Thread Rating:
  • 100 Vote(s) - 3.34 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুপ্তির সন্ধানে
পর্ব তিন (#5-#15)

 
ডিসেম্বর কেটে গেল, নতুন বছর শুরু হয়ে গেল। তিতলি ভিড় ভয় পায় তাই ওকে নিয়ে পঁচিশে ডিসেম্বরে অথবা পয়লা জানুয়ারিতে কোথাও বেড়াতে যেতে পারিনি। বলে, ভিক্টোরিয়া একদম ভালো লাগে না, গাছের তলায় জোড়ায় জোড়ায় সব এক একজনের কোলের মধ্যে ঢুকে বসে থাকে। ময়দান একদম খালি জায়গা, সেখানেও যেতে চায় না। আউট্রাম ঘাটে ওই একবার গেছিলাম আমার জন্মদিনের দিন, তারপরে সেখানেও আর যাওয়া হয়নি। ওর শুধু মাত্র একটাই কথা, তোমার বাইকের পেছনে আমার সব কিছু। অনির্বাণ বলেছিল, চল কোথাও যাই, আমি আর কাবেরি তুই আর অনুস্কা। সেকথা তিতলিকে জানাতেই বলল, ওদের সাথে কি কথা বলব, চিনি না তো। অচেনা মানুষের সামনে কথা ফোটেনা একদম, সেটা ভীষণ ভাবনার বিষয়। উল্টোডাঙ্গার লাইব্রেরীতে গিয়ে ক্লস্ট্রোফোবিয়া নিয়ে একটু পড়াশুনা করলাম। জীবন শুধু মাত্র এই বাইকের পেছনে কাটবে না। মানুষের সাথে মেশার ভয়, অচেনা মানুষ দেখলে ভয় এই গুলো কিছু করে হোক কাটাতেই হবে।
 
একদিন আমার কলেজের এক বন্ধুকে ফোন করলাম, কোলকাতা মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি নিয়ে পড়ছে। তাকে জিজ্ঞেস করাতে জানালো যে একবার ওদের সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টের সাথে কথা বলতে। এই বিষয়ে তিতলিকে কিছুই জানালাম না। যথারীতি একদিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কোলকাতা মেডিকেল কলেজে গিয়ে আমার বন্ধু, সুদীপ্তের সাথে দেখা করলাম। ও আমাকে নিয়ে গেল সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টের হেডের কাছে। তার কাছে গিয়ে তিতলির এই ভয়ের ব্যাপারে সব কিছু জানালাম। তিনি বললেন, মানুষের মস্তিস্কের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞান বিশেষ কিছুই আবিস্কার করতে পারেনি। এর একমাত্র পথ, কাউন্সিলিং করা। আমি জানালাম সেই সব অনেক হয়েছে, তাও এখন বাসে উঠতে ভয় পায়, নতুন মানুষের সাথে কথা বলতে ভয় পায়, কোথাও ভিড় দেখলে ভয় পায়, কোন বাজারে যেতে চায় না। চিন্তায় পরে গেলেন ডক্টর ভবতোষ বাবু। তিনি বললেন একবার একটা এমআরআই করাতে, মাথায় বেশ ভেতরের দিকে দুটো ছোট আখরোটের মতন গোল গোল অঙ্গ আছে তাকে এমিগডালা বলে, আমাদের আবেগ অনুভূতি হাসি কান্না সব কিছু এই একটা অঙ্গ থেকে নির্ধারণ করা হয়। কখন এর একটা ভাগের থেকে অন্যভাগ বড় হয় তখন কিছু কারনে এই ভয় ভীতি এই সব আবেগ অনুভূতি একটু বেশি করেই প্রকাশিত হয়। তবে যেহেতু মস্তিস্কের সম্বন্ধে এখন ডাক্তারি বিজ্ঞান সেই জায়গায় পৌঁছায়নি তাই কথা বলে ভালোবেসে বুঝিয়ে এর চিকিৎসা করতে হয়। ভবতোষ বাবু বললেন একবার তিনি তিতলির সাথে দেখা করতে চান। আমি উত্তরে বল্লাম, চেষ্টা করে দেখতে পারি।
 
একদিন ইন্সটিটিউট থেকে ফেরার পথে আমি তিতলিকে বললাম, “তুমি আমার সাথে একবার একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাবে?”

প্রশ্ন করল তিতলি, “কেন আমার কি হয়েছে?”

আমি ওকে বুঝিয়ে বললাম, “না তেমন কিছু নয়। তবে এই যে তুমি ভিড় দেখলে ভয় পাও। নতুন কোন মানুষের সাথে কথা বলতে ভয় পাও এই সব নিয়ে।”

আমার কথা শুনে একটু ব্যাথা পেল তিতলি, “তাতে তোমার অসুবিধে হয়?”

আমি ওকে বললাম, “না রে পাগলি মেয়ে তাতে আমার কোন অসুবিধে নেই। কিন্তু এই দেখো, এই যে অনির্বাণ আর কাবেরির সাথে দেখা করতে যাওয়ার দিনে তুমি বললে যাবে না।”

প্রশ্ন করল তিতলি, “ওদের সাথে দেখা করে কি করব?”

আমি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বললাম, “তিতলি, জীবনটা তো আর আমার এই বাইকের পেছনে বসে কাটাবে না। এরপর লোকজনের সাথে মিশতে না পারলে কি করে হবে।”

মুখ ভার হয়ে গেল ললনার, “তার মানে আমার এই ব্যাবহার তোমার পছন্দ নয়।”

মাথা নাড়লাম আমি, কি বললে কি যে বোঝে মেয়েটা। আমি ওকে প্রবোধ দিয়ে বললাম, “না রে বাবা। আচ্ছা দেখো, এই তোমার বয়সের মেয়েরা শপিং করার নামে লাফিয়ে ওঠে। সেদিন একটা হেলমেট কিনতে গেলাম হাতিবাগানে সেখানে তুমি ভয়ে কুঁকড়ে আমার হাত ধরে রইলে। এমন করলে হবে? কোনদিন কোন রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে যাওয়া যায় না তোমাকে।”

ভারী কন্ঠে উত্তর এলো, “এত যদি আমাকে নিয়ে অসুবিধে তাহলে আমাকে চুপ চাপ বাড়ি পৌঁছে দাও।”

আমি বাইক থামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম তিতলির চোখ জোড়া ছলছল করছে। আমি ওর হাত দুটো ধরে বললাম, “এই পাগলি মেয়ে, আমি কখন বলেছি যে তোমাকে নিয়ে আমার অসুবিধে?” ঝাপসা আঁখি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল তিতলি। আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা একটা কথা বল। তুমি তো নতুন অথবা অচেনা কারুর সাথে কথা বলতে পারো না। তাহলে সেদিন বাস স্টান্ডে আমার সাথে কেন কথা বলতে গেলে?”

হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে মৃদু হেসে উত্তর দিল তিতলি, “তোমার ওই ভারী গলার আওয়াজটা না আমার খুব ভালো লাগে।” বলেই লজ্জাবতী লতার মতন গুটিয়ে আমার পিঠের ওপরে মুখ গুঁজে নিল।
 
আমিও ওর কথা শুনে আর রেগে থাকতে পারলাম না। সেদিন বুঝে গেলাম একে ডাক্তার দেখিয়ে লাভ নেই। তিতলিকে ঠিক করাতে হলে আমাকেই করাতে হবে। সেদিন বাকিটা রাস্তা চুপ করেই বসেছিল।
 
রাস্তায় নামিয়ে দেওয়ার পরে আমাকে বলল ললনা, “ঘুরতে কোথাও তো নিয়ে যাও না।”

আমি একটু রেগে গিয়েই ওকে বললাম, “কই নিয়ে যাই না? সেদিন বললাম ভিক্টোরিয়া যাবে, ময়দান যাবে? তোমার সেখানে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। বললাম চল অনির্বাণ আর কাবেরির সাথে কোন রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করি। তাও তুমি যাবে না। তুমি যাবে টা কোথায়?”

অভিমানিনীর মুখ ভার হয়ে গেল, “হ্যাঁ, তোমার তো শুধু এর তার সাথে দেখা করাতে চাও। আমি চাইছিলাম শুধু তুমি আর আমি কোথাও যাবো।”

আমি একটু ভেবে ওকে বললাম, “আচ্ছা দেখা যাবে। এই শনিবার তাহলে ক্লাস করব না। সকাল সকাল বেড়িয়ে যাবো কোথাও।”

ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনে নেচে উঠল তিতলি। মুখমন্ডলে এক অদ্ভুত ছটা বিচ্ছুরিত হয়ে গেল, যেন খাঁচা থেকে ছাড়া পাওয়ার স্বাদ পেয়েছে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, অনেক দূরে যাবো। কোথায় যাবো আদি?”

আমি ওর চেহারা দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম, ওর ঠোঁটের ওই মিষ্টি হাসি দেখে আর থাকতে পারলাম না। আমি ওকে বললাম, “তুমি বাড়িতে বলবে যে তুমি ক্লাসের পরে পারমিতার বাড়ি যাবে, রাতে ফিরবে। ব্যাস তারপরে দেখা যাবে কোথায় যাওয়া যায়।”

মিষ্টি হেসে মাথা দুলিয়ে সায় দিল তিতলি, “ঠিক আছে।”
 
শনিবার সকাল সকাল বেড়িয়ে গেলাম। কথা ছিল ইন্সটিটিউটে চলে আসবে সেখান থেকে বেড়িয়ে পড়ব। জানুয়ারির শেষের দিক। ঠান্ডা না থাকলেও দিনের বেলা রোদের জন্য বেশ গরম লাগে। তাও ওকে বলেছিলাম যে ফিরতে যদি রাত হয় তার জন্য একটা শাল যেন নিয়ে আসে।
 
শনিবার আমি সময়ের আগেই, সাড়ে আট’টা নাগাদ ইস্টিটিউট পৌঁছে গেছিলাম। তিতলিকে দাঁড় করিয়ে রাখতে চাই না। সেদিন আর ইন্সটিটিউটে ঢুকলাম না, বাইক বাইরেই পার্ক করে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষন পরে একটা সাদা রঙের গাড়ি থেকে নেমে এলো তিতলি। পরনে চাপা গোলাপি রঙের সালোয়ার কামিজ, কাঁধে একটা লাল শাল আর হাতে কলেজের ব্যাগ। মাথার চুল একপাশে আঁচড়ে পেছনের থেকে বাম কাঁধ বেয়ে সামনের দিকে ঢল নেমে এসেছে। বেড়াতে যাবে আবার ব্যাগ কেন, ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমাকে দেখেই চোখের ইশারা করে সরে যেতে বলল। ওর সারা মুখমণ্ডলে প্রানবন্ত খুশির ছোঁয়া, চোখে মুখে উৎসাহের ছটা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। গাড়ি থেকে নেমে, গাড়ির মধ্যে বসা কাউকে দেখে মিষ্টি হেসে হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে দিল।
 
গাড়িটা ছেড়ে যেতেই দৌড়ে এসে পাশে এসে দাঁড়িয়ে উৎফুল্ল কন্ঠে বলল, “চল চল তাড়াতাড়ি চল। গাড়িতে বাবা।”
 
আমি সঙ্গে সঙ্গে ওর হাতে হেলমেট ধরিয়ে দিতেই বাইকের পেছনে উঠে বসলো। তড়িৎ গতিতে বাইক চালিয়ে দিলাম। বুকের মধ্যে দুরুদুরু, ধরা না পরে যাই ওর বাবার সামনে। পাগলের মতন বাইক ছুটিয়ে পাঁচ মিনিটে মানিকতলা ক্রসিং পৌঁছে গেলাম। সারাটা সময়ে কাঁধ খামচে ধরে ছিল তিতলি। এপিসি রোড ধরলাম। বাইকের গতি ধিমে করে দিলাম। উত্তেজনায় দুইজনেই হাঁপাচ্ছিলাম তখন।
 
এপিসি রোড ধরতেই আমার কোমর জড়িয়ে ধরে খিলখিল করে হেসে ফেলল, “আর বল না। বাবার আজকে কোলকাতার অফিসে কোন কাজ ছিল। সকালে বলল, চল তোকে ইস্টিটিউটে ছেড়ে দিয়ে আসি। আমি তো প্রমাদ গুনলাম। শেষ মেশ তাই কলেজের ব্যাগ নিয়ে বের হতে হল।”

আমি হেসে ফেললাম, “মুফাসা সত্যি আমাদের পেছন ছাড়বে না মনে হচ্ছে।”
 
পিঠের ওপরে তিতলির কোমল নধর উষ্ণ দেহ পল্লবের ছোঁয়া আমাকে ক্ষনে ক্ষনে মাতাল করে তুলছে। কোমল পীনোন্নত স্তন যুগল বারেবারে পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমার পিঠের ওপরে। বাইকের বাম পাশে পা ঝুলিয়ে বসার ফলে, আমার কোমরের নিচে তিতলির পুরুষ্টু নধর জঙ্ঘা চেপে গেছে। হেলমেট পরার ফলে শুধু মাত্র ওর কোমল গালের সাথে আমার গালের স্পর্শ হয়নি। নাকের মধ্যে তিতলির মদির দেহের ঘ্রাণে আমি ততক্ষনে মাতাল। এক প্রকার নেশাগ্রস্ত হয়ে উঠেছি প্রেয়সীর সাথে প্রথম বার কোথাও বেড়াতে যাচ্ছি ভেবেই।
 
আমার কোমর জড়িয়ে কাঁধের ওপরে থুঁতনি রেখে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাচ্ছি তাহলে?”

আমি সেই অর্থে কিছুই ঠিক করিনি, “আমি তো তেমন কিছুই ঠিক করিনি। দেখা যাক, ডায়মন্ড হারবার রোড ধরব, কোথায় শেষ হয় দেখা যাবে।”

অজানা পথের উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছি জানতে পেরেই ভীষণ ভাবেই উত্তেজিত হয়ে উঠল তিতলি, আমাকে প্রানপনে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে কানে কানে মধুঢালা কন্ঠে বলল, “জানো আজকে সত্যি হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।”

আমি ওকে বললাম, “চলো তাহলে হারিয়ে যাই।”
 
শিয়ালদা পার করার পরে বাইকের গতি বাড়িয়ে দিলাম। ডায়মন্ড হারবার পৌঁছাতে হলে ধিমে গতিতে বাইক চালালে হবে না। আমি চুপ করে থাকলেও কি তিতলি চুপ থাকে নাকি? আর আমি একটা পাগল, যে মেয়ে এত কথা বলে তাকে নিয়ে কিনা আমি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিলাম।
 
তিতলি একনাগারে কথা বলে চলেছে, “তুমি জানো, গতকাল রাতে একটুও ঘুমাতে পারিনি। এই তুমি শুনছো তো?” ইতিবাচকে মাথা দুলিয়ে সায় দিলাম, না হলে রূপসী প্রেয়সী আবার অভিমান করে বসবে। কলতান কানে ভেসে আসে, “ভাইটা একদম কথা শোনে না। বাবার সাথে গতকাল রাগারাগি করেছে। প্রায়দিন ওর বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখা চাই এই নিয়ে হাত খরচের টাকা নিয়ে রাগারাগি হল। শেষ পর্যন্ত আমি আমার জমানো টাকা থেকে ওকে দিলাম। জানো পারমিতার জন্মদিন। পারমিতাকে মনে আছে?” যদিও আমার তেমন ভাবে মনে নেই, কারণ ওর কলেজে আজকাল খুব কম যাওয়া হয়। সন্ধ্যে হয়ে যায় বলে কলেজের পরে তিতলি আমার অফিসেই চলে আসে। তাও ইতিবাচকে মাথা দুলিয়ে সায় দিলাম, মনে আছে। পিঠের ওপরে একটা ছোট আদরের কিল, “ঘেচু কলা মনে আছে তোমার। কি করে মনে থাকবে? দুইদিন তো দেখছ।” যা বাবা, না বললেও মরলাম, হ্যাঁ বললেও মরলাম। আমার হল ত্রিশঙ্কুর মতন অবস্থা। যাই হোক, রাস্তার দিকেও দেখতে হচ্ছিল সেই সাথে তিতলির কলতান, “মা গতকাল দুপুরে শুক্তো বানিয়েছিল জানো। ভাবলাম একটু নিয়ে আসি। তারপরে ভাবলাম, আমি টিফিনে শুক্তো নিয়ে যাবো সেটা একদম ভালো দেখায় না। এই তুমি জানো আমি না পায়েস রান্না করতে শিখে গেছি। তোমাকে বলেছি কি, সেদিন নলেন গুড় দিয়ে পায়েস বানিয়ে ছিলাম।” উফফ এই কথাটা গত চারদিনে অন্তত কুড়ি বার শুনেছি, তাও শুনতে হচ্ছে।
 
বেহালা চৌরাস্তায় একটু দাঁড়িয়ে একটা জলের বোতল কিনে জল খেয়ে আবার যাত্রা শুরু। জোকা পেরিয়ে যাওয়ার পরে দুইপাশে বাড়ি ঘরের ঘনত্ব কমে আসতে লাগলো। দুইপাশে ধানের ক্ষেত, গাছপালা, কারুর বাড়ির সামনে বড় বাগান, নারকেল গাছের সারি। সূর্য মধ্য গগনের দিকে চলতে শুরু করে দিয়েছে। একটু গরম লাগছে।
 
হটাত কি মনে হল, আমাকে বলল, “আচ্ছা আমরা কেন ডায়মন্ড হারবার যাচ্ছি?”

আমি অবাক হয়ে গেলাম, “যাহ্‌ বাবা, কোথায় যাবো?”

মাথা নাড়ল তিতলি, “না না, বাইক ঘুরাও আমি ডায়মন্ড হারবার যাবো না।”

আমি অবাক ওর কথা শুনে, “কেন?”

আমার কানে ফিসফিস করে বলল, “হ্যাঁ তুমি যেন কিছুই জানো না। ডায়মন্ড হারবারে আমাদের কলেজের মেয়ে গুলো ওদের বয়ফ্রেন্ড নিয়ে যায়। ওখানের হোটেলে গিয়ে রাত কাটায় ওরা।”

আমি হেসে ফেললাম ওর কথা শুনে, “এই তিতলি, একদিন আমাদের তো রাত কাটাতে হবে নাকি? শুধু কি আর বাইকের পেছনে বসে থাকবে নাকি? একদিন তো আমার সামনে উর্বশি মেনকা হয়ে আসবে।”

ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল প্রেয়সী, “ধ্যাত যতসব নোংরা কথাবার্তা।”

আমি ওকে উত্যক্ত করে তলার জন্য বললাম, “বাহ রে, প্রেম করলে একদিন তো সেক্স হবে। আচ্ছা তুমি বল তোমার কি স্বপ্ন। কেমন চাও তুমি?”

দুম করে পিঠে কিল পড়ল, “ধ্যাত, তুমি চুপ করবে। আমি আর তোমার সাথে কথা বলব না কিন্তু।” লজ্জাবতী লতার মতন কাঁধের খাঁজে মুখ গুঁজে দিল তিতলি।

আমি জানতাম এইসব কথাবার্তা এইভাবে শুনতে কোনদিন পছন্দ করে না। ওকে বললাম, “এতে লজ্জা পেলে কি করে হবে তিতলি?”

অনেকক্ষণ আমার কাঁধের খাঁজে মাথা গুঁজে থাকার পরে মিষ্টি মদির কন্ঠে বলতে শুরু করল, “ঘর হবে অন্ধকার, কয়েকটা মোমবাতি জ্বলবে ঘরের কোনায়। শুধু আমি আর তুমি বসে থাকব। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকবে। আমার গাল তোমার কাঁধের ওপরে, আমার ঘাড়ে, আমার গালে ছোট ছোট চুমু খাবে। তোমার দুষ্টু আঙ্গুল নিয়ে আমি খেলা করব, তোমার ওই হাতের ওপরে হাত দিয়ে নিজেকে তোমার কোলের মধ্যে উজাড় করে দেব...”

বলতে বলতে ভীষণ লজ্জায় আমার সুন্দরী লজ্জাবতী প্রেয়সী কাঁধে মাথা গুঁজে দিল। ওর শ্বাস ফুলে উঠেছে এইটুকু কথা বলতেই। আমার ঘাড় গর্দান তিতলির উষ্ণ শ্বাসের ঢেউয়ে ভেসে যাচ্ছে। ওর বর্ণনা মানসচক্ষে অঙ্কিত করে আমার দেহের রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দিল। বাকি রাস্তা নীরবে দুইজনা পরস্পরের মধুর সানিদ্ধ্যে ঢুবে গেলাম। বাইক ধেয়ে চলেছে, বিষ্ণুপুর, আমতলা, রাজারহাট, শিরাকোল, সরিষা, এক এক করে পার করে চলেছি।
 
দুপুর নাগাদ ডায়মন্ড হারবার গিয়ে পৌঁছালাম। রাস্তা আরো অনেকদুর চলে গেছে। ধানবেরিয়াতে বাইক থামিয়ে কিছু একটু খেয়ে কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করে নিলাম রাস্তার ব্যাপারে। জানতে পারলাম, এই রাস্তা কাকদ্বীপ হয়ে নামখানা পর্যন্ত চলে গেছে। বাইকে উঠে আবার সেই নিরুদ্দেশের পানে যাত্রা শুরু করে দিলাম। ডায়মন্ড হারবার পর্যন্ত দুইপাশে যাও বাড়ি ঘর দেখা যাচ্ছিল ধিরে ধিরে সেটা কমতে কমতে দুইপাশে শুধু সবুজ মাঠ আর দুর দিগন্তে ছোট ছোট গ্রাম দেখা গেল। হাটুগঞ্জ থেকে রাস্তা বেঁকে গেল। বাইক চলেছে নিরুদ্দেশের পানে। পেরিয়ে গেলাম ঝালবাড়ি, কুলপি, সিতারামপুর ইত্যাদি ছোট ছোট জায়গা।
 
দুপুরের বেশ পরে আমরা কাকদ্বীপ পৌঁছালাম। রাস্তা আরো এগিয়ে চলেছে, কিন্তু আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে। তাই সেখানে থেমে গেলাম। খুব ছোট একটা গ্রামের মতন জায়গা। বঙ্গোপ সাগর এখান থেকে বেশি দূরে নয়। বাইক থামিয়ে নেমে পড়লাম আমরা। গরম লাগছে, সূর্য দেব মাথার ওপরে। যতদূর চোখ যায় ততদুর শুধু গঙ্গার জল। এখানে গঙ্গা নীল নয়, ধুসর রঙের মেটে জল। নদীর অন্যপাশে একটা দ্বিপের মতন। বাড়ি ঘরদোর, কোথাও নৌকা তৈরি হচ্ছে। 
 
তিতলি আমার পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ওইদুর পানে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, “ওইপাশে যেতে পারি?”

আমি একজন কে জিজ্ঞেস করে জেনে নিলাম যাওয়ার ব্যাপারে। তারপরে বললাম, “হ্যাঁ, নৌকা করে যাওয়া যায়।”

আমার বাজু দুই হাতে শক্ত করে ধরে নেচে উঠল তিতলি, “তাহলে যাবো।”

আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “ক্ষিধে পায়নি?”
 
আশে পাশে দেখলাম, কি কি পাওয়া যায়। রাস্তার দুইপাশে খাওয়ার দোকান আছে বটে কিন্তু তেমন ভালো একটাও নয়। আমি একা থাকলে এইসবের তোয়াক্কা করি না কিন্তু সাথে তিতলি তাই দোটানায় পরে গেলাম।
 
মাথা দুলিয়ে সায় দিল তিতলি, “খুউউব ক্ষিধে পেয়েছে গো।”

ওর বলার ধরন দেখে হেসে ফেললাম, “মহারানী এখানে কিন্তু কোন ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট নেই।”

তিতলি মিষ্টি হেসে আমাকে বলল, “তুমি যেখানে যা খাওয়াবে তাই খাবো।”

আমি ওর নাকের ডগায় তর্জনী দিয়ে আদর করে বুলিয়ে বললাম, “তুমি না... একদিন সত্যি আমাকে মারবে...”
 
আমার বলার ধরনে ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেল আমার রূপসী লজ্জাবতী প্রেয়সী।
[Image: 20210115-150253.jpg]
Like Reply


Messages In This Thread
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 14-01-2021, 11:07 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by pinuram - 21-01-2021, 08:48 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 07-02-2021, 12:55 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 07-02-2021, 01:06 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 02:00 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 08:42 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 08-02-2021, 08:45 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 09-02-2021, 12:15 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 09-02-2021, 08:38 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 10-02-2021, 01:32 AM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 12-02-2021, 12:03 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 14-02-2021, 02:45 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 18-02-2021, 05:02 PM
RE: সুপ্তির সন্ধানে - by TheLoneWolf - 24-02-2021, 05:46 PM



Users browsing this thread: 35 Guest(s)