24-01-2021, 01:33 PM
পর্ব তিন (#7-#17)
সেদিন ক্লাসের শেষে বাড়ি ফেরার সময়ে তিতলি আমাকে বলল যে পরের সপ্তাহে ওর বান্ধবী পারমিতার জন্মদিন সেখানে যেতে চায়। আমি বললাম, যাও ক্ষতি কি? আমাকে ছাড়া রূপসী নড়বে না, বায়না ধরল, এর আগে কোনদিন কারুর জন্মদিনের পার্টিতে যায়নি। প্রথমবার কারুর জন্মদিনের পার্টিতে যেতে চায়, আমাকেও সঙ্গে যেতে হবে। আমি পড়লাম মহা সমস্যায়, পারমিতার সাথে সেই ভাবে পরিচয়ের অবকাশ হয়নি। ওকে জানাতেই তিতলি বলল, পারমিতা নাকি আমাকেও আমন্ত্রন জানিয়েছে। অগত্যা তাহলে যেতেই হয়।
শনিবার বিকেলে পারমিতার বাড়িতে ওর জন্মদিনের পার্টি। দুপুরে ক্লাসের পরে তিতলিকে বাড়িতে নামিয়ে দিলাম। জানিয়ে দিল, বিকেল ছটার মধ্যে যেন রাস্তার মোড়ে চলে আসি। যথারীতি রাজ্ঞীর আদেশ অনুযায়ী রথ নিয়ে সারথি পৌঁছে গেল। পরনে টকটকে লাল রঙের বেশ ঘের দেওয়া হাঁটু ছাড়িয়েও লম্বা স্কারট, কোমরে মোটা একটা বেল্ট দিয়ে বাঁধা আর সাদা একটা শার্টের মতন জামা। আমার দেওয়া কানের দুল ওর কানে। জানুয়ারি মাস হলেও তেমন ঠান্ডা নেই, তবে বাইরে বের হলে একটু ঠান্ডা লাগে তাই একটা ছোট লাল রঙের উলের স্টোল গায়ে জড়িয়ে নিয়েছিল। ফর্সা গায়ের রঙের সাথে পোশাক দারুন মানিয়ে গেছে। মাথার চুল একপাশে করে আঁচড়ানো। ওর গোলাপি গাল দুটো দেখে আমার হাত দুটো ভীষণ ভাবেই নিশপিশ করছিল। মনে হচ্ছিল দুই হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে টোপা গালের ওপরে একটা চুম্বন এঁকে দেই।
আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেছিল। আমাকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে এসে আমার বাজুতে একটা ছোট চাঁটি মেরে অভিমানী কন্ঠে বলল, “এত দেরি করতে আছে? আমার একা একা দাঁড়াতে কেমন যেন লাগছিল জানো।”
আমি আশেপাশের লোকজনকে দেখলাম, সুন্দরী মেয়েদের যেন এরা কোনদিন দেখেনি এমন ভাবে তিতলির দিকে তাকিয়ে। কয়েকজনার দিকে বেশ রোষকষিত ভাবেই তাকাতে তারা চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল। সত্যি এইভাবে ওকে এখানে একা দাঁড় করিয়ে রাখা উচিত হয়নি। কি করব, অফিসে যখন যায় তখন রিসেপসানে বসে থাকে তাই এইভাবে ওকে কোথাও দাঁড়াতে হয়না। অফিসের মোটামুটি সবাই জেনে গেছে একজন আসে। আমিও মুচকি হাসি ওদের কথা শুনে।
আমি নিজের কান ধরে ওকে বললাম, “সরি বাবা। তা তুমি এই ভাবে সাজলে তোমাকে দেখে তো সবাই পাগল হয়েই যাবে।”
লাজুক হেসে আমার হাত থেকে হেলমেট নিয়ে পড়তে পড়তে আমাকে বলল, “বেশিক্ষন থাকব না কিন্তু।”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কেন?”
উত্তর দিল, “ন’টার মধ্যে বাড়িতে না ফিরলে বাবা আবার বকাবকি শুরু করে দেবে।”
বুঝলাম অনেক কড়াকড়ি বাড়িতে। আমি হেসে বললাম, “মুফাসাকে কি বললে?”
হেসে ফেলল তিতলি, “একটু বলে কয়ে ম্যানেজ করতে হয়েছে। প্রথমে বলছিল যে ড্রাইভার গাড়ি করে ছেড়ে আসবে, আমি বললাম ট্যাক্সি করে চলে যেতে পারব।”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কেমন পার্টি?”
মুচকি হেসে উত্তর দিল, “আমি কি করে জানবো কেমন পার্টি। আমি কোনদিন কোন বন্ধু বান্ধবীর পার্টিতে যাইনি। এই প্রথমবার যাচ্ছি। তাও তুমি না থাকলে যেতাম না। আসলে কি জানো, পারমিতার জন্মদিন গত সপ্তাহে হয়ে গেছে। আজ ওর বাড়িতে বাবা মা নেই, বাড়ি খালি তাই বন্ধুদের নিয়ে পার্টি হবে।”
জিজ্ঞেস করলাম, “পার্টিতে কি শুধু খাওয়া নাকি পানীয় আছে?”
দুম করে মিষ্টি একটা কিল মারল আমার পিঠে, “তুমি আমার সামনে ড্রিঙ্ক করবে?”
আমি ঘাড় বেঁকিয়ে তিতলির নরম হাতের ওপরে গাল ছুঁইয়ে বললাম, “নেশা তো অনেক আগেই লেগেছে।” মান্না দের একটা গান গেয়ে উঠলাম, “যখন নেশায় আমার রাস্তা টলে, কেউ আমাকে মাতাল বলে, আমি সোজা চলে যাই দেখিয়ে... যখন তুমি আমায় মাতাল বল...”
আমাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে গেয়ে উঠল তিতলি, “মরনদশা, পুরো পাগল আমি...”
জিজ্ঞেস করলাম, “কোন প্রেসেন্ট কিনেছ, নাকি খালি হাতে?”
জিব কেটে বলল, “এ যাহ্, সত্যি কিছুই কিনিনি গো। দাঁড়াও দাঁড়াও।”
লেকটাউনে ঢুকে একটা দোকান থেকে একটা সোপিস কেনা হল। সেই সাথে একটা কার্ড আর একটা চকোলেট। কিছুক্ষনের মধ্যেই পারমিতার বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। পাইকপাড়া টালাপার্কের কাছে পারমিতাদের বাড়ি। পারমিতার বাড়ি পৌঁছাতে আমাদের একটু দেরি হয়েই গেছিল। দুতলা বাড়ি, নিচের তলায় ভাড়া থাকে। বাড়ির মধ্যে ঢুকে দেখলাম, অনেক ছেলে মেয়ে ভর্তি। সবার পরনে উপযুক্ত পার্টি পোশাক, শুধু মাত্র তিতলির পোশাক লম্বা, বাকি মেয়েদের পোশাক আশাকে বেশ আধুনিকতার ছাপ স্পষ্ট। কোন মেয়ের পোশাক হাঁটুর নিচে নয় শুধু মাত্র তিতলির স্কারট ছাড়া। আমার বাজু দুই হাতের মধ্যে চেপে ধরে রইল তিতলি। আমাদের ঢুকতে দেখে পারমিতা একগাল হেসে এগিয়ে এলো।
তিতলির হাত দুটো ধরে বলল, “বাপরে তোর সময় হল।” আমার দিকে দেখে বলল, “নিয়ে আসতে পারলে তাহলে।”
আমি অবাক হয়েই ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “আমি কেন নিয়ে আসব, ওই আমাকে নিয়ে এলো।”
মুচকি হাসল পারমিতা, “তুমি জানো না। এই প্রথমবার আমাদের কোন বন্ধু বান্ধবীর পার্টিতে এসেছে অনুস্কা।”
পারমিতার দিকে চেয়ে দেখলাম। টকটকে লাল রঙের একটা কাঁধ বিহীন ছোট ককটেল পোশাক পড়েছে। উপরিবক্ষের অনেকাংশ অনাবৃত, সুগোল মোটা জঙ্ঘার মাঝ পর্যন্ত নেমে এসে শেষ হয়ে গেছে সেই পোশাক। চোখের পাতায় রঙ করা, আইল্যাশ লাগানো, ঠোঁটে টকটকে লাল রঙের লিপস্টিক। সেই তুলনায় আমার সুন্দরী ললনার কোন মেকি সাজ নেই। এমনিতেই ওর চোখের রোম গুলো লম্বাটে, শুধু মাত্র ঠোঁটে স্কারটের সাথে মিলিয়ে লাল রঙের লিপস্টিক ছাড়া অন্য কোন প্রসাধনে সজ্জিত নয়। দুই বান্ধবী দুই মেরুর দুই প্রান্ত মনে হল।
পারমিতার দিকে ওই ভাবে তাকাতে দেখে আমার বাজুতে একটা চিমটি কেটে জিজ্ঞেস করল, “কি হল?”
নাতি বাচকে মাথা নাড়লাম আমি, “না না কিছু না।”
দাঁত কিরমির করে আমাকে বলল ললনা, “চোখ গেলে দেব কিন্তু।”
আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বুকের কাছে টেনে ধরে বললাম, “উফফ একটু দেখতেও পারি না নাকি? তুমি তো বুকের মধ্যে আছো।”
চোখ পাকিয়ে বললে প্রেয়সী, “চোখ মুখ বুক পেট মাথা সব জায়গায় আমি যেন থাকি।”
হেসে ফেললাম আমি, “হ্যাঁ রে বাবা।”
আমাকে ছেড়ে দিয়ে কোন এক বান্ধবীর সাথে চলে গেল তিতলি। ঘরে বেশ জোরেই গান চলছে। ছেলে মেয়েদের হাতের গ্লাসে রঙ্গিন পানীয়। আমি একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের গ্লাস নিয়ে চুমুক দিতে দিতে বারান্দায় চলে গেলাম। একটা সিগারেট ধরিয়ে বসার ঘরের সোফার দিকে তাকিয়ে রইলাম। রূপসী মহারানী কে ঘরে ওর বান্ধবীরা সবাই। আসল জন্মদিন কার সেটাই বোঝা যাচ্ছে না, পারমিতার উপলক্ষে এই পার্টি নাকি তিতলির উপলক্ষে।
কিছু পরে পারমিতা একটা গ্লাস হাতে বারান্দায় এসে আমাকে বলল, “তুমি একি খাচ্ছো?”
আমি ওকে বললাম, “কোল্ড ড্রিঙ্কস।”
হেসে ফেলল পারমিতা, “তুমি কোল্ড ড্রিঙ্কস খাও?”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা, আর কি আছে?”
উত্তর দিল পারমিতা, “ব্রিজার আর বিয়ার আছে।”
আমি হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে, “আমি বাচ্চাদের পানীয় গিলি না।”
চোখ বড় বড় করে আমার দিকে দেখে বলল, “মানে?”
আমি ওকে বললাম, “স্কচ হবে?”
জিজ্ঞেস করল পারমিতা, “কি?”
বললাম, “স্কচ হুইস্কি হবে? সিভাস রিগাল?”
পারমিতা হেসে ফেলল আমার কথা শুনে, “না গো। বড় হয়েছি ঠিক তবে অত বড় হইনি। তবে তুমি বললে আমি আনিয়ে দিতে পারি।”
আমি ওকে বললাম, “দুই হাজার টাকা দাম কিন্তু।”
দাম শুনে অবাক হয়ে গেল পারমিতা, “না বাবা অত টাকা আমাদের নেই।”
আমি ওকে বললাম, “ছাড়ো তাহলে। আমি এই কোল্ড ড্রিঙ্কসেই ঠিক আছি।”
পারমিতার হাতে বিয়ারের গ্লাস, সেই গ্লাসে চুমুক দিয়ে বসার ঘরের মধ্যে তিতলির দিকে দেখিয়ে আমাকে বলল, “জানো আজকে সত্যি ওকে দেখে খুব ভালো লাগছে।” আমিও তিতলির দিকে তাকিয়ে দেখলাম। মেয়েদের মাঝে মধ্যমণি হয়ে বসে গল্পে মেতে উঠেছে। মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দেয়। পারমিতা বলতে শুরু করল, “আমাদের ক্লাসে ষাট জন মেয়ে কিন্তু সবার থেকে একদম আলাদা অনুস্কা। শুরুতে কারুর সাথে মিশত না। ওকে দেখে নাক উঁচু মেয়ে বলেই জানতাম তখন। রোজ সকালে গাড়ি করে কলেজে আসে, কলেজ শেষ কারুর জন্য দাঁড়ায় না, সোজা ট্যাক্সি করে বাড়ি ফেরে। খুব কম কথা বলে, এই আমি আর সুস্মিতার সাথেই ওর বন্ধুত্ত।”
আমি মুচকি হেসে ওকে বললাম, “কম কথা বলে? দেখো” বসার ঘরের মধ্যে তিতলির দিকে দেখিয়ে বললাম, “ওই দেখো কত কথা বলে। তুমি জানো বাইকে বসে এত কথা বলে কি বলি।”
মৃদু হাসি দিল পারমিতা, “জানি, তাই তোমাকে বলতে এলাম। গত সেপ্টেম্বরে তোমাদের মধ্যে কি হয়েছিল আমি জানি না। তবে ক্লাসের মধ্যে ভীষণ ভাবেই আনমনা হয়ে যেত। ওর দৃষ্টি সব সময়ে ঝাপসা থাকত। খাতার মধ্যে কি সব উল্টোপাল্টা দাগ কেটে বসে থাকত। দেখে মনে হত যেন ওর জীবনে কিছুই নেই। কতবার জিজ্ঞেস করেছি কি হয়েছে। পেটে বোম মেরেও কথা বের করতে পারিনি। তারপরে এই পুজোর পরে একদিন দেখলাম, দিব্বি সব ঠিক হয়ে গেছে। আর আজকে ওর হাসি দেখে মনে হচ্ছে যেন এক নতুন অনুস্কার জন্ম হয়েছে।”
আমি তিতলির দিকে এক ভাবে তাকিয়ে রইলাম। ওর মুখের হাসি দেখে কেউ বলবে না যে এই মেয়ে কম কথা বলে। কিন্তু ওর মায়ের মুখেও শুনছি আর এই পারমিতার মুখেও শুনলাম। বুঝতে বাকি রইল না, সাতকাহনের প্রথম পাতার লেখাটা, “শুধু তার জন্য, যে আমাকে উড়তে শিখিয়েছে।” সত্যি মেয়েটা পাগল। মনে মনে হেসে ফেললাম আমি।
বুক ভরে শ্বাস নিয়ে পারমিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি ওর ডাক নাম জানো কি?” নাতি বাচকে মাথা নাড়ল পারমিতা, না জানে না। আমি ওকে বললাম, “তিতলি, তিতলি মানে প্রজাপতি। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় ডানা মেলে উড়বে।”
মৃদু হেসে মাথা দোলায় পারমিতা, “তুমি পাগল।”
আমি হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে, “ভীষণ ভাবেই।”
আমার হাত থেকে সিগারেট নিয়ে একটা টান মেরে আমাকে বলল, “আমার জানো মাঝে মাঝে ওকে ভীষণ হিংসে হয়?”
আমি অবাক ওর কথা শুনে, “কেন?”
পারমিতার চোখে একটু নেশার ঘোর, বিয়ারের সাথে সিগারেটে বেশ কয়েকটা টান মেরে চোখের তারায় মত্ততা এঁকে নিয়েছে ততক্ষনে। মদির কন্ঠে আমাকে বলল, “জানো কত ছেলে ওর পেছনে পরে। ও নিজেই জানে না। কত ছেলে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত শুধু ওর দেখা পাওয়ার জন্য। কিন্তু ওই যে, সকালে গাড়িতে আসতো আর বিকেলে ট্যাক্সিতে উঠে চলে যেত তাই কারুর সাহস ছিল না ওর সাথে কথা বলার। তারপরে একদিন দেখলাম তুমি এলে, বাইকে তোমার পেছনে উঠে বসলো। আমাদের দিকে একটু হাত নাড়িয়ে চলে গেল। তোমাদের দেখে কি মনে হল জানো। সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে এক রাজপুত্র এসে তার রাজকন্যে নিয়ে চলে গেলো।” আমি ওর কথা শুনে মৃদু হাসি দিলাম। বিয়ারের গ্লাসে শেষ করে আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পারমিতা মদির নেশগ্রস্ত কণ্ঠে আবদার করল, “আমার সাথে একটু নাচবে?”
ওর গায়ের মদির গন্ধ আমাকে মাতাল করে দিল। কোমল উষ্ণ পরশে মাতন লাগলো আমার ধমনীতে। পারমিতার চোখের পাতা ইতিমধ্যে ঢুলুঢুলু হয়ে গেছে। কিন্তু বুকের মধ্যে শুধু মাত্র ওই অনন্যা সুন্দরীর ছবি আঁকা।
আমি পারমিতার কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে ওর কপালে একটা ছোট চুমু খেয়ে বললাম, “যাও ভেতরে যাও। দেখো তোমার জন্মদিনে ঘরের মধ্যে সবাই বসে। ওদের সাথে গিয়ে গল্প কর।”
কখন যে তিতলি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল ছিল না। কাঁধে তিতলির নরম হাতের স্পর্শে ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম। তিতলি ভুরু কুঁচকে ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে পারমিতাকে জিজ্ঞেস করল, “কি রে কি হয়ছে?”
পারমিতা আমার বুকের ওপরে হাত রেখে তিতলিকে বলল, “হীরের ওপরে দাগ কাটতে চাইলেও দাগ কাটা সম্ভব নয় যতক্ষণ না অন্য একটা হীরা দিয়ে ওর ওপরে আঁচর কাটা হয়।”
তিতলি আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি ওর কোমর জড়িয়ে অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওর চকচকে উজ্জ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিতলি আমাকে ইশারায় নাচতে অনুরোধ করল।
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, “আমি নাচতে জানি না সোনা।”
আমার মুখে “সোনা” ডাক শুনে তিতলি আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল, পেলব বাহু জোড়া আমার গলায় উঠে এলো। আমি ওর পাতলা কোমর নিজের বাহুবেষ্টনির আবর্তে বেঁধে নিলাম। টেনে ধরলাম তিতলির কমনীয় তীব্র আকর্ষণীয় দেহপল্লব। জামা ফুঁড়ে তিতলির পীনোন্নত স্তন যুগল আমার প্রসস্থ বুকের সাথে মিশে গেল। কালো চোখের তারায় নিজের ছবি দেখতে পেলাম আমি। আমি ওর পিঠের ওপরে বাঁ হাত দিয়ে তিতলির নধর লোভনীয় দেহবল্লরিকে আরো বেশি নিজের আলিঙ্গন পাশে বেঁধে নিলাম। গোলাপি ঠোঁট জোড়া অল্প মেলে ধরল আমার মুখের সামনে। পরস্পরের উষ্ণ শ্বাসের ঢেউ দুইজনার মুখমন্ডলে অবিরত বয়ে চলে। ধিমে গানের তালে তালে ওর দেহপল্লব দুলে উঠছে। আমি তিতলির ধিমে লয়ের দোলার তালে তাল মিলিয়ে একটু নড়ে চড়ে নাচতে চেষ্টা করলাম।
আমার প্রসস্থ ছাতির ওপরে নিটোল কুঁচযুগল পিষে ধরে মদির কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, “কেমন লাগছে আদি?”
আমি ওর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে নাকের ডগার সাথে নাকের ডগা মিলিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বললাম, “মারতে চাও নাকি আজকে?”
মৃদু মাথা নাড়ালো তিতলি, “না না, একা কেন মরবে, আমিও সাথে যাবো।”
আমি তিতলিকে জড়িয়ে ধরে কোমল রসালো গোলাপি ঠোঁটে একটা গভীর চুমু খেলাম। চুমু খেতেই মনে হল আমি হাওয়াতে ভাসছি। চারপাশে কিছু নেই, আমি আর আমার লজ্জাবতী প্রেয়সী এই জগতে নয় এক অন্য জগতে চলে গেছি। আমার চারপাশে পারমিতার বাড়ি নেই, বারান্দা নেই, কোলাহল, ব্যাস্ততা, দিনরাত কিছুই নেই। আমার চোখের সামনে শুধু আমার লজ্জাবতী লাস্যময়ী প্রেয়সী আর তার প্রেমের আলিঙ্গনে বেঁধে আমি তার প্রেমিক। দুই পেবল বাহু মেলে আমার গলা জড়িয়ে ধরল তিতলি। আমার মাথার পেছনে চুল আঁকড়ে মাথা বেঁকিয়ে ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরল। আমি তিতলির পাতলা কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিলাম। শার্ট, ব্রা ভেদ করে তিতলির কোমল তুলতুলে স্তন জোড়া আমার বুকের ওপরে পিষে গেল। তিতলির সারা পিঠের ওপরে আমি হাত বুলাতে লাগলাম। মিষ্টি গোলাপি রসালো ঠোঁট দুটো যেন কমলালেবুর মিষ্টি কোয়া, ভীষণ নরম ভীষণ শিক্ত। আমার মুখের ভেতরে প্রেয়সীর মিষ্টি লালা ঢুকে গেল। তিতলির জিব আমার ঠোঁট জোড়া ফাঁক করে আমার জিব নিয়ে খেলা করতে শুরু করে দিল। তিতলির নরম জিবের স্পর্শে আমার শরীরে কামাগ্নি দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। আমি প্রেয়সীকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতন ঠোঁট জোড়া চিবাতে লাগলাম আর প্রসস্থ ছাতি দিয়ে তিতলির কোমল নিটোল পীনোন্নত স্তন জোড়া চেপে ধরলাম। রূপসী ললনা আমাকে পাগলের মতন চুমু খেতে লাগলো আর আমার জিব চুষতে লাগলো। দুইজনে ঠোঁটের রসে মুখ চিবুক ভিজে গেল। তীব্র প্রেমঘন চুম্বনে পারমিতার বাড়ির নিস্তব্দ বারান্দা চকাস চকাস শব্দে ভরে উঠল। সেই সাথে তিতলির মিহি “উম্মম...” আওয়াজ। তিতলি আমার জামা একহাতে খিমচে ধরল অন্য হাতে আমার মাথার চুল খিমচে ধরল। আমি তিতলির পিঠের ওপরে এক হাত দিয়ে ছিলাম অন্য হাত তিতলির কোমরে ছিল। দুইজনে চোখ বুজে পরস্পরের ঠোঁটের মধুর মধ্যে ডুব দিলাম। কতক্ষণ এইভাবে চুমু খেতে খেতে হারিয়ে গেছিলাম ঠিক খেয়াল নেই।
আমি অনেকক্ষণ পরে রূপসী প্রেয়সীর নরম মিষ্টি ঠোঁট ছেড়ে বললাম, “আই লাভ ইউ তিতলি...”
কিছু বলল না তিতলি, শুধু মাত্র আমার দিকে কাজল কালো প্রেমাগ্নি ভরা নয়নে তাকিয়ে আমার বুকের ওপরে মাথা গুঁজে পরে থাকল আরো বেশ কিছুক্ষন।
অনেকক্ষণ পরে আমি নিচু কণ্ঠে তিতলিকে জিজ্ঞেস করলাম, “বাড়ি যাবে না?”
বাহুপাশ ক্ষনিকের জন্যেও শিথিল না করেই বুকের ওপরেই মাথা নাড়িয়ে বলল ললনা, “না, এইভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকো।”
আমি ওর দেহ থেকে বাহুপাশ আলগা করে নিতেই আরও বেশি করে আমাকে জড়িয়ে ধরল তিতলি। আমি ওর মুখ হাতের পাতায় আঁজলা করে ধরে নিজের দিকে তুলে ধরে বললাম, “রাত হচ্ছে, বাড়িতে চিন্তা করবে।”
ভাসা ভাসা চোখে আমার পানে চেয়ে উত্তর দিল তিতলি, “চলো না কোথাও চলে যাই আদি।”
আমি ওর নাকের ডগায় নাক ঘষে জিজ্ঞেস করলাম, “এমন করে কেন বলছ?”
বড় একটা শ্বাস ছেড়ে আমার বুকের ওপরে আছড়ে পরে বলল, “মাঝে মাঝে ভীষণ ভয় করে আদি।”
আমি ওর মাথা বুকের ওপরে চেপে ধরে বললাম, “সময় আসুক, তোমার বাবার সাথে কথা বলব।”
চুপ করে আরো বেশ কিছুক্ষন ওইভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিল তিতলি। রাতে বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হয়েছিল বটে তবে সেটা সামলে নিয়েছিল তিতলি।
সেদিন ক্লাসের শেষে বাড়ি ফেরার সময়ে তিতলি আমাকে বলল যে পরের সপ্তাহে ওর বান্ধবী পারমিতার জন্মদিন সেখানে যেতে চায়। আমি বললাম, যাও ক্ষতি কি? আমাকে ছাড়া রূপসী নড়বে না, বায়না ধরল, এর আগে কোনদিন কারুর জন্মদিনের পার্টিতে যায়নি। প্রথমবার কারুর জন্মদিনের পার্টিতে যেতে চায়, আমাকেও সঙ্গে যেতে হবে। আমি পড়লাম মহা সমস্যায়, পারমিতার সাথে সেই ভাবে পরিচয়ের অবকাশ হয়নি। ওকে জানাতেই তিতলি বলল, পারমিতা নাকি আমাকেও আমন্ত্রন জানিয়েছে। অগত্যা তাহলে যেতেই হয়।
শনিবার বিকেলে পারমিতার বাড়িতে ওর জন্মদিনের পার্টি। দুপুরে ক্লাসের পরে তিতলিকে বাড়িতে নামিয়ে দিলাম। জানিয়ে দিল, বিকেল ছটার মধ্যে যেন রাস্তার মোড়ে চলে আসি। যথারীতি রাজ্ঞীর আদেশ অনুযায়ী রথ নিয়ে সারথি পৌঁছে গেল। পরনে টকটকে লাল রঙের বেশ ঘের দেওয়া হাঁটু ছাড়িয়েও লম্বা স্কারট, কোমরে মোটা একটা বেল্ট দিয়ে বাঁধা আর সাদা একটা শার্টের মতন জামা। আমার দেওয়া কানের দুল ওর কানে। জানুয়ারি মাস হলেও তেমন ঠান্ডা নেই, তবে বাইরে বের হলে একটু ঠান্ডা লাগে তাই একটা ছোট লাল রঙের উলের স্টোল গায়ে জড়িয়ে নিয়েছিল। ফর্সা গায়ের রঙের সাথে পোশাক দারুন মানিয়ে গেছে। মাথার চুল একপাশে করে আঁচড়ানো। ওর গোলাপি গাল দুটো দেখে আমার হাত দুটো ভীষণ ভাবেই নিশপিশ করছিল। মনে হচ্ছিল দুই হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে টোপা গালের ওপরে একটা চুম্বন এঁকে দেই।
আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেছিল। আমাকে দেখতে পেয়েই দৌড়ে এসে আমার বাজুতে একটা ছোট চাঁটি মেরে অভিমানী কন্ঠে বলল, “এত দেরি করতে আছে? আমার একা একা দাঁড়াতে কেমন যেন লাগছিল জানো।”
আমি আশেপাশের লোকজনকে দেখলাম, সুন্দরী মেয়েদের যেন এরা কোনদিন দেখেনি এমন ভাবে তিতলির দিকে তাকিয়ে। কয়েকজনার দিকে বেশ রোষকষিত ভাবেই তাকাতে তারা চোখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিল। সত্যি এইভাবে ওকে এখানে একা দাঁড় করিয়ে রাখা উচিত হয়নি। কি করব, অফিসে যখন যায় তখন রিসেপসানে বসে থাকে তাই এইভাবে ওকে কোথাও দাঁড়াতে হয়না। অফিসের মোটামুটি সবাই জেনে গেছে একজন আসে। আমিও মুচকি হাসি ওদের কথা শুনে।
আমি নিজের কান ধরে ওকে বললাম, “সরি বাবা। তা তুমি এই ভাবে সাজলে তোমাকে দেখে তো সবাই পাগল হয়েই যাবে।”
লাজুক হেসে আমার হাত থেকে হেলমেট নিয়ে পড়তে পড়তে আমাকে বলল, “বেশিক্ষন থাকব না কিন্তু।”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কেন?”
উত্তর দিল, “ন’টার মধ্যে বাড়িতে না ফিরলে বাবা আবার বকাবকি শুরু করে দেবে।”
বুঝলাম অনেক কড়াকড়ি বাড়িতে। আমি হেসে বললাম, “মুফাসাকে কি বললে?”
হেসে ফেলল তিতলি, “একটু বলে কয়ে ম্যানেজ করতে হয়েছে। প্রথমে বলছিল যে ড্রাইভার গাড়ি করে ছেড়ে আসবে, আমি বললাম ট্যাক্সি করে চলে যেতে পারব।”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কেমন পার্টি?”
মুচকি হেসে উত্তর দিল, “আমি কি করে জানবো কেমন পার্টি। আমি কোনদিন কোন বন্ধু বান্ধবীর পার্টিতে যাইনি। এই প্রথমবার যাচ্ছি। তাও তুমি না থাকলে যেতাম না। আসলে কি জানো, পারমিতার জন্মদিন গত সপ্তাহে হয়ে গেছে। আজ ওর বাড়িতে বাবা মা নেই, বাড়ি খালি তাই বন্ধুদের নিয়ে পার্টি হবে।”
জিজ্ঞেস করলাম, “পার্টিতে কি শুধু খাওয়া নাকি পানীয় আছে?”
দুম করে মিষ্টি একটা কিল মারল আমার পিঠে, “তুমি আমার সামনে ড্রিঙ্ক করবে?”
আমি ঘাড় বেঁকিয়ে তিতলির নরম হাতের ওপরে গাল ছুঁইয়ে বললাম, “নেশা তো অনেক আগেই লেগেছে।” মান্না দের একটা গান গেয়ে উঠলাম, “যখন নেশায় আমার রাস্তা টলে, কেউ আমাকে মাতাল বলে, আমি সোজা চলে যাই দেখিয়ে... যখন তুমি আমায় মাতাল বল...”
আমাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে গেয়ে উঠল তিতলি, “মরনদশা, পুরো পাগল আমি...”
জিজ্ঞেস করলাম, “কোন প্রেসেন্ট কিনেছ, নাকি খালি হাতে?”
জিব কেটে বলল, “এ যাহ্, সত্যি কিছুই কিনিনি গো। দাঁড়াও দাঁড়াও।”
লেকটাউনে ঢুকে একটা দোকান থেকে একটা সোপিস কেনা হল। সেই সাথে একটা কার্ড আর একটা চকোলেট। কিছুক্ষনের মধ্যেই পারমিতার বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। পাইকপাড়া টালাপার্কের কাছে পারমিতাদের বাড়ি। পারমিতার বাড়ি পৌঁছাতে আমাদের একটু দেরি হয়েই গেছিল। দুতলা বাড়ি, নিচের তলায় ভাড়া থাকে। বাড়ির মধ্যে ঢুকে দেখলাম, অনেক ছেলে মেয়ে ভর্তি। সবার পরনে উপযুক্ত পার্টি পোশাক, শুধু মাত্র তিতলির পোশাক লম্বা, বাকি মেয়েদের পোশাক আশাকে বেশ আধুনিকতার ছাপ স্পষ্ট। কোন মেয়ের পোশাক হাঁটুর নিচে নয় শুধু মাত্র তিতলির স্কারট ছাড়া। আমার বাজু দুই হাতের মধ্যে চেপে ধরে রইল তিতলি। আমাদের ঢুকতে দেখে পারমিতা একগাল হেসে এগিয়ে এলো।
তিতলির হাত দুটো ধরে বলল, “বাপরে তোর সময় হল।” আমার দিকে দেখে বলল, “নিয়ে আসতে পারলে তাহলে।”
আমি অবাক হয়েই ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “আমি কেন নিয়ে আসব, ওই আমাকে নিয়ে এলো।”
মুচকি হাসল পারমিতা, “তুমি জানো না। এই প্রথমবার আমাদের কোন বন্ধু বান্ধবীর পার্টিতে এসেছে অনুস্কা।”
পারমিতার দিকে চেয়ে দেখলাম। টকটকে লাল রঙের একটা কাঁধ বিহীন ছোট ককটেল পোশাক পড়েছে। উপরিবক্ষের অনেকাংশ অনাবৃত, সুগোল মোটা জঙ্ঘার মাঝ পর্যন্ত নেমে এসে শেষ হয়ে গেছে সেই পোশাক। চোখের পাতায় রঙ করা, আইল্যাশ লাগানো, ঠোঁটে টকটকে লাল রঙের লিপস্টিক। সেই তুলনায় আমার সুন্দরী ললনার কোন মেকি সাজ নেই। এমনিতেই ওর চোখের রোম গুলো লম্বাটে, শুধু মাত্র ঠোঁটে স্কারটের সাথে মিলিয়ে লাল রঙের লিপস্টিক ছাড়া অন্য কোন প্রসাধনে সজ্জিত নয়। দুই বান্ধবী দুই মেরুর দুই প্রান্ত মনে হল।
পারমিতার দিকে ওই ভাবে তাকাতে দেখে আমার বাজুতে একটা চিমটি কেটে জিজ্ঞেস করল, “কি হল?”
নাতি বাচকে মাথা নাড়লাম আমি, “না না কিছু না।”
দাঁত কিরমির করে আমাকে বলল ললনা, “চোখ গেলে দেব কিন্তু।”
আমি ওর কাঁধে হাত রেখে বুকের কাছে টেনে ধরে বললাম, “উফফ একটু দেখতেও পারি না নাকি? তুমি তো বুকের মধ্যে আছো।”
চোখ পাকিয়ে বললে প্রেয়সী, “চোখ মুখ বুক পেট মাথা সব জায়গায় আমি যেন থাকি।”
হেসে ফেললাম আমি, “হ্যাঁ রে বাবা।”
আমাকে ছেড়ে দিয়ে কোন এক বান্ধবীর সাথে চলে গেল তিতলি। ঘরে বেশ জোরেই গান চলছে। ছেলে মেয়েদের হাতের গ্লাসে রঙ্গিন পানীয়। আমি একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের গ্লাস নিয়ে চুমুক দিতে দিতে বারান্দায় চলে গেলাম। একটা সিগারেট ধরিয়ে বসার ঘরের সোফার দিকে তাকিয়ে রইলাম। রূপসী মহারানী কে ঘরে ওর বান্ধবীরা সবাই। আসল জন্মদিন কার সেটাই বোঝা যাচ্ছে না, পারমিতার উপলক্ষে এই পার্টি নাকি তিতলির উপলক্ষে।
কিছু পরে পারমিতা একটা গ্লাস হাতে বারান্দায় এসে আমাকে বলল, “তুমি একি খাচ্ছো?”
আমি ওকে বললাম, “কোল্ড ড্রিঙ্কস।”
হেসে ফেলল পারমিতা, “তুমি কোল্ড ড্রিঙ্কস খাও?”
আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা, আর কি আছে?”
উত্তর দিল পারমিতা, “ব্রিজার আর বিয়ার আছে।”
আমি হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে, “আমি বাচ্চাদের পানীয় গিলি না।”
চোখ বড় বড় করে আমার দিকে দেখে বলল, “মানে?”
আমি ওকে বললাম, “স্কচ হবে?”
জিজ্ঞেস করল পারমিতা, “কি?”
বললাম, “স্কচ হুইস্কি হবে? সিভাস রিগাল?”
পারমিতা হেসে ফেলল আমার কথা শুনে, “না গো। বড় হয়েছি ঠিক তবে অত বড় হইনি। তবে তুমি বললে আমি আনিয়ে দিতে পারি।”
আমি ওকে বললাম, “দুই হাজার টাকা দাম কিন্তু।”
দাম শুনে অবাক হয়ে গেল পারমিতা, “না বাবা অত টাকা আমাদের নেই।”
আমি ওকে বললাম, “ছাড়ো তাহলে। আমি এই কোল্ড ড্রিঙ্কসেই ঠিক আছি।”
পারমিতার হাতে বিয়ারের গ্লাস, সেই গ্লাসে চুমুক দিয়ে বসার ঘরের মধ্যে তিতলির দিকে দেখিয়ে আমাকে বলল, “জানো আজকে সত্যি ওকে দেখে খুব ভালো লাগছে।” আমিও তিতলির দিকে তাকিয়ে দেখলাম। মেয়েদের মাঝে মধ্যমণি হয়ে বসে গল্পে মেতে উঠেছে। মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দেয়। পারমিতা বলতে শুরু করল, “আমাদের ক্লাসে ষাট জন মেয়ে কিন্তু সবার থেকে একদম আলাদা অনুস্কা। শুরুতে কারুর সাথে মিশত না। ওকে দেখে নাক উঁচু মেয়ে বলেই জানতাম তখন। রোজ সকালে গাড়ি করে কলেজে আসে, কলেজ শেষ কারুর জন্য দাঁড়ায় না, সোজা ট্যাক্সি করে বাড়ি ফেরে। খুব কম কথা বলে, এই আমি আর সুস্মিতার সাথেই ওর বন্ধুত্ত।”
আমি মুচকি হেসে ওকে বললাম, “কম কথা বলে? দেখো” বসার ঘরের মধ্যে তিতলির দিকে দেখিয়ে বললাম, “ওই দেখো কত কথা বলে। তুমি জানো বাইকে বসে এত কথা বলে কি বলি।”
মৃদু হাসি দিল পারমিতা, “জানি, তাই তোমাকে বলতে এলাম। গত সেপ্টেম্বরে তোমাদের মধ্যে কি হয়েছিল আমি জানি না। তবে ক্লাসের মধ্যে ভীষণ ভাবেই আনমনা হয়ে যেত। ওর দৃষ্টি সব সময়ে ঝাপসা থাকত। খাতার মধ্যে কি সব উল্টোপাল্টা দাগ কেটে বসে থাকত। দেখে মনে হত যেন ওর জীবনে কিছুই নেই। কতবার জিজ্ঞেস করেছি কি হয়েছে। পেটে বোম মেরেও কথা বের করতে পারিনি। তারপরে এই পুজোর পরে একদিন দেখলাম, দিব্বি সব ঠিক হয়ে গেছে। আর আজকে ওর হাসি দেখে মনে হচ্ছে যেন এক নতুন অনুস্কার জন্ম হয়েছে।”
আমি তিতলির দিকে এক ভাবে তাকিয়ে রইলাম। ওর মুখের হাসি দেখে কেউ বলবে না যে এই মেয়ে কম কথা বলে। কিন্তু ওর মায়ের মুখেও শুনছি আর এই পারমিতার মুখেও শুনলাম। বুঝতে বাকি রইল না, সাতকাহনের প্রথম পাতার লেখাটা, “শুধু তার জন্য, যে আমাকে উড়তে শিখিয়েছে।” সত্যি মেয়েটা পাগল। মনে মনে হেসে ফেললাম আমি।
বুক ভরে শ্বাস নিয়ে পারমিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি ওর ডাক নাম জানো কি?” নাতি বাচকে মাথা নাড়ল পারমিতা, না জানে না। আমি ওকে বললাম, “তিতলি, তিতলি মানে প্রজাপতি। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় ডানা মেলে উড়বে।”
মৃদু হেসে মাথা দোলায় পারমিতা, “তুমি পাগল।”
আমি হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে, “ভীষণ ভাবেই।”
আমার হাত থেকে সিগারেট নিয়ে একটা টান মেরে আমাকে বলল, “আমার জানো মাঝে মাঝে ওকে ভীষণ হিংসে হয়?”
আমি অবাক ওর কথা শুনে, “কেন?”
পারমিতার চোখে একটু নেশার ঘোর, বিয়ারের সাথে সিগারেটে বেশ কয়েকটা টান মেরে চোখের তারায় মত্ততা এঁকে নিয়েছে ততক্ষনে। মদির কন্ঠে আমাকে বলল, “জানো কত ছেলে ওর পেছনে পরে। ও নিজেই জানে না। কত ছেলে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত শুধু ওর দেখা পাওয়ার জন্য। কিন্তু ওই যে, সকালে গাড়িতে আসতো আর বিকেলে ট্যাক্সিতে উঠে চলে যেত তাই কারুর সাহস ছিল না ওর সাথে কথা বলার। তারপরে একদিন দেখলাম তুমি এলে, বাইকে তোমার পেছনে উঠে বসলো। আমাদের দিকে একটু হাত নাড়িয়ে চলে গেল। তোমাদের দেখে কি মনে হল জানো। সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে এক রাজপুত্র এসে তার রাজকন্যে নিয়ে চলে গেলো।” আমি ওর কথা শুনে মৃদু হাসি দিলাম। বিয়ারের গ্লাসে শেষ করে আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পারমিতা মদির নেশগ্রস্ত কণ্ঠে আবদার করল, “আমার সাথে একটু নাচবে?”
ওর গায়ের মদির গন্ধ আমাকে মাতাল করে দিল। কোমল উষ্ণ পরশে মাতন লাগলো আমার ধমনীতে। পারমিতার চোখের পাতা ইতিমধ্যে ঢুলুঢুলু হয়ে গেছে। কিন্তু বুকের মধ্যে শুধু মাত্র ওই অনন্যা সুন্দরীর ছবি আঁকা।
আমি পারমিতার কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে ওর কপালে একটা ছোট চুমু খেয়ে বললাম, “যাও ভেতরে যাও। দেখো তোমার জন্মদিনে ঘরের মধ্যে সবাই বসে। ওদের সাথে গিয়ে গল্প কর।”
কখন যে তিতলি আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল ছিল না। কাঁধে তিতলির নরম হাতের স্পর্শে ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম। তিতলি ভুরু কুঁচকে ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে পারমিতাকে জিজ্ঞেস করল, “কি রে কি হয়ছে?”
পারমিতা আমার বুকের ওপরে হাত রেখে তিতলিকে বলল, “হীরের ওপরে দাগ কাটতে চাইলেও দাগ কাটা সম্ভব নয় যতক্ষণ না অন্য একটা হীরা দিয়ে ওর ওপরে আঁচর কাটা হয়।”
তিতলি আমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমি ওর কোমর জড়িয়ে অন্ধকার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওর চকচকে উজ্জ্বল চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তিতলি আমাকে ইশারায় নাচতে অনুরোধ করল।
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, “আমি নাচতে জানি না সোনা।”
আমার মুখে “সোনা” ডাক শুনে তিতলি আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল, পেলব বাহু জোড়া আমার গলায় উঠে এলো। আমি ওর পাতলা কোমর নিজের বাহুবেষ্টনির আবর্তে বেঁধে নিলাম। টেনে ধরলাম তিতলির কমনীয় তীব্র আকর্ষণীয় দেহপল্লব। জামা ফুঁড়ে তিতলির পীনোন্নত স্তন যুগল আমার প্রসস্থ বুকের সাথে মিশে গেল। কালো চোখের তারায় নিজের ছবি দেখতে পেলাম আমি। আমি ওর পিঠের ওপরে বাঁ হাত দিয়ে তিতলির নধর লোভনীয় দেহবল্লরিকে আরো বেশি নিজের আলিঙ্গন পাশে বেঁধে নিলাম। গোলাপি ঠোঁট জোড়া অল্প মেলে ধরল আমার মুখের সামনে। পরস্পরের উষ্ণ শ্বাসের ঢেউ দুইজনার মুখমন্ডলে অবিরত বয়ে চলে। ধিমে গানের তালে তালে ওর দেহপল্লব দুলে উঠছে। আমি তিতলির ধিমে লয়ের দোলার তালে তাল মিলিয়ে একটু নড়ে চড়ে নাচতে চেষ্টা করলাম।
আমার প্রসস্থ ছাতির ওপরে নিটোল কুঁচযুগল পিষে ধরে মদির কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, “কেমন লাগছে আদি?”
আমি ওর কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে নাকের ডগার সাথে নাকের ডগা মিলিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বললাম, “মারতে চাও নাকি আজকে?”
মৃদু মাথা নাড়ালো তিতলি, “না না, একা কেন মরবে, আমিও সাথে যাবো।”
আমি তিতলিকে জড়িয়ে ধরে কোমল রসালো গোলাপি ঠোঁটে একটা গভীর চুমু খেলাম। চুমু খেতেই মনে হল আমি হাওয়াতে ভাসছি। চারপাশে কিছু নেই, আমি আর আমার লজ্জাবতী প্রেয়সী এই জগতে নয় এক অন্য জগতে চলে গেছি। আমার চারপাশে পারমিতার বাড়ি নেই, বারান্দা নেই, কোলাহল, ব্যাস্ততা, দিনরাত কিছুই নেই। আমার চোখের সামনে শুধু আমার লজ্জাবতী লাস্যময়ী প্রেয়সী আর তার প্রেমের আলিঙ্গনে বেঁধে আমি তার প্রেমিক। দুই পেবল বাহু মেলে আমার গলা জড়িয়ে ধরল তিতলি। আমার মাথার পেছনে চুল আঁকড়ে মাথা বেঁকিয়ে ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরল। আমি তিতলির পাতলা কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিলাম। শার্ট, ব্রা ভেদ করে তিতলির কোমল তুলতুলে স্তন জোড়া আমার বুকের ওপরে পিষে গেল। তিতলির সারা পিঠের ওপরে আমি হাত বুলাতে লাগলাম। মিষ্টি গোলাপি রসালো ঠোঁট দুটো যেন কমলালেবুর মিষ্টি কোয়া, ভীষণ নরম ভীষণ শিক্ত। আমার মুখের ভেতরে প্রেয়সীর মিষ্টি লালা ঢুকে গেল। তিতলির জিব আমার ঠোঁট জোড়া ফাঁক করে আমার জিব নিয়ে খেলা করতে শুরু করে দিল। তিতলির নরম জিবের স্পর্শে আমার শরীরে কামাগ্নি দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। আমি প্রেয়সীকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতন ঠোঁট জোড়া চিবাতে লাগলাম আর প্রসস্থ ছাতি দিয়ে তিতলির কোমল নিটোল পীনোন্নত স্তন জোড়া চেপে ধরলাম। রূপসী ললনা আমাকে পাগলের মতন চুমু খেতে লাগলো আর আমার জিব চুষতে লাগলো। দুইজনে ঠোঁটের রসে মুখ চিবুক ভিজে গেল। তীব্র প্রেমঘন চুম্বনে পারমিতার বাড়ির নিস্তব্দ বারান্দা চকাস চকাস শব্দে ভরে উঠল। সেই সাথে তিতলির মিহি “উম্মম...” আওয়াজ। তিতলি আমার জামা একহাতে খিমচে ধরল অন্য হাতে আমার মাথার চুল খিমচে ধরল। আমি তিতলির পিঠের ওপরে এক হাত দিয়ে ছিলাম অন্য হাত তিতলির কোমরে ছিল। দুইজনে চোখ বুজে পরস্পরের ঠোঁটের মধুর মধ্যে ডুব দিলাম। কতক্ষণ এইভাবে চুমু খেতে খেতে হারিয়ে গেছিলাম ঠিক খেয়াল নেই।
আমি অনেকক্ষণ পরে রূপসী প্রেয়সীর নরম মিষ্টি ঠোঁট ছেড়ে বললাম, “আই লাভ ইউ তিতলি...”
কিছু বলল না তিতলি, শুধু মাত্র আমার দিকে কাজল কালো প্রেমাগ্নি ভরা নয়নে তাকিয়ে আমার বুকের ওপরে মাথা গুঁজে পরে থাকল আরো বেশ কিছুক্ষন।
অনেকক্ষণ পরে আমি নিচু কণ্ঠে তিতলিকে জিজ্ঞেস করলাম, “বাড়ি যাবে না?”
বাহুপাশ ক্ষনিকের জন্যেও শিথিল না করেই বুকের ওপরেই মাথা নাড়িয়ে বলল ললনা, “না, এইভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকো।”
আমি ওর দেহ থেকে বাহুপাশ আলগা করে নিতেই আরও বেশি করে আমাকে জড়িয়ে ধরল তিতলি। আমি ওর মুখ হাতের পাতায় আঁজলা করে ধরে নিজের দিকে তুলে ধরে বললাম, “রাত হচ্ছে, বাড়িতে চিন্তা করবে।”
ভাসা ভাসা চোখে আমার পানে চেয়ে উত্তর দিল তিতলি, “চলো না কোথাও চলে যাই আদি।”
আমি ওর নাকের ডগায় নাক ঘষে জিজ্ঞেস করলাম, “এমন করে কেন বলছ?”
বড় একটা শ্বাস ছেড়ে আমার বুকের ওপরে আছড়ে পরে বলল, “মাঝে মাঝে ভীষণ ভয় করে আদি।”
আমি ওর মাথা বুকের ওপরে চেপে ধরে বললাম, “সময় আসুক, তোমার বাবার সাথে কথা বলব।”
চুপ করে আরো বেশ কিছুক্ষন ওইভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিল তিতলি। রাতে বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হয়েছিল বটে তবে সেটা সামলে নিয়েছিল তিতলি।