22-01-2021, 02:15 PM
পর্ব তিন (#6-#16)
একটা দোকানে ঢুকে একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম। দোকানি আমাদের জিজ্ঞেস করল কি খাবে? আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি পাওয়া যাবে এই দুপুরে। বললে, ভাত ডাল তরকারি। দেখলাম তিতলির ওই ভাত ডাল তরকারি খাওয়ার ইচ্ছে নেই। দোকানি বলল, পরোটা আছে দেবো? আমি বললাম দাও। দোকানি বলল, কত গ্রাম? তিতলি গাছ থেকে পড়ল, কত গ্রাম মানে? দোকানি বলল, এখানে পরোটা ওজনে বিক্রি হয়। আমি আর তিতলি হেসে ফেললাম। বললাম, আড়াইশো পরোটা দাও। ছোলার ডাল আর পরোটা খেলাম, খাওয়ার পরে তিতলির চেহারায় ভীষণ তৃপ্তির ছটা। কোনদিন বড় রেস্টুরেন্ট ছাড়া কোথাও খাবার খায়নি, সেই কন্যে আজকে আমার সাথে পথের ধারের, তাল পাতার ছাউনি দেওয়া একটা ছোট দোকানে বসে ওজনে করা পরোটা খেল। সেদিন এত ভালো লেগেছিল ওকে, দেখে মনে হচ্ছিল যেন পরোটার সাথে সাথে তিতলিকেও খেয়ে ফেলি। খাওয়া শেষে তালতলা স্টিমার ঘাট থেকে নৌকা করে বিশাল চওড়া গঙ্গা পেরিয়ে পৌঁছালাম কচুবেরিয়া ঘাটে।
নৌকায় চড়ে ওকে বললাম, “কি গো, টাইটেনিক করতে ইচ্ছে করছে নাকি?”
নৌকায় অনেক ভিড়, অনেকে আবার বাইক স্কুটার সাইকেল নিয়েও উঠেছে। নৌকা দুলে দুলে এগোতে লাগলো। তিতলি যে কি না ভিড় ভয় পায়, সেই মেয়ে অনায়াসে ভিড় নৌকায় চড়ে আমার পাশ ঘেঁষে বসে গঙ্গার সৌন্দর্য হৃদয়ঙ্গম করে নিচ্ছে। আমি ওর নীরবতাকে খণ্ডন করলাম না। ওর কাঁধে হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে থাকলাম। মনে হল যেন এক নতুন প্রজাপতির জন্ম দেখছি।
কচুবেড়িয়া ঘাটে নেমে একটা দোকানে বাইকে রেখে দিলাম। তারপরে দুইজনে হাঁটতে হাঁটতে গঙ্গার ধার দিয়ে এগিয়ে গেলাম। গঙ্গার পাড়ে কালো পলি মাটি ভর্তি। কোথাও কোথাও নৌকা তৈরি হচ্ছে। দূরে গঙ্গা বক্ষে বেশ কয়েকটা বিশাল মালবাহী জাহাজ নোঙ্গর করে দাঁড়িয়ে। নদীতে প্রচুর ছোট বড় নৌকা। হাঁটতে হাঁটতে অনেকদুর চলে গেলাম আমরা। নদীর ধারে ছোট ছোট ভেজা ঘাসের জাজিম পাতা। নরম ঘাসের ওপরে জুতো খুলে দুইজনে মিলে হাতে হাত রেখে হেঁটে গেলাম। দুর দিগন্ত পানে চেয়ে দেখি, যেখানে আকাশ মিশে গেছে গঙ্গার সাথে হয়ত বা সাগরের সাথে। নদীর ধারে বেশ ফাঁকা জায়গা দেখে দুইজনে বসে পড়লাম। চুপ করে আমার বাম কাঁধে মাথা রেখে আমার হাত খানি নিজের কোমল হাতের মুঠোর মধ্যে শক্ত করে ধরে বসে রইল তিতলি।
আকাশে এক গাদা বক উড়ে যেতে দেখে আমাকে বলল, “দেখো ওই বক গুলো কত ভাগ্যবান। ওরা যখন খুশি যেখানে খুশি উড়ে চলে যেতে পারে।”
আমি নিজের বাম হাত ছাড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বুকের কাছে টেনে ধরে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি খুশি নও?”
তিতলির গলাটা ধরে এলো, আমার কোলের মধ্যে হাত রেখে বলল, “আমি খুব খুশি, কিন্তু তাও কোথাও যেন আমার একটু ভয় করে জানো।” কাজল কালো নয়নে আমার দিকে দেখে বললে, “আদি, বাবার সাথে তোমাকে কথা বলতে হবে আদি।”
আমি ওর কপালে ঠোঁট চেপে ধরে উষ্ণ চুম্বন এঁকে বললাম, “আমার ওপরে বিশ্বাস আছে?” মাথা দুলিয়ে সায় দিল তিতলি, হ্যাঁ আছে। আমি ওকে আসস্থ করে বললাম, “সময় আসুক, তোমার কলেজ শেষ হোক। তোমার বাবার সাথে আমি নিশ্চয় কথা বলব।” একটু থেমে জিজ্ঞেস করলাম, “কাকিমা কি জানে?”
তিতলির ঠোঁটে মৃদু একটা হাসির রেখা ফুতে উঠল, “হ্যাঁ, মা বুঝে গেছে। ওই পা মচকাবার দিন থেকেই মা বুঝে গেছে। মাকে নিয়ে সমস্যা নয় আদি। তবে কি জানো, আমাদের বাড়িতে মায়ের কথায় কাকিমার কথায় কেউ বিশেষ কান দেয় না। বাবা কাকা আর পিসির কথা চলে বেশি। আদি তুমি বাবাকে মানিয়ে নিতে পারবে তো?”
এই প্রশ্নের উত্তর নিজেও জানি না। চোখের সামনে সিনেমার মতন মনে হল সব। জাঁদরেল বাবা মেয়েকে একটা ঘরে বন্দী করে রেখেছে, আমি হিরোর মতন ওর বাবার সাথে ঝগড়া করে রাজকন্যেকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি।
মনে মনে হেসে ফেললেও ওকে আসস্থ করে বললাম, “কাকিমা যখন সাথে আছে তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।”
তিতলি মৃদু হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার বাড়ির কি অবস্থা? মাসিমা মেসো মশায় জানেন আমাদের ব্যাপারে?”
প্রশ্নটা ভীষণ কঠিন। বুক ভাঙা একটা হাসি হাসলাম ওর প্রশ্ন শুনে। আমার হাসি দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল তিতলি। আমি ওকে বললাম, “আমার মা সব জানে। প্রথম দিন থেকেই মাকে আর দিম্মাকে তোমার কথা সব বলেছি। আর বাবার ব্যাপারে, আমি কি করি না করি সে নিয়ে তার বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই।”
হাজার প্রশ্ন নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল তিতলি, “তুমি কোনদিন তোমার বাবা মায়ের ব্যাপারে কোন কথা বল না। কেন আদি?”
মায়ের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠল। আমার দৃষ্টি একটু ঝাপসা হয়ে গেল। তিতলির চোখে হাজার প্রশ্ন। আমি মৃদু হেসে ওকে বললাম, “আমার মা আমার কাছেই আছে। দেখবে?” বুঝতে পারল না তিতলি। আমি পার্স খুলে মায়ের ছবি দেখিয়ে ওকে বললাম, “আমার মা।” বলতে বলতে আমার গলা ধরে এলো।
আমার চেহারা দুই হাতে আঁজলা করে তুলে ধরল তিতলি। উষ্ণ তালুর পরশে আমার বুকের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। বুদ্ধমতি প্রেয়সী আমার ব্যাথা বেদনা অনুধাবন করতে সক্ষম। তিতলি কম্পিত কণ্ঠে আমাকে বলল, “আমি সত্যি জানতাম না আদি।”
আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। তিতলি তখন আমার গালে কোমল উষ্ণ হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি বলতে শুরু করলাম আমার কাহিনী। চুপ করে শুনতে লাগলো এই বুধাদিত্যের ভাঙা বুকের গল্প। দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে জল পড়ছে ওর। টিয়াপাখির মতন নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে দুঃখে আর চাপা কান্নায়।
সব কিছু বলার পরে আমি ওকে বললাম, “আমি বড় অভাগা, তিতলি। ছোট বেলায় মা চলে গেলেন, বাবা থেকেও নেই।”
আমার মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে রইল তিতলি। তিতলির চোখ জোড়া আমার মতন কান্নায় ভেসে গেছে। তাও তিতলি, ঠোঁটে মৃদু হাসি টেনে আমার মাথা উঠিয়ে কপালে একটা ছোট চুমু খেয়ে বলল, “তুমি অভাগা নও আদি। আমার আদি কখন অভাগা হতেই পারে না।”
সূর্য পশ্চিমে পাটে বসে গেছে। গঙ্গার জলে কমলা রঙ ধরে গেছে। দুর আকাশের মেঘের রঙ বদলে গেছে। ধিরে ধিরে পুব আকাশে আঁধার নেমে আসছে। দুই রিক্ত প্রান পরস্পরকে প্রানপনে নিজের নিজের বাহুপাশে বেঁধে নীরবে বসে। মধু ঢালা সেই দিনের সন্ধিক্ষনে দুই হৃদয় মাঝে নীরব প্রেমের কথোপকথন শুরু করে দেয়।
আমি বেশ কিছুক্ষন পরে নীরবতা ভঙ্গ করে তিতলিকে বললাম, “এই...”
যদিও তিতলি আমার পাশেই বসা তাও, বহুদুর থেকে মৃদু মদির কন্ঠ স্বর ভেসে এলো, “কিইই...”
আমি ওকে বললাম, “এই দেখো, সন্ধ্যে হয়ে গেছে। এবারে বাড়ি ফিরতে হবে।”
নাতি বাচকে মাথা নাড়ল তিতলি, “না, আজকে আমি তোমার সাথেই থাকব। ওই পাড়ে একটা পিসিও থেকে পারমিতাকে ফোন করে দেব।”
আমি চমকে উঠলাম ওর কথা শুনে, “তুমি পাগল নাকি? যদি তোমার বাবা অথবা মা তোমার সাথে কথা বলতে চায় তখন কি করবে?”
দুই পেলব বাহু দিয়ে নাগপাশের বাঁধনে বেঁধে আমাকে বলল, “আমাকে তোমার সাথে কোথাও নিয়ে চল আদি। আমি শুধু তোমার সাথে থাকতে চাই।”
ওর কাজল কালো ভাসা ভাসা নয়নের চাহনি দেখে রবি ঠাকুরের কবিতা মনে পরে গেল। দিনের শেষে আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ। আমি তিতলির কোমল হাত দুটো ধরে সামনে দাঁড় করিয়ে কাজল কালো টানাটানা আঁখির দিকে এক দৃষ্টে চেয়েছিলাম। ভীষণ মোহময়ী ভাসা ভাসা কাজল টানা নয়ন তিতলির, হারিয়ে যেতে বড্ড ইচ্ছে করে ওই কাজলা দীঘির জলে। ভীষণ মোহময় এই চোখ জোড়া, তীব্র আকর্ষণে বেঁধে রেখেছে আমাকে।
আমার মাথা নেমে এলো তিতলির মুখের ওপরে, “তোমায় ঠিক কবে থেকে ভালোবেসে ফেলেছি, নিজেই জানি না।”
তিতলি এগিয়ে এলো আমার বুকের কাছে। পীনোন্নত নিটোল স্তন যুগল পিষ্ট হয়ে গেল আমার প্রসস্থ ছাতির ওপরে। আমার জামার কলার দুই হাতে খামচে ধরে মাথা উঠিয়ে তাকাল। তিতলির নয়ন জোড়া প্রেমশিক্ত অশ্রুতে টলটল করছে।
তিরতির করে কেঁপে ওঠে লাল শিক্ত ঠোঁট জোড়া, “তুমি শুধু কাঁদাতেই পারো। তোমার জন্য কতদিন ঘুমাতে পারিনি জানো। শুধু মনে হত কেন করলে? কেন আমাকে একা একা ফাঁকা টাক্সিতে উঠিয়ে চলে গেলে।”
তিতলির পান পাতার মতন মুখ খানি দুই হাতে আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরলাম। কোমল গালের ওপর আমার উষ্ণ হাতের ছোঁয়ায়, প্রেয়সীর শ্বাস ঘন হয়ে এলো। মাথা নেমে যায় প্রেয়সীর মাথার ওপরে, নাকের কাছে চলে আসে নাক। আমার বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে প্রতি মুহূর্তে। সেই সাথে রূপসী ললনার হৃদ কম্পন নিজের ছাতির ওপরে অনুভব করতে পারলাম। তিতলির চোখের কোল বেয়ে এক বিন্দু অশ্রু আমাকে ভীষণ ভাবেই কাঁদিয়ে তোলে।
বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে তিতলির কোমল গোলাপি গালের অশ্রুধারা মুছিয়ে মিহি কণ্ঠে বললাম, “এই সোনা, কাঁদে না, দেখো আমি তোমার সামনেই আছি। সেই বুধাদিত্য আর নেই, এটা তোমার আদি।” আমি আলতো করে তিতলির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলাম। বুক ভরিয়ে তুললাম ওর গায়ের মিষ্টি গন্ধে।
আমাকে দুই পেলব বাহু দিয়ে আষ্টেপিষ্টে প্রানপনে জড়িয়ে ধরল। নিজেকে উজাড় করে দিল আমার বুকের ওপরে। আমার ঠোঁট নেমে এলো তিতলির পদ্মকুড়ির মতন টানা টানা চোখের পাতার ওপরে। তিতলি চোখ বন্ধ করে নিল। আমি আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলাম প্রেয়সীর চোখের পাতায়। একবার বাম পাশে, তারপরে ডান দিকের চোখের পাতায়। শিক্ত উষ্ণ পরশে কেঁপে ওঠে প্রেয়সীর কমনীয় নধর দেহপল্লব। গঙ্গা বক্ষে দুই তৃষ্ণার্ত কপোতী চোখ বুজে ঠোঁট জোড়া আলতো মেলে ধরে আসন্ন অধর সুধার আশায়।
সারা হৃদয় ছাপিয়ে মিহি কণ্ঠে বলে ওঠে তিতলি, “আদি আমি তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারব না, আদি।”
আমি তিতলির কাঁপা ঠোঁটের ওপর আলতো করে জিব বুলিয়ে মিহি কণ্ঠে বললাম, “এবারে এই হাত ছাড়ব বলে ধরিনি, তিতলি।”
মৃদু কম্পমান ঠোঁটে তিতলি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। আলতো করেই তিতলি কুসুম কোমল ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলাম। উপরের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে আলতো একটা চুমু দিলাম। প্রেয়সীর মুখ ছেড়ে দিয়ে বাম হাতে তিতলির ঘাড় ধরে নিজের ঠোঁটের সাথে ওর ঠোঁট চেপে ধরলাম। অন্য হাত নেমে গেল তিতলির পিঠের ওপর। চোখ বুজে আলতো করে চুষে দিলাম মিষ্টি রসালো শিক্ত অধর। একবার ওপরের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মধ্যে আলতো চুষে নিচের ঠোঁট চুষে দিলাম। তিতলির পিঠের ওপরে হাতের তালু চেপে ধরে প্রেয়সীর নধর উষ্ণ দেহপল্লব নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দিলাম। আমার পিঠের ওপরে চলে আসে তিতলির হাত। জামা খামচে শক্ত করে ধরে নিজেকে ঢেলে দেয় আমার প্রেমগভীর চুম্বনে। খোলা মাঠ, গঙ্গার শীতের হিমেল হাওয়া কোন কিছুই বাঁধ মানে না। অনাবিল প্রেমের চুম্বনে হারিয়ে যায় দুটি প্রেম ঘন প্রান। না আমার হৃদয় মাঝে তখন কোন কাম তাড়নায় ছিল না। শুধু মাত্র অনাবিল প্রেমের জোয়ারে ভেসে যেতে উন্মুখ হুয়ে উঠেছিল আমার হৃদয়। আমার বলিষ্ঠ বাহুপাশের আলিঙ্গনে হারিয়ে যেতে উন্মুখ হয়ে ওঠে তিতলির নির্মল প্রশান্ত প্রান। প্রেমের তরল আগুনে একটু একটু করে গলতে শুরু করে প্রেয়সীর নধর আকর্ষণীয় দেহবল্লরী। প্রগাড় ভালোবাসার চুম্বনের আবেশে শ্বাস থেমে যায় তিতলির। আমি প্রেয়সীর শিক্ত মুখগহবরে জিব ঢুকিয়ে আলতো করে তিতলির শিক্ত কোমল জিব নিয়ে খেলা করতে শুরু করে দিলাম।
আমার বাম হাত প্রেয়সীর ঘাড় ছাড়িয়ে উঠে যায় তিতলির মাথার পেছনে। আলতো মুঠোতে মাথার রেশমি চুলের গোছা ধরে তিতলির শিক্ত উষ্ণ মুখের ভেতর জিব দিয়ে খেলতে শুরু করে দিলাম। সারা শরীর বয়ে অনির্বচনীয় আনন্দ অনুভূতি খেলে বেড়ায়। পূর্ণবয়স্ক কোন যুবতীকে প্রথম প্রেম নিবেদন করলাম। তিতলির প্রথম প্রেমের চুম্বন স্মরণীয় করতে চাই। সময় থেমে যায় আমাদের চারপাশে, এইভাবে যদি সারারাত শুধু চুম্বনে হারিয়ে যেতে পারতাম তাহলে সত্যি কত ভালো হত। হটাত করে ঠোঁট গোল করে তিতলির দুই ঠোঁটের ওপর চেপে মুখের লালা চুষে নিলাম। আমার এই অদ্ভুত পাগলামো প্রক্রিয়ায় প্রেয়সীর নধর আকর্ষণীয় দেহবল্লরি কাল বৈশাখীর ঝড়ে দুলে ওঠা তরুর মতন কেঁপে ওঠে। উষ্ণ এক শ্বাস আলতো করেই তিতলির গলার ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে। গলা কেঁপে ওঠে তিতলির। প্রেয়সীর সর্বাঙ্গ থরথর করে কাঁপছে আমার বাহুপাশের আবর্তে। যেন ওর হৃদয় চেঁচিয়ে কিছু বলতে চায়, ছাতির ওপরে ওর হৃদয়ের কম্পন কথা বলে, চুম্বনেই এত প্রেম, উম্মম্মম্ম, তাহলে তোমার বুকের ভেতরে সেঁধিয়ে গেলে কি কি খুঁজে পাবে।
অল্পক্ষন না অনেক্ষন, কারুর ঠিক খেয়াল নেই। প্রেয়সীর সুমিষ্ট অধর ছাড়তেই, আমার প্রসস্থ ছাতির ওপরে মাথা গুঁজে নিঃসাড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তিতলি। দুই বলিষ্ঠ বাহুডোরে আষ্টেপিষ্টে তিতলির কমনীয় দেহলতাকে বেঁধে ফেললাম। ওর রেমশি মাথার ওপরে গাল চেপে গঙ্গার বিশাল পাড়ে, খালি মাঠের মাঝে, খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ। আমাদের কারুর মুখে কোন শব্দ নেই, শুধু মাত্র দুটো প্রেমে বিভোর প্রানের হৃদস্পন্দন শোনা যায়, ধুকপুক ধুকপুক। বিনা বাক্যব্যায়েই দুই প্রেম ঘন কপোত কপোতীর হৃদয় মাঝে যে বাক্যালাপ ঘটে যায়, তার একমাত্র সাক্ষী গঙ্গার জল, এই সন্ধ্যের আকাশ, দূরে উড়ে যাওয়া বকের দল, শালিক চড়াই, এই হীমেল হাওয়া। দুরে কোন গাছের থেকে কোন এক নাম না জানা পাখী ডেকে উঠতেই সম্বিত ফিরে পেলাম। প্রগাড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকা দুটো প্রান, আবার জেগে উঠল। আমার বুকের ওপরে মৃদু কেঁপে উঠল তিতলি। এই হিমেল বাতাস থেকে বাঁচানোর জন্য আমি প্রেমিকার উষ্ণ দেহলতাকে দুই হাতে আরো বেশি করে চেপে ধরে রইলাম নিজের বুকের কাছে।
আমার জামা খামচে ধরে জামার ওপর দিয়েই বুকের বাম দিকে ঠোঁট চেপে ধরে প্রেমঘন কণ্ঠে বলে প্রেয়সী, “তোমায় ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।”
আমি ললনার ফর্সা থুঁতনি ধরে আলতো নাড়িয়ে বললাম, “এমন দুষ্টুমি করে না সোনা। বাড়ি ফিরতেই হবে, না হলে হিতে বিপরিত হবে।”
হাতে হাত রেখেই ফিরে আসা হল ঘাটে। যে তিতলিকে সকালে এই গঙ্গা বক্ষে নিয়ে এসেছিলাম, সেই তিতলি বদলে গেছে। মুখমন্ডলে প্রশান্তির পরিতৃপ্তির ছটা বিচ্ছুরিত। আমার বাজু দুই হাতে আঁকরে ধরে নৌকায় চাপল। আর ভয় নেই, ওর খুঁজে পেয়েছে নিজের আদি, আর আমি খুঁজে পেয়েছি আমার ভালোবাসার নাম।
পাগলের মতন বাইক ছুটিয়ে দিলাম। দেরি হলেই তিতলির বাড়িতে ধুন্ধুমার কান্ড ঘটে যেতে পারে। হয়ত ওর খোঁজে যদি ওর বাবা মা পারমিতার বাড়িতে চলে যায় তখন খুব মুশকিলে পরে যাবো। সেদিকে কোন খেয়াল নেই ললনার, দুই হাতে আমাকে আঁকরে ধরে পিঠের ওপরে গাল ঠেকিয়ে সারাটা রাস্তা চুপ করে বসেছিল। কাজিপাড়া পৌঁছালাম তখন বাজে রাত ন’টা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার পিঠের ওপরে মধুর প্রলেপের মতন লেপটে বসেছিল তিতলি। যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল।
গলির মুখে বাইক থামিয়ে ডাক দিলাম প্রেয়সীকে, “এই...”
পেলব বাহুর বেড় আলতো করে আমার দেহ থেকে খুলে গেল। কাঁধের ওপরে থুঁতনি রেখে জিজ্ঞেস করল, “এত তাড়াতাড়ি বাড়ি এসে গেল?”
আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম, “সোনা, চার ঘন্টার মতন টানা বাইক চালিয়েছি।”
মুখ ভার হয়ে গেল রূপসী ললনার। বেদনাটা নিজের জন্য নয় আমার জন্য, “ইসসস বাড়িতে থাকলে তোমার পিঠ কাঁধ একটু টিপে দিতে পারতাম।” বলেই আমার কাঁধ আর বাজু কোমল হাতে টিপতে শুরু করে দিল।
আমি ওকে থামিয়ে বললাম, “রাস্তায় আছি সোনা...”
যে মেয়ে এতদিন একটা লাজুক মোড়কের আবদ্ধে ছিল সেই প্রজাপতি আজকে ডানা মেলে দিয়েছে। মিষ্টি হেসে বলল আমাকে, “তাতে কি হয়েছে, আমি তো অন্য কারুর বয়ফ্রেন্ডকে করছি না।”
আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, “পাগল তুমি, সত্যি।”
ধিরে ধিরে নেমে গেল আমার বাইক থেকে। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাত পেতে বলল, “দাও...”
আমি কিছু না বুঝেই ওর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে চুমু খেতে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে আলতো চাঁটি মেরে বললে ললনা, “চাবি দাও।”
প্রশ্ন করলাম, “বাইকের চাবি?”
একটু রাগ একটু হাসি মিশ্রিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি পাগল, বাড়ির চাবি দাও।”
আমি পড়লাম আকাশ থেকে, “কেন?”
কিঞ্চিত আদেশের সুরে বললে ললনা, “আমার বাড়ি তাই চাবি চাইছি।”
হেসে ফেললাম আমি, তিতলির কন্ঠস্বর অনেক বদলে গেছে, সেই কচি তিতলি আর নেই। আমার সামনে দাঁড়িয়ে এক সম্পূর্ণ নারী, সুন্দরী প্রজাপতি ডানা মেলে দিয়েছে। পকেট থেকে বাড়ির চাবি ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম। বাইকের বাক্সে একটা অতিরিক্ত চাবি থাকে। ডান হাতের কোমল তর্জনী নিজের ঠোঁটের ওপরে রেখে আলতো চুমু খেয়ে আমার দিকে নাড়িয়ে গলি পর্যন্ত হেঁটে চলে গেল। আমি অবাক দৃষ্টি নিয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উচ্ছল তরঙ্গিণী নয়, শান্ত গঙ্গার মতন চলন ওর। গলির বাঁকে আধো আলো আঁধারে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে সেদিন প্রথম বার হাত নাড়িয়ে হারিয়ে গেল গলির মধ্যে। সারা রাত শুধু ওর প্রথম প্রেমের চুম্বন বুকের মধ্যে এঁকে আর ঘুমাতে ইচ্ছে করল না।
একটা দোকানে ঢুকে একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম। দোকানি আমাদের জিজ্ঞেস করল কি খাবে? আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি পাওয়া যাবে এই দুপুরে। বললে, ভাত ডাল তরকারি। দেখলাম তিতলির ওই ভাত ডাল তরকারি খাওয়ার ইচ্ছে নেই। দোকানি বলল, পরোটা আছে দেবো? আমি বললাম দাও। দোকানি বলল, কত গ্রাম? তিতলি গাছ থেকে পড়ল, কত গ্রাম মানে? দোকানি বলল, এখানে পরোটা ওজনে বিক্রি হয়। আমি আর তিতলি হেসে ফেললাম। বললাম, আড়াইশো পরোটা দাও। ছোলার ডাল আর পরোটা খেলাম, খাওয়ার পরে তিতলির চেহারায় ভীষণ তৃপ্তির ছটা। কোনদিন বড় রেস্টুরেন্ট ছাড়া কোথাও খাবার খায়নি, সেই কন্যে আজকে আমার সাথে পথের ধারের, তাল পাতার ছাউনি দেওয়া একটা ছোট দোকানে বসে ওজনে করা পরোটা খেল। সেদিন এত ভালো লেগেছিল ওকে, দেখে মনে হচ্ছিল যেন পরোটার সাথে সাথে তিতলিকেও খেয়ে ফেলি। খাওয়া শেষে তালতলা স্টিমার ঘাট থেকে নৌকা করে বিশাল চওড়া গঙ্গা পেরিয়ে পৌঁছালাম কচুবেরিয়া ঘাটে।
নৌকায় চড়ে ওকে বললাম, “কি গো, টাইটেনিক করতে ইচ্ছে করছে নাকি?”
নৌকায় অনেক ভিড়, অনেকে আবার বাইক স্কুটার সাইকেল নিয়েও উঠেছে। নৌকা দুলে দুলে এগোতে লাগলো। তিতলি যে কি না ভিড় ভয় পায়, সেই মেয়ে অনায়াসে ভিড় নৌকায় চড়ে আমার পাশ ঘেঁষে বসে গঙ্গার সৌন্দর্য হৃদয়ঙ্গম করে নিচ্ছে। আমি ওর নীরবতাকে খণ্ডন করলাম না। ওর কাঁধে হাত রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে থাকলাম। মনে হল যেন এক নতুন প্রজাপতির জন্ম দেখছি।
কচুবেড়িয়া ঘাটে নেমে একটা দোকানে বাইকে রেখে দিলাম। তারপরে দুইজনে হাঁটতে হাঁটতে গঙ্গার ধার দিয়ে এগিয়ে গেলাম। গঙ্গার পাড়ে কালো পলি মাটি ভর্তি। কোথাও কোথাও নৌকা তৈরি হচ্ছে। দূরে গঙ্গা বক্ষে বেশ কয়েকটা বিশাল মালবাহী জাহাজ নোঙ্গর করে দাঁড়িয়ে। নদীতে প্রচুর ছোট বড় নৌকা। হাঁটতে হাঁটতে অনেকদুর চলে গেলাম আমরা। নদীর ধারে ছোট ছোট ভেজা ঘাসের জাজিম পাতা। নরম ঘাসের ওপরে জুতো খুলে দুইজনে মিলে হাতে হাত রেখে হেঁটে গেলাম। দুর দিগন্ত পানে চেয়ে দেখি, যেখানে আকাশ মিশে গেছে গঙ্গার সাথে হয়ত বা সাগরের সাথে। নদীর ধারে বেশ ফাঁকা জায়গা দেখে দুইজনে বসে পড়লাম। চুপ করে আমার বাম কাঁধে মাথা রেখে আমার হাত খানি নিজের কোমল হাতের মুঠোর মধ্যে শক্ত করে ধরে বসে রইল তিতলি।
আকাশে এক গাদা বক উড়ে যেতে দেখে আমাকে বলল, “দেখো ওই বক গুলো কত ভাগ্যবান। ওরা যখন খুশি যেখানে খুশি উড়ে চলে যেতে পারে।”
আমি নিজের বাম হাত ছাড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বুকের কাছে টেনে ধরে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি খুশি নও?”
তিতলির গলাটা ধরে এলো, আমার কোলের মধ্যে হাত রেখে বলল, “আমি খুব খুশি, কিন্তু তাও কোথাও যেন আমার একটু ভয় করে জানো।” কাজল কালো নয়নে আমার দিকে দেখে বললে, “আদি, বাবার সাথে তোমাকে কথা বলতে হবে আদি।”
আমি ওর কপালে ঠোঁট চেপে ধরে উষ্ণ চুম্বন এঁকে বললাম, “আমার ওপরে বিশ্বাস আছে?” মাথা দুলিয়ে সায় দিল তিতলি, হ্যাঁ আছে। আমি ওকে আসস্থ করে বললাম, “সময় আসুক, তোমার কলেজ শেষ হোক। তোমার বাবার সাথে আমি নিশ্চয় কথা বলব।” একটু থেমে জিজ্ঞেস করলাম, “কাকিমা কি জানে?”
তিতলির ঠোঁটে মৃদু একটা হাসির রেখা ফুতে উঠল, “হ্যাঁ, মা বুঝে গেছে। ওই পা মচকাবার দিন থেকেই মা বুঝে গেছে। মাকে নিয়ে সমস্যা নয় আদি। তবে কি জানো, আমাদের বাড়িতে মায়ের কথায় কাকিমার কথায় কেউ বিশেষ কান দেয় না। বাবা কাকা আর পিসির কথা চলে বেশি। আদি তুমি বাবাকে মানিয়ে নিতে পারবে তো?”
এই প্রশ্নের উত্তর নিজেও জানি না। চোখের সামনে সিনেমার মতন মনে হল সব। জাঁদরেল বাবা মেয়েকে একটা ঘরে বন্দী করে রেখেছে, আমি হিরোর মতন ওর বাবার সাথে ঝগড়া করে রাজকন্যেকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি।
মনে মনে হেসে ফেললেও ওকে আসস্থ করে বললাম, “কাকিমা যখন সাথে আছে তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।”
তিতলি মৃদু হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার বাড়ির কি অবস্থা? মাসিমা মেসো মশায় জানেন আমাদের ব্যাপারে?”
প্রশ্নটা ভীষণ কঠিন। বুক ভাঙা একটা হাসি হাসলাম ওর প্রশ্ন শুনে। আমার হাসি দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল তিতলি। আমি ওকে বললাম, “আমার মা সব জানে। প্রথম দিন থেকেই মাকে আর দিম্মাকে তোমার কথা সব বলেছি। আর বাবার ব্যাপারে, আমি কি করি না করি সে নিয়ে তার বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই।”
হাজার প্রশ্ন নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল তিতলি, “তুমি কোনদিন তোমার বাবা মায়ের ব্যাপারে কোন কথা বল না। কেন আদি?”
মায়ের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠল। আমার দৃষ্টি একটু ঝাপসা হয়ে গেল। তিতলির চোখে হাজার প্রশ্ন। আমি মৃদু হেসে ওকে বললাম, “আমার মা আমার কাছেই আছে। দেখবে?” বুঝতে পারল না তিতলি। আমি পার্স খুলে মায়ের ছবি দেখিয়ে ওকে বললাম, “আমার মা।” বলতে বলতে আমার গলা ধরে এলো।
আমার চেহারা দুই হাতে আঁজলা করে তুলে ধরল তিতলি। উষ্ণ তালুর পরশে আমার বুকের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। বুদ্ধমতি প্রেয়সী আমার ব্যাথা বেদনা অনুধাবন করতে সক্ষম। তিতলি কম্পিত কণ্ঠে আমাকে বলল, “আমি সত্যি জানতাম না আদি।”
আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। তিতলি তখন আমার গালে কোমল উষ্ণ হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি বলতে শুরু করলাম আমার কাহিনী। চুপ করে শুনতে লাগলো এই বুধাদিত্যের ভাঙা বুকের গল্প। দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে জল পড়ছে ওর। টিয়াপাখির মতন নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে দুঃখে আর চাপা কান্নায়।
সব কিছু বলার পরে আমি ওকে বললাম, “আমি বড় অভাগা, তিতলি। ছোট বেলায় মা চলে গেলেন, বাবা থেকেও নেই।”
আমার মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে রইল তিতলি। তিতলির চোখ জোড়া আমার মতন কান্নায় ভেসে গেছে। তাও তিতলি, ঠোঁটে মৃদু হাসি টেনে আমার মাথা উঠিয়ে কপালে একটা ছোট চুমু খেয়ে বলল, “তুমি অভাগা নও আদি। আমার আদি কখন অভাগা হতেই পারে না।”
সূর্য পশ্চিমে পাটে বসে গেছে। গঙ্গার জলে কমলা রঙ ধরে গেছে। দুর আকাশের মেঘের রঙ বদলে গেছে। ধিরে ধিরে পুব আকাশে আঁধার নেমে আসছে। দুই রিক্ত প্রান পরস্পরকে প্রানপনে নিজের নিজের বাহুপাশে বেঁধে নীরবে বসে। মধু ঢালা সেই দিনের সন্ধিক্ষনে দুই হৃদয় মাঝে নীরব প্রেমের কথোপকথন শুরু করে দেয়।
আমি বেশ কিছুক্ষন পরে নীরবতা ভঙ্গ করে তিতলিকে বললাম, “এই...”
যদিও তিতলি আমার পাশেই বসা তাও, বহুদুর থেকে মৃদু মদির কন্ঠ স্বর ভেসে এলো, “কিইই...”
আমি ওকে বললাম, “এই দেখো, সন্ধ্যে হয়ে গেছে। এবারে বাড়ি ফিরতে হবে।”
নাতি বাচকে মাথা নাড়ল তিতলি, “না, আজকে আমি তোমার সাথেই থাকব। ওই পাড়ে একটা পিসিও থেকে পারমিতাকে ফোন করে দেব।”
আমি চমকে উঠলাম ওর কথা শুনে, “তুমি পাগল নাকি? যদি তোমার বাবা অথবা মা তোমার সাথে কথা বলতে চায় তখন কি করবে?”
দুই পেলব বাহু দিয়ে নাগপাশের বাঁধনে বেঁধে আমাকে বলল, “আমাকে তোমার সাথে কোথাও নিয়ে চল আদি। আমি শুধু তোমার সাথে থাকতে চাই।”
ওর কাজল কালো ভাসা ভাসা নয়নের চাহনি দেখে রবি ঠাকুরের কবিতা মনে পরে গেল। দিনের শেষে আলোয় রাঙ্গা সেদিন চৈত্র মাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ। আমি তিতলির কোমল হাত দুটো ধরে সামনে দাঁড় করিয়ে কাজল কালো টানাটানা আঁখির দিকে এক দৃষ্টে চেয়েছিলাম। ভীষণ মোহময়ী ভাসা ভাসা কাজল টানা নয়ন তিতলির, হারিয়ে যেতে বড্ড ইচ্ছে করে ওই কাজলা দীঘির জলে। ভীষণ মোহময় এই চোখ জোড়া, তীব্র আকর্ষণে বেঁধে রেখেছে আমাকে।
আমার মাথা নেমে এলো তিতলির মুখের ওপরে, “তোমায় ঠিক কবে থেকে ভালোবেসে ফেলেছি, নিজেই জানি না।”
তিতলি এগিয়ে এলো আমার বুকের কাছে। পীনোন্নত নিটোল স্তন যুগল পিষ্ট হয়ে গেল আমার প্রসস্থ ছাতির ওপরে। আমার জামার কলার দুই হাতে খামচে ধরে মাথা উঠিয়ে তাকাল। তিতলির নয়ন জোড়া প্রেমশিক্ত অশ্রুতে টলটল করছে।
তিরতির করে কেঁপে ওঠে লাল শিক্ত ঠোঁট জোড়া, “তুমি শুধু কাঁদাতেই পারো। তোমার জন্য কতদিন ঘুমাতে পারিনি জানো। শুধু মনে হত কেন করলে? কেন আমাকে একা একা ফাঁকা টাক্সিতে উঠিয়ে চলে গেলে।”
তিতলির পান পাতার মতন মুখ খানি দুই হাতে আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরলাম। কোমল গালের ওপর আমার উষ্ণ হাতের ছোঁয়ায়, প্রেয়সীর শ্বাস ঘন হয়ে এলো। মাথা নেমে যায় প্রেয়সীর মাথার ওপরে, নাকের কাছে চলে আসে নাক। আমার বুকের ভেতর ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে প্রতি মুহূর্তে। সেই সাথে রূপসী ললনার হৃদ কম্পন নিজের ছাতির ওপরে অনুভব করতে পারলাম। তিতলির চোখের কোল বেয়ে এক বিন্দু অশ্রু আমাকে ভীষণ ভাবেই কাঁদিয়ে তোলে।
বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে তিতলির কোমল গোলাপি গালের অশ্রুধারা মুছিয়ে মিহি কণ্ঠে বললাম, “এই সোনা, কাঁদে না, দেখো আমি তোমার সামনেই আছি। সেই বুধাদিত্য আর নেই, এটা তোমার আদি।” আমি আলতো করে তিতলির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলাম। বুক ভরিয়ে তুললাম ওর গায়ের মিষ্টি গন্ধে।
আমাকে দুই পেলব বাহু দিয়ে আষ্টেপিষ্টে প্রানপনে জড়িয়ে ধরল। নিজেকে উজাড় করে দিল আমার বুকের ওপরে। আমার ঠোঁট নেমে এলো তিতলির পদ্মকুড়ির মতন টানা টানা চোখের পাতার ওপরে। তিতলি চোখ বন্ধ করে নিল। আমি আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলাম প্রেয়সীর চোখের পাতায়। একবার বাম পাশে, তারপরে ডান দিকের চোখের পাতায়। শিক্ত উষ্ণ পরশে কেঁপে ওঠে প্রেয়সীর কমনীয় নধর দেহপল্লব। গঙ্গা বক্ষে দুই তৃষ্ণার্ত কপোতী চোখ বুজে ঠোঁট জোড়া আলতো মেলে ধরে আসন্ন অধর সুধার আশায়।
সারা হৃদয় ছাপিয়ে মিহি কণ্ঠে বলে ওঠে তিতলি, “আদি আমি তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারব না, আদি।”
আমি তিতলির কাঁপা ঠোঁটের ওপর আলতো করে জিব বুলিয়ে মিহি কণ্ঠে বললাম, “এবারে এই হাত ছাড়ব বলে ধরিনি, তিতলি।”
মৃদু কম্পমান ঠোঁটে তিতলি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল। আলতো করেই তিতলি কুসুম কোমল ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলাম। উপরের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে আলতো একটা চুমু দিলাম। প্রেয়সীর মুখ ছেড়ে দিয়ে বাম হাতে তিতলির ঘাড় ধরে নিজের ঠোঁটের সাথে ওর ঠোঁট চেপে ধরলাম। অন্য হাত নেমে গেল তিতলির পিঠের ওপর। চোখ বুজে আলতো করে চুষে দিলাম মিষ্টি রসালো শিক্ত অধর। একবার ওপরের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মধ্যে আলতো চুষে নিচের ঠোঁট চুষে দিলাম। তিতলির পিঠের ওপরে হাতের তালু চেপে ধরে প্রেয়সীর নধর উষ্ণ দেহপল্লব নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দিলাম। আমার পিঠের ওপরে চলে আসে তিতলির হাত। জামা খামচে শক্ত করে ধরে নিজেকে ঢেলে দেয় আমার প্রেমগভীর চুম্বনে। খোলা মাঠ, গঙ্গার শীতের হিমেল হাওয়া কোন কিছুই বাঁধ মানে না। অনাবিল প্রেমের চুম্বনে হারিয়ে যায় দুটি প্রেম ঘন প্রান। না আমার হৃদয় মাঝে তখন কোন কাম তাড়নায় ছিল না। শুধু মাত্র অনাবিল প্রেমের জোয়ারে ভেসে যেতে উন্মুখ হুয়ে উঠেছিল আমার হৃদয়। আমার বলিষ্ঠ বাহুপাশের আলিঙ্গনে হারিয়ে যেতে উন্মুখ হয়ে ওঠে তিতলির নির্মল প্রশান্ত প্রান। প্রেমের তরল আগুনে একটু একটু করে গলতে শুরু করে প্রেয়সীর নধর আকর্ষণীয় দেহবল্লরী। প্রগাড় ভালোবাসার চুম্বনের আবেশে শ্বাস থেমে যায় তিতলির। আমি প্রেয়সীর শিক্ত মুখগহবরে জিব ঢুকিয়ে আলতো করে তিতলির শিক্ত কোমল জিব নিয়ে খেলা করতে শুরু করে দিলাম।
আমার বাম হাত প্রেয়সীর ঘাড় ছাড়িয়ে উঠে যায় তিতলির মাথার পেছনে। আলতো মুঠোতে মাথার রেশমি চুলের গোছা ধরে তিতলির শিক্ত উষ্ণ মুখের ভেতর জিব দিয়ে খেলতে শুরু করে দিলাম। সারা শরীর বয়ে অনির্বচনীয় আনন্দ অনুভূতি খেলে বেড়ায়। পূর্ণবয়স্ক কোন যুবতীকে প্রথম প্রেম নিবেদন করলাম। তিতলির প্রথম প্রেমের চুম্বন স্মরণীয় করতে চাই। সময় থেমে যায় আমাদের চারপাশে, এইভাবে যদি সারারাত শুধু চুম্বনে হারিয়ে যেতে পারতাম তাহলে সত্যি কত ভালো হত। হটাত করে ঠোঁট গোল করে তিতলির দুই ঠোঁটের ওপর চেপে মুখের লালা চুষে নিলাম। আমার এই অদ্ভুত পাগলামো প্রক্রিয়ায় প্রেয়সীর নধর আকর্ষণীয় দেহবল্লরি কাল বৈশাখীর ঝড়ে দুলে ওঠা তরুর মতন কেঁপে ওঠে। উষ্ণ এক শ্বাস আলতো করেই তিতলির গলার ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে। গলা কেঁপে ওঠে তিতলির। প্রেয়সীর সর্বাঙ্গ থরথর করে কাঁপছে আমার বাহুপাশের আবর্তে। যেন ওর হৃদয় চেঁচিয়ে কিছু বলতে চায়, ছাতির ওপরে ওর হৃদয়ের কম্পন কথা বলে, চুম্বনেই এত প্রেম, উম্মম্মম্ম, তাহলে তোমার বুকের ভেতরে সেঁধিয়ে গেলে কি কি খুঁজে পাবে।
অল্পক্ষন না অনেক্ষন, কারুর ঠিক খেয়াল নেই। প্রেয়সীর সুমিষ্ট অধর ছাড়তেই, আমার প্রসস্থ ছাতির ওপরে মাথা গুঁজে নিঃসাড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তিতলি। দুই বলিষ্ঠ বাহুডোরে আষ্টেপিষ্টে তিতলির কমনীয় দেহলতাকে বেঁধে ফেললাম। ওর রেমশি মাথার ওপরে গাল চেপে গঙ্গার বিশাল পাড়ে, খালি মাঠের মাঝে, খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে থাকলাম অনেকক্ষণ। আমাদের কারুর মুখে কোন শব্দ নেই, শুধু মাত্র দুটো প্রেমে বিভোর প্রানের হৃদস্পন্দন শোনা যায়, ধুকপুক ধুকপুক। বিনা বাক্যব্যায়েই দুই প্রেম ঘন কপোত কপোতীর হৃদয় মাঝে যে বাক্যালাপ ঘটে যায়, তার একমাত্র সাক্ষী গঙ্গার জল, এই সন্ধ্যের আকাশ, দূরে উড়ে যাওয়া বকের দল, শালিক চড়াই, এই হীমেল হাওয়া। দুরে কোন গাছের থেকে কোন এক নাম না জানা পাখী ডেকে উঠতেই সম্বিত ফিরে পেলাম। প্রগাড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে থাকা দুটো প্রান, আবার জেগে উঠল। আমার বুকের ওপরে মৃদু কেঁপে উঠল তিতলি। এই হিমেল বাতাস থেকে বাঁচানোর জন্য আমি প্রেমিকার উষ্ণ দেহলতাকে দুই হাতে আরো বেশি করে চেপে ধরে রইলাম নিজের বুকের কাছে।
আমার জামা খামচে ধরে জামার ওপর দিয়েই বুকের বাম দিকে ঠোঁট চেপে ধরে প্রেমঘন কণ্ঠে বলে প্রেয়সী, “তোমায় ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।”
আমি ললনার ফর্সা থুঁতনি ধরে আলতো নাড়িয়ে বললাম, “এমন দুষ্টুমি করে না সোনা। বাড়ি ফিরতেই হবে, না হলে হিতে বিপরিত হবে।”
হাতে হাত রেখেই ফিরে আসা হল ঘাটে। যে তিতলিকে সকালে এই গঙ্গা বক্ষে নিয়ে এসেছিলাম, সেই তিতলি বদলে গেছে। মুখমন্ডলে প্রশান্তির পরিতৃপ্তির ছটা বিচ্ছুরিত। আমার বাজু দুই হাতে আঁকরে ধরে নৌকায় চাপল। আর ভয় নেই, ওর খুঁজে পেয়েছে নিজের আদি, আর আমি খুঁজে পেয়েছি আমার ভালোবাসার নাম।
পাগলের মতন বাইক ছুটিয়ে দিলাম। দেরি হলেই তিতলির বাড়িতে ধুন্ধুমার কান্ড ঘটে যেতে পারে। হয়ত ওর খোঁজে যদি ওর বাবা মা পারমিতার বাড়িতে চলে যায় তখন খুব মুশকিলে পরে যাবো। সেদিকে কোন খেয়াল নেই ললনার, দুই হাতে আমাকে আঁকরে ধরে পিঠের ওপরে গাল ঠেকিয়ে সারাটা রাস্তা চুপ করে বসেছিল। কাজিপাড়া পৌঁছালাম তখন বাজে রাত ন’টা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমার পিঠের ওপরে মধুর প্রলেপের মতন লেপটে বসেছিল তিতলি। যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল।
গলির মুখে বাইক থামিয়ে ডাক দিলাম প্রেয়সীকে, “এই...”
পেলব বাহুর বেড় আলতো করে আমার দেহ থেকে খুলে গেল। কাঁধের ওপরে থুঁতনি রেখে জিজ্ঞেস করল, “এত তাড়াতাড়ি বাড়ি এসে গেল?”
আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম, “সোনা, চার ঘন্টার মতন টানা বাইক চালিয়েছি।”
মুখ ভার হয়ে গেল রূপসী ললনার। বেদনাটা নিজের জন্য নয় আমার জন্য, “ইসসস বাড়িতে থাকলে তোমার পিঠ কাঁধ একটু টিপে দিতে পারতাম।” বলেই আমার কাঁধ আর বাজু কোমল হাতে টিপতে শুরু করে দিল।
আমি ওকে থামিয়ে বললাম, “রাস্তায় আছি সোনা...”
যে মেয়ে এতদিন একটা লাজুক মোড়কের আবদ্ধে ছিল সেই প্রজাপতি আজকে ডানা মেলে দিয়েছে। মিষ্টি হেসে বলল আমাকে, “তাতে কি হয়েছে, আমি তো অন্য কারুর বয়ফ্রেন্ডকে করছি না।”
আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, “পাগল তুমি, সত্যি।”
ধিরে ধিরে নেমে গেল আমার বাইক থেকে। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাত পেতে বলল, “দাও...”
আমি কিছু না বুঝেই ওর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে চুমু খেতে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে আলতো চাঁটি মেরে বললে ললনা, “চাবি দাও।”
প্রশ্ন করলাম, “বাইকের চাবি?”
একটু রাগ একটু হাসি মিশ্রিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি পাগল, বাড়ির চাবি দাও।”
আমি পড়লাম আকাশ থেকে, “কেন?”
কিঞ্চিত আদেশের সুরে বললে ললনা, “আমার বাড়ি তাই চাবি চাইছি।”
হেসে ফেললাম আমি, তিতলির কন্ঠস্বর অনেক বদলে গেছে, সেই কচি তিতলি আর নেই। আমার সামনে দাঁড়িয়ে এক সম্পূর্ণ নারী, সুন্দরী প্রজাপতি ডানা মেলে দিয়েছে। পকেট থেকে বাড়ির চাবি ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম। বাইকের বাক্সে একটা অতিরিক্ত চাবি থাকে। ডান হাতের কোমল তর্জনী নিজের ঠোঁটের ওপরে রেখে আলতো চুমু খেয়ে আমার দিকে নাড়িয়ে গলি পর্যন্ত হেঁটে চলে গেল। আমি অবাক দৃষ্টি নিয়ে ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। উচ্ছল তরঙ্গিণী নয়, শান্ত গঙ্গার মতন চলন ওর। গলির বাঁকে আধো আলো আঁধারে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে সেদিন প্রথম বার হাত নাড়িয়ে হারিয়ে গেল গলির মধ্যে। সারা রাত শুধু ওর প্রথম প্রেমের চুম্বন বুকের মধ্যে এঁকে আর ঘুমাতে ইচ্ছে করল না।
![[Image: 20210115-150253.jpg]](https://i.ibb.co/7prGwZZ/20210115-150253.jpg)