23-01-2021, 11:13 PM
নির্মল সরকার প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরবার সময় ছেলের আঁকা কলেজে চলে যায়।সেখান থেকে ছেলেকে নিয়ে ফেরে।মোটর বাইক চেপে ছেলেকে নিয়ে ফিরছিল প্রতিদিনকার মতই।আচমকা রাস্তার সামনে একটা বুড়ো এসে পড়ল।নির্মল ব্রেক কষল।দড়াম! করে শব্দ তুলল।ছিটকে গিয়ে পড়ল বুড়োটা।সিন্টু ভয় পেয়ে ব্যালেন্স সামলে বাবাকে জড়িয়ে ধরল।
নির্মল যখন নিচে নামল সব শেষ।রক্তারক্তি হয়ে বুড়ো পড়ে আছে।শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ।নির্মল একবার রাস্তার চারপাশে দেখল।ফাঁকা রাস্তায় কাউকে দেখা যাচ্ছে না।নির্মল সোজা বাইকে উঠে বলল-সিন্টু ওঠ।
---বাবা, লোকটা?
---চুপ কর, ওঠ।
বাড়ী ফিরে গাড়িটা সিঁড়ির তলায় ঢুকিয়ে বলল--মাকে ডাক জলদি।
সিন্টু সোজা ছাদে গিয়ে মাকে বলল--মা বাবা ডাকছে নিচে।
মিতালি এইসময় সিরিয়াল দেখে।বিরক্ত হয়ে নিচে নেমে বলল---কি হল?
---একটু জল দাও দেখি!
মিতালি জল এনে দিতে নির্মল সোফার উপর আছড়ে পড়ল।
---কি হল? শরীর খারাপ করছে নাকি?
---নাঃ দাঁড়াও।
মিতালি পাশে বসে কপালে হাত দিল।নির্মলের কপাল ঘেমে রয়েছে।
---আরে কি হয়েছে বলো?
--অ্যাকসিডেন্ট!
---কী??? আঁৎকে উঠল মিতালি।
---আমার কিছু হয়নি।
ছেলের দিকে তাকালো মিতালি।
---না না সিন্টুরও কিছু হয়নি।একটা বুড়ো হঠাৎ কোত্থেকে এসে পড়ল।ব্যাস সব শেষ!
--কি বলো? মারা গেছে?
---হ্যা।কিন্তু আস্তে বলো কেউ কিছু দেখেনি।
মিতালি ভয় পেয়ে নার্ভাস হয়ে পড়ল।সেই রাত্রিটা মিতালি আর নির্মলের জীবনে সবচেয়ে কঠিন ভাবে কেটেছে।
প্রায় একমাস নির্মল ঘুমোতে পারেনি রাত্রে।ঘুমের ওষুধ খেতে হয়েছে।আস্তে আস্তে দুটো মাস বেশ ভালো ভাবেই কাটল।সবকিছু ঠিক হয়ে গেল।কোথাও কোনো খবর নেই।কাগজেও কোনো খবর নেই।
---------
সিন্টু কলেজ বেরিয়ে গেলে মিতালি ঘরে একা থাকে।প্রতিদিনের নিয়মে রান্নাবান্না শেষ করে স্নানে যায় সে।এমন সময় বেল বেজে উঠল।মিতালি দরজা খুলতেই দেখল পুলিশ! চমকে উঠল মিতালি!
---নির্মল বাবু বাড়ীতে আছেন?
---না উনিতো অফিসে।আপনারা?
---ভেতরে আসতে পারি।
----আসুন।
দুই অফিসার ঘরটা ভালো করে দেখছিল।সোফায় বসতেই মিতালি বলল--আপনারা কি জন্য?
---নির্মল বাবুর নামে মার্ডার কেস আছে।
---মা-র্ডা-র!!
--হ্যা।তিনি একজন বৃদ্ধকে মোটর বাইকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলে পালিয়েছেন।
মিতালি চমকে গেল।
---আমরা কি নির্মলবাবুর কন্ট্যাক্ট নম্বর পেতে পারি।
--হ্যা অবশ্যই।
নম্বরটা নিয়ে আফিসার ফোন লাগালো।
------------
প্রায় একমাস কেটে গেছে।নির্মল থানা আর কোর্টে ছুটতে ছুটতে হাঁফিয়ে উঠেছে।বৃদ্ধ লোকটির ছেলে কোর্টে মামলা করেছে।একজন সাক্ষীও পেয়েছে।
নির্মল প্রথমে অবাক হয়ে গেছিল।নির্ঘাৎ পয়সা দিয়ে সাক্ষী কেনা হয়েছে।কিন্তু কোর্টের প্রথম ট্রায়ালে যখন সাক্ষী উপস্থিত হল।তার বয়ান শুনে চমকে গেল নির্মল।সেদিন যা যা ঘটেছিল তা তো বলছেই সেই সাথে আরো কিছু বাড়িয়ে বলছে।এই বাড়িয়ে যেটুকু বলছে সেটা যে পয়সার লোভে বুঝতে পারছে নির্মল।কিন্তু অবাক হয়ে যাচ্ছে সেদিনতো সে কাউকে দেখেনি।
সিন্টু পড়তে বসেছে।মিতালি রান্না ঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে এসে বলল---কি এত ভাবছ বলো তো? এই কদিনে দেখেছ শরীরটা কিরকম হয়েছে?
---আচ্ছা মিতু একটা কথা ভেবে অবাক হচ্ছি সেদিন আমি এত ভুল দেখলাম কি করে?
সিন্টু পাশ থেকে বলল--বাবা আমি একটা লোককে দেখেছিলাম।
নির্মল বলল---তুই দেখেছিলিস বলিসনি কেন?
---আমি তো বলেছিলাম বাবা।তুমি তো চুপ করতে বললে।
---লোকটাকে কেমন দেখতে বলত?
----লম্বা লোক।লুঙ্গি পরেছিল।খালি গা।
চমকে গেল নির্মল।তবে তো সেই লোকটাই; জয়নাল মন্ডল।
আরো দু মাস কেটে গেছে এর মধ্যে কেসটা আরো বিপক্ষে চলে গেছে।নির্মল এখন একা নয় মিতালিও যাচ্ছে।এরই মাঝে সিন্টুর পরীক্ষা।এমনি সময় হলে সিন্টুকে সারাদিন কড়া শাসনে রাখতো মিতালি।কিন্তু এবারে স্বামীর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ছেলেকে একবারে সময় দিতে পারেনি।সিন্টুর রেজাল্ট ভালো হয়নি।নির্মলের উকিল ধনঞ্জয় পোদ্দার অবশ্য এখনো ঠান্ডা মাথায় চেষ্টা করছেন।
শনিবার দিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরে টায়ার্ড লাগছিল নির্মলের।মিতালি পকোড়া ভাজছিল।বাড়ীর ল্যান্ড ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠল।খুব বেশি বাজে না ফোনটা।কিছুদিন ধরে মিতালি বলছিল বেকার কানেকশন রেখে লাভ কি?মিতালি ফোনটা তুলল।ওপাশ থেকে পোদ্দারের গলা।কই গো? পোদ্দার দা ফোন করেছেন।
নির্মল গিয়ে ফোনটা ধরল।তার হাত থরথর করে কাঁপছে।কেসটার দুমাস পরেই ডেট আছে।শেষ ট্রায়াল।এত দ্রুত ফয়সালা হবে ভাবতে পারেনি নির্মল।অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগে নূন্যতম তিনবছর জেল হতে পারে।সঙ্গে জরিমানাতো আছেই।নির্মলের সরকারি চাকরী।সেটাও চলে যাবে তারপর।
পোদ্দার বলল---নির্মল বাবু?
---হ্যা দাদা বলুন।
--শুনুন একটা কথা মন দিয়ে।ওই যে লোকটা...মানে সাক্ষী।আজ ওর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম।ও ফয়সালা করতে রাজি আছে।আপনার সাথে ফয়সালা করেই ও শেষ মুহূর্তে কোর্টে মত বদলে দেবে।
নির্মলের একটা বিরাট উৎকন্ঠা হচ্ছে--হ্যা হ্যা বলুন।আমি ফয়সালা করতে রাজি আছি।ও কত টাকা চায় বলুন?
---দেখুন নির্মল বাবু ও কত টাকা চায় সে ব্যাপারে কথা বলেনি।তবে ও বলেছে সেই ব্যাপারে আপনার সাথে মুখোমুখি কথা বলবে।
---ওকে ওকে।
---শুনুন আমি কাল সকাল এগারোটা নাগাদ সাক্ষীকে নিয়ে আপনার বাড়ী আসছি।আপনি কাল অফিস যাবেন না।
-ওকে ওকে।
ফোনটা রেখে দিল নির্মল।মিতালি বলল--কি বললেন উকিল বাবু?
মিতালীর দিকে একরাশ হাসিমুখ নিয়ে নির্মল বলল---সাক্ষী ফয়সালা করতে রাজি হয়েছে।
মিতালি উপরের দিকে তাকিয়ে করজোড়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালো।
------
সিন্টু কলেজ বেরিয়ে যাবার পরে পরেই উকিল বাবু এলেন।মিতালি দরজা খুলে দিল।পোদ্দারের সাথে ধনঞ্জয় দাঁড়িয়ে।প্রায় ছ ফুটেরও বেশি লম্বা তাগড়া ধনঞ্জয়।লুঙ্গি পরা পেশীবহুল খালি গা দেখলে শিউরে উঠতে হয়।
মিতালি বলল---আসুন আসুন।
তাদের এনে বসালো বৈঠকখানায়।নির্মল এসে বসল।মিতালি সবার জন্য চা করতে গেল।
পোদ্দার চোখ টিপে দুঁদে উকিলের মত হাসি হাসি মুখে বললেন---বলুন জয়নাল মন্ডল? আমার মক্কেল কিন্তু আপনাকে ভালো রকম টাকা দেবে।
জয়নাল যেন এধার ওধার কি দেখছে।
নির্মল আর উৎকন্ঠা চেপে রাখতে পারছে না।সে সুরাহা চাইছে।তা নাহলে তার জীবনে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
---বলুন বলুন? কতটাকা চান?
---দেখুন বাবু আমি কুলি মজুর লোক।আমার আর টাকা পয়সা লিয়ে কি হবে।তবু টাকা পয়সা যখন দিবেন তখন কুড়ি হাজার টাকায় রফা।
কথাটা যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না নির্মলের।তার জীবনের সমূহ সর্বনাশ যেখানে হতে যাচ্ছিল সেখানে মাত্র কুড়ি হাজার টাকায় রফা!
----ঠিক আছে।আমি এখুনি দিয়ে দিচ্ছি।পোদ্দার মশাই তবে কাগজ পত্তর রেডি করুন।
পোদ্দার মশাই হেসে উঠলেন---আরে নির্মল বাবু আপনার এই ঝামেলায় বোধ হয় বোধবুদ্ধি গেছে।এ সব বিষয়ে কাগজ পত্তর হয় নাকি? কি লিখবেন তাতে 'কুড়িহাজার টাকার বিনিময়ে আমি সাক্ষী দিতে বাধ্য থাকিবনা বাধ্য থাকিলাম'?
নির্মল হো হো করে হেসে উঠল।মিতালি রান্না ঘর থেকে হাসির শব্দ পেল। চা দিয়ে গেল মিতালি।নির্মল বলল--তবে আমি টাকাটা নিয়ে আসি।
জয়নাল হলদে দাঁত বের করে হে হে করে হেসে বলল---আমি কুলি মানুষ বাবু।এখুনি কাজে যাবো।ইস্টিশনে চুরি খুব হয়।এত টাকা লয়ে কি করব।আপনি ইস্টিশনে এসে বিকালে দিবেন।
---হোক হোক তবে।এই কথা।
পোদ্দার জয়নালকে নিয়ে চলে যেতেই নির্মল বলল---দেখলে মিতু শেষমেশ ধড়ে প্রাণ এলো।
মিতালি বলল---সকাল থেকে তো কিছুই খেলে না।যাও স্নান করে এসো ভাত বেড়ে দিই।
নির্মল যখন নিচে নামল সব শেষ।রক্তারক্তি হয়ে বুড়ো পড়ে আছে।শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ।নির্মল একবার রাস্তার চারপাশে দেখল।ফাঁকা রাস্তায় কাউকে দেখা যাচ্ছে না।নির্মল সোজা বাইকে উঠে বলল-সিন্টু ওঠ।
---বাবা, লোকটা?
---চুপ কর, ওঠ।
বাড়ী ফিরে গাড়িটা সিঁড়ির তলায় ঢুকিয়ে বলল--মাকে ডাক জলদি।
সিন্টু সোজা ছাদে গিয়ে মাকে বলল--মা বাবা ডাকছে নিচে।
মিতালি এইসময় সিরিয়াল দেখে।বিরক্ত হয়ে নিচে নেমে বলল---কি হল?
---একটু জল দাও দেখি!
মিতালি জল এনে দিতে নির্মল সোফার উপর আছড়ে পড়ল।
---কি হল? শরীর খারাপ করছে নাকি?
---নাঃ দাঁড়াও।
মিতালি পাশে বসে কপালে হাত দিল।নির্মলের কপাল ঘেমে রয়েছে।
---আরে কি হয়েছে বলো?
--অ্যাকসিডেন্ট!
---কী??? আঁৎকে উঠল মিতালি।
---আমার কিছু হয়নি।
ছেলের দিকে তাকালো মিতালি।
---না না সিন্টুরও কিছু হয়নি।একটা বুড়ো হঠাৎ কোত্থেকে এসে পড়ল।ব্যাস সব শেষ!
--কি বলো? মারা গেছে?
---হ্যা।কিন্তু আস্তে বলো কেউ কিছু দেখেনি।
মিতালি ভয় পেয়ে নার্ভাস হয়ে পড়ল।সেই রাত্রিটা মিতালি আর নির্মলের জীবনে সবচেয়ে কঠিন ভাবে কেটেছে।
প্রায় একমাস নির্মল ঘুমোতে পারেনি রাত্রে।ঘুমের ওষুধ খেতে হয়েছে।আস্তে আস্তে দুটো মাস বেশ ভালো ভাবেই কাটল।সবকিছু ঠিক হয়ে গেল।কোথাও কোনো খবর নেই।কাগজেও কোনো খবর নেই।
---------
সিন্টু কলেজ বেরিয়ে গেলে মিতালি ঘরে একা থাকে।প্রতিদিনের নিয়মে রান্নাবান্না শেষ করে স্নানে যায় সে।এমন সময় বেল বেজে উঠল।মিতালি দরজা খুলতেই দেখল পুলিশ! চমকে উঠল মিতালি!
---নির্মল বাবু বাড়ীতে আছেন?
---না উনিতো অফিসে।আপনারা?
---ভেতরে আসতে পারি।
----আসুন।
দুই অফিসার ঘরটা ভালো করে দেখছিল।সোফায় বসতেই মিতালি বলল--আপনারা কি জন্য?
---নির্মল বাবুর নামে মার্ডার কেস আছে।
---মা-র্ডা-র!!
--হ্যা।তিনি একজন বৃদ্ধকে মোটর বাইকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলে পালিয়েছেন।
মিতালি চমকে গেল।
---আমরা কি নির্মলবাবুর কন্ট্যাক্ট নম্বর পেতে পারি।
--হ্যা অবশ্যই।
নম্বরটা নিয়ে আফিসার ফোন লাগালো।
------------
প্রায় একমাস কেটে গেছে।নির্মল থানা আর কোর্টে ছুটতে ছুটতে হাঁফিয়ে উঠেছে।বৃদ্ধ লোকটির ছেলে কোর্টে মামলা করেছে।একজন সাক্ষীও পেয়েছে।
নির্মল প্রথমে অবাক হয়ে গেছিল।নির্ঘাৎ পয়সা দিয়ে সাক্ষী কেনা হয়েছে।কিন্তু কোর্টের প্রথম ট্রায়ালে যখন সাক্ষী উপস্থিত হল।তার বয়ান শুনে চমকে গেল নির্মল।সেদিন যা যা ঘটেছিল তা তো বলছেই সেই সাথে আরো কিছু বাড়িয়ে বলছে।এই বাড়িয়ে যেটুকু বলছে সেটা যে পয়সার লোভে বুঝতে পারছে নির্মল।কিন্তু অবাক হয়ে যাচ্ছে সেদিনতো সে কাউকে দেখেনি।
সিন্টু পড়তে বসেছে।মিতালি রান্না ঘর থেকে হাত মুছতে মুছতে এসে বলল---কি এত ভাবছ বলো তো? এই কদিনে দেখেছ শরীরটা কিরকম হয়েছে?
---আচ্ছা মিতু একটা কথা ভেবে অবাক হচ্ছি সেদিন আমি এত ভুল দেখলাম কি করে?
সিন্টু পাশ থেকে বলল--বাবা আমি একটা লোককে দেখেছিলাম।
নির্মল বলল---তুই দেখেছিলিস বলিসনি কেন?
---আমি তো বলেছিলাম বাবা।তুমি তো চুপ করতে বললে।
---লোকটাকে কেমন দেখতে বলত?
----লম্বা লোক।লুঙ্গি পরেছিল।খালি গা।
চমকে গেল নির্মল।তবে তো সেই লোকটাই; জয়নাল মন্ডল।
আরো দু মাস কেটে গেছে এর মধ্যে কেসটা আরো বিপক্ষে চলে গেছে।নির্মল এখন একা নয় মিতালিও যাচ্ছে।এরই মাঝে সিন্টুর পরীক্ষা।এমনি সময় হলে সিন্টুকে সারাদিন কড়া শাসনে রাখতো মিতালি।কিন্তু এবারে স্বামীর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ছেলেকে একবারে সময় দিতে পারেনি।সিন্টুর রেজাল্ট ভালো হয়নি।নির্মলের উকিল ধনঞ্জয় পোদ্দার অবশ্য এখনো ঠান্ডা মাথায় চেষ্টা করছেন।
শনিবার দিন বিকেলে অফিস থেকে ফিরে টায়ার্ড লাগছিল নির্মলের।মিতালি পকোড়া ভাজছিল।বাড়ীর ল্যান্ড ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠল।খুব বেশি বাজে না ফোনটা।কিছুদিন ধরে মিতালি বলছিল বেকার কানেকশন রেখে লাভ কি?মিতালি ফোনটা তুলল।ওপাশ থেকে পোদ্দারের গলা।কই গো? পোদ্দার দা ফোন করেছেন।
নির্মল গিয়ে ফোনটা ধরল।তার হাত থরথর করে কাঁপছে।কেসটার দুমাস পরেই ডেট আছে।শেষ ট্রায়াল।এত দ্রুত ফয়সালা হবে ভাবতে পারেনি নির্মল।অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগে নূন্যতম তিনবছর জেল হতে পারে।সঙ্গে জরিমানাতো আছেই।নির্মলের সরকারি চাকরী।সেটাও চলে যাবে তারপর।
পোদ্দার বলল---নির্মল বাবু?
---হ্যা দাদা বলুন।
--শুনুন একটা কথা মন দিয়ে।ওই যে লোকটা...মানে সাক্ষী।আজ ওর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম।ও ফয়সালা করতে রাজি আছে।আপনার সাথে ফয়সালা করেই ও শেষ মুহূর্তে কোর্টে মত বদলে দেবে।
নির্মলের একটা বিরাট উৎকন্ঠা হচ্ছে--হ্যা হ্যা বলুন।আমি ফয়সালা করতে রাজি আছি।ও কত টাকা চায় বলুন?
---দেখুন নির্মল বাবু ও কত টাকা চায় সে ব্যাপারে কথা বলেনি।তবে ও বলেছে সেই ব্যাপারে আপনার সাথে মুখোমুখি কথা বলবে।
---ওকে ওকে।
---শুনুন আমি কাল সকাল এগারোটা নাগাদ সাক্ষীকে নিয়ে আপনার বাড়ী আসছি।আপনি কাল অফিস যাবেন না।
-ওকে ওকে।
ফোনটা রেখে দিল নির্মল।মিতালি বলল--কি বললেন উকিল বাবু?
মিতালীর দিকে একরাশ হাসিমুখ নিয়ে নির্মল বলল---সাক্ষী ফয়সালা করতে রাজি হয়েছে।
মিতালি উপরের দিকে তাকিয়ে করজোড়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানালো।
------
সিন্টু কলেজ বেরিয়ে যাবার পরে পরেই উকিল বাবু এলেন।মিতালি দরজা খুলে দিল।পোদ্দারের সাথে ধনঞ্জয় দাঁড়িয়ে।প্রায় ছ ফুটেরও বেশি লম্বা তাগড়া ধনঞ্জয়।লুঙ্গি পরা পেশীবহুল খালি গা দেখলে শিউরে উঠতে হয়।
মিতালি বলল---আসুন আসুন।
তাদের এনে বসালো বৈঠকখানায়।নির্মল এসে বসল।মিতালি সবার জন্য চা করতে গেল।
পোদ্দার চোখ টিপে দুঁদে উকিলের মত হাসি হাসি মুখে বললেন---বলুন জয়নাল মন্ডল? আমার মক্কেল কিন্তু আপনাকে ভালো রকম টাকা দেবে।
জয়নাল যেন এধার ওধার কি দেখছে।
নির্মল আর উৎকন্ঠা চেপে রাখতে পারছে না।সে সুরাহা চাইছে।তা নাহলে তার জীবনে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
---বলুন বলুন? কতটাকা চান?
---দেখুন বাবু আমি কুলি মজুর লোক।আমার আর টাকা পয়সা লিয়ে কি হবে।তবু টাকা পয়সা যখন দিবেন তখন কুড়ি হাজার টাকায় রফা।
কথাটা যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না নির্মলের।তার জীবনের সমূহ সর্বনাশ যেখানে হতে যাচ্ছিল সেখানে মাত্র কুড়ি হাজার টাকায় রফা!
----ঠিক আছে।আমি এখুনি দিয়ে দিচ্ছি।পোদ্দার মশাই তবে কাগজ পত্তর রেডি করুন।
পোদ্দার মশাই হেসে উঠলেন---আরে নির্মল বাবু আপনার এই ঝামেলায় বোধ হয় বোধবুদ্ধি গেছে।এ সব বিষয়ে কাগজ পত্তর হয় নাকি? কি লিখবেন তাতে 'কুড়িহাজার টাকার বিনিময়ে আমি সাক্ষী দিতে বাধ্য থাকিবনা বাধ্য থাকিলাম'?
নির্মল হো হো করে হেসে উঠল।মিতালি রান্না ঘর থেকে হাসির শব্দ পেল। চা দিয়ে গেল মিতালি।নির্মল বলল--তবে আমি টাকাটা নিয়ে আসি।
জয়নাল হলদে দাঁত বের করে হে হে করে হেসে বলল---আমি কুলি মানুষ বাবু।এখুনি কাজে যাবো।ইস্টিশনে চুরি খুব হয়।এত টাকা লয়ে কি করব।আপনি ইস্টিশনে এসে বিকালে দিবেন।
---হোক হোক তবে।এই কথা।
পোদ্দার জয়নালকে নিয়ে চলে যেতেই নির্মল বলল---দেখলে মিতু শেষমেশ ধড়ে প্রাণ এলো।
মিতালি বলল---সকাল থেকে তো কিছুই খেলে না।যাও স্নান করে এসো ভাত বেড়ে দিই।