Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুপ্তির সন্ধানে
পর্ব তিন (#8-#18)

 
দিন দিন অফিসে কাজের চাপ বেড়ে চলেছে। মাঝে মাঝে তিতলিকে বলেই দেই যে আমি কলেজে যেতে পারব না। ওর কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। মাঝে মাঝে অফিসেই চলে আসতো তিতলি, কিন্তু কয়েকদিন কাজের চাপের ফলে অফিস থেকে বের হতে দেরি হয়েছিল। ওকে বাড়িতে পৌঁছে দিতেও দেরি হয়ে গেছিল। সেই থেকে অফিসে আসাটাও ওর বন্ধ করে দিলাম। আমাদের দেখা শুধু মাত্র ওই মঙ্গল, বৃহস্পতি আর শনিবার, কম্পিউটার ক্লাসে। সারা সপ্তাহে হয়ত শুধু মাত্র তিন চার ঘন্টার জন্য দেখা হত কিন্তু ওই তিন থেকে চার ঘন্টা আমাদের কাছে অনেক ছিল। মঙ্গলবার আর বৃহস্পতিবার শুধু মাত্র ওকে বাড়িতে ছাড়তে যাওয়াটাই হত। তবে আমরা শনিবারের জন্য সারাটা সপ্তাহ বসে থাকতাম। বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরার পথে জল্পনা কল্পনা করতাম যে শনিবার কি করব। একদিন বাড়ি ফেরার পথে ওকে বললাম, যে শপিং করতে যাবো। ব্যাস বেঁকে বসলো ললনা। তুমি যাও, যা কেনার তুমি কেনো।
 
আমি ওকে বুঝিয়ে বললাম, “এই দেখো, যখন তুমি নিজের বাড়ি সাজাবে, তখন তোমাকে পছন্দ করেই জিনিস পত্র কিনতে হবে তাই না?”

চুপচাপ বাইকের পেছনে বসে সায় দিয়ে মাথা দুলিয়ে বলল, “সেটা তো বুঝলাম, কিন্তু ওই ভিড়ের মধ্যে...”

আমি ওকে আসস্থ করে বললাম, “তোমাকে ভিড় দেখতে হবে না। তুমি আমার হাত ধরে থাকবে।”

মাথা নাড়ল তিতলি, “না গো ভীষণ ভয় করে।”

আমি ওকে বুঝিয়ে বললাম, “কিসের ভয়?”

তিতলির চোখ জোড়া কিঞ্চিত ব্যাথায় ভরে গেল, “সবাইকে কেমন যেন ভুতের মতন মনে হয়। যেন সবাই আমাকে পিষে দেওয়ার জন্য আমার দিকে হাত বাড়িয়ে।”

আমি ওকে বললাম, “আচ্ছা মনে আছে, আমরা গঙ্গায় ওই নৌকায় বসেছিলাম।” সায় দিল তিতলি। আমি ওকে বললাম, “নৌকা দুলছিল, চারপাশে কত লোক ছিল, তুমি ভয় পেয়েছিলে?”

মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, “তুমি ছিলে তো আমার পাশে।”

আমি ওকে বললাম, “এবারেও তো থাকব। আমি তো পাশ ছেড়ে যাচ্ছি না কোথাও।”

তিতলি একটু ভেবে আমাকে বলল, “তবে এই শ্যামবাজার হাতিবাগান যাবো না কিন্তু।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কেন?”

উত্তর এলো, “আরে এখানে উইক এন্ডে আমাদের পাড়ার অনেকে চলে আসে শপিং করতে। কারুর সামনে পড় গেলে মুশকিলে পরে যাবো। তার চেয়ে ভালো, গরিয়াহাট অথবা এস্প্লানেড চল।”
 
যথারীতি প্রেয়সীর আদেশ অনুযায়ী সেই শনিবার ক্লাসের পরে ওকে নিয়ে গরিয়াহাটে গেলাম। কেনার কিছুই ছিল না, আমার আসল উদ্দেশ্য ছিল ওর ভেতর থেকে ভিড়ের ভয়টাকে কম করার। একটা রাস্তার মধ্যে বাইক রেখে রাস্তায় বেড়িয়ে আসতেই দেখি জন সমুদ্রের ঢল। রাস্তার দুইপাশে ফুটপাথের ওপরে রকমারি দোকান। দোকানের সামনে দোকান। ফুটপাথে মানুষ চলার মতন জায়গা কম, দোকানেই ভর্তি আর সেই সব দোকানে যারা কিনতে এসেছে তাদের ভিড় বেশি। ভয়ে কুঁকড়ে গেল তিতলি, আমার হাত শক্ত করে আঁকরে ধরে বলল, বাড়ি চল। আমি ওর মাথা নিজের দিকে করে নিয়ে বললাম, একটা বিছানার চাদর কিনে চলে যাবো।
 
তিতলি আমাকে জিজ্ঞেস করল, “কি রঙের কিনবে?”

আমি ওকে মুখ ব্যাজার করে বললাম, “এই সবুজ বা হলদে, যা একটা রঙ পেলেই হল।”

মুচকি হাসি দিল তিতলি, “ইসস, সাদা রঙের বিছানার চাদর কেউ বাড়ির জন্যে কেনে নাকি? ওইগুলো হসপিটালে মানায়।”

আমি অগত্যা ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার কি ধরনের পছন্দ?”

মাথা দুলিয়ে উত্তর দিল, “দেখতে হবে, এইভাবে বলা যায় নাকি? তবে হ্যাঁ, একটা বড় দোকানে ঢোক, ছোট দোকান গুলোতে প্রচন্ড ভিড়।”


এই ভিড়ের সাথেই আলাপ পরিচয় করাতে এনেছিলাম, যাই হোক প্রথমবার তাই বেশি জোরাজুরি করলাম না। একটা বেশ বড় দোকানে ঢুকলাম বিছানার চাদর কিনতে। দোকানটা অন্য দোকানের তুলনায় একটু ফাঁকা ছিল। আমাদের ঢুকতে দেখেই দোকানি বেশ আময়িক হেসে এগিয়ে এলো, জিজ্ঞেস করল কি চাই। বিছানার চাদর বলাতে দোকানি একটার পর একটা বিছানার চাদর দেখাতে শুরু করে দিল। প্রথম দিকে আমার পাশ ঘেঁষে বিছানার চাদর দেখছিল, ঠিক পছন্দ হচ্ছিল না একটাও। লাল, সাদা, হলদে ইত্যাদি। প্রেয়সীর পছন্দ আর হয় না, প্রশ্নে প্রশ্নে জের বার করে তুলল দোকানিকে, আচ্ছা বাটিক প্রিন্টের কিছু দেখান তো, বান্ধনি আছে কি? এপ্লিকের কাজের কোন চাদর আছে? ওই রাজস্থানি প্রিন্টের আছে? আচ্ছা কাঁথা স্টিচের কোন চাদর দেখান তো? আমি ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। আমি ওর কানে ফিসফিস করে বললাম, তুমি দেখো আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে আসছি। তিতলি মিষ্টি হেসে বলল, তাড়াতাড়ি এসো। আসলে আমার সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছে ছিল না, শুধু দেখতে চাইছিলাম, একা একা দোকানে বসে কি করে। আমি দোকান থেকে বেড়িয়ে এলাম। কাঁচের দরজার ভেতরে চোখ ছিল আমার। রূপসী একের পর এক চাদর বেছে চলেছে আর দাম জিজ্ঞেস করে চলেছে। বুঝে গেলাম, প্রজাপতি পাখনা মেলে দিয়েছে নীল গগনে। বেশ কিছু পরে আমার ডাক এলো। দুটো বেশ সুন্দর বিছানার চাদর পছন্দ করল তিতলি। দাম মিটিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম।
 
বাইকে বসে আমাকে আঁকরে ধরে ফিসফিস করে বলল, “তুমি কি ভাবো, আমি কিছু বুঝি না?”

আমি অবাক হওয়ার ভান করে বললাম, “কি বলতে চাইছ?”

আমার ঘাড়ের ওপরে নাক ঠোঁট ঘষে বললে ললনা, “অত সরল সাজতে হবে না।” বলে দুই হাতে আমার ছাতি আঁকরে ধরে ফিসফিস করে বলল, “আমার ভয় কাটানোর জন্য তুমি আমাকে এখানে এনেছ তাই না? ওই সব বিছানার চাদর টাদর তোমার কোন কিছুর দরকার ছিল না, তাই না।”

ধরা পরে গেছি রূপসীর কাছে, সায় দিয়ে মাথা দুলিয়ে বললাম, “তাই যদি না বলতাম তাহলে কি আর তুমি আসতে নাকি?”

আমাকে তিতলি বলল, “তুমি জানো এই মানুষের ভয় কাটানোর জন্য কত কাউন্সিলিং করিয়েছে আমাকে? সেই ছোট বেলায় জোর করে নিয়ে যেত আমাকে বাজারে। বড় হওয়ার পরে আর যেতাম না কোনদিন। এতদিন আমার সব জামা কাপড় মা পছন্দ করেই কিনে নিয়ে আসতো।”

আমি অবাক হয়ে বললাম, “তোমার ওই ফ্রক, সালোয়ার কামিজ, তুমি কোনটাই পছন্দ করনি?”

মাথা নাড়ল তিতলি, “না, খুব কম। ওই নাগের বাজারে একটা চেনা দোকান আছে সেখানেই যেতাম এতদিন। আমার পুজোর বাজার ওখান থেকেই করা হয়।”

আমি ওকে বললাম, “তাহলে এবারে আমি তোমাকে একটা কিনে দেই?”

মিষ্টি হেসে বলল তিতলি, “ফালতু ফালতু বিছানার চাদরে পাচ’শ টাকা খরচ করলে। পরে একদিন কেনা যাবে।”

আমি ওকে হেসে বললাম, “ফালতু কেন, আজ না হলেও কাল তুমি বাড়ির জন্য বিছানার চাদর কিনতেই। সেটা আগামী কাল না হয়ে আজকে হয়ে গেছে।”

হেসে ফেলল তিতলি। তারপরে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা তোমার দাদা বউদি আমাদের ব্যাপারে জানে?”

আমি মাথা নাড়লাম, “না এখন বলা হয়নি দাদা বউদিকে।”
 
ভাবলাম এবারে হয়ত সময় এসেছে হোঁৎকা আর তোতাপাখিকে জানানোর। নিজের আত্মীয় বলতে মামা মামি আর হোঁৎকা আর তোতাপাখি। একজন পিসি আছেন জানি কিন্তু তার পরিচয় জানি না অথবা আর মনে নেই। বাবা চলে যাওয়ার পরে তিনিও আমার খোঁজ নেননি আমিও সেই পরিচয় হারিয়ে ফেলেছি।
 
তিতলি জিজ্ঞেস করল, “তোমার বাবাকে জানাবে না?”

নাতি বাচকে মাথা নাড়লাম আমি, “মামা মামীর কাছেই বড় হয়েছি। তারা জানলেই হল। মিস্টার ঘোষকে জানিয়ে কোন লাভ নেই।”

কথাটা ঠিক পছন্দ হল না তিতলির, প্রশ্ন করল, “তুমি বাবাকে বাবা বলে ডাকো না?”

আমি মাথা নাড়লাম, “দেখো তিতলি, সেই পরিচয় পর্ব আমার মায়ের সাথে মায়ের চিতায় জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।”

তিতলি কিছু একটা বলতে চাইল, “তাও...”

ঠান্ডা গলায় উত্তর দিলাম ওকে, “মিস্টার ঘোষকে নিয়ে তোমার কিসের দরকার? আমার মামা মামি আছেন, দাদা বৌদি আছেন। ব্যাস। এর বেশি আত্মীয় সজ্জন আমার নেই।”
 
তিতলি এই বিষয়ে আর বেশি কথা বাড়াল না। আমার গলা শুনে হয়ত বুঝে গিয়েছিল যে বাবার সম্বন্ধে কথা বলাতে আমি ক্ষুদ্ধ হয়ে গেছি। মেজাজটা শেষের দিকে আর ভালো ছিল না। দুইজনে চুপচাপ বাড়ি ফিরে এলাম। তবে সেদিন আমার পক্ষে একটা মস্ত বড় উপলব্ধি, তিতলিকে নিয়ে ভিড় ভর্তি বাজারে গিয়ে বাজার করতে পেরেছি। একা একা দোকানে বসে বিছানার চাদর কিনেছে।
 
বাইক থেকে নেমে আমার পাশে বেশ কিছুক্ষন হাসি মুখে দাঁড়িয়ে বলল, “তুমি না ভীষণ শয়তান। আজকে আরো অনেক কিছুই গোলমাল করে দিলে।”

আমি মুচকি হেসে মাথা দুলিয়ে বললাম, “প্রজাপতি উড়তে শিখছে, এর থেকে বড় পাওনা আর কি আছে আমার বল।”
 
মিষ্টি হেসে চলে গেল তিতলি। আমি সেই রাতেই দুর্গাপুর ফোন করলাম।
 
হোঁৎকা ফোন তুলে প্রতিবারের মতন দাদা সুলভ কন্ঠে প্রশ্ন করে, “কাজ কর্ম অফিস ভালো চলছে তো?”

সায় দিয়ে বললাম, “হ্যাঁ। তুই তোতাপাখিকে ফোন দে।”

হেসে ফেলল হোঁৎকা, “কেন রে, নতুন কাউকে পছন্দ হয়েছে নাকি?”

নাতি বাচকে মাথা নেড়ে উত্তর দিলাম, “না রে সেই পুরানো প্রেম।”

হোঁৎকা অবাক সুরে বলল, “বলিস কি? তারপরে?”

আমি ওকে বললাম, “তুই তোতাপাখিকে ফোন দে আগে।”

তোতাপাখি ফোন ধরেই প্রান খোলা হাসি হেসে বলল, “আমি আগেই বলেছিলাম গেছো। তোমার চোখ জোড়া যেভাবে ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল সেই দেখেই আমি বুঝে গেছিলাম যে তুমি ওকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। কবে দেখা করাচ্ছ? কবে প্রস্তাব দিলে? কোথাও নিয়ে গেছিলে? ওহ আচ্ছা তিতলি তো একটু ক্লস্ট্রোফোবিক। যাই হোক গেছো তুমি ওর ভয় ডর ঠিক করিয়ে দেবে আমি জানি। কিছু উপহার কিনেছ ওর জন্য?”

এক নিঃশ্বাসে এত কথা শুধু মাত্র তোতাপাখির দ্বারাই সম্ভব। আমি উত্তরে বললাম, “তোমরা ছাড়া আমার তো আর কেউ নেই তাই তোমাকে না বলে কি করে থাকি?”

চুপ করার পাত্রী নয় তোতাপাখি, “আচ্ছা বেশ এই শুক্রবার তোমার দাদাকে বলব। আমরা আসছি কোলকাতা। শনিবার তাহলে তোমার ক্লাসের পরে কোথাও লাঞ্চে যাওয়া যাবে।”

আমিও বললাম, “হ্যাঁ ভালো হয়। মানে মামা মামিকে বলার আগে একবার তোমাদের সাথে পরিচয় হলে ভালো হয়।”

তোতাপাখি মুচকি হেসে বলল, “বেশ ভালো জুটি মিলেছে তোমাদের। তিতলিও আগে কথা বলতে জানত না আর গেছো আগে কথা বলতে জানত না। এবারে দুইজনে মিলে কত কথা বলে দেখব।”

সত্যি বলতে এই কথাটা কোনদিন মাথায় আসেনি আমার। আমি হেসে ফেললাম, “তিতলিও কিন্তু বেশ কথা বলে। তোমার সাথে জমবে ভালো।”
 
পরিকল্পনা মতন সেই শুক্রবার হোঁৎকা আর তোতাপাখি কোলকাতা পৌঁছে গিয়েছিল। আমি তিতলিকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে শনিবার ক্লাসের পরে দাদা বৌদির সাথে দেখা করাব। তিতলি ভীষণ উত্তেজিত, আচ্ছা তোমার বৌদি কেমন? তোমার দাদা কেমন? রাগি না তো? আমি হেসে ওকে বললাম, না না আমার দাদা বৌদি একদম মাটির মানুষ। বৌদি ভীষণ মিষ্টি, তোমার মতন খুব গল্প করতে ভালোবাসে।
 
শনিবার ক্লাসে তিতলিকে দেখে সবাই অবাক। সবুজ পাড়ের চওড়া আঁচলের ঘিয়ে রঙের একটা শাড়ি পরে এসেছে, সাথে সবুজ রঙের ব্লাউজ। বাম কাঁধে আঁচল আর ডান কাঁধে একটা নীল রঙের শাল। প্রত্যেকবারের মতন মুখমন্ডলে বিশেষ কোন প্রসাধনীর প্রলেপ নেই শুধু মাত্র কপালে একটা ছোট টিপ আর ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি লিপস্টিক ছাড়া। ক্লাসের সবাই অবাক হয়েই ওর দিকে তাকিয়ে আর আমার বুক আমার সুন্দরীর সাজ দেখে গর্বে ফুলে ওঠে। শাড়ি পরে আসতে আমি বলিনি কিন্তু তিতলির নির্মল নিষ্পাপ চরিত্রের সাথে এই শাড়ির রঙ ভীষণ ভাবেই মিশে গেছে। অনির্বাণ হাঁ করে তিতলির দিকে তাকিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার রে? এযে মারাত্মক সাজ, সাক্ষাৎ দেবী লক্ষ্মী। আমি মৃদু হেসে বললাম, আজকে দাদা বৌদির সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাবো তাই। সারাটা ক্লাস মুচকি মুচকি হেসে আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ছিল তিতলি।
 
ক্লাসের বাইরে বেড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “ঠিক আছে তো?”

আমি কি বলে ওর রূপের প্রশংসা করব ভেবেই পেলাম না, “দারুন দেখাচ্ছে, একেবারে পুরো বৌমা হয়ে গেছ।”

বুকের উপরে আলতো চাঁটি মেরে বলল, “যাহ্‌, তোমার না সবেতেই বাড়াবাড়ি। আচ্ছা তাহলে কোথায় যাচ্ছি?”

আমি ওকে বললাম, “দাদা বৌদি কিছুক্ষনের মধ্যে এখানেই এসে যাবে তারপরে ঠিক করব কোথায় যাওয়া হবে।”
 
কিছুক্ষনের মধ্যে হোঁৎকা আর তোতাপাখি, আমাদের ইন্সটিটিউটে পৌঁছে গেল। তোতাপাখিকে দেখতে এমনিতেই ভীষণ সুন্দরী, তার ওপরে গোলাপি রঙের শাড়িতে আরো সুন্দরী দেখাচ্ছিল। তিতলির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই প্রবালদার পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম ঠুকে দিল। তোতাপাখিকেও প্রনাম করতে যাচ্ছিল তিতলি।
 
তোতাপাখি হাঁ হাঁ করে উঠলো, “এই না না, তুমি করছ কি?” তিতলিকে জড়িয়ে ধরে থুঁতনি নাড়িয়ে আদর করে বলে, “বাহ বাঃ আমার গেছোর পছন্দ আছে।”
 
লজ্জায় মাথা নিচু করে আমার বাজু শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে তিতলি। আমার সাথে এই প্রথমবার কোন অচেনা মানুষের সাথে দেখা করতে গেছে। ঠিক হল এস্প্লানেডের নিজামে যাওয়া হবে। তোতাপাখি তিতলিকে ছাড়বে না, তিতলি আমায় ছাড়া যাবে না। তিতলি একটু দোনামনা করতেই, ততাপখি ওকে বলল, এখন থেকেই পকেটে পুরে রেখেছ? এরপর আঁচল ছাড়বে তো? তিতলি আরো লজ্জা পেয়ে গেল তোতাপাখির কথা শুনে। হোঁৎকা, তোতাপাখি আর তিতলি একটা ট্যাক্সি করে যাত্রা শুরু করল, আমি ওদের ট্যাক্সির পেছনে বাইক নিয়ে যাত্রা শুরু করে দিলাম।
 
আমি ওদের আগেই নিজামে পৌঁছে গেছিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই ওদের ট্যাক্সি পৌঁছে গেল। ট্যাক্সি থেকে দুই সুন্দরী নেমে এলো। দেখলাম, তোতাপাখি আর তিতলি বেশ মিশে গেছে। আমার দিকে এমন ভাব নিয়ে তাকাল তিতলি যেন আমাকে চেনেই না। দুই সুন্দরী হেসে হেসে গল্প করতে করতে রেস্টুরেন্টের মধ্যে ঢুকে পড়ল। আমি আর হোঁৎকা ওদের পেছন পেছন ঢুকে একটা টেবিলে বসে পড়লাম। অনেক পুরানো রেস্তোরাঁ, তেমন আহামরি বাহারের চেয়ার টেবিল নয়। কিন্তু এদের কাবাব কাঠি রোল আর বিরিয়ানি বিখ্যাত। টেবিলের একদিকে আমি আর তিতলি পাশাপাশি বসে অন্যপাশে হোঁৎকা আর তোতাপাখি। সামনে দাদা, তাই সন্মান বজায় রেখে আমার গা ঘেঁষে বসেনি তিতলি। টেবিলের তোলা দিয়ে ডান হাত দিয়ে আমার বা হাতটা চেপে ধরেছিল। হাতটা ধরেই বুঝতে পেরেছিলাম তিতলি ভীষণ উত্তেজিত, হাতের রোমকূপ কাটা দিয়ে উঠেছে। আমি ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে।
 
কানে ফিসফিস করে বলল, “কেমন একটা লাগছে জানো। ঠিক বুঝাতে পারছি না।”

কাঠি কাবার রোল খেতে খেতে তোতাপাখি আমাদের দিকে দেখে বলল, “তুমি বলছিলে ওর নাকি ক্লোস্ট্রোফোবিয়া আছে?” লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল তিতলির। তোতাপাখি মুচকি হেসে তিতলিকে বলল, “ও সব বাজে কথা। কে বলেছে তোমাকে?”

মুচকি হেসে উত্তর দিল তিতলি, “সত্যি বলছি কিছুদিন আগে পর্যন্ত ছিল। এই তোমরা দেওরের পাল্লায় পরে পালিয়ে গেছে।”
 
দুই সুন্দরীর গল্পের মাঝে আমি আর হোঁৎকা চুপ। একজন তার কলেজের গল্প করে চলেছে, বাচ্চাদের কলেজ, কোন টিচার কি করে ইত্যাদি, অন্যজনে নিজের কলেজের গল্প শুরু করেছে। এর মাঝে হোঁৎকা আমাকে একবার মনে করিয়ে দিল ডিভিসেতে এপ্লাই করার ব্যাপারে। দুর্গাপুর যাবো শুনে তিতলি আশ্চর্য হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। হোঁৎকা ওকে বুঝিয়ে বলল, যে কম্পিউটার শেষ হওয়ার পরে ওদের বাড়িতে কথা বলতে যাবে মামা মামি। কালো মেঘের ছায়া ঘনিয়ে এলো তিতলির চোখের কোনায়। তবে বুদ্ধিমতী ললনা সঙ্গে সঙ্গে মৃদু মিষ্টি হাসিতে সেই মেগেহ্র ছায়া ঢেকে দিল। কেউ না বুঝতে পারলেও আমি ওর ভীতি অনুধাবন করতে পেরেছিলাম। টেবিলের নিচ দিয়ে ওর হাত চেপে ওকে আসস্থ করেছিলাম। তোতাপাখি একটা সোনার চেন ওকে উপহার দিয়েছিল। তিতলি কিছুতেই সেটা নেবে না, এই হার ওর বাড়িতে যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে খুব মুশকিলে পরে যাবে। বেশ অনেকক্ষণ গল্প গুজব করে, বাড়ি ফেরা হল।
 
ফেরার পথে তিতলি আমাকে তোতাপাখির দেওয়া হার ফিরিয়ে দিয়ে বলল, “আদি তুমি বুঝতে পারছ না। মা অথবা বাবা এই হার দেখলে অনেক প্রশ্ন করবে। তখন ভীষণ কেলেঙ্কারি অবস্থা হয়ে যাবে।”

আমি ওকে আসস্থ করে বললাম, “আচ্ছা, এটা এখন আমার কাছে থাক। পরে যখন সময় হবে নিয়ে নিও।”

আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তোমার বৌদি ভীষণ সুন্দরী গো। সারাদিন ওর কাছে বসে থাকলেও এক ঘেয়েমি লাগবে না।”

আমি হেসে ফেললাম, “তাই তো আমি ওর নাম দিয়েছি তোতাপাখি।”
 
হেসে ফেলল তিতলি। সেদিন রাতে তিতলিকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে, মামাবাড়ি ফিরে গেছিলাম। হোঁৎকাকে এখুনি মামা মামিকে সব কিছু বলতে বারণ করে দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, যে আগে তিতলির কলেজ শেষ হোক, আমি ওর বাবার সাথে আগে কথা বলব, তারপরে মামা মামিকে নিয়ে না হয় ওদের বাড়ি যাওয়া যাবে। তোতাপাখি তিতলিকে পেয়ে খুব খুশি, গল্প করার একটা সাথী পেয়ে গেছে। তোতাপাখি অবশ্য তারপর থেকে প্রায় ফোনে তিতলির খবর নেয়। সারা সপ্তাহে আমার সাথেই খুব কম দেখা হয় তাও খবর দিতে হয়, ভালো আছে।



============ পর্ব তিন সমাপ্ত ============
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 14-01-2021, 11:07 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by pinuram - 26-01-2021, 02:41 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 07-02-2021, 12:55 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 07-02-2021, 01:06 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 02:00 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 08:42 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 08:45 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 09-02-2021, 12:15 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 09-02-2021, 08:38 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 10-02-2021, 01:32 AM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 12-02-2021, 12:03 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 14-02-2021, 02:45 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 18-02-2021, 05:02 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 24-02-2021, 05:46 PM



Users browsing this thread: 53 Guest(s)