেই ভরতি হয়েছে।
আমি বললাম
– আর চিন্তা করার দরকার নেই মামা। আমি কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিচ্ছি। সবাই যাব। ঊর্মি কলকাতার কলেজেই পড়বে। তোমার চিকিৎসাও আবার নতুন করে শুরু করাব।
– না না। আমার চিকিৎসার পিছনে আর পয়সা খরচ করিস না শুভ।
– তুমি কোন কথা বলবে না। মামিমা তুমি কাল থেকে খোঁজ নাও। এই বাড়িটা ভাড়া দিয়ে আমরা যত শিগগিরি সম্ভব চলে যাব।
– কিন্তু …
আমি মামাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম
– আর কোন কিন্তু নেই মামা। এটাই ফাইনাল।
মামা স্মিত হেসে বলল
– শুভ তুই এখন বাড়ির বড় ছেলে। তুই যদি বলিস এটা ভাল তাহলে তাই হবে।
মামা মামিমার দিকে তাকিয়ে বলল
– কাবেরি , বাবা যখন ছিলেন তখন আমরা ওঁর কথা শুনে চলে বড় হয়েছি। তারপর তোমরা এতদিন আমাকে মেনে এসেছ। আমি চাই আজ থেকে তুমি আর ঊর্মি শুভকে মেনে চলবে। কারণ শুভই এখন আমাদের বাড়ির প্রধান। ও শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত । ওই তোমাদের খেয়াল রাখবে।
আর শুভ আমি তোমাকে বলছি, তোমার মামিমা তোমার থেকে বয়সে বড়। প্রয়োজনে অবশ্যই পরামর্শ নেবে। কিন্তু আমি চাই বাড়ির শেষ ডিসিশান তুমিই নেবে। দরকার পড়লে ঊর্মিকে তো বটেই তোমার মামিমাকেও শাসন করবে।
এর এক সপ্তাহ বাদে আমরা সবাই কলকাতায় চলে এলাম। যাদবপুরে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিলাম। ঊর্মি সাউথ সিটি কলেজে ক্লাস শুরু করে দিলও। কলকাতার বেস্ট অঙ্কলজিস্টের আন্ডারে মামাকে ভরতি করলাম। কিন্তু মামা এক মাসের বেশি বাঁচলেন না। আমি প্রকৃত অর্থে এবার অনাথ হলাম।
দু তিন সপ্তাহ আমি পুরো অন্ধকারে ডুবে রইলাম। বাড়িটাও পুরো শ্মশানের মত হয়ে গেছিল। কিন্তু শত দুঃখেও জীবন থেমে থাকে না। জীবন এগিয়ে যায়। আস্তে আস্তে নিজেকে রিগেন করার চেষ্টা করলাম। সংসারের দায়িত্ব এখন আমার কাঁধে।
(অসমাপ্ত)
মামিমা একটা কথা না বলে এগিয়ে এসে ব্রাটা মেঝে থেকে তুলে আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখল।
আমি মাথা নিচু করে দ্রুতপায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। সারাদিন বাইরে কাটিয়ে রাতে যখন বাড়ি ফিরলাম, ঊর্মি বলল মামা ঘরে ডাকছে। আমি ঘরে গিয়ে দেখলাম, মামা ভয়ানক গম্ভীর হয়ে বিছানায় বসে আছে। পাশে মামিমা দাঁড়িয়ে। আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বিস্ফোরণের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সারাদিন ধরে আমি বহু এক্সকিউজ মনে মনে বানিয়ে রেখেছি। কিন্তু এটাও জানি কিছু ধোপে টিকবে না। শুধু একটা বাপার নিশ্চিত ভেবে রেখেছি। ব্রাটা ভুল করে বুঝতে না পেরে বের করে ফেলেছি এটা মেনে নিলেও গন্ধ শুঁকেছি এটা মরে গেলেও মানব না। আর সারাদিন ধরে এটাও ভেবেছি, মামিমা হয়ত এই জায়গাটা বাদ দেবে। কারণ মামিমা মত শান্ত ভদ্র মানুষের পক্ষে এটা বলা অসম্ভব।
মামা খুব আস্তে আস্তে গম্ভীর গলায় বলল
– আমি তাহলে এতদিন দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষেছি।
আমি কোন উত্তর দিলাম না । চুপ করে রইলাম।
– ছিঃ ছিঃ তোর কাছে এটা আমি এক্সপেক্ট করিনি শুভ। তোকে আর ঊর্মিকে আমি চিরদিন এক চোখে দেখে এসেছি। আমার হাজার কষ্টের মধ্যেও আমি কখনো তোর পড়াশুনোর কোন খরচায় কার্পণ্য করিনি। আর তুই তার এই প্রতিদান দিলি। তুই আলমারি থেকে টাকা চুরি করলি।
আমি অবাক হয়ে মামিমার দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। ভালই চালটা দিয়েছে। আমাকে চোর বানিয়েছে। কিন্তু আবার ভাবলাম একদিকে তাই ভাল। আমার জন্য ব্যাপারটা খুব খারাপ হলেও । মামিমা চালটা দিয়ে সাপও মারল আবার লাঠিও ভাঙল না।
আমি চুপ করে রইলাম।
মামা বলল
– তুই এত শাস্তি পাবি শুভ। তোর মা আমাকে তোর দায়িত্ব দিয়ে গেছে , আমি তোকে চোর হতে দিতে পারি না। তুই ভয়ানক শাস্তি পাবি।
মামা ঊর্মি কে ডেকে বলল পেয়ারা গাছ থেকে একটা ডাল ভেঙে আনতে।
একটু পর ঊর্মি ডাল নিয়ে ঘরে ঢুকল।
মামা ডাল হাতে নিয়েই আমাকে ভয়ানক ভাবে মার শুরু করল। অকস্মাত আক্রমণে আমি মেঝেতে পড়ে গেলাম। আমি হাত দুটো দিয়ে মাথাটা বাঁচিয়ে শুয়ে রইলাম। মারের বর্ষণ আমার ওপরে শুরু হয়ে গেল। আমি মারের চোটে ছটফট করতে লাগলাম। আকুতি মিনতি করতে লাগলাম। একটু পর মামা দেখলাম পাগলের মত হাঁপাচ্ছে। শুনলাম মামা মামিমাকে বলছে।
– তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন? বাড়ির ছেলেকে শিক্ষা তো দিতে পারনি। লাঠিটা দিয়ে অন্তত মার। কিছু তো ওর শেখা উচিত।
মামি এবার মামার থেকে লাঠি নিয়ে মার শুরু করল। ঘরের কাজ করে করে মামিমার হাতের জোর মামার থেকে বেশি বই কম না। মামিমা পাগলের মত মার আরম্ভ করল। আমি যন্ত্রণায় আর সহ্য করতে পারছিলাম না। মামিমার পায়ের ওপর পড়ে বলতে লাগলাম
– আর করব না। প্লিজ ছেড়ে দাও। তোমার পা ছুঁয়ে বলছি।
মামিমা ছিটকে সরে গিয়ে বলল
– অসভ্য চোর, তুই আমাকে টাচ করবি না।
আমি দেখলাম দূরে ঊর্মি দাঁড়িয়ে মিটি মিটি হাসছে। একমাত্র মামা দেখলাম বিছানায় মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। মনে মনে বুঝলাম এই লোকটা শুধু কষ্ট পাচ্ছে।
প্রহার পর্ব শেষ হওয়ার পরো আমার শাস্তি শেষ হল না। । আমি জানতাম মামা চুরিকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করেন। কিন্তু আমি ও এটাও জানতাম , আসল সত্যিটা আমি বলতে পারব না। তার থেকে শাস্তি মেনে নেওয়া অনেক ভাল।
মামা পরের দিনের শাস্তি ঘোষণা করলেন। সপ্তমীর সারা দিন আমাকে বাড়িতে নীল ডাউন হয়ে বসে থাকতে হবে। আর এক ঘন্টা পর পর ৫০ টা করে কান ধরে উঠবস করতে হবে।
আমি সেই দিনের অপমান সারা জীবন ভুলতে পারব না। সকালে উঠে কান ধরে বসে পরলাম।
আমাকে রান্নাঘরে সামনে বসতে বলা হয়েছিল যাতে মামিমা রান্না করতে করতে নজর রাখতে পারে। ২ ঘন্টা বসে থেকে হাঁটুতে ব্যাথা ধরে গেল। কিন্তু আমি একটু ভর দিয়ে বসতে গেলেই মামিমা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আমাকে পেয়ারা গাছের ডাল দিয়ে মারছিল। আমি নীল ডাউন হয়ে বসে যাচ্ছিলাম আবার।
কিছুক্ষণ পর পুজোর নতুন শাড়ি পড়ে ঊর্মির সব বন্ধুরা এল ঘুরতে যাওয়ার জন্য ঊর্মিকে ডাকতে। সবার সামনে মাথা নিচু করে আমি বসে রইলাম। সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাচ্ছে বুঝতে পারলাম। কিছুক্ষণ পর দেখলাম ঊর্মির অনেক বন্ধু দেখছে আর হাসছে। হয়ত ঊর্মি বলে দিয়েছে, কি জন্য শাস্তি পেয়েছি। এর মধ্যে মামিমা এসে আমাকে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে দিল। উঠবস করার সময় হয়ে গেছে।
আমি মাথা নিচু করে উঠবস করা শুরু করলাম। জীবনে এত অপমানিত কখন হইনি। দেখলাম ঊর্মির একটা বন্ধু হাসতে হাসতে ঊর্মির গায়ে পড়ে যাচ্ছে । একটা বাইশ বছর বয়সি ছেলে, একদল হায়ার সেকেন্ডারি মেয়ের সামনে উঠবস করছে।
মামিমা কিছুক্ষণ পর সবাইকে খেতে দিল পুজোর নাড়ু মোয়া। আমি খালি পেটে বসে রইলাম। হঠাত আমার খুব কান্না পেল। আমার মনে হল বাকি সবার সাথে আমার একটাই পার্থক্য । এদের সবার মা আছে। আমার মা নেই। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ আমার কাছে নেই। মাকে আমি খুব বেশিদিন পাইনি। কিন্তু জীবনের যে কটা দিনই সজ্ঞানে পেয়েছিলাম, সে সময়ের মায়ের উষ্ণ কোলের কথা মনে করার চেষ্টা করলাম। আর ফিস ফিস করে যেন আমার মৃত মাকে উদ্যেশ্য করে বললাম
– মা তুমি যেখানেই থাকো আমার এই অবস্থা থেকে দুঃখ পেয়ো না। একদিন আমি অনেক বড় হব মা। তোমার ছেলে একজন আর্টিস্ট মা। একজন আর্টিস্ট। আর দুঃখ না পেলে কখনো বড় আর্টিস্ট হওয়া যায় না।
আমি অনুভব করলাম আমার দু চোখ থেকে জল গড়াচ্ছে। একবার ফুঁপিয়ে অস্পষ্টভাবে মা কে ডেকে নিজেকে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। কাঁদা যাবে না। যার চোখের জল পৃথিবীতে কারোর কাছে মূল্য রাখে না, তাকে কাঁদতে নেই।
হঠাত দেখলাম ঊর্মির একটা বন্ধু বলল
– এই দাদাটা চুরি করেনি।
আমি অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে চোখ তুলে তাকালাম। দেখলাম মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটির চোখ ছলছল করছে। ও কি আমার ভেতরে যে রক্তটা ঝরছে সেটা উপলব্ধি করে ফেলেছে। হে ঈশ্বর! না …। আমি কারোর সহানুভূতি চাই না। সব যন্ত্রণা দাও, সব আঘাত দাও কিন্তু কারো সহানুভূতি দিও না প্লিজ। কারোর না। জাস্ট কারোর না ।।
আমি মাথা নামিয়ে নিলাম।
আমি জানতাম ইচ্ছে করলেই আমি ব্যাগ নিয়ে এই মুহূর্তে বেরিয়ে যেতে পারি কলকাতায়। কিন্তু আমি গেলাম না। শুধু মামার জন্য। যে নুন এতদিন খেয়েছি তার শোধ করে যেতে হবে বন্ধু। যে পাপ করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত করে যেতে হবে।
আমি পাথরের মূর্তির মত বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমার শাস্তিকালের সময়সীমা অতিক্রমের জন্য। আজকের পর এ বাড়ি আর আমার জন্য না।
এক বছর পরের কথা। আমি সেদিনের পর থেকে আর মামারবাড়িতে আর যায়নি। মামার থেকে একটা টাকাও আর নিই নি কখনো। কখনো ফোন ও করিনি একটাবারের জন্যও। স্ট্রাগল করা শুরু করেছিলাম মারাত্মকভাবে। কলেজের ফার্স্ট ইয়ার থেকেই আমার কাজের প্রশংসা সর্বত্র করা হত। আরও খাটতে যখন শুরু করলাম, কাজের আরও উন্নতি শুরু হল।
অয়নদা , অপুদিও খুব হেল্প করেছে। টিউশানি জোগাড় করে দিয়েছে। কখনও টাকা দিয়ে সাহায্য করেছে। সে ঋণ ভোলার না। অনেক ক্লাসমেটও করেছে। একদিন অপুদা বলল ,তুই এক্সিবিশান কর। তোর ছবি লোকে কিনবে , আমি সিওর।
প্রথম একটা সপ্তাহ শুধু এটা ভেবে কাটিয়ে দিলাম কি ছবি আঁকব? কি হবে আমার ছবির বিষয়? একদিন মাঝরাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মত একটা চিন্তা খেলে গেল। মনে পড়ল আয়নদার আঁকা সেই বিখ্যাত গর্ভধারিণী সিরিজের কথা। যাকে একটা সময় মানুষ খুব ভালোবাসে, সেই যখন নির্ম্মমতম আঘাত দেয়, তখন যে তীব্র ঘৃণা তৈরি হয় তা থেকেই গর্ভধারিণী সিরিজের মত ছবি আঁকা সম্ভব হয়।
আমি ছবি আঁকা শুরু করলাম । নাম রাখলাম “ন হন্যতে” । ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে একটা তরুণ পাথরের ওপর বিভিন্ন ভঙ্গিমায় নগ্ন হয়ে শুয়ে। তার পুরুষাঙ্গ উত্থিত হয়ে আছে। এক যৌনময়ি মহিলা চাবুক দিয়ে সেই ছেলেকে আঘাত করছে। মহিলা কখনো সায়া আর ব্লাউজ পড়ে আছেন। ব্লাউজের সব হুক খোলা।
কখনো বা মহিলা শুধু সায়া পড়ে আছেন। সায়াটার একদিক পুরো ছেড়া। আর হাওয়াতে তা উড়ছে। যোনিদেশে ঘন চুলের জঙ্গল দেখা যাচ্ছে। একটা ছবি জুড়ে শুধু দেখা যাচ্ছে মহিলা ছেলেটির মুখের ওপর বসে প্রসাব ত্যাগ করছেন।
প্রতিটা ছবিতে মহিলার মুখে মামিমার মুখটা কেটে বসানো।
তিন মাস রাত জেগে জেগে ছবি আঁকা শেষ করলাম । তারপর সাহস করে এক্সিবিশান নামিয়ে দিলাম। অভাবনীয় সাফল্য পেলাম কিছুটা ভাগ্যের জন্য। কাকতালীয় ভাবে কলকাতায় আসা একজন কানাডার টুরিস্টের পছন্দ হয়ে গেল ছবিগুলো। ভদ্রলোকের নাম গ্রেগ। উনি কানাডায় ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে থাকেন।
গ্রেগ ওখানকার একজন বেশ নামকরা ইন্টেরিয়ার ডেকরেটার। আমাকে বললেন আমার ছবি ওর জায়গায় খুব ভাল মার্কেট পাবে। গ্রেগ আমাকে সরাসরি কানাডায় ওর কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার জন্য অফার করলেন। আমি বললাম পরে সুযোগ পেলে নিশ্চয় চেষ্টা করব।
আমার সতেরো খানা ছবিই গ্রেগ কিনে নিলেন। পাঠক বন্ধুরা শুনলে আপনারা খুশি হবেন, ডলারগুলো যেদিন আমি আর অয়নদা টাকাতে ভাঙিয়ে নিয়ে এলাম আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
সবচেয়ে কম টাকায় গ্রেগ আমার যে ছবিটা কিনেছে তার দাম চল্লিশ হাজার। সব মিলিয়ে বারো লাখ টাকা আয় হয়েছে আমার। গ্রেগ যাওয়ার আগে বলে গেল – ইয়ং ম্যান এনি ডে ইউ আর ওয়েলকাম টু মাই প্লেস। জাস্ট গিভ এ কল।
সারারাত সেদিন আমি , অয়নদা, অপুদি , অপুদির আর রঞ্জন বলে আমার একটা বন্ধু সেলিব্রেট করলাম। ঠিক হল, আমরা গোয়া যাব সবাই মিলে। উৎসাহে টগবগ করতে লাগলাম। প্রথম এত বড় ট্যুরের প্ল্যান।
কিন্তু গোয়া যাওয়ার আগের দিন আমার একটা ফোন এল।ফোনটা ঊর্মির। আমি অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম ঊর্মি কিছু না বলতে পেরে কাঁদছে।
আমি বললাম কি হয়েছে ঊর্মি বল।
ঊর্মি বলল – শুভদা তুমি একবার তারকেশ্বর আসতে পারবে? বাবা তোমার সাথে একবার দেখা করতে চেয়েছে।
আমি বললাম – সেটা সম্ভব না ।
ঊর্মি বলল
– বাবা আর বাঁচবে না শুভদা। বাবার ক্যান্সার হয়েছে। লাস্ট ষ্টেজ ।
আমি গোয়া যাওয়া ক্যান্সেল করে সেদিন রাতেই তারকেশ্বর গেলাম।
আমি মামাকে দেখে চমকে উঠলাম। একি চেহারা হয়েছে। শরীরে যেন কিছু নেই আর। একটা কঙ্কাল পাতলা চামড়ার চাদর পরে শুয়ে রয়েছে।
আমি ঊর্মিকে চিৎকার করে বললাম – তোরা আমাকে এতদিন বলিসনি কেন? এখুনি অ্যাম্বুলেন্সে ফোন কর। আমি মামাকে অ্যাপেলো হসপিটালে নিয়ে যাব কলকাতায়।
মামা স্মিত একটা হাসল।
ক্ষীণ গলায় বলল
– আয় পাশে বস।
আমি বিছানয় মামার পাশে গিয়ে বসলাম।
ঊর্মি বলল
– আমরা এক সপ্তাহ আগে ভেলোর থেকে ফিরেছি।
আমার মুখটা কষ্টে ভরে গেল। ও তার মানে আমি কিছুই জানি না। আমাকে জানানোরও কেও প্রয়োজন বোধ করেনি।
মামা বলল
– লুকোচুরির কিছু নেই আর শুভ। ডক্টর স্বামি ইন্ডিয়ার সেরা ডাক্তার। উনি আমাকে বলেছেন, যা যা করার সব করে নিতে। ক্যান্সার লাস্ট ষ্টেজ এ। চিকিৎসার যদি কিছু করার থাকত তোকে নিশ্চয়ই বলতাম ।
আমার চোখ জল টলটল করতে লাগল।
মামা বলল
– তোকে কিছু বলার আছে শুভ । ক্যান্সারের ট্রিটমেন্টে সব গেছে রে। তোর মামিমাকে এত খরচ করতে বারণ করলাম। ও তো শুনল না। তবু তোর কলেজের শেষ বছরের জন্য কিছু টাকা ব্যাঙ্কে রাখা আছে। ওটা তুই নিয়ে নিস। বাকি তোকে আর কিছু দিয়ে যেতে পারলাম না রে।
আমি এটা শুনে আর থাকতে পারলাম না। বিছানায় ওপর আছড়ে পড়লাম ।
বললাম
– না মামা তুমি প্লিজ ছেড়ে যেও না। মা ছোটবেলায় যখন গেছে, বারণ করতে পারিনি । ছোট ছিলাম। আটকাতে পারিনি। তোমাকে আমি যেতে দেব না।
আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম।
মামা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল
– পাগল ছেলে আমার।
আমি বললাম
– আর তোমাকে টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না মামা। আমার ছবির এক্সিবিশান হয়েছে। সব ছবি বিক্রি হয়েছে। টোটাল বারো লাখ টাকা পেয়েছি।
মামা মুখ আনন্দে উজ্বল হয়ে উঠল। বাচ্চা ছেলের মত মামা হাততালি দিতে শুরু করল। ঊর্মিকে বলল
– তোর মাকে এখুনি ডেকে আন ঊর্মি।
মামিমা ঢোকার সাথে সাথে মামা বলল।
– কাবেরি , আমাদের শুভ কি করেছ শুনেছ? ওর সব ছবি বিক্রি হয়েছে । বারো লাখ টাকা পেয়েছে ও। আমি চিরকাল বলেছি শুভ কিছু একটা করবে। বংশের নাম উজ্বল করবে।
মামিমা আমার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলেন।
বললেন
– শুভ বাবা ভাল আছ ? আমাদের সব অবস্থা শুনেছ বাবা?
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।
মামিমা কে দেখলাম , মুখটা কেমন সাদা হয়ে আছে। বুঝলাম প্রচণ্ড স্ট্রেসের মধ্যে আছে। ভয়ানক যে দুর্যোগ নেমে এসেছে ওর জীবনে সেটা যেন মেনে নিতে পারছেন না।
মামিমা বললেন
– হাত পা ধুয়ে এস বাবা। তোমাদের রান্না করছি। তুমি মুরগি ভালবাসো বলে মুরগির ঝোল করছি। একটু পরে খেতে দিয়ে দেব। আর মামার সাথে কথা শেষ হলে একবার রান্নাঘরে শুনে যেও।
কিছুক্ষণ পর রান্নাঘরে গেলাম। মামিমা রান্না করছিলেন। আমাকে দেখে গ্যাসটা কম করে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালেন।
আমাকে বললেন
– একটু দরজাটা ভেজিয়ে দাও।
আমি দরজা ভেজিয়ে আসতেই মামিমা বললেন
– শুভ আমি জানি তুমি তোমার মামিমার ওপরে অনেক রেগে আছ।
– না, না । মামিমা।
– না শুভ মিথ্যে বল না। তুমি সেই যে গেলে আর একবারো আসোনি । একবার ফোন পর্যন্ত করনি। আমি জানি আমি খুব অন্যায় করেছিলাম বাবা। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও ।
আমি কিছু বললাম না। পুরনো সেই অপমানের কথা মনে পরতেই আমার মুখ শক্ত হয়ে গেল ।মামিমা আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন
– আমি কি ক্ষমার যোগ্য নই শুভ?
আমি কিছু উত্তর দিলাম না। মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলাম।
হঠাৎ মামিমা দুম করে আমার পায়ে পড়ে গেলেন। আমার পা ধরে আমার দিকে মুখ তুলে বললেন
– শুভ আমি কি আর তোমাদের মত এত শিক্ষিত ? মফস্বলের সাধারণ গৃহবধূ । আমাকে মাফ করে দাও। এরকম ভুল আর আমার কোনদিন হবে না বাবা । আমাকে ক্ষমা করে দাও ।
আমি বললাম
– ছিঃ ছিঃ । এটা কি করছ মামিমা।
হঠাত দেখলাম দরজাটা খুলে গেল। ঊর্মি “ মা …” বলে কিছু বলতে গিয়ে আমাদের দেখে থেমে গেল।
মামিমা বললেন
– আমি তোমার শুভদার সাথে একটু কথা বলছি ঊর্মি। তুমি একটু পরে এস ।
ঊর্মি “ ঠিক আছে মা ” বলে দরজা ভেজিয়ে আবার চলে গেল ।
আমি মামিমার কাঁধ ধরে মামিমাকে তুলে দাঁড় করালাম।
মামিমা আমার বুকে মাথা রেখে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগল। আমি মামিমার পিঠে হাত বুলিয়ে মামিমাকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। মামিমা বলল
– একবার বল শুভ একবার বল আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছ।
আমি শান্ত গলায় বললাম
– ঠিক আছে মামিমা। তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।
মামিমা শুনে আকুল হয়ে আমাকে দুহাত দিয়ে ধরে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলেন ।আমার শরীরে যেন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেল। এই প্রথম আমি মামিমার সাথে এতটা ঘনিষ্ঠ হলাম জীবনে। এর আগে পায়ের পাতা ছাড়া মামিমাকে স্পর্শ করিনি কখনো। আমি পিঠ থেকে আস্তে আস্তে হাতটা নামিয়ে মামিমার কোমরে রাখলাম। তারপর বললাম
– আর কেঁদো না মামিমা।
মামিমা আমার দিকে মুখ তুলে বলল
– এতদিনে আমার বুকের ছেলেকে আবার ফিরে পেলাম
খাবার টেবিলে অনেকদিন পর সবাই একসাথে খেতে বসলাম। মামাকেও ধরে ধরে বালিশ দিয়ে কোনভাবে বসানো হল।
মামা বলল
– শুভ , তুই দাঁড়িয়ে গেছিস। এর থেকে বড় আনন্দ আর আমি পাইনি। ওপরে গিয়ে তোর মাকে ফেস করতে আর আমার অসুবিধে হবে না।
আমি বললাম
– তুমি কোথাও যাচ্ছ না মামা।
মামা হাসল। বলল
– শুধু আমার একটা চিন্তা বাকি থেকে গেছে রে। ঊর্মির পড়াশুনোর কি হবে?
– কেন ?
– ও হায়ার সেকেন্ডারিতে তো খুব খারাপ রেজাল্ট করেনি। কোলকাতায় একটা ভাল কলেজে ইংলিশ হর্নাসে ও ভরতি হয়েছিল। কিন্তু আর যেতে পারেনি। দুম করে সব এসব ঘটে গেল। ও এখন এখানকার একটা কলেজেই ভরতি হয়েছে।
আমি বললাম
– আর চিন্তা করার দরকার নেই মামা। আমি কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিচ্ছি। সবাই যাব। ঊর্মি কলকাতার কলেজেই পড়বে। তোমার চিকিৎসাও আবার নতুন করে শুরু করাব।
– না না। আমার চিকিৎসার পিছনে আর পয়সা খরচ করিস না শুভ।
– তুমি কোন কথা বলবে না। মামিমা তুমি কাল থেকে খোঁজ নাও। এই বাড়িটা ভাড়া দিয়ে আমরা যত শিগগিরি সম্ভব চলে যাব।
– কিন্তু …
আমি মামাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম
– আর কোন কিন্তু নেই মামা। এটাই ফাইনাল।
মামা স্মিত হেসে বলল
– শুভ তুই এখন বাড়ির বড় ছেলে। তুই যদি বলিস এটা ভাল তাহলে তাই হবে।
মামা মামিমার দিকে তাকিয়ে বলল
– কাবেরি , বাবা যখন ছিলেন তখন আমরা ওঁর কথা শুনে চলে বড় হয়েছি। তারপর তোমরা এতদিন আমাকে মেনে এসেছ। আমি চাই আজ থেকে তুমি আর ঊর্মি শুভকে মেনে চলবে। কারণ শুভই এখন আমাদের বাড়ির প্রধান। ও শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত । ওই তোমাদের খেয়াল রাখবে।
আর শুভ আমি তোমাকে বলছি, তোমার মামিমা তোমার থেকে বয়সে বড়। প্রয়োজনে অবশ্যই পরামর্শ নেবে। কিন্তু আমি চাই বাড়ির শেষ ডিসিশান তুমিই নেবে। দরকার পড়লে ঊর্মিকে তো বটেই তোমার মামিমাকেও শাসন করবে।
এর এক সপ্তাহ বাদে আমরা সবাই কলকাতায় চলে এলাম। যাদবপুরে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিলাম। ঊর্মি সাউথ সিটি কলেজে ক্লাস শুরু করে দিলও। কলকাতার বেস্ট অঙ্কলজিস্টের আন্ডারে মামাকে ভরতি করলাম। কিন্তু মামা এক মাসের বেশি বাঁচলেন না। আমি প্রকৃত অর্থে এবার অনাথ হলাম।
দু তিন সপ্তাহ আমি পুরো অন্ধকারে ডুবে রইলাম। বাড়িটাও পুরো শ্মশানের মত হয়ে গেছিল। কিন্তু শত দুঃখেও জীবন থেমে থাকে না। জীবন এগিয়ে যায়। আস্তে আস্তে নিজেকে রিগেন করার চেষ্টা করলাম। সংসারের দায়িত্ব এখন আমার কাঁধে।
(অসমাপ্ত)